পৃথিবী এখন চরম হুমকির মুখে। বিশ্বব্যাপী চলছে পরিবেশ সঙ্কট। গত কয়েক বছরে পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিবেশবিজ্ঞানীদের করেছে আতঙ্কিত। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- “মানুষের কৃতকর্মের কারণেই জলে ও স্থলে ছড়িয়ে পড়ে বিপর্যয়, ফলে কখনো কখনো তাদেরকে কিছু কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রুম : ৪১)। মানবসৃষ্ট যান্ত্রিকসভ্যতার শুরু থেকেই প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্মম আঘাত হানা হচ্ছে। যুদ্ধংদেহি রাষ্ট্রগুলো নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে পরমাণু অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শন ও উন্নয়নের নামে নানাবিধ রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করে বিশে^র ধনী রাষ্ট্রগুলো প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। ভোগ লালসা চরিতার্থে বিবেকহীনরা দূষিত করছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বায়ু। ফলে পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটছে, যা আমাদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, বৃক্ষ আর বনভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার। প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্যকে করছে বিনষ্ট। খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, কর্মসংস্থান ইত্যাদির পরিমাণ বর্ধিত জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ভূমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষের তীব্রতা, ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃত্রিম সার ও কীটনাশকের। এতে বিনষ্ট হচ্ছে চাষযোগ্য ভূমির সঞ্জীবনী শক্তি, অন্যদিকে নতুন নতুন বসতি আর কলকারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে চাষযোগ্য ভূমি ও প্রতিদিন নদী, হ্রদ, সমুদ্রে মিশছে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্যদ্রব্য। মাটি, পানি, বাতাস এবং আমাদের চারপাশের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের ওপর বিষক্রিয়ার প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়ে উঠছে ভারসাম্যহীন, দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য।
পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব
পরিবেশ দূষিত হলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এর ফলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে। আর দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে মাটিতে পানির স্বাভাবিক স্তর অনেক নিচে চলে যাওয়ার ফলে উপরের স্তরের মাটি রসহীন হয়ে পড়ে। এতে গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে না এবং ফসলাদিও ঠিকমতো হয় না। ফলে খাদ্যাভাব দেখা দেয় এবং জীবজন্তুর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। বায়ুমণ্ডলের উপরে ওজোন স্তর বায়ুদূষণের ফলে ক্রমেই অধিক পুরু হয়ে যাচ্ছে। এভাবে সূর্যের তাপ ঠিকমত বিকিরিত হতে না পারলে পৃথিবীর স্থলভাগ অধিক উত্তপ্ত হয়ে উঠবে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় দুই মেরু প্রদেশের পুঞ্জীভূত বরফের স্তর গলে গিয়ে সারা বিশ্বে মহাপ্লাবন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি ১৮ মে ২০২২ যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট প্লানেটারি হেলথ জার্নালে ‘পল্যুশন অ্যান্ড হেলথ: অ্যা প্রোগ্রেস আপডেট’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষাক্ত বায়ু ও বর্জ্যরে দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। দূষণজনিত এ মৃত্যুতে বিশ্বে এখন বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এ তালিকায় প্রথম অবস্থানে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। গবেষণাটি সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) ও মিনিস্ট্রি অব এনভায়রনমেন্ট অব সুইডেন এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অন হেল্থ অ্যান্ড পলিউশন (গ্যাপ) ও পিওর আর্থ-এর সহযোগিতায় করা হয়েছে। এ গবেষণা প্রতিবেদনে মাটি, পানি ও বায়ুদূষণের কারণে মানবসমাজ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাবগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিভিন্ন প্রকার দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শুধু বায়ুদূষণের কারণেই সর্বাধিক এক লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হয়। দূষণজনিত মৃত্যুর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ পানিদূষণ। প্রতি বছর পানিদূষণে ৩০ হাজার ৮৭৪ জনের প্রাণহানি হয়। এ ছাড়া অন্যান্য দূষণজনিত মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিসা দূষণ। সিসা দূষণের কারণে দেশে ৩০ হাজার ৭৭৭ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পেশাগত দূষণে মারা যান ১০ হাজার ২৮৯ জন।
২০১৮ সালে পরিবেশ দূষণজনিত মৃত্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিল আমাদের বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ‘এনহ্যান্সিং অপরচুনিটিস ফর ক্লিন অ্যান্ড রিজেলিয়েন্ট গ্রোথ ইন আরবান বাংলাদেশ : কান্ট্রি ইনভায়রনমেন্টাল অ্যানালাইসিস-২০১৮’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি ঢাকা, পাবনা ও কক্সবাজার শহরে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ঢাকার হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ শহরে পারিপার্শ্বিক বায়ু দূষণজনিত কারণে মারা যান প্রায় সাড়ে ৬ হাজার এবং আবাসস্থলের বায়ুদূষণে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ। এ ছাড়া পানি, স্যানিটেশন এবং অস্বাস্থ্যগত বিষয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাবে মারা গেছেন প্রায় এক হাজার, পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ২০০ জন, পানিতে আর্সেনিকের কারণে ২ হাজার ২০০ এবং পেশাগত দূষণে মারা গেছেন প্রায় ৪ হাজার ২০০ ব্যক্তি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ৪০ বছরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া নন-কমপ্লায়েন্স শিল্প ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে শহরের বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের পানি দূষিত হচ্ছে। বাংলাদেশে পরিবেশের মারাত্মক সমস্যাগুলোর অন্যতম বায়ুদূষণ। শহরে বায়ুদূষণের প্রধান দুটি উপাদান হলো শিল্পকারখানা ও যানবাহন। বায়ুদূষণের উপাদানগুলো মূলত ধূলিকণা, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, কার্বন মনোঅক্সাইড, সিসা ও অ্যামোনিয়া। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপক হারে নিঃসরণ ঘটছে। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠী তারা সিসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে (আইকিউ) ও স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় বলা হয়, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দেশজুড়ে বায়ুদূষণ বেড়েই চলছে। জনসংখ্যা দিয়ে বায়ুদূষণ বিবেচনা করলে ২০২২ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত বায়ুর দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ; বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হচ্ছে এখন বিশ্বের ১ নম্বর দূষিত নগরী।
বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের কিছু বাস্তবতা
নদীমাতৃক বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর জীবন স্বভাবগত কারণেই মানুষকে পরিবেশপ্রেমী করে গড়ে তুলেছে। কিন্তু মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক চাহিদার তুলনায় অতি ঘনবসতি ও দুর্যোগপ্রবণ এই লোকালয় বিভিন্ন কারণে দূষণের শিকার হচ্ছে। যেমন-
১. অতিরিক্ত বাস্তুসংস্থান : মানুষ তার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত বাস্তুসংস্থান বৃদ্ধি করছে। এ কারণে বাংলাদেশে মুক্তাঞ্চল ও বনভূমির পরিমাণ কমছে। ফলে বন ধ্বংস করে এবং জলাভূমি ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘরবাড়ি।
২. রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে জমিতে ব্যাপক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে মাটির দূষণ ঘটছে এবং জমির গুণ নষ্ট হচ্ছে। এই সব রাসায়নিক উপাদান বৃষ্টিতে ধুয়ে নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে গিয়ে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।
৩. শিল্পকারখানার দূষণ : বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানার অবস্থান নদীর তীরে। এসব কলকারখানা থেকে নিঃসৃত তরল রাসায়নিক বর্জ্য পানিকে কেবল দূষিত করছে না, আমিষের অপার ভাণ্ডার মাছের বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করছে ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
৪. বন ধ্বংসকরণ : পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশে মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ সরকারি হিসাবে ১৬ শতাংশ হলেও বাস্তবে রয়েছে ৯ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতি বছর উজাড় হচ্ছে ১.৪ শতাংশ। ফলে ভূমিক্ষয়ের মাত্রা বাড়ছে, বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশের গড় তাপমাত্রা ক্রমেই বেড়েই চলছে।
৫. টিউবওয়েল স্থাপন : সাম্প্রতিক কালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, গভীর ও অগভীর টিউবওয়েল স্থাপন ও ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে চলে যাচ্ছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট বাড়ছে। প্রকট হচ্ছে পানিতে আর্সেনিক দূষণের সমস্যা।
৬. আবর্জনা সমস্যা : শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণ এবং পরিকল্পিত ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান না থাকায় যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। এসব ময়লা আবর্জনার পচা গ্যাস বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে।
৭. ভূমির অপর্যাপ্ততা : পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরি করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শহরের ভাসমান মানুষ ও বিপুল বস্তিবাসীর চাপেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণরোধে আমাদের করণীয়
শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ গঠন ও সুন্দর জীবনগঠনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি ইসলাম অনেক গুরুত্ব প্রদান করেছে। পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে খাল-বিল, পুকুর- ডোবা, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার রাখা অপরিহার্য। রাসূল সা. এ বিষয়ে ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দূরীভূত করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ।” অন্যত্র তিনি সা. বলেছেন, “তোমরা অভিশাপ পাওয়ার তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়া তলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাক।” মৃত শরীরের কোনো অংশ তিনি যত্রতত্র ফেলতেন না, কারণ তা একসময় শুকিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যেতে পারে। যা পুঁতে না ফেললে কোনো প্রাণী বা পাখির দ্বারা ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত করতে পারে। এজন্য রাসূল সা. রক্ত বা গোশত মাটিতে পুঁতে ফেলতেন বা পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিতেন। বায়ু দূষিত হয়ে একজনের রোগ অন্যজনের কাছে স্থানান্তর হয়। যেহেতু পরিবেশকে আমরা নিজেরাই দূষিত করি, সেহেতু পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য আমাদেরকেই সচেষ্ট হতে হবে। পরিবেশদূষণ প্রতিরোধের জন্য যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস পরিহার করে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করা, ইটের ভাটায় লম্বা চিমনি ব্যবহার করা, কারখানার বর্জ্য পদার্থ নদ-নদীতে না ফেলা, জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ওষুধ খাল-বিল বা নদীতে না ফেলার পাশাপাশি অধিক পরিমাণে গাছপালা লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৃক্ষরোপণ
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলীয় ক্যাডাররা অব্যাহতভাবে বনাঞ্চল দখল ও নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, নদী-নালা-খাল দখল করেই যাচ্ছে। ফলে দেশে পরিবেশ বিপর্যয় তো ঘটছেই সাথে সাথে ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। ফটো সেশনের জন্য কয়েকটি গাছ লাগিয়ে পত্রিকায় বড় আকারে সমাজসেবা দেখালেও যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে সে হারে গাছ লাগানো হচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশকে প্রতি বছরই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সামাজিকভাবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতি বছর প্রত্যেক জনশক্তিকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করে। তারা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই দায়িত্ব ভুলে যায় না। বিভিন্ন সময় গরিব ও মেধাবীদের সহায়তা, মেধাবী ছাত্রদের সংবর্ধনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, শীতবস্ত্র বিতরণ, পথশিশুদের পাশে থাকা এবং পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন প্রকার সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জুন ও জুলাই মাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- র্যালি, বৃক্ষনিধন রোধে জনসচেতনতা তৈরি, গাছের চারা বিতরণ (প্রত্যেক জনশক্তি ৩টি করে গাছের চারা বিতরণ করবে এবং একটি করে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করবে), মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন উপাসনালয়ের আশপাশে বৃক্ষরোপণ, ছাত্র ও জনসাধারণকে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধকরণ, স্কুল ছাত্রদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ, বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও স্টিকার লাগানোর মাধ্যমে তারা পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে।
পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজন সামষ্টিক উদ্যোগ
পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দেশের আপামর জনতাকে সামষ্টিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এই দায়িত্ব শুধু সরকার, কোনো সংস্থা বা ব্যক্তিবিশেষের নয়, বরং সকল বিশ্ববাসীর, প্রতিটি ব্যক্তির। যারা অজ্ঞতাবশত পরিবেশ দূষণে যুক্ত হচ্ছেন তাদের যেমন সচেতন করা প্রয়োজন তেমনি যারা অতি মুনাফার লোভে জেনে শুনেও পরিবেশের তোয়াক্কা করছেন না তাদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও পরিকল্পনার নীতি কর্মসূচির মধ্যে থাকতে হবে। বিরল সম্পদ রক্ষার জন্য বিকল্প উপায় উদ্ভাবন এবং পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার আজ তাই সময়ের দাবি।
বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তরুণদের ভূমিকা হতে হবে অগ্রগামী। কারণ তারুণ্য হচ্ছে জীবনের বসন্ত। এই সময়টি সাহসে বলীয়ান হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। তরুণরা যখন এগিয়ে আসে তখন শুধু নিজেদের জন্যই আসে না; বরং সমগ্র মানবতার জন্য এগিয়ে আসে। তাদের বুদ্ধিমত্তা, প্রতিভা, অপার সম্ভাবনা ও শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি গ্লোবাল ভিলেজের সমস্ত মানুষ একযোগে এগিয়ে এলে পরিবেশবান্ধব একটি পৃথিবী তৈরি হবে।
এই অনন্ত মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক ছোট্ট গ্রহে জীবের বেঁচে থাকার জন্য সকল উপাদান দিয়ে আল্লাহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। ইসলামের অনন্য পরিবেশ নীতির আলোকে বিশ্বের পরিবেশকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু সংরক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবীকে গড়তে হবে সুন্দরের আবাসভূমি। এজন্য আমাদের সবাইকে পরিবেশগত সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ ও নিরসনে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে হাতে হাত রেখে পরিবেশ রক্ষা করতে এগিয়ে আসি আর বলি- “সবুজে শ্যামলে উজ্জ্বল করি দেশ, বাঁচাই প্রকৃতি স্বপ্নের পরিবেশ।”
লেখক : সহকারী সম্পাদক, ছাত্র সংবাদ
আপনার মন্তব্য লিখুন