সম্পাদকীয়
১৬ অক্টোবর ২০১৫
আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের গন্তব্য নিয়ে স্পষ্ট করলো সময়ের সাহসী তরুণ বন্ধুরা। নতুন মেসেজ নিয়ে তারা সমগ্র জাতির সামনে হাজির হয়েছে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে পুরো জাতিকে জাগিয়ে তুলল আরেক বার। গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুটো বাসের অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় প্রাণ হারায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম। সহপাঠী শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক ও ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে তাদের এ আন্দোলনে যোগ দেয় সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমাদের রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের অসঙ্গতিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। এটি শুধু একটি আন্দোলন নয়; একটি সামাজিক জাগরণ। তরুণ প্রজন্মের বুকের ভেতরে জমে থাকা দ্রোহ ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সরকার পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদেরকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে আবারো ফ্যাসিবাদিতার প্রমাণ দিলো। এই তরুণরা সরকার উৎখাতে নামেনি বরং ত্রুটিপূর্ণ রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে মেরামত করার দাবি উঠিয়েছে। প্রজন্মের তরুণদের দেশপ্রেম, সচেতনতা আমাদের অনুভূতিতে একটি বিপ্লবের স্বপ্ন জাগিয়ে দিলো। আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা গর্জে ওঠে প্রতিবাদী হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখালো। বুকে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে উদ্বেলিত কণ্ঠে তারা স্লোগান তুলেছে “যদি তুমি ভয় পাও /তবে তুমি শেষ / যদি তুমি রুখে দাঁড়াও/ তবে তুমিই বাংলাদেশ।” আমাদের বিশ্বাস এই তরুণদের হাতেই আগামীর বাংলাদেশ। কোনো একদিন তারাই এই দেশটিকে নতুন করে মেরামত করবে।
একটি আলোর পরশ পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে
একটি মানুষ মানুষ হলে বিশ্বজগৎ টলে
- কাজী নজরুল ইসলাম
আমরা যদি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপ্লবের ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলেই এ কথা অকপটে বেরিয়ে আসবে প্রতিটি আন্দোলন এবং বিপ্লব একজন মানুষের চিন্তার রাজ্যের বিপ্লব থেকেই হয়েছে। একজন বিপ্লবী তাঁর সেই চিন্তাকে যখন গোটা দেশের মানুষের চিন্তায় পরিণত করতে পারেন এবং আন্দোলিত করে পারেন নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে, তখন কেউ আর রুখতে পারে না বিজয়। বিজয়ী হয় মানুষ আর মানবিকতা। আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ চরম একটি ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। জুলুম ও নির্যাতনকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েই চলছে সবাই। কোথাও যেন মানুষ নেই। মনুষ্যত্ববোধের সঙ্কট চলছে চারিদিকে। এগিয়ে আসছে না কেউ- একে অন্যের বিপদে। এই সঙ্কট দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখনই সময় জেগে ওঠার। আর যদি জেগে জেগে ঘুমাই তাহলে নতুন ভোরের স্বপ্ন পরাভূত হবে। আমরা যদি হতাশার ঘন কালো মেঘ আর মিথ্যার কুজ্ঝটিকার কাছে সোপর্দ করে দিই নিজেদেরকে, তাহলে সোনালি সূর্যের আলো অদেখাই রয়ে যাবে আমাদের। কী করবেন তাহলে...?
আপনার মন্তব্য লিখুন