কঠিন পরিস্থিতিতে চাই সঠিক অভ্যাস
ফাহিম ফয়সাল
১৭ মার্চ ২০২০
ব্যস্ততা ও পরিস্থিতি আমাদের জীবনযাত্রা এলোমেলো করে দেয়। তরুণ বয়স ধকল সহ্য করে। কিন্তু ধৈর্যেরও তো সীমা আছে। ইলাস্টিক টানলে লম্বা হয়। ছেড়ে দিলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। দীর্ঘ সময় টেনে ধরে রাখলে একসময় কার্যকারিতা হারায়।
শরীর ও মন নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। গবেষণায় ভয়াবহ তথ্য এসেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে ঢাকা শহরের ৭১ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত। আর ৬৮ ভাগ মানুষ শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। এদেশের মানুষের শরীর ও মন দুটাই ভালো নেই।
দেশে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। পৃথিবীর দূষিত বাতাসের শহর তালিকায় রাজধানী ঢাকা প্রায়শ প্রথম হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় অবস্থা বিপদসীমার উপরে। বোধকরি অন্যান্য শহরের অবস্থাও খারাপ। ‘এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ৪৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে নদীর পানি বেশি দূষিত। এদেশে মাটির নিচ ও উপরের উভয় পানিই দূষণের শিকার এবং দূষণের মাত্রা দিনকে দিন বাড়ছেই। নদী দূষণ এবং নদীতে বাঁধের কারণে সাগর অভিমুখে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে।
দুর্ঘটনায় আহত নিহতের পরিমাণও বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে পরিবহন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বছরে ২৪ হাজার, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র তথ্য মতে ২০১৮ সালে মারা গিয়েছে ৭২২১ জন আর পুলিশের তথ্য মতে আড়াই হাজারের কম। সরকারি তথ্য আমলে নিলেও বছরে আড়াই হাজার মানুষ পরিবহন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাবে এটা মেনে নেয়া যায় না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বলছে, গেল বছর আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে ২ হাজার ১৩৮ জন যা এর আগের দশ বছরের যোগফলের চেয়েও বেশি।
দেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স বাড়ছে। অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের এলোমেলো ব্যবহারের ফলে এমনটি হচ্ছে। ওষুধ সেবনের আগেই নবজাতক শিশুরাও এর শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মৃত্যু ও দুর্ভোগ বাড়ছে। কিন্তু পরিস্থিতিকে ছাড়িয়ে গেছে কিছু বাজে অভ্যাস। তাই কঠিন পরিস্থিতিতে চাই সঠিক অভ্যাস।
সঠিক সময়ে পরিমিত ঘুমানো
সঠিক সময়ে না ঘুমানোর রোগে আক্রান্ত অনেকেই। রাতে ঘুমাতে দেরি করা এবং ফজরের পরে ঘুমানো শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যক্তির মানসিক অবস্থাও এলোমেলো হয়ে যায়। হবে না কেন বলুন?
‘তিনিই সে সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য রাতকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা বিশ্রাম নাও এবং দিনকে করেছেন আলোকময়। নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শনাবলি এমন কওমের জন্য যারা শুনে।’ (সূরা ইউনূস : ৬৭)
এছাড়া সূরা রূম ২৩; সূরা ফুরকান ৪৭; সূরা নামলের ৮৬ নম্বর আয়াতে একই ধরনের কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম দরকার এবং ঘুমের স্বাস্থ্যকর সময় রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা। আল্লাহর রাসূলের অভ্যাসও ছিল তাই। বরং তিনি আরো আগে ঘুমাতেন এবং ভোর রাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন। রাত ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত গভীর ঘুমে থাকলে শরীরে উপকারী মেলাটনিন নিঃসৃত হয়। আর ভোর থেকে ক্ষরিত হতে থাকে উত্তেজক স্টেরয়েড। তাই রাত জেগে দিনে ঘুমালে মেজাজ খিটখিটে থাকে। কাজে মন বসে না।
ঘুমের মধ্যে রোগ মুক্তি হয়। টানা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম উপকারী। এজন্য দেখা যায় ডাক্তাররা যন্ত্রণাগ্রস্ত রোগীদের ঘুমের ওষুধ দেন। সন্ধ্যার পরপরই রাতের খাওয়া শেষ করা, দ্রুত ঘুমানো এবং ভোরে ওঠা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। নানা কারণে দু’একদিন রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নাও হতে পারে। এমন হলে দিনে ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। দিনে ঘুমানোর সময় খেয়াল করতে হবে ঘর যেনো রাতের মতো অন্ধকার এবং শব্দহীন হয়।
রাত জাগলে মুখে ব্রণ হয়, মাথার চুল পড়ে যায়। এসময় আমরা এটাসেটা মুখে মাখি। রাত জাগা অভ্যাস জারি রেখে ওষুধ মেখে সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণ করে লাভ কী? তবে ব্রণ ও চুল পড়ার জন্য পুষ্টিহীনতা ও হরমোনের সমস্যাও দায়ী থাকতে পারে।
শরীর চর্চা করা
তথ্য-প্রযুক্তি ও যানবহনের উৎকর্ষতার যুগে কায়িক পরিশ্রম কমে গেছে। আবার খাওয়া হয় বেশি। অতিরিক্ত খাবার চর্বি হয়ে জমে শরীরে নানা অসুবিধার সৃষ্টি করে। দৈনন্দিন কাজ হেঁটে করার অভ্যাস করতে পারি। রিক্সায় চড়ার দূরত্ব হেঁটে যেতে পারি। একটু এগিয়ে বাসে ওঠা এবং আগেই বাস থেকে নেমে হাঁটার অভ্যাস করা যেতে পারে। সময় করে হাঁটা, খেলাধুলা এবং ব্যায়ামের অভ্যাস করা দরকার। চেষ্টা করতে হবে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা গায়ে রোদ লাগাতে। ত্বকে রোদ লাগলে চামড়ার সেন্সরগুলো সক্রিয় হয় এবং ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। সকালের মিষ্টি রোদে হাঁটা ও খেলাধুলা উত্তম। সন্ধ্যার পরে হাঁটা ও ব্যায়াম করলে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত হতে পারে।
অতিরিক্ত না খাওয়া
‘তোমরা খাও এবং পান করো; কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আ'রাফ : ৩১)
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (বুখারি)
ইসলাম পরিমিত খাওয়ার কথা বলেছে। অথচ মুখে মুখে গল্প চলে কোথায় কেমন ভূরিভোজ করেছিলাম ইত্যাদি। আয়েশি গল্পে যা উঠে আসে সেটাই লাইফস্টাইল। বেশি খাওয়া এবং খাওয়ানো উভয়ই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আবার পর্যাপ্ত খাওয়া ও খাওয়ানো থেকে বিরত থাকাও ঠিক নয়। দু’এক দিন বেশি খাওয়া উপেক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু শরীরে চর্বি জমার মতো নিয়মিত ভূরিভোজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ব্যয়বহুল রোগগুলো প্রায় সবই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে হয়। যেমন স্ট্রোক, হার্টঅ্যাটাক, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, ক্যান্সার, প্যারালাইসিস ইত্যাদি। বিশ্বে ৪০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হার্টঅ্যাটাক। ২০১৭ সালে ২৬ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ক্যান্সারে।
অতিরিক্ত যেকোনো খাবার ক্ষতির কারণ। বেশি খাওয়া হয় শর্করা (ভাত, রুটি) এবং মিষ্টি। অথচ দোষ হয় তেল-চর্বির। আদতে তেল-চর্বি কম খাওয়া হয়। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে তরকারি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানের একটি পর্বে দেখানো হয়েছে দীর্ঘদিন বা কখনো ভাত না খাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার। তাদের সুস্থ এবং শক্তিশালী অবস্থাতেই পাওয়া গেছে। ভাত অবশ্যই খাওয়া যাবে তবে পরিমিত। মালেয়শিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৯৪ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনার সুস্থ থাকার রহস্য কী? উত্তরে বলেছিলেন, ‘ছোটবেলায় মা বলেছিলেন যেটা খেতে স্বাদ লাগবে সেটা কম খাবে। এটা মেনে আমি সুস্থ আছি।’
প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা
আখের রস বেশিক্ষণ ভালো থাকে না। নষ্ট হয়ে গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু সেই রস দিয়ে বানানো চিনি দীর্ঘদিন ভালো থাকে। ঘানি ভাঙানো সরিষার তেল দ্রুতই নষ্ট হয় কিন্তু সোয়াবিন তেল ভালো থাকে। পাকা আম কতক্ষণ ভালো থাকে বলুন? কিন্তু বোতলে আমের জুস দীর্ঘদিন ভালো থাকে। এমনকি ফ্রিজেও রাখা লাগে না।
মূলত খাবার প্রক্রিয়াজাত করার সময় রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরে মেদ জমায়, পেটে গ্যাসের সমস্যাসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করে। জীবনে চলার পথে এগুলো খেতে আমরা বাধ্য। কিন্তু চেষ্টা করা উচিত প্রাকৃতিক খাবার খেতে। প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খেতে। ভেজালের দুনিয়ায় ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। দোকানে হরেক রকম মিষ্টিজাতীয় খাবার প্যাকেটে বিক্রি হয়। যেমন চিপস, চকোলেট, চুইংগাম, বিস্কুট ইত্যাদি। এছাড়া ফাস্টফুডের দোকান এখন যত্রতত্র। আমরা খাচ্ছিও বেশি। এসব জটিল খাবার শরীর সহজে হজম করতে পারে না। ফলে শিশু থেকে বড় সবারই নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। খেতে হবে প্রাকৃতিক খাবার যা ফ্যাক্টরিতে প্রক্রিয়াজাত নয়। যেমন তাজা ফল, সবজি, মাছ-গোশত, ঘরে রান্না খাবার ইত্যাদি। সোয়াবিন তেলের বদলে ঘানি ভাঙা খাঁটি সরিষার তেল, ঘরে বানানো ঘি, মাখন খাওয়া ভালো। চিনির বদলে খাওয়া যেতে পারে মধু, গুড় ইত্যাদি।
ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী চেঞ্জ টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেছেন, ‘মদে অ্যালকোহল থাকে শতকরা তিন ভাগ। আর কোল্ডড্রিংসে আছে শতকরা আট ভাগ। অথচ আমাদের সমাজে মদ নিষিদ্ধ আর কোল্ডড্রিংস দেদার বিক্রি হচ্ছে।’ কোল্ডড্রিংসে কোনো পুষ্টি উপাদান নেই। পুরাটাই প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি পানীয়। শিশু থেকে বুড়ো সবার জন্য ক্ষতিকর এটা। মদের মতো কোল্ডড্রিংসও কখনো খাবো না ইনশাআল্লাহ। সাধারণ একটা রোগ হচ্ছে পেটের গ্যাস। এটার জন্য অস্বস্তিবোধ হয়, বুক জ্বলাপোড়া করে, বিরক্তিকর ঢেঁকুর ওঠে। গ্যাসের সমস্যার জন্য ওষুধ খাওয়া মামুলি অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ নিয়মিত গ্যাসের বড়ি খাওয়া হজম প্রক্রিয়ার জন্য বিপজ্জনক। গ্যাসের সমস্যা হয় বাজে তেল, ভেজাল মসলা ও প্রসেসড ফুডের কারণে। যতটুকু ভেজাল খাবার শরীর সহ্য করতে পারে আমরা খাই তার থেকে বেশি। প্রক্রিয়াজাত এড়িয়ে প্রাকৃতিক খাবার খেতে হবে। নিরুপায় হয়ে খেলেও অল্প খেতে হবে।
রোজা রাখা
রমজানে একমাস রোজা রাখা ফরজ। প্রতি মাসে অন্তত তিনদিন রোজা রাখা সুন্নত। এছাড়া নফল রোজা তো আছেই। শরীর ও মনে রোজা রাখার প্রভাব অত্যন্ত ইতিবাচক। রোজা অবস্থায় শরীরের নতুন কোষ পুরানো কোষকে খেয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়ার নাম অটোফেজি। এতে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যায়। ক্ষতিকর কোষ হজম হয়ে যায়। লিভারে চর্বি জমলে ফ্যাটি লিভার বলে। এতে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এছাড়া হার্ট, ফুসফুস এবং মস্তিষ্কে চর্বি জমে। মাথার মগজ ও নার্ভাস সিস্টেমে অতিরিক্ত চর্বি জমলে মানুষের ব্রেন ঠিকমতো কাজ করে না। এতে কর্মক্ষমতা কমে যায়। রোজা অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু রোজা রেখেও আমরা উপকার পাই না অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে। কিডনি ও মূত্রনালীতে পাথর জমার অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ। তাই ‘পরিমিত’ খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক পরা
আগেই উল্লেখ করেছি দেশে বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে। এমতাবস্থায় ঘরের বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা এবং মেয়েদের নেকাব দিয়ে চলা জরুরি। নিজে অভ্যাস করার পাশাপাশি অন্যদের মাঝেও এটা ছড়িয়ে দেয়া দরকার। শরীর, কাপড় ও থাকার স্থান পরিচ্ছন্ন রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল না চালানো
দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, মোটরসাইকেল না থাকলেও নিজের একটা হেলমেট থাকা ভালো। চালক ও আরোহী উভয়ের হেলমেট থাকা বাধ্যতামূলক। হেলমেট পরার সচেতনতা এখনো কম। এছাড়া মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী দুজনেরই জুতা পরাও গুরুত্বপূর্ণ।
কতগুলো ভালোগুণ
শিক্ষার্থী অবস্থাতেই কিছু অভ্যাস করা ভালো। যেমন রান্না করা, কাপড় কাচা, বাজার করা, ঘর গুছিয়ে রাখা, মশারি টাঙানো, ঘর ঝাড়ু দেয়া ও মোছা, বাসার পানি-বিদ্যুৎ-স্যানিটারি সংশ্লিষ্ট মেরামতের কাজ নিজে করা ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এসব কাজে সময় দেয়া ব্যক্তিরা নেতৃত্ব গুণের অধিকারী হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে দাওয়াতি কাজ
দেশের তরুণ সমাজ বিষণ্নতায় ভুগছে। পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টের পর প্রচুর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আত্মহত্যার মিছিলে যোগ দিয়েছে। পারিবারিক কলহে বিয়ে বিচ্ছেদ এবং আত্মহত্যার হার বেড়েছে। নারী-পুরুষ উভয়ই পাল্লা দিয়ে এর সাথে যুক্ত। অথচ বিষণ্নতা কাটাতে ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে খুবই সাধারণ কৌশল হচ্ছে দাওয়াতি কাজ, ইসলামের আহ্বান মানুষের কাছে পৌঁছানো। পরহেজগার হয়েও অনেকে দাওয়াতি কাজে নিষ্ক্রিয়। মক্কায় কাবা ঘরের চত্বরেও আত্মহত্যা করার রেকর্ড আছে (৮ জুলাই ২০১৮)। তাই ধার্মিকতার পাশাপাশি দাওয়াতি কাজে ব্যস্ততার বিকল্প নেই।
‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান’। (সূরা হামীম আস সাজদা : ৩৩)
কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন, অন্যান্য জ্ঞান অর্জন, ইবাদত, সততা ইত্যাদি দিনে দিনে নিস্তেজ হয়ে যায় যদি দাওয়াতি কাজ না করা হয়। এই কথা যৌক্তিক কিনা সেটা নিজের জীবনের সাথে মেলাতে হবে। ইসলামী শিক্ষা ও চরিত্র মানুষের মাঝে ছড়ানোর চেষ্টা করা এবং না করা অবস্থায় কেমন থাকি এই পর্যালোচনা করলে উপরোক্ত কথার যৌক্তিকতা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। এজন্য দাওয়াতি কাজ অভ্যাসে পরিণত করতে হবে এবং অবশ্যই স্মরণ করতে হবে, ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেনো বলো যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না।’ (সূরা সফ : ২-৩)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ্য থেকে দ্বীনের কাজ বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। আমিন
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন