post

জ্ঞানার্জনকারী ও দুনিয়ালোভী কখনো পরিতৃপ্ত হয় না

ড. মো. হাবিবুর রহমান

০১ সেপ্টেম্বর ২০২১

জ্ঞানার্জনকারী ও দুনিয়ালোভী 

কখনো পরিতৃপ্ত হয় না

ড. মো. হাবিবুর রহমান

عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْهُومَانِ لاَ يَشْبَعَانِ : مَنْهُومٌ فِي عِلْمٍ لاَ يَشْبَعُ ، وَمَنْهُومٌ فِي دُنْيَا لاَ يَشْبَعُ

অনুবাদ

হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, দু’জন লোভী কখনো তৃপ্ত হয় না; ১. জ্ঞানলোভী যে জ্ঞানার্জনে কখনো তৃপ্ত হয় না। ২. দুনিয়ালোভী, যে ধন-সম্পদ অর্জনে কখনো তৃপ্ত হয় না। 

(মুসতাদরাক হাকেম-৩১২, বায়হাকি ফি শুয়াবুল ঈমান-১০২৭৯) 


রাবী পরিচিতি

নাম ও বংশ পরিচয় : আনাস ইবনে মালিক ইবনে নাদর আল আনসারী রা. হিজরাতের দশ বছর পূর্বে ৬১২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। আনাসের বয়স যখন আট-নয় বছর তখন তাঁর মা রুমাইসা বিনতে মিলহান বা উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান ইসলাম গ্রহণ করেন। এ কারণে তাঁর পিতা মালিক ক্ষোভে-ঘৃণায় শামে চলে যায় এবং সেখানে কুফরি অবস্থায় মারা যায়। মা রুমাইসা বিনতে মিলহান পরবর্তীতে আবু তালহাকে বিবাহ করেন।

রাসূল সা. মদিনায় আগমন করা মাত্রই আনাস রা.-এর মা রুমাইসা বিনতে মিলহান ছেলেসহ উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আনসারদের নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই আপনাকে কিছু না কিছু হাদিয়া দিয়েছেন; আমি তো কিছুই দিতে পারিনি, আমার আছে এই ছেলে, সে লিখতে জানে; আপনার খিদমতের জন্য একে কবুল করুন।’ রাসূলে করিম সা. আনন্দ প্রকাশ করে নিজ মোবারক হাত তার মাথায় বুলিয়ে দিলেন, আর নিজের কোমল আঙুল দিয়ে তার জুলফি স্পর্শ করলেন এবং তাকে পরিবারভুক্ত করলেন। 

রাসূল সা.-এর খেদমতে : হযরত আনাস রাসূলুল্লাহর সা. জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় দশ বছর খেদমতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সব সময় রাসূলুল্লাহ সা.-এর সঙ্গে থাকতেন। আবাস-প্রবাসে, ভিতরে-বাহিরে কোনো বিশেষ স্থান বা সময় তাঁর জন্য নির্ধারিত ছিল না। পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার পূর্বে তিনি স্বাধীনভাবে রাসূলুল্লাহর সা. গৃহে যাতায়াত করতেন। আনাস রা. বলেন, একদিন আমি অন্দরে প্রবেশ করতে যাবো, এমন সময় রাসূল সা. ডেকে বললেন, আনাস! পিছিয়ে এসো, হিজাবের আয়াত নাজিল হয়ে গেছে। 

হাদিস বর্ণনা : হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবিদের মধ্যে যারা মূল ভিত্তি বলে বিবেচিত, হযরত আনাস ছিলেন এই দলেরই একজন। রাসূল সা.-এর আচার-আচরণ, চেহারা-সুরত, ব্যক্তিগত অভ্যাস ও দৈনন্দিন জীবনের কার‌্যাবলি সংবলিত হাদিসগুলো প্রায় সবই আনাস রা. বর্ণনা করেছেন। ফিকাহশাস্ত্রেও হযরত আনাসের পা-িত্য ছিল। ফকিহ সাহাবিদেরকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। আনাস ছিলেন দ্বিতীয় স্তরে।

সন্তান-সন্ততি : রাসূল সা.-এর বিশেষ দোয়ার বরকতে আনসারদের মধ্যে হযরত আনাসের সন্তান-সন্ততির সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। মৃত্যুকালে তিনি ৮২ জন ছেলেমেয়ে রেখে যান, তাদের মধ্যে ৮০ জন ছেলে এবং হাফসা ও উম্মু আমর নামে দুই মেয়ে।

মৃত্যু : সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে হিজরি ৯৩ সনে হযরত আনাস রা. 

মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছরের ঊর্ধ্বে। হযরত আনাস ছিলেন দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণকারী বসরার শেষ সাহাবী। সম্ভবত আবু তুফাইল রা. ছাড়া তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো সাহাবি জীবিত ছিলেন না।


হাদিসের ব্যাখ্যা

উক্ত হাদিসে দু’টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, ১. যারা জ্ঞানী তাদের জ্ঞান লাভের তৃষ্ণা কখনো মিটবে না, ২. যারা দুনিয়া উপার্জনকারী তাদের দুনিয়ার ধন-সম্পদ উপার্জনের তৃষ্ণাও জীবনে মিটবে না। নি¤েœ এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

مَنْهُومٌ فِي عِلْمٍ لاَ يَشْبَعُ

“জ্ঞানলোভী যে জ্ঞানার্জনে কখনো তৃপ্ত হয় না।”

উক্ত হাদিসের প্রথমাংশে রাসূল সা. বলেছেন, দ্বীনের ইলম অর্জনকারী জ্ঞান অন্বেষণ করতে করতে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছবে কিন্তু জ্ঞানার্জনে সে তৃপ্ত হবে না, অর্থাৎ জ্ঞানার্জনের পিপাসা তার মিটবে না। ইল্ম এমন একটি দু®প্রাপ্য সম্পদ যা আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ ছাড়া পাওয়া সম্ভব হয় না। আল্লাহ যাকে চান তাকে দ্বীনের বিশেষ পা-িত্য দান করেন। এ সম্পর্কে আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ 

“আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।” 

(বুখারি) 

আল্লাহ যাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবেন তারা সব সময় কুরআন-হাদিস ও ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে, তাদের এই আগ্রহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফুরাবে না। কারণ জ্ঞান অন্বেষণকারী জানে এই পথেই রয়েছে জান্নাতের ঠিকানা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ بِهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَقَالَ جَلَّ ذِكْرُهُ [إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ] وَقَالَ [وَمَا يَعْقِلُهَا إِلَّا الْعَالِمُونَ] [وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ] وَقَالَ [هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ]

“আর যে ব্যক্তি ‘ইলম’ অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আল্লাহ্ বলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাঁকে ভয় করে।’-সূরা ফাতির : ২৮। আল্লাহ্ আরো বলেন, আলিমগণ ব্যতীত তা কেউ অনুধাবন করে না।’’-সূরা আনকাবুত : ৩৪। আল্লাহ বলেন, ‘তারা সেদিন বলবে, আমরা যদি শুনতাম অথবা উপলব্ধি করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না।’-সূরা মুল্ক : ১০। আল্লাহ বলেন, ‘বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?”- সূরা যুমার : ৯ (বুখারি) 

ইল্ম অর্জনকারী বা একজন ছাত্র যতক্ষণ ইলম অর্জনের জন্য চেষ্টা করে ততক্ষণ সে আল্লাহর পথেই থাকে। এ সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন, 

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-  مَنْ خَرَجَ فِى طَلَبِ الْعِلْمِ فَهُوَ فِى سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى يَرْجِعَ

“আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করার জন্য (ঘর থেকে) বের হলো, সে ফেরত আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথেই থাকল।’’ 

(তিরমিজি)

ইল্ম অর্জনের জন্য আলেম সবসময় ব্যস্ত থাকে, কারণ সে জানে এই রাস্তাটা অনেক মর্যাদা ও সম্মানের। কারণ কুরআন অধ্যয়নকারী এবং প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীকে প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ জান্নাত প্রদান করবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,   

عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَاسْتَظْهَرَهُ ، فَأَحَلَّ حَلاَلَهُ ، وَحَرَّمَ حَرَامَهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِ الجَنَّةَ وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلُّهُمْ قَدْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ.

“আলী ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়েছে এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছে, এর হালালকে হালাল বলে মেনেছে এবং হারামকে হারাম বলে গ্রহণ করেছে, আল্লাহ্ তায়ালা এর কারণে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং সে তার পরিবারের এমন দশ জনকে সুপারিশ করতে পারবে যাদের প্রত্যেকের ওপর জাহান্নাম অবশ্যম্ভাবী।” (তিরমিজি)

আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ, নবী-রাসূলগণ যে কারণে দুনিয়াতে এসেছিলেন সেই একই কাজের আঞ্জাম দেওয়াই আলেমদের দায়িত্ব। আর নবী-রাসূলগণের কাজ ছিলো জ্ঞানের আলো সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে সকল প্রকার কলুষতা থেকে জাতিকে পবিত্র করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 

كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِنْكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ

“যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।” (সূরা বাকারা : ১৫১) 


উপরোক্ত নবিয়ানা কাজের আঞ্জাম দিতে গেলে দায়ীর জন্য জ্ঞান ও হিকমাহ প্রয়োজন। এজন্যই প্রত্যেক মুসলিমের উপরে জ্ঞানার্জন করা ফরজ করা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ، وَوَاضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ غَيْرِ أَهْلِهِ كَمُقَلِّدِ الْخَنَازِيرِ الْجَوْهَرَ وَاللُّؤْلُؤَ وَالذَّهَبَ

“আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ। অপাত্রে জ্ঞান দানকারী শূকরের গলায় মণিমুক্তা ও সোনার হার পরানো ব্যক্তির সমতুল্য।” (তিরমিজি) 

ইলম অর্জনকারীর মর্যাদা 

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইল্ম অন্বেষণকারীর জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণা মেটে না, কারণ ইলম অর্জনকারীর মর্যাদা সম্পর্কে সে ওয়াকিফহাল। ইল্ম অর্জনকারীর জন্য ফেরেশতাগণ তাদের পাখাসমূহ অবনমিত করে রাখেন এবং দুনিয়ার সকল কিছু তাদের জন্য দোয়া করতে থাকে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 

وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ ، وَإِنَّ طَالِبَ الْعِلْمِ يَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ، حَتَّى الْحِيتَانُ فِي الْمَاءِ ، وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ ، إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ ، إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا ، إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ ، فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ 

“ফেরেশতাগণ জ্ঞান অন্বেষীর সন্তুষ্টির জন্য তাদের পাখাসমূহ অবনমিত করেন। আর জ্ঞান অন্বেষীর জন্য আসমান ও জমিনবাসী আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানির মধ্যে মাছও। নিশ্চয় ইবাদতকারীর ওপর আলিমের মর্যাদা তারকারাজির ওপর চাঁদের মর্যাদার সমতুল্য। আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিশ। আর নবীগণ দিনার ও দিরহাম (নগদ অর্থ) ওয়ারিশি স্বত্ব হিসাবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা ওয়ারিশি স্বত্বরূপে রেখে গেছেন ইলম (জ্ঞান)। যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন একটি পূর্ণ অংশ লাভ করলো।” (ইবনে মাজাহ)

ইল্ম অর্জনের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের ইল্মকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কারণ কুরআনের মধ্যেই রয়েছে সকল জ্ঞান এবং এটাই হিদায়াতের একমাত্র গ্রন্থ।

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ

“আর আমি তোমার ওপর কিতাব নাজিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।” (সূরা নাহল : ৮৯) 

অন্যদিকে হাদিসে বলা হয়েছে, যার সিনার মধ্যে কুরআনের জ্ঞান নেই তার শরীরটা একটা বিরান বাড়ির মতো।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-  إِنَّ الَّذِى لَيْسَ فِى جَوْفِهِ شَىْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ  “আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কুরআনের কোনো অংশই যে ব্যক্তির পেটে নেই সে (সেই পেট বা উদর) বিরান ঘরের সমতুল্য।” (তিরমিজি) 




















জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য

জ্ঞান অর্জন করতে হবে দ্বীন প্রচার-প্রসারের জন্য, আল-কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। দুনিয়া লাভের জন্য এবং নিজের কর্তৃত্ব জাহির করার জন্য অথবা অন্যকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ইল্ম অর্জন করা জায়েজ নেই, কারণ এই ইল্ম একজন আলেমকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 

مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللَّهُ النَّارَ

“যে লোক আলিমদের সাথে তর্ক-বাহাস করা অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে বাগ-বিত-া করার জন্য এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইল্ম অধ্যয়ন করেছে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” (তিরমিজি) 

দুনিয়ার কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য যদি কেউ জ্ঞান অন্বেষণ করে তাহলে সে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে সামান্য কিছু পেতে পারে, তবে আখেরাতের সীমাহীন অনন্ত জীবনে সে কিছুই পাবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

 عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: مَنْ طَلَبَ شَيْئًا مِنْ هَذَا الْعِلْمِ فَأَرَادَ بِهِ مَا عِنْدَ اللَّهِ، يُدْرِكْ إِنْ شَاءَ اللَّهُ، وَمَنْ أَرَادَ بِهِ الدُّنْيَا، فَذَاكَ وَاللَّهِ حَظُّهُ مِنْهُ

“হাসান (রহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ জ্ঞানের কোনো অংশ তালাশ করে এবং এর দ্বারা তার একমাত্র উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর নিকট যা আছে তা, তবে ইনশাআল্লাহ সে তা লাভ করবে। আর এ (ইলম) দ্বারা যার উদ্দেশ্য হবে দুনিয়া কামাই, তবে আল্লাহর কসম! সে এর দ্বারা তাই লাভ করবে (প্রতিদান পাবে না)।” (সুনান আদ-দারেমি) 


জ্ঞানীদের জন্যই সমাজের নেতৃত্ব 

ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য দরকার একদল সত্যনিষ্ঠ ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত ইলম ও শারীরিক শক্তির অধিকারী কর্মীবাহিনী। ‘তালুত’ এর ইল্ম ও শারীরিক শক্তি সকলের চাইতে বেশি থাকার কারণে বনি ইসরাইলের বাদশা হিসেবে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত করা হয়েছিলো। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

قَالَ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ وَاللَّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

“সে বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তোমাদের উপর মনোনীত করেছেন এবং তাকে জ্ঞানে ও দেহে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ যাকে চান, তাকে তাঁর রাজত্ব দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা বাকারা : ২৪৭) 

জ্ঞান অন্বেষণকারীর অর্জিত জ্ঞান তাকে সত্যের পথে পরিচালিত করে, সঠিক দিকনির্দেশনা দেয় এবং তার একাকিত্বের সাথী হয়। মুসনাদে মুয়াত্তাতে কয়েকজন জ্ঞানীর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, 

 الْعِلْمُ نُورٌ لِصَاحِبِهِ ، وَدَلِيلٌ لِحَظِّهِ ، وَوَسِيلَةٌ تَنْبَرِي إِلَى دَرَجَاتِ السُّعَدَاءِ ، وَصَاحِبٌ مُؤْنِسٌ فِي السَّفَرِ

“জ্ঞান তার মালিকের জন্য আলো, তার ভাগ্যের পথপ্রদর্শক এবং সুখের স্তরে পৌঁছানোর একটি উপায় এবং ভ্রমণের সময় তার সামাজিক সঙ্গী।” 


ইলম অর্জনকারীর জন্য শিক্ষা

ইল্ম অর্জন করা একটি মৌলিক ইবাদত, তাই একজন ছাত্র বা ইল্ম অর্জনকারীকে জীবনের বাঁকে বাঁকে অসংখ্য ব্যস্ততা, সমস্যার মাঝেও কুরআন-হাদিস, দ্বীনের প্রয়োজনে অন্যান্য ইলম এবং ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করার জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার সময় আলাদা করে নিতে হবে। সকল ব্যস্ততার মধ্যে ইল্ম অর্জনের ব্যস্ততাকে এক নম্বরে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তা নাহলে জীবনে এমন ব্যস্ততা এসে যাবে যে, এর থেকে সে আর বের হতে পারবে না। হাদিসে কুদসিতে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে,

إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِى أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ

“আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য সময় আলাদা করে নাও, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করবো না।” (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) 

 


وَمَنْهُومٌ فِي دُنْيَا لاَ يَشْبَعُ

“দুনিয়ালোভী, যে ধন-সম্পদ অর্জনে কখনো তৃপ্ত হয় না”

 

হাদিসের শেষের অংশে বলা হয়েছে, যারা ইলম অর্জন থেকে দূরে থাকবে, দুনিয়া তাদেরকে পেয়ে বসবে, তারা দুনিয়ার সামগ্রী অর্জনের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতে থাকবে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদেরকে  দুনিয়া উপার্জন থেকে আলাদা করা যাবে না। অর্থাৎ সম্পদ উপার্জন করতে করতে কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কুরআনে এভাবেই বলা হয়েছে,

أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ (১) حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ 

“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে গাফিল করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাৎ করবে।” 

(সূরা তাকাসুর : ১-২) 

যারা দুনিয়ার লোভে ছুটবে, জীবনকে পরিবর্তন স্রোতের গড্ডালিকার প্রবাহে ভাসিয়ে দিবে তাদের জন্য পরকালে কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে। কুরআনে তাদের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে এভাবেই বলা হয়েছে, 

كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ (৩) ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ (৪) كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ (৫) لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ (৬) ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ (৭) ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ (৮)

“কখনো নয়, শিগগিরই তোমরা জানবে, তারপর কখনো নয়, তোমরা শিগগিরই জানতে পারবে। কখনো নয়, তোমরা যদি নিশ্চিত জ্ঞানে জানতে! তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে; তারপর তোমরা তা নিশ্চিত চাক্ষুষ দেখবে। তারপর সেদিন অবশ্যই তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” 

(সূরা তাকাসুর : ৩-৮) 

আল্লাহ দুনিয়ার সম্পদ উপার্জন করতে নিষেধ করেননি, বরং প্রয়োজন মেটানোর জন্য যতটুকু দরকার তা উপার্জনের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

“অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।” (সূরা জুমআ : ১০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ 


“আর আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর।” (সূরা কাসাস : ৭৭) 


সম্পদ উপার্জনের উদ্দেশ্য যদি হয় শুধু দুনিয়ায় গর্ব-অহংকার প্রকাশ করা এবং তাকে সম্পদশালী বলবে তাহলে এই সম্পদ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَنْ طَلَبَ الدُّنْيَا حَلاَلًا اسْتِعْفَافًا عَنِ الْمَسْأَلَةِ وَسَعْيًا عَلَى أَهْلِهِ وَتَعَطُّفًا عَلَى جَارِهِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَجْهُهُ كَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ، وَمَنْ طَلَبَ الدُّنْيَا حَلاَلًا مُفَاخِرًا مُكَاثِرًا مُرَائِيًا لَقِيَ اللَّهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ

“আবু হুরায়রাহ্ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তি হতে বেঁচে থাকার জন্য, পরিবারের খরচ নির্বাহের উদ্দেশ্যে এবং প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণের লক্ষ্যে হালাল উপায়ে দুনিয়ার বৈধ সম্পদ অন্বেষণ করে সে আল্লাহ তায়ালার সাথে কিয়ামতের দিন এমনভাবে মিলিত হবে যে, তার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বৈধ উপায়ে মাল অর্জন করল বটে; কিন্তু গর্ব-অহংকার ও সম্পদের আধিক্য প্রকাশের নিয়্যাতে, সে আল্লাহ তায়ালার সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, তিনি তার ওপর ভীষণভাবে ক্রোধান্বিত হবেন।” (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান)

দুনিয়ার সম্পদ সন্তান-সন্ততি সবই চাকচিক্য ও ধুকার সরঞ্জাম মাত্র। বরং আখেরাতেই রয়েছে বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় সফলতা। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সে কথায়ই বুঝাতে চেয়েছেন। 

اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ

“তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হলো বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আজাব।” (সূরা হাদিদ : ২০) 


