নির্বাসনে ইমাম
১৯৬৪ সালে ৬২ বছর বয়স্ক ইমামকে তুরস্কে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেক্যুলার টার্কিশ গভর্নমেন্ট প্রথমেই ইমামের পাগড়ি পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষিদ্ধ করা হয় ধর্মীয় পোশাক পরাকেও। বড় ছেলে মুস্তাফাকে চিঠি লেখেন ইমাম, যার গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে তুলে ধরছি- “প্রিয় সাইয়্যেদ মুস্তাফা! আল্লাহ তোমার সাহায্যকারী হোন এবং তাঁর সন্তুষ্টির দিকে তোমাকে পরিচালিত করুনÑ আলহামদুলিল্লাহ ! আমি নিরাপদে আঙ্কারায় পৌঁছেছি গত সোমবার। আলহামদুলিল্লাহ! আমার স্বাস্থ্য ভালো আছে, চিন্তার কিছু নেই। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য কোনো অনিষ্টকে পূর্বনির্ধারিত করে দেন না। এইখান থেকে আমি আমার পরিবারের সকল সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনকে শুধু আল্লাহর দ্বারস্থ হতেই উপদেশ দিচ্ছি এবং তারা যেনো আর কারো সাহায্যপ্রার্থী না হয়। আর আমি তোমাকে ধৈর্য ধরার ও দৃঢ় থাকবার উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহর ইচ্ছা অবশ্যই পূর্ণ হবে।” এ দিকে টার্কিশ সরকার একটা নিরিবিলি জায়গা খুঁজছিলো, যেখানে ইমাম তাঁর বাকি জীবন কাটাতে পারবেন। কিন্তু ইমাম টার্কিশ ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তুরস্কের ভাষা শিখলে সাধারণ মানুষের সাথে ইমামের যোগাযোগ সম্ভব হবে, এই আশঙ্কায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাঁকে আরেক শহরে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখলেন, যেনো ইমাম খোমেনি টার্কিশ ভাষা শিখতে না পারেন। নির্বাসনে থেকেই ইমাম বিভিন্ন ধর্মীয়-রাজনৈতিক ইস্যুতে দেশের জনগণকে বার্তা পাঠাতেন, ফতোয়া জারি করতেন। ইসলামবিদ্বেষী এই সরকারের সাথে যেকোনোরূপ সহযোগিতা করা, সরকারের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা, সরকারের কর্মকাণ্ড প্রচার করাকে হারাম ঘোষণা করলেন তিনি। ইমামের ওপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হলে তিনি মসজিদে যেতে শুরু করলেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তুর্কি ভাষায় মসজিদে এক ভাষণ দিলেন ইমাম, যার ফলশ্রুতিতে ভীত টার্কিশ সরকার তাকে দেশে রাখতে অস্বীকৃতি জানালো। ৫ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে ইমাম খোমেনি প্লেনে উঠলেন।
[caption id="attachment_6611" align="aligncenter" width="955"] তুরস্কে ইমাম ও তার ছেলে আহমদ (পেছনে)। পাগড়ি খুলে নেয়া হয়েছে[/caption]ইরাকের বাগদাদ এয়ারপোর্ট পৌঁছালেন ইমাম খোমেনি। শুরু হলো ইরাকে দীর্ঘ নির্বাসন জীবন। ইমাম খোমেনির আগমনের সংবাদ পেয়ে নাজাফ ও কারবালাসহ ইরানের বিভিন্ন স্থান থেকে দ্বীনি ছাত্ররা তার সাথে দেখা করতে এলেন। কিছুদিন পর কারবালায় পৌঁছালে সেখানের আয়াতুল্লাহ মুহাম্মাদ আল শিরাজির অতিথি হিসেবে কিছুদিন থাকেন এবং সেখানেও নামাজের নেতৃত্ব দেন। এরপর ইমাম নাজাফে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাসন জীবনের ১৩ বছর ইমাম এখানেই ছিলেন। আর নাজাফ ছিলো ইসলাম ধর্মচর্চার এক বিখ্যাত কেন্দ্র। সেখানেও ইমাম শিক্ষকতাসহ আলেমগণের মাঝে তার বৈপ্লবিক চেতনার প্রচার করেন। ইমামের স্ত্রী এবং বড় ছেলেও তার সাথে সেখানে এসে থাকেন। ইরান সরকার ভেবেছিলো যে প্রচলিত ধারার রাজনীতি থেকে দূরে থাকা নাজাফি আলেমগণের মাঝে ইমাম খোমেনির থাকাটা ইরান সরকারের পক্ষে সুবিধাজনক হবে। কিন্তু ইমাম নিজস্ব হাওজা খুলে বসলেন এক মসজিদে এবং সেখানে ফিকাহ শিক্ষা দিতে শুরু করেন। বছরখানেকের মাঝেই তার বিপ্লবী চিন্তাধারা, বেলায়েতে ফকিহ, অর্থাৎ ইসলামী সরকার নিয়ে লেকচার দেয়া শুরু করেন। এসব লেকচার থেকেই পরবর্তীতে ইরানের সংবিধানের মূলনীতি তৈরি করা হয়। পলিটিক্যাল ইসলাম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইমাম বলেন- “ইসলাম শুধুমাত্র মানুষের সাথে স্রষ্টার সম্পর্কের আলোচনায় সীমিত নয়। ইসলাম একটি পলিটিক্যাল ধর্ম। ইসলামের পলিটিক্স এর অন্যান্য নিয়ম-নীতি ও ইবাদতের সাথে জড়িত। যেহেতু সরকারের একটি পলিটিক্যাল দিক আছে, ইসলামেরও বিভিন্ন পলিটিক্যাল দিক আছে।” ইরাকে অতি সতর্কতার সাথে নিজের হাওজা পরিচালনা করেন ইমাম। সেখানের কোনো আলেম কিংবা কারো যেনো এটা মনে না হয় যে তিনি সেখানে কর্তৃত্বশীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, সে জন্য ইমাম তার শিক্ষকতা ও অন্যান্য বক্তব্যকে সুকৌশলী করেন এবং মূলত ইরানের সাথে যোগাযোগ রেখে বিপ্লব পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন। তা সত্ত্বেও তার চিত্তাকর্ষক বক্তব্যের কারণে এমনকি নাজাফেও ছাত্রের সংখ্যা বাড়তে লাগলো এবং ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে, এমনকি ইন্ডিয়ানরা পর্যন্ত তার ক্লাসে আসতে শুরু করলেন।
[caption id="attachment_6612" align="aligncenter" width="976"] ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্র উদযাপনে গ্র্যান্ড প্যারেড[/caption]ইমাম খোমেনি তার কঠোর নিয়মতান্ত্রিক জীবনের জন্য নাজাফে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও তিনি নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করতেন। চারটায় তাহাজ্জুদ নামাজ ও কোরআন পড়া থেকে শুরু করে ফজর পার করে ছয়টা পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতেন। এরপর আধঘণ্টার মত বিশ্রাম নিয়ে মসজিদে চলে যেতেন, যেখানে তার হাওজা (শিক্ষাদান কেন্দ্র)। সেখানে লেকচার দেয়া শেষে সাড়ে এগারোটায় ঘরে ফিরে খাবার খেতেন ও বিশ্রাম নিতেন। এরপর ছাত্রদের উদ্দেশে দেয়া লেকচারগুলো নিজে লিপিবদ্ধ করতেন। তারপর ভিজিটরদেরকে সময় দিতেন পাঁচ থেকে দশ মিনিট করে। জোহরের নামাজ তিনি মসজিদে আদায় করতেন। একটার দিকে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেতেন। এরপর আধাঘন্টা থেকে পৌনে এক ঘন্টা ঘুমাতেন। চারটার দিকে নিজ হাতে বানানো চা খেতেন। সোয়া চারটায় ছাদে কিংবা পেছনের উঠানে আধাঘণ্টা হেঁটে পড়াশুনায় বসতেন। সন্ধ্যায় নামাজ শেষে বাড়ির উঠানে ৪৫ মিনিট একাকী বসতেন। রাত একটার দিকে হযরত আলীর কবরে যেতেন এবং ফিরে এসে দুটো পর্যন্ত স্টাডিতে সময় কাটাতেন। এরপর দু-ঘন্টা ঘুমিয়ে তিনি আবার চারটা থেকে দিন শুরু করতেন। সর্বমোট চার ঘন্টারও কম ঘুমাতেন তিনি। ইরাক থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পর্যন্ত এই রুটিন অনুসরণ করেছিলেন ইমাম। এ দিকে ইরানে ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্র উদযাপন করতে শাহ ব্যাপক আয়োজন করলো। ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে বহু রাষ্ট্রপ্রধান, রাজাসহ উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলো। গ্র্যান্ড প্যারেড শেষে ভোজসভার আয়োজন করা হলো। সেখানে ৬৯টা দেশের ৫০০ অতিথির খাবারের আয়োজন করা হয়েছিলো।
[caption id="attachment_6613" align="aligncenter" width="888"] সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ইমাম খোমেনি[/caption]শাহ তার স্বৈরশাসন চালিয়ে যেতে লাগলো। ওদিকে ইরাকের নাজাফে বসে ইমাম খোমেনি শাহের সাথে লড়াই করতে থাকেন। আর এই লড়াই অস্ত্রের মাধ্যমে ছিলো না। এই লড়াই ছিলো জনগণকে সচেতন করার লড়াই। মুসলমানদের সচেতন করতে করতে এমন পর্যায়ে উন্নীত করা, যেনো শাহের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও ধোঁকাবাজিতে প্রতারিত হওয়ার মত একটি মানুষও না থাকে। আর সেই পর্যায়ে পৌঁছালে শাহের উৎখাত ও ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত একটি প্রক্রিয়া। ইমামের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বিপ্লব চলতে লাগলো একাধারে ইমামের নির্দেশনা ও কোমে তাঁর ছাত্রদের উদ্যোগে। আয়াতুল্লাহ বেহেশতি, আয়াতুল্লাহ মুতাহারি, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ি, হাশেমি রাফসানজানিসহ আরো অনেক আলেম বিভিন্ন শহর ও গ্রামে যেতেন, মানুষকে সচেতন করতেন সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এবং জানাতেন শাহ কর্তৃক ইমাম খোমেনিকে বহিষ্কারের ঘটনা। গোটা ইরানে ইমাম খোমেনি তখন ইরানের অবিসংবাদিত মুসলিম নেতা। ইরাকের সাথে ইরানের বর্ডার থাকায় সহজেই ইমামের লিখিত বক্তব্য গোপনে ইরানে পাঠানো সম্ভবপর হয়। গোপনে প্রিন্ট করা এসব বক্তব্য অতি সতর্কতায় বিশ্বস্ত লোকের মাধ্যমে ইরানে পাঠানো হতো। এ ছাড়াও তিনি টেপ রেকর্ডারে বক্তব্য রেকর্ড করে ক্যাসেট পাঠিয়ে দিতেন। সেখান থেকে তার বক্তব্য লিখে প্রচার করা হতে থাকে। এর জন্য বিশেষায়িত টিম ছিলো। ইমামের বক্তব্য পাওয়ার সাথে সাথে তারা সেগুলোর অসংখ্য কপি করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতেন। ইমাম তার নিজের ছেলে সাইয়্যেদ আহমাদ এর কাছে চিঠি লিখতেন এবং সাইয়্যেদ আহমাদও তার উত্তর পাঠাতেন। তবে এগুলো কোডেড (coded) চিঠি ছিলো। অর্থাৎ চিঠির বক্তব্য ইমাম খোমেনি ও তাঁর ছেলে ছাড়া আর কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিলো না। শাহের হাতে পড়ে চিঠি গুম হবার ভয়ে সরাসরি ইরান-ইরাক কিংবা নাজাফ- তেহরান চিঠি না পাঠিয়ে প্রয়োজনে তাঁরা কুয়েত, লেবানন, সিরিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ হয়ে চিঠি নিয়ে যেতেন, কখনোবা ডাকযোগে এইসব দেশ হয়ে ইমামের কাছে পাঠাতেন। ইমামও সেই চ্যানেলেই জবাব পাঠাতেন। এভাবে নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ইমাম খোমেনি ইরানের গণ মুসলমানের জন্য কাজ করে যেতে থাকেন সুদূর নাজাফ থেকে। সেসময়ে ইরাকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্দুল সালাম আরেফ। ইমাম নাজাফ থেকে ইরানে এত বেশি চিঠি ও অডিও টেপ পাঠাতেন যে, আব্দুল সালাম আরেফ ঘোষণা দিলেন ইমামের জন্য প্রাইভেট রেডিও স্টেশন প্রতিষ্ঠা করে দেয়ার। কৌশলগত কারণে ইমাম তা গ্রহণ করেন এই শর্তে যে, রেডিওর কার্যক্রমে ইরাক সরকার কোনো বাধা দেবে না কিংবা কোনো শর্তারোপ করতে পারবে না। কিন্তু ১৯৬৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এ স্বৈরশাসকের সাথে ইমামের কোনো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হওয়ার সুযোগ থাকলো না।
ইমামের বড় ছেলের শাহাদাত
সেপ্টেম্বর ১৯৭৮। ইমাম খোমেনির বড় ছেলে সাইয়্যেদ মুস্তাফার সাথে কয়েকজন দেখা করে রাত আড়াইটার দিকে ফিরে গেলো। সকালে সাইয়্যেদ মুস্তাফার বন্ধুরা এসে তাকে ডাকলেন। জবাব না পেয়ে তাদের একজন উনার কাঁধে নাড়া দিলেন। সাইয়্যেদ মুস্তাফা পড়ে গেলেন; মৃত। মাঝরাত থেকে ভোরের মাঝে তাঁর মৃত্যু হয়েছিলো। হসপিটালে নেবার পর ডাক্তার বললেন বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। ইমাম খোমেনি এর কিছুই জানতেন না। ইমামের ছোট ছেলে সাইয়্যেদ আহমাদ বাড়ি ফিরে উপরতলায় দরজা আটকে কান্না করছিলেন। আর অন্যরা যখন ইমামের সামনে বসলেন, তীব্র কষ্ট ও বেদনায় তারা মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পারলেন না। ইমাম বুঝতে পারলেন কিছু একটা হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলেন, আহমাদ কোথায়? এরপর তিনি দ্বিতীয়বার তাঁর ছোট ছেলের নাম ধরে ডাকেন। এরপর সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, “আমি বুঝতে পারছি কী ঘটে থাকবে। তাই আমাকে বলো, মুস্তাফার কিছু হয়েছে?” তখন উপস্থিত সবাই মাথা নিচু করলেন। ইমাম খোমেনি সবসময় মেঝেতে বসে বৈঠক করতেন। ইমাম তাঁর আঙুল মেঝেতে স্পর্শ করে কিছুক্ষণ হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। এরপর বললেন মৃতদেহকে ২৪ ঘণ্টা পরে দাফন করতে। উপস্থিত যাঁরা ইমামের অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁরা পরে বলেছিলেন যে ইমাম যখন মেঝেতে আঙুল স্পর্শ করে সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন, তিনি যেনো তাঁর হৃদয় থেকে ছেলের প্রতি সমস্ত ভালোবাসা শূন্য করে দিচ্ছিলেন, আর সেটাকে আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি দিয়ে প্রতিস্থাপন করছিলেন। এরপর তিনি খুব শান্ত হয়ে গেলেন। ইমাম খোমেনি তাঁর বড় ছেলের মৃত্যুতে কান্না করেননি। এমনকি দাফনের সময়ও তাঁকে কাঁদতে দেখা যায়নি। কিন্তু যখন ইমাম হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের ঘটনার বর্ণনা করা হয়, তখন ছাড়া। এমনকি যেদিন তাঁর বড় ছেলের মৃত্যু হলো, মসজিদের সবাই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলো, যখন ইমাম জামাতে নামাজ আদায় করলেন, অথচ তখনও তাঁর ছেলের দাফন হয়নি। এরপর তিনি নিয়মমাফিক মিম্বরে বসে লেকচারও দিলেন। এসব ঘটনা প্রতিটা মানুষের জীবনেই আসে। কিন্তু আল্লাহর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্কের উচ্চতায় পৌঁছালে মানুষের জীবন দর্শন বদলে যায় এবং আপাত দুঃখ-কষ্টকে তখন মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ হিসেবে উপলব্ধি হয়। এ জন্যই ইতিহাসে ইমাম খোমেনির মত মানুষকে দেখা যায় ছেলের শাহাদাতেও দৃঢ় থাকতে, বড় বড় আলেম-ওলামাকে দেখা যায় জালিমের ফাঁসিকাষ্ঠে প্রশান্তচিত্তে স্মিতহাস্যে দাঁড়িয়ে থাকতে। কারণ এটাকে তারা এক দুনিয়া থেকে আরেক দুনিয়ায় গমন মনে করেন মাত্র, আর সেই দুনিয়া হলো আল্লাহর একনিষ্ঠ খাদেমের পরম পাওয়া।
ফ্রান্সে গমন : বিজয় অত্যাসন্ন
মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মুসলিম দেশ-ই ইমাম খোমেনিকে গ্রহণ করতে রাজি হলো না। বাধ্য হয়ে তিনি ফ্রান্সের টিকিট কাটলেন এই ভেবে যে, সেখানে কিছুদিন থাকার পর কোনো মুসলিম দেশে গিয়ে হয়তো থাকতে পারবেন। অথচ তার ফ্রান্সে অবস্থান-ই হয়ে উঠলো বিপ্লবকে সফল করার এক শক্তিশালী অস্ত্র। যাহোক, ফ্রান্স সরকার তাকে ওয়েলকাম করলো এই বলে যে, ইমাম খোমেনি শাহ বিরোধী কোনো কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু ইমাম তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমি ফ্রান্সকে কোনো বক্তব্য বা ইন্টারভিউ দেবো না, বরং আমি ইরানে বক্তব্য পাঠাবো এবং আমি বিপ্লব ও ইরানি জনগণের জাগরণের নেতৃত্ব দেবো।” যেহেতু ইমাম কোন ইন্টারভিউ দেবেন না বলেছিলেন, সুতরাং সাংবাদিকেরা বাড়ির বাহির থেকে তার ছবি তুলে এই বলে প্রকাশ করলো যে, ইমাম খোমেনিকে বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং তাকে কোনো পলিটিক্যাল বক্তব্য দিতে দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবিদার ফরাসি সরকার চাপের মুখে পড়লো। ইরানি জনগণ, বিশেষত তেহরানের মানুষেরাও ফরাসি সরকারের মত পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছিলো। অসংখ্য মানুষের মিছিল ফরাসি দূতাবাসের সামনে ফুল নিয়ে গেলো ইমামকে আশ্রয় দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে। ফরাসি সরকার দেখলো যে ইরানি জনগণের মাঝে তাদের জনপ্রিয়তা আছে, সুতরাং ইমামের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলো। শুরু হলো ইমামের নওফেল-এ-শাতুর সেই বাড়িতে সংবাদকর্মীদের মিছিল। বাড়িটা হয়ে উঠলো বিপ্লবের সাময়িক হেডকোয়ার্টার। সেইসাথে প্রবাসী ইরানিরাও এসে তাকে সমর্থন জানাতে শুরু করলো। ফ্রান্সে ইমামের অবস্থানের কয়েক মাসে গড়ে প্রতিদিন ৪-৫টি করে ইন্টারভিউ দিতেন তিনি। এসময়েই ইরান পরিচিত হয়ে উঠলো বিশ্ববাসীর কাছে এবং সারা দুনিয়ার সচেতন ব্যক্তিরা ভাবতে শুরু করলো ‘কী ধরনের মানুষ এই ইমাম খোমেনি?’
শুরু হলো চূড়ান্ত আন্দোলন
ইমাম খোমেনিকে ১৯৬৪ সালে নির্বাসনে পাঠানোর পর শাহ মোটামুটি স্বস্তিতে ছিলো এই কারণে যে, ইমামের অনুপস্থিতিতে একদিকে যেমন সরকার উৎখাতের আশঙ্কা ছিলো না, অপরদিকে তেমনি বিপ্লবীদের ওপর সর্বাত্মক নজরদারি ও জেল-জুলুমের ফলে সরকারের প্রতি হুমকিও স্তিমিত হয়ে এসেছিলো। কিন্তু ইমামের ফ্রান্স গমনের পর সবকিছু যেনো আকস্মিকই বদলে গেলো। ইমাম খোমেনি পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে বক্তব্য পাঠাতে লাগলেন ইরানে। আর গোটা বিশ্বও জেনে গেলো ‘একটি বিপ্লব অত্যাসন্ন।’ শেষের দিকে ইমামের নাম উচ্চারণ করাও নিষিদ্ধ ছিলো। কোনো জনসভায় ইমামের নাম উচ্চারিত হতে পারতো না বর্বর সাভাক বাহিনীর ভয়ে। আর এই সাভাক বাহিনী তাদের নিষ্ঠুরতার প্রশিক্ষণ পেয়েছিলো মার্কিন ও ইহুদি গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। প্রসঙ্গত, আমাদের দেশেও বর্তমানে বিদেশী বাহিনীর হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী অনুরূপ জুলুম-নির্যাতনেই নিয়োজিত। যাহোক, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেপ্টেম্বরে (১৯৭৮ সালে) ইমাম খোমেনির বড় ছেলেকে বিষ প্রয়োগে হত্যার ঘটনা ইরানে আবারও ইমাম খোমেনির নাম ধ্বনিত করলো। সাধারণ মানুষ ইমামের ছেলের শাহাদাতে শোকসভা করতে শুরু করলো। বর্বর সাভাক বাহিনীকে উপেক্ষা করে চারিদিকে উচ্চারিত হতে থাকলো বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনির নাম। শাহ বিষয়টাকে ছাড় দিতে পারতো (এমনিতেই কিছুদিন পর মানুষের শোক স্তিমিত হয়ে আসতো)। কিন্তু শাহ উল্টা পথ বেছে নিলো; স্বৈরশাসকের চিরাচরিত নিপীড়নমূলক পথ। সিভিল গভর্নমেন্ট বাতিল করে সেনা শাসন নিয়ে এলো মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি। নিরস্ত্র শোকাচ্ছন্ন জনতার বিপরীতে রাস্তায় নেমে পড়লো সশস্ত্র সেনা, ট্যাংক, অস্ত্র, গোলাবারুদ। এযাবৎকাল পর্যন্ত ইরানে যত রাজা-ই শাসন করেছে, তারা ধর্মীয় নেতাগণকে সম্মান করতো। এর মূল কারণ ছিলো জনগণের মাঝে ধর্মীয় নেতাগণের শক্তিশালী প্রভাব। তবে যেহেতু ধর্মীয় নেতাগণ রাষ্ট্রক্ষমতায় হস্তক্ষেপ ও সরকার উৎখাতের কোনো চেষ্টা করতেন না, বরং শরিয়ত শিক্ষাদানের মাঝেই নিজেদের কার্যক্রমকে সীমাবদ্ধ রাখতেন, সেহেতু কোনো বড় ধরনের কনফ্লিক্টের সৃষ্টি হতো না। রেজা পাহলভি প্রথম চেষ্টা করে তুরস্কের কামাল আতাতুর্কের অনুকরণে ইরানে সেক্যুলারিজম আমদানি করতে। অথচ ইসলামী চেতনায় দৃঢ় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সেক্যুলারিজম কখনোই টিকবে না, ইন ফ্যাক্ট, সেক্যুলারিজম জিনিসটাই একটি দুর্বল ব্যবস্থা, যা ভেঙে পড়তে বাধ্য। এই ঐতিহাসিক এবং দার্শনিক সত্যটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিলো সে। ফলস্বরূপ আলেমগণের ওপর নির্যাতন শুরু করলো এবং আঘাত হানলো ইসলামের ওপর, যা চালিয়ে গিয়েছিলো তার ছেলে মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি। ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে। স্বৈরশাসকেরা সবসময়ই ভুল করে থাকে, আর সত্য স্বতঃস্ফূর্তভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং শোকাচ্ছন্ন জনগণের ওপর শাহের জালিম বাহিনীর নির্যাতন শোককে শক্তিতে পরিণত করলো। শুরু হলো রাজপথে সরাসরি আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এলো। আর বর্বর বাহিনীও চালিয়ে যেতে লাগলো প্রকাশ্য গণহত্যা। এলো সেই বিপ্লবী ডাক: “জেগে উঠুন হে জনগণ! সাবধান হোন, কারণ আপনাদের শত্রু শক্তিশালী। সে ট্যাংক ও মেশিনগান নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু এসব অস্ত্রকে ভয় পাবেন না। আপনারাই সঠিক পথে আছেন। হক আপনাদের সাথে আছে। আর সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সাথে আছেন। ভয় পাবেন না, কারণ আপনারাই বিজয়ী হবেন ইনশাআল্লাহ।” টর্চারিং সেলে নিয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষত ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের ওপর নিষ্ঠুরতম নির্যাতন চালানো হলো, যার চিহ্ন এখনও অনেকে বয়ে বেড়াচ্ছেন। লোহার বিছানায় তরুণ ছেলেদের বেঁধে রেখে নিচে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করাসহ বর্ণনার অযোগ্য সব নির্যাতন চালিয়েছিলো শাহের জাহান্নামী বাহিনী। ইরানের বেহেশতে যাহরা কবরস্থানে বিপ্লবের এই হাজার হাজার শহীদ ঘুমিয়ে আছেন। ঈওঅ তাদের ধারণা অনেকটা এরকম ছিলো যে- “এসব মোল্লা-মৌলভি, এদের দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, এরা আর কদ্দুর কী করতে পারবে। আর যদি কিছু করেও, আমরা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আর আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও ইন্টেলিজেন্সকে ব্যবহার করে এদেরকে উৎখাত করতে পাবরো সহজেই।” কিন্তু এ ছিলো এক চরম ভুল। প্রকৃতপক্ষে, নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল অত্যন্ত দুর্বল।
[caption id="attachment_6614" align="aligncenter" width="1155"] বিপ্লবী জনসমুদ্র[/caption]চূড়ান্ত আন্দোলনের সর্বশেষ ধাপ
ইমাম খোমেনির এক ছাত্রের ইমামতিতে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে লাখো মানুষ তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো। তেহরানের কসাই বলে পরিচিত এক জেনারেল আদেশ দিলো যেকোনো মিছিল দেখামাত্রই গুলি করতে। পাশ্চাত্য মিডিয়াই সেদিনের মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার বলে প্রকাশ করে, প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরো অনেক বেশি। আর্মির গুলির মুখে হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ শহীদ হয়ে গেলেন। এই হাজার হাজার শহীদ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বেহেশতে যাহরা কবরস্থানে। ৭ লক্ষাধিক সদস্যের ইরানি আর্মি ছিলো তৎকালীন বিশ্বের পঞ্চম শক্তিশালী আর্মি। এত বৃহৎ শক্তিশালী বাহিনীর সামনে মানুষ কী করবে? ইমামের স্ট্র্যাটেজি ছিলো অত্যন্ত প্রাজ্ঞ। ইমাম বাণী পাঠালেন; “আর্মির বুকে আঘাত করো না, বরং তাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করো। সৈন্যদের হৃদয় তোমাদের কামনা করতে হবে। এমনকি তারা তোমাদের গুলি করলেও। তোমাদের বুক পেতে দাও। কারণ যখন তোমরা আল্লাহর রাহে জীবন দিয়ে দিচ্ছো, তখন তোমাদের রক্ত এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা তাদেরকে প্রভাবিত করবে। একজন শহীদের রক্ত হলো হাজার মানুষকে জাগিয়ে তোলার ঘন্টা।” বিক্ষোভকারীরা সৈন্যদের রাইফেলের মুখে গুঁজে দিলো ফুল, আর তাদের স্লোগান ছিলো- ‘আর্মি আমাদের ভাই, তোমরা কেনো ভাইকে হত্যা করো !’ বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী নারীগণ ফুল ছুঁড়ে দিলেন সেনাদের দিকে, আর বললেন- ‘আমরা তোমাদেরকে ফুল ছুঁড়ে দিলাম, বিনিময়ে তোমরা আমাদেরকে গুলি করে শহীদ করে দাও।’ সৈন্যদের উদ্দেশে ইমামের আহবান ছিলো : ‘তোমরা শাহের কাজ আঞ্জাম দিও না, কারণ সে শয়তান। আর তোমরা হলে আল্লাহর সৈন্য। তোমাদের মুসলিম ভাইয়ের উদ্দেশে অস্ত্র চালিও না। কারণ একজন মুসলিমের বুকে একটি বুলেট মানে কুরআনের বুকে একটি বুলেট। তোমাদেরকে নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে হবে। নিজেদের বাড়িতে, শহরে। তোমাদেরকে মসজিদে ফিরে যেতে হবে, ফিরে যেতে হবে আল্লাহর কাছে।’ ইমামের সাথে ছিল আল্লাহর প্রতিশ্রুত সাহায্য। দলে দলে সৈন্য যোগ দিলো বিপ্লবে। ইমামের নেতৃত্ব মেনে নিলো। বিপ্লবী কমিটি থেকে নির্দেশ দিয়ে দেয়া হলো যাদের যা পোশাক আছে নিয়ে আসতে। বিপ্লবে যোগদানকারী সেনারা আর্মির পোশাক ছেড়ে ঐ পোশাক পরলেন। তবুও তাদেরকে আর্মি ছাঁটের চুল দেখে নিপীড়ক বাহিনী শনাক্ত করছিলো। এই দেশে বিপ্লবী কমিটি সব বিপ্লবী যুবককে আর্মি ছাঁটে চুল কাটাতে নির্দেশ দিলো। সৈন্যেরা মিশে গেলো বিপ্লবীদের সাথে। ইমামের আদেশ এলো- “ছোটো ছোটো দলে আর্মি ত্যাগ করো। একা হোক, কিংবা দু’জন তিনজন করে। তোমরা আল্লাহর সৈন্য। তোমাদের অস্ত্র সাথে নাও, সেগুলো আল্লাহর অস্ত্র।” ইমামের সমর্থনে যখন বেশির ভাগ ব্যারাক খালি হয়ে গেলো, তখন ইমাম খোমেনি বাজারের দিকে মনোনিবেশ করলেন। ‘বাজার’ হলো আমাদের এখানকার মতিঝিল এলাকার মতো, যা কয়েকদিন বন্ধ থাকলে গোটা অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। ইমামের আহবানে সাড়া দিয়ে বাজার স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘটে গেলো, ইরানের অর্থনীতি হয়ে পড়লো স্থবির। এরপর তেলকূপগুলোর কর্মীদেরকে সম্বোধন করলেন ইমাম। নির্দেশ দিলেন দেশের চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে দিতে। শাহ বললো, যদি তেলকূপের কর্মচারীরা ধর্মঘট বন্ধ করে কাজে ফিরে না যায়, তবে তাদের সবাইকে গুলি করা হবে এবং ইসরাইল থেকে শ্রমিক ও টেকনিশিয়ান এনে তেলকূপ চালানো হবে। ইরানের তেলকূপে ধর্মঘটের সুযোগে কাজ করতে আসা যেকোনো বিদেশী, হোক সে ইসরাইলি বা অন্য যেকোনো দেশের, তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে ফতোয়া জারি করলেন ইমাম খোমেনি। এ ছাড়াও ধর্মঘটের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে ধর্মীয় অথরিটির ফান্ড থেকে টাকা দিতে বলা হলো। সাথে সাথে ইমামের ছাত্ররা তেলকূপের কর্মচারীদের মাঝে টাকা বণ্টন করে দিলেন, আর এদিকে ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা মার্কিন ও পশ্চিমা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাতে লাগলো। ব্যাংক, হোটেল, এয়ারলাইনস...। গোটা তেহরান তখন জ্বলছিলো, কিন্তু শাহের কিছুই করার ছিলো না।
শাহের পলায়ন
এরপর ইমাম খোমেনি আশুরা উপলক্ষে মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে নির্দেশ দিলেন। সর্বোচ্চ জনশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রমাণ করার জন্য যে, এদেশের মানুষ আর শাহকে চায় না। তারা এই রাজতন্ত্র চায় না। সামরিক সরকার সকাল-সন্ধ্যা কারফিউ জারি করলো, এমনকি মসজিদের অভ্যন্তরে পর্যন্ত। ইমাম খোমেনি আদেশ দিলেন বাড়ির ছাদে বিক্ষোভ প্রদর্শনের। সেরাতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর ছিলো এমন- ‘সারা তেহরানের বাড়িগুলোর ছাদ থেকে ভেসে আসা আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে তেহরানের মাটি কাঁপছে।’ শাহ ষড়যন্ত্র করলো এক ব্যাপক গণহত্যার। এর মূল টার্গেট ছিলো বিপ্লবের নেতৃস্থানীয় আলেমগণ। আজাদি স্কয়ারে সমবেত বিপ্লবের মূল আয়োজকদের হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হলো। কিন্তু আল্লাহর কী ইচ্ছা- সেই বিকেলেই লাভিযান এর ক্যাম্প থেকে বিপ্লবে যোগ দেয়া এক তরুণ সেনা এসে শাহের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাকারীদের গুপ্তহত্যা করলো। এ সময়ে শাহ বুঝতে পারলো দেশ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে এবং ইরানে তার আর কোনো স্থান নেই। আর্মি সরকার কারফিউ তুলে নিলো এবং সাথে সাথে তেহরানের রাস্তা পরিণত হলো জনসমুদ্রে। দেশবাসীর উদ্দেশে এক অস্পষ্ট, বিভ্রান্তিকর ভাষণ দিলো শাহ। মিলিটারি সরকারকে প্রতিস্থাপিত করলো শাপুর বখতিয়ারের নেতৃত্বে নতুন এক সরকার দিয়ে। আর এসব পরিকল্পনা তাকে দেয়া হচ্ছিলো ওয়াশিংন থেকে। জনগণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির জন্য তারা ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালালো যে, শাপুর বখতিয়ার হলো শাহের দীর্ঘদিনের শত্রু, একজন মানবতাবাদী কর্মী ইত্যাদি। দশ দিন পর...। তেহরানের মেহরাবাদ এয়ারপোর্ট মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি ও তার স্ত্রী রানী ফারাহ দিবা পৌঁছে গেলো। প্রেসের কাছে নিতান্ত হাস্যকরভাবে বললো- “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক’দিন বেড়িয়ে আসি।” ১৬ জানুয়ারি, ১৯৭৯। প্লেনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ইরানের দিকে একবার ফিরে তাকালো এককালের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী শাহ এবং তার রানী। সারা দুনিয়া তখন সঙ্কুচিত হয়ে আসছিলো তার জন্য। প্লেনের উড্ডয়নের সাথে সাথে ইরানের ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলো। পরবর্তীতে নানান দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করে ক্যান্সারে ভুগে এ যুগের ফেরাউনের শেষশয্যা রচিত হলো মিসরে। এমনকি যেই আমেরিকার গোলামিতে সারাটা জীবন সে ব্যয় করলো, সেই আমেরিকাও তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো। শাপুর বখতিয়ার সরকারের মার্কিন প্রভুরা ভাবলো, ‘এইসব মোল্লারাই আপাতত বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিক। এরা তো দুনিয়াবি বিষয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন নয় এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতাও এদের নেই; কিছুদিন পার হলে আমরাই আবার ক্ষমতা লাভ করবো।’ কিন্তু আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা ছিলো ভিন্ন। আর আল্লাহর পরিকল্পনার বিজয়ী হওয়া অনিবার্য। শাপুর বখতিয়ার তার মার্কিন প্রভুদের সাহসে এমনকি ইমাম খোমেনিকে ‘মাথা খারাপ বুড়ো’ পর্যন্ত বলে বসলো। কিন্তু শাপুরের গদিলাভের একমাস যেতে না যেতে সেই ‘বুড়োই’ তাকে সমূলে উৎখাত করে দিলেন। দেশত্যাগের সময় প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে যে রাজপরিষদ গঠন করে গিয়েছিলো শাহ, সে পরিষদের সভাপতি প্রধান বিচারপতি নিজে প্যারিসে গিয়ে ইমামের আনুগত্য ঘোষণা করেন। ইরানের রাস্তায় রাস্তায় তখন আনন্দ মিছিল আর মানুষের হাতে ইমামের ছবি।
[caption id="attachment_6615" align="aligncenter" width="1024"] বেহেশতে যাহরা কবরস্থান[/caption]ইমামের দেশে ফেরার প্রস্তুতি
এবার প্যারিস থেকে ইমাম আরেকটি ডাক দিলেন। তা ছিলো শাপুর বখতিয়ারের এক মাস বয়সী সরকারকে উৎখাত করা। ১৪ বছরের ‘ধ্বংস হোক শাহ’ শ্লোগান বদলে গেলো ‘ধ্বংস হোক বখতিয়ার’ এ। আবারও রাস্তায় নেমে এলো জনগণ। ইমাম আকস্মিকই দেশে ফেরার ঘোষণা দিলেন। সেই সংবাদে বখতিয়ার সরকার এয়াপোর্ট বন্ধ ঘোষণা করলো। অবশিষ্ট যেসব শাহপন্থী সৈন্য ছিলো, তাদের ট্যাংক, অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ঘেরাও করে রাখলো এয়ারপোর্ট। ইমাম ঘোষণা দিলেন যে এয়ারপোর্ট খোলামাত্রই তিনি দেশে ফিরবেন। মেহরাবাদ এয়ারপোর্ট। চারিদিকে ঘিরে রেখেছে শাহপন্থী সৈন্য ও তাদের ট্যাংক। এবার তাদেরকে ঘিরে ধরলেন ইরানি জনগণ। লক্ষ লক্ষ লোক এয়ারপোর্টের চতুর্দিক ঘেরাও করে ফেললো। ইমাম খোমেনির নামে শ্লোগান দিতে থাকলো তারা। ইরান ফিরতে গেলে বিমানে গুলি করে ইমামকে হত্যা করা হতে পারে, এই আশঙ্কায় প্যারিসে ইমামের সঙ্গী সাথী সকলেই এই পরিস্থিতিতে ইরান যাওয়ার বিরোধিতা করলো। কিন্তু ইমাম যেনো আল্লাহর আদেশ পেয়েছিলেন ইরানে ফিরে যাওয়ার জন্য। তাই তিনি বললেন- “তোমাদের বিপদ হতে পারে। আমি আমার সাথে আসার জন্য কাউকে বলবো না।” কিন্তু ইমামের ভক্তরা ইমামকে রক্ষায় নিজেদের জীবন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত ছিলেন। সুতরাং তারা সকলেই ইরান যাত্রায় ইমামের সঙ্গী হলেন। ১৫০ জন সাংবাদিক ও ৫০ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে ইমাম যাত্রা করলেন ইরানের উদ্দেশে। উৎকণ্ঠিত প্লেনের সব যাত্রী। কিন্তু প্রশান্ত ইমাম তাঁর ক্যাবিনে নামাজ আদায় করছেন। এ যেনো নূহ (আ.)-এর সেই নৌকা, আল্লাহর ইচ্ছায়ই যার গতি ও আল্লাহর ইচ্ছায়ই যার স্থিতি।
[caption id="attachment_6616" align="aligncenter" width="714"] ১৪ বছরের নির্বাসন শেষে নিজভূমে ফিরে এলেন ইমাম[/caption]ইরানের ভূমিতে পদার্পণ
এয়ার ফ্রান্স লেখা প্লেনটি যতই অগ্রসর হচ্ছে, ততই লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। অথচ যার জন্য এত আয়োজন, সেই ইমাম ছিলেন খুবই শান্ত। দেশের মাটিতে নামার পর তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয়, আপনার অনুভূতি কী? তিনি বলেছিলেনÑ কিছুই না। প্লেনের চাকা মাটি স্পর্শ করলো। ইরানের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হলোÑ ইসলামী ইরান। ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন ইমাম খোমেনি। সে এক অন্যরকম দৃশ্য। সাথে তাঁর ছোট ছেলে আহমাদ। ইরানের মাটিতে ইমাম খোমেনির পদার্পণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করলেন। ইমাম এসে দাঁড়ালেন। তাঁর উদ্দেশে সমবেতভাবে গাওয়া হলো বিপ্লবের সেই গান : ‘খোমেইনি এই ইমাম’। তেরানের মেহরাবাদ এয়ারপোর্ট থেকে একটি গাড়িবহর বেরিয়ে এলো। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে সেদিন রাস্তায় ৭০ লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয়েছিলো। ইমাম গাড়ি নিয়ে এগোতে পারলেন না। এমনকি লাঠি দিয়ে পিটিয়েও মানুষকে দূরে সরানো যাচ্ছিলো না। গাড়ির ওপরে, পাশেÑ চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। কয়েকবার মানুষ গাড়িকে উঁচু পর্যন্ত করে ফেলেছিলো। গাড়ির ভেতরে কেবল অন্ধকারÑ মানুষের কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি আর ঠিকভাবে চালানো গেলো না, মানুষই যেনো গাড়িকে ঠেলে নিচ্ছিলো। মানুষের ধাক্কা ও চাপের কারণে পথিমধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে ইমামকে কোনোমতে একটা হেলিকপ্টারে উঠানো হলো। হেলিকপ্টার সরাসরি চলে গেলো বেহেশতে যাহরা কবরস্থানে, যেখানে ইসলামী ইরানের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাগণ ঘুমিয়ে আছেন। শহীদদের কবরস্থানে পৌঁছে ইমাম তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতা দিলেন। এর আগে একটা গান পরিবেশন করা হয়। ‘হে আল্লাহর পথের শহীদগণ! জাগো! তোমাদের নেতা তোমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন...” এই কথার মর্মস্পর্শী গানটি সমবেতভাবে গায় কিশোরদের একটি দল, আর মঞ্চে ইমামের চারিদিকের বিপ্লবীদের কাঁদতে দেখা যায়। এর মাঝেও ইমাম অত্যন্ত শান্ত থাকেন এবং তারপর তাঁর বিখ্যাত সেই বক্তৃতা দেন, যেখানে ইসলামী হুকুমত কায়েমের ঘোষণা দেয়া হয়। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই বক্তৃতার শুধুমাত্র সেই বিখ্যাত ঘোষণাটি তুলে ধরছি, যখন ইমাম খোমেনি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা দিলেন- “আমি সরকার নিয়োগ করবো, আমি এ সরকারের মুখে মুষ্ঠাঘাত করবো, জনগণের সমর্থন নিয়ে এবং জনগণ আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছে সেই শক্তির বলে আমি একটি সরকারকে নিয়োগ প্রদান করবো।” “একটা দেশে দু’টা সরকার থাকতে পারে না। অবৈধ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। (হে সরকার!) তোমরা অবৈধ! আমরা যে সরকারের কথা বলি, তা জনগণের মতামতের ওপর নির্ভর করে। সেটা আল্লাহর আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তোমাকে হয় আল্লাহ নয়তো জনগণের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে।”
[caption id="attachment_6617" align="aligncenter" width="922"] ইমাম খোমেনিকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে পর্যন্ত৭০ লাখ লোকের জনসমুদ্র[/caption]
সশস্ত্র বিপ্লব
অস্থায়ী হেডকোয়ার্টার হিসেবে তেহরানের একটি স্কুলে উঠলেন ইমাম খোমেনি। স্কুল প্রাঙ্গণ হাজার হাজার সমর্থকে ভরে উঠলো। কিন্তু তখনও বিপ্লব নিষ্কণ্টকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী দশ দিন শাহের অতি অনুগত সেনাবাহিনী বিপ্লবী জনতাকে মোকাবেলা করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে লাগলো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই বিজয়ী হওয়ার ছিলো। আমেরিকা থেকে এক জেনারেল এলো ইরানে, ইমামকে হত্যা ও সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা নিয়ে। ইমামের ছাত্র, হুজ্জাতুল ইসলাম আলী আকবর হাশেমী রাফসানজানি এসে ইমামকে স্কুল ত্যাগ করতে বললেন, কারণ আর্মির পরিকল্পনা ছিলো পুরো বাড়ি বম্বিং করে ধ্বংস করে দেয়ার। কিন্তু ইমাম বললেন, “আমি এখান থেকে নড়বো না। আমি এখানেই থাকবো কিন্তু তারা এই জায়গায় বম্বিং করতে সক্ষম হবে না। আর যদি করেও, মানুষ তাদেরকে ধরে ফেলবে। যাও, ব্যারাকগুলো দখল করো। কিছুই হবে না।” রক্তপাত কমানোর জন্য ইমাম অত্যন্ত প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একদিকে তিনি যেমন বিপ্লবীদের বলেছিলেন সেনাদের হত্যা না করতে বরং সেনাদের জন্য বুক পেতে দিয়ে তাদেরকে ভালোবাসা দিতে, তাদের হৃদয় জয় করতে, অপরদিকে তেমনি সেনাদেরকে বলেছিলেন মুসলিম ভাইকে হত্যা না করতে। কিন্তু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বেহেশতে যাহরার ভাষণে ইমামের আহবানেও যে সেনারা সাড়া দিলো না, তখন ইমাম তাদের ব্যারাক দখল করে নিতে বললেন। শুরু হয়ে গেলো সশস্ত্র জিহাদ। ছাত্ররা পুলিশ স্টেশন দখল করতে শুরু করলো। এক একটি স্টেশন দখলের সাথে সাথে আরো বেশি অস্ত্র ও যান-বাহন তাদের হাতে চলে আসছিলো। এই নিয়ে এয়ার বেইজে আক্রমণ চালানো হলো। দীর্ঘ যুদ্ধের পর তাদের সিকিউরিটি ভাঙতে সক্ষম হন বিপ্লবীরা। বেশ কিছুদিন এই যুদ্ধ চললো। অবশেষে বারো দিন পর, ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে হতাশ আর্মি প্রধানরা পালিয়ে যাওয়ার আগে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে গেলো। দুপুরের পর রেডিও স্টেশন দখল করে নিয়ে বিপ্লবীরা ঘোষণা দিলেন : ‘বিপ্লব জয়লাভ করেছে।’
[caption id="attachment_6618" align="aligncenter" width="827"] ইসলামী হুকুমত কায়েমের ঘোষণা [/caption]স্মৃতিকথা
বিপ্লবের পরপর আহমদ দিদাত ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করে সাউথ আফ্রিকায় ফিরে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ডায়লগে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এভাবে- “আমরা ইমামের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভি আল খোমেইনি। আমরা প্রায় চল্লিশজনের মত ছিলাম। আমরা ইমামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ইমাম এলেন, তার থেকে দশ মিটার মত দূরে ছিলাম আমি; আমি ইমামকে দেখলাম। তিনি আমাদেরকে প্রায় আধাঘণ্টার একটি লেকচার দিলেন, আর কুরআনের বাইরে এতে কিছু ছিলো না। এই মানুষটা যেনো কম্পিউটারাইজড এক কুরআন। আর তিনি যখন পাশের একটা রুম থেকে হেঁটে এসে ভিতরে ঢুকলেন, সবার ওপর তাঁর যে প্রভাব (আহমদ দীদাত এখানে "electric effect" কথাটি ব্যবহার করেছেন- অনুবাদক।) তাঁর যে কারিশমা- বিস্ময়কর! তাঁর দিকে তাকানোর সাথে সাথে কোনো ভাবনা ছাড়াই চোখের কোল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আপনি তাঁর দিকে তাকান; আপনার চোখ অশ্রুসজল হয়ে যাবে। এর চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম মানুষ আমি জীবনে কখনো দেখি নাই। কোনো ছবি, ভিডিও বা টিভি তাঁকে উপযুক্তভাবে তুলে ধরতে পারবে না। আমার সারা জীবনে দেখা সবচে হ্যান্ডসাম মানুষ হলেন তিনি। (ÒNo picture, no video, no TV could do justice to this man, the handsomest old man I ever saw in my life was this man, Imam Khomeini.’– Ahmed Deedat)।
লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মন্তব্য লিখুন