একুশে ফেব্রুয়ারি নতুন চেতনায় মুক্তি আন্দোলন
২৬ জানুয়ারি ২০১৬
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালি আর বাংলাকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বমানবের বিশেষ অভিনিবেশের মহাসড়কে। বায়ান্নোর ভাষা-আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম সুসংহত স্ফুরণ; বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন ছিল মুখ্যত একটি জাতীয় সংগ্রাম। আর এর মূল কথা ছিল ভাষাগত স্বাতন্ত্র্যচেতনা।
আমাদের ভাষার ওপরে আক্রমণের ব্যাপারটা আকস্মিকভাবে, পাকিস্তান শাসনকালে, ঘটেছে- এমন নয়; আগেও ঘটেছে। বিশশতকের প্রথম দিকে ভারতের জাতীয় ভাষা নির্ধারণপ্রশ্নে বাংলাভাষা প্রথম বাধার শিকার হয়। রাজকার্য পরিচালনা এবং জ্ঞান আদান-প্রদানের জন্য একটি সাধারণ ভাষার প্রয়োজন দেখা দেয়। ভাষাগত উৎকর্ষ, ভাষাব্যবহারকারীর সংখ্যা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ধারক ও লালনকারী হিসেবে, তখন ভারতে ১৪৭টি ভাষার মধ্যে বাংলা ছিল অগ্রবর্তী। ফারসি-সংস্কৃত-ইংরেজির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কার্য-পরিচালনায় বাংলা সেদিন তার সম্ভাব্যতা হারিয়েছে কেবল হিন্দি ভাষাব্যবহারকারীদের প্রতিপত্তি ও আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিজাত রাজনৈতিক কারণে। কেননা, সে সময় কংগ্রেস নেতারা হিন্দিকে ভারতের জাতীয় ভাষা করার পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিশ্রুত ব্যক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে বিশ্বভারতীতে অনুষ্ঠিত ভারতের জাতীয় ভাষা কী হওয়া উচিত তা নিয়ে এক সেমিনারে নানা যুক্তি-প্রমাণ উত্থাপনের মাধ্যমে বাংলাভাষাই যে ভারতের জাতীয় ভাষা হওয়ার যোগ্যতা রাখে তা দৃঢ়তার সাথে তুলে ধরেন নিষ্ঠাবান গবেষক ও বহুভাষাবিদ পন্ডিত ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর জিয়াউদ্দীন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা উচিত হবে বলে এক প্রবন্ধে মত প্রকাশ করলে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দৈনিক আজাদে প্রকাশিত তার প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, বাংলাদেশের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষার পরিবর্তে উর্দু বা হিন্দি ভাষা গ্রহণ করা হলে এটা রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তÍর হবে। দেশবিভাগ-পরবর্তীকালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা-প্রশ্নে রাজনৈতিকভাবে উর্দুকে আরোপ করার অনুপুঙ্খ চেষ্টা চলেছে; এ ছাড়া পূর্ব-পাকিস্তানে আরবি হরফে, অথবা না-পারলে, নিদেনপক্ষে রোমান হরফে, বাংলা লেখার প্রস্তাবনাও বাংলাভাষার মর্যাদা এবং অধিকারে আঘাত হেনেছে অনিবার্যভাবে। আর তখন থেকেই চিহ্নিত হতে থাকে বাংলাভাষার শত্রু-মিত্র।
ভাষা-আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার প্রায় ছয় দশক অতিক্রান্তÍ হলেও, আজও তৈরি হয়নি এর নির্ভরযোগ্য ইতিহাস। সংগ্রামে পুরোভাগে নেতৃত্বে কারা ছিলেন, কতজন প্রাণ দিয়েছেন, কতজন আহত হয়েছেন এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী?- তার সঠিক হিসাব পাওয়া অন্তÍত কঠিন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে বাংলাভাষার একটি কোর্স বাধ্যতামূলক করার কথা সাম্প্রতিককালে বারবার উচ্চারিত হয়েছে; অবশ্য এর বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগ এখনো বক্তব্য আর কাগজের পাতায় খবরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। অফিস-আদালতে বা কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারিক বাংলাভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য দরকার সরকারি আগ্রহ-উদ্যোগ। সরকারি-বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভাষাপ্রয়োগের ক্ষেত্রে অসচেতনতা কিংবা ইচ্ছা করে ভাষার অপপ্রয়োগের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নীতিমালাও গ্রহণ করা দরকার।
উদ্দীপ্ত হোক নতুন বাসনায়
একটি ছাত্রসংগঠন। ১৯৭৭ এর ৬ ফেব্রুয়ারি যার প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। একটি আলোক মশাল, একটি ইতিহাসের নাম, তরুণদের হৃদয়ে আন্দোলিত তীব্র হাওয়ার নাম। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এই সংগঠন ৩৯টি বছর অতিক্রম করে ৪০ বছরে প্রবেশ করেছে। তরুণদের সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও হেরার দ্যুতিতে উদ্ভাসিত, নির্ভীক মানুষ গড়ার অদম্য স্পৃহায় যার পদযাত্রা। এই কাফেলার চলার পরতে পরতে সত্যদ্রোহীদের পর্বতসম ষড়যন্ত্র এর যাত্রাকে নিঃশেষ করার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে বহুবার। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় এবং কাফেলার সাথে সম্পৃক্ত যুবকদের দৃঢ় পথচলা সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে ছাত্রশিবির ছুটে চলছে আপন মানজিলে।
ছাত্রশিবিরের অন্যতম কর্মসূচি হলো তরুণ ছাত্রসমাজের মাঝে ইসলামের সুমহান আহ্বান পৌঁছে দেয়া। বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের প্রত্যাশিত ও আল্লাহর রঙে রঙিন মানুষ গড়াই ছাত্রশিবিরের মুখ্য উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ছাত্রশিবির প্রত্যাশিত কিছু মানুষ তৈরি করেছে। যে পথ সত্যাশ্রয়ীদের, প্রকৃত কল্যাণের ও দুনিয়া-আখেরাতের সফলতার। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছোঁয়া উদ্দীপ্ত হোক আজ নতুন বাসনায়।
আপনার মন্তব্য লিখুন