জেরুজালেম। নবী-রাসূলদের শহর। মুসলিম বিশ্বাসের প্রথম কিবলার শহর। ইসলামী খিলাফতের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক নগরী জেরুজালেম। কুরআনের সুনিপুণ বর্ণনায় নবী বাগানের ফুলদের বিচরণ ভূমি জেরুজালেম। সেই জেরুজালেমে বসবাসরত ঐতিহ্যবাহী গোত্রের নাম- বনি ইসরাঈল। বনি ইসরাইল বলতে মুসলিম মানসপটে যার নাম ভেসে ওঠে তিনি হচ্ছেন- হজরত ইয়াকুব (আ)। ইয়াকুব (আ)-এর বংশধরদের বনি ইসরাঈল বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে বেশি নবী-রাসূল আগমন করেছেন এই জাতি থেকেই। আবাদ করে গেছেন ইসলামের। বনি ইসরাঈল যেমনিভাবে নবী-রাসূলের ইতিহাসের সাক্ষী, ঠিক তেমনিভাবে এদের নির্লজ্জ কার্যক্রমের জন্য ইতিহাসের বর্বরোচিত এবং বিতর্কিত জাতি হিসেবে পরিচিত। আজকের আলোচনার বিষয়- বনি ইসরাঈলের যে সমস্ত কর্মযজ্ঞের কারণে স্বীয় দেশ থেকে বিতাড়িত এবং প্রত্যাখ্যাত করা হয়েছিল। বনি ইসরাঈলের ইতিহাস ইয়াকুব (আ) থেকে ঈসা (আ) পর্যন্ত আনুমানিক আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত পরিব্যপ্ত। ইয়াকুব (আ) ছিলেন ইসহাক (আ)-এর সন্তান এবং ইবরাহীম (আ)-এর নাতি। ইয়াকুব (আ)-এর অবাসভূমি ছিল ফিলিস্তিনের কিনান অঞ্চল। ইয়াকুব (আ)-কে নবী বানিয়ে রবের তরফ থেকে ইসরাঈল উপাধিতে ভূষিত করেন। যার অর্থ হচ্ছে- আল্লাহর বান্দা। ইয়াকুব (আ)-এর ১২ জন সন্তান ছিল। তাঁর সন্তানদের বংশ এতটাই বিস্তৃত যে, যা ১২টি গোত্রে পরিণত হয়। এই ১২টি গোত্রকেই কুরআনের ভাষায় বনি ইসরাঈল বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের হিদায়াতের জন্য অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করে সতর্ক করেছেন। তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিলসহ অসংখ্য সহীফা দান করেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা নবীদের কথার পরিবর্তে, অসৎ আলিমদের কথাকে বেশি প্রাধান্য দিতে শুরু করে। আল্লাহ তায়ালার কিতাবের বিকৃতির মতো নানা জঘন্য, মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ঘটনা বর্ণনার মধ্য দিয়ে জনগণের মাঝে নবীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। তবুও নবীগণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের তাহরীফ এবং সঠিক দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাঈলকে নাফরমান বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতে নিষেধ করেন এবং আজাবের মাধ্যমে মাতৃভূমি জেরুজালেম থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখান।
জেরুজালেম থেকে ইহুদি উচ্ছেদের বর্ণনায় প্রবেশের আগে তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিশ্রুত ভূমি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত হলেও জানতে হবে। তাহলে তাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সহজেই জানা যাবে। তাদের সীমানা জানার জন্য প্রথমে তাদের পতাকা এবং স্লোগানকে বেছে নেওয়া যাক। তাদের স্লোগান হচ্ছে- ‘নীল থেকে ফোরাত, খাইবার থেকে কিনান’ পর্যন্ত তাদের ভূমি। তাদের ইসরাঈলী পতাকার দিকে লক্ষ্য করলে আরও স্পষ্ট হওয়া সম্ভব হবে। পতাকার উপরে-নিচে দুটো নীল দাগ এবং মধ্যে ছয় কোণবিশিষ্ট তারকা রয়েছে। দুটো নীল দাগ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- নীলনদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত অঞ্চল। আর ছয় কোণবিশিষ্ট তারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- এটা দাউদ (আ)-এর নিশানা, যা দাউদ (আ)-এর পতাকায় ছিল (তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী)। তারা এই নিশানাকে ডেভিড স্টার বলে থাকে। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিশাল ইসরাঈলী সাম্রাজ্যের ওপর দাউদ (আ)-এর বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
মূল আলোচনায় আসা যাক- কিনান থেকে মিশরে তাদের প্রথম হিজরত বনি ইসরাঈলের নবী ইউসুফ (আ)-এর হাত ধরে। ইউসুফ (আ) কীভাবে কিনান থেকে মিশরে গেলেন এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে সূরা ইউসুফের শানে নূযুল দেখা যেতে পারে। পুরো ঘটনার সারমর্ম হচ্ছে- ইয়াকুব (আ)-এর ছেলেরা হিংসাবশত তাদের ভাই ইউসুফ (আ)-কে বাবার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে গভীর এক কুপে নিক্ষেপ করে। ঘরে ফিরে বাবা ইয়াকুব (আ) তাঁর আদরের সন্তান ইউসুফ (আ)-এর কথা জানতে চাইলে, ভাইয়েরা বাবাকে মিথ্যা গল্প শুনিয়ে দেয়। ওইদিকে একটি ব্যবসায়ী কাফেলা গভীর কুপ থেকে শিশু ইউসুফ (আ)-কে উদ্ধার করে মিশরে নিয়ে যায় এবং মন্ত্রীর কাছে গোলাম হিসেবে বিক্রি করে দেয়। বলাবাহুল্য যে, তদানীন্তন সময়ে জিনিসপত্রের মতো গোলাম বেচাকেনার প্রথা চালু ছিল। এভাবে ইউসুফ (আ) মন্ত্রী পরিবারে বেড়ে ওঠতে লাগলেন। এক পর্যায়ে মন্ত্রীর স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগে তাঁকে জেলে যেতে হয়।
তখন মিশরে কিবতি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। বাদশাহ একটি স্বপ্ন দেখেন, যার ব্যাখ্যা ইউসুফ (আ) ব্যতীত অন্য কারও জানা ছিল না। বাদশাহ তখন ইউসুফ (আ)-কে মুক্তির ব্যবস্থা করেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা বুঝে নেন। ইউসুফ (আ) বাদশাহর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তী দুর্ভিক্ষের সময় ইউসুফ (আ)-কে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কৃতিত্বের সাথে এই দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর ওপর মিশরের বাদশাহীর দায়িত্ব অর্পিত হয়। তখন ইউসুফ (আ) তাঁর ১১ জন ভাইসহ বাবা ইয়াকুব (আ)-কে মিশরে আমন্ত্রণ জানান। তারা মিশরে স্থায়ীভাবে বসাবাস শুরু করেন। এভাবে বনি ইসরাঈলের শাসন ক্ষমতা মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। ইউসুফ (আ)-এর ওফাতের প্রায় ৮০০ বছর পর্যন্ত বনি ইসরাঈলের হাতে শাসন ক্ষমতা ছিল। তখন তারা আল্লাহর আনুগত্য এবং নবীদের দেখানো পথে অবিচল ছিল। পরবর্তীতে তারা গোমরাহিতে নিমজ্জিত হলে আল্লাহ তাদের থেকে শাসন ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ফেরাউনকে বাদশাহ বানিয়ে দেন। ফলে বনি ইসরাঈল রাজার হালত ছেড়ে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে যায়। ইতিহাসবিদদের মতে- রামসিসের (ফেরাউন) শাসন প্রায় ৩শ থেকে ৪শ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
পরবর্তীতে রামসিস জুনিয়রের সময় জ্যোতিষীরা তাকে বলেন- বনি ইসরাঈলের মধ্যে এমন এক শিশু জন্মাবে, যে আপনার হুকুমাত কেড়ে নিবে এবং আপনাকে ধ্বংস করবে। তখন রামসিস জুনিয়র তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বনি ইসরাঈলের সকল শিশুকে হত্যার আদেশ দেন। এই হত্যার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জের ধরে সহকারী তাকে পরামর্শ দেয় যে, এভাবে যদি সকল শিশুকে হত্যা করা হয় তাহলে বনি ইসরাঈল থেকে গোলামের সংখ্যা শূন্য হয়ে যাবে। তখন ফেরাউন ভেবেচিন্তে নতুন ফরমায়েশ জারি করেন- এক বছর সকল বাচ্চা হত্যা করা হবে এবং দ্বিতীয় বছর সকল বাচ্চা জীবিত রাখা হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা কুরআনে এসেছে। বনি ইসরাঈলের নবী মুসা (আ) যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন সকল শিশুকে হত্যার আদেশ জারি ছিল। আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ)-কে নীলনদে ভাসিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। পরবর্তী ঘটনা কুরআন বলছে-
وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اُمِّ مُوۡسٰۤی اَنۡ اَرۡضِعِیۡهِ ۚ فَاِذَا خِفۡتِ عَلَیۡهِ فَاَلۡقِیۡهِ فِی الۡیَمِّ وَ لَا تَخَافِیۡ وَ لَا تَحۡزَنِیۡ ۚ اِنَّا رَآدُّوۡهُ اِلَیۡكِ وَ جَاعِلُوۡهُ مِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ- فَالۡتَقَطَهٗۤ اٰلُ فِرۡعَوۡنَ لِیَكُوۡنَ لَهُمۡ عَدُوًّا وَّ حَزَنًا ؕ اِنَّ فِرۡعَوۡنَ وَ هَامٰنَ وَ جُنُوۡدَهُمَا كَانُوۡا خٰطِئِیۡنَ- وَ قَالَتِ امۡرَاَتُ فِرۡعَوۡنَ قُرَّتُ عَیۡنٍ لِّیۡ وَ لَكَ ؕ لَا تَقۡتُلُوۡهُ ۖ عَسٰۤی اَنۡ یَّنۡفَعَنَاۤ اَوۡ نَتَّخِذَهٗ وَلَدًا وَّ هُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ
‘আমি মুসার মাকে আদেশ করলাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অত:পর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশঙ্কা করবে, তখন তাকে সাগরে ভাসিয়ে দেবে এবং কোনো ভয় ও দঃখ প্রকাশ করবে না। অবশ্যই আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের একজন বানাব। অত:পর ফেরাউন পরিবার মুসাকে সাগর থেকে কুড়িয়ে নিল, যাতে সে তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে যায়। নিশ্চয়ই ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল। ফেরাউনের স্ত্রী বলল- এ শিশু আমার এবং তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা কর না। সে আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা তাকে আমরা পুত্র করে গ্রহণ করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোনো খবর ছিল না।’ (সূরা আল কাসাস : ৭-৯)
পরবর্তীতে মুসা (আ) ফেরাউন ও বনি ইসরাঈলকে রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাতের দাওয়াত দেয়, ফেরাউন তা অস্বীকার করে। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে বনি ইসরাঈল বাহিনী নিয়ে লোহিত সাগরের (জবফ ঝবধ) কিনারে পৌঁছান। (বর্তমানে তাকে বলা হয় ‘সুয়েজ গালফ’) তখন ফেরাউন তার লস্কর নিয়ে মুসা (আ)-কে ধাওয়া করেন। আল্লাহর খুদরতে হাতের লাঠি দ্বারা আঘাত করার ফলে সমুদ্রপথে রাস্তার বন্দোবস্ত হয়ে গেল। বনি ইসরাঈল সম্প্রদায় নিয়ে মুসা (আ) সমুদ্র পার হয়ে সিনার মরুতে পৌঁছে যান। সমুদ্রের মাঝপথে গেলে ফেরাউন ও তার লস্করকে আল্লাহ তায়ালা ডুবিয়ে মারেন। কুরআন আজও তার সত্যতা বহন করে চলেছে। কুরআনের ভাষায়-
وَ اِذۡ فَرَقۡنَا بِكُمُ الۡبَحۡرَ فَاَنۡجَیۡنٰكُمۡ وَ اَغۡرَقۡنَاۤ اٰلَ فِرۡعَوۡنَ وَ اَنۡتُمۡ تَنۡظُرُوۡنَ
‘আমি যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখ-িত করেছি। অত:পর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের চোখের সামনেই ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরাউনের লোকদের।’ (সূরা আল বাকারা : ৫০)
এভাবে ইহুদি সমাজে মুসা (আ)-এর এই সফরকে খুব গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়। তারা এই দিনটিকে ‘ইয়াওমে কিপুর’ বলে আখ্যায়িত করে। মুসা (আ) বনি ইসরাঈলকে ফেরাউনের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে সিনা মরুতে অবস্থান করেন। সিনাতে অবস্থানকালে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ)-কে ৪০ দিন রোজা রাখার হুকুম দেন। ৪০ দিন পর আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ)-এর ওপর তাওরাত নাজিল করেন। এই তাওরাতই ছিল বনি ইসরাঈলের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ শরীয়াহ। শুধু তাই নয়, সিনা মরুতে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাঈলের জন্য ১২টি ঝরনা প্রবাহিত করেন এবং আসমান থেকে মান্না-সালওয়া নাজিল করেন। সিনায় থাকা অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাঈলকে ফিলিস্তিনে হামলা করা এবং সেখানকার শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদের হুকুম দেন। মাত্র দুইজন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সবাই ভয়ে বাহানা পেশ করতে থাকে। এই ভীরুতার শাস্তি হিসেবে ৪০ বছর পর্যন্ত মরুতেই তাদের কাটাতে হয়েছে। এই বিষয়ে কুরআনে এসেছে- قَالَ فَاِنَّهَا مُحَرَّمَۃٌ عَلَیۡهِمۡ اَرۡبَعِیۡنَ سَنَۃً ۚ یَتِیۡهُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ ؕ فَلَا تَاۡسَ عَلَی الۡقَوۡمِ الۡفٰسِقِیۡنَ-
‘তিনি (আল্লাহ) বললেন- এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্য হারাম করা হলো। তারা ভূপৃষ্ঠে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে। অতএব, আপনি অবাধ্য সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করবেন না।’ (সূরা আল মায়িদা : ২৬)
সিনার মরুতে থাকাবস্থায় মুসা (আ) ও হারুন (আ)-এর ওফাত হয়ে যায়। পরবর্তীতে বনি ইসরাঈলের হাল ধরার জন্য আল্লাহ তায়ালা ইউশা বিন নূন (আ)-কে নবুওয়াত দান করেন। ইউশা বিন নূন সেই দুইজন ব্যক্তির একজন, যিনি মুসা (আ)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে ফিলিস্তিনে আক্রমণ ও শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদের সম্মতি দিয়েছিলেন। আরেকজন হচ্ছেন- কালিব বিন ইউফনা (আ)। ইউশা বিন নূন (আ) ফিলিস্তিনের ভূমিতে জিহাদের আদেশ দেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরো ফিলিস্তিনে বিজয় লাভ করেন। দুর্ভাগ্যবশত বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ের পূর্বেই তিনি ইন্তিকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ফিলিন্তিনের ‘আমালেকা’ সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলছিল। জালুত বাদশাহ বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের এলাকাগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। সেই সময় আল্লাহ তায়ালা স্যামুয়েল (আ)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। স্যামুয়েল আল্লাহর কাছে জালুতের জুলুমের ব্যাপারে অভিযোগ করে এবং একজন নেতা পাঠানোর জন্য দুআ করেন। আল্লাহ তায়ালা তালুতকে বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নেতা বানিয়ে দেন। তাঁর নেতৃত্বে জেরুজালেম বিজয়ের নির্দেশ দেন। তালুত যেহেতু অপরিচিত এবং দুর্বল শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নেতারা তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিতে আপত্তি তুলে। আল্লাহ তায়ালা স্যামুয়েল (আ)-এর কাছে ওহির বরাতে জানান যে, তালুত নিজ জাতির মধ্যে ইলম ও শারীরিক শক্তিতে সবচেয়ে অগ্রগামী। তারপরও তারা খুশি হতে পারেননি। তারা তালুতের নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পর্কে প্রমাণ চাইতে শুরু করে। স্যামুয়েল (আ) আল্লাহর কাছে দুআ করেন- তখন আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাঈল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ‘তাবুতে সাকিনা’ ফিরিয়ে দেন। (বিস্তারিত জানতে সূরা বাকারা ২৪৬-২৫২ দেখুন) এরপর সবাই তালুতের নেতৃত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত হয়। তালুতের নেতৃত্বে যখন জালুত বাদশাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য রওয়ানা হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাঈলকে একটা আশ্চর্যজনক পরীক্ষায় ফেলে দেন। তাদের নবী স্যামুয়েল (আ)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয় যে, সৈন্যবাহিনী পথে যে নদী পাবে সেখান থেকে যেন কেউ পানি পান না করে। একান্ত প্রয়োজনে যেন এক কোষ পানির অতিরিক্ত পানি পান না করে। সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে- ৩১৩ জন ব্যতীত সবাই এক কোষের বেশি পানি পান করে নেয়। এর ফলে তারা তাদের জিহাদের সাহস হারিয়ে ফেলে এবং সবাই পেছনে থেকে যায়। ৩১৩ জন সৈন্যের অবিচল বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষায় আল্লাহ তায়ালা জালুত বাদশাহর মসনদ তছনছ করে দেন। এই পাকাপোক্ত, তেজোদ্দীপ্ত প্রখর ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান সৈন্যবাহিনীতে ছিলেন দাউদ (আ)- যিনি পরবর্তীতে জালুতকে হত্যা করে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছেন। তাঁর এই বীরত্বের জন্য কাবার মালিক তাকে বাদশাহীর সাথে সাথে নবুওয়াতের বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। এভাবে তিনি বনি ইসরাঈলকে আবারও বিজয়ের বেসে ফিরিয়ে দেন জেরুজালেম।
তাঁরপরে সিংহাসনে বসেন- দাউদপুত্র সুলাইমান (আ)। সুলাইমান (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা এমন রাজত্ব দান করেছেন, যা ইতোপূর্বে কাউকে দেননি। প্রথমে ইয়াকুব (আ) মাসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন, এরপরে দাউদ (আ) সম্প্রসারণ করেন। এরপর সুলাইমান (আ) বৃহৎ পরিসরে সম্প্রসারণ করেন। (ইহুদি বিশ্বাসে ভিন্ন কথা বলা আছে)। ধীরে ধীরে বনি ইসরাঈল গোমরাহীতে নিমজ্জিত হতে থাকে। ধর্মীয় অঙ্গনে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য ‘ওলামায়ে সু’ তৈরি হয়। লোকজন নবীদের পয়গাম থেকে ওলামায়ে সু’দের কথাকে বেশি প্রাধান্য দিতে থাকে। তাদের অবস্থা এতটা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে যে, কিতাবুল্লাহর বিকৃতি ও নবীদের হত্যা করা শুরু করে। এমন দুর্দিনে আল্লাহ তায়ালা আরও একজন নবী প্রেরণ করেন- যার নাম ছিল আরমিয়া (আ)। তিনি বনি ইসরাঈলকে সৎ পথে না চলার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেন এবং আল্লাহর অবাধ্যতা শুরু করলে বাদশাহী ছিনিয়ে নিয়ে গোলামের জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে রাখার ভয় দেখান। এসব সতর্কতা বনি ইসরাঈলের কর্ণকুহরে সাময়িকের জন্যও পৌঁছায়নি। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর আরেক জালেমশাহী বাদশাহ চাপিয়ে দেন। বাবেল শহরের আসিরিয়ানদের বাদশাহ বোখতে নসর (এই বিষয়ে মতানৈক্য আছে- ইবনে ইসহাকসহ অনেকেই বোখতে নসরের নাম উল্লেখ করেছেন) লক্ষ লক্ষ ইসরাঈলি বাহিনীকে হত্যা করেন এবং বাকিদেরকে গোলাম বানিয়ে ইরাকে নিয়ে যান। বোখতে নসরের গোলামি জিন্দেগীতে বনি ইসরাঈলের মধ্যে অনেক গোমরাহি জন্ম নেয়, যা তাদেরকে মুসলিম থেকে ইহুদিতে কনভার্ট করে ফেলে। ব্যাবিলনে বন্দী থাকাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাঈলের মাঝে দানিয়েল (আ)-কে নবী করে পাঠান। দানিয়েল নবীর নিকট তারা বোখতে নসরের গোলামি থেকে মুক্ত হতে দুআর দরখাস্ত করেন। হজরত দানিয়েল (আ) আল্লাহ তায়ালার নিকট দুআ করেন। আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নের মাধ্যমে সুসংবাদ দেন যে, একজন বাদশাহর মাধ্যমে বনি ইসরাঈলকে গোলামি থেকে মুক্তি দিবেন। এই সুসংবাদ কেবল আল্লাহর আনুগত্য আর মাসিহুল্লাহর অনুসরণ ও অনুকরণের সাথে শর্তযুক্ত। ইহুদি কিতাবের হাওয়ালায়- পারস্যের সম্রাট দ্বিতীয় খসরু বাবেলে হামলা করে বোখতে নসরের মসনদ ভেঙে চুরমার করে বনি ইসরাঈলকে তাদের ভূমি এবং সহায়-সম্পদসহ সবকিছু ফিরিয়ে দেন। এখানে বাদশাহ দ্বিতীয় খসরু আসলে কে ছিলেন, এটা নিয়ে বিস্তর মতানৈক্য রয়েছে। তবে আধুনিককালের গবেষণায় বলা হয়েছে, পারস্য-রোমের শাসক দ্বিতীয় খসরু হচ্ছেন- বাদশাহ জুলকারনাইন। যিনি দানিয়েল (আ)-এর সাহচার্যপ্রাপ্ত ছিলেন এবং তাঁর পরামর্শে বনি ইসরাঈলকে মুক্ত করে স্বীয় ভূমিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ভূমিতে এসে বনি ইসরাঈল আল্লাহর কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে আবার গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কয়েকটি ফিরকা চালু হয়ে যায়। তারা কিতাবুল্লাহর বাইরে গিয়ে নিজেদের মনগড়া ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করতে থাকে। এই ঘটনা তখনই মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল, যখন তারা বোখতে নসরের হাতে বন্দিজীবন পার করছিল। ইহুদিদের বর্ণনা অনুযায়ী বোখতে নসর তাদের তাওরাতের সমস্ত কপি পুড়িয়ে দিয়েছিল। বাবেলে থাকাবস্থায় তাওরাতের শিক্ষা তাদের থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরে উজাইর (আ) আবার তাওরাতকে একত্রিত করেন। এই কাজের জন্য তারা উজাইর (আ)-কে আল্লাহর পুত্র ডাকা শুরু করে। কুরআনে আসছে-
وَ قَالَتِ الۡیَهُوۡدُ عُزَیۡرُۨ ابۡنُ اللّٰهِ وَ قَالَتِ النَّصٰرَی الۡمَسِیۡحُ ابۡنُ اللّٰهِ ؕ ذٰلِكَ قَوۡلُهُمۡ بِاَفۡوَاهِهِمۡ ۚ یُضَاهِـُٔوۡنَ قَوۡلَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ قَبۡلُ ؕ قٰتَلَهُمُ اللّٰهُ ۚ اَنّٰی یُؤۡفَكُوۡنَ
‘ইহুদিরা বলে- উজাইর আল্লাহর পুত্র। আর নাসারারা বলে- মাসীহ আল্লাহর পুত্র। এগুলো আজগুবী ও উদ্ভট কথাবার্তা। এতে তারা তাদের পূর্বেকার কাফিরদের কথারই অনুকরণ করে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! কেমনভাবে তারা সত্য পথ থেকে দূরে ছিটকে পড়েছে।’ (সূরা আত তাওবা : ৩০)
