খিলাফাহ পতনের মহা বিপর্যয়ের পরও মুসলিম ফকিহ, দাঈ ও আলিমরা হতোদ্যম হননি। তারা ভাবতে লাগলেন, পরিকল্পনা করতে লাগলেন কীভাবে নতুনরূপে, নতুন আবহে পুনরায় খিলাফাহব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়। নতুন এই খিলাফাহব্যবস্থা বিবেচনায় রাখবে- যুগ-জমানার অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতিকে। উপযোগী হবে সেই নতুন প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতির, যা ঘিরে ধরেছে মুসলিম উম্মাহর বাস্তবতাকে। মুসলমান আলিম ও ফকিহরা ইসলামী খিলাফাহ ব্যবস্থার ইনসাফ ও আদালতের চিত্র তুলে ধরতে লাগলেন। তারা খণ্ডন করতে লাগলেন খিলাফাহর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অপবাদ ও মিথ্যা রটনার। তারা ইজতিহাদ করতে লাগলেন এবং এভাবে করেই তারা উম্মাহর সামনে হাজির করলেন- বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উপযোগী খিলাফাহব্যবস্থার এমন এক ধারণা, যা বাস্তবায়ন করবে এই ব্যবস্থার মৌলিক উদ্দেশ্যগুলো (Objectives)।
বিশিষ্ট ফকিহ ও আধুনিক আইনের অন্যতম ইমাম ড. আব্দুর রাজ্জাক সানহুরি পাশা (১৩১৩-১৩৯১ হিজরি/ ১৮৯৫-১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ) সেই সকল আলিমদেরই একজন, যারা খিলাফাহব্যবস্থার ইতিহাস এবং এর আইনি ও সাংবিধানিক ফিকাহ নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি ছিলেন প্যারিসে। সবে আইনের ওপর পিএইচডি শেষ করেছেন। পিএইচডির বিষয় ছিল- ‘ব্রিটিশ আইনে কর্মের স্বাধীনতার ব্যাপারে বর্ণিত পারস্পরিক চুক্তির বিধিনিষেধ’। যখন খিলাফাহ পতন হলো, তিনি কঠিনভাবে কষ্ট পেলেন। তাই স্বপ্রণোদিত হয়েই ১৯২৬ সালে তিনি জমা দিলেন তার দ্বিতীয় পিএইচডি গবেষণাপত্র। এই গবেষণাপত্রে ইসলামী খিলাফাহর ফিকাহ ও ইতিহাস আলোচনা করার পাশাপাশি তিনি তুলে ধরেন খিলাফাহ ইতিহাসের ব্যাপারে পর্যালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং খণ্ডন করেন খিলাফাহ বিরোধীদের মতামত। সর্বোপরি খিলাফাহব্যবস্থার সংস্কার সাধনের মাধ্যমে সমকালীন যুগের উপযোগী একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে এটাকে গড়ে তুলতে তিনি হাজির করেন নতুন ফিকহি ইজতিহাদ।
খিলাফাহর পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাড়নায় সংস্কারমূলক এই ইজতিহাদি গবেষণায় তিনি সমালোচনা করেন তাকলিদি বা অন্ধ অনুসরণপ্রবণ আলিম সমাজ এবং পশ্চিমা আন্দোলনের।
১. তাকলিদি বা অন্ধ অনুসরণপ্রবণ আলিমসমাজ : এই তাকলিদি আলিমরা খিলাফাহর পুরোনো অনুকরণপ্রবণ কাঠামো নিয়েই পড়ে আছে। তারা সমকালীন জাতীয়তাবাদী প্রবণতার উত্থানকে একেবারে না জানার ভান ধরে বসে আছে। তিনি সমালোচনা করেছেন তাদের, ‘‘যারা ইসলামী বিশ্বের সেই রকম পুনর্জাগরণের চিন্তা রাখে, যেমনটি ঘটেছিল উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) (হিজরতপূর্ব ৪০ সন- ২৩ হিজরি/ ৫৮৪-৬৪৪ খ্রি.) কিংবা আব্বাসি খলিফা আল মনসুরের (৯৫-১৫৮ হি./ ৭১৪-৭৭৫ খ্রি.) জমানায়।’’
২. পশ্চিমা আন্দোলন : সানহুরি পশ্চিমা আন্দোলন ও মতবাদগুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন এবং সেগুলোর সমালোচনা করেছেন। কেননা সেইসব আন্দোলন ও মতবাদগুলো ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের পরিবর্তে আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায় ভূখণ্ডভিত্তিক বিভক্তি এবং জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িকতা। তিনি তাদেরও সমালোচনা করেছেন, “যারা নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষা না করেই মিশে যেতে চায় পশ্চিমা সমাজের সাথে। এমনকি তারা (পশ্চিম ও আমাদের মধ্যকার) পরিবেশ-পরিস্থিতি, মানসিকতা ও ইতিহাসের ভিন্নতার কারণে সৃষ্টি হওয়া ভিন্নতাকেও বিবেচনায় নেয় না।” সানহুরি তার গবেষণা প্রবন্ধে ‘রা’য়ুন শায’ বা ‘বিরল অভিমত’ শিরোনামের আওতায় খণ্ডন করেন আলি আব্দুর রাজ্জাকের ‘ইসলাম ওয়া উসুলুল হুকুম’ কিতাবের। এই কিতাবে আলি আব্দুর রাজ্জাক খিলাফাহর বিরুদ্ধে উত্থাপন করেন নানান অভিযোগ।
এরপর সানহুরি পাশা তার গবেষণায় খিলাফাহব্যবস্থার একটি ‘বাস্তব ও ভবিষ্যৎধর্মী’ রূপ হাজির করেন। খিলাফাহর এই বাস্তব ও ভবিষ্যতধর্মী রূপ বিবেচনায় নেবে মুসলিম জাহানে হাল আমলে বিরাজমান ভূখণ্ড ও জাতীয়তাবাদী ভিন্নতাগুলোকে, সমন্বয় সাধন করবে বর্তমান এই বাস্তবতা ও খিলাফাহর নব কাঠামোর মাঝে এবং সর্বোপরি খিলাফাহর মৌলিক মাকসাদগুলো অর্থাৎ উম্মাহর একতা, দারুল ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা ও মুসলিম সমাজের জন্য ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি নবোত্থিত বাস্তব বিষয়গুলোকেও উপেক্ষা করবে না।
ইসলামী খিলাফাহর এই বাস্তব ও ভবিষ্যৎধর্মী চিন্তার ব্যাপারে সানহুরি পাশা লিখছেন, বর্তমানে খিলাফাহ রাশিদা বা কামিলা (পূর্ণাঙ্গ) প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা করাটা কিছুটা অসম্ভবই বটে; কিন্তু অপূর্ণাঙ্গ ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে তো কোনো বাধা নেই। তবে শর্ত হচ্ছে এই অপূর্ণাঙ্গ ইসলামী হুকুমত হবে জরুরি অবস্থার কারণে, মুসলিম উম্মাহ বর্তমানে যে বাস্তবতা পার করছে তার কারণে।
এই অপূর্ণাঙ্গ ইসলামী শাসনকে বিবেচনা করতে হবে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে। আমাদের আদর্শ লক্ষ্য (Ideal Goal) হলো ভবিষ্যতে খিলাফাহ রাশিদা বা পূর্ণাঙ্গ খিলাফাহ ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
ভবিষ্যতে যেই খিলাফাহ রাশিদার নিজাম (ব্যবস্থা) পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, সেই ব্যবস্থাকে অবশ্যই স্থিতিস্থাপকতার গুণে গুণান্বিত হতে হবে। আমরা দেখেছি, ইসলামী শরিয়াহ শাসনব্যবস্থার নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত কোনো কাঠামো চাপিয়ে দেয় না; বরং যেই ব্যবস্থায়ই খিলাফাহর তিনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে, তাই শরিয়াহসম্মত বিশুদ্ধ শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হবে।
আমাদেরকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে বিভিন্ন মুসলিম ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়া জাতীয়তাবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাগুলোকে। এই প্রবণতাগুলো দিন দিন বাড়ছেই। তাই আমাদেরকে অবশ্যই এমন একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, যা মুসলিম জাতিগুলোর মাঝে একতার বন্ধন রক্ষা করার পাশাপাশি প্রত্যেক জাতিকেই এক প্রকার পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদান করবে।
একটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রের অনমনীয় অনুসরণের আওতায় ইসলামী ঐক্যের চূড়ান্ত রূপ এখন হয়ত আর সম্ভব নয়। তাই খিলাফাহকে প্রাচ্যের জাতিগুলোর একটি সংস্থা বা সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তাই মুসলিম জাতিগুলোর একতা রক্ষা এবং তাদের মাঝে সৃষ্টি হওয়া জাতীয়তাবাদী প্রবণতার মাঝে সমন্বয় সাধন করতে পারে।”
ইসলামী খিলাফাহর পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংস্কার চিন্তার এই ইজতিহাদকে আরও শক্তিশালী করতে ড. সানহুরি পাশা ‘আল মুহামা আশ শারয়িয়্যাহ’ ম্যাগাজিনে ১৯২৯ সালে ‘ইসলাম : দ্বীন ও রাষ্ট্র’ বিষয়ক তার গবেষণায় নতুন এই ইসলামী খিলাফাহব্যবস্থা, যা ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নির্বাহী কর্তৃপক্ষ (Executive Authority) হিসেবে কাজ করবে, এর সম্পর্কে লিখেন, ‘খিলাফাহ শাসনব্যবস্থা ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার নির্বাহী কর্তৃপক্ষ (Executive Authority) একটি বিশেষ ধরনের স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা, যা নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে অন্য সকল শাসনব্যবস্থা থেকে স্বকীয়তা অর্জন করেছে।
প্রথমত : খলিফা শুধু একজন সিভিল শাসক নয়; তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধানও। তবে ইসলামে খলিফার জন্য এমন কোনো রুহানি ক্ষমতার ধারণা করা হয় না, যেমনটা রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টানরা পোপদের ব্যাপারে মনে করত। আল্লাহ ছাড়া খলিফা কোনো কিছুরই ক্ষমতা রাখে না। তিনি কারো জন্য জান্নাতকে হারাম করতে পারে না। তার এমন কোনো শাফায়াতের ক্ষমতাও নেই, যার মাধ্যমে গুনাহগারদের ক্ষমা করা হবে। খলিফা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে একজন বান্দা। তিনি নিজের ভালো বা মন্দ করার ক্ষমতাও রাখে না। তিনি কেবলই একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে মুসলমানদের বিষয়গুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
খলিফা মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা- এই কথার মানে হলো, মুসলমানদের এমন অনেক সাধারণ ‘শিআর’ বা নিদর্শনমূলক ইবাদত আছে, যা তারা সম্মিলিতভাবে পালন করে, যেমন নামাজের জামাত ও হজ্জ ইত্যাদি। এসব শিআর ইমাম ছাড়া পূর্ণ হয় না। আর ইমামই হচ্ছেন খলিফা। এ কারণেই আমরা খলিফার ব্যাপারে ‘ইমাম’ শব্দটি প্রয়োগ করি, যখন তিনি ধর্মীয় কাজগুলোর দায়িত্ব পালন করেন আর ‘আমিরুল মুমিনিন’ উপাধি প্রয়োগ করি, যখন তিনি নাগরিক (Civil) বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করেন।
দ্বিতীয়ত : নির্বাহী কর্তৃপক্ষ হিসেবে খলিফার দায়িত্ব হচ্ছে সুমহান ইসলামী শরিয়াহর বাস্তবায়ন করা। এর মানে এই নয়, খলিফাকে প্রচলিত মাজহাবগুলোর মাঝে কোনো একটি নির্দিষ্ট মাজহাবের ওপরই চলতে হবে; বরং খলিফা মুজতাহিদ হলে তার করণীয় হচ্ছে স্থান ও কাল বিবেচনায় নেওয়া এবং কিসে উম্মাহর মাসলাহাত বা কল্যাণ নিহিত, সেই ব্যাপারে একমত হতে মুজতাহিদদের আদেশ করা, এমনকি তা যদি কিতাবের পাতায় লিপিবদ্ধ সকল মাজহাবের বিরোধীও হয়। কেননা এ কথা সবারই জানা, মুজতাহিদদের ইজমা শরিয়াহর উৎসগুলোর মাঝে একটি।
তৃতীয়ত : খলিফার ক্ষমতা তামাম ইসলামী জাহানে বিস্তৃত হতে হবে। কেননা ইসলামী ঐক্য ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান বুনিয়াদ। আর এই ঐক্য খলিফার একতার ওপরই নির্ভর করে।
তাই ইসলামী শাসনব্যবস্থায় একজনই খলিফা থাকবে। এটাই পূর্ণাঙ্গ খিলাফাহ। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় বাধ্য হয়েই মুসলমানরা আজ নানান জাতিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাদের মধ্যকার একতার বন্ধন টুটে গেছে। প্রত্যেক জাতিরই আছে আলাদা আলাদা শাসনব্যবস্থা। তাই এই জরুরি অবস্থায় একাধিক খলিফা বৈধ হতে পারে, কিন্তু এই খিলাফাহ পূর্ণাঙ্গ নয়; বরং অপূর্ণাঙ্গ (খিলাফাহ নাকিসা)।
খিলাফাহ কামিলা বা পূর্ণাঙ্গ খিলাফাহ তখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, যখন সব মুসলমান একতাবদ্ধ হবে। এর মানে এই নয়, তাদের একটি কেন্দ্রীয় হুকুমত থাকবে। এটি (এখন) অসম্ভবও বটে। বরং আমার মতে, এতটুকুই যথেষ্ট হবে বিভিন্ন ইসলামী হুকুমত একে অপরের কাছাকাছি আসবে, পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকবে আর এভাবেই এমন একটি সংস্থা (অনেকটা ইসলামী জাতিগুলোর একটি সংস্থার মতো) সৃষ্টি হবে, সকল হুকুমের ওপর যার কর্তৃত্ব থাকবে। এই সংস্থাই হবে খিলাফাহ সংস্থা। বিশেষত এই সংস্থা আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে, যখন এর সাথে যুক্ত হবে এমন একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন বোর্ড, যারা মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাপারগুলোর প্রতি দৃষ্টি প্রদান করবে।”
খিলাফাহব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও এর সংস্কার সাধনে খিলাফাহর ফিকাহে (সানহুরির) এই বুদ্ধিবৃত্তিক প্রকল্প আধুনিক ফিকহি ও সাংবিধানিক ইজতিহাদগুলোর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তার এই ইজতিহাদ কেবল খিলাফাহর পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেই সীমিত থাকেনি। বরং এর জন্য একটি ইসলামসম্মত বাস্তবধর্মী রূপরেখা ও সুবিন্যস্ত সাংবিধানিক গঠনকাঠামো প্রস্তাব করেন ফকিহুশ শরিয়াহ ও ইমামুল কানুন ড. আব্দুর রাজ্জাক সানহুরি পাশা, যার হাতে বিংশ শতাব্দীতে প্রণীত হয়েছে মিসর, ইরাক, সিরিয়া, সুদান, লিবিয়া, কুয়েত ও আরব আমিরাতের মতো আরব ও মুসলিম দেশগুলোর আইনি ও সাংবিধানিক উপাদান। তিনিই সেই সানহুরি পাশা, যিনি দেওয়ানি আইন রচনা ও ব্যাখ্যার জন্য সারা বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছেন। এমনকি ইসলামী শরিয়াহর বোঝাপড়ায় গভীর দক্ষতার জন্য তার ফরাসি শিক্ষকরা তাকে ‘পঞ্চম ইমাম’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
সানহুরি পাশার ‘ইসলাম : দ্বীন ও রাষ্ট্র’ বিষয়ক গবেষণা, যেখানে তিনি খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের আহ্বান জানান, প্রকাশিত হওয়ার দশ বছর পরে আমরা দৃশ্যপটে দেখি ইমাম হাসান আল বান্নাকে (১৩২৪-১৩৬৮ হিজরি/ ১৯০৬-১৯৪৯ খ্রি.)। ইমাম হাসান আল বান্না ছিলেন বিংশ শতাব্দীর ইসলামী গণপুনর্জাগরণ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান রাহবার। খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনিও অনুকরণ করেন সানহুরি পাশার পদাঙ্ক। ভূখণ্ডবাদী প্রবণতা, আরব জাতীয়তাবাদী প্রবণতা ও ইসলামী প্রবণতার মাঝে সমন্বয় সাধন করে খিলাফাহ সম্পর্কে ইমাম বান্না লিখছেন, ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্যরা তাদের দেশকে ভালোবাসে। তারা তাদের জাতিগত একতার ব্যাপারেও আগ্রহ পোষণ করে। একজন মানুষ তার ভূখণ্ডের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করবে, তার জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে এবং নিজের দেশের জন্য সম্মান, মর্যাদা ও গৌরব হাসিল করা কামনা করবে; এটাই স্বাভাবিক। ইখওয়ান এটাকে দোষের কোনো কিছু মনে করে না।
তারপর কথা হলো, ‘হানিফ ইসলাম’ বা বিশুদ্ধ ইসলাম বেড়ে উঠেছে আরব হয়ে। অন্যান্য জাতির কাছে ইসলাম পৌঁছেছেও আরবদের মাধ্যমেই। ইসলামের সুমহান কিতাব আল কুরআনুল কারিমও নাজিল হয়েছে বিশুদ্ধ আরবি ভাষায়। আর এই কুরআনের কারণেই মুসলমানদের সকল জাতি আরবি ভাষার ব্যাপারে একতায় পৌঁছাতে পেরেছে। প্রবাদ আছে, ‘আরবরা লাঞ্ছিত হলে ইসলাম লাঞ্ছিত হয়’। এই কথা বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে তখন, যখন আরবরা রাজনৈতিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। অতএব আরবরাই হলো ইসলামের জ্ঞাতিগোষ্ঠী ও প্রহরী।
রাসূলুল্লাহ (সা) এর কথা অনুযায়ী, যেমনটি ইবনু কাসির মুয়াজ ইবনু জাবালের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, আরবত্ব হচ্ছে ভাষার মাঝে। নবীজি (সা) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আরবত্ব হচ্ছে ভাষা, নিশ্চয়ই আরবত্ব হচ্ছে ভাষা।”
এ কারণেই ইসলামের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে, পুনরায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং তার হারানো শক্তিমত্তা ও ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে আরবদের ঐক্য একটি অতি জরুরি বিষয়। তাই প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিত আরব ঐক্যকে ফিরিয়ে আনতে, শক্তিশালী করতে এবং সাহায্য করতে কাজ করে যাওয়া।
ইসলামী ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান নিয়ে কথা বলা বাকি আছে। এই কথা তো চিরসত্য যে, ইসলাম যেমনিভাবে আকিদা ও ইবাদত; ঠিক তেমনিভাবে এটা দেশ ও জাতীয়তাও। এছাড়াও, ইসলাম মানুষের মাঝে বিদ্যমান বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতার সকল বংশীয় উপাদানকে রহিত করেছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “নিশ্চয়ই মুমিনরা ভাই-ভাই।” (সূরা হুজুরাত : ১০)
নবীজি (সা) বলেছেন, “এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সকল মুসলিমের রক্ত সমান। একজন সাধারণ মুসলিমও যে কোনো ব্যক্তিকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলে তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা সকলের কর্তব্যে পরিণত হয়। প্রত্যেক মুসলিম তার প্রতিপক্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে অন্য মুসলিমকে সাহায্য করবে।”
ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্যরা তাদের নিজস্ব জাতীয়তাকে সম্মান করে; কেননা তারা মনে করে, কাক্সিক্ষত পুনর্জাগরণের প্রথম ধাপ এটাই। একজন মানুষ তার দেশের জন্য কাজ করবে, কাজ করতে গিয়ে নিজের দেশকে অন্য দেশের ওপর প্রাধান্য দেবে, এই প্রবণতার মাঝে ইখওয়ান কোনো সমস্যা দেখে না।
তারপর পুনর্জাগরণের দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে ইখওয়ান কর্মীরা আরব ঐক্যকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যায়। তারপর তারা সকল মুসলিম ভূখণ্ডের পূর্ণাঙ্গ একতার সোপান হিসেবে ‘আল জামিয়া আল ইসলামিয়্যাহ’ বা প্যান ইসলামইজমের জন্য কাজ করে। উপর্যুক্ত আলোচনার পর আমি বলতে চাই, ইখওয়ান সারা দুনিয়ার জন্য কল্যাণ চায়। তারা আহ্বান জানায় বৈশ্বিক একতার। কেননা এই বৈশ্বিক একতাই ইসলামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এই কথার তাৎপর্য,“আর আমরা আপনাকে বিশ্বজাহানের জন্য কেবল রহমতরূপেই পাঠিয়েছি।” সূরা আম্বিয়া : ১০৮
উপর্যুক্ত আলোচনার পর, আমার মনে হয় আলাদা করে আর এই কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই যে, যেই একতাগুলোর কথা বলা হলো (অর্থাৎ জাতীয় ঐক্য, আরব ঐক্য ও ইসলামী ঐক্য), এগুলোর মাঝে কোনো বিরোধ নেই; বরং একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে এবং উদ্দিষ্ট লক্ষ্য হাসিলে সহযোগিতা করে। কিন্তু কোনো জাতি বা গোষ্ঠী নিজেদের জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানায় এবং এটাকে অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে বাকি সব ঐক্যের চেতনাকে মেরে ফেলে, তাহলে ইখওয়ানুল মুসলিমিন তাদের সাথে নেই। আদতে, এটাই হয় আমাদের এবং অন্যান্য যারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলে, তাদের মাঝে মৌলিক ফারাক।”
সানহুরি পাশা বুঝতে পেরেছিলেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে খিলাফাহর পুনঃপ্রতিষ্ঠার আগে অবশ্যই মুসলমানদের অর্থনৈতিক, ভাষিক ও আইনি পুনর্জাগরণ বা রেনেসাঁস প্রয়োজন। এই পুনর্জাগরণ মুসলিম উম্মাহকে একতাবদ্ধ করবে, বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে এক সুতোয় গেঁথে নিবে এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা Political System) ও মুসলিম জাতিগুলোর সংগঠন হিসেবে খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ মসৃণ করবে। সানহুরি পাশা বলছেন, প্রাচ্যের জাতিগুলোকে রাজনৈতিক বন্ধনে বাঁধার আগে তাদেরকে অর্থনৈতিক, ভাষিক ও আইনি বন্ধনে বাঁধার চিন্তা করতে হবে। এগুলোর ফলাফল বা পরিণতি হিসেবেই রাজনৈতিক বন্ধন আসবে। আর এই প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়ন করতে নিম্নোক্ত রেনেসাঁস বা পুনর্জাগরণবাদী কাজগুলো দিয়ে শুরু করা যেতে পারে-
১. শরিয়াহর পুনর্জাগরণ : এমন একটি পুনর্জাগরণ, যা ইসলামী শরিয়াহকে গ্রহণ করবে এবং একে যুগের উপযোগী হিসেবে তুলে ধরবে। আর এই পুনর্জাগরণ ছড়িয়ে যেতে হবে প্রাচ্যের সকল দেশে।
২. ভাষিক পুনর্জাগরণ : এই পুনর্জাগরণ হবে আরবি ভাষার পুনর্জাগরণ। এই ভাষায় নতুন যা কিছু পরিবর্তন প্রবেশ করানো দরকার, তা প্রবেশ করাতে হবে এবং সাধ্যানুযায়ী বিভিন্ন উপভাষার মাঝে একতা বিধান করতে হবে।
৩. অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ : এই পুনর্জাগরণ স্বাধীন দেশগুলোকে ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক ও শুল্কচুক্তি বা এই জাতীয় বন্ধনের মাধ্যমে একত্রিত করবে।
৪. জ্ঞানের পুনর্জাগরণ : প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞানের পুনর্জাগরণ এবং বিশেষত ইসলামী জ্ঞানের পুনর্জাগরণ।”
একইভাবে ইমাম হাসান আল বান্নাও বুঝতে পেরেছিলেন, খিলাফাহ ফিরিয়ে আনার আগেও আরও কিছু প্রারম্ভিক কাজ আছে। খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তার জন্য যেসব প্রারম্ভিক কাজ প্রয়োজন, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইমাম হাসান আল বান্না লিখছেন,“ইখওয়ানুল মুসলিমিন বিশ্বাস করে, খিলাফাহ ইসলামী ঐক্যের নিশানা এবং মুসলিম জাতিগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। খিলাফাহ এমন একটি ইসলামী ‘শিআর’ বা নিদর্শন, যার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা এবং এটাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই জরুরি। আল্লাহর দ্বীনের অনেক বিধানই নির্ভর করে খলিফার ওপর। এ কারণেই সাহাবীরা খিলাফাহর ব্যাপারটিকে নবীজি (সা) এর দাফন-কাফনের ওপরে গুরুত্ব দিয়েছেন। খিলাফাহর ব্যাপারটি মীমাংসা করেই কেবল তারা নবীজির দাফন-কাফনে মনোনিবেশ করেছেন।
ইমাম নিয়োগ ও ইমামতের বিধান বর্ণনা করে যে সকল হাদিস বর্ণিত হয়েছে এবং এই বিষয়টির সাথে জড়িত যেসব বিস্তারিত বিবরণ আমাদের কাছে এসেছে, এগুলো কোনোরূপ সন্দেহ-সংশয় না রেখেই ঘোষণা করছে, খিলাফাহ নিয়ে গুরুত্বের সাথে চিন্তাভাবনা করা মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। কেননা খিলাফাহ তার মূল মানহাজ থেকে সরে গিয়েছে আর অবশেষে তা বাতিলই ঘোষণা করা হয়েছে।
এ কারণেই ইখওয়ানুল মুসলিমিন খিলাফাহ চিন্তাকে এবং তা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করাকে তাদের কর্মসূচির সর্বাগ্রে রেখেছে। এর পাশাপাশি তারা বিশ্বাস করে, খিলাফাহ ফিরিয়ে আনতে কিছু প্রারম্ভিক কাজ করা লাগবে। যা ছাড়া খিলাফাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তাই খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার সরাসরি স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে, সর্বাগ্রে এই প্রারম্ভিক কাজগুলো সম্পন্ন করা।
(এই প্রারম্ভিক কাজের মাঝে রয়েছে) অতি অবশ্যই মুসলিম জাতিগুলোর মাঝে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা থাকতে হবে। তারপর এই দেশগুলোর মাঝে অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন চুক্তি, সন্ধি। অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন সেমিনার, সম্মেলন। আর যখন মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থিতিশীলতা লাভ করবে এবং তারা সবাই একজন ইমামের ব্যাপারে একমত হয়ে যাবে, যিনি পারস্পরিক চুক্তির ওসিলা, একতার ভিত্তি, সকল প্রাণের আকাক্সক্ষা এবং জমিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ছায়া; তারপরই কেবল মুসলিম জাতিগুলোর সংগঠন খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।”
এভাবেই আমাদের সমকালীন ও আধুনিক চিন্তায় খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের ব্যাপারে বাস্তব ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ভবিষ্যৎধর্মী নতুন এক ফিকাহ ও ইজতিহাদ বিকশিত হয়। এই নতুন ফিকাহ খিলাফাহর ব্যাপারে স্থবির তাকলিদি প্রবণতা, হতাশাবাদী প্রবণতা ও কল্পনাপ্রবণ রোমান্টিক প্রবণতাকে পরিত্যাগ করে গ্রহণ করেছে, এমন এক ফিকহি ও সাংবিধানিক প্রবণতা, যা খিলাফাহব্যবস্থার মাকাসিদ (Objectives) রক্ষা করার পাশাপাশি খিলাফাহকে আমাদের বাস্তব ও যাপিত জীবনে সচল করে তুলবে।
অতএব আমরা যদি নতুন এই খিলাফাহর নতুন ফিকাহকে আমাদের সামনে হাজির রাখি এবং হতাশা, নিরাশা ও মানসিক পরাজয়ের যেই বৃত্তকে পশ্চিম ও ‘পশ্চিমা’ হয়ে উঠতে চাওয়া আমাদের লোকেরা আরও বড় করে তুলছে, তা অতিক্রম করতে পারি, তাহলে আমরা বলব, “আমরা যদি আমাদের আঞ্চলিক সংস্থাগুলো; বিশেষত ওআইসিকে সক্রিয় করতে পারি, এটাকে একটি জীবন্ত ও গতিশীল ব্যবস্থা ও মুসলিম জাতিগুলোর সংগঠনে পরিণত করতে পারি এবং যেসব প্রারম্ভিক পুনর্জাগরণ বা রেনেসাঁসের কাজের কথা সানহুরি পাশা ও ইমাম হাসান আল বান্না আলোচনা করে গেছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি; তাহলে এই সংস্থাটিই খিলাফাহর বর্তমান ও ভবিষ্যতের একটি ‘রূপরেখা’ হয়ে হাজির হতে পারে, যা ইসলামী জীবনব্যবস্থার সেই মৌলিক উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়ন করবে যার জন্য ১৪০০ বছর আগে ইসলাম ও মুসলমানরা এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল।”
অনেকেই আজ ‘বিশ্বায়ন’ নিয়ে কথা বলছেন। বিশ্বায়ন গোটা দুনিয়াকে আজ ছোট্ট একটি গ্রামে পরিণত করেছে। ফলে মানুষ আজ হাকিকত ও বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছে। তারা আর কল্পনা, ধারণা বা আন্দাজ-অনুমানের সাথে নেই। তাহলে আমরা যখন ‘ইসলামী জাহানের বিশ্বায়ন’ নিয়ে চিন্তা ও পরিকল্পনা করছি, তখন কেন আমরা কল্পনা, আন্দাজ-অনুমান বা ধারণার শরণাপন্ন হব? ইসলামী খিলাফাহকে ইসলামী জাহানের বিশ্বায়ন ছাড়া অন্য আর কি-ইবা বলা যেতে পারে? খিলাফাহ এমন এক বিশ্বায়ন, যার মাধ্যমে মুসলিম জাহান পশ্চিমা বিশ্বায়নের আঘাত ও আগ্রাসনকে মোকাবিলার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে।
একইভাবে বিশ্বায়নের ফলে সমকালীন রাষ্ট্রগুলোর নিজ ভূখণ্ড ও অভ্যন্তরীণ বিষয়াদির ওপর নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা কমে যাওয়াকে অনেকেই সহজভাবে দেখছেন। তাই আমরা যখন ‘আরব ইসলামী পারস্পরিক সহযোগিতা’র দিকে ডাকছি এবং আমরা যখন দেখতে পাচ্ছি, আমাদের আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর নিজ ভূখণ্ডের ওপরই ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ সংকুচিত হয়ে এসেছে, তখন কি আমরা কোনো অযৌক্তিক কথা বলছি? অযৌক্তিক কোনো বিষয়ের দিকে ডাকছি?
না, তা নয়; বরং আমরা মনে করি, আরব ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকুচিত নিয়ন্ত্রণ মুসলিম উম্মাহ ও দারুল ইসলামের জন্য আরও অনেক বেশি ক্ষমতা, দাপট, কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হয়ে ফিরে আসবে। আমাদের ঘিরে ধরা যেই সকল ঝুঁকি ও কঠিন চ্যালেঞ্জ মুসলিম উম্মাহর অবশিষ্ট নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতাকেও হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে, তার মোকাবিলায় সকল ইসলামী রাষ্ট্রই তখন উম্মাহর নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সাহায্য করবে।
অতএব এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে খিলাফাহ নিয়ে চিন্তা, পরিকল্পনা, চেষ্টা-পরিশ্রম ও নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়াই হলো সেই আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র শক্তি, যা আজ আমাদের ভূখণ্ড, জাতি ও মৌলিক স্বকীয়তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আর খিলাফাহ নিয়ে এই ভাবনা, চিন্তা ও কর্মের বেলায় শাসক ও জনগণ সবাইকেই সমান ভূমিকা পালন করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা সত্যই বলেছেন, “আর আল্লাহর রহমত থেকে তোমরা নিরাশ হইও না। কেননা আল্লাহর রহমত থেকে কেউই নিরাশ হয় না; কাফির সম্প্রদায় ছাড়া।” (সূরা ইউসুফ : ৮৭)
সবশেষে, আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ‘হতাশ কাফির’ হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আমিন।
অনুবাদক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মন্তব্য লিখুন