post

সিন্ডিকেট হলুদ সাংবাদিকতা ও কয়েকটি ঘটনার পোস্টমর্টেম

২৩ মার্চ ২০১৪
media-01আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া (পর্ব ৩) ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ড ঘটনা ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন (৩৫) নৃশংসভাবে খুন হন। মিরপুরের পলাশনগরে তার বাড়ির সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজীবের বাসা মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের ৫৬ নম্বর পলাশনগর। নিহত রাজীব একজন স্থপতি ও ব্লগার একটিভিস্ট আন্দোলনের সক্রিয়কর্মী। নিহত ব্লগার নিয়মিত লেখতেন ‘থাবা বাবা’ নামে ‘আমার বøগ’ এবং ‘নাগরিক ব্লগ’-এ। দীর্ঘ দিন ধরে ব্লগে ইসলাম, শেষ নবী মোহাম্মদ (সা) এবং ইসলামের পবিত্র নিদর্শন ও মহানবীর বিভিন্ন সুন্নাতকে কটাক্ষ করে সিরিজ আকারে বিভিন্ন লেখা লিখে আসছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিহতের মামা খুররম হায়দার জানতে পারেন তার ভাগ্নেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে পল্লবী থানা পুলিশ পৌনে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ঘটনার পরপর মিরপুর ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করা হয়। মিডিয়া কী বলে ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠে ‘জামায়াত-শিবিরের হাতে প্রজন্ম সেনা খুন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে রাজীব হত্যার সাথে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে দাবি করা হয়। জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি হোসেন আহমেদ তফসিরের বরাত দিয়ে আরো বলা হয়, জামায়াত যদি আর কোন আন্দোলকারীর ওপর হামলা চালায় তাহলে জামায়াতের মগবাজার কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকে নিহত রাজীবের পিতা-মাতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ঘটনার পরপরই নিহতের স্বজন ও সহকর্মীরা জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছেন। তারা বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার পিতা ডা: নাজিম উদ্দিন এবং মা নার্গিস গ্রামের বাড়ি থেকে ছুটে এসে ছেলের হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাওয়ায় তাদের ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সমকাল রিপোর্ট করে, পরিবারের সদস্যরা ঘটনার পর পরই এ হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবির সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেন। জামায়াত-শিবিরবিরোধী অবস্থান নেয়ায় রাজীবকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করে ‘বøগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’ রাজীবের খুনিদের গ্রেফতার দাবি করেছে। সমকালের প্রতিবেদক ‘গণজাগরণের পক্ষে রাজীবের সাইবার যুদ্ধ ও জামায়াতীদের আক্রমণ’ উপশিরোনামে লেখেন, ‘নির্মমভাবে খুন হওয়া রাজীব হায়দার মৃত্যুর মাত্র ৯ ঘণ্টা আগে প্রজন্ম চত্বর থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা সম্পর্কে লিখেছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের বক্তব্য ১৬ ফেব্রুয়ারি ’১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজীবের বাসায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবির জড়িতÑ ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে ‘জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এরা কোন গণতান্ত্রিক দল নয়, এরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। পরাজিত শক্তি রাজাকার, আলবদর ও জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।’ (সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৭ ফেব্রুয়ারি ’১৩)media নৌমন্ত্রী শাহজাহান রাজীব হত্যার জের ধরে প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। রাজাকার আলবদরদের চিরতরে বাংলার মাটিতে কবর রচনার জন্য সকলকে এগিয়ে আসারও আহবান জানান তিনি। তিনি মাদারীপুরের গণজাগরণ মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। (সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৬ ফেব্রুয়ারি ’১৩) স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা রাজীব হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে বলেন, ওই এলাকাটিতে জামায়াত-শিবিরের গোপন আস্তানা রয়েছে। (সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৭ ফেব্রুয়ারি’১৩) রাশেদ খান মেনন (এমপি) মন্তব্য করেন, এই হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবির সরাসরি জড়িত। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির চক্র খুন করেছে। বিবৃতিতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের জন্য শাহবাগে আন্দোলন হওয়ায় এর উদ্যোক্তা বøগার রাজীবকে খুন করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র : ভোরের ডাক, ১৭ ফেব্রুয়ারি ’১৩) ছাত্রশিবিরের বক্তব্য এ দিকে রাজীব হত্যাকাণ্ডে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করায় মিডিয়াতে একটি প্রতিবাদবার্তা পাঠায় ছাত্রশিবির। প্রতিবাদবার্তায় বলা হয়, ‘রাজীবকে রাতের অন্ধকারে কে বা কারা খুন করেছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। পুলিশ হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে পারেনি। অথচ কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার ও বিভিন্ন মহল থেকে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। যা আসল খুনিদের আড়ালের অপচেষ্টা বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের অন্ধ দোষারোপ হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাতে আরো উসকানি দিতে পারে। দেশবাসী ভালো করেই জানেন, ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম মানুষ গড়ার; মানুষ মারার নয়। শাহবাগের সরকার সমর্থক আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উসকানি প্রদান এবং গণমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচারের ফলে ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি গণমাধ্যমের ওপর হামলা হচ্ছে। আমরা রাজীবসহ রাজপথে বর্তমান আন্দোলনে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে পরিচয় প্রকাশ করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। একই সাথে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ প্রকৃত ঘটনা কী সরকার ও তার আজ্ঞাবহ মিডিয়াগুলো জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করলেও তদন্তের শুরুতেই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। ডিবির প্রাথমিক তদন্তেই দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত এবং নারীঘটিত বিষয়ই মুখ্য। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তার দুই বান্ধবীকে। রাজীবের বøগার মেয়ে-বান্ধবী তানজিলা ও রাফিয়া এবং স্ত্রী বাসন্তিকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জেরাও করা হয়। ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ব্লগার বান্ধবী হলেও তানজিলা এবং রাফিয়া রাজীবের খুবই ঘনিষ্ঠ। তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে বান্ধবীদের কোন ছেলেবন্ধু ঈর্ষান্বিত হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। তানজিলা বলেন, ফেসবুকে রাজীবের সাথে প্রথম পরিচয়, পরে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব হয়। দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে আলোচনা হতো। প্রায় প্রতিদিনই দু’জনের সাথে দেখা হতো। অন্য দিকে রাফিয়া জানান, ঘটনার সময় তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালে ছিলেন। তবে কেন, কী কারণে তিনি ত্রিশাল গিয়েছেন এ ব্যাপারে ডিবির কাছে মুখ খুলেননি। মামলার চার্জশিটে নিহতের বাবা তার ছোট ছেলে নোবেলের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন রাজীব বিকেল ৫টার দিকে তার বান্ধবী তানজিলাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। তারপর রাত সাড়ে আটটার দিকে পলাশনগরের বাসার বাউন্ডারি দেয়ালের পাশে রাজীবের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। মুখোশধারী ২ যুবককেও পালিয়ে যেতে দেখেন তিনি। তিনি বলেন, আমার ধারণা অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। পল্লবী থানার ওসি এবং আত্মীয়স্বজনরা জানান, আড়াই বছর আগে অনলাইন বান্ধবী বাসন্তীকে বিয়ে করে রাজীব। কিন্তু একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকা, পরকীয়ায় আসক্তি ও লিভটুগেদারসহ নানা কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দফায় দফায় ঝগড়া হতো। কয়েক মাস আগে তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায়ে বাবার বাড়িতে চলে যান বাসন্তী। জানা গেছে রাজীব ‘নূরানী চাপা সমগ্র’ নামে বøগে সিরিজ লিখত। তার অধীনে ‘মোহাম্মকের সফেদ লুঙ্গি, ঈদ মোবারক আর ঈদের জামাতের হিস্টুরি, ঢিলা কুলুপ, হেরা গুহা, ইফতারি ও খুর্মা খাজুর, সিয়াম সাধনার ইতিবৃত্তি, লাড়ায়া দে, মদ ও মোহাম্মক’ (নাউজুবিল্লাহ) শিরোনামে বেশ কিছু বøগ লিখে ব্যাপক সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়। (তথ্যসূত্র : দৈনিক আমারদেশ, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক সংগ্রাম, আরটিএনএন) টেনেহিঁচড়ে শিবিরকে জড়ানোর অপচেষ্টা রাজীব হত্যাকাণ্ডের সাথে ছাত্রশিবিরকে সরাসরি জড়াতে না পেরে ডিবি পুলিশ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন শুরু করে। তদন্তে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পেয়ে নতুন ফন্দি আঁটতে থাকে ডিবি। ১ মার্চ নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রফতার করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে তাদের কাছ থেকে জবানবন্দী আদায়ের নামে হাস্যকর তথ্য দিয়ে বলা হয় ‘পাঁচ ছাত্র স্বীকার করেছে তাদের এক বড় ভাই এর নির্দেশে তারা রাজীবকে হত্যা করেছে, যে বড় ভাই আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিল।’ (সূত্র : প্রথম আলো, ১১ মার্চ ’১৩) অর্থাৎ নির্দেশদাতা তথাকথিত ‘বড় ভাইয়ের’ আগে শিবির করার নাম দিয়ে প্রশাসন টেনেহিঁচড়ে ছাত্রশিবিরকে বলির পাঁঠা বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যায়। ৫ ছাত্র গ্রেফতারের কয়েকদিন পর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন ইমামকেও বহিঃষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজের কক্ষে নাকি রাজীব হত্যার পরিকল্পনা আঁটা হয়েছে জেনে প্রশাসন এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়। (সূত্র : প্রথম আলো, ১১ মার্চ’১৩) হত্যার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের পরিকল্পনা মসজিদের মতো খোলা স্থানে হওয়ার খবর দিয়ে প্রশাসন যেন লোক হাসানোর চেষ্টা করে। দৈনিক কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রচার করে জামায়াতের স্বার্থ হাসিলের জন্যই শিবিরের সাবেক নেতা রানার নির্দেশে রাজীব খুন হন। হত্যামিশনে অংশ নেয় ফয়সাল, মাকসুদ হাসান অনিক, এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম শিকদার, নাফিস ইমতিয়াজÑ যারা সবাই নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিবিএর ছাত্র। ১১ মার্চ’ ১৩ দৈনিক কালের কণ্ঠের রিপোর্টে দেখা যায় জবানবন্দীতে গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, ‘হত্যায় জড়িত ৭ জন শিবির এবং নিষিদ্ধঘোষিত হিজবুত তাহরিরের সদস্য।’ হিজবুত তাহরির আর ছাত্রশিবির সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতির সংগঠন হওয়ার পরও তারা নাকি রাজীব হত্যায় যৌথভাবে অংশ নিয়েছে। এভাবে হিজবুত তাহরিরের সাথে ছাত্রশিবিরকে মিলিয়ে জগাখিচুড়ি পাকানোর চেষ্টা চলতে থাকে। media-03 হত্যার প্রকৃত রহস্য আড়ালে নানা চেষ্টা মিডিয়া ও গোয়েন্দাদের তদন্তে জামায়াত- শিবিরের সম্পৃক্ততা আবিষ্কার করতে না পেরে অনেকটা হতাশ হয়ে প্রশাসন নতুন ফন্দি আঁটার চেষ্টা করে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিনকে বরগুনা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, তিনি ধানমন্ডি মাখরাজ মসজিদে প্রতি শুক্রবার নাস্তিক বøগারদের ধ্বংস করতে হবে এ মর্মে তালিমও দিতেন। (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর, ১২ আগস্ট ২০১৩) যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রাজীব হত্যাকাণ্ডের আগে বøগ শব্দটাই শুনেনি, সেখানে প্রশাসন বলছে কওমি পড়–য়া এ আলেম (মুফতি জসিমউদ্দিন) নাকি দীর্ঘদিন ধরে প্রতি শুত্রবারে নাস্তিক বøগারদের হত্যার তালিম দিতেন। তাই তিনিই রাজীব হত্যর মূল হোতা বলে জনগণকে বোঝ দেয়ার চেষ্টা করে প্রশাসন। এভাবে রাজীব হত্যাকান্ডের মূল রহস্য সম্পর্কে জাতিকে অন্ধকারে রাখতেই একের পর এক নাটক ও ফন্দি আঁটতে থাকে ডিবি পুলিশ। ১৪ আগস্ট ’১৩ বøগার আহম্মেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাদমান ইয়াসির মাহমুদকে (২০) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। ডিবির সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে রাত সোয়া ৮টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে। সাদমান ইয়াসির মাহমুদ নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র। ডিবি জানায়, ব্লগার রাজীব হত্যায় সরাসরি অংশ নেন মাহমুদ। হত্যার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। গ্রেফতার এড়াতে মাহমুদ মালয়েশিয়ায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও জানায় ডিবি। (সূত্র : নতুন বার্তা ১৪ আগস্ট ২০১৩) ২৭ আগস্ট ’১৩ ব্লগার রাজীব হত্যা মামলায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দীনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে মহানগর হাকিম হারুন-অর-রশিদের আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামি অনেক ধর্মীয় উসকানিমূলক ও জিহাদি বই লিখেছেন। এসব বই পড়ে ব্লগার রাজীবকে হত্যা করতে অনেকেই উৎসাহিত হয়েছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রæয়ারি রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। (সূত্র : বাংলাদেশ প্রেস : ২৭ আগস্ট ২০১৩) ‘বড় ভাই’ নাটকের পরিসমাপ্তি ব্লগার রাজীব হত্যার পর পরই কোন তদন্তের তোয়াক্কা না করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রীবর্গ অনেকটা অন্ধের মতোই জামায়াত-শিবিরকে দোষারোপ করে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু করে দেন। আর তাদের দোসর হলুদ মিডিয়াগুলো সে বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করতে থাকে মহা-উৎসাহের সাথে। কিন্তু পরবর্তীতে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রকে (হিযবুত তারির) ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রফতার করা হলে শিবিরকে এ ঘটনার সাথে সরাসরি জড়ানোর চেষ্টা আপাতত ব্যর্থ হয়। এরপর গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দীর নামে সাজোনো হয় ‘বড় ভাই’ নাটক। তথাকথিত সে ‘বড় ভাই’ এক সময় নাকি শিবির করতেন। তার নাম দেয়া হয় রানা। সে বড় ভাই গ্রেফতারে অভিযান চালানো হলো। কিন্তু একি! মুফতি জসিমউদ্দিন নামে যাকে গ্রেফতার করা হলো তিনি একটা মসজিদের খতিব। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান। এর আগে অবশ্য কেউ এ দলের নাম শুনেননি। এরপর আরো কয়েকজনকে আটক করা হলো। কিন্তু এদের মাঝেও রানা ভাইকে পাওয়া গেল না। ‘রানা’ নামে সেই বড় ভাইয়ের কোনো খবর আজও বাংলার মানুষ জানে না। যদিও মামলাটি এখনো বিচারাধীন তথাপি এটা বলা যায় যে ঘটনার সাথে শিবিরকে জড়াতে ‘বড় ভাই’ নাটকেরও আপাতত পরিসমাপ্তি ঘটেছে। (চলবে) লেখক : প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির