শেষ পর্ব
(অক্টোবর সংখ্যার পর)
সালাতে মানবিক সংস্কৃতির বিকাশ
মানবিক সংস্কৃতির প্রধানতম প্রতীক হচ্ছে সালাত। সালাতের আরকান ও আহকামসহ নামাজের গোটা ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে সকল মৌলিক গুণাবলি প্রয়োজন সে সকল গুণাবলি নামাজের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। সালাত এমন একটি ইবাদত, যে ইবাদতের মাধ্যমে মানসিক, মৌখিক ও দৈহিকভাবে সব কাজ সমন্বয় সাধন করা যায়। যার সাথে আর্থিক, আর্থ-সামাজিক, মানসিকসহ অন্যান্য বিষয় বিদ্যমান। আর্থিক বিষয়টি হলো রিজিকের সাথে অন্তর্ভুক্ত। নামাজি ব্যক্তি হালাল ও পবিত্র রিজিক নিশ্চিত না করে ভক্ষণ করেন না। শুধুমাত্র সালাতের মাধ্যমে দৈহিক-জৈবিক পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।
সালাত ও সামাজিক বন্ধন একটির সঙ্গে অপরটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মানবসমাজে সভ্যতা, নৈতিকতা ও সামাজিকতার বিকাশ এবং সামাজিক বন্ধন মজবুতির জন্য সালাতের সীমাহীন অবদান রয়েছে। এ জন্যই জামায়াতে সালাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। মানুষ সমষ্টিগতভাবে মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করে একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। সেখানে ধনী-গরিব উঁচু-নিচুর কোনো ভেদাভেদ নেই। সালাতের পর একে অপরের খোঁজখবর নেয়। কোনো দিন যদি নিয়মিত কোনো মুসল্লি জামায়াতে শরিক হতে না পারে সবাই তার খোঁজখবর নেন। প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে তার বিষয়াদি জানতে চান। সালাতের মাধ্যমে পরস্পর মায়া-মহব্বত তৈরি হয় এবং সামাজিক বন্ধন মজবুত হয়।
সালাতের কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো, কাতারের মাঝখানে ফাঁকা না রাখা- এসব সালাতের অন্যতম সৌন্দর্য। আমাদের সমাজের অনেক লোক আছেন, তারা গুরুত্ব দিয়ে সালাত আদায় করেন ঠিকই, কিন্তু সালাতের কাতার সোজা হলো, না বাঁকা হলো সেদিকে লক্ষ্য করেন না। তারা মনে করেন, মসজিদে তো অনেক জায়গাই রয়েছে, তাই একটু ফাঁকা হয়ে দাঁড়ালে ক্ষতি কী? এমন মনোভাব ইসলাম সম্মত নয়। হযরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর হাদিসে এভাবে সালাতে দাঁড়ানোকে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আবু দাউদ শরিফে ইরশাদ হচ্ছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কাতার সোজা কর, কাঁধের সঙ্গে কাঁধ বরাবর কর, ফাঁক বন্ধ কর, শয়তানের জন্য কোনো ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতারের সংযোগ স্থাপন করে আল্লাহ তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন। আর যে কাতার ছিন্ন করে, আল্লাহ তার সঙ্গে সংযোগ ছিন্ন করেন।’
আমাদের দেশে সাধারণ নিয়ম অনুসারে ইমাম সাহেব ইকামত হওয়ার পর বলেন, ‘কাতারের মাঝখানে ফাঁকা রাখবেন না, কাছাকাছি দাঁড়ান, কাতার সোজা করে দাঁড়ান।’ তবুও আমরা কাতারে সোজা হয়ে দাঁড়াই না। তাই আমাদের মধ্যে একতা নেই, সম্প্রীতি নেই, ভালোবাসা নেই। সালাতের কাতার সোজা করা সালাতের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই বিধানকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সালাতের কাতারের মাঝে ফাঁকা থাকার কারণে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও অনৈক্যের সৃষ্টি হয়। কাতারে ফাঁকা থাকলে সেখানে শয়তান অনুপ্রবেশ করে আমাদের সালাত ও ঐক্যে ফাটল ধরায়। ফলে আমরা সালাতের প্রকৃত শিক্ষা ও সামাজিক উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হই।
ব্যক্তিগত জীবনকে সুন্দর করতে সালাতের বিকল্প নেই। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বান্দা হয়ে তার গোলামি জীবন যাপন করতে ও সৎ নেতৃত্ব দিতে আল্লাহকে ভয় করতে অভ্যস্ত হওয়া অতীব প্রয়োজন। কেননা মানুষের জিন্দেগিতে এমন অসংখ্য কাজ ও মুহূর্তের আবির্ভাব হয়, যেখানে সত্য পথে ও আল্লাহর বিধানের উপর দৃঢ় হয়ে থাকার হিম্মত একমাত্র আল্লাহকে ভয় করার কারণেই হয়ে থাকে। সে সব ক্ষেত্রে আল্লাহকে হাজির নাজির না মানলে, ভয় না করলে কোন শক্তিই সে পাপের পথ হতে মানুষকে বিরত রাখতে পারে না। তাই প্রতিদিন পাঁচবার মুসলমানদের অন্তরে এই আল্লাহর ভয় জাগ্রত করে সালাত মুসলমানদের অন্তরে আল্লাহভীতি এমনভাবে বদ্ধমূল করে দিতে চায় যে, তারা যেন তাদের জীবনে প্রতিটি কাজ করার সময় আল্লাহ ভীতিকে সামনে রাখে। তাহলেই সকল কাজ সুন্দর ও সার্থক হবে।
আল্লাহকে সারাক্ষণ স্মরণ রাখতে অভ্যস্ত হওয়া মুসলমানদের অবশ্যই কর্তব্য। অন্যথায় তাদের শয়তানের প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা মুশকিল। নামাজে মুসলমানদের মধ্যে এ গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার চমৎকার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে আদায় করে, সালাত তাকে সারাক্ষণ আল্লাহর কথা স্মরণ করায়। সর্বদা নামাজের সময় সম্পর্কে তাকে সচেতন থাকতে হয়। সে ব্যক্তি যে একমাত্র আল্লাহর দাস সালাত তাকে সে কথা ভুলতে দেয় না। আল্লাহ বলেন, আমাকে মনে রাখার উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম করো। (সূরা ত্ব-হা : ১৪)। কর্তব্য সম্পাদনে একাগ্রতা ও মনোযোগ সৃষ্টি করে সালাত। যে একাগ্রতা ও মনোযোগ সহকারে এবং যে জয্বা ও মন মানসিকতা নিয়ে সালাত আদায় করতে হয় নামাজের বাইরের সকল কাজের তৎপরতার সময় ও ঐ মনোযোগ ও জযবার প্রভাব জয়ী থাকে।
পর্দা করার শিক্ষা দেয় সালাত। পর্দা রক্ষা করা ইসলামী জীবন বিধানের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজ। নামাজে সতর ঢেকে রাখার বিধানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন পাঁচবার এই ফরজ কাজটির কথা মুসলমান নর-নারীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সালাত কড়াভাবে সময়ানুবর্তিতা শেখায়। বারবার যথাসময়ে নামাজের জামায়াতে হাজির হওয়ার ফলে সব কাজই সময় মতো করার অভ্যাস হয়। “নিশ্চয় সালাত মু’মিনদের উপর সময় নিষ্ঠার সাথে ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা নিসা : ১০৩)।
মুসলমানদের গোটা জিন্দেগিই যেমন জিহাদের, তেমনি প্রত্যেকটি নিত্যনৈমিত্তিক কাজেও রয়েছে জিহাদের তালিম। অতএব, মুসলমানদের জন্য যখন জিহাদ, যুদ্ধ-সংগ্রাম অপরিহার্য তখন তার ট্রেনিং তালিমও অপরিহার্য। তাই সালাতই হচ্ছে সেই জিহাদ ও সংগ্রামের মহড়া। কেননা আজান সৈন্যদের বিউগলের সাথে, আর রুকু সিজদাকে কুচকাওয়াজের সাথে, আর ইমাম সেনাপতির সাথে তুলনা করে নামাজের অনুশীলনগুলোর পর্যালোচনা করলে যুদ্ধের ট্রেনিং বলতে কারো আপত্তি থাকতে পারে না।
সমাজ জীবনে নান্দনিক ছন্দ এনে দেয় সালাত। সমাজের সদস্যদের পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব মহব্বত-ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, স্নেহ ও শ্রদ্ধা ইত্যাদি জাগ্রত হয়। প্রতিদিন পাঁচবার নামাজে হাজির হওয়ার কারণে মুসল্লিগণের পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ হয়। এতে এমন অনুভূতি জাগ্রত হয় যে, একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসে ও একের দুঃখে অপরজন দুঃখী হয়, অন্য দ্বীনি ভাইয়ের সুখে সুখী হয়। পারস্পরিক পরিচিতি বিস্তার লাভ করে, যা ভালোবাসা ও গভীর সম্পর্কের জন্য পূর্বশর্ত। সামাজিক সাম্য- মৈত্রী প্রতিষ্ঠিত হয়। নামাজে দাঁড়াবার সময় কারো পূর্বনির্ধারিত স্থান বরাদ্দ না থাকার কারণে ধনী গরিব বাদশাহ-ফকির চাকর-মুনিব, বিদ্বান-মূর্খ, সাদা-কালো নির্বিশেষে সকলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে দাঁড়ায়। এতে সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য দূর হয়। অনুপম সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
শৃঙ্খলা বলতে জীবনে করণীয় কাজগুলোর একটা সুষ্ঠু প্রোগ্রাম করে তা যথাযথ পালন করে যাওয়াকেই বুঝায়। তা ছাড়া সমষ্টিগত ভাবে যার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য স্ব-স্ব স্থানে তা হুবহু আনজাম দিয়ে যাওয়ার নাম ও সমষ্টিগত শৃঙ্খলা। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা অতীব প্রয়োজন। নামাজে এ বিষয়টির নিপুণ ট্রেনিং ব্যবস্থা বর্তমান। যেমন ঠিকমত অযু করা, মসজিদে হাজির হওয়া, ইমামের আনুগত্য করা, ঠিকমত সালাত আদায় করা ইত্যাদি মুসল্লির জীবনে শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি করে। সব কাজ গোছালো ভাবে করার মানসিকতা গড়ে উঠে।
মানুষের সমাজ ও জাতীয় জীবনে ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। যে জাতির মধ্যে ঐক্যের বাঁধ ও পরিধি যতদূর মজবুত ও বিস্তৃত হয়, সে জাতি শক্তি সামর্থ্য ও স্থায়িত্বের দিক দিয়ে হয় ততই উন্নত ও দীর্ঘস্থায়ী। আর সালাতই মুসলমানের সেই একতা সৃষ্টির ট্রেনিং ব্যবস্থা। দৈনিক পাঁচবার জামায়াতে মিলিত হওয়া, আবার সপ্তাহে জুমআর মসজিদে মিলিত হওয়া, দুই ঈদের নামাজে মুসল্লিগণের মিলিত হওয়া গোটা মুসলিম জনতার ঐক্য সৃষ্টির তাগিদ। তারপর নামাজের জামায়াত সাজানোর নীতি, যে আগে আসবে সে আগের কাতারে দাঁড়াবে এবং সালাত জামায়াতে আদায়ের সময় সব মুক্তাদিই একসাথে ইমামের রুকু সিজদা ও ওঠা বসার নিরঙ্কুশ অনুকরণ করে চলার বিধি হচ্ছে একতার বাস্তব শিক্ষা।
ইমাম হচ্ছেন মুক্তাদি মুসল্লিদের শিক্ষক। তিনি জুমুআর খুতবা এবং বিভিন্নভাবে দারস-তালিমের মাধ্যমে মুসলমানদের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন এর বিভিন্ন দিকের ওপর ইসলামী আইনি শিক্ষা দিয়া থাকেন। ইসলামী রীতিনীতির শিক্ষা দিয়ে থাকেন। জামায়াতবদ্ধ জিন্দেগি গঠন জামায়াতে সালাত আদায় করার একটি প্রধান শিক্ষা। পবিত্র কুরআন পাকে ইরশাদ হচ্ছে, অর্থাৎ তোমরা দলবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়োনা। জামায়াতে সালাত হচ্ছে বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে এই আদেশ পালনের শিক্ষা।
সালাত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নিয়ম নীতি মেনে চলার প্রশিক্ষণ দেয়। ইমামের আনুগত্যের মাধ্যমে নেতার আনুগত্যের ট্রেনিং হয়। ইমাম ভুল করলে শালীন ভাষায় লুকমা দিয়ে ইমামকে সংশোধন করার মাধ্যমে সমাজের নেতৃবৃন্দ বা সরকারের ভুল-ভ্রান্তির গঠনমূলক সমালোচনা করার ভদ্র পদ্ধতির শিক্ষা লাভ হয়। সালাত রাজনৈতিক ময়দানে ও সুশৃঙ্খল ও শালীন হতে উদ্বুদ্ধ করে।
রাষ্ট্রীয় জীবনে সালাত একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাষ্ট্রগঠনের ধারণাই এসেছে সালাত থেকে। সালাতের রীতি পদ্ধতির অনুসরণেই রাষ্ট্রের উপাদান চিহ্নিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান ৪টি। যেমন: জনগণ, নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব। সালাতই এ ধারণার যুগপৎ প্রবর্তক। সালাতের বেলায়ও কিছুসংখ্যক মুসল্লির প্রয়োজন হয়। জামায়াতে সালাত আদায় করতে নির্দিষ্ট একটি পবিত্র স্থান অর্থাৎ মসজিদ প্রয়োজন। সালাত পরিচালনার জন্য দরকার একজন যোগ্য নেতা বা ইমামের। আর ইমামের থাকে মসজিদে তথা মহল্লায় সার্বভৌমত্ব। সালাত আদায়ের এই পদ্ধতিগত পন্থা রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। এ কথা বলরে অত্যুক্তি হয় না যে, সালাত রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের যুগপৎ প্রতিষ্ঠাতা। শৃঙ্খলা ব্যতীত কোনো রাষ্ট্রই টিকে থাকতে পারে না। ঐতিহাসিকরা মন্তব্য করেছেন, “ইসলাম এর জামায়াতের সালাতকে সামরিক শৃঙ্খলার আওতাভুক্ত করেছে।” আজানের সাথে সাথে শত সহস্র মুসলমান কাজ কর্মের সব ব্যস্ততা ফেলে ছুটে আসে মসজিদে, প্রস্তুতি শেষে সারিবদ্ধ দণ্ডায়মান হয় সালাতের জন্য। সালাত আদায় করতে গিয়ে তারা নেতার আনুগত্য করে প্রতিটি ছত্রে ছত্রে। আনুগত্যের সামান্যতম খেলাপ করার কোনোরকম সুযোগ নেই। এই শৃঙ্খলাবোধ এবং আনুগত্য রাষ্ট্রীয় জীবনে যোগ্য নেতা নির্বাচন এবং তার পূর্ণ আনুগত্য করার বাস্তব শিক্ষা দেয়। বংশ বা সম্পদের গুণে মর্যাদাশালী হলেই ইমামের মর্যাদা অর্জন কার যায় না বরং ইমামের মাপকাঠি হলো জ্ঞানী, সৎ এবং তাকওয়াধারী। সেদিক থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে যাচাই করে নির্বাচিত করার চমৎকার প্রথাটিও সালাত থেকে এসেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক সভ্যতার যে গর্বিত দাবি আমরা করি, মুসলমানদের সালাতই তার অনুপম রূপকার।
অশ্লীলতা সমাজের জন্য একটি মারাত্মক ব্যাধি। কোনো সমাজে যদি ব্যাপকভাবে মন্দ ও অশ্লীলতা বিস্তৃতি লাভ করে তাহলে সে সমাজ থেকে শান্তি বিদায় নিতে বাধ্য হয়। বলা বাহুল্য, সে সমাজ ক্রমাগত হয়ে উঠে অভিশপ্ত আর খোদায়ী গজবের আধার। ইতিহাসে এর অনেক প্রমাণ আমরা খুঁজে পাই। সালাতই পারে সে সব খারাবি থেকে মানুষকে মুক্ত রাখতে, পারে সততা আর পুণ্যতায় আত্মগঠন করাতে। মানুষের আখলাক ও নৈতিকতার উন্নতি সাধন এবং কুপ্রবৃত্তিসমূহের দমনে সালাত অব্যর্থ আমল। সালাত ব্যক্তির মনকে পরিচ্ছন্ন ও পরিষ্কার করে দেয়। ব্যক্তির মনে আল্লাহর মহানত্ব ও তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করে। অবাধ্যতা কিংবা গর্হিত কাজ ও অশ্লীলতার প্রতি সে আন্তরিকভাবে ঘৃণ্যভাব পোষণে সক্ষম হয়। সূরা আনকাবুতের ৪৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে : ‘সালাত যথার্থভাবে আদায় কর, নিশ্চয় সালাত (ব্যক্তিকে) সব অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’
বিশুদ্ধ মানব চরিত্র গঠনে সালাতের অসামান্য ভূমিকা নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মানুষে মানুষে পদমর্যাদা, বর্ণ ও জাতীয়তার বৈষম্য সমাজে বিরাজ করলে সে সমাজে মানবিক বিচার বোধ ভূ-লুণ্ঠিত হয়। এতে সমাজ তথা বিশ্বব্যাপী শান্তি স্থাপন কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। একমাত্র সালাতই পারে এ ধরনের সকল অসুস্থ বৈষম্য দূর করে মানুষকে সুন্দর ও সাম্যের কাতারে সাজাতে। সমাজে এই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী সাম্যই সভ্যতার অপরিহার্য বুনিয়াদ হিসেবে যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে। সালাতই কেবল তার চিরন্তন শিক্ষার মাধ্যমে একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় সমাজ উপহার দিতে পারে। আমরা দেখেছি যে, সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদে বিকৃত আত্মচিন্তায় তাড়িত হয়ে পৃথিবীর অনেক জাতি ভুল পথে অগ্রসর হয়েছে। তারা সেখানে সত্যিকার সৌন্দর্য না পেয়ে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য সালাত একটি শক্তিশালী এবং বিজ্ঞানসম্মত মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। মসজিদে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ন্যূনতম পাঁচবার মুসলমানদের একত্রিত হতে পারাটা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়। এর ফলে তারা একে অন্যের সুখ-দুঃখের বিষয়ে অবগত হয়ে পারস্পরিক সহানুভূতির মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তুলতে পারে। সালাত মুসলমানদের মধ্যে অটুট বন্ধুত্ব এবং প্রীতির বন্ধন উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ সহায়ক। পার্থিব জীবনে মানুষে মানুষে সাম্যের এই অতীব সুন্দর ও ধারাবাহিক ব্যবস্থাপনা আর কোথাও লক্ষ্য করা যায় না। ‘সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি’-এই একই উদ্দেশ্যে সেজদায় অবনত মুসলমানদের মস্তকে উৎপত্তি হয় সৌভ্রাতৃত্বের নির্মল উপলব্ধি। তাই সালাতের মত অতুলনীয় ইসলামের এই মহান শিক্ষাই মানবজাতির ঐক্যের সুদৃঢ় বুনিয়াদ হিসেবে স্বীকৃত।
পৃথিবীতে আমাদের চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এ সমাজে এ সংসারে কখনো আসে কঠিন আঘাত, দুর্প্রতিরোধ্য প্রতিবন্ধকতা, আসে নিরাশার ঢেউ। কিন্তু আমরা জানি এ সব আঘাতে নিরাশ হতে নেই, ধৈর্য ধারণ করতে হয়। ধৈর্য একটি মহৎ মানবীয় গুণ। আল্লাহ তায়ালাকে সর্বান্তঃকরণে স্মরণ করে তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও সালাতের অবস্থান ঠিক ধৈর্যের পাশাপাশি বা বলতে কি অভিন্ন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “এবং ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে (তোমরা) আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা কর।” এখানে স্পষ্ট লক্ষণীয় যে, সমাজের বিভিন্ন বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে সালাত ও ধৈর্যের মধ্যে প্রক্রিয়াগত ভিন্নতা ব্যতীত তাৎপর্যগত কোনো পার্থক্য নেই। সুতরাং ধৈর্য ও সালাতের ইহলৌকিক ফলাফল আপাত দৃষ্টিতে সমান্তরাল।
ব্যাপক জনমত গঠনে সালাত একটি অতীব সুন্দর মিলনায়তন। প্রতিদিন সালাতের পর এলাকাবাসীরা একত্রিত হয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে আলোচনা করে জনমত গঠন করতে পারে। এমনকি সামরিক বিষয়েও মসজিদে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রাসূল সা. তেমনটি করতেন। এর চেয়েও বিস্তৃত পরিসরে ঈদের সালাতে অধিক সংখ্যক মুসলমান একত্রিত হয়ে পারস্পরিক কুশলাদি ও প্রীতি বিনিময়ের চমৎকার সুযোগ পান। রাষ্ট্রের প্রভূত উন্নতি সাধনের জন্য অপরিহার্য শর্ত হলো শিক্ষা, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, সময়ানুবর্তিতা, একতা, একাগ্রতা, সত্যনিষ্ঠা প্রভৃতি। বলাই বাহুল্য যে, এর প্রত্যেকটিরই বাস্তব শিক্ষা দেয় সালাত। সময় এবং আনুগত্য, একাগ্রতা এবং শৃঙ্খলা সালাতের জন্য অপরিহার্য হওয়ায় সালাত মানুষের মধ্যে এসব গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি অর্জনের অভ্যাস গড়ে তোলে। আমরা যদি একটি সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই তাহলে সালাতকে ব্যক্তি জীবন ছাড়াও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্ব›দ্ব হানাহানির আজকের অশান্ত বিশ্বে সালাত শান্তি-শৃঙ্খলা এবং সৌভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অবিকল্প রূপকার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
স্বাস্থ্যই সুখের মূল। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সালাত অনন্য ভ‚মিকা পালন করে। শারীরিক সুস্থতার উপরই মানুষের সব তৎপরতা নির্ভরশীল। রোগমুক্ত সমাজ জীবন নিশ্চিত করতে পরিচ্ছন্নতা একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। সালাতই মুসলমানদিগকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, সেহেতু সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সালাতের মত ধর্মীয় অনুশাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সুশৃঙ্খল ও শান্তি সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে সম্ভব হতে পারে। নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানুষের শরীর সুস্থ ও সবল রাখার অপূর্ব শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন- দৈনিক পাঁচবার শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জায়গা তথা পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখার শিক্ষা। মিসওয়াক করার মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখার ব্যবস্থা। ব্যায়াম বা শরীর চর্চার শিক্ষা দেয় সালাত। কেননা নামাজের মাধ্যমে পায়ের আঙুল থেকে মাথা পর্যন্ত সকল মাংসপেশি ও জোড়াগুলো স্পন্দন করে। তাই এতে শারীরিক অনুশীলন রয়েছে। সালাত বান্দাকে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে অভ্যস্ত করে তোলে যা শরীরকে সুস্থ রাখে। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে সালাত, সমস্ত ফাহেশা ও গর্হিত কাজে বাধা দেয়। সালাতের মাঝে বান্দাহ মাবুদের সাথে পরামর্শ করে থাকেন। সুতরাং তা আত্মশুদ্ধিও হৃদয়কে আলোকিত করে থাকে।
সুন্নত নিয়মে সালাত আদায় করলে মানুষের মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের কোমরের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যথা কমে বলে দাবি করেছেন একদল মার্কিন গবেষক। আমেরিকার বিংগহামটোন ইউনিভার্সিটি ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। বিংগহামটোন ইউনিভার্সিটির সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান এবং ‘অ্যান অ্যার্গোনমি স্টাডি অব বডি মোশানস ডিউরিং মুসলিম প্রেয়ার ইউজিং ডিজিটাল হিউম্যান মডেলিং’ শীর্ষক গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ খুশনাভি বলেন, ‘ভেবে দেখার একটি দিক হলো, সালাতে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে ইয়োগা বা শরীরচর্চার পদ্ধতিগুলোর মিল রয়েছে, যা মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের ব্যথা কমার জন্য ব্যবহৃত হয়। শারীরিক স্বাস্থ্য সামাজিক-অর্থনীতি, জীবনপ্রণালী ও ধর্মীয় বিষয়াবলি দ্বারা প্রভাবিত। এই গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে জীবনপ্রণালী ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ধর্মীয় প্রার্থনার মধ্যে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। প্রার্থনা শারীরিক চাপ ও মানসিক উদ্বেগ কমাতে পারে। গবেষণায় এমনও দেখা গেছে, নিয়মতান্ত্রিক প্রার্থনা নিউরোমাস্কুলোস্কেলেটালের কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
গবেষণাপত্রটি ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণা প্রকল্পে অধ্যাপক খুশনাভির সঙ্গে আরো কাজ করেছেন পেন স্টেট বেহরেন্ড ইউনিভার্সিটির ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফয়সাল আকলান ও ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা ক্রুকস্টনের বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল আজিজ আহমেদ। গবেষণাটি ভারতীয়, এশীয় ও আমেরিকান যেসব সুঠাম নারী-পুরুষের মেরুদণ্ডের ব্যথা রয়েছে, তাদের ডিজিটাল মডেলের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, ‘নত হওয়ার ফলে মেরুদণ্ডের নিম্নাংশে অবশ্যই চাপ সৃষ্টি হয়। তবে ব্যথা প্রশমনের জন্য হাঁটু ও মেরুদণ্ডের মধ্যে যতটা কোণ তৈরি হওয়া প্রয়োজন, তা সিজদায় পাওয়া যায়। কেননা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (এনআইওএসএইচ) মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টির যে নিরাপদ সীমা নির্ধারণ করেছে, সিজদার সময় শরীর সংকোচনের ফলে তার চেয়ে কম চাপ সৃষ্টি হয়।’ তবে তাঁরা সতর্ক করে বলেন, ভুল পদ্ধতি ও নড়াচড়া মেরুদণ্ডের ব্যথা বাড়াতে পারে। অধ্যাপক খুশনাভি বলেন, ‘সিজদার কারণে শরীরের জোড়াগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং সিজদায় দীর্ঘ সময় ব্যয় করা উত্তম।’
পরিশেষে বলা যায়, একজন মুমিনের সারাদিনের কর্মতৎপরতা শুরু হবে সালাতুল ফজরের মধ্য দিয়ে। সকালের অলস ঘুম একজন মুমিনের জীবন প্রক্রিয়া হতে পারে না। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ) বলেছেন, সকাল বেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বণ্টন করা হয়। ফজরের সালাত দিয়ে দিনটা শুরু করলে, পুরো দিনের কার্যক্রমের একটা বরকতময় সূচনা হবে। তিরমিজি শরীফে বর্ণিত আছে, প্রিয়নবী সা. বলেছেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য, তার সকাল বেলায় বরকত দান করুন।’ মূলত সালাত আদায়ের মধ্য দিয়ে মানবিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। আল্লাহর প্রতি ঈমানের সূত্রে যারা পরস্পরে ভাই ও বন্ধুতে পরিণত হয়েছে, তাদের পরস্পরে পরিচিতি লাভ। তাদের মাঝে মহব্বত ও ভালোবাসা জোরদার করে তোলা; কেননা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমানের সূত্র ধরে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত সৃষ্টি না হলে ঈমান এবং জান্নাত লাভের আশা করা দুষ্কর। মুসলমানদের মাঝে বিভিন্নতার অবসান ঘটিয়ে সংঘবদ্ধতা গড়ে তোলা এবং উত্তম ও ভালো কাজের প্রতি তাদের সকলের হৃদয় আকৃষ্ট করা। মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার মনোভাব জোরদার করা। মুসলমানদের অন্তরসমূহ একসূত্রে বেঁধে দেয়া; কেননা একই কাতারে সাদা কালো, আরবি-আজমি, আবাল-বৃদ্ধ, ধনী-গরিব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে এক ইমামের পিছনে, একই সময়ে, এক কিবলাকে সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সালাত আল্লাহর শত্রæদেরকে রোষান্বিত করে। মুসলমানরা যতদিন মসজিদে সালাত আদায়ের ব্যাপারে যতœবান থাকবে ততদিন তারা শক্তিমান ও সুরক্ষিত হয়ে কালযাপন করতে সক্ষম হবে। সালাত গুনাহ মাফ করে জান্নাতের দরজা বুলন্দ করে। মুসলিম শরিফে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের পথ দেখাব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা গুনাহসমূহ মাফ করে দেন এবং জান্নাতের দরজা বুলন্দ করেন? তারা বললেন, নিশ্চয় দেখাবেন হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, কষ্ট সত্তে¡ও উত্তমরূপে অজু করা, মসজিদ পানে অধিক পদচারণা, এক সালাতের পর অন্য সালাতের অপেক্ষায় থাকা। এটাই হলো রিবাত তথা আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা। সত্যিকার অর্থে সালাত মুমিনের মুক্তিমশাল; মানবিক মূল্যবোধে গড়ে ওঠার এক অনবদ্য মহৌষধ যদি সালাত কোনো মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করতে সক্ষম না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, কোনো না কোনো সমস্যা কোথাও রয়ে গেছে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সালাতের হক আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন। (সমাপ্ত)
লেখক : কবি ও গবেষক; প্রফেসর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মন্তব্য লিখুন