সাঈদ নূরসি একজন প্রথিতযশা মুসলিম চিন্তাবিদ এবং পুনরুজ্জীবনবাদী, যার শিক্ষা (রিসালা-ই নূর) এবং আদর্শ আজও আধুনিক তুরস্কে অনুসরণ করা হচ্ছে। তাঁর জীবদ্দশায়, বিংশ শতাব্দীতে ইসলামী বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে অন্যান্য মুসলিম পণ্ডিত এবং চিন্তাবিদদের মতো তিনিও সমস্যার সম্মুখীন হন। যিনি সংগ্রাম ও হয়রানির জীবন যাপন করেছিলেন কিন্তু কখনো আক্রমণাত্মক আচরণ করেননি এবং কখনোই তাঁর ছাত্রদের আগ্রাসনের সাথে যুক্ত হওয়ার পক্ষে মত দেননি। ধর্মের প্রতি সরকারের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ধর্মহীনতার বিরুদ্ধে নূরসির দৃঢ় অবস্থান তাকে তুরস্কে ধর্মীয় আন্দোলনের প্রতীক বানিয়েছে।
I have always tolerated my own pain. However, the pain and suffering of the Muslim Ummah have always bruised so deeply. I feel as though the stabs directed the Muslim World are directed at my heart, first. That is my heart is often wounded. -Bediuzzaman Said Nursi
তিনি নাস্তিকতা, বস্তুবাদ, ঔপনিবেশিকতা ইত্যাদি শত্রুদের দ্বারা সৃষ্ট সমাজের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তার লেখার মাধ্যমে যা সমষ্টিগতভাবে ‘রিসালে-ই নূর’ নামে পরিচিত, যার শিক্ষাগুলো সবচেয়ে বড় এবং বরং প্রভাবশালী ধর্মীয় আদেশ। এই লেখাটি নূরসির চিন্তা, শিক্ষা এবং তাঁর জীবনের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা এবং তুরস্কের সমাজকে ধর্মবিরোধী ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্যকারী আদর্শ গঠনে নূরসির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে ইনশাআল্লাহ।
গত এক শতাব্দী ধরে তুরস্কের সমাজে সেক্যুলারিজম ও ইসলামের ভেতর যে রক্তরাঙা সংঘাত চলছে তারই গতি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে উঠে এসে সাঈদ নূরসি ‘spiritual revolution’ এ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন।
বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসি ১৮৭৭ সালে পূর্ব তুরস্কের বিতলিস প্রদেশের নূরস গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাঈদ নূরসির মাতার নাম ছিল নুরিয়া আর পিতার নাম ছিল মির্জা। মির্জা কৃষক হওয়া সত্ত্বেও গ্রামবাসী তার ধার্মিকতার জন্য তাকে সুফি মির্জা হিসেবে ডাকতো। নূরসি তাঁর মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ৮ বছর বয়সে মাদ্রাসায় এবং ১৪ বছর বয়সে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা সমাপ্ত করে ডিপ্লোমা অর্জন করে মোল্লা সাঈদ নামে পরিচিত হন।
বদিউজ্জামান ছোটবেলা থেকে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তিনি তার অসাধারণ স্মৃতিশক্তির বলে তর্কবিদ্যায় অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তিদের পরাজিত করার ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন এবং এ কারণে তিনি এত অল্প বয়সে তার মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বদিউজ্জামান-যুগের বিস্ময়’ উপাধি লাভ করেন।
নূরসি প্রথমে তিল্লো ভ্রমণ করার পর মারদিনে আসেন। এখানে এসে নূরসি গভর্নরের প্রাসাদে বসে দুই বছর অধ্যয়নে ডুব দেন। এতদিন পড়াশুনা সুন্নাহকেন্দ্রিক থাকলেও এখানে এসে তিনি ইলমুল কালাম ও বিজ্ঞান পড়তে শুরু করেন। কারণ তিনি উপলব্ধি করেন আধুনিক বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী চিন্তার কারণে কুরআনের বিরুদ্ধে যে সমালোচনা আসছে তার মোকাবেলার জন্য নতুন কৌশল ও ইলমুল কালামের পুনঃমূল্যায়ন প্রয়োজন। ভ্যানের গভর্নরের দাওয়াত পেয়ে তিনি বিতলিস ত্যাগ করেন এবং এখানে ১৫ বছর কাটিয়ে দেন। এ সময় তার বয়স ছিল ২০।
ছোটবেলা থেকেই বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি বদিউজ্জামান একটি সহজাত অসন্তোষ প্রকাশিত হতো, এমনকি বড় হওয়ার পর তিনি এর সংস্কারের জন্য ব্যাপক প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলেন। এই প্রস্তাবগুলোর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় বিজ্ঞান এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয়ে যৌথ শিক্ষা চালু করা, যা সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে “মাদ্রাসাতুজ-জোহরা” নামক একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হবে। ১৯০৭ সালে এই উদ্দেশ্যে ইস্তাম্বুলে গিয়ে তিনি দেশের বিখ্যাত মন্ত্রী, আযহারের গ্র্যান্ড মুফতিসহ আরো অনেক স্কলারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আযহারের শায়খ উনাকে উসমানিয়া খিলাফাতের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “উসমানী খেলাফাত ইউরোপের দ্বারা গর্ভবতী, শিগগিরই সে একটি ইউরোপীয় রাষ্ট্রের জন্ম দেবে।” যদিও পরবর্তীতে তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য দুবার তহবিল পেয়েছিলেন এবং ১৯১৩ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধ এবং পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে এটি কখনই সম্পূর্ণ হয়নি।
১৯১১ সালে ৩৪ বছর বয়সে তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমাইয়া জামে মসজিদে শতাধিক আলেম ও দশ হাজার মানুষের সামনে তিনি তখনকার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে একটি কালজয়ী খুতবা প্রদান করেন। যা ‘খুতবায়ে শামিয়া’ নামে পরিচিত। এখানে তিনি ছয়টি বিমারের কথা বলেন।
রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সময় বদিউজ্জামানকে ১৯১৬ সালের মার্চ মাসে বন্দী করা হয়, ১৯১৮ সালের প্রথম দিকে পালিয়ে যাওয়ার আগে দুই বছর রাশিয়ার “কোস্তরমা” বন্দিশালায় কাটান এবং ওয়ারশ, বার্লিন এবং ভিয়েনা হয়ে ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন।
তিনি হানাদার রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে ককেশীয় ফ্রন্টে মিলিশিয়া বাহিনীকে যুদ্ধের কমান্ডে ছিলেন, যার জন্য তিনি পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘যুদ্ধপদক’ লাভ করেন। তাঁর লোকদের মনোবল বজায় রাখার জন্য তিনি ক্রমাগত গোলাবর্ষণের মুখেও নতি স্বীকার করেননি। এবং শত্রুর অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ সহ্য করে ঘোড়ায় আরোহণ অবস্থায় তার খ্যাতনামা কুরআনের ভাষ্য, ‘ইশারাতুল ইজায’ রচনা করেন।
তৎকালীন ধর্মীয় পণ্ডিতদের চর্চার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বদিউজ্জামান নিজেই প্রায় সকল ফিজিক্যাল ও ম্যাথম্যাটিক্যাল বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছিলেন ও আয়ত্ত করেছিলেন এবং পরবর্তীতে দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে এইভাবেই ইসলামী ধর্মতত্ত্বের পুনঃজাগরণ সম্ভব এবং এর মাধ্যমে সফলভাবে কুরআন ও ইসলামের আক্রমণকারীদের জবাব দেওয়া যাবে।
সময়ের পরিক্রমায়, ভৌত বিজ্ঞান মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যা পশ্চিমাদের অগ্রগতির তুলনায় সরাসরি অটোমান পতনে অবদান রেখেছিল। উনিশ-বিশ শতকের গোড়ার দিকে, ইউরোপ ইসলামী বিশ্বের ওপর আধিপত্য অর্জন করার পাশাপাশি তা বিস্তারের প্রচেষ্টায়, বিজ্ঞান এবং বিশেষ করে অগ্রগতির নামে কুরআন এবং ইসলামকে আক্রমণ করছিল, যা তাদের জিঘাংসাকে-ই ফুটিয়ে তুলেছিল।
সাম্রাজ্যের মধ্যেও একটি সংখ্যালঘু কীট ছিল যারা পশ্চিমা দর্শন ও সভ্যতা গ্রহণের পক্ষে ছিল। বদিউজ্জামানের সমস্ত প্রচেষ্টা ছিল বিজ্ঞান এবং অগ্রগতির সাথে সঙ্গতি রেখে এগিয়ে গিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যদের মিথ্যা অপবাদের জবাব দেওয়া। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সেক্রেটারি ফর কলোনিজ গ্ল্যাডস্টোন যখন ঘোষণা দিলেন, ‘so long as the Muslims have the Quran, we shall be unable to dominate them. We must either take it from them, or make them, loose their love of it’। জবাবে সাঈদ নূরসি বলেন, ‘ও should prove and demonstrate to the world that the Quran is an undying, inextinguishable sun’। তিনি বিশ্বাস করতেন, কুরআনই প্রকৃত অগ্রগতি এবং সভ্যতার উৎস। আর তিনি জাতিকে পাশ্চাত্যের নোংরা সংস্কৃতি থেকে বাঁচাতে গিয়ে ‘রিসালা-ই নূর’ লিখে তার পুরোজীবন ব্যয় করেছেন।
অটোমানদের পরাজয় পর্যন্ত নূরসি নিজেকে পরিচয় করিয়েছেন old said-পুরাতন সাঈদ হিসেবে। অটোমানদের ধ্বংসাবশেষের ভিতর দিয়ে জন্ম হলো ঘবি New said-নতুন সাঈদ। ইস্তাম্বুলে অবস্থানকালে একদিন নূরসি হযরত আবু আইয়ুব আনসারি রা.-এর কবরস্থানে যান। এসময় তিনি আস্তে আস্তে রাজনৈতিক, সামাজিক কৌশল ও কার্যক্রম থেকে পশ্চাৎপসারণ করেন। বসফরাসের উপকূলে সারিয়ার গ্রামের নির্জনতায় একদিন একান্ত মনে কুরআন শরিফ পড়ার পর তিনি আবদুল কাদের জিলানির ‘ফাতহুল গায়েব’ ও শেখ আহমদ সিরহিন্দির ‘মাকতুবাত’ পড়েন। এসব পঠনে তার মনে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি হয় যা তাকে পরবর্তীকালে রিসালায়ে নূর লিখতে উদ্বুদ্ধ করে।
নূরসির উপর তুর্কি সরকারের নিষ্ঠুর, অমানবিক ও হৃদয়হীন নির্যাতনের কারণে জীবনের শেষ পর্যন্ত তাকে সংগ্রাম করে যেতে হয়। তাকে তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে নির্বাসন, গৃহবন্দী, নজরদারির মধ্যে রাখা হয় এবং শেষের ৩৫ বছরে মিথ্যা অভিযোগে তাকে চারবার জেলে যেতে হয়। ১৯২৫ সালের প্রথম দিকে পূর্বদিকে একটি বিদ্রোহ হয়েছিল যেখানে বদিউজ্জামান কোন ভূমিকা পালন করেননি, কিন্তু এর ফলস্বরূপ পশ্চিমাঞ্চলীয় আনাতোলিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল নূরসিসহ আরো কয়েক শতকে।
এ সময়েই তিনি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ‘রিসালা-ই নূর’ লিখে যান। নূরসির চিন্তা ভাবনার বিশ্লেষক ইব্রাহীম আবু রাবী রিসালায়ে নূরের ৯টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন।
বারলায় এসেই তিনি মূলত রিসালায়ে নূর লিখায় হাত দেন। এর আগে তিনি ‘নূরুন ইলিক কাপলার’ নামক একটি বই লিখেন। আর এটাকে রিসালায়ে নূরের ভূমিকা বলা যেতে পারে। নূরসি মৃত্যু পর্যন্ত ১৩০টি অধ্যায়ে রিসালায়ে নূর লিখে শেষ করেন। রিসালায়ে নূর লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ জনতাকে ঈমানের আলোয় আলোকিত করে সেক্যুলারিজমকে হোঁচট খাওয়ানো।
তিনি আশা করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে তিনি এমন একটি তাফসির রচনা করবেন যাতে ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করবেন। এ তাফসির ৮০ খণ্ডে সমাপ্ত করার কথা ছিল। কিন্তু পরে তিনি ‘রিসালা-ই নূর’ লিখায় মনোনিবেশ করেন।
রিসালায়ে নূর লেখার অপরাধে ১৯৩৪ সালে নূরসিকে ইসকেশির আদালতে তোলা হয় প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তার সাথে আরো ১৫ জনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। নূরসি কুরআনের পক্ষে তার আত্মপক্ষ সমর্থন করে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘The Quran uncovers the talisman of existence, its scope embraces the entirety of being. How then could religion be made the tool of the narrow and limited sphere of politics? It would be like confining the ocean in jar.’
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নূরসি কাস্তমনু শহরে বসবাস শুরু করেন। পুলিশের নজরদারির পরও তার অগণিত ভক্ত রিসালায়ে নূর প্রচার-প্রসারের কাজ করে। রিসালা পশ্চিম আনাতোলিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৩ সালে সাঈদ নূরসিকে পুনরায় ডেনিজেলির আদালতে নেওয়া হয়। এবারও সেই পুরনো অভিযোগ। রিসালার কপিগুলো আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পাঠানো হয়। আঙ্কারা থেকে অভিযোগ আসে এটি পুরোপুরি ধর্মীয় রচনা এবং এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। শেষে ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। এমনকি তাঁকে বিষপ্রয়োগসহ বিভিন্ন উপায়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
একই অভিযোগে নূরসিকে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় বারের মতো আফিয়নের আদালতে তোলা হয়। রিসালার প্রচারকারী তার নিকটতম ১৫ জন সঙ্গীকেও গ্রেফতার করা হয়। এবার ২০ মাস পর তিনি মুক্তি পান। নূরসি একবার বলেছেন, ‘প্রতিটি জেলখানাকে তিনি ইউসুফের মাদ্রাসায় পরিণত করতেন।’
১৯৫০ সালে আদনান মেন্দারেস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে ইজমিরে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন,... this country is Muslim and will remain Muslim. All the requirements of Islam will be fulfilled.
মেন্দারেসের উত্থানের ফলে ইসলামবাদীদের মধ্যে বিপুল আশা জাগ্রত হয়। যেটুকু হয়েছিল তাও প্রতীকী অর্থে; মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
শেষবারের মতো ১৯৫২ সালে নূরসিকে ইস্তাম্বুলের আদালতে তোলা হয়। এবার তার বিরুদ্ধে ‘ইসলামী পোশাক ও ধর্মীয় শিক্ষার’ উপর লেখালেখি করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয় যা (‘গেনসলিক রাহবেরি- A guide for youth’) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পড়ছে ও বিলি করছে।
ইস্তাম্বুল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি এমিরদাগে চলে যান। সেখান থেকে ১৯৫৩ সালে যান ইসপারতায়। জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি এখানেই কাটান। এই স্থানের প্রতি তার আলাদা অনুরাগ ছিল। কারণ এর পার্শ্ববর্তী বারলায় বসে তিনি সর্বপ্রথম রিসালার কাজ শুরু করেছিলেন।
১৯৬০ সালের মার্চে নূরসি পূর্ব আনাতোলিয়ার উরফার উদ্দেশ্যে ইসপারতা ত্যাগ করেন। এখানে উপস্থিত হওয়ার পর আঙ্কারা থেকে আবারো ইসপারতায় ফিরে যাবার নির্দেশ আসে। প্রবল শীতের মধ্যে অশীতিপর বৃদ্ধ নূরসি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময়ও পুলিশ প্রশাসন তাকে অতীতের মতোই ঘেরাও করে রাখে।
অবশেষে ১৯৬০ সালের ২৪ মার্চ এই মহান ভাবুক ও বিপ্লবী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে নাফসে মুতমায়িন্নাহ নিয়ে হাজির হন। মেন্দারেস সরকারের উৎখাতের পর নতুন সামরিক সরকার নূরসির লাশকে তুলে অজানা এক জায়গায় দাফন করে। এখান থেকে বুঝা যায়, দুনিয়া মুসলিম সূর্যসন্তানদের প্রতি কী আচরণ করেছে!
রিসালায়ে নূর হচ্ছে মানেভি তাফসির। কেউ কেউ এটিকে মানেভি জিহাদ-কলমের যুদ্ধও বলেছেন। রিসালায়ে নূরে মূলত ঈমানের মূল বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে (Belief by Investigation)। রিসালায়ে নূরকে নূরসি কয়েক ভাগে ভাগ করেছেন।
প্রথম ভাগ- সোজলার (মৃত্যুর পুনরুত্থান বিষয়ক আলোচনা)
দ্বিতীয় ভাগ- মাকতুবাত (ছাত্রদের কাছে লিখা বিভিন্ন চিঠি)
তৃতীয় ভাগ- লেমালার (আলোক সম্পাত ও সুয়ালার-রশ্মি)
হামিদ আলগার রিসালা সম্পর্কে বলেছেন, .... a reflection of the qurÕanic luminosity through the prisms of saidÕs expression’.
সাঈদ নূরসি ও সাইয়েদ কুতুবের সাথে চিন্তার অনেক মিল রয়েছে। কারণ, উভয়ে পুনঃজাগরণের কথা ভেবেছিলেন। নূরসি তুরস্কে ও কুতুব মিসরে সেক্যুলার সরকারের হাতে অমানুষিক জুলুম ও নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। নূরসি তার লেখাগুলো লিখেছিলেন নির্বাসন ও বন্দিত্বকালে আর কুতুব তার সেরা লেখাগুলো লিখেছিলেন কারাবাসের যন্ত্রণার মধ্যে। বেদনা ও কান্না মিশিয়ে এঁরা উভয়ে তাদের জ্ঞানতত্ত্ব নির্মাণ করেছিলেন। ফলে উভয়ের লেখা ও বয়ান এত চিত্তাকর্ষক ও হৃদয়গ্রাহী হয়েছিল।
সাঈদ নূরসি রাজনৈতিক বিপ্লবের চাইতে বেশি আধ্যাত্মিক বিপ্লব করেছেন। সুতরাং, রিসালা-ই নুর আন্দোলন হচ্ছে- ‘The first text centered Islamic movement in modern Turkey’.
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাবি
আপনার মন্তব্য লিখুন