মুহাম্মদ মাইনুল ইসলাম
যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারো না। (আল কুরআন) এ দেশের ছাত্রসমাজের প্রিয় কাফেলার নাম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৩৫ বছরে প্রতিটি ক্যাম্পাস এবং অন্ধকার জনপদকে আলোকিত করে তুলেছে। বিনিময়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জেল-জুলুম এবং হামলা-মামলা সহ্য করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। অসংখ্য ভাই আহত হয়েছেন এবং অনেক ভাই পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবন যাপন করছেন। শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করতে গিয়ে ১৪১ জন ভাই শহীদ হয়েছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪১তম শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম ভাইকে নির্মমভাবে পুলিশের গুলিতে জীবন দিতে হলো। দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলাধীন গোয়ালদিহী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৯৪ সালের মে মাসের ২৮ তারিখ শনিবার শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম ভাই জন্মগ্রহণ করেন। শাহাদাতের তামান্না যদি কোনো মুমিন জীবনে থাকে তাহলে তিনি আল্লাহর পথে কখনো গাফেল হতে পারেন না। একজন মুমিন শাহাদাতের মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার জন্য বাতিলের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে সংগ্রাম চালিয়ে থাকেন। কারো জীবনে শাহাদাতের কামনা আছে কি-না তার কর্মচাঞ্চল্যের মাধ্যমে তা বোঝা যায়। আন্দোলন সংগ্রামে তিনি তৃপ্তি পান। দুনিয়ার কোনো লোভ-লালসা এবং ভয়-ভীতি তাকে দুর্বল করতে পারে না। শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত শহীদ মুজাহিদ ভাই দায়িত্বশীল ভাইদেরকে যেসব মেসেজ দিয়েছিলেন তা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। আমি তার মেসেজগুলো পড়ে আশ্চর্য হই। মনে হয় মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সংবাদ পূর্বেই দিয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলবে আর আন্দোলনের কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে এটা হতে পারে না। জান্নাতের মধুর গন্ধে জিহাদের জন্য দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করতে কর্মীরা সর্বদা প্রস্তুত থাকে। শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম দায়িত্বশীলদের জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে মেসেজ দিতেন। যেমন : (অংংধষধসঁ অষধরশঁস, াধর, লবযধফবৎ লড়হহড় চৎড়ংঃঁঃ যড়ঁহ. ইড়ংব ঞযধশধৎ ফরহ ংবং *গঁলধযরফ*) (াধর অসর লবযধফবৎ লড়হহড় ংড়ন ংড়সড়ু চৎড়ংঃঁঃ,অঢ়হর শর চৎড়ংঃঁঃ? *গঁলধযরফ*) আমাদেরকে ময়দানে অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়ে শহীদ হয়ে আল্লাহর কাছে চলে গেলেন প্রিয় ভাই শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি পুনর্বহাল, আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৪ ডিসেম্বর ২০১২ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। উক্ত কর্মসূচি সফল করার জন্য ৩ ডিসেম্বর ২০১২ হরতালের সমর্থনে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার রানীবন্দর বাজারে জামায়াত-শিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়। মিছিলটি সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় শুরু হয়। বর্তমান সরকারের স্ব^রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউউীন খান আলমগীরের সারাদেশব্যাপী জামায়াত-শিবির প্রতিরোধের উসকানিতে পুলিশ সেই মিছিলে গুলি চালায়। প্রায় ৫০টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করার ফলে আকাশ-বাতাস অন্ধকারে ছেয়ে যায়। পুলিশের গুলির আওয়াজে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেন। এ ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের আসাদুল্লাহ, নুরুন্নবী, মোহাম্মদ আলী, মাসুদ রানা, এনামুল এবং গোলাম মোস্তফা ভাইসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ মুজাহিদ ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে দিনাজপুর জেলা উত্তর সভাপতি জাকিরুল ইসলাম ভাই অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে রংপুর ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে পৌঁছলে কর্তব্যরত ডাক্তার শহীদ মুজাহিদ ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখানেই শহীদের বড় ভাই শফিউল আলম ভাইয়ের মৃত্যুতে প্রায় বেহুঁশ হয়ে পড়েন। শহীদ মুজাহিদের মৃত্যুর খবর সারাদেশে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরিরবন্দর বাজারে উপস্থিত হন এবং খুনিদের শাস্তির দাবিতে দীর্ঘ সময় প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের চোখের পানি এবং কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মুহ্তারাম কেন্দ্রীয় সভাপতির নির্দেশে ৩ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে পরদিন সকালে শহীদের বাড়িতে পৌঁছলাম। দ্বীনি ভাই হারানোর বেদনায় শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম ভাইয়ের সঙ্গী-সাথীদের সবার চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। এলাকার অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। শহীদের পিতার সাথে দেখা করে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। এক পর্যায়ে তিনি ছেলের শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শহীদের পিতা কান্নাজড়িতকণ্ঠে আমাদেরকে বললেন, সন্তান হারানোর বেদনা তোমরা কী করে বুঝবে? এমতাবস্থায় আমি সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলি। স্থানীয় মুরব্বিদের সহযোগিতায় শহীদের পিতা কিছুটা শান্ত হন। শহীদের আম্মার সাথে দেখা করতে গিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। কারণ সেখানে শহীদের মা-বোন, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের চোখে বেদনার অশ্রু ঝরছিল। ফলে শহীদের মাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু শহীদের মায়ের সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন তিনি ছেলের শোকে পাথর হয়ে নিশ্চুপ আমাদের কথা শুছিলেন। শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম ভাই স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান শেষে শহীদের মায়ের সাথে আবারো দেখা করলাম। ছেলে হারানোর বেদনায় ধৈর্য ধারণ করে আওয়ামী সরকারের জুলুম নির্যাতন থেকে জামায়াত এবং শিবিরের নেতা কর্মীদের মুক্তির জন্য দোয়া চাইলাম। বিদায় নেবো এমন সময় তিনি মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকজন খালাম্মার সহযোগিতায় তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়া হলো। শহীদের আম্মাকে সান্ত্বনা দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজে খুব অসহায় বোধ করছিলাম। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ২-৩ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একা একা আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলামÑ হে আল্লাহ! বাতিল শক্তি আমাদের মায়ের বুক খালি করে দিলো; তুমি তাদের বিচার করো। শহীদ মুজাহিদ ভাইয়ের মায়ের মনে তুমি সান্ত্বনা দাও। জানাজার নামাজের পূর্বে শহীদের পিতার বক্তব্য উপস্থিত সকলকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি বলছিলেন, ‘আমার ছেলের জন্মের সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ভাইয়ের কথা চিন্তা করেই ছেলের নাম রাখলাম মুজাহিদুল ইসলাম, যাতে আমার ছেলে বড় হয়ে ইসলামী আন্দোলনের অনেক বেশি খেদমত করতে পারে। এভাবে শহীদ হয়ে ইসলামী আন্দোলনের জন্য ভূমিকা রাখবে তা কোনোদিন ভাবিনি।’ হাজার হাজার মুসল্লির সামনে কান্নাজড়িতকণ্ঠে জোর আওয়াজে ঘোষণা দিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার একটি সন্তান শহীদ হয়েছে; তাতে কোনো দুঃখ নেই। প্রয়োজনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য আমার আরো ৫ জন সন্তানকে শহীদ করতে প্রস্তুত আছি।’ শহীদের পিতার এই বক্তব্য শোনার পর উপস্থিত মুসল্লিগণ আবেগাপ্লুুত হয়ে হু হু করে কাঁদতে শুরু করে। অনেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দের নাম ধরে মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দিয়ে আকাশ বাতাস ভারী করে তোলে। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার তখনি ভালো লাগবে যখন শুনতে পাবো শহীদ মুজাহিদের সঙ্গী-সাথীরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য তাদের জীবনের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে।’ জানাজার নামাজে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। ্এবার একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। ৩ তারিখ রাত ৮টায় আমাদের কাছে খবর এলো মুজাহিদুল ইসলাম ভাই নামে এক শিবিরের সাথী দিনাজপুরে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেছেন। মুহূর্তের মধ্যে এ সংবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শহীদের বাড়িতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলো। মেডিক্যাল এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানলাম, আমাদেরকে ৪ তারিখ সকাল ১১টায় লাশ ফেরত দেবে। জামায়াত-শিবিরের দায়িত্বশীল ভাইয়েরা পরামর্শ করে বিকেল ৩টায় জানাজার নামাজের সময় নির্ধারণ করলেন। পুলিশ প্রশাসন শহীদের লাশ সারাদিন আটকিয়ে রাখে। অনেক চেষ্টা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় আমরা লাশ ফেরত পাই। জানাজা নামাজের নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই হাজার হাজার মানুষ নামাজের জন্য উপস্থিত হয়। বেলা যত গড়িয়ে যায় মানুষের উপস্থিতি ততই বাড়তে থাকে। অশ্রুসিক্ত অবস্থায় অনেককে বলতে ফনেছি, সুন্দর তরুণ যুবককে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করে নিলেন। এরই মধ্যে শহীদের লাশ জানাজা নামাজের জন্য নিয়ে আসা হলে শেষবারের মতো সবাই তাকে দেখার জন্য ভীড় জমায়। ফলে নামাজ শুরু করতে বেশ সময় লাগে। সেদিন হরতাল থাকার পরও ১৫-১৬ হাজার লোকের ঢল নামে। এক আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখলাম; এমন কেউ ছিল না যে শহীদের হাস্যোজ্জ্বল মুখটি একটি বারের মত দেখেনি। বাগানের ফুলের গন্ধে মন ভরে যায়। শহীদের চেহারা মুবারক দেখে মনে হচ্ছিল যেন টগবগে এক জীবন্ত তরুণ ঘুমিয়ে আছে। আমরা একজন সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব হারালাম। আমি শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম ভাইয়ের উজ্জ্বল মুখটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। শহীদ মুজাহিদ ভাইকে দেখে সূরা বাকারার এই আয়াতটি বারবার মনে পড়েÑ ‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত।’ ইসলামী ছাত্রশিবির শহীদ মুজাহিদ ভাইয়ের স্মরণে ৭ ডিসেম্বর দেশব্যাপী দোয়া দিবস কর্মসূচি ঘোষণা করে। শহীদের বাড়িতেও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে দলমত নির্বিশেষে প্রায় চার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। ২৩ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরে ১৮ দলীয় জোটের মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন উপলক্ষে ২২ তারিখ শহীদ মুজাহিদ ভাই তার উপশাখায় জনশক্তিও সুধীদের উদ্দেশে যে বক্তব্য প্রদান করেন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোÑ (মোবাইল রের্কড থেকে নেয়া) ‘প্রিয় উপস্থিতি! আপনারা অবগত আছেন যে, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর বারবার দুর্নীতি, নারী ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি করে চলেছে। সরকার যখন দেখলো, কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি থাকলে তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে না, তাদেরকে জিততে হলে আমেরিকা ও ভারতের বুদ্ধি নিতে হবে, তখন তারা কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে দিলো। এখান থেকে সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই আমরা হাজার-হাজার, লক্ষ লক্ষ তরুণ বেঁচে থাকতে বাংলার মাটিতে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে না। প্রিয় সংগ্রামী ভাইয়েরা! জামায়াত-শিবির নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য এবং কেয়ারটেকার সরকারের পুনর্বহালের দাবিতে ২৩ তারিখ ১৮ দলীয় জোটের মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। উক্ত সমাবেশকে সফল করার জন্য আপনারা সবাই যোগদান করবেন। বর্তমান সরকারকে বলতে চাই, আসুন, দেখুন, দিনাজপুরের মাটি শিবিরের ঘাঁটি। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো ঠাঁই নাই। আশা করি আপনারা আগামীকালকের জনসভায় দলে দলে যোগদান করবেন।’ শহীদ হওয়ার আড়াই মাস পূর্বের এই বক্তব্য শুনে মনে হয় শাহাদাতের তামান্না নিয়ে কুরআনের সমাজ গড়ার স¦প্ন তিনি লালন করতেন। তাইতো জিহাদের ময়দানে বাতিল শক্তির মোকাবেলা করে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা মৃত্যুযন্ত্রণা সহ্য করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সাহাবীরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন। মায়াজ এবং মুয়াজ দুই ভাই রাসূল (সা)-এর কাছে গেলে ছোট ভাই মুয়াজকে তিনি অনুমতি দেননি। বড় ভাইকে ম্যানেজ করে আল্লাহর রাসূলের সামনে কুস্তিতে সমান শক্তি প্রদর্শন করলো। মুয়াজের যুদ্ধে যাওয়ার আগ্রহ দেখে রাসূল (সা) তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন। ঠিক এরকম মিল খুঁজে পাই শহীদ মুজাহিদ ভাইয়ের ক্ষেত্রে। ৩ ডিসেম্বর দুপুরে শহীদ মুজাহিদ ভাই দিনাজপুর জেলা উত্তরের অর্থ সম্পাদক রফিক ভাইয়ের নিকট ফোন করে জানতে পারলেন সন্ধ্যায় মিছিল হবে। সেই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইলেন। দায়িত্বশীল ভাই তাকে বললেন, আগামীতে আরো কর্মসূচি আছে এবং তোমার বয়স কম। এ কথাগুলো বলে মিছিলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন না। কিছুক্ষণ পর বিকেল ৩টায় আবারো ফোন করে অনুমতি চাইলে দায়িত্বশীল তার আবেগ অনুভূতি বুঝতে পেরে মিছিলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। এইভাবে মহান আল্লাহ তাকে শহীদের মিছিলে কবুল করলেন। এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, ইসলামী ছাত্রশিবির একটা বড় সম্পদ হারালো। সদা হাস্যোজ্জ্বল, নম্র, ভদ্র এবং ইসলামপ্রিয় এই তরুণ যুবকটির মনে সব সময় চিন্তা ছিল জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে কিভাবে মুক্ত করা যায়। এ অঞ্চলের ছোট ছোট ছেলেদেরকে কুরআনের পথ দেখানোর জন্য গ্রামে একটি শিক্ষা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শহীদ মুজাহিদ ভাই এমন প্রকৃতির ছিলেন যখনই তাকে কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দেয়া হত সাথে সাথে তা হাসিমুখে মেনে নিতেন। সবার আগে কিভাবে কাজটি শেষ করা যায় এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন। সময়মতো সকল কাজে তিনি উপস্থিত হতেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের জনশক্তিদের কাছে শহীদের পিতার প্রত্যাশা, ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করা এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তির আন্দোলনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকেই শহীদি প্রেরণা নিয়ে জীন কায়েমের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত থাকার তৌফিক দিন। আমীন। লেখক : কেন্দ্রীয় পাঠাগার সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
আপনার মন্তব্য লিখুন