[ পর্ব-২ ]
বিদেশে স্নাতক করার স্বপ্ন, সুযোগ ও প্রস্তুতি এবং আবেদনসংক্রান্ত এই ধারাবাহিকের গত পর্বে উচ্চশিক্ষায় যাবার পূর্বপ্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করাসহ আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স এবং নর্ডিক দেশসমূহে স্নাতকে পড়তে যাওয়া নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছিল। এই সংখ্যায় তুরস্ক ও ইতালিতে স্নাতকের সুযোগ-সুবিধা ও আবেদন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। যেহেতু পূর্বের সংখ্যায় প্রস্তুতি-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা এসেছে, তাই সরাসরি উল্লিখিত দুটি দেশে স্নাতক করতে যাওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করছি।
তুরস্ক
এশিয়া ও ইউরোপের মিলনকেন্দ্র তুরস্ক। একবার নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “পুরো পৃথিবীকে যদি একটি রাজ্য ভাবা হয়, ইস্তাম্বুল হবে তার রাজধানী।” সম্পূর্ণ ইউরোপীয়ান কারিকুলামে পরিচালিত শিক্ষাপদ্ধতির কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে তুরস্ক। পরিসংখ্যান বলছে, র্যাংকিংয়ে শিক্ষায় ইউরোপের ৫ম স্থানে অবস্থান করছে তুরস্ক। পৃথিবীর ১৮২টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে এ দেশে। একজন শিক্ষার্থী তুরস্কে স্নাতক করার জন্য দুভাবে আসতে পারে। এক. স্কলারশিপ নিয়ে, দুই. নিজ খরচে। তুরস্কের স্কলারশিপগুলোকে মোটাদাগে তিনভাগে ভাগ করা যায় :
* তুর্কিয়ে বুরসলারি স্কলারশিপ
* দিয়ানেত স্কলারশিপ
* ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
প্রথমে তুর্কিয়ে বুরসলারি (সরকারি শিক্ষাবৃত্তি) নিয়ে আলোকপাত করি। প্রতি বছর এই বৃত্তির অধীনে সারা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক করতে তুরস্কে আসে। এই স্কলারশিপে সুযোগ পেলে একজন ব্যাচেলর শিক্ষার্থী যা যা পায়-
* সম্পূর্ণ টিউশন ফি।
* মাসিক বৃত্তি ৩৫০০ লিরা।
* মূল কোর্স শুরু হওয়ার আগে এক বছরের ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্স।
* সরকারি/বেসরকারি ডরমিটরিতে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা (সকাল ও রাতের খাবারসহ)।
* প্রথমবার আসা ও কোর্স শেষে নিজ দেশে যাওয়ার বিমান টিকেট (তার্কিশ এয়ারলাইন্সে)।
* স্বাস্থ্যবীমা।
যেহেতু সরকারি স্কলারশিপ, সেহেতু আবেদনের জন্য কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। স্নাতকে আবেদনের জন্য একজন শিক্ষার্থীর বয়স ২১ বছরের নিচে হতে হবে। এসএসসি/দাখিল, এইচএসসি/আলিম পরীক্ষায় ৭০% মার্কস থাকতে হবে, বাংলাদেশের জিপিএ-এর হিসেবে যা জিপিএ-৩.৪০ ধরা হয়। তবে জিপিএ ফাইভ ছাড়া স্কলারশিপ পাওয়া দুষ্কর। তবে এই স্কলারশিপে আবেদনের জন্য আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট ইত্যাদি স্কোর থাকা প্রয়োজন নেই। স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ আবেদনের জন্য চমৎকারভাবে কেন্দ্রীয় আবেদন পদ্ধতির ব্যবস্থা করে রেখেছে। একজন শিক্ষার্থী যেকোনো বিষয়ে সর্বোচ্চ ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারে। প্রতি বছর ১০ জানুয়ারিতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়।
আমরা গত পর্বে যেকোনো স্কলারশিপে আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্টস লাগবে বলেছিলাম, তুরস্কে আবেদনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। বুরসলারি স্কলারশিপে আবেদনের জন্য যেসব ডকুমেন্টস লাগবে-
* জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট বা জন্মসনদের ইংরেজি কপি।
* এসএসসি/দাখিল ও এইচএসসি/আলিম ও সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট।
* এসএসসি/দাখিল ও এইচএসসি/আলিম ও সমমান পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট।
* সদ্যতোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
* দুইটি রিকমেন্ডেশন/রেফারেন্স লেটার।
* Letter of Intent/Statement of Purpose
আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া খুবই সহজ, তবে একটু দীর্ঘ সময়ের কাজ। তুর্কিয়ে বুরসলারির ওয়েবসাইটে (www.tbbs.turkiyeburslari.gov.tr) গিয়ে সচল একটি ইমেইল দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে একে একে সকল তথ্যাবলি দিয়ে পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো, আমরা এই বিষয়টি আগের পর্বেও উল্লেখ করেছিলাম, স্কলারশিপ পাবার জন্য পূর্বের পরীক্ষাসমূহে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলামের এক্টিভিটিস, ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রমকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর চান্সপ্রাপ্তদেরকে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা দিয়ে চূড়ান্ত মনোনীত হতে হয়। এই তো গেল তুর্কিতে বুরসলারি স্কলারশিপের কথা।
এবার তুর্কিয়ে দিয়ানেত স্কলারশিপ নিয়ে একটু আলোকপাত করি। এটিও তুরস্ক সরকারের একটি শিক্ষাবৃত্তি। তবে এটি বিশেষায়িত, শুধু ইসলামি স্টাডিজ কিংবা থিওলজিতে পড়তে আগ্রহীদের জন্য প্রযোজ্য। আমাদের দেশে যারা মাদরাসায় পড়াশোনা করে তারাই মূলত এই স্কলারশিপে এসে থাকে। স্কলারশিপের সুযোগ-সুবিধা বুরসলারি স্কলারশিপের অনুরূপ, তবে এতে একটি বাড়তি সুবিধা রয়েছে, তা হলো, প্রতি বছর একবার দেশে বেড়াতে আসা-যাওয়ার ফ্রি বিমান টিকিট দেওয়া হয়। আবেদনের শর্তাবলি, যোগ্যতা এবং আবেদন পদ্ধতি সম্পূর্ণ বুরসলারি স্কলারশিপের মতোই। অনলাইনে দিয়ানেতের (www.diyanetburslari.tdv.org) সাইটে আইডি খুলে সব তথ্যাবলি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর চান্সপ্রাপ্তদেরকে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা দিয়ে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হতে হয়।
এই দুই কেন্দ্রীয় পদ্ধতি ছাড়াও তুরস্কের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। যেগুলোতে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। যোগ্যতা ও আবেদনের শর্তাবলি অনেকাংশে একই হয়ে থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে টোফেল, আইইএলটিএস ও স্যাট স্কোরের প্রয়োজন হয়। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন (ইংরেজি) দিয়েও ভর্তি হওয়া যায়, যেগুলোতে সাধারণত ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়। এই ক্ষেত্রে ইবনে খালদুন ইউনিভার্সিটি, কোচ ইউনিভার্সিটি, বিলকেন্ত ইউনিভার্সিটি, সাবাঞ্জি ইউনিভার্সিটি, বোয়াজিচি ইউনিভার্সিটি, ইলদিজ টেকনিক ইউনিভার্সিটি, মিডল ইস্ট টেকনিক ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করলে স্কলারশিপ-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
তারপর সেলফ ফান্ড বা নিজস্ব অর্থায়নে পড়ার বিষয়ে কিছু তথ্য শেয়ার করি। তুরস্কের ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম খরচে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা নিজ খরচে তুরস্কে পড়তে আসে। তবে এই ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করতে চাই, তুরস্কে স্নাতক অবস্থায় পার্টটাইম জব বা খণ্ডকালীন চাকরি করে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে, পাশাপাশি নিজ খরচে ভর্তিপ্রাপ্তদের ভিসা পাবার রেশিও খুবই কম, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিসা রিজেক্ট হয়। এই দুটি বিষয় মাথায় রেখে তুরস্কে স্নাতকে নিজস্ব অর্থায়নে পড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজ খরচে পড়তে হলে দুই সেশনে আবেদন করা যায়, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে আবেদন করতে হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয় আবার দুই সেশনে ভর্তি নেয় না, শুধু সেপ্টেম্বর সেশনের জন্য আবেদন করা যায়, এ সকল বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করলে সুনির্দিষ্ট তথ্যাবলি পাওয়া যাবে। সেলফ ফান্ডে ভিসা কম পাওয়া গেলেও স্কলারশিপ পেলে নিশ্চিত ভিসা পাওয়া যায়।
ইতালি
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ইতালিও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর স্নাতকে প্রচুর শিক্ষার্থীরা ইতালিতে পড়তে আসে। ইতালিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক সেশনের জন্য ভর্তি নেয়। আবেদন প্রক্রিয়া নভেম্বর/ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল/মে পর্যন্ত চলে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ক্লাস শুরু হয়। তাই সকল প্রস্তুতি এই টাইমলাইন ধরেই শুরু করতে হবে। ইতালিতে কিছু স্কলারশিপের মাধ্যমে স্নাতক করার সুযোগ রয়েছে, তবে বেশির ভাগই মাস্টার্স-পিএইচডির জন্য। স্নাতকের জন্য মেরিট স্কলারশিপ আছে, তবে তা পাওয়া অনেক কঠিন। এ ছাড়া রিজিওনাল স্কলারশিপ আছে, যার জন্য ইতালি আসার পর আবেদন করা যায়, আমরা এই বিষয়ে পরবর্তীতে আলোকপাত করব।
প্রথমত, ইতালি একজন শিক্ষার্থী স্নাতক করতে চাইলে তাকে অবশ্যই টোলক এক্সাম (Tolc exam) অথবা স্যাট (SAT) দিতে হবে। বিজ্ঞানের জন্য Tolc-I, ব্যবসায় শিক্ষার জন্য Tolc-E, মানবিকের জন্য Tolc-C এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পলিটেকনিকো ডি তুরিনো (Politecnico di Torino), (৫০-এর মধ্যে ৩০ ভালো নম্বর) দিতে হবে। সাথে IELTS স্কোর অবশ্যই লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আইইএলটিএস-এর স্কোর ভিন্ন হয়ে থাকে।
ইতালিতে নিজ খরচে পড়ার জন্য ব্লক অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজন নেই, তবে ভিসার জন্য স্পন্সরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে (সর্বশেষ ছয় বা সাত মাসের সঞ্চয় বা এফডিআর থাকতে হবে, প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকা)। তবে মনে রাখতে, ইতালি নিজস্ব অর্থায়নে পড়তে যাবার ক্ষেত্রে ভিসা ইস্যু করার হার খুবই কম। অন্যান্য দেশে আবেদনের মতো এখানে রিকমেন্ডেশন/রেফারেন্স লেটারের দরকার হয় না। এমনকি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোটিভেশন লেটার/SOP-এর প্রয়োজন হয় না। যেমন, সাপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Sapienza) জন্য এটি বাধ্যতামূলক। স্টাডি গ্যাপ সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। ইতালিতে স্নাতকে আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য কোনো ফি লাগে না, আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি ২৫ ইউরো থেকে ৫৫ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করে নির্দিষ্ট তথ্যাবলি দিয়ে আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাছাই করে অফার লেটার দেওয়া হয়। অফার লেটার পাওয়ার পর প্রাক-ভর্তির পূর্বে Cimea Ges Comparability (https://www.cimea.it/) ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট Equivalence করে নিতে হবে। এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হয়, প্রতি বছর এই ফি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ফি ছিল ১৫০ ইউরো। কখনো কখনো তাদের ঠিকানায় ডকুমেন্টসের সত্যায়িত ফটোকপি পাঠানো লাগতে পারে। প্রাক-ভর্তির সময় কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফি চাইতে পারে, তা ১৫০ থেকে ২০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় (University of Padua), পলিটেকনিকো ডি তুরিনো (Politecnico di Torino) ভর্তি ফি প্রয়োজন হয়। অফার লেটার পাওয়ার পর প্রাথমিক ভর্তির কাজগুলো দেশ থেকেই করা যায়। ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসা এপ্লাই করার পূর্বে ইতালিতে থাকার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে নিতে হবে, এক্ষেত্রে বিভিন্ন ডরমিটরি পাওয়া যায় আবার নিজে বাসা নিয়ে বা সাবলেট থাকারও সুযোগ আছে। ভিসা আবেদনের জন্য আবাসনের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে, আরো লাগবে কভার লেটার, স্বাস্থ্যবীমা, ভর্তির বা প্রাক-ভর্তির সার্টিফিকেট।
ইতালিতে পৌঁছানোর পরে মিলানে বাংলাদেশের কনস্যুলেট বা রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সকল ডকুমেন্টস ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ ও সত্যায়িত করে নিতে হবে। তারপর প্রথমে রিজিওনাল স্কলারশিপের আবেদন করতে হবে। আঞ্চলিক স্কলারশিপ হচ্ছে প্রয়োজনভিত্তিক স্কলারশিপের একটি প্রকার। এই স্কলারশিপ ISEE পেপার (পারিবারিক আয়ের বার্ষিক সার্টিফিকেট)-এর ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। এটি আঞ্চলিক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি। এই স্কলারশিপের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পারিবারিক আয়ের সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে, যা দেশ থেকে পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন করে নিয়ে আসতে হবে। ইতালির মিলান কনস্যুলেট এবং রোম দূতাবাসে পৃথক পৃথক ফরম্যাট পাওয়া যায়, সেখান থেকে নিয়ে পূরণ করে সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট ফরম্যাট ও তথ্যের জন্য কনস্যুলেট ও দূতাবাসের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ চেক করার জন্য সুপারিশ করছি।
রিজিওনাল বা আঞ্চলিক স্কলারশিপের পরিমাণ অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে, এর পরিমাণ ৭৫০০ ইউরোর কম বেশি হতে পারে। আঞ্চলিক স্কলারশিপের আবেদন ও সকল ডকুমেন্টস স্ক্যান করার পর যদি শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের জন্য যোগ্য হয়, তবে তাকে কোনো টিউশন ফি বা আবাসন ফি দিতে হবে না। প্রথম কিস্তি পেতে কোনো ক্রেডিট দেখানোর প্রয়োজন হবে না। কিন্তু পরবর্তী কিস্তি/বছরের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ক্রেডিট সম্পূর্ণ করতে হবে। যারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ক্রেডিট সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়, তাদেরকে কিছু কিছু অঞ্চলে প্রথম কিস্তি ফেরত দিতে হয়। তাই ভালো পড়াশোনা করে ক্রেডিট শেষ করার বিকল্প নেই। আরও বিস্তারিত এবং সময়সীমার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা আঞ্চলিক স্কলারশিপ ওয়েবসাইট চেক করা যেতে পারে (https://www.universitaly.it/)। তবে স্নাতক অবস্থায় অনেক বেশি কাজ করে নিজের খরচ চালানো অনেক কঠিন, পড়াশোনার চাপ বেশি থাকে, তাই ভালো পড়াশোনা করে রিজিওনাল স্কলারশিপ নিশ্চিত রাখতে পারলে সম্পূর্ণ ফ্রিতেই স্নাতক শেষ করা যায়।
আজ তাহলে এই পর্যন্ত। আগামী পর্বে আমরা অন্য কোনো দেশে স্নাতক করতে যাবার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করব।
মু. সাইফুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষক, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক
আপনার মন্তব্য লিখুন