মদিনা রাষ্ট্রগঠনের পর যারা এর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম মুনাফিক গোষ্ঠী। মুহাম্মদ সা. অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিলেও অত্যন্ত কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন মুনাফিকদের বিরুদ্ধে। মুনাফিকরা একদিনে হুট করে তৈরি হয়নি। এর রয়েছে ধারাবাহিক পরিক্রমা। যখনই ইসলামের অবস্থা একটু ব্যাকফুটে থাকে তখন তাদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, কটূক্তি, আনুগত্যহীনতা এবং ফিতনা তৈরি করে। বারবার আল্লাহর রাসূল সা.-কে তারা বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিলো। তারপরও আল্লাহর রাসূল সা.-এর বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত তাদেরকে কন্ট্রোলে রেখে সহাবস্থানে বাধ্য করেছিল। এরপর ধীরে ধীরে যতই ইসলামের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছিল ততই মুনাফিকরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলো। রাসূল সা.-এর শেষদিকে তারা একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলো।
মদিনায় রাসূল সা.-এর আগমনের পূর্বেই বিবদমান আওস ও খাযরাজ গোত্র দুটি পারস্পরিক গৃহযুদ্ধে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে প্রায় ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। তারা যথারীতি তাকে বাদশাহ বানিয়ে তার অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও শুরু করেছিল। এমনকি তার জন্য রাজ মুকুটও তৈরি করা হয়েছিল। এ ব্যক্তি আর কেউ নয় তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, খাযরাজ গোত্রে তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব ছিল সর্বসম্মত এবং আওস ও খাযরাজ ইতঃপূর্বে আর কখনো একযাগে এক ব্যক্তির নেতৃত্ব মেনে নেয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ইসলামের সুমহান দাওয়াত মদিনায় পৌঁছে এবং এই দু’টি গোত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। হিজরতের আগে আকাবার দ্বিতীয় শপথের সময় রাসূল সা.-কে যখন মদিনায় আগমনের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছিল তখন হযরত আব্বাস ইবনে উবাদা রা. এ আহবান জানাতে শুধু এ কারণে দেরি করতে চাচ্ছিলেন যাতে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইও বাইয়াত ও দাওয়াতে শামিল হয়। সে যেন রাসূল সা.-এর প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়। এভাবে মদিনা যেন সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু যে প্রতিনিধিদল বাইয়াতের জন্য হাজির হয়েছিল তারা এই যুক্তি ও কৌশলকে কোনো গুরুত্বই দিলেন না এবং এতে অংশগ্রহণকারী দুই গোত্রের পঁচাত্তর ব্যক্তি সব রকম বিপদ মাথা পেতে নিয়ে নবী সা.-কে দাওয়াত দিতে প্রস্তুত হয়ে গেল।
এরপর নবী সা. যখন মদিনায় পৌঁছলেন তখন আনসারদের ঘরে ঘরে ইসলাম এতটা প্রসার লাভ করেছিল যে, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নিরুপায় হয়ে পড়েছিল। নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব রক্ষার জন্য ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তাই বদর যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়ের পর সে তার বহুসংখ্যক সহযোগী ও অনুসারীদের নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। এদের মধ্যে উভয় গোত্রের প্রবীণ ও নেতা পর্যায়ের লোকেরা ছিল। মদিনায় ইসলামের প্রসারে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের অন্তর্জ্বালা ও দুঃখ ছিল অত্যন্ত তীব্র। কারণ সে মনে করতো, রাসূলুল্লাহ সা. তার রাজত্ব ও বাদশাহী ছিনিয়ে নিয়েছেন। তার এই মুনাফেকিপূর্ণ ঈমান এবং নেতৃত্ব হারানোর দুঃখ কয়েক বছর ধরে বিচিত্র ভঙ্গিতে প্রকাশ পেতে থাকলো। একদিকে তার অবস্থা ছিল এই যে, প্রতি জুমার দিন রাসূলুল্লাহ সা. যখন খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠে বসতেন তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই উঠে বলতো, “ভাইসব, আল্লাহর রাসূল আপনাদের মধ্যে বিদ্যমান। তাঁর কারণে আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। তাই আপনারা সবাই তাঁকে সাহায্য ও সহযোগিতা করুন। এবং তিনি যা বলেন গভীর মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং তার আনুগত্য করুন।” সে এমন ঘোষণা দিয়ে নিজেকে খাঁটি ঈমানদার বুঝানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতো। অপরদিকে অবস্থা ছিল এই যে, প্রতিদিনই তার মুনাফেকির মুখোশ খুলে পড়ছিল এবং সৎ ও নিষ্ঠাবান মুসলমানদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল যে, সে ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা ইসলাম, রাসূলুল্লাহ সা. এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে চরম শত্রুতা পোষণ করে। একবার নবী সা. কোনো এক পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় পথে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁর সাথে অভদ্র আচরণ করে। তিনি খাজরাজ গোত্রের আরেক নেতা সা’দ ইবনে উবাদাকে বিষয়টি জানালে সা’দ বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি এ ব্যক্তির প্রতি একটু ন¤্রতা দেখান। আপনার আগমনের পূর্বে আমরা তার জন্য রাজমুকুট তৈরি করেছিলাম। এখন সে মনে করে, আপনি তার নিকট থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন।” বদর যুদ্ধের পর বনি কাইনুকা গোত্রের ইহুদিরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও অকারণে বিদ্রোহ করলে রাসূলুল্লাহ সা. তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তাদের সমর্থনে কোমর বেঁধে কাজ শুরু করে। সে নবীজি সা.-এর বর্ম ধরে বলতে লাগলো, এই গোত্রটির সাতশত বীরপুরুষ যোদ্ধা শত্রুর মোকাবেলায় সবসময় আমাকে সাহায্য করেছে, আজ একদিনেই আপনি তাদের হত্যা করতে যাচ্ছেন? আল্লাহর শপথ, আপনি যতক্ষণ আমার এই মিত্রদের ক্ষমা না করবেন আমি ততক্ষণ আপনাকে ছাড়বো না। পরে আল্লাহর রাসূল সা. আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথা আংশিকভাবে মেনে নেন। বনু কাইনুকার ইহুদিদের বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে মদিনা থেকে বহিষ্কার করেন।
উহুদ যুদ্ধের সময় আবদুল্লাহ বিন উবাই ও তার সঙ্গীরা তাদের সর্বোচ্চ মুনাফেকি প্রদর্শন করেন। তারা সরাসরি ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যুদ্ধ কোথা থেকে করা হবে এই নিয়ে পরামর্শ সভায় মতবিরোধ তৈরি হয়। আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে সবাই একমত হয়। কিন্তু পরে যুদ্ধের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আবদুল্লাহ বিন উবাই তার তিনশত সঙ্গী-সাথীকে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে থেকে ফিরে এসেছে। কী মারাত্মক বিপদে পড়েছেন রাসূল সা. এটা সহজেই অনুমেয়। মুসলিমদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কুরাইশরা তিন হাজার লোকের একটি বাহিনী নিয়ে মদিনার ওপরে চড়াও হয়েছিল আর রাসূলুল্লাহ সা. মাত্র এক হাজার লোক নিয়ে তাদের মোকাবিলা ও প্রতিরোধের জন্য বেরিয়েছিলেন। এক হাজার লোকের মধ্যে থেকেও মুনাফিকরা আলাদা হয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে গেল এবং নবী সা.-কে শুধু সাতশত লোকের একটি বাহিনী নিয়ে তিন হাজার শত্রুর মোকাবিলা করতে হলো। উহুদের ঘটনার পর এটা সমস্ত মুসলিমদের কাছে নিশ্চিত ছিল যে আবদুল্লাহ বিন উবাই এবং তার দল সত্যিকারের মুসলিম নন। নইলে আল্লাহর রাসূল সা.-এর সাথে বিদ্রোহ করে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে যেতে পারে না। এতে মুসলিমদের সুবিধে হলো তারা মুনাফিক সর্দার ও তার অনুসারীদের চিহ্নিত করার সুযোগ পেল। এ কারণে উহুদ যুদ্ধের পর প্রথম জুমার দিনে নবী সা. খুতবা দেয়ার পূর্বে আবদুল্লাহ বিন উবাই যখন বক্তৃতা করতে দাঁড়ালো তখন লোকজন তার জামা টেনে ধরে বলল, “তুমি বসো, তুমি একথা বলার উপযুক্ত নও। মদিনাতে এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে তাকে অপমানিত করা হলো। এতে সে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও রাগান্বিত হলো এবং মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল।” মসজিদের দরজার কাছে কিছু সংখ্যক আনসার সাহাবী তাকে বললেন, “তুমি একি আচরণ করছো? ফিরে চলো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে আবেদন করো।” এতে সে ক্রোধে ফেটে পড়লো এবং বললো! “তাকে দিয়ে আমি কোনো প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা করাতে চাই না।”
হিজরি চতুর্থ সনে বনু নাদির যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই সময় বিন উবাই ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের সাহায্য সহযোগিতা দান করে। একদিকে রাসূলুল্লাহ সা. এবং তাঁর সাহাবীগণ এসব ইহুদি শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অপরদিকে এই মুনাফিকরা গোপনে গোপনে ইহুদিদের কাছে খবর পাঠাচ্ছিল যে, তোমরা রুখে দাঁড়াও। আমরা তোমাদের সাথে আছি। তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা তোমাদের সাহায্য করবো এবং তোমাদেরকে বহিষ্কার করা হলে আমরাও তোমাদের সাথে বেরিয়ে যাবো। আল্লাহ তায়ালা তাদের এই গোপন ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ করে দিলেন। সূরা হাশরে আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। মুনাফিকদের মুখোশ খুলে পড়ার পরও রাসূলুল্লাহ সা. তার কার্যকলাপ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে এড়িয়ে গিয়েছেন। কারণ মুনাফিকদের একটা বড় দল তার সহযোগী ছিল। আওস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের বহুসংখ্যক নেতা তার সাহায্যকারী ছিল। কম করে হলেও মদিনার গোটা জনবসতির এক-চতুর্থাংশ ছিল তার অনুসারী। উহুদ যুদ্ধের সময় এ বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ শত্রুর সাথেও যুদ্ধের ঝুঁকি নেয়া কোন অবস্থায়ই সমীচীন ছিল না। এ কারণে তাদের মুনাফিকি সম্পর্কে অবহিত থাকা সত্ত্বেও নবী সা. দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাহ্যিকভাবে ঈমানের দাবি অনুসারেই তাদের সাথে আচরণ করেছেন।
অপর দিকে এসব লোকেরও এতটা শক্তি ও সাহস ছিল না যে, তারা প্রকাশ্যে কাফের হয়ে ঈমানদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে লড়াই করতো অথবা খোলাখুলি কোনো হামলাকারী শত্রুর সাথে মিলিত হয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হতো। বাহ্যত তারা নিজেদের একটা মজবুত গোষ্ঠী তৈরি করে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে বহু দুর্বলতা ছিল। সূরা হাশরের ১২ থেকে ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে সেইসব দুর্বলতার কথাই তুলে ধরেছেন। তাই তারা মনে করতো মুসলমান সেজে থাকার মধ্যেই তাদের কল্যাণ নিহিত। তারা মসজিদে আসতো, নামাজ পড়তো এবং যাকাতও দিতো। তাছাড়া মুখে ঈমানের লম্বা চওড়া দাবি করতো, সত্যিকার মুসলমানদের যা করার আদৌ কোনো প্রয়োজন পড়তো না। নিজেদের প্রতিটি মুনাফিকি আচরণের পক্ষে হাজারটা মিথ্যা যুক্তি তাদের কাছে ছিল। এসব যুক্তি দিয়ে তারা নিজেদের স্বগোত্রীয় আনসারদেরকে এই মর্মে মিথ্যা আশ্বাস দিত যে, আমরা তোমাদের সাথেই আছি। আনসারদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হলে তাদের অনেক ক্ষতি হতো। এসব কৌশল অবলম্বন করে তারা যেসব ক্ষতি থেকে নিজেদের রক্ষা করেছিল। তাছাড়া তাদের ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ থেকে মুসলমানদের ভেতরে কলহ কোন্দল ও ফাসাদ সৃষ্টির এমন সব সুযোগও তারা কাজে লাগাচ্ছিল যা অন্য কোনো জায়গায় থেকে লাভ করতে পারত না।
খন্দকের যুদ্ধের সময় তারা মদিনার বিপদের জন্য মুহাম্মদ সা.-কে দায়ী করে ঝামেলা তৈরি করে। যুদ্ধের পরে মুসলিমদের শক্তি দারুণভাবে বৃদ্ধি পেল। এরপর বনু কুরাইজার প্রায় ৭০০ যুদ্ধাপরাধী ও বিশ্বাসঘাতককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এতো বড় ঘটনায় কাফির মুশরিকদের কেউই বনু কুরাইজার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ছিল না। এরপর রাসূল সা. নজদের মুশরিক গোত্র বনু গাতফানের বিরুদ্ধে কয়েকটি ছোট ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে তাদের সংহতি নষ্ট করে দিয়ে মদিনার বিরুদ্ধে আক্রমণের শাস্তি দেন। এরপর মুনাফিকদের দৌরাত্ম্য কমে যায়। মুনাফিকরা নিজেদেরকে মুসলিমদের সাথে মিশিয়ে ফেলে। খন্দক যুদ্ধের পরের বছর বেশ ভালোভাবেই কাটিয়েছে মুসলিমরা। এর মধ্যে রাসূল সা. গোয়েন্দা মারফত খবর পেলেন বনু মুসতালিক মদিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই খবরে তিনি খুব দ্রুতই সেনাবাহিনী প্রস্তুত করে বনু মুসতালিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার অনুসারী মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে বনু মুসতালিক যুদ্ধাভিযানে শরিক হওয়ার সুযোগ লাভ করেছিল এবং এই সুযোগে একই সাথে এমন দুটি মহাফিতনা সৃষ্টি করেছিল যা মুসলমানদের সংহতি ও ঐক্যকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারতো। কিন্তু পবিত্র কুরআনের শিক্ষা এবং রাসূলুল্লাহ সা.-এর পবিত্র সাহচর্য থেকে ঈমানদারগণ যে সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন তার কল্যাণে যথাসময়ে এ ফিতনার মূলোৎপাটন হয়ে যায় এবং এসব মুনাফিক নিজেরাই অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। এ দুটি ফিতনার মধ্যে একটির উল্লেখ করা হয়েছে সূরা নূরে। আর অপর ফিতনাটির উল্লেখ করা হয়েছে সূরা মুনাফিকুনে।
মুনাফিকরা মোটাদাগে ৪টি ইস্যুতে ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ১. উহুদের বিপর্যয়সহ আরো কিছু ঘটনাকে পুঁজি করে তারা মুহাম্মদ সা.-এর নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মুহাম্মদ সা.-এর বিরুদ্ধে শহীদ পরিবার ও দুর্বলচিত্তের মুসলিমদের উসকে দেয়। ২. খন্দকের যুদ্ধে আরবের বিশাল সম্মিলিত মুশরিকদের কাছে যখন মদিনা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে তখন তারা নিজেদের নিরাপত্তা ও মদিনার নিরাপত্তা বিনষ্ট করার জন্য মুহাম্মদ সা. ও ইসলামকে দায়ী করে ফিতনা তৈরি করে। শত্রুদের ব্যাপারে ভয় দেখিয়ে মদিনার দুর্বলচিত্তের মুসলিমদের হতাশ করে তোলে। ৩. বনু মুস্তালিকের যুদ্ধে আনসার ও মুহাজির অর্থাৎ মক্কা ও মদিনার বাসিন্দাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের জাহেলিয়াত জাগ্রত করে মুসলিমদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। ৪. আয়িশা রা.-এর একটি দুর্ঘটনাকে (ইফকের ঘটনা) কেন্দ্র করে মুহাম্মদ সা.-এর পারিবারিক জীবনকে অস্থির করে তুলে।
চারটি ব্যাপারেই আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাজিল করে মুসলিমদের সতর্ক করেছেন মুনাফিকদের ব্যাপারে। যাই হোক, বনু মুসতালিকদের সাথে যুদ্ধ করতে হয়নি। তারা মুহাম্মদ সা.-এর অভিযান দেখে আত্মসমর্পণ করে। মুসলিমরা প্রচুর গনিমত লাভ করে। বনু মুস্তালিককে পরাস্ত করার পর ইসলামী সেনাবাহিনী তখনও মুরাইসি নামক কূপের আশপাশের জনবসতিতে অবস্থান করেছিল। ইতোমধ্যে হঠাৎ পানি নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে বচসা হয়। তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল জাহ্জাহ্ ইবনে মাসউদ। তিনি ছিলেন হযরত উমর রা.-এর কর্মচারী। তিনি তাঁর ঘোড়ার দেখাশোনা করতেন। অন্যজন ছিলেন সিনান ইবনে ওয়াবার ইল জুহানী। তাঁর গোত্র খাযরাজ গোত্রের মিত্র ছিল। মৌখিক বাদানুবাদ শেষ পর্যন্ত হাতাহাতিতে পরিণত হয় এবং জাহজাহ সিনানকে একটি লাথি মারে। এতে সিনান সাহায্যের জন্য আনসারদেরকে আহবান জানায় এবং জাহজাহও মুহাজিরদের আহবান জানায়।
এই ঝগড়ার খবর শোনামাত্র আবদুল্লাহ ইবনে উবাই আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদের উত্তেজিত করতে শুরু করে। সে চিৎকার করে বলতে থাকে দ্রুত এসো, নিজের মিত্রদের সাহায্য করো। অপরদিক থেকে কিছু সংখ্যক মুহাজিরও এগিয়ে আসেন। বিষয়টি আরো অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতে পারতো। তাই আনসার ও মুহাজিরগণ সম্মিলিতভাবে সবেমাত্র যে স্থানটিতে এক দুশমন গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের পরাজিত করেছিলেন এবং তখনও তাদের এলাকাতেই অবস্থান করেছিলেন সে স্থানটিতেই পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লিপ্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু শোরগোল শুনে রাসূলুল্লাহ সা. এগিয়ে গেলেন এবং বললেন, “কী ব্যাপার! জাহেলিয়াতের আহবান শুনতে পাচ্ছি কেন? জাহেলিয়াতের আহবানের সাথে তোমাদের কি সম্পর্ক? এসব ছেড়ে দাও, এগুলো দুর্গন্ধময় নোংরা জিনিস। এতে উভয়পক্ষের সৎ ও নেককার লোকজন অগ্রসর হয়ে ব্যাপারটি মিটমাট করে দিলেন এবং সিনান জাহজাহকে মাফ করে আপস করে নিলেন। এখানে এলাকাভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে আল্লাহর রাসূল সা. জাহেলিয়্যাত বলেছেন। মদিনাবাসী ও মক্কাবাসী একে অপরের বিরুদ্ধে নিজের জাতিকে আহ্বান জানিয়েছিলো। অথচ মুসলিমরা নিজেদের ভাইদের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করবে। কেউ কোন অপরাধ করলে নিজের জাতির লোক বলে তাকে সাপোর্ট করবে না। আবার অন্য জাতির কেউ অপরাধ করলে পুরো জাতিকে দোষারোপ করা যাবে না। এভাবে এলাকাভিত্তিক, ভাষাভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক জাতীয়তাবাদের স্থান ইসলামে নেই। এটা হারাম।
যাই হোক, এই মীমাংসার পর যাদের অন্তরে মুনাফিকি ছিল তারা সবাই এরপর আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছে সমবেত হয়ে তাকে বললো, “এতদিন আমরা তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তুমি প্রতিরোধও করে আসছিলে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তুমি আমাদের বিরুদ্ধে এসব কাঙাল ও নিঃস্বদের (মুহাজির) সাহায্যকারী হয়ে গিয়েছো!” আবদুল্লাহ ইবনে উবাই আগে থেকেই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিল। একথা শুনে সে আরো জ্বলে উঠল। সে বলতে শুরু করল, এসব তোমাদের নিজেদেরই কাজের ফল। তোমরা এসব লোককে নিজের দেশে আশ্রয় দিয়েছো, নিজেদের অর্থ-সম্পদ তাদের বণ্টন করে দিয়েছো। এখন তারা ফুলে ফেঁপে উঠেছে এবং আমাদেরই প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এবং কুরাইশদের এই কাঙালদের অবস্থা বুঝাতে একটি উপমা হুবহু প্রযোজ্য। উপমাটি হলো, তুমি নিজের কুকুরকে খাইয়ে দাইয়ে মোটা তাজা করো, যাতে তা একদিন তোমাকেই ছিঁড়ে ফেড়ে খেতে পারে। তোমরা যদি তাদের থেকে সাহায্যের হাত গুটিয়ে নাও তাহলে তারা কোথায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আল্লাহর শপথ, মদিনায় ফিরে গিয়ে আমাদের মধ্যে যারা মর্যাদাবান লোক তারা হীন ও লাঞ্ছিত লোকদের বের করে দেবে।”
এ বৈঠকে ঘটনাক্রমে হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রা. উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি একজন কম বয়স্ক বালক ছিলেন। এসব কথা শোনার পর তিনি তাঁর চাচার কাছে তা বলে দেন। তাঁর চাচা ছিলেন আনসারদের একজন নেতা। তিনি রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে গিয়ে সব বলে দেন। নবী সা. যায়েদকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি যা শুনেছিলেন আদ্যপান্ত খুলে বললেন। নবী সা. বললেন, তুমি বোধ হয় ইবনে উবাইয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট। সম্ভবত তোমার শুনতে ভুল হয়েছে। ইবনে উবাই একথা বলছে বলে হয়তো তোমার সন্দেহ হয়েছে। কিন্তু যায়েদ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.! তা নয়। আল্লাহর শপথ আমি নিজে তাকে এসব কথা বলতে শুনেছি। অতঃপর নবী সা. আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে সে সরাসরি অস্বীকার করলো। সে বারবার শপথ করে বলতে লাগলো আমি একথা কখনো বলি নাই। আনসারদের লোকজনও বললেন, হে আল্লাহর নবী! এতো একজন ছেলে মানুষের কথা, হয়তো তার ভুল হয়েছে। তিনি আমাদের নেতা ও সম্মানিত ব্যক্তি। তার কথার চেয়ে একজন বালকের কথার প্রতি বেশি আস্থাশীল হবেন না। বিভিন্ন গোত্রের প্রবীণ ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরাও যায়েদকে তিরস্কার করলো। বেচারা যায়েদ এতে দুঃখিত ও মনঃক্ষুণœ হয়ে নিজের জায়গায় চুপচাপ বসে থাকলেন। কিন্তু নবী সা. প্রকৃত ব্যাপার কী তা তিনি ঠিকই উপলব্ধি করতে পারলেন।
উমর রা. এ বিষয়টি জানতে পেরে নবী সা.-এর কাছে এসে বললেন, “আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই।” কিন্তু নবী সা. বললেন, “এ কাজ করো না। ধৈর্য ধরো। লোকে বলবে, মুহাম্মাদ সা. নিজের সঙ্গী-সাথীদেরকেই হত্যা করেছে।” উমার রা. আরো প্রস্তাব করলেন, যেহেতু আমি মুহাজির আমি হত্যা করলে নানান কথা উঠবে, তাহলে আপনি কোনো আনসার দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নিন। নবী করিম সা. এবারো তাঁকে নিভৃত করলেন। ধৈর্যধারণ করতে বললেন। এরপর নবী সা. তৎক্ষণাৎ যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিয়ে দিলেন। ক্রমাগত ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত যাত্রা অব্যাহত থাকলো। এমনকি লোকজন ক্লান্তিতে নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়লো। ক্লান্ত শ্রান্ত লোকজন মাটিতে পিঠ ঠেকানো মাত্র সবাই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। এ কাজ রাসূল সা. এ জন্য করলেন যাতে, মুরাইসি কূপের পাশে যে ঘটনা ঘটেছিল মানুষের মন-মগজ থেকে তা মুছে যায়। কিন্তু রাসূল সা.-এর ব্যাপারে আবদুল্লাহ বিন উবাই যে মন্তব্য করেছিলো তা ধীরে ধীরে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আনসার সাহাবীদের অনেকেই তাকে রাসূল সা.-এর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু সে তা করেনি। তার বেপরোয়া আচরণে সাহাবীদের মধ্যে তার সম্পর্কে আরো বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। এই ঘটনাকে ইঙ্গিত করে মহান রাব্বুল আলামিন সূরা মুনাফিকুনে মুনাফিকদের আচরণের সাথে মুসলিমদের পরিচয় করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, “যখন তোমার কাছে মুনাফিকরা আসে, তখন বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই তুমি তাঁর রাসূল। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। তারা নিজদের শপথকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। অতঃপর তারা আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে। তারা যা করছে, নিশ্চয়ই তা কতই না মন্দ! তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিল তারপর কুফরি করেছিল। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না।
আর যখন তুমি তাদের প্রতি তাকিয়ে দেখবে তখন তাদের শরীর তোমাকে মুগ্ধ করবে। আর যদি তারা কথা বলে তুমি তাদের কথা (আগ্রহ নিয়ে) শুনবে। তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতোই। তারা মনে করে প্রতিটি আওয়াজই তাদের বিরুদ্ধে। এরাই শত্রু, অতএব এদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করুন। তারা কিভাবে সত্য থেকে ফিরে যাচ্ছে! আর তাদেরকে যখন বলা হয় এসো, আল্লাহর রাসূল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা তাদের মাথা নেড়ে অস্বীকার করে। আর তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে, অহঙ্কারবশত বিমুখ হয়ে চলে যেতে। তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা না কর, উভয়টি তাদের ক্ষেত্রে সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। অবশ্যই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না। তারা বলে, যদি আমরা মদিনায় ফিরে যাই তাহলে অবশ্যই সেখান থেকে প্রবল দুর্বলকে বহিষ্কার করবে। কিন্তু সকল মর্যাদা তো আল্লাহর, তাঁর রাসূলের ও মুমিনদের। কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” (সূরা মুনাফিকুন : ১-৭) উস্তাদ আবুল আ’লা মওদূদী রহ. বলেন, এ ঘটনা থেকে শরিয়াতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা যায়। ১. ইবনে উবাই যে কর্মনীতি গ্রহণ করেছিল এবং যে ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত থেকে কেউ যদি এ ধরনের আচরণ করে তাহলে সে হত্যা যোগ্য অপরাধী। ২. শুধু আইনের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তি হত্যার উপযুক্ত হলেই যে তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে তা জরুরি নয়। এরূপ কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দেখতে হবে, তাকে হত্যা করার ফলে কোনো বড় ধরনের ফিতনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে কিনা। পরিবেশ-পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে অন্ধভাবে আইনের প্রয়োগ কোনো কোনো সময় আইন প্রয়োগের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী ফলাফল নিয়ে আসে। যদি একজন মুনাফিক ও ফিতনাবাজের পেছনে কোনো উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি থাকে তাহলে তাকে শাস্তি দিয়ে আরো বেশি ফিতনাকে মাথাচড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ দেয়ার চেয়ে উত্তম হচ্ছে, যে রাজনৈতিক শক্তির জোরে সে দুষ্কর্ম করছে কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তার মূলোৎপাটন করা।
এই সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যেই নবী করিম সা. তখনো আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে শাস্তি দেননি যখন তিনি তাকে শাস্তি দিতে সক্ষম ছিলেন। বরং তার সাথে সবসময় ন¤্র আচরণ করেছেন ও তার ব্যাপারে সতর্ক থেকেছেন। শেষ পর্যন্ত দুই তিন বছরের মধ্যেই মদিনায় মুনাফিকদের শক্তি চিরদিনের জন্য নির্মূল হয়ে গেল। সত্যিকারের মুনাফিক এখন আর নেই যারা ঈমান গোপন করে মুসলিম সমাজে বসবাস করে আসছে। তা আবদুল্লাহ বিন উবাই-এর সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। বাকি আছে যারা মুসলিম তবে আচরণ মুনাফিকের মতো। যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন তাদের যথাযথভাবে এই পাঠ নেয়া দরকার কিভাবে মুনাফিকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। আর এই পাঠ নিতে হবে রাসূল সা.-এর কর্মকৌশল থেকেই। লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
আপনার মন্তব্য লিখুন