post

সাম্রাজ্যবাদের বেড়াজালে বাংলাদেশ

২৪ আগস্ট ২০১৫
বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো সমস্যা মোকাবেলা করেই চলেছে। কখনো ফারাক্কা সমস্যা, কখনো সীমান্ত সমস্যা, কখনো টিপাইমুখ সমস্যা আবার কখনো বা চলছে পার্বত্য এলাকার অশান্ত পরিবেশ- এমনি অসংখ্য সমস্যা। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধ আর লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতা ছিল এক খন্ডিত ভূখন্ড নিয়ে। বঙ্গভঙ্গের যে বাংলা তার ৬৪ শতাংশ নিয়ে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান, যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলার ৩৬ শতাংশ বঞ্চিত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম। অবস্থান ও ভূকৌশলগত কারণেই বাংলাদেশের রয়েছে বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ। বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট ASEAN, SAARC-এর মতো উদীয়মান আঞ্চলিক জোট, বর্তমান বিশ্বে আলোচিত দেশ ওRising Country চীনের মতো দেশ এবং দক্ষিণে বিশাল জলরাশি Bay of Bengal-এর মতো অবস্থানিক প্রপঞ্চকের মধ্যে অবস্থিত যা তাকে বিদেশনীতি গ্রহণ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছে। এই সকল অবস্থানিক প্রভাববলয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি, সৎ, যোগ্য, জ্ঞানী ও জনসাধারণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার যার কোন বিকল্প নেই। অন্য দিকে একটি রাষ্ট্রের পরম অবস্থান (অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত), সমুদ্র উপকূলবর্তী অবস্থান (Sea-Side Location), সামরিক কৌশলগত অবস্থান (Strategic Location), সন্নিহিত অবস্থান  (Relative Location) সুসংহত হলে সেই রাষ্ট্রের প্রভাববলয় বেড়ে যায় যা বাংলাদেশের অনুকূলে। বাংলাদেশ সূচনালগ্ন থেকেই বঞ্চনার শিকার আর এখন দেশটির বিরুদ্ধে চলছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের নগ্ন থাবা। ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো কিছু স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এ দেশকে গ্রাস করার জন্য মেতে উঠেছে উন্মাদ হলি খেলায়। তারা পদে পদে এ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে ভূলুণ্ঠিত করতে চাচ্ছে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির পরাজয় এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যবস্থা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ায় বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। নব্বই দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর চীন ধীরে ধীরে বর্তমান বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজকে প্রস্তুত করছে। এমতাবস্থায় চীনকে যদি আগামী বিশ্বশক্তির কেন্দ্রবিন্দু বলে খ্যাত ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাহলে সবচেয়ে যোগ্যতম স্থান হচ্ছে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা তথা বাংলাদেশ। কেননা এখানে চীনের সাথে আছে জনসংখ্যার মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক মিল এবং কম দূরত্ব। এমতাবস্থায় চীন এই এলাকার ওপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটা কোন দিক থেকে গ্রহণ করবে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বাংলাদেশের সরকারযন্ত্রের। সামান্য ভুলের কারণে হয়তো সম্ভাবনাময় এই এলাকাটি এক সময় সমগ্র জাতির জন্য দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গণতান্ত্রিক সরকার, দেশপ্রেম, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঐক্য, সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি ইতিবাচক ও কল্যাণকর দৃষ্টির নেতৃত্ব ছাড়া আরেকটি পলাশী, নতুন মীরজাফরদের উদ্ভব হতে যে সময় লাগবে না তা সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বের আশু কর্মকান্ডে অনেকটাই প্রতিফলিত।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির