post

শহীদ আবদুল মালেক : বিশুদ্ধ চেতনার রাহবার

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ

১২ জানুয়ারি ২০২৪

শহীদ আবদুল মালেক; সমকালীন ইতিহাসে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং খুলুসিয়াতের সাথে দীনি দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গ আলোচিত হলেই এই নামটি উচ্চারিত হয়। শিশু-কিশোর বয়স থেকেই এই নামের সাথে আমার পরিচয় ছিল। আমার ছোট দাদু মরহুম মাওলানা আবদুল গফুর (রহ) এর মুখে শুনেছিলাম তাঁর কীর্তিগাঁথা জীবনের গল্প। বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের সূচনালগ্নের অন্যতম সাহসী কান্ডারি ছিলেন দাদু। ১৯৫০ সালের দিকে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল ইসলামী আন্দোলনের সূচনাপর্ব। সেই থেকে জীবনের শেষ অবধি তিনি দীনের দায়ী হিসেবে কাজ করে গেছেন। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের পাঠকালীন বয়সেই শহীদ আবদুল মালেকের স্বার্থক জীবনের ইতিহাস শুনিয়েছিলেন তিনি। একজন মানুষ কতটা মেধাবী, সৎ-সাহসী, নেতৃত্বের নিখাঁদ গুণাবলির অধিকারী এবং নিরহংকারী সাদাসিদে জীবনের অধিকারী হতে পারে সেই গল্প থেকে জেনেছিলাম। খুব বেশি কিছু না বুঝতে পারলেও একজন ভালো মানুষ হিসেবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছিল। নিজেরা কমবেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।

শহীদ আবদুল মালেক সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানার সুযোগ হয় ১৯৮৫ সালে সারিয়াকান্দি মাদরাসায় ভর্তি হবার পরে। তৎকালীন বড়ভাই সিরাজুল ইসলাম এবং আবু তাহের সিদ্দিকীর আলোচনা থেকে জানার সুযোগ হয়। ১৯৮৬ সালে শহীদ পরিবারের অন্যতম সদস্য মুন্সি আবদুল বাছেদ এর সাথে পরিচয় হয়। যখন জানলাম, তিনি শহীদ আবদুল মালেকের ভাতিজা। তখন তাঁর প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠল। ১৯৮৮ সালে শহীদ আবদুল মালেকের বাড়িতে অনুষ্ঠান। বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের মানিকপোটল গ্রামে তাঁর বাড়ি। সেখানে আসবেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল আমিনুল ইসলাম মুকুল। ইসলামী শিক্ষা দিবসকে ঘিরে সেমিনার ও আলোচনা সভা। অনেক বড় আয়োজন। কোনোভাবেই মিস করতে চাইনি।

লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে আসার পরে শহীদ আবদুল মালেক নামটি আমার কাছে হয়ে ওঠে অন্যতম আদর্শিক সিম্বল। তাঁর কবর জিয়ারতের জন্য হৃদয়টা আকুলি বিকুলি করতো নিয়মিত। আমি তখন বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি সিনিয়র মাদরাসার ছাত্র। আলিম দ্বিতীয়বর্ষে পড়ি। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস চোখে-মুখে। বেশ কয়েকজন মিলে সাইকেল চালিয়ে সারিয়াকান্দি থেকে মানিকপোটলে গিয়েছি। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। বগুড়া জেলা সভাপতি আবু তাহের সিদ্দিকী এবং সেক্রেটারি নাসির উদ্দিনসহ ছাত্রআন্দোলন ও বৃহত্তর সংগঠনের নেতাকর্মী এবং ইসলামপ্রিয় জনসাধারণের সমন্বয়ে দারুণ একটি জমজমাট অনুষ্ঠান হয়েছিল সেখানে। সুন্দর চেহারার মানুষ ডা. আমিনুল ইসলাম মুকুলকে দেখে অভিভূত হয়েছি। হাতে হাত মিলিয়ে দুটো কথা বলতে পেরে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। সবচেয়ে বেশি আপ্লুত হয়েছি শহীদ আবদুল মালেকের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে। আবেগে অশ্রু ঝরিয়েছি। মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেবার ওয়াদা করেছি। 

শহীদ আবদুল মালেকের ভাইপো মুহাম্মদ আবদুল বাছেদ তখন বগুড়া জেলার শেরপুর শহর শাখার সভাপতি। এই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং মুগ্ধতা আরো ছড়িয়ে পড়েছিল শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হতে পেরে। শহীদের ভাই এবং ভাতিজাগণের সাথে কথা বলে সত্যি অন্য আরেক ভূবনে নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম। তাদের আন্তরিক আতিথেয়তা এবং শহীদ আবদুল মালেকের টানে সেদিন গোসাইবাড়িতেই থেকে যাই। শহীদ আবদুল মালেক যেখানে শুয়ে আছেন- গোসাইবাড়ির মানিকপোটলেই ছিলাম। প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তেই গিয়েছিলাম কবর জিয়ারতে। পরের দিন সাইকেল চালিয়ে আবার ফিরে এসেছি সারিয়াকান্দিতে।

ক্রমশ এ পরিবারের সাথে সখ্যতা বাড়তে থাকে। অধ্যাপক মুনসী আবদুল বাছেদ। বগুড়া জেলা শাখায় প্রায় সোয়া পাঁচ বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় পুরো সময়টা একসাথেই কাজ করেছি। তাঁর ছোটভাই মাওলানা খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ফজলুল হক, মুহাম্মদ ইউনুস আলী, এ্যাড. আলমীর হোসাইন, মুহাম্মদ শামসুল আলামিন, ড. মোস্তফা মনোয়ার, ডা. আনোয়ার হোসেন সকলের সাথেই একান্তভাবে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। বিশেষকরে আলমগীর, মনোয়ার এবং আনোয়ারকে পেয়েছিলাম বেশ ছোট অবস্থায়। তিনজনেই প্রখর মেধার অধিকারী। ভালো আবৃত্তি করতে পারতো। শহীদ আবদুল মালেকের ভাতিজা হিসেবে চাচার বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করে এগিয়ে যাবার প্রয়াস তাদের সকলের মধ্যেই দৃশ্যমান। তাদের সাথে অনেকটা পারিবারিক সদস্যের মতোই আছি আজও।

বগুড়ায় থাকালীন শহীদ আবদুল মালেক ট্রাস্ট এবং মূল সংগঠনের আয়োজনে অনেকবার নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনে সম্পৃক্ত ছিলাম। তাঁকে নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধও লিখেছিলাম ইতোপূর্বে। ১৯৯৩ সালে তাঁকে নিয়ে প্রথম প্রবন্ধ লিখি দৈনিক পত্রিকায়। সেই আবেগ এবং ভালোবাসর অনুভূতি আজও অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস হিসেবে সামনে এগিয়ে নেয়। হতাশা দূর করে। সত্যিকারের সফলতার গান শোনায়। চেতনার উৎসমূলে কড়া নাড়ে। তাইতো এই নামটি ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর হৃদয়ের মণিকোঠায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা। এই নাম বিপ্লবী সুর সৃষ্টি করে। স্পন্দন জাগায় হৃদয়ে হৃদয়ে। স্বপ্ন জাগায় হাজারো স্বপ্নবাজ মানুষের বুকে। 

আবদুল মালেক শুধু একজন শহীদই নন, ইসলামী আন্দোলনের অনুকরণীয় একজন আদর্শিক ব্যক্তিত্ব। জ্ঞানে, ধ্যানে, চিন্তা-চেতনায় একজন মানুষ কত উজ্জ্বল হতে পারে শহীদ আবদুল মালেক তারই এক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, ছাত্রজীবন, সাংগঠনিক জীবন, তাঁর লেখনি, চিঠিপত্রের আদান-প্রদান, দায়িত্বশীলদের সাথে মেলামেশা প্রত্যেক ক্ষেত্রে শিক্ষণীয় অধ্যায় খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর সহপাঠী ও বন্ধুদের লেখার মাধ্যমে যতটুকু জানার সুযোগ হয়েছে তাতে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়- শহীদ আবদুল মালেক হচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য প্রেরণায় এক অনুপম প্রতীক। 

মানিক পোটল গ্রামের পাশেই খোকশাবাড়ী স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন আবদুল মালেক। তারপর গোসাইবাড়ী হাই স্কুল। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য ভর্তি হন বগুড়া জিলা স্কুলে। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে মেধা তালিকায় ত্রয়োদশতম স্থান অধিকার করেন। এইচএসসি পড়ার জন্য ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। রাজশাহী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান লাভ করেন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে প্রাণরসায়ন বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবশেষে আরেকটি কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য জাতিকে অপেক্ষমান রেখে তিনি চলে যান মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে।

শহীদ আবদুল মালেকের চরিত্রে আল্লাহভীতি ও দুনিয়াবি যোগ্যতার যে সমন্বয় ছিল তা আজো আমাদের স্বপ্নজাগায়। আসহাবে রাসূল (সা) এর অনুসরণ ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিগুলো পড়লে আজও শরীরে শিহরণ জাগে। লেখনীতে বাহুল্যতা নেই, সংক্ষিপ্ত অথচ প্রভাব বিস্তারকারী। দায়িত্বশীল হিসেবে তিনি অনুপ্রেরণার উৎস। নিবিড় তত্ত্বাবধানকারী দায়িত্বশীল হিসেবে তাঁর দৃষ্টান্ত ছিল অনন্য। নামাজ কাজা বন্ধ করার জন্য ফজলুল হক হল থেকে কর্মীর হোস্টেলেই গিয়ে তিনি ডেকে তুলেছিলেন। দায়িত্বশীল মানেই একজন সেবক- তার প্রমাণ তাঁর চরিত্রে সমুজ্জ্বল। বাড্ডায় টিসিতে টয়লেট মজবুত নয় মর্মে ইহতেসাবের পর তিনি নিজেই রাতে এক বুক পানিতে নেমে টয়লেট ঠিক করেছেন। পরিচালকের জন্য ইহতেসাব গ্রহণের এ দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। 

আবদুল মালেকের শাহাদাতের ঘটনাটি ছিল নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের ফসল। ১৯৬৯ সালে শহীদ আব্দুল মালেকসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এয়ার মার্শাল নূর খানের সাথে সাক্ষাত করে দেশে সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর দাবি করেন। শহীদ আবদুল মালেকের প্রতিনিধি দলের পর দেশের অন্যান্য সংগঠনও একই দাবী তোলেন। সবার দাবির মুখে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকার নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে এবং কমিশন একটি শিক্ষানীতিও ঘোষনা করে। ঘোষিত শিক্ষানীতিতে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও এতে ইসলামী আদর্শের প্রাধাণ্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষীচক্রের কাছে তা পছন্দ হয়নি। তারা এ শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি জানায়। এমনই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে জনমত জরিপের আয়োজন করা হয়। জনমত জরিপের অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক এডমিনিনিস্ট্রেশন (নিপা) ভবনে (বর্তমান ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) এ শিক্ষানীতির ওপর একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় বামপন্থীদের বিরোধীতামূলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। অসাধারণ মেধাবী বাগ্মী শহীদ আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্যে উপস্থিত সবার চিন্তার রাজ্যে এক বিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল মালেক সে সময়ে জাতির বৃহত্তর কল্যাণকে সামনে রেখে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিকে উপলব্ধি করেছিলেন। একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ কিংবা আধুনিকতা দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নৈতিকতাহীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সাথে সাথে স্বকীয় ভাষা-সংস্কৃতির নির্বাসন হবে। তাই তাঁর বক্তব্যের এ ধারণাটিকে তিনি যুক্তিসহকারে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বক্তব্যে ঈড়সসড়হ ংবঃ ড়ভ পঁষঃঁৎধষ াধষঁবং এর ধারণা উত্থাপন করে এর সুন্দর ব্যাখ্যা ও যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। ফলে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়। উপস্থিত শ্রোতা, সুধীমণ্ডলী এবং নীতি নির্ধারকরা শহীদ আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে একটি সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে মত প্রদান করেন। 

নিপার আলোচনা সভায় তাদের শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ার পর হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ডাকসুর নামে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার পক্ষে প্রস্তাব পাশ করানোর উদ্দেশ্যে ১২ আগস্ট ঢাবির টিএসসিতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে শহীদ আবদুল মালেকসহ কয়েকজন ইসলামী শিক্ষার ওপর কথা বলতে চাইলে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। সভার এক পর্যায়ে জনৈক ছাত্রনেতা ইসলামী শিক্ষার প্রতি কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেন। তখন উপস্থিত শ্রোতারা এর তীব্র বিরোধীতা করে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে স্লোগান দেয়। সাথে সাথেই ইসলামী শিক্ষার বিরোধী পক্ষ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর। সন্ত্রাসীদের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আব্দুল মালেক তার সাথীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন। এসময় সকল সঙ্গীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে আব্দুল মালেক ২-৩ জন সাথীকে সাথে নিয়ে টিএসসির পাশ দিয়ে তার হলে ফিরছিলেন। হলে ফেরার পথে লোহার রড-হকিস্টিক নিয়ে সন্ত্রাসীরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে রেসকোর্স ময়দানে অর্থাৎ বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে মাথার নিচে ইট দিয়ে, ইটের ওপর মাথা রেখে ওপরে ইট ও লোহার রড-হকিস্টিক দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে রক্তাক্ত ও অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। তাঁর সঙ্গী গাজী ইদ্রীসও মারাত্নকভাবে আহত হন। আব্দুল মালেককে আহত এবং অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি মায়ের কোলে। ১৫ আগস্ট শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান তিনি। তিনি চলে গেছেন, তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্বক্ষণে শিক্ষানীতির ব্যাপারে দেশের ভবিষ্যতের নির্ধারণী ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। আজও সেই শূন্যতা অনুভব করছে জাতি। মাসুল গুণছে প্রতি পদে পদে।

পরিশেষে বলা যায়, শহীদ আবদুল মালেক শুধুমাত্র একজন শ্রেষ্ঠ বক্তাই ছিলেন না বরং তিনি তাঁর শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপে অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষরও রেখেছেন। তার জীবনের পরতে পরতে ঘটেছিল মেধা ও যোগ্যতার এক অনন্য সমন্বয়। একাডেমিক জীবনের হাতেখড়ি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত তিনি মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বইপাঠ ছিল শহীদ আবদুল মালেকের সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। তাঁর বৃত্তির একটা বড় অংশ ব্যয় হতো বই কেনার পেছনে। ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে ইসলামী আন্দোলন সংক্রান্ত বহুবিধ পুস্তক তাঁর ব্যক্তিগত পাঠাগারে সংগৃহীত ছিল। তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী, নিরহংকারী, বিনয়ী, মিষ্টভাষী, সঠিক নেতৃত্ব দানের দুর্লভ যোগ্যতার অধিকারী। ভালোবাসা, ত্যাগের উজ্জ্বল ও অনুপম দৃষ্টান্ত মিশে গিয়েছিল তাঁর জীবনের সাথে। সত্যিকার অর্থেই তিনি ছিলেন ইসলামী আদর্শের একজন বিশুদ্ধ চেতনার রাহবার। 

লেখক : কবি ও গবেষক; প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও

সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির