গাজী আল-আমিন
ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থার নাম খিলাফত, খিলাফতের শাসনব্যবস্থা বিশ্বের অন্য সকল শাসনব্যবস্থাসমূহের ভিত্তি, চিন্তা, ধারণা, গঠন, কাঠামো, আইন, সংবিধান এক কথায় সকল দিক থেকে পৃথক। ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা আল্লাহপ্রদত্ত একটি স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা যা কোন ক্রমেই রাজতান্ত্রিক, সাম্রাজ্যবাদী, ফেডারেল, প্রজাতান্ত্রিক কিংবা গণতান্ত্রিক নয়। খিলাফত প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “আবার সেই সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত করতে চাই।” (সূরা আল বাকারা : ৩০) এ আয়াতে খিলাফত দ্বারা বোঝানো হচ্ছে “আল্লাহর দেয়া ক্ষমতার অধিকারী হওয়া।” এ অর্থ অনুযায়ী সকল আদম সন্তান খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। “আমি তাকে বললাম হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত করেছি, কাজেই তুমি জনগণের মধ্যে সত্যসহকারে শাসন কর্তৃত্ব পরিচালনা করো এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না।” (সূরা সাদ : ২৬) এখানে খিলাফত দ্বারা বোঝানো হচ্ছে এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা যা আল্লাহর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁর প্রদত্ত শরিয়তের বিধান মোতাবেক তাঁর প্রতিনিধিত্বের যথাযথ হক আদায় করে । “আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্যে থেকে যারা ঈমান আনবে ও মা’রুফ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন।” (সূরা আন নূর : ৫৫) খিলাফত প্রসঙ্গে রাসূল (সা) বলেন, “তোমাদের মধ্যে নবুওয়ত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তারপর আল্লাহ তার সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে নবুওয়তের আদলে খিলাফত। তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তারও সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর আসবে যন্ত্রণাদায়ক বংশের শাসন, তা থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন। এক সময় আল্লাহর ইচ্ছায় এ্ররও অবসান ঘটবে। তারপর প্রতষ্ঠিত হবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের ওপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন। তারপর তিনি তা অপসারণ করবেন। তারপর আবার ফিরে আসবে নবুওয়তের আদলে খিলাফত।” (আহমদ) নবুওয়ত, খিলাফতে রাশেদা, যন্ত্রণাদায়ক বংশের শাসন সবই শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে আমরা শাসনব্যবস্থার যে পিরিয়ড অতিক্রম করছি তা হলো জুলুমের শাসন। খিলাফতে রাশেদা বলতে আমরা প্রথম চার খলিফার সময় কালকে বুঝে থাকি। যন্ত্রণাদায়ক বংশের শাসন বলতে বোঝানো হয় খিলাফতের সেই সময়কাল যখন জোর পূর্বক বাইয়াত গ্রহণ করা হতো এবং উত্তরাধিকারসূত্রে বাইয়াত হস্তান্তর করা হতো। এক কথায় বাইয়াতব্যবস্থার অপব্যবহার ও শরিয়তের অপব্যবহারকে বোঝানো হয়েছে। জুলুমের শাসন বলতে সেই শাসনকালকে বোঝানো হয়েছে যখন ইসলামী শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল কিন্তু শাসকগণ শরিয়তের অপপ্রয়োগ করে জনগণের ওপর অত্যাচার করতো এবং বর্তমান সময়ের শাসনব্যবস্থা যেখানে মুসলিম নামধারী জালিম শাসকগণ কুফুরিব্যবস্থা দ্বারা মুসলমানদেরকে শাসন করছে। হাদিসের শেষে মুসলিম উম্মাহকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এ বলে যে জুলুমের শোষণের অবসান ঘটবে এবং পুনরায় খিলাফত ফিরে আসবে। সুতরাং আজ মুসলিম উম্মাহর সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান কাজ হচ্ছে পুনরায় খিলাফতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করা এবং পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করা । আল্লাহ পথভ্রষ্ট মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো ঘোষণা করেছেন, ‘‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন সত্যপথ ও সত্যদ্বীনসহকারে যাতে তিনি একে সকল দ্বীনের ওপর বিজয়ী করতে পারেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সুরা আত-তাওবাহ : ৩৩, আস-সাফ : ৯) আল্লাহ তাঁর রাসূলকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন, তিনি তা যেভাবে পালন করেছেন, যে পদ্ধতিতে পালন করেছেন, আজকের যুগের দায়ী-ইলাল্লাহদের সেভাবেই পালন করতে হবে। তিনি কালিমার দাওয়াত যেভাবে দিয়েছেন আমাদেরকে সেভাবেই দিতে হবে। তাঁর দাওয়াতে তিনি ইসলামকে শুধু একটি আধ্যাত্মিক আকিদা হিসেবেই নয়, সাথে সাথে এটাকে একটি রাজনৈতিক জীবনব্যবস্থা হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি কুরাইশদের বলতেন, ‘আমার একটি কথা যদি মেনে নাও, তাহলে আরব ও আজম তোমাদের করতলগত হবে।’ ‘আমি তোমাদের সামনে এমন একটি কালিমা পেশ করছি তা যদি তোমরা গ্রহণ করো, তাহলে তোমরা সমগ্র আরব আজম জয় করে ফেলবে এবং অনারবরা তাদেরকে জিজিয়া দেবে।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম, তাফসীর ইবনে-কাসীর) ইসলামকে যখন একটি রাজনৈতিক জীবনব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয় তখন একটি বিশেষ শ্রেণী ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারীদের ওপর দমন নিপীড়ন শুরু করে। কুরআনের আলোকে আমরা জেনে নিই সেই বিশেষ শ্রেণী কারা, কেন, কিভাবে তারা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হোক তা চায় না। ‘কখনো এমন ঘটেনি যে, আমি কোনো জনপদে কোন সতর্ককারী পাঠিয়েছি এবং সেই জনপদের সমৃদ্ধশালী লোকেরা এ কথা বলেনি যে, তোমরা যে কথা নিয়ে এসেছো তা আমরা মানি না।’ (সূরা সাবা : ৩৪) এ কথা কুরআনের বহু স্থানে বলা হয়েছে যে, নবীগণের (আলাইহিস সালাম) দাওয়াতকে সবার আগে রুখে দাঁড়াতো সমাজের সচ্ছল শ্রেণী, অত্যধিক সহায় সম্পদের মালিক, যারা ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী ছিল। (বিস্তারিত জানতে সূরা আরাফ : ৬০, ৬৬, ৭৫, ৮৮, ৯০, সূরা বনি ইসরাইল : ১৬, সূরা আল মু’মিনুন : ২৪, ৩৩-৩৮, ৪৬, ৪৭, সূরা যুখরুফ : ২৩, সূরা হুদ ইত্যাদি) “নূহকে আমি তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই। সে বলে, হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আজাবের আশঙ্কা করছি।” তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা জবাব দেয়, আমরা দেখতে পাচ্ছি তুমিতো সুস্পষ্ট গোমরাহিতে লিপ্ত হয়েছ।” (সূরা আরাফ : ৫৯-৬০) নূহ (আ) তাঁর জাতিকে আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মেনে নিতে বললে তাঁর জাতির প্রধানেরা তাঁর বিরোধিতা করে এবং তাঁকে পথভ্রষ্ট বলে দাবি করে। প্রশ্ন দেখা দেয় ইলাহ বলতে কী বোঝায় এবং কেন তারা বিরোধিতা করেছিল? আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে ঈমান আনা বলতে যদি শুধু আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ¡াস, জীবনদাতা, রিজিকদাতা, মৃত্যুদাতা হিসেবে বিশ্বাস বোঝাতো তাহলে বিরোধিতা করার কোনো কারণ ছিলো না। এগুলোর পাশাপাশি একটি কঠিন বিশ্বাস ছিলো, যা ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার গদি ছেড়ে দেয়ার ডাক দেয়, তা হলো আইনদাতা হিসেবে আল্লাহর ওপর ঈমান আনা। সার্বভৌমত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট অন্য কোন মানুষের জন্য নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ফিরাউনের কাহিনী আমাদের কাছে বর্ণনা করেন। “ফিরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ আছে বলে আমার জানা নেই।” (সূরা কাসাস : ৩৮) আবার সূরা আন নাজিয়াতে বলা হয়েছে, “(ফিরাউন বলল) আমিই তোমাদের বড় রব।” উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে ফিরাউন নিজেকে ইলাহ এবং রব হিসেবে দাবি করেছে। দুটো শব্দের একটি অর্থ হলো সৃষ্টিকর্তা। এর মানে এই নয় যে সে নিজেকে সৃষ্টিকর্তা দাবি করেছে অথবা সে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো না অথবা সে লোকদেরকে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ¡াস করতে নিষেধ করেছে অথবা সে নিজেকে একমাত্র মা’বুদ বলে দাবি করেছে। বরং সে নিজেই আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো এবং তারা অনেক মা’বুদে বিশ্বাসী ছিল। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে “আর ফিরাউনের জাতির সরদাররা বললো, তুমি কি মূসা ও তাঁর জাতিকে অবাধ ছাড়পত্র দিয়ে দেবে যে, তারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করুক এবং তোমাকে ও তোমার উপাস্যদেরকে ত্যাগ করুক ?” (সূরা আল আরাফ : ১২৭) অতএব তার কথার অর্থ হচ্ছে যে, সে তার রাজ্যের বিধানদাতা, হুকুমদাতা, আইনদাতা। কোনটি হালাল কোনটি হারাম এ হুকুম জারি করার অধিকার তার। ফিরাউন নিজেকে আইনদাতা ইলাহ হিসেবে দাবি করেছিল। এ কারণে সে তার দরবারের লোকদেরকে সম্বোধন করে বলেছিল ‘‘হে আমার জাতি! মিসরের বাদশাহি কি আমার জন্য নয়?”(আয যুখরুফ : ৫১) সুতরাং একদিকে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ¡াস করা, অপর দিকে স্রষ্টাকে বিধানদাতা বিশ¡াস না করে নিজেকে বিধানদাতা হিসেবে দাবি করলো। এটাই শিরক। ঐ সময়ের ফিরাউনরা এবং সমাজের অর্থবৃত্তের মালিক, নেতৃত্ব, কর্তৃত্বের অধিকারী ও ক্ষমতাশালী লোকেরা একদিকে আল্লাহকে স¡ীকার করতো অপরদিকে নিজেরাই নিজেদের খেয়াল খুশিমত রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন করত। নিজেদের খেয়াল খুশিমত রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। আজকের মুসলমান নামধারী শাসকরাও নিজেদের ইচ্ছেমত নিজেরাই আইন প্রণয়ন করছে। সুতরাং সে সময়ের ফিরাউন এবং আজকের যুগের শাসকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, ফিরাউন নিজের জন্য ইলাহ শব্দ ব্যবহার করেছিল এবং এরা সে একই অর্থে সার্বভৌমত্ব পরিভাষা ব্যবহার করছে, এতে এমন কী পার্থক্য সৃষ্টি হয়! কোনো মুসলমানের দ্বারা এই সমস্ত নব্য ফিরাউনদের বিধানদাতা শাসক হিসেবে মেনে নিলে তা হবে তাদেরকে ইলাহ বা রব হিসেবে মেনে নেয়া অর্থাৎ কালিমার দাওয়াতকে অস¡ীকার করা। আর এটিই হলো আল্লাহর উলুহিয়াতের সাথে শিরক। বর্তমান সময়ের মুসলমানগণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ইসলামবিরোধী পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী নব্য ফিরাউনদের মেনে নিয়ে এই মারাত্মক শিরকের মধ্যে ডুবে আছে। সুতরাং যদি ফিরাউনকে আইনদাতা হিসেবে মেনে নিলে তাকে ইলাহ হিসেবে মানা হয় তাহলে আজকের পুঁজিবাদী, রাজতান্ত্রিক বা মানবরচিত গণতান্ত্রিক শাসকবর্গকে আইন-প্রণয়নকারী হিসেবে মেনে নিলে তাকে ইলাহ মানা হবে। হজরত নূহ (আ) যখন তাঁর জাতিকে আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মেনে নেয়ার দাওয়াত দিয়েছিলেন তখন তাঁর জাতির একটি বিশেষ শ্রেণী তার বিরোধিতা করেছিলো। উপরে উল্লেখিত সূরা আরাফের ৫৯-৬০ আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা মওদূদী (রহ) তাঁর তাফহীমুল কুরআনে বলেছেন, “কুরআন মাজিদের এ স্থানে ও অন্যান্য স্থানে হযরত নূহ (আ) ও তাঁর সম্প্রদায়ের যে অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এ সম্প্রদায়টি আল্লাহর অস্তিত্ব অস¡ীকার করতো না, তাঁর সম্পর্কে নিরেট অজ্ঞও ছিলো না এবং তাঁর উপাসনা করতেও অস¡ীকার করেনি বরং তারা যে গোমরাহিতে লিপ্ত ছিলো সেটি ছিলো শিরক। তারা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে অন্যান্য সত্তাকেও শরিক করতো এবং ইবাদাত লাভের অধিকারে তাদেরকে আল্লাহর সাথে অংশীদার মনে করতো। তারপর এই মৌলিক গোমরাহিতে থেকে এ জাতির মধ্যে অসংখ্য ত্রুটি ও দুষ্কৃতি জন্ম নেয়। যেসব মনগড়া মাবুদকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে অংশীদার গণ্য করা হয়েছিলো তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য জাতির মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণীর জন্ম হয়। এ শ্রেণীটি সমস্ত ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্বের একচ্ছত্র মালিক হয়ে বসে। জাতিকে তারা উচ্চশ্রেণী ও নিম্নশ্রেণীতে বিভক্ত করে। সমাজ জীবন জুলুম ও বিপর্যয়ে ভরপুর করে তোলে। নৈতিক উচ্ছৃঙ্খলতা, চারিত্রিক নৈরাজ্য ও পাপাচারের মাধ্যমে মানবতার মূলে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করার জন্য হযরত নূহ (আ) অত্যন্ত সবর, সহিষ্ণুতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালান। কিন্তু ঐ সকল ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধিকারী প্রভুরা সাধারণ মানুষকে নিজেদের প্রতারণার জালে এমনভাবে আবদ্ধ করে নেয় যার ফলে সংশোধনের কোনো কৌশল কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।” এ বিশেষ শ্রেণী যেভাবে পুরো জাতিকে পথভ্রষ্টতার পথে পরিচালিত করেছিলো আজকের যুগে তাদের উত্তরসূরি ক্ষমতাধর, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী পুরো জাতিকে সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদ-ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ-গণতন্ত্র ইত্যাদি মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্রের প্রতারণাময়ী জালে আবদ্ধ করে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে তাদের কাছে খিলাফতে রাশেদার আদলে রাষ্ট্র গঠনের দাবি তুললে সাধারণ মানুষ তা একটি নিরেট কৌতুকের দৃষ্টিতে দেখে। মানবরচিত এইসব তন্ত্র-মন্ত্রে জাতিকে শেখানো হয় নানা রকম প্রতারণাময়ী, গালভরা ও কর্ণে ঝঙ্কার সৃষ্টিকারী স্লোগান যেমন জনগণের সার্বভৌমত্ব, ক্ষমতায় জনগণের অংশীদারিত্ব, জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, নারীর সম-অধিকার, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, মালিকানার স¡াধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবাধিকার আরো কত কী। এভাবে তারা পুরো মানবজাতিকে আল্লাহপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা থেকে সরিয়ে মানবরচিত জীবনব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত করল। যার ফলাফল হলো অশ্লীলতা, নগ্নতা, পাপাচার, অশান্তি, অন্যায়, অত্যাচার ও যুদ্ধ-বিগ্রহ। সেই বিশেষ গোষ্ঠীর বিরোধিতার সম্মুখীন হযরত নূহ (আ)-এর মতো হযরত হুদও (আ) হয়েছিলেন। “আর আদের (জাতি) কাছে আমি তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিলো, ‘হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব করো কারণ তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই। এরপরও কি তোমরা ভয় করবে না? তার জাতির সরদাররা বললো, যারা তাঁকে অস্বীকার করেছে, ‘আমরাতো দেখছি তুমি নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত রয়েছ এবং আমরা মনে করি নিশ্চয়ই তুমি একজন মিথ্যুক।” (সূরা আরাফ : ৬৫-৬৬) হযরত নূহ (আ)-এর মত হযরত হুদ (আ)-এর জাতিও আল্লাহর অস্তিত্বে বিস¡াস করতো এবং তার সম্পর্কে অজ্ঞও ছিলো না। তাঁর উপাসনায় তারা অস্বীকার করেনি। তাদের যে ত্রুটি ছিলো তাহলো তারা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব অন্যদের অংশীদার মনে করতো। ‘একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করতে হবে এবং তার ইলাহি ক্ষমতায় কাউকে যুক্ত করা যাবে না’ এ বক্তব্যটি তারা মেনে নিতে অস¡ীকার করেছিলো। আর যখনি আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে মানা হবে তখন সেই বিশেষ শ্রেণীর কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে যাবে। তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যে চলে যেতে হবে। ফলে সমাজে তাদের খবরদারি আর থাকবে না। তাই তারা হুদ (আ)-এর বিরোধিতা করেছিলো। হযরত ছালেহ (আ)-এর সময়ও একই ঘটনা ঘটেছে। “আর সামুদ জাতির কাছে আমি পাঠাই তাদের ভাই সালেহকে, সে বলল, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব কর, কারণ তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই। ... তার জাতির সেসব নেতৃস্থানীয় লোকেরা যারা নিজেদের নেতৃত্ব এবং ক্ষমতার বড়াই করে বেড়াতো, দুর্বল শ্রেণীর মু’মিনদেরকে বললো, ‘তোমরা কি বিস¡াস কর সালেহ আল্লাহর পাঠানো একজন রাসূল?’ তারা জবাব দিলো, ‘নিশ্চয়ই, যে বাণী সহকারে তাঁকে পাঠানো হয়েছে তার ওপর আমরা ঈমান এনেছি।’ তখন ঐ সকল অহঙ্কারী ও শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদাররা বললো, ‘‘তোমরা যার ওপর ঈমান এনেছ আমরা তা অস¡ীকার করি।” (সূরা আরাফ : ৭৩-৭৬) এবং মাদাইয়ান বাসীদেরকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার আহবান জানানোর জন্য আল্লাহ শোয়াইব (আ)-কে পাঠালেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, “আর মাদাইয়ান বাসীদের কাছে আমি তার ভাই শোয়াইবকে পাঠাই। সে বলে, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সমস্ত নির্দেশনা এসে গেছে। কাজেই ওজন ও পরিমাণ পুরো পুরো দাও, লোকদের পাওনা জিনিস কম করে দিও না। এবং পৃথিবী পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে আর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। এরই মধ্যে রয়েছে তোমাদের কল্যাণ, যদি তোমরা যথার্থ মুমিন হয়ে থাকো।” (সূরা আরাফ : ৮৫) আয়াতের শেষের কথাটি দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে মাদাইয়ানবাসী নিজেদেরকে ঈমানদার বলে দাবি করতো। তারা আসলে ছিল গোমরা ও বিকৃত বিশ¡াসের অধিকারী ঈমানদার। বিকৃত বিশ¡াস তথা শিরকিতে লিপ্ত ও চারিত্রিক বিপর্যয়ে লিপ্ত থাকলেও তারা কেবল নিজেদেরকে ঈমানদার দাবি করতো না সাথে সাথে গর্বও করতো। তাই হযরত শোয়াইব (আ) বলেন, যদি তোমরা ঈমানদার হও তাহলে তোমাদের বিশ¡াস ও চরিত্র দুনিয়াপূজারী লোক যারা আল্লাহ ও পরকাল স¡ীকার করে না তাদের থেকে আলাদা হওয়া উচিত। তোমাদেরকে এক আল্লাহকেই ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করতে হবে, তাঁর উলুহিয়াতে কারো অংশ স্থাপন করা যাবে না। এবং আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মেনে নেয়ার পর তোমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এ বিশ¡াসের আলোকে তার প্রদত্ত শরিয়ত মোতাবেক হতে হবে, তোমাদের নিজস¡ কোন ব্যবস্থা দ্বারা নয়। আজকের সমাজের মানুষেরা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ¡াস করে কিন্তু আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করে যেমনটি করেছিল পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতেরা। আল্লাহর অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে যেমন আইনদাতা, রিজিকদাতা, সাহায্যকর্তা, পালনকারী। এগুলোর সাথে অন্য কউকে শরিক করলে বলা হয় সিফাত বা উলুহিয়াত এর শিরক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করছে।” (সূরা ইউসুফ : ১০৬) মুসলিম উম্মাহ যেন শিরকে লিপ্ত না হয় সে জন্য আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত দিয়ে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। বিরোধিতার কারণ প্রতাপশালী ক্ষমতাধর রাষ্ট্রশক্তি প্রতিষ্ঠিত জাহিলিয়াতকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থার বিরোধিতা করে মূলত দু’টি কারণে - ১. রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদস্খলন। ২. প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার সাথে তাদের স¡ার্থ জড়িত থাকা। রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পদস্খলন: এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেন “এভাবে তোমার পূর্বে আমি যে জনপদেই কোন সতর্ককারী পাঠিয়েছি তাদের সচ্ছল লোকেরা এ কথাই বলেছে “আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে একটি পন্থার অনুসরণ করতে দেখেছি। আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।” (সূরা যুখরুফ : ২৩) “সুখী ও সচ্ছল শ্রেণী আপন স্বার্থ উদ্ধার ও তা ভোগ করার নেশায় এমনি ডুবে থাকে যে, তাদের মতে তারা হক ও বাতিলের এই অপ্রাসঙ্গিক বিতর্কে মাথা ঘামানোর জন্য প্রস্তুত থাকে না। তাদের আরামপ্রিয়তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিলাসিতা দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে অত্যন্ত নির্লিপ্ত ও নিষ্পৃহ এ সাথে সাথে কার্যত রক্ষণশীল বানিয়ে দেয় যাতে প্রতিষ্ঠিত যে ব্যবস্থাই পূর্ব থেকে চলে আসছে হক হোক বা বাতিল হোক তাই যেন হুবহু প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং কোন নতুন আদর্শ সম্পর্কে চিন্তা করার কষ্ট না করতে হয়।” (তাফহীম, সূরা যুখরুফ, টীকা :২৩) স্বার্থপরতা: এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে, “আর জাতির সরদারগণ এ কথা বলতে বলতে বের হয়ে চলে গেলো, অবিচল থাকো নিজেদের উপাস্যদের উপাসনায়। এ কথা তো ভিন্নতর উদ্দেশে বলা হচ্ছে।” (সূরা সাদ : ৬) আয়াতে তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে তারা রাসূলের দাওয়াতকে মতলবি বলে মন্তব্য করেছে, কারণ নবী-রাসূলদের দেয়া আদর্শকে তারা এভাবে বোঝতো যে এই আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের হুকুমত এর সমাপ্তি ঘটবে এবং তাদের হারাম কর্ম করার স্বাধীনতা থাকবে না। কুরআনের অন্য আয়াতে এ প্রসঙ্গে আরো বলা হয়, শোয়াইব (আ)-এর দাওয়াতের জবাবে তার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা যা বললো আল্লাহ তা কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেন : “তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা তাঁর কথা মেনে নিতে অস¡ীকার করেছিল, পরস্পরকে বললো, যদি তোমরা শোয়াইবের আনুগত্য মেনে নাও, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে।” (সূরা আল আরাফ : ৯০) উপরোক্ত বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে প্রভাবশালীরা কেন দাওয়াতের বিরোধিতা করেছিল। “মাদাইয়ানের সরদার ও নেতারা আসলে যে কথা বলেছিল এবং নিজ জাতিকে বুঝাতে চেয়েছিল তা এই যে, শোয়াইব (আ) যে সততা ও ঈমানদারির দওয়াত দিচ্ছেন এবং মানুষকে নৈতিকতা ও বিশ্বস্ততার যে যেসব স্বতন্ত্র মূলনীতির অনুসারী করতে চাচ্ছেন, সেগুলো মেনে নিলে আমরা ধবংস হয়ে যাবো। আমরা যদি পূর্ণ সততার সাথে ব্যবসায় করতে থাকি এবং কোন প্রকার প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে ঈমানদারির সাথে পণ্য বেচাকেনা করতে থাকি তাহলে আমাদের ব্যবসা কেমন করে চলবে? আমরা দুনিয়ার দু’টি সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক শহরের সন্ধিস্থলে বাস করি এবং মিসর ও ইরাকের মতো দুটো বিশাল সুসভ্য ও উন্নত রাষ্ট্রের সীমান্তে আমাদের জনপদ গড়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় আমরা যদি বাণিজ্যিক কাফেলার মালপত্র ছিনতাই করা বন্ধ করে দিয়ে শান্তিপ্রিয় হয়ে যাই তাহলে বর্তমান ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমরা এতদিন যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা লাভ করে আসছিলাম তা একদম বন্ধ হয়ে যাবে এবং আশপাশের বিভিন্ন জাতির ওপর আমাদের যে আধিপত্য কায়েম আছে তাও খতম হয়ে যাবে। এ ব্যাপারটি কেবল শোয়াইবের সম্প্রদায়ের প্রধানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রত্যেক যুগের পথভ্রষ্ট লোকেরা সত্য, ন্যায়, সততা ও বিশ্বস্ততার নীতি অবলম্বন করার মধ্যে এমনি ধরনেরই বিপদের আশঙ্কা করছে। প্রত্যেক যুগের নৈরাজ্যবাদীরা এ কথাই চিন্তা করেছে যে, ব্যবসায়-বাণিজ্য, রাজনীতি এবং অন্যান্য পার্থিব বিষয়াবলি মিথ্যা, বেঈমানী ও দুর্নীতি ছাড়া চলতে পারে না। প্রত্যেক জায়গায় সত্যের দাওয়াতের মোকাবেলায় যেসব বড় বড় অজুহাত পেশ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই যে, যদি দুনিয়ার প্রচলিত পথ থেকে সরে গিয়ে এ দাওয়াতের অনুসরণ করা হয় তাহলে সমগ্র জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। (তাফহীম, সূরা আরাফ, টীকা :৭৪) উল্লেখিত কারণ দু’টি ছাড়াও আরো যে সমস্ত কারণ রয়েছে : ১. আল্লাহর দেয়া বিচারশক্তি ও ইচ্ছাশক্তির স্বাধীনতার অপব্যবহার। যেমন ভৎববফড়স ড়ভ নবষরবভ, ভৎববফড়স ড়ভ ড়ঢ়রহরড়হ, ভৎববফড়স ড়ভ ড়হিবৎংযরঢ়, ঢ়বৎংড়হধষ ভৎববফড়স ২. নিরেট জ্ঞানের পরিবর্তে ধারণা অনুমানের অনুসরণ। ৩. সত্যের বিরুদ্ধে জিদ ও হঠকারিতা ৪. বিলাসিতায় নিমজ্জিত হওয়া। ৫. প্রবৃত্তির দাসত্ব করা। ৬. আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চিন্তামুক্ত হওয়া। ৭. আল্লাহর গুণাবলির সঠিক ধারণা না থাকা। ৮. আখিরাত অস্বীকার করা। সুতরাং রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গ, বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান, তারা যেন আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থার বিরোধিতা না করে আল্লাহপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করে। আল্লাহ কুরআনে বলেন, “হে ঈমানদারগ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও।” (সূরা আস সাফ : ১৪) তিনি আরো বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আরো বিশ্বাসী হও।” “তোমরা পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করো।” ইসলামের বিরোধিতা করে এ যাবৎকাল বিরোধী শক্তি যে পরিমাণ আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করেছে এতে করে তাদের মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত দূরত্ব বাকি থাকলো। সুতরাং এখন দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে সহযোগিতা করে জাহান্নাম থেকে ফিরে জান্নাতে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করা দরকার। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা)-এর একটি হাদিস হচ্ছে -“সেই পবিত্র সত্তার কসম যিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই, তোমাদের মধ্যে কেউ জাহান্নামবাসীদের কাজ করে থাকে, এমনকি তার ও জহান্নামের মধ্যে এক হাত দূরত্ব বাকি থাকবে, এমন সময় তার প্রতি সেই তাকদিরের লিখন অগ্রবর্তী হয়, তখন সে জান্নাতবাসীদের কাজ করতে আরম্ভ করে, যার ফলে সে জান্নাতে চলে যায়।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
আপনার মন্তব্য লিখুন