একজন বান্দা তার জীবনে তাই উপার্জন করবে যা পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর তার তকদিরে লেখা হয়েছে। শত চেষ্টা করেও এর অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। এই ধারণা যার অন্তরে বদ্ধমূল রয়েছে সে কখনো দুনিয়ায় অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যতিব্যস্ত হবে না। পক্ষান্তরে যার অন্তরে পরকালীন জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেয় সেই শুধু দুনিয়া 


লাভের জন্য ব্যস্ত থাকবে, এর থেকে সে আলাদা হতে পারবে না। হাদিসে বলা হয়েছে, 

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : مَنْ كَانَتْ نِيَّتُهُ طَلَبُ الآخِرَةِ ، جَعَلَ اللَّهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ ، وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ ، وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا ، وَهِيَ رَاغِمَةٌ ، وَمَنْ كَانَتْ نِيَّتُهُ طَلَبُ الدُّنْيَا ، جَعَلَ اللَّهُ الْفَقْرَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ ، وَشَتَّتَ عَلَيْهِ أَمْرَهُ ، وَلا يَأْتِيهِ مِنْهَا إِلا مَا كُتِبَ لَهُ

“আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেন, যে লোক (স্বীয় আমলে) পরকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়্যাত রাখে, আল্লাহ তার হৃদয়কে (মানুষ হতে) অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং তার অগোছালো কাজ-কর্মগুলো তিনি গুছিয়ে দেন এবং দুনিয়াবি সম্পদ তার কাছে লাঞ্ছিত হয়ে আসে। অপর দিকে যে ব্যক্তি দুনিয়া লাভের নিয়্যাত রাখে, আল্লাহ তায়ালা নিঃস্বতাকে তার চক্ষুর সম্মুখে করে দেন। (সে সর্বদা অভাব-অনটনকেই দেখতে পায়), তার কাজকর্ম এলোমেলো হয়ে যায়। অথচ সে ইহকালীন সম্পদের কেবল ততটুকুই পায় যতটুকু তার জন্য ধার্য রয়েছে।” (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমদ)


মানুষ দুনিয়ার সম্পদ লাভের জন্য সর্বদা ব্যস্ত থাকে অথচ দুনিয়ার সকল সম্পদ এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সবই অভিশপ্ত। তবে যেখানে আল্লাহর স্মরণ আছে, দ্বীনি ইল্ম আছে সেটা অভিশপ্ত নয়। এ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 

سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ  أَلاَ إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ مَلْعُونٌ مَا فِيهَا إِلاَّ ذِكْرَ اللَّهِ وَمَا وَالاَهُ وَعَالِمًا أَوْ مُتَعَلِّمًا

“আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সব অভিশপ্ত তবে আল্লাহর যিকির এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট সহায়ক অপরাপর আমল, আলিম এবং তালিবে ইলম ছাড়া।” (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) 


দারসের শিক্ষা 

১. বাস্তব জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝে কুরআন-হাদিসের ইলম অর্জনকে ব্যস্ততার তালিকায় প্রথম স্থানে রাখতে হবে।

২. ইলম অর্জনের তৃষ্ণা যাতে না মেটে সেই মানসিকতা নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। 

৩. দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনে মত্ত হয়ে আখেরাতকে যেন ভুলে না যাই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৪. জীবন ধারণের প্রকৃত প্রয়োজন পূরণের পরে বাকি সময় আল্লাহর দ্বীনের পথে ও জ্ঞানার্জনের জন্য অতিবাহিত করার চেষ্টা করতে হবে। 

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

Abu Sayed

- 2 years ago

ماشاءالله অত্যান্ত সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করছেন জাযাকুমুল্লাহ। আমাদের সর্বস্তরের সর্ব কাজে জ্ঞান অর্জন করা প্রথম লক্ষ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করি।

Ruhul Amin

- 9 months ago

মাশাআল্লাহ, জ্ঞানগর্ব আলোচনা।আজকাল আমাদের একটি ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন থাকলেও আমরা জ্ঞান অর্জন থেকে অনেক দূরে সরে গেছি।

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির