post

রাসূল সা.—এর আল্লাহভীতি

ড. কামরুল হাসান

০৬ আগস্ট ২০২১

এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মহান রাব্বুল আলামিন। পৃথিবীকে সাজাতে আল্লাহর পরিকল্পনা অতীব মহান। এই পৃথিবীকে তিনি আবাদ করতে চেয়েছেন তারই মতো করে। আর সে লক্ষ্যেই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন মানবজাতি। পৃথিবীতে মানবজাতি প্রেরণের ইতিহাস খুবই সুবিদিত। মানবজাতি প্রেরণের এক বিশেষ লক্ষ্য ছিল মহান আল্লাহর। মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণের প্রেক্ষাপট, পূর্বপরিকল্পনা ও বিশেষ লক্ষ্য—উদ্দেশ্যের বিষয়গুলো খুবই সুবিদিত। মানব সৃষ্টির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আল—কুরআনে এসেছে— إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً “নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি প্রেরণ করতে চাই।” (২ : ৩০) মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন— وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ “আমি মানব ও জিন জাতিকে কেবলই আমার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” (৫১ : ৬৫) মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করতে এসে প্রায়শ আল্লাহকে ভুলে গেছে। আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়েছে। আর তখনই আল্লাহ পথহারা, আত্মভোলা মানুষদের সঠিক পথের দিশা দিতে, তাদেরকে সতর্ক করতে পাঠিয়েছেন একদল মহামানব তথা নবী ও রাসূলকে। এই নবী ও রাসূলের সর্বশেষ প্রতিনিধি মুহাম্মদ সা.। সকল যুগের সকল নবীই তার যুগের সকল মানুষের কাছে সর্বাধিক আল্লাহভীরুর প্রতীক। আমাদের নবী শেষ নবী। তিনি শুধু তার জামানা নয় বরং সকল জামানার সকল মানুষের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছিলেন। আল্লাহভীতি বা খোদাভীতি বুঝাতে ইসলামে خوف الله বা خشية الله শব্দের বা পরিভাষার ব্যবহার লক্ষণীয়। অবশ্য এটিتقوى الله —র আরেক রূপ। আল—কুরআনে خوف ও خشية এ দুইটি শব্দেরই ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন— وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ“আর যে তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় করে তার জন্য রয়েছে দুইটি জান্নাত।” (৫৫ : ৪৬) অন্যত্র এসেছে — إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ “নিশ্চয়ই যারা তাদের অদৃশ্য রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।” (৬৭ : ১২) অভিধানে خوف ও خشية মূলত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি ভয়ভীতি, আতঙ্ক, ডর, শঙ্কা, আশঙ্কা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করা হয়। একইভাবে تقوى শব্দটিও বেঁচে থাকা, রক্ষা পাওয়া, যাচাই বাছাই করে চলা ইত্যাদি অর্থে এসে থাকে। تقوى الله বা বলে খোদাভীতি বা পরহেজগারি এটি অত্যন্ত সুবিদিত। তবে পরিভাষায় خوف ও خشية বলে মনের এমন অবস্থাকে বুঝানো হয় বিনয় ও আনুগত্যের মাধ্যমে দেহে যার প্রভাব বিস্তার করে থাকে। (আদওয়াউ আল—বায়ান) আবার কোনো কোনো ভাষাতাত্ত্বিক خوف ও خشية এর মাঝে সূক্ষ্ম পার্থক্য সূচিত করেন। তারা বলেন— خوف হলো বুঝতে পারা মাত্র কোনো অন্যায় কর্ম হতে মনকে নিষ্কৃতি দেওয়া বা তা হতে বেঁচে থাকা। আর অন্যায় চিন্তায় আড়ষ্ট হওয়ার ভয়ে নিশ্চুপ হওয়া এবং জমে যাওয়ার নাম خشية। অর্থাৎ خوف আম। আর خشية খাস। (মাদারিজু আস—সালিকিন—১/৫০৮) মূলত خشية الله বা আল্লাহ ভীতি হলো মনের ঐ সঙ্গিন অবস্থা যা তার ইবাদাতের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। ইবাদাতের ক্ষেত্রে এটি অন্তরের সব থেকে ভালো অবস্থা। অন্তরের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থাও এটি। خشية الله হলো মনের এমন অবস্থা যা মুমিনকে তার অবসরে আল্লাহর পর্যবেক্ষণে থাকার চেতনাকে শাণিত করে। লোকচক্ষুর অন্তরালে ও অবচেতন মনেও এ চেতনার উত্তুঙ্গ অবস্থান সুনিশ্চিত করে। এই বান্দার ধ্যানে—জ্ঞানে আল্লাহর চিন্তা জাগরূক থাকে। এদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে— إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ “নিশ্চয়ই আলেমরাই কেবল আল্লাহকে যথোচিত ভয় করে থাকে।” (৩৫ : ২৮) অর্থাৎ সে এই বিশ^াস চূড়ান্তভাবে লালন করে যে, আল্লাহই সর্বশক্তির মালিক। সকল ক্ষমতার আধার। মহান পরাক্রমশালী। তিনিই জান্নাত ও জাহান্নামের ¯্রষ্টা। তিনিই কেবল এই ভীতি ও শঙ্কার উত্তরাধিকারী বানাতে পারেন। তার সাথে বান্দাকে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন। যারা তাকে তার সন্তুষ্টির জন্য ভয় করে তাদেরকে যথাযথ প্রতিদান দিতে পারেন। তাদেরকে জান্নাতের মেহমান করতে পারেন। جَزَاؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ “তাদের রবের নিকট রয়েছে তাদের পুরস্কার হিসেবে স্থায়ী জান্নাত। যার তলদেশে নদ—নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট। এটি তার জন্য যে তার রবকে ভয় করে।” (৯৮ : ০৮) সালেহ আহমদ আল—শামি তার সিরাতে রাসূলের আল্লাহ ভীতি অধ্যায়ে উল্লেখ করেন— প্রকৃত আল্লাহভীতি হলো— ভবিষ্যতে কোনো অপছন্দনীয় কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় অন্তরে খারাপ লাগা বা কষ্ট অনুভব করাই خوف الله বা আল্লাহভীতি। মানব মনে আল্লাহভীতি সঞ্চারের সচরাচর কারণ তিনটি— ক. আল্লাহর জাত ও সিফাত এর সম্যক অবগতির কারণে। যেমন আল্লাহ জাব্বার বা পরাক্রমশালী, আল্লাহ কাহ্হার বা কঠোর শাস্তি দাতা, আল্লাহ আজিজ বা অপরাধীর প্রতি নির্মম ইত্যাদি গুণবাচক নামের মাহাত্ম্য জানলে স্বভাবতই মুমিনের خوف الله বা আল্লাহভীতি বেড়ে যাবে। সেটিই স্বাভাবিক। খ. বান্দার গোনাহ ও অপরাধের কারণে বান্দার পুনঃপুন অপরাধ ও গোনাহে লিপ্ত হওয়ার পরে অনুতপ্ততা ও অনুশোচনা তৈরি হলে তখন মানব মনে আল্লাহভীতির পরিমাণ বেড়ে যায়। গ. আবার কখনও এতদুভয় কারণেই বান্দার মনে আল্লাহভীতি জন্ম নেয়। আসলে বান্দার মনে আল্লাহভীতির নেপথ্যে কারণ হলো— আল্লাহর ধ্যান, তার অনুধ্যান, আহলুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত হওয়া সর্বোপরি আল্লাহ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন। তাই তিনি আল্লাহকে ভয় করেন যিনি আল্লাহকে বেশি জানেন। মুমিন জিন্দেগিতে خوف الله এর প্রভাব— মুমিন জীবনের প্রাণ এই خوف الله বা আল্লাহভীতি। মুমিন জীবনের পরিচ্ছন্নতা ও পরিশুদ্ধতায় خوف الله এর প্রভাব অত্যধিক। ক. خوف الله এমন এক গুণাবলি যা কেবল মুত্তাকি ও একনিষ্ঠ বান্দারাই তার উত্তরাধিকার হতে পারে। কোনো কপটচারী, দ্বিচারী বান্দার মনে خوف الله’র কোনো প্রভাব থাকে না। খ. خوف الله বান্দাকে যে—কোনো ধরনের অন্যায়, অন্যাচার, পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে হেফাজত করে। গ. সব থেকে বড় কথা হলো— خوف اللهই বান্দার আমলকে একনিষ্ঠ হতে সাহায্য করে। বরং আমলের ইখলাসের নেপথ্য কারণও এটি। এই কারণেই خوف الله বা আল্লাহভীতিকে নবী—রাসূলগণের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা করা হয়। যা কেবলমাত্র সালেহিনদের বিশেষত্ব। আর আল্লাহভীতিই জগৎ ¯্রষ্টাকে মহান করে তোলে। আল্লাহভীতি প্রকৃতই একটি পবিত্র বৃক্ষতুল্য। এ পবিত্র বৃক্ষ যার অন্তরে অঙ্কুরিত হয় তখনই তা তার দেহেও সম্প্রসারিত হয়। তার কথা, কাজ ও সৎকর্মের মাধ্যমে তা ফলবান হয়। কোনো অন্তর যখনই এর পবিত্র বৃক্ষের অঙ্কুর শূন্য হয়। তখন ঐ অন্তর বিরান হয়ে যায়। তার অন্তর বিনষ্ট হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে— আল্লাহর ভীতি থেকে মুক্ত অন্তর অবশ্যই বিরান অন্তর। আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত অন্তরের তুলনা পবিত্র বৃক্ষের সাথে সত্যিই অতুলনীয়। এ অতুলনীয় তুলনা আমাদের সামনে প্রতিভাসিত করে আল্লাহ বলেন— أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ —— وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِنْ فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِنْ قَرَارٍ “তুমি কি লক্ষ করনি, আল্লাহ কিরূপে উপমা প্রদান করেন? তিনি উত্তম কথার তুলনা প্রদান করেন উত্তম বৃক্ষের সাথে, যে বৃক্ষের মূল সুদৃঢ় এবং শাখা প্রশাখা আকাশসম বিস্তৃত।” (১৪ : ২৪) “আর তিনি অনুত্তম কথার উপমা দেন অনুত্তম বৃক্ষের সাথে যার মূল মৃত্তিকার উপরিভাগ থেকেই বিচ্ছিন্ন এবং যার কোনো স্থায়িত্ব নেই।” (১৪ : ২৬) আয়াতের উত্তম কথার সাথে আল্লাহভীতির প্রযুক্ত অন্তর এবং অনুত্তম কথার সাথে ভীতিহীন অন্তরের সাযুজ্য সত্যিই চিত্তাকর্ষক। আল্লাহর বান্দাদের মর্যাদা, সুকীর্তি মূলত আল্লাহভীতি নির্ভর। আল্লাহর যে বান্দা আল্লাহকে যত বেশি ভয় করে সে বান্দা ততবেশি আল্লাহর ঘনিষ্ঠ ও সন্বিষ্ট। এ ক্ষেত্রে নবীদের অবস্থান সর্বাগ্রে গণ্য। নবীদের চারিত্রিক প্রশংসা ও স্তুতিপূর্বক আল্লাহ বলেন— إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ “নিশ্চয়ই তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ভীতি ও আশার সাথে ডাকত, তারা আমার প্রতি বিনীত ছিল।” (২১ : ৯০) এভাবেই আল্লাহ সার্বিকভাবে নবীদের আল্লাহভীতির সংপ্রশংস বর্ণনা করেছেন। আর আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা. সর্বসম্মতভাবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ। সুতরাং তার আল্লাহভীতিও হবে সর্বাধিক। তাছাড়াও মানব মনে আল্লাহভীতির সৃষ্টি হয় আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের কারণে। এ বিবেচনায়ও তিনি সকল বান্দার মাঝে সর্বাধিক আল্লাহভীরু। স্বয়ং রাসূল সা. তার জবানিতে বলেন أنا أعرفكم بالله وأخوفكم منه আমিই তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে বেশি চিনি। আর আমিই তোমাদের মাঝে সর্বাধিক আল্লাহকে ভয় করি। আমাদের বক্তব্য “আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিই আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’’ তার স্বপক্ষে শক্তিশালী দলিলও এটি। সিরাতে নববীতে এমন অসংখ্য প্রেক্ষিত পরিদৃষ্ট হয় যা রাসূল সা. এর প্রচণ্ড আল্লাহভীতি ও আল্লাহসচেতনতার পরিচয়বাহী। উদাহরণত আমরা উল্লেখ করতে পারি— সালাতের মাঝে আল্লাহর ভয়ে তার স্বভাবসুলভ ক্রন্দন— নবী মুহাম্মদ সা. সালাতের মধ্যে যখনই আল্লাহর আজাব—গজব, শাস্তি, কিয়ামতের ভয়াবহতা, আখিরাতের চিত্র ইত্যাদি বিষয় সংবলিত আয়াত তিলাওয়াত করতেন, তখন তিনি ভয় পেতেন, ভয়ে কেঁদে দিতেন। কখনওবা সে কান্নার শব্দ পাওয়া যেত। হাদিসে এসেছে—عن عبد الله بن الشخير رضي الله عنه قال أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو يصلي ولصدره أزيز كأزيز المرجل من البكاء আবদুল্লাহ ইবনু শুযখাইর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন— একদা আমি রাসূল সকাশে আসি। তখন তিনি নামাজ পড়ছিলেন। এমতাবস্থায় তার বুক হতে কান্নার গোঙানির শব্দ শুনা যাচ্ছিল। (আবু দাউদ : নাসিরুদ্দিন আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন) উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন— রাসূল সা. উঠলেন, পবিত্র হলেন। অতঃপর সালাতের মনস্থ করলেন। সালাতে তার কান্না শেষ হতো না অশ্রম্নতে তার বক্ষ সিক্ত না হওয়া পর্যন্ত। মা আয়েশা বলেন— অতঃপর তিনি কাঁদতে শুরু করতেন। কান্নার অশ্রম্নতে তার শ্মশ্রম্ন মোবারক সিক্ত হওয়া পর্যন্ত তিনি কাঁদতেই থাকতেন। মা আয়েশা বলেন— তার ফেঁাটাশ্রম্ন জমিনকে সিক্ত না করা পর্যন্ত তিনি কাঁদতেই থাকতেন। এরপর আজান দিতে বেলাল রা. এলেন। তিনি দেখেন রাসূল সা. তখনও কাঁদছেন। কৌতূহল ভরে বিলাল রা. জিজ্ঞেস করেন— ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি এভাবে কান্না করছেন কেন? অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বের ও পরের সকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন! রাসূল সা. জবাবে বলেন— আমি কি তার কৃতজ্ঞতাপরায়ণ বান্দার অন্তর্ভুক্ত হবো না? (ইবনু হাব্বান, আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন) আলী রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন— বদরের দিনে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তবে মিকদাদ জেগে ছিল। আর জেগেছিল রাসূল সা.। তিনি সেই রাতে একটি গাছের নিচে সালাত পড়ছিলেন আর কাঁদছিলেন। এভাবেই প্রত্যুষ হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ, আলবানি হাদিসটিকে সহিহ স্বীকৃতি দিয়েছেন) আবু ইয়ালা সহিহ সূত্রে মা আয়েশা রা. হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন— রাসূল সা. ঘুমাতেন। অতঃপর বিলাল রা.কে ডেকে পাঠাতেন আজান দেবার জন্য। এরপর তিনি গোসল করতেন। আমি দেখতাম তার চিবুক বেয়ে ও চুল থেকে ফেঁাটায় ফেঁাটায় পানি ঝরছে। এবার তিনি বাইরে যেতেন। সালাতে নিমগ্ন হতেন। তখন আমি তার কান্নার আওয়াজ পেতাম। রাসূল সা.—এর এ কান্না ছিল কুরআন তিলাওয়াতকালীন ও আল্লাহর ভয়ে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন— একদা রাসূল সা. আমাকে বলেন— তুমি আমাকে কুরআন পড়ে শোনাও। আমি বললাম। ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কি আপনাকে কুরআন পড়ে শোনাব অথচ এই কুরআন আপনার উপরেই নাজিল হয়? রাসূল সা. বলেন— হঁ্যা তুমি আমাকে কুরআন শোনাও। কারণ অন্যের কাছে কুরআন শুনতে আমি ভালোবাসি। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ বলেন, এবার আমি সূরা নিসা পড়তে শুরু করলাম। আমি যখন فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا আয়াতে পেঁৗছালাম। রাসূল সা. বলেন— এখন থামো। আমি রাসূল সা.—এর দিকে তাকালাম। দেখি তার অঁাখিযুগল থেকে ফেঁাটায় ফেঁাটায় অশ্রম্ন ঝরছে। (বুখারি) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন— একদা আবু বকর রা. রাসূল সা.কে লক্ষ্য করে বলেন— ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো সাদা হয়ে গেলেন। রাসূল সা. বলেন— সূরা হুদ, সূরা আল—ওয়াকিয়া, সূরা আল—মুরসালাত, সূরা আন—নাবা, সূরা তাকভীর আমাকে হলুদ বানিয়েছে। (তিরমিজি, আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। তবে অন্য বর্ণনায় এসেছে আমাকে সূরা হুদ ও তার সহোদররা বৃদ্ধ বানিয়েছে তথা চুল—দাড়ি সাদা করেছে।) বিদগ্ধ আলেমসমাজের সুচিন্তিত ও সর্বসম্মত মতামত এটিই যে, ঐ সকল সূরার মধ্যে আখিরাত, কিয়ামত, পুনরুত্থানের ভয়াবহতা, হুমকি, শাস্তির অনিবার্যতা, পাপীদের নিশ্চিত ধ্বংস, দুর্গতি ও পরিণামহীন পরিণতির সংবাদেই তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়তেন। আর এই বিমর্ষ চিন্তা ক্রমশ তাকে সাদা করে। বৃদ্ধাবস্থার দিকে ঠেলে দেয়। ঐ সকল সূরায় কিয়ামাতের বিহ্বলতা, আখিরাতের সকরুণ দৃশ্য, পুনরুত্থানের সঙ্গিন অবস্থা, হাশর মাঠের একাকিত্ব, তৃষ্ণার অমানবিক যন্ত্রণা, ঘামের দুর্বিষহতা যে—কোনো মুত্তাকিকেই ভীত বিহবল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এই সকল দুর্বিপাক চিন্তা মুমিনদের সত্বর বিষণ্ণ করে এবং তাদের বয়োবৃদ্ধতা ত্বরান্বিত করে। বিভিন্ন বৈশি^ক নিদর্শনের প্রেক্ষিতে রাসূল সা.—এর আল্লাহভীতি, বৈশি^ক নানান নিদর্শন ও আল্লাহর পক্ষ হতে বৈচিত্র্যময় শাস্তি ও আশঙ্কার আগমনবার্তায় রাসূল সা. ভীত হয়ে যেতেন, সহসা আল্লাহর আজাবে নিমজ্জিত হওয়ার ভয় পেতেন। এ সকল নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ, ঘূর্ণিবার্তা, প্রবল ঝড়, বিজলি চমক, আকাশের গর্জন, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি। মা আয়েশা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন— আমি রাসূল সা.কে কখনও উচ্চস্বরে হাসতে দেখিনি। তিনি মুচকি হাসতেন। আয়েশা রা. বলেন— তিনি যখন মেঘ দেখতেন, কিংবা ঝড় প্রত্যক্ষ করতেন তখন তার চেহারা দেখলেই তা অনুমান করা যেত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি লোকজনকে দেখি তারা মেঘ দেখলে খুশি হয়। এই আশায় যে, শিগগির বৃষ্টি নামবে। অথচ আপনাকে কী দেখি? মেঘ দেখলেই আপনি বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। আপনার চেহারায় অতুষ্টি লক্ষ্য করি। আয়েশা রা. বলেন— রাসূল সা. আমাকে বলেন— হে আয়েশা, এতে যে আল্লাহর আজাব নেই সে ব্যাপারে কেউ আমাকে নিশ্চিত করেনি। কারণ ইতঃপূর্বে অনেক জাতিকে এই বাতাস দিয়েই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর ঐ জাতি শাস্তি দেখে বলতে শুরু করেছে— فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ قَالُوا هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا بَلْ هُوَ مَا اسْتَعْجَلْتُمْ بِهِ رِيحٌ فِيهَا عَذَابٌ أَلِيمٌ “অতঃপর যখন তারা তাদের উপত্যকার দিক হতে মেঘ আসতে দেখল তখন বলে উঠল, এই মেঘ এখনই আমাদেরকে বৃষ্টি দিবে। (আর তাদের নবী তাদেরকে বলল) এটি মেঘ নয়, এটি হলো সেটি যা তোমরা তাড়াতাড়ি পেতে চেয়েছে। এটি আসলে ঝড়ো হাওয়া যাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (৪৬ : ২৪) (মুসলিম) নবী সা.—এর মনে এ শঙ্কা কাজ করত যে, যে—কোনো সময় তাকে অবাধ্য ও বিদ্রোহী জাতিসমূহের শাস্তি পেয়ে বসতে পারে। বিগত জাতিসমূহের আজাব বিষয়ে লোকজন প্রায়ই অচেতন ও উপেক্ষাপ্রবণ হয়ে থাকে। আর তিনি এটিকেই বেশি ভয় পেতেন। তাদের জনপদের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পেতেন, সতর্কতা অবলম্বন করতেন। যদি না তার উপরও ঐ রূপ আজাব পতিত হয়। মূলত এটি রাসূল সা. এর উম্মতের প্রতি করুণা ও অনুগ্রহ প্রবণতা। যাতে যাবতীয় আজাব ও শঙ্কা থেকে তার উম্মত নিষ্কৃতি পেতে পারে। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন— যখনই ঝড়—বাদল শুরু হতো তখন তিনি বলতেন— اللهم إني أسئلك خيرها وخير ما فيها وخير ما أرسلت به وأعوذ بك من شرها وشر ما فيها وشر ما أرسلت به হে আল্লাহ! আমি তোমা হতে এর ও এর মধ্যস্থিত কল্যাণই প্রত্যাশা করি, এতদসহ প্রেরিত কল্যাণ যাচনা করি। এর অনিষ্টতা, এর মধ্যকার অকল্যাণ ও এতদসহপ্রেরিত সমুদয় অকল্যাণ হতে পানাহ চাই। মা আয়েশা আরো বলেন— যখনই দিগন্তে মেঘমালা জমত, বিজলি চমক দিত, আসমান তর্জন—গর্জন করত তখন তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। ঘন ঘন আসা যাওয়া করতে থাকতেন, পায়চারি করতেন, অস্থির হয়ে পড়তেন। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে তিনি প্রসন্ন হতেন। আবু মুসা আশয়ারি রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন— একবার সূর্যগ্রহণ হলো— তিনি ভীত হলেন। তিনি এত ভীত হলেন যেন কিয়ামত সংঘটিত হবে, এমন ভয় পেয়ে যান। এরপর তিনি মসজিদে নববীতে যান। সালাতে দাঁড়ান। সালাতে কিয়াম, রুকু ও সিজদা অত্যন্ত প্রলম্বিত করেন। আমি এর আগে কখনও এতটা প্রলম্বিত সালাত দেখিনি। তিনি বলেন— এসব নিদর্শন আল্লাহ প্রেরণ করেন। এ নিদর্শন কারো জীবন বা মৃত্যুর জন্য নয়। বরং এটির মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাকে ভয় দেখাতে চান। অতএব তোমরা যখনই এমন কিছু দেখবে। তখনই তোমরা ভীত হবে। বিনয়ের সাথে তার স্মরণ করবে, তার কাছে দুআ করবে, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। মর্যাদাবতী সাহাবি আসমা বিনতে আবু বকর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন— একদা নবী সা. এর যুগে সূর্য গ্রহণ হয়। নবী সা. ভীত হয়ে পড়েন। তিনি ভুল করে চাদর নিতে গিয়ে তরবারি হাতে করেন। পরে চাদর নেন। এরপর তিনি আল্লাহর ভয়ে কাঁদতে শুরু করেন। হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি রাসূল সা.—এর সাথে নামাজ আদায় করেছেন। সালাতে তেলাওয়াতের সময় রহমতের কোনো আয়াত আসলে তিনি থামতেন। আবার আজাবের কোনো আয়াত আসলেও তিনি থামতেন, পানাহ চাইতেন। একইভাবে পবিত্রতার আয়াত আসলেও তিনি থামতেন, তসবিহ পড়তেন। আবু জার গিফারি রাদ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন— রাসূল সা. বলেন— নিশ্চয়ই আমি এমন কিছু দেখি যা তোমরা দেখ না। আমি এমন কিছু শুনি যা তোমরা শোন না। আকাশ বিকট আওয়াজ করে যা তার জন্য সমীচীন বটে। আকাশে চার আঙুল পরিমাণ স্থানও বাকি নেই। যেখানে ফিরিস্তারা সিজদারত নেই। আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা হাসি—ঠাট্টা কমিয়ে দিতে, কান্না বাড়িয়ে দিতে। নারী—সঙ্গ লাভে অনীহ হয়ে পড়তে। আল্লাহর আশ্রয় প্রত্যাশায় পাহাড় জঙ্গলের দিকে বেরিয়ে যেতে। আবু জার বলেন— হায়! আমি যদি সমূলে উপড়ে ফেলা কোনো গাছ হতাম। আমরা পূর্বেও বলেছি, আবারও বলছি রাসূল মুুহাম্মদ সা. ছিলেন সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আদম (আ)—এর সন্তানদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আখিরাত দিবসের ঘোরতর দুঃসময়ে তিনি হবেন হাউজে কাউসারের সম্মতিপ্রাপ্ত অধিকর্তা। জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবার প্রাক্কালে কঠিন বিপদ মুহূর্তে তিনিই হবেন একমাত্র সুপারিশকারীর মর্যাদাপ্রাপ্ত। যাকে সম্মানিত করেছেন মহান আল্লাহ। যাকে মনোনীত করেছেন মর্যাদার জন্য। সকল নবী—রাসূলের মাঝে আল্লাহ যার সম্মান, মর্যাদা ও অবস্থানকে করেছেন সমুন্নত। আর সেই মহামানবই আল্লাহকে সব থেকে বেশি ভয় করতেন। তার ভয়ই তাকে সালাতে বিনয়ী করত, তিনিও অঝোরে অশ্রম্ন বিসর্জন দিতেন। একইভাবে আল—কুরআন তিলাওয়াত করা বা শোনার সময়ও তার এই অশ্রম্নপাত পরিলক্ষিত হতো। আর যখনই কোনো বিপদ চিহ্ন তিনি প্রত্যক্ষ করতেন যেমন ঝড়ো বাতাস, তর্জন—গর্জন, অবিরাম বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যার আভাস তখনই তার চেহারা বিষণ্ণ ও বিবর্ণ হয়ে যেত। তার চেহারায় এর প্রভাব পড়ত। তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। অথচ রাসূল মুহাম্মদ সা. সর্বক্ষণের জন্যই আল্লাহর আজাব থেকে নিরাপদ ছিলেন। তাই রাসূল সা.—এর এহেন আচরণের শিক্ষা ও ইঙ্গিত এই যে, আমরা কখনই আল্লাহর কৌশল তথা আজাব থেকে শতভাগ নিরাপদ নই। এ বিষয়টির চিত্তাকর্ষক বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন— أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ “তারা কি আল্লাহর কৌশল হতে নিরাপত্তা লাভ করেছে? আসলে ক্ষতিগ্রস্তরাই কেবল নিজেদেরকে আল্লাহর কৌশল থেকে নিরাপদ মনে করে।” (৭ : ৯৯) এই আয়াত আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে একথা জানিয়ে দেয়— আমাদের ঈমানই কেবল আমাদেরকে আল্লাহর আজাব হতে শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে না। বরং বান্দার যথার্থ আল্লাহভীতিই তাকে যাবতীয় আজাব, আশঙ্কা ও আপদ থেকে বাঁচাতে পারে। তবে এই ঈমানও কোনো ঠুনকো বিষয় নয়। বরং তা আল্লাহর আজাব হতে বাঁচার শক্তিশালী বর্ম হিসেবে কাজ করে। কারণ ঈমানের হ্রাস—বৃদ্ধিতেই আল্লাহভীতির হ্রাস—বৃদ্ধি হয়। তাই আমরা দোয়া করি— يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك يا منور القلوب نور قلبي على طاعتك হে অন্তরের পরিবর্তনকারী— তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর অবিচল করে দাও। হে অন্তরের উজ্জ্বলতা দানকারী— তুমি আমার অন্তরকে তোমার আনুগত্যের আলোতে উজ্জ্বল করে দাও। উপরের আলোচনা এ কথার নিশ্চিত উপলব্ধি প্রদান করে যে, আল্লাহভীতি ছিল রাসূল সা. এর অন্তরের অনিবার্যতা। এক মুহূর্তের জন্যও তা আল্লাহভীতি থেকে মুক্ত থাকত না। বরং আল্লাহভীতিই ছিল তার মনন ও মানসের সার্বক্ষণিক সাথী। প্রিয় শিশু, বালক, কিশোর, যুবক, পরিণত বয়সের বন্ধুরা! রাসূলের জীবনচরিতেই পাওয়া যায় এমন প্রকৃষ্ট আল্লাহভীতির নমুনা। আমাদের আল্লাহ ভীতিও হতে হবে এ কষ্টিপাথরের আলোকেই যাচাই—বাছাইকৃত। সেই যাচাই—বাছাইয়ে উত্তীর্ণরাই হবে সফলকাম। নতুবা আমরাও হবো পশ্চাৎপদ, ভাগ্যহীন, কপালপোড়া। পরিশেষে আশার বাণী উচ্চারণ করেই আলোচনার যবনিকা রেখা টানতে চাই। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন— নিশ্চয়ই নবী সা. তিলাওয়াত করেন— رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ “হে আমার রব! নিশ্চয়ই এ মূর্তিগুলো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। তাই যে আমার অনুসরণ করে সে আমার দলভুক্ত।” (১৪ : ৩৬) আর ঈসা (আ) বলেছিলেন— إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ “আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তো তারা তো আপনারই বান্দা, আর যাদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৫ : ১১৮) এরপর রাসূল সা. দুই হাত উঁচু করে বলতে থাকেন আল্লাহ গো! হায় আমার উম্মত! হায় আমার উম্মত। এই বলে কাঁদতে থাকলেন। এবার আল্লাহ জিবরাইল (আ)কে ডেকে বলেন— জিবরাইল মুহাম্মদের কাছে যাও! তোমার রব তা জানেনই। তবুও তাকে তুমি জিজ্ঞেস করো। তোমার কান্নার কারণ কী? জিবরাইল (আ) রাসূল সকাশে আসেন। তাকে জিজ্ঞেস করেন। রাসূল তাকে সবকিছু জানিয়ে দেন। যথারীতি জিবরাইল এসে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিয়ে সবকিছু জানান। যদিও আল্লাহ তা সম্যক অবগত ছিলেন। আল্লাহ বলেন— হে জিবরাইল, তুমি মুহাম্মদের নিকটে গিয়ে বলো— সত্বর আমি তোমার উম্মতের ব্যাপারে সন্তুষ্টিচিত্ত হব। তাদের কোনো অনিষ্ট করব না। (মুসলিম) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্বাবস্থায় যাবতীয় ক্ষতিগ্রস্ততা ও অনিষ্টতা হতে আমাদেরকে হেফাজত করুন। অতএব পাঠকমণ্ডলী! فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ “অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। তোমরা আমাকেই ভয় করো। যদি তোমরা মুমিন হও।” (৩ : ১৭৫) أَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِين তোমরা কি তাদেরকে ভয় করছ? অথচ আল্লাহই এ ব্যাপারে অধিক হকদার যে, তোমরা তাকে ভয় করবে। যদি তোমরা মুমিন হও। (৯: ১৩) রাসূল সা. অত্যন্ত চমৎকারভাবে বলেছেন—والله إني أتقاكم لله وأخشاكم به আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যেই আমিই আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করি। তাকে ভয় করার ব্যাপারে তোমাদেরকে ভয় পাই। আসুন, আল্লাহভীতির গুণাবলি কেবলই মুমিনের জন্য নির্ধারিতÑ এ মহান গুণে বিভূষিত করি নিজেদেরকে। আল্লাহভীতির স্মারক রচনা করি আমাদের সমাজ ব্যবস্থাপনায়। আল্লাহভীতির কল্যাণই আমাদেরকে দিতে পারে ইহকালীন তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি। اللهم اغفر وارحم إنك أنت خير الراحمين

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির