post

আমাদের বাস্তব জীবনে সূরা ফাতিহা

০৬ ডিসেম্বর ২০১৩

সূরা ফাতিহার বিষয়বস্তু হলো বান্দাহর সাথে আল্লাহর সম্পর্ক। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় কিংবা বৈশ্বিক সবখানেই বান্দার অবস্থান কোথায় তা জানা দরকার। বান্দার ভেতর থেকেই এর জবাব পাওয়ার চেষ্টা যদি থাকে তবে সূরা ফাতিহা এই জিজ্ঞাসার তৃষ্ণা মেটাতে মহাসমুদ্রের মতো তার সামনে এসে হাজির হয়। এটি মূলত আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া একটি মানপত্র। যাতে আল্লাহর কাছে বান্দাহ তার চাওয়া-পাওয়ার কথা বলছে। একটা মানপত্রের মতো এতেও তিনটি অংশ। প্রথমেই যার কাছে চাওয়া হচ্ছে তার প্রশংসা, তারপর যে বা যারা চাচ্ছে তার পরিচয়, সবশেষে বান্দাহর চাওয়া। আমরা বলি, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। এখানে আল্লাহর প্রশংসাসূচক পরিচয়ে আমরা তাকে সম্বোধন করছি। সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আলামিনের রব। এখানে আল্লাহ, আলামিন ও রব তিনটি শব্দের গুরুত্ব বুঝলেই আল্লাহর পরিচয় পাওয়া যায়। আল্লাহ হলো এমন সত্তা যার উলুহিয়াত একচ্ছত্র। (উলুহিয়াত অর্থ হলো সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে এমন সত্তা)। আল ইলাহ অর্থ হলো একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। অর্থাৎ তিনিই সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন। তারপর হলো রব। রাব্বুল আলামিন। অর্থ সকল জগতের রব। আলামিন অর্থ জগৎ। ডিপ সিতে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রোটোজোয়া অ্যামিবা থাকে তার যেমন একটি জগৎ আছে, তেমনি ওই অনন্ত আলোকবর্ষ দূরের অজানা মহাশূন্যে, বড় বড় গ্যালাক্সিকে গিলে খাওয়া ব্ল্যাকহোলেরও একটা জগৎ আছে। বিচিত্র সব জগৎ : প্রাণী জগৎ, সমুদ্র জগৎ, মহাশূন্য জগৎ প্রভৃতি। বেড়ালের জগৎ, গরু-ছাগলের জগৎ, মশার জগৎ মৌমাছির জগৎ, প্রজাপতির জগৎ কিংবা ফুলের জগৎ। আবার আমাদের জীবনেও হাজারো জগৎ আছে। চিন্তার জগৎ, মনোজগৎ আরও লক্ষ কোটি জগৎ। আল্লাহ, যিনি রাব্বুল আলামিন, এর অর্থ দাঁড়ায় তিনি এই সব জগতেরই পালনকর্তা। রব তাই এক অর্থে প্রতিপালক। তিনি জন্ম দিয়ে বা সৃষ্টি করেই বসে থাকেন না, তাদের চাওয়ার আগেই দরকার মতো প্রাপ্য দিয়ে দেন। যেমন বাতাস, পানি ইত্যাদি। বস্তু বা প্রাণী সবার প্রতিপালক। বান্দাহর এতটুকু প্রশংসাতেই আল্লাহর গুণগান শেষ হয় না। তাই পরক্ষণেই বান্দাহ বলে, আররাহমানির রাহিম। রাহমান ও রাহিম শব্দ দুটোর ভাব কাছাকাছি তবে তাৎপর্য আলাদা। আল্লাহ রাহমান অর্থাৎ দয়ালু। সেই সাথে তিনি রাহিম এর অর্থও দয়ালু। রাহমান হচ্ছেন ইহকালের জন্য। আর রাহিম হচ্ছেন পরকালের জন্য। পরের লাইনেই এই রাহিমকে ব্যালেন্স করার জন্যই আল্লাহ বান্দাহকে বলতে শেখালেন মালিকি ইয়াওমিদ্বীন। মালিক, ইয়ামুন এবং দ্বীন। তিনি বিচার দিনের মালিক। অর্থাৎ তিনি রাহিম বা দয়ালু ঠিক আছে, তবে ইনসাফ করার সময় তিনি ঠিকই সঠিক বিচার করবেন। সূরা ফাতিহার এই পর্যন্ত হলো আল্লাহর পরিচয়। এখানে বান্দাহ কার নিকট থেকে এসেছে কিভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে এবং কোথায় যাবে তার বিষয়গুলো সূক্ষ্মভাবে লুকিয়ে আছে। সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। প্রতিপালন করছেন আল্লাহ। তারপর আবার তার নিকটই ফিরে যেতে হবে এবং প্রতিটি কাজের হিসাব তাকেই দিতে হবে। সূরা ফাতিহার এর পরের অংশে রয়েছে বান্দাহর পরিচয়। ইয়্যাকানাবুদু ওয়া ইয়্যাকানাসতাইন। একমাত্র তোমারই ইবাদত করি আর তোমার নিকট সাহায্য চাই। অর্থাৎ বান্দাহর পরিচয় হলো, আমি আল্লাহর আবদ বা দাস। এটাই তার একমাত্র পরিচয়। এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় আবদ বা দাস ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী (সা)। এর আগেও সকল নবী একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করে গেছেন। বান্দাহকে তাঁরই দাস হতে হবে। এটা হওয়া কর্তব্য। সেই সাথে সকল সাহায্য আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। কোনো পীর, মাজার, মন্ত্রী বা বস নেতার কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না। সূরা ফাতিহার এই অংশে বান্দাহ এটুকুই উপলব্ধি করে। এক কথায় একজন মানুষ আল্লাহর দাস। সে তাঁর নিকট এটা বলে। এরপর তার চাওয়ার পালা। বান্দাহ চায়- ইহদিনাস সিরাত্বাল মুসতাকিম। আমাকে সরল সঠিক পথ দেখাও। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের আজ এটিই চাওয়া। সরল পথ চাওয়ার প্রবণতা প্রতিটি মানুষের জন্য একটি সার্বজনীন চাওয়া। সেই সাথে বান্দাহর আরও চাওয়া-সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদদাল্লিন। ইনডাইরেক্টলি এই চাওয়ার ভেতরেই কিন্তু বান্দাহর পাওয়ার উত্তর আছে। সেই সব লোকের পথ যারা তোমার নিয়ামত পেয়েছে। এরা হলো চার শ্রেণীÑ নবী বা রাসূল, সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহ ব্যক্তিগণ। আবার পরক্ষণেই বলা হচ্ছে, তাদের পথ নয়, এরা হলো দুই শ্রেণী; মাগদুব এবং দুয়াল্লিন। অভিশপ্ত আর পথভ্রষ্ট। সূরা ফাতিহার এই দু’টি শ্রেণী কয়েকটি গোষ্ঠীকে ইঙ্গিত করে। পথভ্রষ্ট মানে মুশরিকরা। যারা আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরিক করে। যেমন, নাসারা বা খ্রিস্টানরা আর মুশরিকরা। আবার অভিশপ্তরা হলো ইহুদি। অর্থাৎ সূরা ফাতিহার শেষ অংশে এসে আল্লাহকে বান্দাহ বলে, আমি যেন কোনোক্রমেই খ্রিস্টান, ইহুদি ও মুশরিকদের পথ অনুসরণ না করি। সূরা ফাতিহা আমার জন্য দিনে কমপক্ষে সতের বার পড়া ফরজ। এটি না পড়লে কেউ মুসলমান থাকতে পারবে কি না সন্দেহ। অর্থাৎ কমপক্ষে সতের বার এটি পাঠ করছি অথচ আমার আচরণ বা চলাফেরা ইহুদি, খ্রিস্টান বা মুশরিকদের মতোই যদি থেকে যায় তাহলে এই পড়ার সার্থকতা কোথায়? মানুষ বেঁচে থাকে দু’টি বিষয়কে উপজীব্য করে : আমল ও আখলাক। মারা গেলে আমল সাথে চলে যায় আর তার আখলাক বা চরিত্র দুনিয়ায় থেকে যায়। সবাই স্মরণ করে। তার চরিত্র কেমন ছিলো, লেনদেন, আচার আচরণ, চলাফেরা, পর্দা-পুশিদা কেমন ছিল ইত্যাদি নিয়েই আলোচনা হতে থাকবে। যদি আখলাক ভালো না হয় তাহলে তার মূল্য কোথায়? সঠিক আখলাকের অনুসরণ করাই সূরা ফাতিহার সিরাত্বাল মুস্তাকিম বা সরল পথ। সূরা ফাতিহার মূল বিষয়বস্তুতে এই বিষয়গুলোই স্পষ্টরূপে বার বার উদ্ভাসিত হতে থাকে। তথ্যসূত্র : ১. তাফসিরে মা’আরেফুল কুরআন ২. তাফসিরে ইবনে কাসির ৩. তাফসিরে ফি যিলালিল কুরআন ৪. তাফহীমুল কুরআন ৫. তাফসিরে জালালাইন হ ছাত্র সংবাদ ডেস্ক

আপনার মন্তব্য লিখুন

user1

- 2 years ago

fasdfasdf

user1

- 2 years ago

fasdfasdf

user2 arif

- 2 years ago

adsfasdf

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির