post

বিদেশে স্নাতক করার স্বপ্ন সুযোগ ও প্রস্তুতি

মু. সাইফুল ইসলাম

০২ জুলাই ২০২৪

[ পর্ব-৩ ]

অস্ট্রেলিয়া

বিদেশে স্নাতক করার সুযোগ, প্রস্তুতি ও আবেদন সংক্রান্ত এই ধারাবাহিকের গত পর্বে তুরস্ক ও ইতালিতে স্নাতক করার বিস্তারিত বিষয়াদি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছিল। এই পর্বে ওশেনিয়া মহাদেশের অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের রোমানিয়াতে স্নাতক করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে অস্ট্রেলিয়া শিক্ষার্থীদের বরাবরই পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, আমাদের জন্য উপযোগী আবহাওয়া, সহজ ফ্যামিলি ভিসা, ভালো আয়ের সুযোগ, পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগসহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছেও অস্ট্রেলিয়া বেশ জনপ্রিয়। 

অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনার সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে বাংলাদেশের চেয়েও সহজ, সুন্দর ও সাবলীল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যে-কোনো সময়ই যোগাযোগ করা যায় এবং উত্তরও পাওয়া যায় সাথে সাথে। ভিসা আবেদনও করা যায় যে-কোনো সময়। পড়াশোনার মান নিয়ে আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। তবে স্নাতকে অস্ট্রেলিয়াতে পড়তে যেতে হলে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং অত্যধিক পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। কেননা অস্ট্রেলিয়াতে ব্যাচেলরে তেমন কোনো স্কলারশিপ নেই বললেই চলে, সর্বোচ্চ ২-৫ হাজার ডলার স্কলারশিপ পাওয়া যেতে পারে। যেহেতু স্কলারশিপের পরিমাণ কম তাই শিক্ষার্থীদেরকে টিউশন ফি এবং বসবাসের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের ব্যবস্থা আছে কিনা তার প্রমাণ ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের সময় দেখাতে হয়। যে কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদেরকে অনেকক্ষেত্রে ভিসার জন্য বেগ পেতে হয়। পাশাপাশি IELTS বা অন্য যে-কোনো ইংলিশ টেস্ট স্কোর তো থাকা লাগবেই। তবুও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতক করতে যাওয়া কঠিন কিছু না।

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত বছরে দুটি সেমিস্টার হয়। প্রথম সেমিস্টার শুরু হয় ফেব্রুয়ারিতে আর দ্বিতীয়টি জুলাইতে। এই দুই সেমিস্টারকে টার্গেট করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো IELTS/TOEFL/PTE এসব ধরনের ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্ট স্কোর গ্রহণ করে। IELTS এর ক্ষেত্রে Overall স্কোর ৬.৫ এবং পৃথকভাবে ৬ থাকতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগভেদে আরো বেশি স্কোর প্রয়োজন হয়।

আমরা ১ম পর্বে স্কলারশিপ ক্যালেন্ডারের বিষয়ে ধারণা দিয়েছিলাম, অর্থ্যাৎ স্কলারশিপ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে তার তালিকা তৈরি করা। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় ও শহর নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বিদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত সিডনি ও মেলবোর্নকে বেশি পছন্দ করে থাকে। এ দুই শহরে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বেশি, তেমনি বাংলাদেশীও প্রচুর। তবে এই দুই শহরে আয় করার সুযোগ যেমন বেশি, জীবনমান ব্যয়ও অত্যধিক। সিডনিকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও শহর বাছাই করার পূর্বে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। একজন শিক্ষার্থী প্রদত্ত লিংক (www.australianuniversities.com.au/list/) থেকে তার পছন্দের বিষয়, টিউশন ফি, স্কলারশিপ সুবিধা, ক্যাম্পাস লোকেশন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ১০-১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করে ফেলতে পারে।

যেহেতু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতক লেভেলে স্কলারশিপ খুবই কম। তাই সেলফ ফান্ডে পড়ার জন্য প্রথমেই কে স্পন্সর করবে এবং তাঁর অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে। স্পন্সর অবশ্যই শিক্ষার্থীর ফার্স্ট ব্লাড কানেকটেড হতে হবে অর্থাৎ বাবা, মা, ভাই, বোন ইত্যাদি হতে হবে। যদি শিক্ষার্থীর চাচা বা মামা অস্ট্রেলিয়ায় থাকে তবে তারাও স্পন্সর করতে পারবে। প্রশ্ন আসতে পারে স্পনসরের অ্যাকাউন্টে কত টাকা থাকতে হবে? এর সমাধানও অস্ট্রেলিয়ান অথরিটি দিয়ে রেখেছে। টিউশন ফি এবং থাকার খরচ বহন করার মতো ফান্ড আছে কিনা তা দেখাতে হবে। প্রদত্ত লিংক (www.homeaffairs.gov.au/) থেকে কত টাকা দেখাতে হবে তার একটি নির্দেশনা পাওয়া যাবে এবং সে অনুযায়ী হিসাব করতে হবে। এখানে বলে রাখা ভালো অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র স্পন্সর সঠিকভাবে না দেখাতে পারার কারণে ভিসা পেতে ব্যর্থ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা শেষ হলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া খুবই সহজ, যত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে অফার লেটার নেওয়া যায়, তত ভর্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম ধাপ। এই প্রক্রিয়াটি যদি কোনো শিক্ষার্থী সেমিস্টার শুরুর ৫ মাস পূর্ব থেকে শুরু করে তবে খুবই সুন্দরভাবে কাজগুলো শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেওয়া সম্ভব। অফার লেটার সংগ্রহের পর স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে স্কলারশিপে আবেদনের অনেকগুলো অপশন পাওয়া যায়, সেগুলোতে আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি যে ই-মেইল থেকে অফার লেটার এসেছে সেই ই-মেইল বিস্তারিত লিখে স্কলারশিপ চেয়ে রিপ্লাই দিয়ে অথরিটিকে কনভিন্স করতে পারলে স্নাতকের জন্যও টিউশন ফি-তে কিছু ছাড় পাওয়া যায়।

স্কলারশিপ ও সেলফ ফান্ডের ব্যবস্থা হয়ে গেলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার অ্যাকসেপ্ট করে ভর্তির জন্য প্রথম সেমিস্টার ফি ও হেলথ ইন্স্যুরেন্স ফি জমা দিতে হবে এবং এটি বাংলাদেশের ব্যাংক থেকেই করা যাবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি ভর্তি নিশ্চিত করে লেটার পাঠাবে, যাকে বলা হয় COE (Confirmation of Enrollment)। এরপর প্রধান কাজ হলো ভিসা এপ্লিকেশন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, গত ১ জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা এপ্লিকেশন ফি অনেক বাড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বর্তমানে ভিসা ফি- ১৬০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ভিসা আবেদন এখন ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে করা যায়, তবে আবেদনের পর ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য VFS অফিসে যেতে হয়। এরপর মেডিকেল করার জন্য একটি লেটার পাঠাবে অথরিটি এবং কোন হসপিটালে মেডিকেল করতে হবে তাও উল্লেখ থাকবে, সেখানে গিয়ে মেডিকেল সম্পন্ন করতে হবে। সাধারণত ৩০ কর্মদিবসের মধ্যেই ভিসা হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান ভিসা শিক্ষার্থীর পাসপোর্টে লাগিয়ে দিবে না। ই-মেইলর মাধ্যমে একটি লেটার পাঠিয়ে দিবে, সেটিই ভিসা। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি। অস্ট্রেলিয়ায় স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানকে সাথে নিয়ে আসা খুবই সহজ। শিক্ষার্থীর ভিসা হলে ফ্যামিলির ভিসাও হবে। সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে ফ্যামিলির ভিসা আবেদনও শিক্ষার্থীর সাথেই করে ফেলতে হবে। প্রদত্ত লিংক থেকে (www.border.gov.au/Trav/Visa-1/500-) ভিসা আবেদনের নিয়ম, ডকুমেন্টস চেকলিস্ট ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্যাবলী দেখে নিতে হবে।

ভিসা হয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়ায় যাবার প্রস্তুতি নিতে হবে, এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আবাসন ঠিক করতে হবে, কারণ অস্ট্রেলিয়ায় এখন আবাসান পাওয়া অনেক দুষ্কর। পাশাপাশি সেখানে বাংলাদেশের মতো মাসিক ভাড়া দেওয়ার সিস্টেম নেই, ভাড়া পরিশোধ করতে হয় সাপ্তাহিক। সার্বিক বিষয়গুলোর জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ করে নিলে কাজ সহজ হয়ে যাবে। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও যোগ্যতার বিষয়ে উল্লেখ করিনি। কারণ এই ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে যে সকল ডকুমেন্টসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো প্রায় সবই অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হবে। এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় অনেক সময় ভিসা আবেদনের জন্যেও মোটিভেশনাল লেটার জমা দিতে হয়, এই বিষয়গুলোর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সুতরাং প্রস্তুতির জন্য ১ম পর্ব দ্রষ্টব্য। 

রোমানিয়া

ওশেনিয়া মহাদেশ থেকে এবার আমরা ইউরোপে ফেরত আসি। আগের পর্বগুলোতে ইউরোপের দেশ জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি, তুরস্ক ও নর্ডিকদেশসমূহে স্নাতক করার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছিল। ৩য় পর্বে এসে আমরা ইউরোপের এমন একটি দেশের কথা বলব যার শিক্ষা পদ্ধতি পরিচালিত হয় প্ুেরাপুরি ইউরোপীয়ান কারিকুলামে এবং আমাদের দেশের যে-কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যে টিউশন ফি দিয়ে স্নাতক শেষ করতে হয়, সেই পরিমাণ; অনেকক্ষেত্রে তারচেয়েও কম অর্থ দিয়ে সেখানে পড়া যাবে। ক্ষেত্রবিশেষে স্কলারশিপও পাওয়া যাবে। সে দেশটি হচ্ছে পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া- এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ; তবে সেনজেনভুক্ত নয়। এর রাজধানীর নাম বুখারেস্ট। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ইউরোপের ৬ষ্ঠ বৃহৎ দেশ। আয়ের প্রধান উৎস টেক্সটাইল ও ট্যুরিজম। ওয়েস্টার্ন ইউরোপের দেশগুলোর মতো এত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ নয়। তবে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি জব করে মাসে ৩০০-৪৫০ ইউরো আয় করতে পারে। ভাষা শিখে নিতে পারলে এই আয়ের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।

অন্যান্য দেশের উচ্চশিক্ষার মতো রোমানিয়াতে পড়তে হলেও প্রয়োজন হবে পূর্ব পরিকল্পনার। কমপক্ষে ৬ মাস থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে, সকল ডকুমেন্টস প্রস্তুত করতে হবে। রোমানিয়ার ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রগুলোকে পূর্ব থেকেই সত্যায়িত করে রাখা লাগে (মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন)। রোমানিয়ায় অ্যাকাডেমিক সেশন শুরু হয় অক্টোবর থেকে। তাই সেশন শুরু হওয়ার ৬ মাস পূর্ব থেকেই ইউনিভার্সিটিগুলোতে আবেদন করতে হবে। রোমানিয়ায় পড়তে IELTS বাধ্যতামূলক নয়। এখানে এসে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জেনারেল ইংলিশ টেস্ট দিতে হবে। ভয়ের কিছু নেই, ন্যূনতম ইংলিশ গ্রামার আর প্রিপজিশনের ব্যবহার জানা থাকলে এই ধাপ উৎরে যাওয়া সম্ভব। 

রোমানিয়াতে দুইভাবে অ্যাপ্লাই করা যায়- প্রথমত : তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে স্কলারশিপে এপ্লাই করা; এটি সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে হয়ে থাকে এবং তাতে রোমানিয়ান ভাষায় পড়তে হয়। প্রদত্ত লিংকে www.mae.ro/en/node/10251#null এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। তবে স্নাতকে স্কলারশিপ পাওয়ার হার খুবই কম। তাই দ্বিতীয় পদ্ধতি সেলফ ফান্ডে পড়ার বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে রোমানিয়ায় পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ফরমাল অ্যাপ্লিকেশন ই-মেইল করতে হবে। বিদেশী শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তার জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডমিশনের ই-মেইল দেওয়া থাকে অথবা সাধারণ অ্যাডমিশন সংক্রান্ত ই-মেইল মেইলটি করা যাবে। বিষয় হিসেবে ঐ ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সেশনে ভর্তি হতে আগ্রহী’ উল্লেখ করা। এরপর তারা অ্যাডমিশন সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে ফিরতি মেইল পাঠাবে। সেগুলো ভালোভাবে পড়ে অনুসরণ করে সে মোতাবেক তাদের চাওয়া সকল ডকুমেন্টস স্ক্যান করে ই-মেইল করতে হবে। অনেক সময় ফটোকপি করে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন অফিসে যাছাই-বাছাই করার জন্য DHL এর মাধ্যমে কুরিয়ার করেও পাঠাতে হয়। এই ডকুমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট করতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগে। কারণ এই অ্যাসেসমেন্ট করবে রোমানিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারপর সেগুলো তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে ই-মেইল শিক্ষার্থীকে জানানো হবে এবং একটা Letter of Acceptance কপি সংযুক্ত করে দিবে।

এরপর আসবে টিউশন ফি পাঠানোর বিষয়। ইউরোপে সেলফ ফান্ডে পড়তে হলে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই দেশ থেকে আগেই এক বছরের টিউশন ফি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্লক অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করে আসতে হয়। কোন ব্যাংকের কোন অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে হবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের letter of acceptance-এ উল্লেখ করা থাকে। 

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা উচিত, কোনো শিক্ষার্থী যদি টিউশিন ফি পাঠানোর পর ভিসা কিংবা কোনো কারণে রোমানিয়াতে আসতে না পারে, সেক্ষেত্রে জমাকৃত টাকার কী হবে; এই নিয়ে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এক্ষেত্রে টেনশনের কিছু নেই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিফান্ড পলিসি থাকে এবং বাংলাদেশের যে ব্যাংক থেকে টাকা পাঠানো হবে তারা সেই রিফান্ড পলিসি অ্যাপ্লাই করেই টাকা পাঠাবে। তাই না আসতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটিকে ই-মেইল করে জানালেই তারা এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সে টাকা ফেরত দিয়ে দিবে। টিউশন ফি পাঠানো মানেই ভর্তি নিশ্চিত। তারপরের কাজ হলো ভিসার জন্য আবেদন করা।  

এখন ঢাকার মালিবাগে রোমানিয়ান কনস্যুলেট খোলা হয়েছে। এখানেই ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে (তবে তারা ভারতে অবস্থিত রোমানিয়ান অ্যাম্বাসিতেও রেফার করতে পারে)। যত সমস্যা হয়, তা হচ্ছে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন জমা দেওয়ার সময়। কনস্যুলেট অথরিটি প্রতিটা ডকুমেন্ট খুব ভালোভাবে চেক করে। কোনো একটা ডকুমেন্ট (ভিসা অ্যাপ্লিকেশন তথ্যে ভুল, লেটেস্ট পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ব্যাংক সিল ৪৮ ঘন্টার পুরাতন হলেও হবে না), ৯০ দিনের হোটেল বুকিং, বিমানের টিকেট বুকিং, পাসপোর্ট সাইজের ছবি ইত্যাদিতে সমস্যা পেলেই তারা অ্যাপ্লিকেশন ফেরত দিয়ে দেবে। আর একদিন মিস হয়ে গেলে আবার ২-৩ দিন পর সিরিয়াল। তবে এখানে শিক্ষার্থীকে ভিসা জমা নেয়ার পাশাপাশি রোমানিয়ায় কেন যেতে চায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও পড়াশোনা সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে। তবে এক্ষেত্রে ভিসা হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।

এই তো, এরপর রোমানিয়াতে এসে প্রয়োজনীয় আবাসনের ব্যবস্থা করে নিতে হবে, এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ডরমিটরিগুলোতে আবেদন করলে সহজে সিট পাওয়া যাবে। সবমিলিয়ে রোমানিয়া আসা পর্যন্ত ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হবে। কোনো এজেন্সির মাধ্যমে চেষ্টা না করে একজন শিক্ষার্থী নিজে নিজে চেষ্টা করেই খুব সহজে রোমানিয়ায় স্নাতকে আসতে পারে। প্রয়োজন কেবল একটু ঘাটাঘাটি করে সঠিক তথ্যাবলি সংগ্রহ করে সে আলোকে অ্যাপ্লাই করা। এই বিষয়ে মোটামুটি গাইডলাইন ১ম পর্বে দেওয়া হয়েছে। আগামী পর্বে আমরা নতুন আরো কিছু দেশে স্নাতক করার সুযোগ ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাব ইনশাআল্লাহ। আজ এই পর্যন্তই। আল্লাহ হাফিজ।

 লেখক : পিএইচডি গবেষক, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির