ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব
মোবারক হোসাইন
১৪ অক্টোবর ২০১৭
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞানের বর্মে সজ্জিত করে অনুপম চরিত্রগঠনের মাধ্যমে জাহিলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার মত যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী গঠন করাই মৌলিক উদ্দেশ্য।
প্রকৃতপক্ষে কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশলকে প্রশিক্ষণ বলে। মেধাবী মানবসম্পদ তৈরির অন্যতম উপায় হলো প্রশিক্ষণ। এ সম্পর্কে Dr. C. B Mamoria e‡jb, Training is a widely accepted problem solving device. অর্থাৎ প্রশিক্ষণ হচ্ছে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কৌশল। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই যেকোনো সমস্যাকে সমাধান করা সম্ভব। প্রশিক্ষণ এমন একটি চলমান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, অল্প সময়ে বেশি কাজ, জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি, কাজের প্রতি আগ্রহ, অধিক যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারদর্শিতা অর্জন। যেকোনো বিষয়ে সফল হতে হলে সে বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মানুষ দক্ষতা নিয়ে জন্মায় না, দক্ষতা অর্জন করতে হয়। আর সেই দক্ষতা অর্জনের সঠিক পথ হচ্ছে প্রশিক্ষণ।
“The fifth discipline”এর লেখক Peter Senge পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের সুপারিশ করেন যা একটি সংগঠনকে শিখতে সাহায্য করে থাকে ১. পদ্ধতির চিন্তা (Systems thinking) ২. ব্যক্তিগত পান্ডিত্য (Personal mastery) ৩. মানসিক মডেল (mental models) ৪. পারস্পরিক ভিশন (shared vision) ৫. দলীয় শিক্ষা (Team learning)
প্রশিক্ষণ কী?
প্রশিক্ষণ হচ্ছে একটি পরিকল্পিত কার্যক্রম। প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা হয়। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধন করে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে তার যোগ্যতার উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধন করা। প্রশিক্ষণ সাধারণত মানুষের তিনটি জিনিসের বিশেষ পরিবর্তন সাধন করে। যেমন: জ্ঞান (Knowledge), দক্ষতা (Skills) ও মনোভাব (Attitude)
নেডলার (১৯৭৯)-এর মতে প্রশিক্ষণ হলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুপরিকল্পিত-ভাবে কিছু কার্যসম্পাদনের জন্য কতগুলো দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনের প্রক্রিয়া। ড. ডিউই বলেন, “শিক্ষার লক্ষ্য হলো ব্যক্তিকে তার শিক্ষা অব্যাহত রাখতে সক্ষম করে তোলা।” আর সেই অব্যাহত প্রক্রিয়ার একটা অংশ হলো প্রশিক্ষণ।
Edwin B. Flippo e‡jb, Training is the act of increasing the knowledge and skill of an employee doing a particular job. অর্থাৎ একটি নিদিষ্ট কার্যসম্পাদনের লক্ষ্যে কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশলকে প্রশিক্ষণ বলে।
David A. Decenzo I Robbins এর মতে, প্রশিক্ষণ হচ্ছে এরূপ একটি শিক্ষণ অভিজ্ঞতা যা একজন ব্যক্তির মধ্যে তুলনামূলকভাবে স্থায়ী পরিবর্তন আনয়ন করে কার্যক্ষেত্রে কার্যসম্পাদনের সামর্থ্যরে উন্নতি ঘটায়। প্রশিক্ষণ দক্ষতা, জ্ঞান, মনোভাব ও সামাজিক আচরণের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ল্যাম্বার্ট, ভ্যারো ও যিমারম্যান (২০১২) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পেশাগত শিক্ষার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, প্রশিক্ষণ এমন সব দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনে সাহায্য করে যা নতুন কোনো দক্ষতা বা যোগ্যতা নয় বরং পূর্বে অর্জিত শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে কোনো কাজ অধিক দক্ষরূপে করার সামর্থ্য তৈরি করে।
প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বা উদ্দেশ্য
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে পার্থক্যকরণ, কার্যসম্পাদনে সমস্যা, ঘাটতি চিহ্নিতকরণ এবং এসকল সমস্যার সমাধানে সর্বোত্তম উপায় নির্ধারণ করা। প্রশিক্ষণ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি মানবসম্পদ উন্নয়নপ্রক্রিয়া যা কর্মীর কাজ ও দায়-দায়িত্ব, কার্যসম্পাদনের কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান দান ও সচেতন করে তোলে। প্রশিক্ষণ কর্মীদেরকে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতির প্রতি অনুগত করে এবং প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন পক্ষের সাথে যৌক্তিক আচরণ করার কলাকৌশল শিক্ষা দেয়। প্রশিক্ষণ হচ্ছে উত্তম ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি যা কর্মীদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। নি¤েœ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
সংগঠন সম্পর্কে ধারণা:
প্রশিক্ষণ নতুন কর্মীদের সংগঠনের কাঠামো এবং পরিবেশ, উদ্দেশ্য ও কর্মধারা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দান করে। তা ছাড়া কর্মীদেরকে প্রদত্ত দায়িত্ব এবং দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন কৌশল জ্ঞাত করানো হয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। ফলে কর্মীরা দায়িত্ব পালনে অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠে।
দক্ষতা বৃদ্ধি :
প্রশিক্ষণের নতুন ও পুরাতন সকল কর্মীর কর্মস্পৃহা, কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কাজের নতুন নতুন পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দক্ষতা বিকাশমূলক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো কাজের ক্ষেত্রে নৈপুণ্য বৃদ্ধি করা। এরূপ দক্ষতার উদাহরণ হলো- বক্তব্য প্রদান, দায়িত্ব পালনে দক্ষতা, লেখালেখির দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা ইত্যাদি।
জ্ঞান বৃদ্ধি :
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কাক্সিক্ষত জ্ঞানার্জন সম্ভব। এক্ষেত্রে লেকচার প্রদান, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গ্রুপ স্টাডি, বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ সম্ভব।
আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি :
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মূল ভিত্তি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সম্ভব। যথা- কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন, শব্বেদারি, স্টাডি ক্লাস ইত্যাদি।
মানবিক সম্পর্ক উন্নয়ন :
মানবিক সম্পর্ক বলতে প্রধানত দায়িত্বশীল ও অধস্তনদের মাঝে সুসম্পর্ক বজায়কে বোঝায়। সংগঠনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা এবং অধিক কর্মফল সুসম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল।
প্রযুক্তিগত জ্ঞানার্জন :
আধুনিক প্রযুক্তির জটিল বিষয়ে জ্ঞানার্জন একমাত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই সম্ভব। ফলে নতুন নতুন প্রযুক্তির ধারণা লাভ এবং কলাকৌশল প্রয়োগ ও ব্যবহার সম্ভব হয়।
সহজ সমন্বয় :
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের পারস্পরিক মানসিক সম্পর্ক উন্নত হয়। ফলে তাদের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং কাজের মধ্যে সমন্বয় সহজ হয়, যা সংগঠনের উন্নতির সহায়ক।
তত্ত্বাবধান পরিসর বৃদ্ধি :
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের তত্ত্বাবধান সহজ হয় এবং তারা দায়িত্বশীলের আদেশ ও নিদেশ পালনে অধিকতর সচেতন থাকে। ফলে দায়িত্বশীলের কর্মপ্রচেষ্টা ও স্বল্প সময় অধিক কর্মীদের তদারক করা সম্ভব।
মিতব্যয়িতা অর্জন :
প্রশিক্ষণ কর্মীদেরকে দায়িত্ব পালন ও কর্মসচেতন করে তোলে। ফলে শ্রম, সময় ও সম্পদের অপচয় হ্রাস পায়।
দ্রুত মানোন্নয়ন করা :
প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীদের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে। ফলে দ্রুত মানোন্নয়ন করা সম্ভব হয়।
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি :
প্রশিক্ষণ কর্মীদের কর্মদক্ষতা বাড়ায়, আনুগত্য বৃদ্ধি করে, কর্মস্পৃহা জাগ্রত করে, আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি করে। ফলে কাজে আন্তরিকতা বৃদ্ধি ও হতাশা হ্রাস পায়।
মনোভাব পরিবর্তন :
যেকোনো কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন সম্ভব।
পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে খাপ-খাওয়ানো :
সকল পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে তারা সহজেই পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ-খাওয়াতে পারে। একজন কর্মী কিভাবে পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ-খাওয়াবে, সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণের যথাযথ দিকনির্দেশনা থাকে। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে তার অসুবিধা হয় না।
গুণাবলি বিকাশ :
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় ইত্যাদি গুণাবলি বিকশিত হয়। যার ফলে কর্মীদের প্রকাশভঙ্গি উন্নতি ঘটে।
মনীষীদের দৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব :
আসলে দার্শনিকদের কাজ-কারবারই অন্যরকম। উল্টোভাবে বলা যায়, এ রকম কাজ-কারবার করেন বলেই তারা দার্শনিক। প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বোঝাতে বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো মানুষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বললেন : মানুষ হচ্ছে পালকবিহীন দ্বিপদ একটি প্রাণী। এ সংজ্ঞা শোনার পর দার্শনিক ডায়োজেনিস একটি মুরগি জবাই করে সব পালক ফেলে দিয়ে প্লেটোর কাছে পাঠালেন। সঙ্গে একটি কাগজে লিখলেন : এটাই তোমার সংজ্ঞায়িত মানুষ? মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ার এটাই দারুণ ব্যাপার যে, মানুষকে পুনরায় মানুষ হতে হয়। অন্য প্রজাতির কাউকেই কিন্তু তা হতে হয় না। প্রজাপতি হলেই প্রজাপতি, পাখি হলেই পাখি; কিন্তু মানুষ হলেই মানুষ নয়। মানুষ হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হয়। আর মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন। সুতরাং প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই সঠিক মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব।
আবরাহাম লিংকনের জীবন থেকে
প্রশিক্ষণের গুরুত্ব
আবরাহাম লিংকনকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আপনাকে একটি কুঠার দিয়ে সাত ঘণ্টায় একটি গাছ কাটতে বললে আপনি কী করবেন?’
তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথম ছয় ঘণ্টায় কুঠারটিকে এমনভাবে ধারালো করব যেন পরবর্তী এক ঘণ্টায় কাজটি সম্পন্ন করা যায়।’
এখানেই প্রশিক্ষণের গুরুত্ব : আমরা বছরে একবার গরু-ছাগল কোরবানি দিই বলে ছুরি-চাকুও একবারই ধার দিই। কিন্তু কসাই প্রতিদিনই ধার দেন কারণ তাকে প্রতিদিনই মাংস কাটতে হয়। ধার না দিলে ভালো লোহা দিয়ে তৈরি অস্ত্রও মরিচা পড়ে ভোঁতা হয়ে যেতে পারে। প্রশিক্ষণের ব্যাপারটাও তাই। কর্মকুশলতা অর্জনে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
কার্যকর প্রশিক্ষণে করণীয়
প্রশিক্ষণের অনুধাবনকে আমরা তিনটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি-
১.যদি সহজভাবে বোঝানো হয় তাহলে ১৫% থেকে ২০% কথা লোকে বুঝবেন।
২.যদি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয় তাহলে ৪০% থেকে ৪৫% কথা লোকে বুঝবেন। আর (৩) যদি Demonstration অর্থাৎ অঙ্গভঙ্গি করে, বা অভিনয় করে বোঝানো হয় তাহলে ৬০% থেকে ৬৫% কথা লোকে বুঝবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে এই প্রশিক্ষণ কিন্তু কোন entertainment নয়। অর্থাৎ এটা কোন মনোরঞ্জনের জন্য প্রশিক্ষণ নয়। আর তার জন্য দক্ষ ও দায়িত্ববান কর্মী তৈরি করার জন্য এই প্রশিক্ষণ।
প্রশিক্ষণের মূল্যায়ন
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে দাওয়াতি কাজের প্রতি ব্যক্তির প্রত্যয় এবং তাগিদ বা আগ্রহ বৃদ্ধি করা, ব্যক্তিকে গড়ে তোলা এবং কাক্সিক্ষত লক্ষ্য হাসিলের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্মেষ ঘটানো। প্রশিক্ষণ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য-
১। প্রশিক্ষণ জনশক্তির লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু এবং কী পরিমাণ প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে তা মূল্যায়ন করা
২। ওয়ার্কশপ, টিসি, টিএসের গুরুত্ব নির্ধারণ
৩। প্রশিক্ষণের বিভিন্ন দিক পুনর্বিবেচনা কার্যকর করা
৪। অংশগ্রহণকারীদের অবস্থা বিশ্লেষণ
৫। প্রোগ্রামের প্রতি অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ
৬। অংশগ্রহণকারীরা কী শিখেছে? বা দক্ষতা অর্জন করেছে তা নির্ধারণ
৭। অংশগ্রহণকারীদের মনোভাবে কোন প্রভাব বিস্তার করছে কি না?
৮। অংশগ্রহণকারীদের ওপর কাজের ফলাফলের কোনো প্রভাব পড়ছে কি না?
৯। কাজের ব্যবহারে কোন প্রভাব ফেলছে কি না?
১০। টেস্ট বা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ হচ্ছে কি না?
প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনে বিভিন্ন প্রকারের জনশক্তি কাজ করে থাকে। তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও কাজ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, তাই বিভিন্ন ধরনের জনশক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়। টিফিন ও ম্যাককরমিক (Tiffin and McCormic) প্রশিক্ষণকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন ১) পরিচিতি প্রশিক্ষণ ২) কার্যক্ষেত্রে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ ৩) অনুকরণ প্রশিক্ষণ ৪) শিক্ষানবিস প্রশিক্ষণ ৫) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ৬) কারিগরি প্রশিক্ষণ ৭) ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ।
একাধিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ : ব্ল্যাম ও নেইলব (Blum and Naylor) প্রশিক্ষণকে নিম্নরূপে ভাগে ভাগ করেছেন যেমন:
১. উদ্দ্যেশ অনুসারে প্রশিক্ষণের শ্রেণীবিভাগ :
ক. তথ্য পরিবেশন (পরিচিতি প্রশিক্ষণ), খ. কলাকৌশল শেখানো (কারিগরি প্রশিক্ষণ), গ. মনোভাব পরিবর্তন (ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী প্রশিক্ষণ)
২. অবস্থা অনুসারে প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ:
ক. প্রকৃত কর্মাবস্থা (হাতে কলমে প্রশিক্ষণ), খ. সাদৃশ্যমূলক কর্মাবস্থা (ভেস্টিবুল প্রশিক্ষণ)
৩. প্রশিক্ষণার্থীর বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ :
ক. অভিজ্ঞতা- শিক্ষানবিস প্রশিক্ষণ, খ. পদমর্যাদা- ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, গ. সংখ্যা- দলগত প্রশিক্ষণ
৪. প্রশিক্ষণ প্রণালী অনুসারে প্রশিক্ষণ :
ক. বক্তৃতা, খ. দলগত আলোচনা, গ. ভূমিকা পালন, ঘ. অনুক্রমিক শিক্ষা প্রণালী, ঙ. টেলিভিশন
প্রশিক্ষণ পদ্ধতি বা কৌশলসমূহ
প্রশিক্ষণসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থীর প্রাত্যহিক কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং চাহিদার কথা বিবেচনা করা হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। প্রশিক্ষণে অনুসরণীয় সাধারণ পদ্ধতিসমূহ হলোÑ
১। বক্তৃতা
২। ডেমনস্ট্রেশন
৩। দলীয় আলোচনা
৪। অভিজ্ঞতা বিনিময়
৫। অনুশীলন
৬। ব্রেইন স্টর্মিং
৭। কেইস স্টাডি
৮। মুক্ত আলোচনা
৯। ভূমিকা অভিনয়
১০। ভিডিওচিত্র উপস্থাপন
১১। অনুক্রমিক পদ্ধতি
১২। সংবেদনশীলতা পদ্ধতি
১৩। মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপন
১৪। ফিল্ড ভিজিট
ইসলামে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব
ইসলামে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রশিক্ষণ ছাড়া কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণ হতে হবে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য, কাজ গুছিয়ে করার জন্য, জ্ঞানের ভাণ্ডার সুসজ্জিত করার জন্য যাতে করে সুসজ্জিত জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকে দ্রুত এগিয়ে নেয়া যায়। মুহাম্মদ (সা:)-এর প্রতি প্রথম যে বাণীটি নাজিল হয় তা হচ্ছে ইক্রা বা পড়। আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছিলেন তাদের কওম বা জাতিকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য। আল্লাহ তাআলা সূরা জুমায় ২ নং আয়াতে বলেন, “তিনিই সেই সত্তা, যিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে রাসূল তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ পড়ে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর পূর্বে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে ডুবে ছিল।
সূরা যুমার ৯ নং আয়াতে এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, “হে নবী! আপনি বলে দিন, যারা জানে, আর যারা জানে না তারা উভয়েই কি কখনো সমান হতে পারে? বুদ্ধিমান লোকেরাইতো নসিহত গ্রহণ করে থাকে।”
সূরা আল-বাকারায় ১২৯ নং আয়াতে তিনি আরও বলেন, “হে রব! তাদের প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল প্রেরণ কর, যিনি তাদেরকে তোমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষাদান করবেন এবং তাদের বাস্তব জীবনকে পরিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন করবেন। নিশ্চয়ই তুমি বড় শক্তিমান ও বিজ্ঞ।”
তিরমিজি এবং ইবনে মাজায় রাসূল (সা:) বলেন, “প্রত্যেক নর-নারীর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।” রাসূল (সা:) আরও বলেন, “যখন কেউ জ্ঞানের সন্ধানে বের হয় সে আল্লাহর পথে থাকে, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।”
ইমাম বুখারী (রহ) বলেন, ‘কথা ও কাজের পূর্বে বিদ্যার স্থান।’
সুতরাং দ্রুত পরিবর্তনশীল এ পৃথিবীতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত কার্যসম্পাদন করার জন্য কর্মীর নৈপুণ্য, জ্ঞান, মনোভাব, আচরণের পরিবর্তন-পরিমার্জন ও উন্নয়ন সাধন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই ইসলামী আন্দোলন কাক্সিক্ষত মঞ্জিলে পৌঁছতে সক্ষম।
লেখক : সম্পাদক, মাসিক প্রেরণা
আপনার মন্তব্য লিখুন