তাদের বন্দিজীবনে যখন তাওরাত ছিল না, তখন একদল এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মনগড়া গল্পকাহিনী দিয়ে ‘তালমুদ’ নামক কিতাব রচনা করে এটাকে ইলমে ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান দিয়ে লিখিত কিতাব বলে প্রচার করতে থাকে। ফলে ‘তালমুদ’ কিতাবটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে থাকে। এভাবে দ্বীনের উৎস হয়ে গেল একটির জায়গায় দুটি। অর্থাৎ, একটি তাওরাত আরেকটি তালমুদ। এভাবেই বনি ইসরাঈল গোমরাহীর গভীর সীমান্তে প্রবেশ করে। নবীদের কথার চেয়ে তারা ওলামায়ে সু’দের কথা প্রাধান্য দিয়ে নিজদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনে। একপর্যায়ে তাদের মাঝে শিরক ও বিদআতের সয়লাব ঘটে। ফলে সমাজে এমন কিছু অসভ্যতা এবং সংস্কৃতি চালু হয়েছে, যা কিতাবুল্লাহর ঠিক বিপরীত। তাদের মধ্যে ভয়াবহ শিরক হচ্ছে- উজাইর (আ)-কে আল্লাহর পুত্র বলে বিশ্বাস করা। পাশাপাশি কিছু শিরক ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের কাছ থেকে এসেছিল। আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাঈলকে ফিলিস্তিন বিজয় করে সেখানে বসবাসরত জাতিকে নিঃশেষ করে দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু বনি ইসরাঈলরা তাদেরকে ছেড়ে দেন এবং তাদের সাথে মিলেমিশে শিরকগুলো গ্রহণ করেন। বনি ইসরাঈলের আরেক প্রকার শিরক হচ্ছে- যাদুবিদ্যা। যা নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করা হত। ফলে এ সমস্ত শিরক বন্ধ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা আরেকজন রাসূলকে প্রেরণ করেন- যার নাম ছিল ইলিয়াস (আ)। কুরআন বলছে-
وَ اِنَّ اِلۡیَاسَ لَمِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ- اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهٖۤ اَلَا تَتَّقُوۡنَ-اَتَدۡعُوۡنَ بَعۡلًا وَّ تَذَرُوۡنَ اَحۡسَنَ الۡخَالِقِیۡنَ-
‘আর ইলিয়াসও অবশ্যই রাসূলদের একজন ছিল। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল- তোমরা কী ভয় কর না? তোমরা কী বা’ল দেবতার ইবাদত করবে সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তাকে পরিত্যাগ করে?’ (সূরা আস সাফফাত : ১২৩-১২৫)
এবং সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে তাদের যাদুবিদ্যা নিয়ে বিস্তারিত বলা আছে।
এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা সুলাইমান (আ)-এর সময়ের পরে ঘটে গেল। সেটা হচ্ছে- তারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের আলাদা আলাদা নামে পরিচিত হওয়া। একদল হচ্ছে- বনি ইয়াহুদা, অন্যদল হচ্ছে- সামারিয়া বা ইসরাঈল। সুলাইমান (আ)-এর ইনতিকালের পর বনি ইয়াহুদা যখন নেতৃত্বে আসে। তখন অন্য কবিলাগুলো তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। একপর্যায়ে বনি ইয়াহুদা কবিলা সামারিয়া বা ইসরাঈল হুকুমাত দখল করে পুরো ফিলিস্তিন তাদের কব্জায় নিয়ে নেয়। তারপর থেকে বনি ইসরাঈলের নাম হয়ে যায় ‘ইহুদি’। ইহুদি ইতিহাস মতে- ঈসা (আ)-কে শূলিতে চড়ানোর ৭০ বছর পর রোমান সম্রাট টাইটাস ইহুদিদেরকে জেরুজালেম থেকে বের করে দেয় এবং ৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৮৮০ বছর ইহুদিরা ইউরোপ ও মুসলিম বিশ্বে ঘুরেফিরে কাটিয়ে দেয়। ১৯১৭ সালে ২ নভেম্বর ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেলফোর ঘোষণা দিয়ে ইহুদিদের সহযোগিতার আশ্বাস দেয় এবং জায়োনিস্ট মুভমেন্ট পরিচালনার সাপোর্টিভ হ্যান্ড হিসেবে থাকার কথা দেয়। ইহুদিদের ইসরাঈল আবাদ করার জন্য সে অঞ্চলটি ব্রিটেনের হাতে তুলে দেয়। আবার ঈসা (আ)-এর জন্মের ৩০০ বছর পর (চতুর্দশ শতাব্দী) রোমান বাদশাহ কনস্টানটাইন যখন খ্রিস্টান হয়ে যায়, তখন তারা নতুনভাবে সমস্যার মুখোমুখি হয়। এছাড়াও সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামের আগমনের পর আরব থেকেও বের করে দেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালে এসে জাতিসংঘের ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটেনের রাজত্ব বিলুপ্ত করে ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের হাতে তাদের রাষ্ট্র হিসেবে তুলে দেয়। ইহুদিদের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে- নিজেদেরকে আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করেন। এই দুনিয়া শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য তৈরি করেছেন। কারণ, তারা নবীদের সন্তান। তারা মনে করেন মানুষ দুই প্রকার-
এক. ইহুদি
দুই. গোয়েম বা অ-ইহুদি
আল্লাহ তায়ালা বাকি সব মানুষকে বনি ইসরাঈল তথা ইহুদিদের খিদমতের জন্য বানিয়েছেন। এমনকি গোয়েমদের জান-মাল সবকিছু দখল করা ইহুদিদের জন্য জায়েজ। খ্রিস্টান ও মুসলিম তাদের কাছে গোয়েম। তারা অবৈধভাবে ফিলিস্তিন দখল করে আছে। এই ফিলিস্তিন শুধু তাদের অন্য কারও না। মিশর থেকে সিনা, নীলনদ থেকে ফোরাত এবং দাউদ (আ)-এর সীমানা পর্যন্ত কেবল ইহুদিদের জায়গা। ঈসা মাসীহুল্লাহ মিথ্যা নবুওয়াত দাবিদার। তাঁকে হত্যা করে মাসীহে দাউদ দাজ্জালের আসার পথ সুগম করতে হবে। এরপর পুরো জেরুজালেম এবং বনি ইসরাঈলের সীমানা দখল করতে হবে। সর্বশেষ, মাসজিদুল আকসা ভেঙে হাইকালে সুলাইমানি প্রতিষ্ঠিত করা। সুলাইমান (আ)-এর যুগের মতো বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা। হারিয়ে যাওয়া তাবুতে সাকিনা মাসীহে দাউদ দাজ্জালের মাধ্যমে ফিরিয়ে পাওয়া এবং যা তাদের চিরস্থায়ী উত্থানের কারণ হবে। আসল কথা হচ্ছে- আল্লাহ তায়ালার শাস্তির ফলে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরেফিরে পুরো দুনিয়ায় অপমান-অপদস্ত হতে থাকে। সেই দুর্ভোগেও ভ্রান্ত আকিদার আলিমরা তাদের বুঝাতে থাকে যে, তারা আল্লাহ তায়ালার শাস্তির কারণে জেরুজালেম থেকে বের হননি; বরং রোমানদের জুলুমের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কাজেই তারা মজলুম জাতি এবং ফিলিস্তিন ভূমি তাদেরকে চিরকালের জন্য লিখে দেওয়া হয়েছে। এবং দিনশেষে সেখানেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে। এই চিন্তা-দর্শন থেকে ইহুদিরা আজ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেই যাচ্ছে।
তথ্যসুত্র
- তরজুমানুল কুরআন
- ইবনে কাসীর
- তাফহীমুল কুরআন
- সহিহ বুখারি
- বাইবেল সে কুরআন তক
- বিল আখির কিয়া হুগা?
- History of England
- The History of Zionism
- Secret Societies
লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
আপনার মন্তব্য লিখুন