কৈশোরের বৈতরণী পার করেই তো মানুষের ঝলমলে তারুণ্যের বারুদমাখা এক জীবনের সূচনা হয়। দ্রোহ আর প্রবল-পরাক্রমী বিশ্বাসের স্ফুরণ পৃথিবীর প্রবল বাস্তবতা। রূঢ় সত্য। এর জ্বলন্ত নজির পৃথিবীর মানুষের সম্মুখে স্পষ্ট হয়ে জ্বলছে। যারা দ্বীনকে মুকুলেই ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে, তারা জীবিত নয়। তবে, তাদের আদর্শের উন্মাদ উত্তরসূরিরা পৃথিবীর জমিনে আজো দাপটের সাথে দাপিয়ে বেড়ায়! তাদের মিথ্যের মিসাইল আজো আক্রমণ চালায় সত্যের মশালবাহক মু’মিন-মুসলিমদের দেহ-মন-মগজে। মুমিনদের ভূখণ্ডগুলো, ইসলামের পবিত্র ভূমিগুলো আজো হায়েনাদের হিংস্র হামলায় রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত।
হিংস্র হামলার জ্বলন্ত নজির
ওদের হিংস্র-হামলার জ্বলন্ত প্রমাণ পাওয়া যায় ইরাকের আবু-গারিব কারাগারে, গুয়ান্তানামোবের বন্দিশালায়, ফিলিস্তিনের শহীদি ঈদগায়। এই তো, এই বছরের জানুয়ারিতেই ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলিমদের ওপর বিমান হামলা চালানো হয়েছে। সুকৌশলে ইসলাম বিদ্বেষ ও নাস্তিকতা ছড়ানো প্রথম আলো পত্রিকার ২৭ তারিখের নিউজেই আসছে যে, ২৬ তারিখ রাতেই ৯ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে দীর্ঘ ৫৬ বছর থেকে নিয়মিত আল-আকসার অধিবাসী মুসলিমদের খুন করে আসছে বেদ্বীনদের উত্তরসূরি-বন্ধু জাতি অভিশপ্ত ইয়াহুদিরা। শুধু ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই বর্বর ইসরাইলি সেনা নামক গুণ্ডাবাহিনী পশ্চিমতীরে ১৫০ জনের মতো মজলুম ফিলিস্তিনি-মুসলিমকে হত্যা করেছে। শুধু ইয়াহুদি সেনারাই নয়, সাধারণ ইহুদিরাও নিজেদের বসতি থেকে দলবদ্ধভাবে বের হয়ে স্থানীয় মজলুম-মুসলিমদের বাড়িতে, দোকানে, গাড়িতে আগুন দিয়ে সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। পাথর-গুলি ছুড়ে পাখির মতো মানুষকে খুন করে। (ইত্তেফাক, ২ মার্চ ২০২৩, ১১:০৮)
কেবল ফিলিস্তিনই নয়, ওদের হিংস্রতা আর অমানবিকতায় সিরিয়া আজ মৃত্যুপুরী, মিয়ানমারের বয়ে যায় রক্তনদী। ওদের হিংস্রতার জ্বলন্ত সাক্ষ্য পাওয়া যায় আফগানের দুর্গম-গিরিতে, কাশ্মিরের অলিতে-গলিতে। এবং তাদেরই স্থানীয় দোসরেরা প্রতিটি মুসলিম দেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আদর্শ অনুসরণ ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকারী আন্দোলন-সংগঠনগুলো এবং এর নেতৃবৃন্দের ওপর চালায় নির্যাতনের স্টিমরোলার। আমাদের এই প্রিয় স্বদেশও এই বর্বরতার ভয়াল থাবা থেকে বিমুক্ত নয়। আমাদের দেশের শহর-গ্রামের নির্ভীক সেনানীদের দিকে তাকালেও দেখবেন, তাগুতি শক্তি কিভাবে আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদদের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। কী ভয়ংকর মিথ্যার বেসাতি সাজিয়ে শহীদ নিজামী-মুজাহিদ-কামারুজ্জামান-কাদের মোল্লা ও মীর কাসেম আলীদের মতো প্রস্ফুটিত ফুলের মালাগুলোকে খুন করেছে, সেটার রাজসাক্ষী তো আমরাই।
যে হামলায় ঈমান যায়
দৈহিক আক্রমণ ও অস্ত্র-হামলার মহড়া নয় শুধু, বেদ্বীনেরা যুগ যুগ ধরে হানছে বুদ্ধিবৃত্তিক আঘাতও। ছলেবলে-কৌশলে বেকায়দায় ফেলতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করছে তাবৎ জগতের মুমিনদের। অস্ত্রের ঝনঝনানি, কলমের খচখচানি, ক্যামেরার কারসাজি; কিছুই বাদ রাখছে না তারা। অস্ত্রের আঘাতে কেবল রক্তঝরে, প্রাণ যায়। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক আঘাতে ঈমান ঝরে, নৈতিকতা নিঃশব্দে শেষ হয়। মুসলমানদের সন্তানেরাও তখন বাঁধনহারা বল্গাহীন জীবন-যাপন করে। এতেই সুখ পায় তারা। সুখ খোঁজে এসবেই। তাদের চলনবলনে তখন আর ঈমানের নূর বিচ্ছুরিত হয় না। বিশ্বাসের বারুদ বিস্ফোরণ ঘটে না কাজেকর্মে। মুসলমানদের সন্তানেরাই হারামে মজে থাকে। মানুষকে ধোঁকা দেয়। পাপাচারের সহযোগী হয়। দেদারছে জুলুমের জানালা-দরজা খোলে। সেখান থেকে জুলমাত ছড়িয়ে দেয় অন্যদের জীবনেও। জুলুমে জুলুমে বিষিয়ে তোলে মানুষের জীবনকে। নিভিয়ে দিতে চেষ্টা করে অন্যদের ঈমানের প্রজ্বলিত নুরকেও।
ঈমানদারদের ঈমানের কিরণচ্ছটাকে নিভিয়ে দেওয়ার হীন উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিখিত অবয়বে যে নালায়েক এই কাজ শুরু করে, সে হলো জন এফ দামেশকি (মৃত্যু : ৬৭৬ ইং)। এরপর আর থেমে থাকেনি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এই অসৎ হামলা। (প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ, পৃষ্ঠা-৪৬)। ইসলামকে ধ্বংস ও মুমিনদের ঈমানের দীপ্ত-প্রদীপকে নিভিয়ে দেওয়ার জন্যে রাসূল সা.-এর যুগে আবু আমের নামের এক খ্রিস্টান-পাদ্রী নিলো এক অভিনব উদ্যোগ ও পরিকল্পনা। সেই উদ্যোগ আর পরিকল্পনাটা সরাসরি সামরিক আগ্রাসন নয়। তার সেই উদ্যোগ ছিলো ইসলামের খোলস লাগিয়ে ইসলামকে ধ্বংস করা। সেটার সূত্র ধরে সে নির্মাণ করেছে মসজিদ। তৈরি করেছে গবেষণা-কেন্দ্র। আর সেই কেন্দ্র থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদির উসকানি। (প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ, পৃষ্ঠা-৪৫)। এভাবে মুসলমানদের ঈমান হরণ ও ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য যখন যেদিকে-যেভাবে পেরেছে বেদ্বীনেরা তাদের ভয়াল থাবা বিস্তার করেই গিয়েছে।
সবচেয়ে ভয়াল থাবা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক খাতে
শিক্ষাব্যবস্থায় আজ ইসলাম নেই। অবশ্য আগেও ছিলো না। আর এবারের পাঠ্যপুস্তক থেকে তো ইসলাম ও ইসলামি মূল্যবোধকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। ইসলামের ন্যূনতম চিহ্নটাও বরদাশত করা হয়নি। এমনকি মাদরাসার প্রথম-শ্রেণির বই থেকে ইসলামি পোশাক ও রাসূলের শিখিয়ে দেওয়া সর্বোত্তম সম্ভাষণ-সালামকে পর্যন্ত বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পৌত্তলিকদেরকে মহৎ করার কোনো কমতিই করেনি। বোরকা-হিজাবকে অপমান, বিজ্ঞানের মোড়কে দাড়িকে অপমান এবং বিবর্তনবাদের কুফরি শিক্ষা; কোনটাকে বাদ রাখা হয়েছে এবার?
মুসলিম সন্তানরা ইসলামকে একটা জীবন-বিধান হিসেবে শিখবে, সে ব্যবস্থা তো কখনো করাও হয়নি। এমনকি আল্লাহ-রাসূল এবং পরকালের জ্ঞানার্জন করবে, এর মূলেও এবার কুঠারাঘাত করা হয়েছে। মুসলমানিত্ব শেখাবার জন্য ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ নামক একটা বই আছে শুধু। বইটাতে দেওয়া শিরোনামের ভাবখানা আবার এমন যে, মনে হয় যেনো ইসলাম শুধুই ধর্ম। যে ধর্মে আবার নৈতিকতা নেই। না হয় কী শুধু শুধু ধর্ম আর নৈতিকতাকে আলাদা করা হয়েছে? অথচ নৈতিকতার সবচেয়ে বড়ো উৎস হলো ধর্ম। আর ইসলাম তো শুধু আচার-অনুষ্ঠানীয় ধর্ম নয়। এটা একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এর শুরুটাই হয়েছিল ‘ইক্করা’ (পড়ো) দিয়ে। একজন মুসলিম ‘খুলক্কুন হাসানাহ’ অর্জন করা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ মুসলিমই হতে পারে না। সম্ভব নয়। ইমাম রজব হাম্বলির (রহ.) একটা উক্তি আছে- “ভালো ব্যবহার হলো তাক্বওয়ার অংশ, ভালো ব্যবহার ছাড়া তুমি তাক্বওয়াবান হতে পারবে না।” গাছের সাথে ব্যবহার, মাছের সাথে ব্যবহার, পশু-পাখির অধিকার, স্ত্রী-পরিজন, পিতা-মাতা-পাড়াপড়শি; এক কথায় সবার সাথে সুন্দর আর উত্তম ব্যবহারের শিক্ষা-দৃষ্টিভঙ্গি, সবার অধিকার ও কর্তব্যের শিক্ষা তো ইসলামই দেয়। অথচ ওরা এখন মুসলমানদের সন্তানদের নৈতিকতা শেখায় দেড়পাতার দুইটা বইয়ের মাধ্যমে!
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে পরকীয়া, গুম-খুন-মাদকতা, অবৈধ অজাচার-অনাচার-পাপাচারকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। পারিবারিক কলহ,-কূটনামি হরহামেশাই শেখানো হচ্ছে। ভেঙে দিচ্ছে পরিবার প্রথা। টেরও পাচ্ছি না। বড়দের শ্রদ্ধা-ছোটোদের স্নেহ, অসহায়কে অন্নদান আর করছি না। হারিয়ে যাচ্ছে সকল সুনিপুণ-সুন্দর গুণাবলি। ফ্যাশন শোর নামে নগ্নতা, বিনোদনের নামে ছড়ানো হচ্ছে ভয়াল সব অশ্লীলতা। ক্লাবে ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা-সহ হাজারো ঈমানহরণের কুফরি কারসাজি। আধুনিকতার নামে আমরাও হচ্ছি লীন।
বাবার হাতে ছেলে খুন, ছেলের হাতে মা খুন, পরকীয়ার ফাঁদে পড়ে মাতাল হয়ে মা করছে নিজ সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন। এরকম দয়ামায়াহীন ভফঙ্কর জাহিলিয়াতগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে সমাজ-সভ্যতায়। এমন অসংখ্য ঘটনা নীরবে ঘটছে এই সমাজে-এই দেশে, এই পৃথিবীতে; যেগুলো স্পষ্ট করে খুলে বলা তো দূরের কথা, মনে আসলেই নিজের মগজকে খুবলে খুবলে খেতে ইচ্ছে হয়। মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে মন চায়! বেদ্বীনদের কারসাজিতে আজকের দুনিয়ায় এমন কিছু ভয়ানক কাণ্ড ঘটে, যেগুলো আমরা টেরও পাচ্ছি না হয়তো। পেলেও চুপটি মেরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবি। কাঁদি। চোখ ভাসাই। বুক ভাসাই। নীরব নেত্রে ব্যথিত হই। রবের নিকট অশ্রু ঢেলে দোয়া করি। এছাড়া উপোয় কী- এই ভেবে নিজেদের দায় বিমুক্ত রাখি!
মিডিয়ার মরণ-ছোবল
স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হবার পরবর্তী সময়ে “ক্লাশ অফ সিভিলাইজেশন” বইটা প্রকাশিত হয়। এটি প্রকাশিত হবার পর বদরের অবিশ্বাসীদের উত্তরসূরিরা কঠিন কশাঘাত হানা শুরু করেছে ইসলাম, ইসলামি সংগঠন ও এর নেতৃত্বের ওপর। মিডিয়া শুরু করলো মাতলামি। মরণ-ছোবল দিয়ে নেমে গেলো তারা। উদ্দেশ্য, ইসলাম খতম! মিডিয়ার মাধ্যমে রাতকে দিন, দিনকে রাত করা হচ্ছে নিমিষেই। হিরোকে জিরো, জিরোকে হিরো করা হচ্ছে নিত্যদিনই, নিয়ম করে। ঘটনা ঘটে একটা মিডিয়া বোঝায় ও বলে আরেকটা। পৃথিবীর কোন কোনায় কী অপরাধ হচ্ছে- দোষ মুসলিমদের। ইসলামি আন্দোলনসমূহের। টার্গেট হচ্ছে ইসলামিস্টদের ধরো, জেলে ভরো, মারো এবং ফাঁসি দাও। নতুবা তাড়িয়ে দাও মাতৃভূমি হতে। এরপর তাদের সব লুটেপুটে খাও। জালিম এভাবেই তাজা করে রাখে তার ভঙ্গুর মসনদটি। পৃথিবীর পাড়ায় পাড়ায় এর ভূরি ভূরি নজির বিদ্যমান, তাই দলিল নিষ্প্রোয়জন।
এদেশীয় একাত্তর-সময়-ডিবিসি চ্যানেলগুলো নিয়ম করে কিভাবে আলিম-ওলামা, ইসলামী নেতৃবৃন্দ এবং মাঠে-ময়দানের ওয়াজ-মাহফিল নিয়েও কী মহা-বিদ্বেষপূর্ণ তেলেসমাতি করে তা তো আমাদের সামনেই দ্বিপ্রহরের প্রখর সূর্যের মতো দীপ্তমান। চক্ষুষ্মান মানুষ সাক্ষী এসবের। কথিত জঙ্গিবাদের ধোয়া তুলে পিস টিভি বন্ধ। উচ্চভিত্ত-শিক্ষিত সমাজ ও তারুণ্যে সুবিশাল সাড়া জাগানো মিজানুর রহমান আজহারী দেশ ছাড়া। সব বিষয়েই কালপ্রিট মাস-মিডিয়ার কারসাজি। এসব তো এদেশীয় মানুষের সামনে জ্বলজ্বলে জ্বলন্ত নজির হিসেবে ফুটে আছে।
জিহাদ-সন্ত্রাসকে একাকার করে ফেলা, মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন, কুরআন-হাদিস-ইসলামি সাহিত্যসমূহকে জিহাদি বই নামে শব্দ-সন্ত্রাস। ধরতেও পারছি না আমরা। গোগ্রাসে গিলি সব। এটাই যেনো নিয়তি। অথচ জিহাদ কুরআনিক পরিভাষা। একটি ফরজ বিধান। জিহাদের তামান্না যে মুসলিমের থাকবে না, সে মুনাফিক। কারো বানানো কথা নয়, হাদিসে রাসূল সা.। (মুসলিম-৪৮২৫) অথচ জিহাদ শব্দে তাদের রাজ্যের অ্যালার্জি। এই অ্যালার্জিতে যেনো বদরের পরাজিত-পরাভূত মলিন বদনের প্রতিচ্ছবিই ভেসে ওঠে!
যৌনসুড়সুড়ির রমরমা রাজত্বে নারী আজ পণ্য
মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক হারে উস্কে দিচ্ছে অবাধ যৌনতা। আইটেম সং, অশ্লীল-সিনেমা, ইদানীং নাটকেও পাশ্চাত্য-দৃষ্টিভঙ্গি ও পোশাকের অনুকরণ। উঠতি তরুণ-তরুণীরা লুফে নিচ্ছে তা। কথায় কথায় বাঙালি চেতনার অগ্রসেনানীরা এক্ষেত্রে নীরব। যেনো কৌশলে বাঙালি পোশাকের উপদেশ দিয়ে পর্দার বিধান হতে বিমুখ করাটাই ওদের টার্গেট। না হয় এদেশীয় নাটক-সিনেমায়ও কেনো বাঙালি পোশাকের বিসর্জন? এটা নিয়ে কথিত বাঙ্গু-বুদ্ধিজীবীদের কোনো ভাবনা-চিন্তা, কথাবার্তাও নেই কেন? আসলে সরল সমীকরণ হলো এসব হ্যান-ত্যান, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, সাবান-মিনারেল ওয়াটার, গাড়ি- মোটরসাইকেলসহ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়াদিতেও নারীদের অশালীন-আপত্তিকর উপস্থাপনসহ ইত্যাদি করে কাজকর্ম দিয়ে যে নারীদের নিরেট পণ্যের মতো করেই ব্যবহার করতেছে, করছে চরিত্রহীন মানুষের কামনাবাসনার বস্তু ও চোখের খোরাক; তা বুঝতে আইনস্টাইন হওয়া জরুরি নয়। তবুও কেন যেন আমরা নামধারী মুসলিমরা বুঝি না। দোকানে একটা গাড়ি কেনা-বেচা হবে, সেখানে ঠিক কী কারণে গাড়ির সাথে অর্ধ-উলঙ্গ নারীকে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে? এমন সহস্র প্রশ্ন এবং এরচে’ জটিল প্রশ্নও করা যায় বা যেতে পারে। কিন্তু মিডিয়া তাদের হাতে। তাই বলারও সুযোগ নেই। থাকলেও সীমিত। এই যেমন আমার প্রশ্নগুলো নির্দিষ্ট একটা পরিসরেই সীমাবদ্ধ! এছাড়াও জাতীয় পত্রিকার পাতার শুরুতে-কর্নারে, বিনোদনের পাতায়-পাতায় নারীদেহের আবেদনময়ী উপস্থাপন তো আছেই! কারো কারো কাছে তো এসব প্রশ্ন করাটাও আজ অপরাধ। মগজধোলাই হয়ে নষ্টদের চাপিয়ে দেয়া চিন্তার সমীরণ মাথায় ঢুকে সেট হলে যা হয় আরকি!
অবাধ মিলনের উসকানি
এক শ্রেণির সাহিত্যিক-সাংবাদিক, লেখক-কলামিস্ট, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক নামক কালপ্রিট আছে অবাধ মিলনের উসকানিতে প্রবল প্রতাপে এগিয়ে। যে শিল্প দু’জনার, তাকে উপস্থাপন করা হচ্ছে গণ হারে-গণমুখী করে, প্রকাশ্যে-স্পষ্টভাবে। তাদের কলমের কালিই বের হয় না যৌনতার সুড়সুড়ে উপস্থাপন ছাড়া। সমাজ এসব কলমের দ্বারা শুদ্ধ হয় না নষ্ট হয়; ভাবার কেউ নেই।
তাদের কলমে নারীদেহের প্রতিটি খাঁজ-ভাঁজের রগরগে শৈল্পিক বর্ণনা। উঠতি বয়সী তরুণ-যুবকদের মাথা খারাপের জন্য যথেষ্ট। ওপেন- সেক্সকে যখন কলমের আছড়ে শিল্পের মর্যাদায় উপস্থাপন করা হচ্ছে তখন আর সমাজে শুধু পুরুষ ধর্ষক নয়, নারী ধর্ষকও অহরহ। ভুক্তভোগীরা বিষয়টা বোঝে ও জানে। সমাজ ও বিশ্বের পরতে পরতে এর ভয়ানক নজির ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
সাহিত্যের পাতায় পাতায়, নাটকের দৃশ্যে দৃশ্যে তো বিয়ে-বহির্ভূত প্রেমকে মহৎ করার জন্য অদ্ভুত কারিগরি করা হয়। প্রেম অবশ্যই মহৎ। বিয়ের পর। শুধু ইসলাম নয়, সমাজেও স্বীকৃত তা। অন্যান্য ধর্মেও তেমন। কিন্তু বিপত্তি হলো কালপ্রিট সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী নামক ইবলিস শয়তানের দাসদের নিয়ে। তারা বিয়ের বিরোধিতা করে, ১৬ বছরের কন্যার বিয়ে ঠেকিয়ে দেয়। কিন্তু ১৫ বছরের বালকের ধর্ষক হয়ে ওঠা কিংবা সেক্স-কাল্ট হয়ে ওঠাকে ঠেকানোর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। ১৩ বছরের কিশোরীর অবৈধভাবে গর্ভবতী হয়, ফলস্বরূপ করে গর্ভপাত। পার্কের ঝোপঝাড়ে, ময়লার নর্দমায় কিংবা ড্রেইনের মাঝে কতোশতো নিষ্পাপ বনি-আদমের নিথর দেহ যে কুকুর-বিড়ালের খাবার হয়ে পড়ে থাকে, তার ইয়ত্তা নেই। একটা সেভেন-এইটের মেয়ে বা ছেলে যখন নিজেদেরকে একে অন্যের কাছে উজাড় করে সঁপে দেয়, তখন কালপ্রিটগুলো নীরব। বিয়ে নিয়ে অবাধ চুলকানো। বুদ্ধিমানদের বুঝতে অসুবিধে হয় না, এদের উদ্দেশ্য কী, মতলব কী, এরা কার এজেন্ট! কাদের উত্তরসূরি!!
খুবই সূক্ষ¥ভাবে নাস্তিক্যবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবাদ-পুরুষ জাফর ইকবাল তো একবার বলেই দিলো বিয়ের আগে অন্তত তিন বছর প্রেম করে দেখতে। প্রেম করে বিয়েতে বোঝাপড়াটা উত্তম; হয়তো তিনি এটাই বুঝিয়েছেন। একজোড়া যুবক-যুবতী আবেগ আর যৌবনে ঠাসা যাদের মন-মনন, তারা তিন বছর প্রেম করে দেখবে এবং নিজেদের পবিত্র রাখবে; এরপর বিয়ে করবে! সত্যিই সেলুকাস! এদের লক্ষ্য কী-মতলব কী; বুঝতে বিরাট বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিঞ্চিৎ মগজ থাকাই যথেষ্ট। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এরা নন্দিত!
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চুইংগামের মতো চিবিয়ে খেতে চাওয়া, সমাজের জন্য চোখের সামনে মেয়ের বড়ো হওয়া দেখেও কিছু করতে না-পারার প্রকাশ্যে আফসোসকারী হুমায়ূন আজাদরা (তার বই নারী, পাক সার জমিন সাদ বাদ, আমার অবিশ্বাস ইত্যাদিতে লেখা) পায় প্রগতিশীলতার তকমা। এরা রাষ্ট্রের কাছে নন্দিত। আর পিসটিভি-জাকির নায়েক বন্ধ। আজহারী দেশ ছাড়া। আল্লামা সাঈদীদের মতো প্রস্ফুটিত ফুলেরা কাতরায় নিবিষ্ট কারাগারের অন্ধকার কুঠরিতে। তা হয়েছে আরো হুমায়ূন আজাদ-জাফর-ইকবাল-তাসলিমা নাসরীনদের জন্ম দেওয়া ও আদর্শিক সন্তানদের আন্দোলনে।
তবুও প্রেমের ঘাটতি নেই
আমাদের দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে শুরু করে মা-চাচি-খালা-ফুফী, বাপ-চাচা-মামা-খালু এবং বোনেরা পর্যন্ত বিয়ে পূর্ব তিন মাস কেন, তিন মিনিটও প্রেম করেননি। অথচ তাদের মাঝে ভালোবাসার বিন্দু-বিসর্গও ঘাটতি দেখিনি। ও’ল্লাহি! কথিত প্রগতিশীলদের তুলনায় তাদের ভালোবাসা অনেক উঁচু মানের! তাদের প্রেম-ভালোবাসা কোনো শিল্পীর শিল্পে ফুটিয়ে তোলা আসলেই অসম্ভব। তাদের শান্তি-স্থিরতা একে অন্যকে ছাড়া কল্পনা করাও দায়! সুখ-দুঃখে তারা একই ছাদের নিচে আমাদের নিয়ে করছে দুনিয়ার এক জীবন পার। তাঁদের একের প্রতি অন্যের সুবিশাল সেক্রিফাইসের বাস্তব সাক্ষী তো আমরা। এবং রয়েছে তাদের নিজেদের বুঝ-জ্ঞানানুযায়ী ভালো লেভেলের যথেষ্ট পরিমাণ বোঝাপড়াও। আলহামদুলিল্লাহ! অথচ জাফর ইকবালরা সুন্দর-সাবলীল সামাজিক এসব পবিত্র প্রেমের উদাহরণ না দিয়ে দেয় বল্গাহীন-অস্বচ্ছ-অপবিত্র ও অনিশ্চিত প্রেমের উপদেশ! যেখানে আছে শুধু একরাশ হতাশা আর হাহাকার। আমরাও এসবের পরিণতি না ভেবে নিজেদের সুবিশাল-সুন্দর ঐতিহ্যকে উপেক্ষিত আর বিবেককে ভূলুণ্ঠিত করে দেদারসে জড়িয়ে যাচ্ছি সেদিকে।
থেমে নেই সংগ্রাম
মহান মালিকের আহ্বান, ‘আর তোমরা দ্রুত বেগে ধাবিত হও তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে, এবং সেই জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান।’ (সূরা আলে-ইমরান : ১৩৩)। সেই আহ্বানে সাড়া প্রদান করে এতো শত-সহস্র বাধা-প্রতিবন্ধকতার পরেও বদরের উত্তরসূরি মর্দে মু’মিন-মুজাহিদদের প্রতিরোধ-প্রতিবাদ-সংগ্রাম থেমে নেই। মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত দীনের মশাল হাতে তাঁরা তীব্র গতিতে ছুটছে দুর্নিবার। সাধ্যানুযায়ী করছে সব। ঢেলে দিচ্ছে নিজেদের সর্বোচ্চটা। দাওয়াহ, সমাজসেবা, ইসলামের সুশীতল শিক্ষা, আদর্শ প্রচারের জন্য আগের চেয়ে বাড়ছে কলম সৈনিক। বাড়ছে দা’ঈ ইলাল্লাহ। ইসলামি সাহিত্যের মোটামুটি একটা সাড়া জাগানো জাগরণ। গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-নিবন্ধ, একেবারে সব দিকেই। আলহামদুলিল্লাহ! যতোটুকুন প্রয়োজন ততোটুক নয় হয়তো। তবে তাগুতের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যা হচ্ছে, সেটাও কম কিসের? সেক্যুলার সাহিত্যচর্চায় অসংখ্য ফেসবুকার, ব্লগার ও ইউটিউবার থাকলেও ইসলামের সুমহান আদর্শ, শলীন সাহিত্যের কোনো আন্দোলনই দৃশ্যমান গড়ে ওঠেনি অনলাইন জগতে। কিন্তু একতরফা সেসব দিনকাল এখন কেটে যাচ্ছে। সত্যের সংগ্রামী সাধকগণ এগিয়ে আসছে আল্লাহর দ্বীনকে প্রস্ফুটিত করবার সুতীব্র ইচ্ছে নিয়ে, আলহামদুলিল্লাহ!
কে ভাবতো হুমায়ূন আজাদের মতো একটা মুরতাদের ভণ্ডামোর বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব নিয়ে “অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়” রচিত হবে? কে ভাবতো নাস্তিকতার প্রবাদ-প্রতিম পুরুষটিকে কলমের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য ঝলমলে তারুণ্যের একজন কলম সৈনিক তৈরি হবে? তার ‘ভ্রান্তির বিলাসিতাকে’ কলমের কালিয়ে দিয়ে দুনিয়াবাসীকে দেখানোর মতো এসব তরুণ লেখক ভাইয়েরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার স্পেশাল করুণায় সিক্ত।
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ নামক একটা বই যে নতুন করে জাগরণের সূচনা করবে ইসলামি সাহিত্যের, সেই সাহিত্যগুলো আবার ওভার-স্মার্ট তরুণরা কোনো দল-দলীয় ও সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে থেকেও গোগ্রাসে গিলবে, ইসলামকে জানবে, জেনে প্র্যাকটিসিং মুসলিম হওয়ার চেষ্টা করবে; এটি ভেবেছিলো কি কেউ? গার্ডিয়ান পাবলিকেশনের আবির্ভাবের দ্বারা যে নব জাগরিত হবে ইসলামি প্রকাশনা জগৎ; তা কি মানুষকে ইসলামবিমুখ করা প্রকাশনা শিল্পের স্বত্বাধিকারীরা জানতো কখনো?
পরিপূর্ণভাবে জেনারেল লাইন থেকে একটা যুবক দীনের পথে ফেরার পর ‘অন্ধকার থেকে আলোতে’ উম্মাহর নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আসার জন্য অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবিরাম তথ্য সমৃদ্ধ লেখনী জাতিকে উপহার দিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন মনকে আলোকিত করে অবিশ্বাসের বিষদাঁত চূর্ণ করে কথিত মুক্তমনাদের ডাবল স্টান্ডার্ডিটির প্রকাশ করে দেবার প্রচেষ্টা করবে; এই ভাবনা কি কেউ করেছিলো কখনো? আল্লাহ কবুল করলে যা হয় আরকি।
২০১৯ সালে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলায় বুয়েটের দেশ-প্রেমিক ইসলামপ্রিয় ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করে বুয়েট থেকে আল্লাহর দ্বীনকে ফুৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের এমন নিকৃষ্ট খায়েশ পূরণ হয়নি আল্লাহর ইচ্ছায়। কারণ, এরপরের বছরেই দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়-দীপ্ত শহীদি কাফেলা ইসলামী ছাত্রশবির তাদের ইতিহাসে প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি পেয়েছে বুয়েট থেকে পড়ুয়া ইঞ্জিয়ার সিরাজুল ইসলাম ভাইকে। যে আবরারকে ইসলামি মূল্যবোধের জন্য খুন করা হলো, সেই বুয়েট থেকেই দেশের প্রধান ইসলামি ছাত্রসংগঠন তার প্রধান নেতৃত্ব উপহার পেলো। আল্লাহর অবারিত রহমত ছাড়া এ আর কী হতে পারে? এভাবে আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদদের রক্তের ফোঁটা যে জমিনে পড়বে, সে জমিনই একদিন তাওহিদের ভূমি হিসেবে আবির্ভূত হবে। চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে তাওহিদের স্নিগ্ধ ও শুদ্ধ পরশ। সেই শুদ্ধতার পরশে সিক্ত হবে অসংখ্য দিকভ্রান্ত তরুণ-প্রাণ। সেই তরুণেরাও আবার ইসলামের শাশ্বত সত্য-শুদ্ধ-সুন্দরের আহ্বান ইথারে ইথারে পৌঁছে দেবে, ইনশাআল্লাহ! আল্লাহর ঘোষণা হলো তিনি তাঁর নূরকে বিকশিত করবেনই। অবিশ্বাসীরা তা যতোই অপছন্দ করুক না কেন। (সূরা সফ : ১০৮)
তালেবান নিয়ে তেলেমেসমাতি ও মুসলিম বিশ্বে রক্তনদী
তালেবান নিয়ে তেলেসমাতি বিশ্ববাসী কি কম দেখেছে? তাঁদের নিজ দেশে নিজ সমাজে এসে তাঁদের ওপর দারোগাগিরি করে গেলো সাম্রাজ্যবাদী কুফফার গোষ্ঠীগুলো। অচেনা-অদেখা এক লাদেনের ওসিলায় পুরো আফগান তছনছ করে দিলো! করে দিলো অজস্র মানুষের জীবনকে বিপন্ন। লাখো-কোটি বনি আদমকে নির্বিচারে খুন আর জখম করা হলো। তাই তো কবি মুহিব খানের ভাষায় বলে উঠি, ‘ওরাই বিশ্ব সন্ত্রাসী মোস্ট ওয়ান্টেড শয়তান।” যদি শয়তান আর বিশ্ব-সন্ত্রাসী এরা না হয়, তাহলে আর কারা হবে? বিশ্বের পাড়ায় পাড়ায় কে ওদেরকে অধিকার দিলো কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ওভার সন্ত্রাস করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে? কই পেলো ওরা এই অধিকার যে অধিকারের বদৌলতে তারা মুসলিম ভূখণ্ডগুলোয় রক্তনদী বইয়ে দিচ্ছে? ড. আফিয়া সিদ্দিকীদের কী অপরাধ ছিলো, যে অপরাধে এই সাধবা নিওরোলোজিস্ট মুহসিনা মহিলাটিকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে কুরে কুরে শেষ করা হলো? ফেমিনিজম এক্ষেত্রে নিশ্চুপ, তিনি মুসলিমাহ। এটাই অপরাধ!
এই মুহসিনা মহিলা বিজ্ঞানীকে এতো অধিক পরিমাণেই নির্যাতন করা হয়েছে যে, তিনি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলেন। এতোটা পাষণ্ডতার পরিচয় দিয়েছে মার্কিন সেনা নামক হায়েনারা, তাঁর এক বছর বয়সী কোলের শিশুটিসহ তাঁকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান দাবি করেছেন “তাঁর তিন সন্তানের দু’সন্তানকেই মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আফগান কারাগারে খুন করে ফেলা হয়েছে।” (জাগোনিউজ২৪.কম, ১১ নভেম্বর ২০১৮)
বার্মায়ও বিমর্ষ মানবতা। নদী জলে সন্তান প্রসব, আগুনে পুড়িয়ে শিশু হত্যা, ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণ, বাবার সামনে মেয়েকে বিবস্ত্র-গণ ধর্ষণ, যেগুলো আইয়ামে জাহিলিয়্যাহকেও হারমানায়! সেখানে কেউ নেই তাদের পাশে দাঁড়াবার। মানবিক শূন্যতায় কাতরাচ্ছে মানবতা সেখানে। গুমরে গুমরে মরছে মানুষ। বর্মীয়-বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের পাশবিকতার জয়জয়কার সেথায়। এতো এতো জুলুম আর পাষণ্ডতায় অতিষ্ঠ হয়ে মুসলিমরা প্রবল দ্রোহে প্রতিরোধ গড়তে গেলেই তেড়ে আসবে কুফফার বাহিনী। সাপোর্টে থাকবে কালপ্রিট মিডিয়া। ছড়াবে তথ্য সন্ত্রাস। প্রশ্ন-প্রতিবাদ কিছুই করা যাবে না। করলেই জঙ্গি। চুপচাপ চাটুকারিতা করলে সঙ্গী। এই হলো মানবিকতা আর উদারনীতির ফেরিওয়ালাদের মুখ ও মুখোশ!
ওই যে তালেবানের বিষয়টা, এতোদিন জঙ্গি-সন্ত্রাসী, অথচ সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা আজ তাদের সাথে বৈঠক করলো। চুক্তি করলো। কালপ্রিট মিডিয়া নীরব। তাদের মার্কিন বাবারা চুক্তি করার পরপরই জঙ্গি তকমা নিমিষেই নিঃশেষ। যে মিডিয়া তালেবানকে বর্বর-নারী বিদ্বেষী অমানবিক প্রমাণে ব্যস্ত ছিলো, হুবহু সে সময়েই তমাল ভট্টাচার্য নামের এক মুশরিক তালেবানের সততা ও নৈতিকতার সাক্ষ্য মিডিয়া এসে দিয়ে গেলো। (দৈনিক দেশরূপান্তর: ২৩, আগস্ট, ২০২১) এ যেনো মহান আল্লাহর দেওয়া সেই ঘোষণার বাস্তব প্রমাণ। “আর তিনি দান করবেন তোমাদের বাঞ্ছিত আরও একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়।” (সূরা আস-সফ : ১৩)
স্বাগতম কারাগার স্বাগতম শাহাদাত
বাংলার জমিনে কুরআনের রাজ কায়েমের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সারির সকল নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হলো। জেল-জুলুমে নিষ্পেষিত করা হলো এবং হচ্ছে। অগণিত মজলুমকে আহত আর পঙ্গু করে দেওয়া হলো। ওরা ভেবেছিলো এসব করে এই কাফেলাকে বাংলার জমিন থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যাবে। কিন্তু যাঁকে যখনই গ্রেফতার করা হয়, পরবর্তীতে অন্য একজন এসে কোনো ধরনের ভয়-বাধাহীনভাবে শক্ত হাতে এই কাফেলার হাল ধরে দীনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সারা দেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অগণিত ভাইকে এতো এতো জুলুম করে-শহীদ করে একটা দিনের জন্যও কার্যক্রমকে বন্ধ করা যায়নি আল্লাহর রহমতে।
যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ইসলামি সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম, ইমাম ইবনে তাইমিয়া আলাইহি রহমাহ। ক্ষুদ্র জীবনে কতোবার যে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, তবুও ভড়কে যাননি। তাঁর কলমের কালি অবিরত চলেছিলোই। এই শতাব্দীর মুজাদ্দিদগণও তো প্রায় সকলই সানন্দে বাতিলের কারাগারকে আপন করেছেন। ফাঁসিতে ঝুলে বুলেটে ঝাঁজরা হয়ে লুটিয়ে পড়েছেন শাহাদাতের কোলে। পান করেছেন শাহাদাতের অমিয় সুধা।
আজো সারা-বিশ্বে একদিকে ইসলাম যেভাবে নির্মমতার শিকার, আবার অন্যদিকে দ্বীন হিসেবে ইসলামের প্রবল জয়যাত্রাও চলমান। দিকে দিকে মুসলিমদের ওপর এতো শতো বাধা-বিপত্তির টর্নেডো চলা সত্ত্বেও টলেনি মু’মিন। জানাচ্ছে কারাগারকে স্বাগতম। ফাঁসির মঞ্চকে অভিনন্দন। এই হলো মুমিনের নীতি। বাস্তব নজির তো আছে আমাদের চোখের সম্মুখেই।
সত্যের সুধায় যাঁদের মন-মনন শিহরিত, তাঁদেরকে কারগারের নিভৃত কুঠরি, ফাঁসির রজ্জু টলাবার রেকর্ড নেই। তাঁদের রক্ত সিঞ্চিত জমিনে দীনের পতাকা পতপত করে উড়ে। জমিনের মাটি ঊর্বর হয়। সতেজ হয়। সত্যের চাষের উপযোগী হয়। সে কারণেই শহীদ তিতুমীর, সাঈয়িদ আহমেদ বেরলভীসহ অসংখ্য মর্দে মু’মিন আমাদের প্রেরণার পিরামিড। বালাকোট-বাঁশেরকেল্লা আমাদের ঈমানী জজবার জীবন্ত মিনার। আমাদের রবের ঘোষণা হলো দ্বীন প্রচার-প্রসার-প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-সাধনায় জালিমের জুলুমের শিকার হয়ে প্রাণ গেলে শহীদ। শাহাদাতের মর্যাদায় সিক্ত হয় তাঁদের রূহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে রিজিক পেয়ে ধন্য হয় তাঁরা। তাঁদের রূহ জান্নাতে সবুজ পাখি হয়ে ওড়াউড়ি করে।
পেছনে ফেরার জন্য দরোজা রাখিনি
বিশ্বাসের বৃষ্টিতে সিক্ত কবি ফররুখ আহমেদের একটা কবিতাংশ দিয়ে লেখাটার ইতি টানতে চাই। যে অংশটা ইসলাম অনুসরণকারী প্রতিজন মু’মিন-মুজাহিদের জন্য যুগ যুগ হতে অনুপ্রেরণার ইমারত হিসেবে কাজ করবে, তাহলো- “শাহাদাত আরাধ্য আমার, অতীব্র তৃষ্ণার পানি/ পেছনে ফেরার জন্য কোনো দরোজা রাখিনি।” মুমিনরা সত্যিই কখনো পিছু হটে না। কারণ, মুমিনগণ আল্লাহর পথে জিহাদ করে। কাফিররা লড়াই করে শয়তানের পথে। আর শয়তানের চক্রান্ত অবশ্যই দুর্বল। (সূরা নিসা : ৭৬)
লেখক : ব্লগার, গবেষক ও কলামিস্ট
আপনার মন্তব্য লিখুন