post

হজ বন্ধের আদি ইতিহাস

নাবিউল হাসান

০৮ জুন ২০২০
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম দোয়া করেছিল- হে আমার রব! এই শহরকে নিরাপত্তার শহরে পরিণত করো। এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজার শিরক থেকে বাঁচাও। হে আমার রব! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গুমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এই মহান ঘরকে একটি ধূসর মরুভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি। এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাজের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব হে আল্লাহ। তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো যেন তারা দলে দলে এদের কাছে আসে; এবং ফল-মূল দ্বারা তাদের জন্য তুমি জীবিকার ব্যবস্থা কর। হয়তো এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইবরাহিম : ৩৫-৩৭) নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ইবাদতগৃহটি নির্মাণ করা হয় সেটি মক্কায় অবস্থিত। তা বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াত ও বারাকাতের উৎস। আর তাতে অনেক স্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। যেমন মাকামে ইবরাহিম এবং যারাই এ ঘরের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে তারাই নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যারা সেখানে যাবার সামর্থ্য রাখে তারা যেন আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ ঘরে হজ সমাপন করে। এটি তাদের ওপর আল্লাহর অধিকার। আর যে ব্যক্তি এই নির্দেশ অস্বীকার করে (অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করে) তাহলে সে জেনে রাখুক আল্লাহ বিশ্বজগতের কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান : ৯৬-৯৭) সাধারণত নবম হিজরিতে হজ ফরজ হয়। এর আগে হযরত ইবরাহিম (আ)-এর সময়কাল থেকে প্রতি বছর বিশে^ বিভিন্ন প্রান্ত হতে মানুষ হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় সফর করে। বিভিন্ন বংশ, গোত্র, বর্ণ ও পেশার নানান রকম মানুষের এক মিলনমেলা এই শহরের কাবা শরিফ। অজানা এক চুম্বকের আকর্ষণে যেন ছুটে আসে লোকজন। এখানে এক পোশাকে সবাই অনুসন্ধান করেন মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- লাব্বায়িকা আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক, লাব্বায়িকা লা শারিকা লাকা লাব্বায়িক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক। অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি আপনার দরবারে হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা, অনুগ্রহ আর রাজত্ব আপনারই। আপনার কোন শরিক নেই। হযরত আদম (আ), তারপর নূহ (আ)সহ অন্যান্য নবী-রাসূল হজের এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইবরাহিম (আ)-এর সময় থেকে হজ ফরজ বা আবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত করা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহিম (আ)কে হজের কথা ঘোষণার নির্দেশ দেন। এ আদেশের পর ইবরাহিম (আ) আবু কোবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে আঙুল রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে ঘোষণা করেছিলেন- “লোক সকল, তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের ওপর এই গৃহে হজ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন করো।” (তাফসিরে মারেফুল কুরআন) প্রতিটি স্বাধীন, সুস্থ, বালেগ, বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর জীবনে কমপক্ষে একবার কাবাঘরের হজ আদায় করা ফরজ। হযরত ওমার ইবনুল খাত্তাব ও আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তারা বলেন : “একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে খুতবা প্রদান উপলক্ষে বলেছিলেন। লোক সকল! তোমাদের ওপর যে হজ অবশ্যই ফরজ করা হয়েছে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সুতরাং তোমরা হজ আদায় কর। তখন জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, প্রতি বছরই কি আমাদের ওপর হজ আদায় করা ফরজ? রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাব না দিয়ে চুপ থাকলেন। প্রশ্নকারী তার প্রশ্ন তিনবার পুনরাবৃত্তি করলো। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তবে তোমাদের ওপর প্রতি বছর হজ করা ফরজ হয়ে যেতো, যা তোমরা পালন করতে পারতে না। (সহীহ মুসলিম-৩২৫৭) তবে সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর বাইরের দেশের কোন মানুষ হজে যেতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। সারাবিশে^ পঁচিশ লক্ষ মানুষের নিবন্ধন থাকা সত্ত্বেও হজ করতে পারবেন না কেউ। গত দেড়শত বছরের মধ্যে হজ বাতিল হওয়ার প্রথম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এবার। হজ বন্ধ হওয়া খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা। কিন্তু এটাও লক্ষণীয় যে, ইসলাম অবাস্তব কোনো ধর্ম নয়; এটি গণ-মানুষের কল্যাণের ধর্ম। মানুষের সাধ্যের বাইরে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়নি এই ধর্মে। অথচ এই বিষয়ে অনেকে অনেক রকম কথা বলে যাচ্ছে। যেমন- মসজিদে কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না, ঈমানদাররা কখনো এসব গজবে পড়তে পারে না ইত্যাদি ইত্যাদি...। এই কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। কারণ ইতিহাস আমাদের এসব আজগুবি গল্পের সমাধান দিয়েছে। ইতিহাসে নানা সময়ে হজ বন্ধ হওয়ার বিষয়ে জানা জানা যায়। মহানবীর (সা.) নবুওয়াতের আগে ও পরে যুদ্ধ-বিগ্রহ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মহামারীর প্রাদুর্ভাব, বৈরী আবহাওয়াসহ নানা কারণে কয়েকবার হজ বন্ধ হয়েছিল। হারামাইন কর্তৃপক্ষের গবেষণা ও আর্কাইভে বাদশাহ আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে ইতিহাসে প্রায় ৪০ বার হজ বাতিল করা হয়েছিল কিংবা হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। হজ বন্ধ স্থগিত হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল- - মহামারী /রোগ - রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা - অর্থনৈতিক ঝামেলা - নিরাপত্তাজনিত কারণ - দ্বন্দ্ব সংঘাত - জঙ্গি হামলা বা হানাদারদের আক্রমণ নিম্নোক্ত কয়েকটি হজ বন্ধ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হলো- ১. আবরাহার আক্রমণ : ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আমুল ফিল বা হস্তিবর্ষে ইয়েমেনের তৎকালীন শাসক আবরাহা ৬০ হাজার সৈন্য ও ১৩টি হাতি নিয়ে মক্কার দিকে যাত্রা করে কাবাঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। আবরাহা কাবা ধ্বংস করে মানুষকে ইয়েমেনের দিকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি মহান আল্লাহ। আবরাহার আক্রমণের ঐ বছর পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে কিছু সময়ের জন্য হজ ও তাওয়াফ বন্ধ ছিল। ঐ বছরই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ২. কাবা পুনর্নির্মাণ : রাসূল (সা.)-এর নবুয়তের পাঁচ বছর আগে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কাবা ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ফলে কুরাইশরা কাবা পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখনো কাবায় তাওয়াফ বন্ধ ছিল। এসময় বিখ্যাত কালো পাথর ‘হাজরে আসওয়াত’ পুনঃস্থাপন নিয়ে বিবাদমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে যুবক মুহাম্মাদের (সা.) বিচক্ষণ বুদ্ধি দিয়ে সমাধান করেছিলেন। ৩. হাজ্জাজ বিন ইউসুফের আক্রমণ : ৭৩ হিজরি বা ৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের নির্দেশনায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কাবা অবরোধ করে। সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রা) আত্মগোপন করেছিলেন। খলিফার পক্ষে বাইয়াত না করে তিনি নিজেকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এভাবে ৯ বছর অতিবাহিত হয়। এই সময়ে আক্রমণের কারণে কাবার বিভিন্ন দিক ধ্বংস হয় এবং নামাজ ও ওমরাহ বন্ধ থাকে। এমনকি আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান বিজয়ী হলে আব্দুল্লাহ বিন জুবায়েরের নির্মিত অংশটুকুও ভেঙে ফেলা হয়। ফলে কাবা পুনর্নির্মাণের সময় নামাজ ও তাওয়াফ বন্ধ থাকে। ৪. কারামিয়াদের আক্রমণ : শিয়াদের একটি দল হলো কারামিয়া। ইরাকের আব্বাসী শাসক ও মিসরে উবায়াদি শাসকদের দুর্বলতার সুযোগে আরব উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্ত বাহরাইনে তারা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। তাদের বিশ্বাস ছিল, ‘হজ জাহেলি যুগের একটি নিদর্শন বা মূর্তির উপাসনার মতো।’ তাই ইসলামের ফরজ বিধান হজ বন্ধ করতে কারামিয়া শাসকরা তৎপর হয়ে ওঠে। ৩১৭ হিজরি মোতাবেক ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের ইতিহাসে (হজ ফরজ হওয়ার পর) কারামিয়ারা সর্বপ্রথম কাবায় আক্রমণ করে হাজীদের হত্যা করে। এ সময় তারা অনেক নারী-পুরুষকে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ ছিনতাই করে। ইরাক ও সিরিয়া থেকে মক্কা আসার পথে তারা আতঙ্ক তৈরি করে। হাজীদের হত্যা করে লাশ জমজম কূপে ফেলে দিয়েছিল। ফিরে যাওয়ার সময় ‘হাজরে আসওয়াদ’ বাহরাইনে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। এই হাজরে আসওয়াদ পুনরুদ্ধার হওয়ার পূর্ব (৩১৭ হিজরি থেকে ৩২৭ হিজরি) পর্যন্ত এক দশক হজ বন্ধ ছিল। (তারিখুল ইসলাম, আজ জাহাবি, ২৩/৩৭৪)। ৫. মাশিরি নামক মহামারী : ৩৫৭ হিজরিতে আরবের মক্কা নগরীতে মাশিরি নামের একটি রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়। এ সময় হাজীদের বেশির ভাগই মৃত্যুবরণ করেন। মক্কায় আসার পথে পিপাসায় কাতর হয়ে মারা যায় কেউ কেউ। আবার হজ সম্পন্ন করার পর মারা যায় অনেকে। (ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১১/১৪৫)। ৬. উবাইদি শাসনামলে : ৩৭২ হিজরিতে আব্বাসী খলিফা ও মিসরের উবাইদি শাসনের মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়। ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফত এবং মিসরভিত্তিক ফাতেমীয় খিলাফতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও রাজনীতির কারণে ৮ বছর পর্যন্ত হজ বন্ধ ছিল। ফলে ৩৭২ থেকে ৩৮০ হিজরি পর্যন্ত ইরাকের কেউ হজ করতে পারেনি। (ইবনে তাগরি বারদ, আন নুজুম জাহেরা : ৪/২৪৬) ৭. কয়েকবার নদীতে বরফ আবৃত হওয়া : কয়েকবার দোজলা নদীসহ অন্যান্য বড় নদীর পানি বরফে আবৃত হয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ফলে ৪১৭ হিজরিতে মিসর ও প্রাচ্যে কেউ হজ করতে পারেনি। ৪২১ হিজরিতে ইরাক ছাড়া অন্যদের পক্ষে হজ আদায় সম্ভব হয়নি। ৪৩০ হিজরিতে ইরাক, খোরাসান, শাম ও মিসরের কেউ হজ করতে পারেনি। (ইবনুল জাওজি, আল মুনতাজাম, ৯/১৬৬)। ৮. নিরাপত্তাহীনতা : ৪৯২ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের শাসকদের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে ব্যাপক সংঘাত দেখা দেয়। এতে মক্কায় গমনের পথ অনিরাপদ হয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস (মসজিদে আকসা) খ্রিস্টানদের দখলে যাওয়ার পাঁচ বছর আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই সময় হজ বন্ধ ছিল। ৯. বন্যার প্রকোপ : ১০৩৮ হিজরিতে মক্কায় ব্যাপক বন্যা হলে কাবার দেয়াল ভেঙে পড়ে। তাই সুলতান চতুর্থ মুরাদের নির্দেশে কাবা পুনর্নির্মাণ হয়। এ সময় হজ ও ওমরাহর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি ছিল কাবার সর্বশেষ নির্মাণ। ১০. ফরাসিদের আক্রমণ : ১২১৩ হিজরি; ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের সময় হজ বন্ধ থাকে। হজযাত্রীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ও রাস্তা অনিরাপদ হওয়ায় সে বছর হজযাত্রীরা হজে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ১১. কলেরা ও অন্যান্য মহামারীর প্রকোপ : ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে কলেরার প্রকোপ দেখা যায়। সে বছর হজ করতে গিয়ে তিন-চতুর্থাংশ হাজী মারা যান। এ সময় একই সাথে প্লেগসহ আরো কিছু মহামারীর প্রকাশ ঘটে। যার ফলশ্রুতিতে ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৭ বার হজ বন্ধ ছিল। এইবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, দেশটিতে বসবাসরত খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষ হজ পালনের সুবিধা পাবেন। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বাইরের দেশ থেকে হজের সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ। হজ করার সুযোগ পাবে শুধু দেশটির বাসিন্দা এবং বসবাসরত বিদেশিরা। তবে বিদেশ থেকে অল্প কয়েকজনকে প্রতীকী হিসেবেও অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু কিভাবে এই অংশগ্রহণকারীদের বাছাই করা হবে তা নিয়ে এখনো কোন ঘোষণা আসেনি। তবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় পরিচালিত হবে এবারের হজ, হাজীদের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ হাজারের বেশি হবে না। এমনই ঘোষণাই দিয়েছে হজ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ১ লাখেরও বেশি মানুষ হজ পালন করেন। এই বছরও ৬১ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছিলেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকাও জমা দিয়েছিলেন তারা। যারা আগেই নিবন্ধন করেছিলেন তাদের কী হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে সবাই। তাদের অর্থ কি ফেরত দেয়া হবে, দিলে কোন প্রক্রিয়ায় দেয়া হবে, নাকি আগামী বছর হজ নিবন্ধনে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে.. এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি এখনো। আমরা মহান আল্লাহর কাছে প্রতিটি ক্ষণে দোয়া করবো যে, আমাদের ভুলের কারণে যেন তিনি শাস্তি না দিয়ে নিজ রহমতে ক্ষমা করে দেন। এই পরিবেশ স্বাভাবিক করে দিয়ে আমাদেরও যেন হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তৌফিক দান করেন। হজ অনুষ্ঠিত হলে যেভাবে হাজীগণ স্মরণ করেন হযরত ইবরাহিম (আ) এবং হযরত ইসমাইল (আ)-এর সেই কোরবানির কথা, নবী রাসূলদের সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা। ইবরাহিম (আ)-এর পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে নিহিত আছে সবার জন্য শিক্ষা। মা হাজেরা (আ)-এর অসীম সাহস ও ঈমানের জযবায় যেন আমাদের মা-বোন দীক্ষিত হতে পারেন। শুধু নিজেকে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত না থেকে আমরা যেন আমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততিকেও আল্লাহ্র পথে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে কুরবানি করতে প্রস্তুত করি মহান আল্লাহ সেই তৌফিক আমাদেরকে দান করুন। আমিন। (এই প্রবন্ধের তথ্যগুলো নেয়া হয়েছে- হারাম শরিফের ওয়েবসাইট, মিডল ইস্ট আই, টিআরটি, দ্য নিউ আরব, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দারাতুল মালিক আব্দুল আজিজ, আনাদোলু নিউজ এজেন্সি, আল খালিজ অনলাইন ডটনেট এবং বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইট থেকে -লেখক) লেখক : সহকারী সম্পাদক, ছাত্র সংবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির