[৫ম কিস্তি]
নফস মানুষকে খারাপের দিকেই ধাবিত করে। অশ্লীলতা তাকে আনন্দ দেয়; ভোগবিলাসে মত্ত থাকা খারাপ হদয়কে উৎসাহ জোগায়। কিন্তু সারা পৃথিবীর যুবকদের জন্য সুন্দর প্রেরণাদায়ক চারিত্রিক উৎস হচ্ছে হযরত ইউসুফ (আ)। যুবকদের আজীবনের জন্য প্রেরণার বাতিঘর হয়ে রইলেন তিনি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে তিনি যখন যুবক বয়সে উপনীত হলেন, তখন তাঁর কাছে যৌনচাহিদা পূরণের প্রস্তাব এসেছিলো সে সময়ের সবচেয়ে সুন্দরী রমণীর পক্ষ থেকে। তিনি তখন শাহাওয়াতের বয়সে উপনীত হওয়ার পরেও এমন গর্হিত কাজের আহবান ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আল্লাহর ভয়ে। তাঁর ঈমান যদি দুর্বল হতো, তাহলে তাঁর নফসের এ খায়েশকে পূর্ণ করার জন্য তাঁর সকল ইন্দ্রিয় তাঁকে এ আবেদনে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করত। অথচ তিনি এমন যুবক ছিলেন, যিনি ছিলেন সুদর্শন এবং পূর্ণ যুবক। তিনি তাঁর দেশ থেকে ছিলেন অনেক দূরে অন্য এক স্থানে, সেখানে তাঁকে কেউ চিনতোও না। তাঁকে এ কাজের জন্য ঘৃণা করবে এমন কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল না। তিনি ছিলেন একজন অবিবাহিত যুবক, তাঁর যৌনচাহিদা পূর্ণ করবে এ জন্য তাঁর স্ত্রীও ছিল না। তাঁকে যে মহিলা প্রেম নিবেদন করেছিলো সে মহিলা কোনো সাধারণ মহিলা ছিল না। সে ছিল একজন সুন্দরী এবং উচ্চবংশমর্যাদা সম্পন্ন মহিলা। তিনি ছিলেন ধন-দৌলতের অধিকারী আযিযের স্ত্রী। ইউসুফ (আ) তার অধীনেই ছিলেন; তার বাড়িতেই ছিলেন। এটা এমন কোনো সাময়িক ফিতনা ছিলো না। বরং ছিলো একটা চলমান ফিতনা। “আর যখন সে তার পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, আমি তাকে ফায়সালা করার শক্তি ও জ্ঞান দান করলাম। এভাবে আমি নেক লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরা ইউসুফ : ২২) কুরআনের ভাষায় সাধারণভাবে এমন শব্দের মানে হয় ‘নবুওয়াত দান করা’। ফায়সালা করার শক্তিকে কুরআনের মূল ভাষ্যে বলা হয়েছে ‘হুকুম’। এ হুকুম অর্থ কর্তৃত্বও হয়। কাজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো বান্দাকে হুকুম দান করার মানে হলো আল্লাহ তাঁকে মানবজীবনের বিভিন্ন বিষয়ে ফায়সালা দান করার যোগ্যতা দান করেছেন আবার এ জন্য ক্ষমতাও অর্পণ করেছেন। আর ‘জ্ঞান’ বলতে এমন বিশেষ সত্যজ্ঞান বুঝানো হয়েছে যা নবীদেরকে অহির মাধ্যমে সরাসরি দেয়া হয়। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরত যে মহিলা তাঁকে তার দিকে আহবান করেছিল; সঙ্গোপনে নয় বরং খোলা দরজা দিয়েই প্রবেশ করে ইউসুফ (আ)কে আহ্বান করে বলেছিলো ‘এসোনা’। কিন্তু ইউসুফ (আ) তার এ সকল কিছুকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে- “তিনি বললেন, আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, আমার রব তো আমাকে ভালোই মর্যাদা দিয়েছেন, আর আমি এ কাজ করবো(!)। এ ধরনের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।” (সূরা ইউসুফ : ২৩) আযিযের স্ত্রী সেই মহিলা যখন ইউসুফ (আ) কে ধোঁকায় ফেলতে ব্যর্থ হলো তখন সে মহিলাদের সামনে এসে হুমকি স্বরূপ বললো, “সে বললো, দেখলে তো! এ হলো সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে তোমরা আমার বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করতে। অবশ্য আমি তাঁকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করেছে। যদি সে আমার কথা না মেনে নেয় তাহলে কারারুদ্ধ হবে এবং নিদারুণভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।” (সূরা ইউসুফ : ৩২) “ইউসুফ বললো, হে আমার রব! এরা আমাকে দিয়ে যে কাজ করাতে চাচ্ছে তার চাইতে কারাগারই আমার কাছে অধিক প্রিয়! আর যদি তুমি এদের চক্রান্ত থেকে আমাকে না বাঁচাও তাহলে আমি এদের ফাঁদে আটকে যাবো এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো।” (সূরা ইউসুফ : ৩৩) ইউসুফ (আ) এ দুইটি পছন্দের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য ছিলেন। একটি ছিল তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে ক্ষতি, অপরটি ছিলো তাঁর দুনিয়ার ব্যাপারে ক্ষতি। দ্বীনের ব্যাপারে তাঁর ক্ষতি ছিল যে, সে যিনা করে ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর দুনিয়ার ব্যাপারে ক্ষতি ছিল যে, সে জেলে যাবে এবং অপমানিত হবে। কিন্তু তিনি তাঁর দ্বীনকে দুনিয়ার উপরে প্রাধান্য দেন। নবী করীম সা. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে মুসিবতে ফেল না। তুমি দুনিয়াকে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় উপলক্ষ বানিয়ে দিও না এবং আমাদেরকে জ্ঞানের চূড়ান্ত প্রান্ত সীমায় পৌঁছে দিও না।’ (খবঃ হড় সরংভড়ৎঃঁহব ধভভষরপঃ ড়ঁৎ উববহ; ষবঃ হড়ঃ ড়িৎষফষু ধভভধরৎং নব ড়ঁৎ ঢ়ৎরহপরঢ়ধষ পড়হপবৎহ, ড়ৎ ঃযব ঁষঃরসধঃব ষরসরঃ ড়ভ ড়ঁৎ শহড়ষিবফমব) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরেকজন যুবককে দুনিয়াবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করেছেন তিনি হলেন ইসমাইল ‘যবিহুল্লাহ’। ইসমাইল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘সর্বপ্রথম স্পষ্ট এবং প্রথম বিশুদ্ধ আরবী’ ভাষা ব্যক্ত করেন ইসমাইল (আ) (এটাই ছিল কুরায়শি ভাষা যে ভাষায় পরে কুরআন নাযিল হয়।) এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সকল ভাষাই আল্লাহ কর্তৃক ইলহামের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। ইসমাইল ছিলেন বিশুদ্ধ কুরায়শি আরবী ভাষার প্রথম ইলহামপ্রাপ্ত মনীষী। এটি ইসমাইলের জন্য একটি গৌরবময় বৈশিষ্ট্য। এজন্য তিনি ছিলেন ‘আবুল আরব’ (বা আরবদের পিতা। ইসমাইলের নবুওয়তি মিশন আমৃত্যু মক্কাকেন্দ্রিক ছিল। তিনি বনু জুরহুম গোত্রে তাওহিদের দাওয়াত দেন। ইসমাইলের বড় মহত্ত্ব এই যে, তিনি ছিলেন ‘যবিহুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর রাহে স্বেচ্ছায় জীবন উৎসর্গকারী এবং তিনি হলেন শেষনবী মুহাম্মাদ সা.-এর মহান পূর্বপুরুষ। আল্লাহ তাঁর উপরে শান্তি বর্ষণ করুন। মুসলিম ও আহলে কিতাব প্রায় সকল বিদ্বান এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ছিলেন হযরত ইসমাইল (আ)। কেননা তিনিই ইবরাহিমের প্রথম পুত্র এবং হাজেরার গর্ভে জন্ম। তিনি মক্কাতেই বড় হন। সেখানেই বসবাস করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। কুরবানির মহান ঘটনা মক্কাতেই ঘটে। তিনি কখনোই কেনানে আসেননি। পিতা ইবরাহিম তাকে নিয়ে মক্কায় কাবাগৃহ নির্মাণ করেন। পক্ষান্তরে ইসহাকের জন্ম হয় কেনানে বিবি সারাহর গর্ভে ইসমাইলের প্রায় চৌদ্দ বছর পরে। শৈশবে তিনি মক্কায় এসেছেন বলে জানা যায় না। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় ১৩৩, ৩৬, ৪০; সূরা আলে ইমরান ৮৪, নিসা ১৬৩, ইবরাহিম ৩৯, ছাফফাত ১০০-১১৩ আয়াতগুলোতে সর্বত্র ইসমাইলের পরেই ইসহাক ও ইয়াকুবের আলোচনা এসেছে। এ ব্যাপারে সকল ইসরাইলি বর্ণনা একমত যে, ইসমাইলের জন্মের সময় ইবরাহিমের বয়স ছিল ৮৬ বছর। পক্ষান্তরে ইসহাক জন্মের সময় ইবরাহিমের বয়স ছিল অন্যূন ১০০ বছর এবং সারাহর বয়স ছিল অন্যূন ৯০ বছর। নিঃসন্তান ইবরাহিম বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর নিকট একটি ‘নেককার সন্তান’ প্রার্থনা করেছিলেন। যেমন ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করো।’ ‘অতঃপর আমরা তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।’ (সূরা ছাফফাত : ১০০-০১) ইবরাহিম (আ) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দোয়া করেন ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে দান করেছেন ইসমাইল ও ইসহাককে। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অবশ্যই দোয়া কবুলকারী।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৯) মহাগ্রন্থ আল কুরআন হযরত ইসমাইল যবিহুল্লাহ (আ) এর সম্পর্কে উপমা অনেক যুবকের সামনে পেশ করেছেন। একজন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য কত বড় ত্যাগের নজরানা পেশ করতে পারে সেটাই তার বড় দৃষ্টান্ত। কেয়ামত পর্যন্ত তা যুবসমাজের জন্য প্রেরণা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইসমাইল (আ) সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন-যিনি মহান আল্লাহর আনুগত্য করতে গিয়ে নিজেকে হাসিমুখে তাঁর রবের সামনে পেশ করেছিলেন। যখন সে তাঁর পিতার সাথে দৌড়াদৌড়ি করতে পারবে এমন বয়সে এসে উপনীত হলো, তখনই তাঁর পিতা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, “তিনি বললেন, হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে আমি যবেহ করছি।” তখন ইসমাইল (আ) তাঁর পিতার এ প্রশ্নের জবাবে বললেন, “সে বললো, হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন।” (সূরা সাফ্ফাত : ১০২) তিনি এ কথা বলে জবাব দেননি যে, আমাকে তাই করুন যা আপনাকে নির্দেশ করা হয়েছে বরং তিনি বলেছেন যে, “আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তাই করুন” অর্থাৎ তিনি তাঁর নিজের কথা উচ্চারণ করেননি। কেননা, তিনি তো নিজেকে উৎসর্গ করেই দিয়েছেন। এ কথা দ্বারা তিনি তাঁর পিতাকে এভাবে বলেছেন, ‘তুমি তোমার দায়িত্ব পালন কর, আমাকে প্রশ্ন করার দরকার নেই।’ “আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ সবরকারীই পাবেন।” (সূরা সাফ্ফাত : ১০২) আল্লাহ বলেন, ‘এই কিতাবে আপনি ইসমাইলের কথা বর্ণনা করুন। তিনি ছিলেন ওয়াদা রক্ষায় সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী।’ ‘তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি স্বীয় পালনকর্তার নিকট পছন্দনীয় ছিলেন।’ (সূরা মারিয়াম : ৫৪-৫৫) হযরত ইসমাইল (আ) ছিলেন পিতা ইবরাহিম (আ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং মা হাজেরার গর্ভজাত একমাত্র সন্তান। ঐ সময়ে ইবরাহিমের বয়স ছিল ৮৬ বছর। শিশু বয়সে তাঁকে ও তাঁর মাকে পিতা ইবরাহিম (আ) আল্লাহর নির্দেশে মক্কার বিজনভূমিতে রেখে আসেন। সেখানে ইবরাহিমের দোয়ার বরকতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে জমজম কূপের সৃষ্টি হয়। অতঃপর ইয়েমেনের ব্যবসায়ী কাফেলা বনু জুরহুম গোত্র কর্তৃক মা হাজেরার আবেদনক্রমে সেখানে আবাদ শুরু হয়। ১৪ বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে মক্কার অনতিদূরে মিনা প্রান্তরে সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসের বিস্ময়কর ত্যাগ ও কুরবানির ঘটনা। পিতা ইবরাহিম কর্তৃক পুত্র ইসমাইলকে স্বহস্তে কুরবানির উক্ত ঘটনায় শতবর্ষীয় পিতা ইবরাহিমের ভূমিকা যাই-ই থাকুক না কেন চৌদ্দ বছরের তরুণ ইসমাইলের ঈমানও আত্মত্যাগের একমাত্র নমুনা ছিলেন তিনি নিজেই। তিনি স্বেচ্ছায় নিজেকে সমর্পণ না করলে পিতার পক্ষে পুত্র কুরবানির ঘটনা সম্ভব হতো কি-না সন্দেহ। তাই ঐ সময় নবী না হলেও নবীপুত্র ইসমাইলের আল্লাহভক্তি ও দৃঢ় ঈমানের পরিচয় ফুটে উঠেছিল তাঁর কথায় ও কর্মে। এরপর পিতার সহযোগী হিসাবে তিনি কাবাগৃহ নির্মাণে শরিক হন এবং কাবা নির্মাণ শেষে পিতা-পুত্র মিলে যে প্রার্থনা করেন, আল্লাহ পাক তা নিজ জবানীতে পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। (সূরা বাকারাহ : ১২৭-১২৯) হযরত ইসমাইল (আ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ৯টি সূরায় ২৫টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।(২)
পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের দৃষ্টান্ত : তিনি পিতার প্রতি কেমন শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত ছিলেন, তা নিম্নোক্ত ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়। হাজেরার মৃত্যুর পর ইবরাহিম (আ) যখন ইসমাইলকে দেখতে যান, তখন তার স্ত্রীকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব অভাবে ও কষ্টের মধ্যে আছি।’ জবাবে তিনি বলেন, তোমার স্বামী এলে তাকে আমার সালাম দিয়ে বলো যে, ‘তিনি যেন দরজার চৌকাঠ পাল্টে ফেলেন।’ পরে ইসমাইল বাড়ি ফিরলে ঘটনা শুনে বলেন, উনি আমার আব্বা এবং তিনি তোমাকে তালাক দিতে বলেছেন। ফলে ইসমাইল স্ত্রীকে তালাক দেন ও অন্য স্ত্রী গ্রহণ করেন। পরে একদিন পিতা এসে একই প্রশ্ন করলে স্ত্রী বলেন, আমরা ভালো ও সচ্ছলতার মধ্যে আছি এবং তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন। ইবরাহিম তাদের সংসারে বরকতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন। অতঃপর তাকে বলেন, তোমার স্বামী ফিরলে তাকে বলো যেন দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখেন ও মজবুত করেন।’ ইসমাইল ফিরে এলে ঘটনা শুনে তার ব্যাখ্যা দেনও বলেন, উনি আমার পিতা। তোমাকে স্ত্রীত্বে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এই ঘটনার কিছু দিন পর ইবরাহীম পুনরায় আসেন। অতঃপর পিতা-পুত্র মিলে কাবাগৃহ নির্মাণ করেন। এভাবে ইসমাইল (আ) স্বীয় পিতার ন্যায় বিশ্বের তাবৎ মুমিন হৃদয়ে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন। অতঃপর কাবা নির্মাণকালে পিতা-পুত্রের দোয়ার (সূরা বাকারাহ : ১২৭-২৯) বরকতে প্রথমত: কাবাগৃহে হাজার হাজার বছর ধরে চলছে তাওয়াফ ও সালাত এবং হজ ও ওমরাহর ইবাদত, তেমনি চলছে ঈমানদার মানুষের ঢল। এক সন্তানকে কুরবানি করার উদ্যোগ নিয়ে ইবরাহিম (আ) হয়ে গেলেন মুসলিম মিল্লাতের পিতা আর সন্তান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কুরবান হতে স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে আজীবন হয়ে থাকবেন প্রেরণার মিনার। আজকে সমাজে এমন যুবকের খুবই প্রয়োজন। (চলবে)
লেখক : সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
আপনার মন্তব্য লিখুন