বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: দেলাওয়ার হোসেনকে গ্রেফতারের পর টানা ৫২ দিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুর করেই যাচ্ছিলেন। শিবির সভাপতিকে মুমূর্ষু অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয় চ্যাংদোলা করে। এই মুমূর্ষু অবস্থা থেকে উঠে দৌড়ে পালাতে পারেন, এজন্য পায়ে পরানো হয় ডাণ্ডাবেড়ি। অজ্ঞান অবস্থায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি লাগিয়ে পুলিশ আদালতে হাজির করে। পত্রিকার পাতায় অজ্ঞান শিবির সভাপতির পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি লাগিয়ে চ্যাংদোলা করে আদালতে হাজির করার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার শারীরিক অবস্থা জানানোর জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এই আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, তার শরীরে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন নেই। যেখানে ছবি কথা বলে, সেখানে রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তাহলে তো বলাই যায়, সরকারের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই এই সংগ্রামী ছাত্রনেতাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশের বর্বর নির্যাতনের কাহিনী বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। লেখা হচ্ছে পত্রিকায়। টকশো’র বুদ্ধি ব্যাপারিরাও কম বলছেন না। কিন্তু সরকার কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করছে না। সরকারের পুলিশ বাহিনী একেবারেই বেপরোয়া। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশ এই বেপরোয়াভাব দেখাচ্ছে। কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশে মিডিয়ায় বলেছেন, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে রাজপথে প্রকাশ্যে নির্যাতনের পুরস্কার হিসেবে রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয়েছে এক পুলিশ কর্তাকে। দেশের প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত অসংখ্য ব্যক্তির প্রতি পুলিশের এই আচরণ ফুটে উঠেছে। তাদের বেলায় যখন এই পরিণতি, সাধারণ নাগরিকের কী অবস্থা সেটা সহজেই অনুমেয়। পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে গিয়ে এই বাহিনী নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। নানা ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিধিবদ্ধ আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পুলিশ বিভাগে আইন না মানার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আইনের রক্ষক হয়ে পড়ছে ভক্ষক। আইনগতভাবে পুলিশের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এখন তো দেশের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, দেশের মানুষ এখন সবচেয়ে অনিরাপদ হয়ে পড়ছে পুলিশের কাছে। বিপদে পুলিশের সাহায্য চাওয়া দূরে থাক, গ্রেফতারবাণিজ্যের ভয়ে পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চাইলেও এখন সাধারণ মানুষের জন্য তা কঠিন হয়ে পড়ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে বেআইনি অর্থ আদায়, পিটিয়ে হত্যা, উপরোক্ত পদ্ধতিতে রিমান্ডের নামে র্যিাতন, এমনকি থানায় নিয়ে গুলি করে পঙ্গু করার মতো অপরাধে জড়িত থাকার বহু অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু এবং নারীর শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। ক্ষমতাসীন দল যেমন রাষ্ট্র পরিচালনায় সব ব্যর্থতার জন্য জামায়াত-শিবির, হেফাজত ও বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর কৌশল নিয়েছে, পুলিশও তেমনি হয়রানি, নির্যাতন ও ঘুষ আদায়ের জন্য নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করে জামায়াত-শিবির ও হেফাজত বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে নির্মম ঘটনা হচ্ছে, মানুষকে ধরে এনে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করা হচ্ছে। এভাবে আইস হাতে তুলে নিয়ে মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করার ঘটনা আর কোনো দেশে ঘটে বলে জানা যায় না। পুলিশের এ ধরনের অপরাধের পরও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এর ফল হিসেবে পুলিশ ধীরে ধীরে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মতো দানবে পরিণত হচ্ছে। সরকার যদি অবিলম্বে কঠোরভাবে তার অধীনস্থ বাহিনীগুলোর লাগাম টেনে ধরতে না পারে, এর দায়দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদেরই নিতে হবে। আর এর সুদূরপ্রসারী ফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
আপনার মন্তব্য লিখুন