কিছু প্রতিষ্ঠা করতে হলে, হাতে নেতৃত্ব আসা জরুরি। এটা ছাড়া ভালো মানুষের সমাজ গড়া সম্ভব নয় এবং জালেমের জাঁতাকলে সবাইকে মজলুম হতে হয়। এজন্য কিভাবে নেতৃত্ব হাতে আসে সেটা জানা দরকার। বিশ্ব মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-এর জীবন থেকেই আমরা নেতৃত্বের শিক্ষা নেবো। আসুন কিছু উদাহরণের মাধ্যমে জেনে নিই, নেতৃত্ব কিভাবে হাতে আসে।
১. নবুয়তের পূর্বেই রাসূল সা. সততা ও বিশ্বস্ততা অর্জন করেছিলেন। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে, কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সময় হাজরে আসওয়াদ পাথর স্থাপন করা। সব গোত্রপতি চাচ্ছিল এই মর্যাদাপূর্ণ কাজটি তারা করুক। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হলে সবাই রাসূল সা.কে সমাধানকারী হিসেবে মেনে নেন।
রাসূল সা. সমাধানও করেছেন অত্যন্ত চমৎকার উপায়ে। তিনি চাদর বিছিয়ে সকল গোত্রপতিকে ওই চাদরের প্রান্ত ধরতে বললেন। এভাবে সবাই মিলে কাক্সিক্ষত স্থানে পাথরটি বয়ে আনলেন। এরপর রাসূল সা. নিজ হাতে পাথরটি যথাস্থানে বসিয়ে দিলেন। সম্ভাব্য একটা গণ্ডগোল থেকে সবাই রেহাই পেল।
এই যে রাসূল সা.-এর ওপর সবাই আস্থা রাখতে পারলো এটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে সবাইকে সম্পৃক্ত করে তিনি একটি সামাজিক সমস্যার সমাধান করেছেন। এটা নেতৃত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। আমার আপনার ওপর কি মানুষ আস্থা রাখতে পারে?
রাসূল সা.কে আলামিন নামে ডাকা হতো। আলামিন মানে বিশ্বস্ত। পাশাপাশি এটি একটি পরিভাষাও বটে। আলামিন হচ্ছেন, সেই যুগের ব্যাংকার। অর্থাৎ যাদের কাছে আমানত গচ্ছিত রাখা হতো। রাসূল সা.-এর কাছে লোকেরা তাদের সম্পদ গচ্ছিত রাখতো। এ কারণেও তাকে আলামিন বলা হতো।
এ ব্যাপারে রাসূল সা. প্রচণ্ড বিশ্বস্ত ছিলেন। এমনকি জুলুমের শিকার হয়ে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময়ও তিনি গচ্ছিত সম্পদ আলী রা.-এর জিম্মায় রেখে যান। আলী রা. সবার সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার পর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
এভাবে রাসূল সা.-এর ওপর আস্থা রেখেছিলেন ব্যবসায়ী খাদিজা রা.। তিনি যুবক মুহাম্মদকে তার ব্যবসার প্রতিনিধি হিসেবে বাণিজ্য সফরে প্রেরণ করেন। এই কাজে রাসূল সা. দারুণ মুনশিয়ানা দেখান। মুগ্ধ খাদিজা রা. নবীজিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। দারুণ বিষয়।
এ ছাড়া রাসূল সা. কিশোর বয়সে অর্থের বিনিময়ে মক্কার লোকদের ছাগল চরিয়েছেন। এই পশুপালনের মধ্যে নেতৃত্ব শেখার প্রাকৃতিক উপাদান আছে। আপনি যদি ছাপল ভেড়া চরাতে ধৈর্য ও সফলতা দেখাতে পারেন তাহলে মানুষকে নেতৃত্ব দেওয়াও আপনার জন্য সহজ হয়ে যায়। অর্থাৎ দুই নেতৃত্বের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
বিশ্বস্ত রাখাল, আলামিন, ব্যবসার কর্মচারী, কাবা নির্মাণে গণ্ডগোল ঠেকানো ইত্যাদি পরিচয় রাসূল সা.কে কিভাবে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করেছে আপনি বুঝতে পারছেন? এখন তাহলে ভেবে দেখার বিষয়, আমাকে যারা চেনেন তারা আমার ওপর ভরসা করতে পারেন কি না? যদি না পেরে থাকে তাহলে এ ব্যাপারে উন্নতি করতে হবে।
২. ইরাকের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বাকিতে উট কিনেছিল আবু জেহেল। সেই অর্থ পরিশোধে সে গড়িমসি করছিল। অবশেষে উক্ত ব্যবসায়ী কাবাঘরে উপস্থিত কুরাইশ নেতাদের গিয়ে ঘটনাটি বলেন। আবু জেহেলের কাছ থেকে পাওনা অর্থ আদায়ের জন্য তাদের অনুরোধ করেন।
সাহায্যের পরিবর্তে কুরাইশ নেতারা তার সাথে মজা মশকরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা রাসূল সা.কে দেখিয়ে বলে, তার কাছে যাও তোমাকে সাহায্য করবে। কুরাইশ নেতারা এটা বলেছিলে ঠাট্টার ছলে। কারণ তারা ভালো করেই জানতো রাসূল সা.-এর সাথে ভীষণ শত্রুতা করতো আবু জেহেল। টাকা আদায় নিয়ে এই দুইজনের মুলাকাত নিশ্চয় নেতিবাচক হবে।
অথচ রাসূল সা. একটুও ইতস্তত করলেন না। তখনই উক্ত ব্যবসায়ীকে সাথে নিয়ে আবু জেহেলের বাড়িতে চলে গেলেন। বাইরে থেকে দরজার কড়া নাড়ালেন। আবু জেহেল জানতে চাইলো, ‘কে ওখানে’। রাসূল সা. বললেন, ‘আমি মুহাম্মদ। বেরিয়ে এসো।’ আবু জেহেলের মধ্যে কী হলো কে জানে! সে কালবিলম্ব না করে উক্ত ব্যবসায়ীর পাওনা পরিশোধ করলো।
প্রিয় পাঠক, একটু চিন্তা করুন। আমি আপনি কি পারবো শত্রুর কাছে কোনো প্রার্থীর প্রয়োজন পূরণের জন্য যেতে? নেতৃত্ব অর্জন করতে এই সাহস থাকতে হবে। এই আগ্রহ দেখাতে হবে। মানুষের সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে। শুধু আবু জেহেলের সাথে নয়, এমন ঘটনা ছিল অহরহ। রাসূল সা. নিজ দায়িত্ব মনে করে এগিয়ে যেতেন।
৩. আরবে তেমন কৃষি কাজ হতো না। তারা ছিলেন মূলত বাণিজ্যনির্ভর। এর ফলে তারা পরস্পরের কাছে ঋণগ্রস্ত থাকতেন। এ ছাড়া ছিল সুদি মহাজনদের দৌরাত্ম্য। এতে অনেককে দুর্ভোগে পড়তে হতো। তারা মারা গেলে তাদের পরিবারের অবস্থা হতো করুণ। স্বাভাবিকভাবে মুসলমানদের অনেকে ছিলেন ঋণগ্রস্ত।
এমতাবস্থায় রাসূল সা. এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে মরহুমের সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারদের। আর তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার।
কে এমন ঘোষণা দিতে পারবে? এটা চাট্টিখানি কথা নয়। এমন দায়িত্ব নেওয়া ব্যক্তিরাই নেতা হতে পারেন। রাসূলের এই সুন্নত এখনো বলবত আছে। মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব কেউ গ্রহণ করলে অতঃপর জানাজা পড়ানো হয়।
৪. নেতৃত্বের শর্তের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কী বলেছেন? দুনিয়ার পরীক্ষা পাসের চূড়ান্ত পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের কথা বলেছেন। তবে তিনি দুনিয়াতেও সফলতা দিতে চেয়েছেন। আর সেই সফলতা নেতৃত্বের সাথে সরাসরি জড়িত। সূরা নুরের ৫৫ নম্বর আয়াতটি লক্ষ করুন।
আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দেবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দিয়েছিলেন। তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন যা আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা শুধু আমার বন্দেগি করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরিক না করে। আর যারা এরপর কুফরি করবে তারাই ফাসেক।’ (সূরা নূর : ৫৫)
এখানে দুনিয়ায় সফলতার দুটি শর্তের কথা বলা হচ্ছে। এক হচ্ছে, ঈমান আনা। দুই হচ্ছে, সৎ কাজ করা। সুতরাং নেতৃত্ব অর্জন করতে হলে অব্যাহত সৎ কাজ করতে হবে। এখানে একটা বিষয় বুঝার আছে। সততা ও সৎ কাজ কিন্তু এক নয়। একজন মানুষ কিছু না করেও সৎ থাকতে পারে। কারণ সে অসৎ কাজ করে না। কিন্তু সৎ কাজ স্বপ্রণোদিত হয়ে করতে হয়।
৫. এই স্বপ্রণোদিত কাজের সুন্দর একটি উদাহরণ আছে সূরা নামলের ১৮ ও ১৯ আয়াতে। একবার জিন, মানুষ ও পাখিদের বিশাল বহর নিয়ে সুলাইমান (আ) পথ চলছিলেন। পথে এক উপত্যকায় পিঁপড়ার বাসা ছিল। বিশাল এই বহর আসতে দেখে একটি পিঁপড়া বলে ওঠে- “হে পিঁপড়েরা! তোমাদের গর্তে ঢুকে পড়ো। যেন এমন না হয় যে, সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে এবং তারা টেরও পাবে না।” পিঁপড়ার এই কথা শুনে ফেলেন সুলাইমান (আ)। তিনি পশুদের কথা বুঝতে পারতেন। আল্লাহ বলছেন, ‘সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসলো এবং বললো- হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো।’ লক্ষ্য করুন, পিঁপড়ার কথার মধ্যে কোনো আফসোস নেই, অভিযোগ নেই, করুণ পরিণতির জন্য বিলাপ নেই, দোষারোপ নেই। বরং পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করে সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছে। যাতে নিজের কমিউনিটিকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। এ জন্য সে নেতা। কারণ স্বপ্রণোদিত হয়ে করণীয় বুঝে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছে।
৬. রাসূল সা.-এর জীবনে স্বপ্রণোদিত হয়ে সাহায্য করার নমুনা রয়েছে প্রচুর। ড. মুহাম্মদ আরিফির লেখা এনজয় ইউর লাইফ বইটিতে প্রচুর উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে। বইটি পড়া যেতে পারে। সেখান থেকেই জাবের রা. এর ঘটনা উল্লেখ করছি। যাতুর রিকা অভিযান থেকে ফেরার সময় রাসূল সা. লক্ষ্য করলেন জাবের রা. কাফেলার পেছনে পড়েছেন। কারণ তার উটটি ছিল জীর্ণশীর্ণ। জাবের রা.কে সাহায্য করার নিয়তে তার সাথে গল্প জুড়ে দেন রাসূল সা.। যুবক জাবেরের সাথে বিয়ে শাদি নিয়ে আলাপ তুললেন। জাবের জানান, তার পিতা-মাতা ৯ বোন রেখে ইন্তেকাল করেছেন। বোনদের দেখাশোনার জন্য তিনি বয়স্কা এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেছেন। রাসূল সা. জাবের রা.-এর বাড়ির অবস্থা বুঝার জন্য বললেন, তোমার নববধূ স্ত্রী নিশ্চয় তোমার জন্য খাট সাজিয়ে রেখেছে। জবাবে জাবের বললেন, ইয়া আল্লাহর রাসূল! আমাদের বাড়িতে কোনো খাট নেই। আমরা সবাই মেঝেতে ঘুমাই।
এভাবে গল্পে গল্পে জাবেরের অবস্থা জেনে তার ব্যবহৃত উট কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। দরদাম শেষে জাবের ৪০ দিরহামে সেটা বিক্রি করতে রাজি হন। অতঃপর মদিনায় পৌঁছালে রাসূল সা. উটের দাম বাবদ ৪০ দিরহাম দেন এবং সেই সাথে তাকে উটটিও উপহার স্বরূপ ফিরিয়ে দেন। মূলত রাসূল সা. দরদাম করেছিলেন জাবেরের প্রয়োজন বুঝার জন্য।
তাই যেসব ব্যক্তি নিজের অভাব প্রকাশ করেন না তাদের প্রয়োজন বুঝে নিয়ে সাহায্য করা উচিত। এমন অনেক উদাহরণ থেকে আমরা সে শিক্ষা পাই।
৭. নেতৃত্ব অর্জনে চাই সম্মিলিত অংশগ্রহণ। একা একা কাজ করে নেতৃত্ব অর্জন করা যায় না। দরকার টিমওয়ার্ক। রাসূল সা. একা কাজ করেননি। নবুয়ত পেয়ে তিনি দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। যারা ইসলামের পতাকাতলে শামিল হয়েছিল তাদের তিনি নৈতিক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ফজর ও আসরের নামাজের পর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ছোট্ট নসিহত করতেন। শুক্রবার জুমার নামাজে সাপ্তাহিক নসিহত করতেন। এ ছাড়া ছিল ঈদের নামাজে বার্ষিক সম্মেলন। এগুলো ছাড়াও তিনি প্রায় প্রতিদিনই সাহাবিদের নিয়ে বসতেন। তাদের সাথে পরামর্শ করতেন। কাজ বুঝিয়ে দিতেন। খোঁজ নিতেন। রাসূল সা.-এর কাছে কেউ সাহায্যপ্রার্থী এলে ফিরিয়ে দিতেন না। সমাধানের জন্য বিভিন্ন সাহাবির কাছে পাঠাতেন। মানুষের একার হাতে সমাধান থাকে না। কারো না কারো সহযোগিতা নিতেই হয়। তাই নেতৃত্ব দিতে হলে পরিবার, ক্যাম্পাস, এলাকার সক্রিয় সদস্য হতে হবে। আগে অংশগ্রহণ অতঃপর নেতৃত্ব।
ছাত্রদের জন্য নেতৃত্বের চর্চা কেমন হতে পারে?
এখানে যা কিছু লিখেছি সেগুলো বিভিন্নজনকে বলে থাকি। শোনার পরে অনেকে মন্তব্য করে থাকেন, একটা ফান্ড তৈরি করা দরকার যেখান থেকে অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে হবে। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার যারা এধরনের সেবামূলক কাজ করবে। কিন্তু না। সেবামূলক কাজ প্রত্যেক মুসলমানকেই করতে হবে। তার পরিবার ও গণ্ডির নেতৃত্ব তাকেই দিতে হবে। আলাদা ফান্ড নয়, সামর্থ্যে যা আছে তা নিয়েই কাজ করতে হবে। কারণ রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি)
দেখুন তো, ছাত্রদের এই কাজগুলোর জন্য ফান্ড জরুরি?
১. রক্ত জোগাড় করে দেওয়া। ক্লাসের সব বন্ধু, ছাত্রাবাস ও এলাকার যুবকদের রক্তের তালিকা নিজের কাছে রাখা কি খুব কঠিন কিছু?
২. ফার্স্ট এইড ট্রেইনিং নেওয়া যেতে পারে। ছোট্ট এই দক্ষতা তাৎক্ষণাৎ বড় উপকার দিতে পারে।
৩. হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসের মেডিক্যাল সেন্টারের যাবতীয় তথ্য জানা থাকা দরকার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় থাকা এবং তাদের ফোন নম্বর রাখতে হবে।
৪. বাস, ট্রেন ও লঞ্চের সময়সূচি ও টিকিট সংক্রান্ত তথ্য জানা থাকলে তাৎক্ষণাৎ কিছু মানুষকে সাহায্য করা যায়।
৫. ক্যাম্পাসে আগত নতুন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ভর্তি পরীক্ষার্থীকে মেহমানদারি করতে হবে। থাকা, খাওয়া, অপরিচিত স্থানের যাতায়াত সম্পর্কে তথ্য দিলে তাদের জন্য খুবই উপকার হয়।
৬. এমনকি কারো মশারি টাঙিয়ে দিয়েও সারাজীবনের জন্য তার স্মৃতির মণিকোঠায় স্থান করে নেওয়া যায়।
৭. অনেকে নোংরা থাকে। এমন ব্যক্তিদের বিছানার চাদর ধুয়ে দেওয়া যেতে পারে। তাদের টেবিল গুছিয়ে দেওয়া যায়। তাকে একটি পরিষ্কার পানির বোতল উপহার দেওয়া যায়।
৮. অনেকে বিদেশ যেতে চায় কিন্তু পাসপোর্ট-ভিসার গাইডলাইন পায় না। বিদেশে চাকরি কেমন এবং কিভাবে কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হয় আপনার হয়তো জানা নেই। কিন্তু তাতে কী! পেশাদার ফার্ম বা ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন।
৯. ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। এগুলোর খোঁজ রাখলে ছোট ভাইদের সাহায্য করা যায়।
১০. যুব উন্নয়নের মতো কারিগরি প্রশিক্ষণ সারা বছরই হয়। শুধু খোঁজ রাখবেন আর খোঁজ দিবেন। দেখবেন মানুষ আপনাকেই খুঁজবে। বেশিরভাগ সহযোগিতার প্রকৃতি হচ্ছে তথ্য দিয়ে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া।
১১. ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থাকে। সেগুলোর সক্রিয় সদস্য হতে হবে। ওখানে সবাইকে লিড দিতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্শ্বসংগঠনে নেতৃত্ব দিলে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনেও দারুণ কিছু সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
এভাবে মানুষ যখন তাদের প্রয়োজনে আপনাকে খুঁজবে এবং আপনি তাদের সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবেন তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব আপনার হাতেই চলে আসবে ইনশাআল্লাহ।
সহযোগিতা হতে হবে নিঃস্বার্থ
এদিকে মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ালে করুণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। দেখবেন, লোকেরা তাদের প্রয়োজনের সময় আপনার খোঁজ করছে, কিন্তু আপনাকে আর মনে রাখছে না। আপনার দাওয়াতে সাড়া দিচ্ছে না। তার কাছে আপনি যখন সহযোগিতা চাইবেন আপনাকে চিনবেই না। এর সমাধান কী হতে পারে?
মূলত এর সমাধান নেই। আল্লাহ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষের কাছে প্রতিদানের আশায় যেন আমরা সহযোগিতা না করি। প্রতিদানের প্রত্যাশা করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে। আর চূড়ান্ত প্রতিদানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে হাশর পর্যন্ত। আল্লাহ বলছেন, ‘বেশি লাভের জন্য ইহসান করো না এবং তোমার রবের জন্য ধৈর্য অবলম্বন করো।’ (সূরা মুদ্দাস্সির : ৬-৭)
সুতরাং আমাদের ধৈর্যহারা হবার সুযোগ নেই। লেগে থাকুন। প্রতিদান আল্লাহ দিবেন ইনশাআল্লাহ। সংক্ষেপে যদি বলি, নেতৃত্ব অর্জন করতে হলে মানুষের সমস্যা সমাধানে আগ্রহী ও উদ্যোগী হতে হবে।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
আপনার মন্তব্য লিখুন