post

স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন বুনি আগামীর দিন শুধু সম্ভাবনার

মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

২৪ নভেম্বর ২০১৫
লাল-সবুজের পতাকা, কী অপূর্ব! প্রিয় মাতৃভূমি, নাম বাংলাদেশ। আকণ্ঠ ভালোবাসায় আনমনে মনের গহিনে সুর বেজে ওঠে “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি”। সত্যিই এমন দেশ অদ্বিতীয়, প্রিয় মাতৃভূমি বিচিত্র রূপে-রঙে অতুলনীয়, বাংলাদেশের তোলনা শুধুই বাংলাদেশ। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা চারদিকে নদ-নদীবেষ্টিত কী মনোমুগদ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ! নয়নাভিরাম ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে সত্যিই আমরা গর্বিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক দুর্যোগ ও বহিঃচক্রান্তের বহুবিধ বিপদ-ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের বয়স এখন ৪৪ বছর। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে বারবার আমরা থমকে দাঁড়িয়েছি। প্রতিনিয়ত মীরজাফর, ঘসেটি বেগম ও লেন্দুপ দর্জির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিকদের চলছে বিরামহীন লড়াই। এই যুদ্ধে দেশপ্রেমিককে জিততেই হবে। শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমাদের অর্জন অনেক, অনেক প্রত্যাশার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে চৌদিকে। ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে নতুন ভূখন্ড ও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করার প্রত্যাশা ছিল একটাই, আমরা নতুন উদ্যমে সকল শোষণ বঞ্চনার নাগপাশ কাটিয়ে একটি প্রত্যাশিত ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ব। যেখানে সুশাসন, নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত, জননিরাপত্তা টেকসই হবে; যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, থাকবে না দলান্ধতা। অপার সম্ভাবনার এ দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলেও তরুণদের চোখে-মুখে নতুন স্বপ্ন দেখে আমরা আশান্বিত হই, নতুন করে সম্মুখে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত হই। স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন বুনি আগামীর দিন শুধু সম্ভাবনার। দেশ অনেক সমস্যায় জর্জরিত হলেও সঠিক নেতৃত্ব ও সম্ভাবনার তরুণ প্রজন্মকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে পারলে সকল চড়াই-উতরাই মোকাবেলা করে বাংলাদেশ একসময় বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পটভূমি কারো অজানা নয়। পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়েছিল, যাতে হিন্দু জমিদার ও ব্রিটিশদের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্ত হয়ে মুসলমানরা আলাদা আবাসভূমি গড়ে তুলবে, সকল অন্যায় ও অবিচারের অবসান হবে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান হওয়ায় কৃষ্টি-কালচার সামাজিক মূল্যবোধ প্রায় একই রকম ছিল। ব্রিটিশ ও জমিদারদের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে শাসকবর্গ পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর সাথে স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করতে লাগল, যা ইতঃপূর্বে ব্রিটিশ ও হিন্দু জমিদাররা করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী অধিবাসীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু শাসকবর্গ তা কর্ণপাত করলেন না। মূলত তখন থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আলাদা রাষ্ট্রভাষা ও আলাদা রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্ন দেখছিলেন। দৃঢ়চেতা বাংলাদেশীরা জীবনের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা আদায় করে নিলেন। সময়ের আবর্তে পাকিস্তানি শাসকবর্গের বাড়াবাড়ি সীমা অতিক্রম করতে লাগল; যার ফলে ১৯৭১ সালে তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নতুন স্বপ্নে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়ে সকল শোষণ-বঞ্চনার নাগপাশ কাটিয়ে একটি প্রত্যাশিত ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখনও যখন সেই পুরনো কায়দায় নব্য স্বৈরাচারীরা লালিতস্বপ্নে লাথি মেরে সব স্বপ্নসাধ খানখান করে দেয় তখন মুক্তিযোদ্ধারা যন্ত্রণায় ছটফট করেন আর ভুয়া সার্টিফিকেটধারীরা কেলিয়ে হাসে। মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণায় লেন্দুপ ও মীরজাফররা উল্লসিত হয়ে নতুন করে আগামীর বাংলাদেশকে খামছে ধরে দুর্নীতিতে উবে যায়, দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, পরিবার ও দলান্ধতায় মগ্ন হয়। তখন বিজয়ের ৪৪ বছরে কী পেলাম ও কী হারালাম তার হিসাব কষতে হয়। এমন বঞ্চনার পর কোনো দেশপ্রেমিক বসে থাকতে পারে না। তখন দেশপ্রেমিকদের দৃঢ়প্রত্যয়ে সকল অপকর্মের হোতাদের হটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা থাকে না, কারণ দেশটাতো আমাদের আর লড়তেও হবে আমাদের। অপরাজনীতির কোপানলে সমগ্র জাতি পিষ্ট। যে যার মত ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে এহেন কোন কাজ নেই যা তারা করেনি। দেশী-বিদেশী সকল পক্ষকে নিজেদের বলয়ে করায়ত্ত করে শাসকমহলের একদলীয় শাসন কায়েমই ছিল সবচেয়ে লক্ষণীয়। ’৭১ থেকে ’৭৫, এর পরের ইতিহাসতো সবার জানাই আছে। ক্ষমতাসীনরা দিল্লি, মস্কো, পিকিংকে আয়ত্তে আনতে কি না করেছে? চলমান সময় এর গভীরতা আরো অনেক গুণে বেড়েছে। পাশের দেশের বেড়াজালে ১৬ কোটি মানুষ বন্দি! শত্রুর নাগাল থেকে নতুন সূর্যোদয়ের বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলো। ভারত আমাদেরকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করেছিল, কিন্তু তারা আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বন্ধুত্বের প্রশ্নে কি উত্তীর্ণ হতে পেরেছে? সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিসমূহ কাগজে-কলমে লেখা থাকলেও সফলতার মুখ বাংলাদেশ এখনো দেখেনি। প্রতিটি চুক্তি আমাদের জন্য যেন গলার কাঁটা। টিপাইমুখ বাঁধ, ফারাক্কা বাঁধ ও ট্রানজিট! এক এক সময় এক একটি চুক্তি ও চুক্তি অপেক্ষমাণ আলোচিত এজেন্ডাসমূহ আমাদের মারাত্মকভাবে ভাবিয়ে তোলে! যে পানি আমাদের সর্বনাশ করে ফেলে, যখন আমাদের পানির প্রয়োজন নেই, তখন তারা আমাদের পানি দেবে। যেমনÑ ফারাক্কা বাঁধ। ট্রানজিটের মাধ্যমে তাদের অচল পণ্য আমাদের দেশে ঠাঁই করে নেবে। আমাদের পণ্যসামগ্রীর কী হবে? তাদের কৃষ্টি-কালচার ছড়িয়ে দিতে এখানে দেদার স্যাটেলাইট চ্যানেল ছড়িয়ে দেবে, আর আমাদের চ্যানেলের কী হবে? নিজের স্বার্থের চাইতেও পরের স্বার্থ রক্ষাই যেন বড় ব্যাপার! এখন দেশে একটি চরম সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। দুর্নীতিবাজকে যেখানে সরকারের তল্পিবাহক সংগঠন দেশপ্রেমিক ঘোষণা দেয়, সরকারের যথার্থ সমালোচনা ও প্রতিবাদকে চিহ্নিত করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে, রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে যখন দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, জনগণের ভোট প্রয়োগের পদ্ধতি যখন হয় চোর- ডাকাত খেলা! তখন শাসকগোষ্ঠী কি করে জনগণের জানমালের নিশ্চয়তা দিতে পারে? রাজনৈতিক খেলায় অনেক কিছু বিরোধী মতের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ক্ষমতার স্বাদ সাময়িক সময়কাল আস্বাধন করা যায়, কিন্তু তা কখনো চিরস্থায়ী হয়েছে বলে ইতিহাস বলে না। অতীত ইতিহাস বলে জাতি হাল ছাড়ে না। অপেক্ষায় থাকে একটি মোক্ষম সময়ের, যেমন অপেক্ষা করেছিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। সব কিছুর একটা সীমা আছে, কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। হয়ত আরো কিছু সময়ের ব্যাপার, ধৈর্যের ধারালো তরবারি দিয়ে দেশের নির্যাতিত নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর আর কিছুসময় অতিক্রম করতে হবে। অচিরেই স্বৈরশাসকদের কবল থেকে দেশ মুক্ত হবে। স্বৈরনীতির ফলে রাষ্ট্রনায়করা অন্ধ-বধির হয়ে যায়। চাটুকারদের তৈলমর্দনে জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধের ওয়াদা দিব্যি ভুলে যায়, তখন আরো বেশি জুলুমবাজি করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। আমাদের দেশের চলমান শাসকগোষ্ঠীর ওপরও ঠিক তেমন ভূত চেপেছে। বিরোধী মতকে দমন করতে গিয়ে দিব্যি জঙ্গি ও আইএস বানিয়ে ছাড়ছে। এমন অহমিকার কারণে এখন ভিন্ন কোনো অপশক্তি সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য দেশী-বিদেশী নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হত্যা করে পার পেয়ে যাচ্ছে। তৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করলে কি হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে? যে সরকার এত দিন সেই রাখাল ছেলের মত বাঘ বাঘ, বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচামেচি করছিল সেই সরকারই এখন বলছে না দেশে কোনো জঙ্গি নেই, আইএস নেই! এক মুখে দুই কথা। একটি দেশের যেকোনো জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হলে সরকারের পাশাপাশি কার্যকর বিরোধীদল ও সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতার প্রয়োজন, এ ছাড়া শুধুমাত্র সরকার বাহাদুররা সব সামাল দেয়া কখনো সম্ভব নয়। এত চড়াই-উতরাইয়ের পরও আমরা স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকি। যে স্বপ্ন আমাদেরকে ঘুমোতে দেয় না, যে স্বপ্ন শুধু সম্ভাবনার, যে স্বপ্ন দেখে দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিক, যে স্বপ্ন তাদের দুর্বারগতিতে সম্মুখে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। তারুণ্য একটি দেশের জন্য বড় ধরনের শক্তি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ জনগোষ্ঠী যুবক-তরুণ, যারা কর্মক্ষম। চক্রাকারে ১০০ বছরের মধ্যে এই সুযোগ কোন কোন রাষ্ট্রের জন্য আসতে পারে। এ সুযোগটি যেকোনো দেশের শাসকগোষ্ঠীর জন্য এক বিরল প্রাপ্তি। যেমন মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর এ সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পেরেছিল। যেটাকে উবসড়মৎধঢ়যরপ ফরারফবহফ বলে। বাংলাদেশের সাথে সমসাময়িক সময়ে দেশ দু’টি স্বাধীনতা লাভ করে কারিগরি, অর্থনীতি ও শিক্ষায় এগিয়ে গেছে বহুদূর। আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠী আমাদের জন্য কোনোভাবেই বোঝা নয়। দেশে এখনো প্রায় ১ কোটি শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে, এই উদ্যমী যুবাদের জন্য রাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য কোনো কাজের সুব্যবস্থা করতে পারেনি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয়, তাই এখানে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠছে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না। আমাদের জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও দক্ষ-অদক্ষ একটি অংশ বহিঃবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, যাদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের আয়ের একটি বড় অংশ। এসব জনগোষ্ঠী যদি শিক্ষিত ও দক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারত তাহলে জাতীয় আয় (রেমিট্যান্স) বহুগুণে বেড়ে যেতো। যেমনÑ ভারত এ ক্ষেত্রে কিছুটা সফলতার মুখ দেখেছে। এতে রাষ্ট্র যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয় ঠিক তেমনি ব্যক্তি ও পরিবার সমৃদ্ধ হয়। আর ব্যক্তি ও পরিবার সচ্ছল হওয়া মানে একটি রাষ্ট্র সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া। ঠিক এক একটি পরিবার শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা মানে একটি রাষ্ট্র পিছিয়ে থাকা। যে কোনো অর্জনকে টেকসই ও মজবুত করতে হলে তার পেছনে প্রয়োজন ব্যক্তির শ্রম ও সততা। কারো শ্রম আছে কিন্তু সততা নেই অর্থাৎ কোন কাজে তার এই অর্থ ব্যয় করবে? কিভাবে তা আয় করবে বা রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্ববোধ আছে কি না? যাকে আমরা বলি নৈতিকশক্তি, যা মানুষের বিশ্বাস ও কর্মকে শাণিত করে; সকল প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে সম্মুখে এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে। আবার কারো সততা আছে কিন্তু দক্ষতা নেই তাহলেও চলবে না। কারণ কাজ করতে গেলেই কারো সততা ও অসততার পরীক্ষা মিলে। অদক্ষ বা শ্রমহীন ব্যক্তি যতই সৎ লোক দাবি করুক না কেন সমাজ ও রাষ্ট্রে তার অবস্থান গুরুত্বহীন। তাই শ্রম ও সততা পরস্পরের পরিপূরক, জীবন ও ধর্ম যেমন একজন ব্যক্তির জন্য পরিপূরক। আমাদের দেশেও দক্ষ ব্যক্তির অভাব নেই। কিন্তু সততার অভাবে দেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি উপাধি পেয়েছে! তাই এই বদনাম ঘুচাতে নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে যুবসমাজের দক্ষতা অর্জন ও সততার বিকল্প নেই। এতদুভয়ের অনুপস্থিতিতে যে সমাজ গড়ে উঠবে তা হবে নৈতিক অবক্ষয় ও পরাজিত। বর্তমানে মাদকব্যাধিও যুবসমাজকে মারাত্মক মাত্রায় আঘাত করেছে। এ ছাড়াও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে যুবসমাজ মুক্ত হতে পারেনি। এরা দলীয় লেজুড়বৃত্তির অক্টোপাসে আবদ্ধ হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে মারাত্মক সঙ্ঘাতমুখর করে তুলছে। যুবকদের ক্ষমতা দখলের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব আঘাত সাংঘাতিক বাঁচা-মরার লড়াই। নানা অবক্ষয়ে সর্বত্র দিন দিন সমাজটা যেন একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এরপরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসের যখন সম্মিলন ঘটে তখন দুর্বার শক্তিতে পরিণত হয়। প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় যেকোনো অনাচারের বিরুদ্ধে। পরিবর্তন সম্ভব হয় ঘুণেধরা সমাজের, আমরা সেই স্বপ্নই দেখি। আমরা তরুণদের দেখেই যৌবনের গান গাই, নতুন নতুন স্বপ্ন বুনি। যে স্বপ্ন আমাদের অস্থির করে রাখে, যুবাদেরকে দক্ষ ও খোদাপ্রেমিক করতে মরিয়া হয়ে উঠি। যে তরুণরা হবে হজরত উমরের মতো সাহসী, হজরত আবু বকরের মতো হবে আত্মত্যাগী ও ধৈর্যশীল। যাদের স্বপ্নসাধ হলো ভোগ নয় ত্যাগেই আত্মতৃপ্তি ও মহানন্দের। তাইতো আমরা কেউ কেউ ছুটে চলি তাদের পানে, হেরার রাহে; ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিমের পথে। যে পথ চির কল্যাণের, অবিনশ্বর! আগামীর তরুণরাই আমাদের সম্ভাবনা। প্রিয় বাংলাদেশ এক অপার সম্ভাবনার দেশ। জনসংখ্যার বিশালতা, তারুণ্য ও প্রাকৃতিক (উর্বর মাটি) সম্পদই আমাদের এক অপূর্ব সম্ভাবনা, যা বিশ্বের খুব কম দেশেই খুঁজে পাওয়া যাবে। বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলাই বাংলাদেশের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। আর তা করতে ব্যর্থ হলে এই বিশাল মানবগোষ্ঠী মানবসম্পদ হওয়ার পরিবর্তে মানববোঝায় পরিণত হবে। শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করতে পারলেই তরুণরা তারুণ্যের বলে নিজেকে, পরিবারকে ও প্রিয় মাতৃভূমিকে সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এর জন্য যদিওবা আমাদের রাষ্ট্রনায়করা তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেননি। গতানুগতিক অচল শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বড় অংশ বেকার যুবগোষ্ঠী তৈরি করছে। যারা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। মাটির উর্বরতা আমাদের এই ছোট্ট দেশটিকে অনেক বেশি সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। এখানে প্রতিটি ইঞ্চি জমিতে সোনা ফলে! ধান, সোনালি আঁশ যার কথা কে বা না জানে? এ ছাড়াও গ্যাস শিল্প এক সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কারিগরি দক্ষতার অভাবে আমরা অনেক খনিজপদার্থ উত্তোলন করতে পারছি না। গার্মেন্টসশিল্প রাজস্ব আয়ের অন্যতম অংশবিশেষ, যা সার্ক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ সম্ভাবনাগুলো অর্জনে আমরা এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছি। প্রতিটি দেশেই নানা ধরনের সম্ভাবনা ও সমস্যা বিদ্যমান। সেই দেশের নেতৃত্ব ও জনগোষ্ঠী যখন সমস্যাকে মোকাবেলা করে সম্ভাবনাকে কাজে না লাগায়, তখন একটি দেশের ভবিষ্যৎ বলতে আর কিছু থাকে না। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজেদের বিশ্বদরবারে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ, মানসিকতা ও প্রচেষ্টা ছাড়া বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। বিপুল জনগোষ্ঠী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বেকারত্ব, রাজনৈতিক মোড়কে সন্ত্রাস, শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি ও মাদক আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হলেও নেতৃবৃন্দের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। ৪৪ বছর পর একজন নাগরিক হিসেবে ভাবতে অবাক লাগে যখন দেখি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো নানামুখী ত্রুটি, ভাবতে অবাক লাগে দেশে এখনো শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত প্রায় ৩ কোটি যুবক বেকার! ভাবতে অবাক লাগে যখন এখানে মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচারের অধিকার নেই বলে প্রশ্ন ওঠে, এখনো মানুষ গণতন্ত্রের শব কাঁধে নিয়ে ঘুরে ফিরে। সব কিছুর মূলে হচ্ছে আমাদের সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাব। এত হতাশার পরও আমরা আমাদের যুবাদের তারুণ্যোচ্ছলতায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাই। আমার রিক্ত হস্তে তরুণদেরকে আহ্বান জানাই এ দেশ আমার, আমাদের ও আমাদের সকলের। আমরা এ দেশটাকে অনেক ভালোবাসি। স্বদেশকে আর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন দেখতে চাই না, দেখতে চাই না কোন একদলীয় স্বৈরশাসক বা পুলিশি রাষ্ট্র,  দেখতে চাই না বেকারত্বে ধুঁকে ধুঁকে মরতে বিধবা মায়ের শিক্ষিত যুবককে। চাই না নৈতিক অবক্ষয়ের তলানিতে যেখানে কোনো মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হবে। নিশ্চয়ই পারবে আমাদের তরুণেরা। একবুক আশা, হৃদয়ভরা স্বপ্ন নিয়ে জাহেলিয়াতের অক্টোপাস থেকে মুক্ত হয়ে ¯স্রষ্টার রাহে চলার প্রচেষ্টা দৃঢ়পদে অব্যাহত রাখলে তারুণ্যের বিজয় হবেই হবে। তাইতো স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন বুনি, আগামীর দিন শুধু সম্ভাবনার...। লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বিআইসিএস

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির