মীযানুল করীম
সাম্প্রতিককালে দু’টি বক্তব্য বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের নিদারুণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি হলো, ইসরাইলের কট্টরপন্থী নেতা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বলেছেন, দখলকৃত আরব এলাকায় ইহুদি বসতি স্থাপন অব্যাহত থাকবে। অপর বক্তব্যটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান ডেভিড রিচার্ডসন বলেছেন ব্রিটিশ সৈন্যরা আগামী ৪০ বছরও আফগানিস্তানে থাকতে পারে।
[caption id="attachment_25" align="alignleft" width="270" caption="বারাক হোসেন ওবামা"][/caption]ফিলিস্তিন সঙ্কট অনেক পুরনো এবং নিঃসন্দেহে এটা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, মুসলিম বিশ্বে অশান্তির সবচেয়ে বড় কারণ। আমাদের আলোচ্য বিষয় আফগান পরিস্থিতি। ইরাকের চেয়ে আফগানিস্তানে এখন সঙ্ঘাত, সহিংসতা, হামলা ও রক্তপাত অনেক বেশি। আমেরিকা তার মিত্র কয়েক দেশের বাহিনীসমেত আফগানিস্তানে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ২০০১ সালে। উদ্দেশ্য, তালেবান শাসনের অবসান ঘটিয়ে ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা। এর মধ্যে ৮ বছর পার হতে চলেছে। তালেবানদের সরকার থেকে হঠাতে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু আফগান সমাজ থেকে তাদের উচ্ছেদ করা অসম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছে। তারা বরাবরই দেশের বিরাট অংশে প্রভাব বিস্তার করে আছে। বিশেষত পশতুন অধ্যুষিত পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলে তালেবানের প্রতাপ অস্বীকার করার উপায় নেই। কান্দাহারের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তালেবানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। খোদ রাজধানী কাবুলে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা তালেবানের উপস্থিতি ও দুর্ধর্ষতার সাক্ষ্য। তারা অনেক স্থানে অঘোষিতভাবে এক ধরনের প্রশাসন কায়েম করে রেখেছে। আর দিনে কাবুল সরকার রাতে তালেবান অবস্থা তো আছেই।
মার্কিন সাহায্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে যে সব প্রকল্প, সেগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থের মোটা অংশ তালেবানকে দিতে হয় চাঁদার নামে। মার্কিনিরা এটা জানলেও করার কিছু নেই। এখানে একটা সাদৃশ্যের কথা বলতে হয়। তা হলো, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানের পুরোটা তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তেমনি ২০০১ এর পর তালেবান কাবুলে ক্ষমতাচ্যুত হলেও মার্কিন জোট ও তার বশংবদ কারজাই সরকার গোটা দেশ করায়ত্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আফগানিস্তানে হামলার দেড় বছর পর ইরাকে হামলা চালায় ইঙ্গ-মার্কিন জুটি এবং তাদের ন্যাটো মোর্চার ফৌজ। তখন আফগান পরিস্থিতি অনুকূল ভেবে তারা এখান থেকে অনেক সৈন্য নিয়ে যায় ইরাক ফ্রন্টে। এখন ঘটছে উল্টো। আফগান রণাঙ্গন আবার ভয়াবহ হয়ে উঠছে বিধায় ইরাক থেকে সৈন্য সরিয়ে আফগানিস্তান সামলানোর ব্যর্থ প্রয়াস চলছে। বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরাকে সৈন্যদের ‘সার্ক’ বা তরঙ্গ তুলে (অর্থাৎ তাদের সংখ্যা এক সাথে অনেক বাড়িয়ে) প্রতিরোধ মোকাবেলা করতে চেয়েছেন। আর বুশের উত্তরসূরি বারাক ওবামা সেনাতরঙ্গে প্লাবিত করে আফগান ফ্রন্ট নিয়ন্ত্রণে ব্রতী হয়েছেন। বাস্তবে এখানে বিদেশী সৈন্য বাড়ানো মানে তাদের নিহত হওয়ার হার বেড়ে যাওয়া। ১৯৭৯ সালে পরাশক্তি (বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রও) সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছিল। [caption id="attachment_26" align="alignright" width="250" caption="তালেবান নেতা মেহসুদ"][/caption]কিন্তু অকুতোভয় যোদ্ধা, আফগানদের প্রতিরোধে দেশটি সোভিয়েত বা রুশদের বধ্যভূমির রূপ নিয়েছিল। এক দশকের যুদ্ধে ওদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা করুণা নয়, ব্যঙ্গ ও তিরস্কারের কারণ হয়েছিল। খুব সম্ভবত বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের শিরোনাম ছিল, ‘রাশিয়ান বিয়ার অন টাইগার্স ব্যাক’ (বাঘের পিঠে সওয়ার রুশ ভল্লুক)। এই কম্যুনিস্ট ভালুকরা আফগান ব্যাঘ্রকে দমাতে পারেনি। বাঘের পিঠে চড়লে নামা অসম্ভব। কারণ, নামলেই বাঘের হিংস্রতার শিকার হতে হয়। এখন ক্যাপিটালিস্ট আমেরিকার অনেকটা সে বিপদ ঘটতে যাচ্ছে। এ যুদ্ধে পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজি যে সৈন্যরা, তাদেরকেই হারাতে হচ্ছে, আগ্রাসনের মুনাফা তোলা দূরের কথা। সর্বশেষ, এএফপি পরিবেশিত একটি রিপোর্ট পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম, ‘তালেবানদের উপস্থিতি আফগানিস্তানের সর্বত্রই’ আফগান নীতিনির্ধারণবিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপস্থাপিত নথিপত্রে এ প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে। ২০ আগস্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার মাঝে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, আফগানিস্তানের মাত্র ৩ শতাংশ এলাকায় তালেবানদের সক্রিয় দেখা যায়নি। বাকি ৯৭ ভাগ অঞ্চলেই ওরা তৎপর’।
স্মর্তব্য, ২০০১-এ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর প্রথমে তারা বড়জোর ১০ শতাংশ এলাকায় সক্রিয় ছিল। দেখা যাচ্ছে, মার্কিন দখলদারিত্ব সত্ত্বেও তালেবানের তৎপরতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলার বিপরীতে কারজাই প্রশাসনের কর্তৃত্ব সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, কিছুদিন পূর্বে এ মর্মে খবর ছাপা হয়েছিল যে, নিরাপত্তার অভাবে কারজাই কাবুলের বাইরে যান না। আর রাজধানীতেও নিরাপদ নন বলে যথাসম্ভব কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তিনি দিন কাটাচ্ছেন।
তালেবান পতনের পর চলতি বছরেই দখলদার বিদেশী সৈন্যের জন্য সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বেসামরিক আফগান নাগরিকের যেমন সর্বাধিক মৃত্যু ঘটছে, তেমনি পাশ্চাত্যের সৈন্য নিহত হওয়ার দিক দিয়েও রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এএফপি’র ভাষায়, ‘বিষয়টি মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতৃবর্গকে ফেলে দিয়েছে কঠিন পরীক্ষায়।’ এই প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিওএস) জানিয়ে দিলো, ৯৭ ভাগ আফগান ভুখণ্ডেই তালেবানরা সক্রিয়ভাবে উপস্থিত! আমেরিকা তালেবানকে খাটো করে দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু যা বাস্তব, তা তো প্রকাশ পাবেই। সামরিক ক্ষেত্রে যেমন তালেবান তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন সৃষ্টি করেছে, তেমনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও মার্কিনিরা একটা বড় ধাক্কা খেলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইস্যুতে। ভেবেছিল, এ নির্বাচন সম্পন্ন করে এটাকে তালেবানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে তুলে ধরবে। কার্যত নির্বাচনটি স্থিতিশীলতার বদলে অস্থিতিশীলতাই জন্ম দিয়েছে। মিডিয়ায় বলা হয়েছে, আফগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এ মুহূর্তে আমেরিকার মাথা ব্যথার প্রধান কারণ। মার্কিন দখলদারিতে এটা ২য় বারের নির্বাচন। পয়লা দফায় হামিদ কারজাই সহজেই উত্তরে যান, যদিও ভোটার উপস্থিতি খুব বেশি ছিল না। এবার কারজাইর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ পরাজয় না মানায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত আত্মপ্রসাদ লাভ করলেন এ কথা বলে, ‘এ নির্বাচনের দিনটা তালেবানের জন্য মন্দ, আর জনগণের জন্য ভালো।’ বাস্তবে তালেবানঅধ্যুষিত দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দেয়নি। এমনকি সারা দেশের হিসাব নিলেও বলতে হয়, অধিকাংশ মানুষ যায়নি ভোট কেন্দ্র্রে। অর্থাৎ নির্বাচনের দিন তালেবান বা জনগণ নয়, আসলে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনসহ দখলদারদের ভাগ্যই ছিল মন্দ। নির্বাচনের দিন তালেবানদের হামলার ৪শ ঘটনা ঘটেছে। প্রথম থেকেই নির্বাচনে জালিয়াতি ও কারচুপির মারাত্মক অভিযোগ ওঠে। ভুয়া ব্যালটে বাক্সভর্তি এবং ব্যালট বাক্স সরিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী দুর্নীতি ও অনিয়মের শত শত অভিযোগ পাওয়া যায়। এ নিয়ে কারজাইর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ সোচ্চার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিদেশী অন্যান্য পর্যবেক্ষকও দাবি করেছেন, এ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন কারজাই সরকারের নিয়ন্ত্রিত বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। শতকরা ৯২ ভাগ ভোট কেন্দ্রের ফলাফলে দেখানো হয়েছে, হামিদ কারজাই ৫৪ এবং আবদুল্লাহ ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তবে পুনর্গণনায় যদি প্রমাণিত হয়, কারজাইর স্বপক্ষে বহু ভুয়া ভোট দেয়া হয়েছে, তা হলে তিনি ৫০ শতাংশের কম ভোট পেতে পারেন। তখন ২য় দফায় নির্বাচন করতে হবে সারা দেশে। মার্কিন সমর্থনপুষ্ট ‘নির্বাচনী অভিযোগসংক্রান্ত কমিশন’ ১০ সেপ্টেম্বর ৮৩টি ভোট কেন্দ্রের হাজার হাজার ব্যালট ছুড়ে ফেলে দিয়েছে এবং কারজাইর অনুকূল বলে প্রতীয়মান, এমন তিন প্রদেশে আংশিকভাবে ভোট পুনরায় গণনার নির্দেশ দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের পয়লা সপ্তাহের একটি ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন দুচিন্তার কারণ। ৪ সেপ্টেম্বর কুন্দুজ প্রদেশে ন্যাটোর বিমান হামলায় নিহত হয়েছে ৯০ জন। তালেবান টার্গেটের কথা বলা হলেও তাদের অন্তত অর্ধেকই নিরীহ নাগরিক। ঘটনা হলো, তালেবান যোদ্ধারা ২টি ট্যাঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে গ্রামবাসীদেরকে বিনামূল্যে জ্বালানি সরবরাহ করছিল। তখনই ন্যাটোর হামলা ঘটে। এতে দাহ্য তেলে বিস্ফোরণ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি করে। তাই কাউকে উদ্ধার করা ছিল অসম্ভব। ভস্মীভূত মৃতদেহগুলো চেনারও ছিল না উপায়। ২ মাস আগে মার্কিন বাহিনীর নতুন অধিনায়ক বলেছেন, ‘অভিযানে বেসামরিক লোকজনের নিহত হবার সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।’ কুন্দুজে এভাবে নিরপরাধ নাগরিক হত্যা কি এর ঠিক বিপরীতটাই প্রমাণ করে না? কুন্দুজ প্রদেশের গভর্নর মার্কিনপন্থী সরকারের উচ্চপদস্থ লোক হয়েও এ হামলার জন্য সরকারকেই দায়ী করলেন।এমনকি, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজ উদ্দেশ্যে আমাকে ব্যবহার করতে চায়।’ যদিও এত বিলম্বে তার এই কথিত বোধোদয় হাস্যকর ও অর্থহীন, তবুও বোঝা যাচ্ছে কুন্দুজের ঘটনা বশংবদ শিরোমণিকেও কত বেশি নাড়া দিয়েছে। কারজাই বুঝেছেন, ন্যাটো ফৌজ এমন ‘বড় ভুল’ করে গেলে এর প্রতিক্রিয়ায় তার মতো তাঁবেদারদের কী করুণ পরিণতি বরণ করতে হবে।
কুন্দুজের এই হামলা চালায় জার্মান সৈন্যরা। জার্মান কর্তৃপক্ষের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন বর্বরতার সাফাই গেয়ে বলা হয়েছে, তালেবান জঙ্গিরাই এতে নিহত হয়েছে। তবে তাদের মিথ্যাচার ধরা পড়ে কারজাইর স্বীকারোক্তিতেই। তিনি জানান, ‘আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল স্টানলি ম্যাকক্রিস্টাল এ ঘটনায় আমার কাছে মাফ চেয়েছেন। তিনি এই হামলার আদেশ দেননি বলেও উল্লেখ করেছেন।’ যদি তাই হয়, তা হলে ন্যাটো কমান্ড সংশ্লিষ্ট হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে কি? ‘আফগান রাইটস মনিটর জানিয়েছে, কুন্দুজে নিহত ৯০ জনের মধ্যে ৭০ জন পর্যন্ত বেসামরিক লোক থাকতে পারে। জার্মানির নির্বাচনে কুন্দুজ হামলা একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। এটা সামাল দিতে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এ বিষয়ে জরুরিভাবে তদন্ত করতে বলেছেন। কারজাই বলেছেন, কুন্দুজে জ্বালানির ট্যাঙ্ক উদ্ধারের জন্য বিমান হামলার বদলে স্থলবাহিনী কেন পাঠানো হলো না?’ এই ট্র্যাজেডি প্রমাণ করে, আফগানিস্তানে মার্কিনসহ ন্যাটো বাহিনী যে গণহত্যা ও ধ্বংসতাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে, তল্পিবাহক কারজাই তার অনেক ব্যাপারে অবগতই নন, যদিও এর দায় তিনি এড়াতে পারবেন না কিছুতেই। আর মার্কিন কমান্ডের বক্তব্য বিশ্বাস করলে বলতে হয়, তারাও স্বীয় জোট বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে কারজাইর কাছে নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে গোটা আফগানজাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে। আগস্টের শেষ দিন জানা যায়, আফগানিস্তানে মার্কিন ফৌজের প্রধান, জেনারেল ম্যাকক্রিস্টাল এক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছেন অকপটে, এ দেশে আমেরিকার বর্তমান কৌশলে কাজ হচ্ছে না। অর্থাৎ মার্কিন রণকৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত। ওই প্রতিবেদনে কত মার্কিন সৈন্য হলে কৌশল সফল করা যাবে, সে সম্পর্কে কোনো সুপারিশ করেননি তিনি। তবে তিনি সরাসরি বলে দিয়েছেন, তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণ ঝুঁকছে গেরিলা বা জঙ্গিদের দিকেই। কারণ, এই যুদ্ধ তাদের জীবনমান উন্নত করেনি।নিজেদের এভাবে আফগান জাতির প্রতিপক্ষ হয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিয়ে জেনারেল ম্যাকক্রিস্টাল বললেন, আফগান সেনাবাহিনী আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে তৈরি হতে পারবে না।’ তাঁর এ কথার সরলার্থ, কমপক্ষে তিন বছর ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যরা অনেক বর্ধিত সংখ্যায় শুধু অবস্থান নয়, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে বেপরোয়া সন্ত্রাসে মেতে থাকবে। আফগান দেশটিতে এখন মার্কিন সেনা আছে লক্ষাধিক। আফগানিস্তান ও ইরাকে আগ্রাসনের ক্ষেত্রে মার্কিন বাহিনীর প্রধান দোসর ব্রিটিশরা। সেই জাতির অধিকাংশ মানুষ আজ আফগান যুদ্ধের বিপক্ষে। লন্ডনের দি মেইল পত্রিকার জন্য গত ২০-২১ আগস্ট পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক তালেবানবিরোধী যুদ্ধে তাদের সৈনিকদের নিয়োজিত রাখতে সমর্থন করেন না। ৬৯ শতাংশ এমত দিয়েছেন। অপর দিকে মাত্র দেড় শতাংশ মানুষের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন আফগানযুদ্ধ সামাল দিচ্ছেন ভালোভাবেই। আর উত্তরদাতাদের চার ভাগের তিন ভাগই বলেছেন, আফগান য্দ্ধু ব্রিটেনের জনগণের নিরাপত্তা বাড়ায়নি। অর্থাৎ আফগানিস্তানে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার সপক্ষে ব্রিটিশ সরকারের কথিত যুক্তি নিজের জনগণই আর গ্রহণ করছে না। গত ক’মাস যাবৎ ব্রিটিশ সরকার বলে আসছে, ব্রিটেনের মাটি সন্ত্রাসবাদী হামলামুক্ত রাখতেই আফগান ফ্র্যন্টে লড়তে হচ্ছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন