আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। গত সংখ্যার বিয়ষ ছিল ঈদুল আজহার শিক্ষা। আগামী সংখ্যার বিষয় “বিজয়ের ৪২ বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি”। লিখবেন ২৫০ থেকে ৩০০ শব্দের মধ্যে। A4 সাইজের ফুলস্কেপ সাদা কাগজের একপিঠে যথেষ্ট পরিমাণ ফাঁক রেখে লিখতে হবে। লেখার নিচে আপনার পূর্ণ নাম ও ঠিকানা থাকতে হবে। খামের উপরে অবশ্যই “পাঠক চিন্তা” কথাটি লিখে দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ফটোকপি বা নিউজপ্রিন্ট কাগজে লেখা গ্রহণযোগ্য হবে না। ই-মেইলেও লেখা পাঠানো যাবে : [email protected]। -বিভাগীয় সম্পাদক ঈদুল আজহার শিক্ষা
মানুষ তার প্রত্যেক জিনিসকে ভালোবাসে। ভালোবাসে তার সন্তান-সন্ততি, ধন-দৌলত, পরিবার-পরিজন ইত্যাদিকে। এই ভালোবাসার মাঝে সর্বপ্রথম যাকে ভালোবাসা প্রয়োজন তিনি হলেন আল্লাহ তায়ালা, কিন্তু মানুষ এ পৃথিবীর সভ্যতায় এতো ভালোভাবে মিশে গেছে যে, সে তার সষ্টাকে ভালোবাসার কথাও অনেক সময় ভুলে যায়। আবার অনেক সময় ভালোবাসার মাঝে চলে কৃপণতা। আর এ জন্য আল্লাহ ভালোবাসার মাঝে দিয়েছেন আনন্দ এবং আনন্দের মাঝে দিয়েছেন এক মহিমাপূর্ণ ত্যাগের সুখানুভূতি। তেমনি এক ত্যাগ হলো ঈদুল আজহা বা ঈদুল আজহার ত্যাগ। ঈদুল আজহাকে আমরা সাধারণত কুরবানির ঈদ বলে জানি কিন্তু মূলত যে ত্যাগ এর মাধ্যমে আমাদের সামনে এসেছে তা আমরা উপলব্ধি করি না বা করতে পারি না। আমরা ঈদুল আজহা এলে বড় বড় গরু জবেহ করার জন্য প্রস্তুত হই। কুরবানির ভিতর কী লুকায়িত আছে চিন্তা করি না। অথচ আল্লাহ বলেন, কুরবানির পশুর রক্ত, গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না, আমার কাছে পৌঁছায় তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা)। মুসলিম মিল্লাতের জন্য ঈদুল আজহা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ রমজান মাসের সিয়াম সাধনার পর ঐ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে তার শ্রেষ্ঠ সম্পদের মধ্য থেকে সে আল্লাহর জন্য ব্যয় করবে এবং আখিরাতে সে নাজাতের জন্য চেষ্টা করবে এটাই তো তার জন্য বড় পাওয়া। তাই ঈদুল আজহায় যে কুরবানি তা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করব। এটা যেন কারো গোশত খাওয়ার নিয়াতে না হয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমীন। মো: আবু হুরায়রা শরাফপুর আলিম মাদ্রাসা, বাগেরহাট
আমাদের সমাজে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় যে পশু জবাই হয় তাকে আমরা কুরবানি বলে থাকি। কিন্তু এর পেছনে একটি স্মরণীয় ও শিক্ষনীয় ইতিহাস রয়েছে যা আমাদরে সবার জানা। তাই আমি সে কথা উল্লেখ না করে কুরবানির শিক্ষা ও আমাদের করণীয় তুলে ধরছি। প্রকৃতপক্ষে কুরবানির থেকে কী শিক্ষা নেয়া উচিত তা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বর্ননা করেছেন এভাবে, “পরবর্তী কালের লোকদের জন্য এটাকে দৃষ্টান্তস্বরূপ স্থাপন করলাম।” [সূরা-সাফফাত, ৩৭ : ১০৮]। এখানে কুরবানির ঘটনার দ্বারা এ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো যে, ইব্রাহীম (আ) দুনিয়ার সকল কিছুর উপর অর্থাৎ নিজের সন্তানের জীবনের চেয়েও আল্লাহর হুকুমকে প্রধান্য দিলেন। আল্লাহ তায়ালার হুকুমের কাছে নিজের এবং তার সন্তানের জীবন তুচ্ছ করে দিলেন। তিনি নিজের সন্তানকে কুরবানি দিতে গিয়ে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা ইতস্ততা বোধ করেননি, কিংবা কোনো অজুহাতও তুলে ধরেননি। তিনি ইচ্ছে করলে বলতে পারতেন যে, (১) হে আল্লাহ আমার বার্ধক্য বয়সের একমাত্র সন্তানকে তুমি এ রকম কঠিন আদেশ থেকে আমাকে ক্ষমা কর কিংবা (২) হে আল্লাহ, তোমার দ্বীন প্রচারের জন্য ছেলে চেয়েছিলাম, তোমার দ্বীনের কাজের জন্য এ ছেলেটাকে বেঁচে থাকতে দাও কিংবা (৩) যেহেতু তিনি বিষয়টি স্বপ্নে দেখেছেন, তাই স্বপ্নের উপর ভিত্তি করেই সন্তান কুরবানি করা উচিত হবে কিনা কিংবা স্বপ্নের ব্যাখ্যা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সন্তান কুরবানি করা থেকে বিরত থাকার পথ খুঁজতে পারতেন। তিনি এরকম কোনো অজুহাত না তুলে আল্লাহ তায়ালার হুকুমের কাছে সন্তানের জীবনকে উৎসর্গ করে দিলেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ।” [আত তাগাবুন, ৬৮ : ১৫] হযরত ইব্রাহীম (আ) সে পরীক্ষাই দিলেন। মূলত মুসলমানদের জন্য এটাই আল্লাহ তায়ালা নিদর্শন হিসেবে স্থাপন করেছেন যে, তারা সকল অবস্থায় নিজেদের জান-মাল, সন্তান-সন্ততিসহ সকল কিছুর উপর আল্লাহর হুকুম পালন করাকে প্রাধান্য দিবে। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা ঘটনাটিকে মুসলমানদের দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কুরবানির ঘটনার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়, আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে যতই বিপদের ঝুকি থাকুক না কেন সে ঝুকি মাথায় নিয়ে তা পালনের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ তায়ালার হুকুম মানতে গিয়ে যদি সম্পদ হারানোর ভয় থাকে, যদি সন্তানের বা নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ারও আশঙ্কা থাকে, তাহলেও আল্লাহর হুকুম মানা থেকে পিছিয়ে আসা যাবে না, বরং সর্ব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার হুকুম মানার জন্য প্রস্তত হতে হবে। কোন ভাবেই পাশ কাটানোর মনোভাব, ওজর, আপত্তি বা অযুহাত তুলে হুকুম পালনের পথ থেকে সরে আসা যাবে না। ইব্রাহীম (আ) সন্তানের জীবন বাঁচানোর জন্য কোন রকম অযুহাত উত্থাপন করেন নাই রবং আল্লাহর হুকুমকেই প্রধান্য দিয়েছেন, এটাই হচ্ছে কুরবানির শিক্ষা। কিন্তু আমাদের সমাজের মধ্যে একদিকে মহা উৎসবে কুরবানি করা হয়, আর অন্যদিকে যখন আল্লাহ তায়ালার হুকুম প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোন বিপদের আশঙ্কা থাকে তখন পাশ কাটানোর জন্য নানা রকম অজুহাত দাড় করানোর চেষ্টা করা হয়। যেমন সমাজের মধ্যে যখন সৎ কাজ প্রতিষ্ঠা করা, অন্যায় কাজের নিষেধ করা, সুদি অর্থতৈনিক ব্যবস্থা অপসারণ করা, ইসলামী আইন-কানুন বাস্তবায়নের কথা বলা হয়, তখন এ কুরবানি করা মুসলমানরাই নানা রকম অজুহাত তুলে ধরেন। এ কুরবানি করা মানুষেরাই মসজিদের মধ্যে নামাজ আদায় করেন কিন্তু সমাজের মধ্যে ইসলাম বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে নানা অযুহাত তুলে ধরেন, কেউ কেউ আবার এটাকে দায়িত্ব হিসেবেই মনে করেন না। তাহলে আল্লাহর আদেশের কাছে অত্মসমর্পণ করা বলতে কী বুঝলাম? ইব্রাহীম (আ) সন্তান উৎসর্গ করা থেকে আমরা কী শিক্ষা গ্রহণ করালাম? মূলত কুরবানির আসল শিক্ষা হচ্ছে যে আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালনের জন্য কোন রকম ওযর আপত্তি বা অযুহাত তুলে না ধরে যে কোন অবস্থায় তৈরি থাকতে হবে, তাতে যত বড় আত্মত্যাগের প্রয়োজন হোক না কেন। আসুন আমরা জীবনের সকল অবস্থায় যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে নামাজ রোজার মতো সমাজে ও রাষ্ট্রের মধ্যে আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য সচেষ্ট হই এবং বুঝতে চেষ্টা করি যে “নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও জীবনের যাবতীয় কর্ম এমন কি আমার মরণ পর্যন্ত বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহপাকের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। তার কোনো শরিক নাই এবং আমি এটাই আদিষ্ট হয়েছি, আত্মসর্মপণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।” [সূরা আনআম, ১৬২-১৬৩] আমিন তোফাজ্জল হোসাইন শিক্ষার্থী, ঢাকা ল কলেজ
আপনার মন্তব্য লিখুন