post

আমাদের যাত্রা অনন্তকালের

ইয়াসিন মাহমুদ

২৫ মার্চ ২০২১

আমরা প্রতিদিন আমাদের ঘর-সংসার, পরিবার নিয়ে কতই না ভাবছি। আগামীর দিনগুলোতে কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারি; সুখময় জীবনের খোঁজে পেরেশান সারাক্ষণ। গড়ছি নতুন ভবন, বাহারি ডিজাইনের কত আয়োজন এই জীবনকে ঘিরে। এভাবে সাজাতে সাজাতে অনেকে চলে যাচ্ছেন। শেষমেশ এই দুনিয়ার জীবনের প্রাপ্তির অনুভূতিটুকু বলার সুযোগও হয় না কখনো কখনো। এমন বাস্তবতার নজির ভূরিভূরি। তাহলে এই জীবন, জীবনের মানে? আজকের বাহাদুরি আগামীকালের জন্য সেটি চরম অসহায়ত্বের কারণও হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে। হ্যাঁ, জীবনের মানে খুঁজতে হলে, আমাদের এই ছোট্ট জীবনের মালিকের কাছে স্বেচ্ছায় সমর্পণ করতে হবে নিজেদেরকে। আর বলতে হবে- নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন-মরণ সবকিছু তো কেবল তোমারই জন্য। যখন এটি বলতে পারবো তখনই আমাদের ধমনিতে প্রবাহিত হবে- ঈমানের পথে অবিচল থেকে আমারই মরণ যেন হয়। ২. পরীক্ষার পর যেমন একজন শিক্ষার্থীর চোখ থাকে রেজাল্টের দিকে। কবে রেজাল্ট হবে। পাস হবে না ফেল হবে। আশানুরূপ ফলাফলের আশা-নিরাশার সমীকরণ চলতে থাকে। অবশ্য ভালো শিক্ষার্থীর পেরেশানি একটু কমই থাকে। আমাদের জীবন প্রবাহের দিনলিপিতে এমনটিই ঘটে। মৃত্যু অবধারিত তবে অনির্ধারিত। যেকোনো মুহূর্তে ডাক এলে চলে যেতে হয়। একটুও ফুরসত দেওয়া হয় না। প্যারোলে মুক্তি কিংবা জামিনের কোনো সুযোগ নেই। এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের সবাইকে। কেউ আগে কেউ পরে। এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই কারো। শুধু অপেক্ষার পালা। কখন কার নোটিশ আসে অনন্ত পথের অভিযাত্রীর সে হিসাব কেউ জানে না। আমরা কী যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পেরেছি সেই সফরের? পাসপোর্ট, ফিসা কি যাচাই করেছি একান্ত অনুভবে। আত্মসমালোচনার আয়নাতে মুখ রেখেছি? নিজেকে আড়াল করবার দুরভিসন্ধি হয়তোবা মহাবিচার দিবসে কোন কাজে আসবে না। সুতরাং তওবায়ে নুসুহায় পরিশুদ্ধ হয়ে নফসে মুতমাইন্নার অধিকারী হয়ে উঠি। সফলতার সোনালি দিগন্ত উন্মুখ হোক আমাদের জন্য।

৩. আমাদের হাতে অনেক কাজ। ফাইলবন্দি কাজগুলো মাঝে মাঝে নির্ঘুম করে দেয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে আমরা অস্থির হয়ে উঠি। জীবনের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে টানাটানি হয়। প্রেস্টিস পাংচার হওয়ার ভয়ে কতটা হা-হুতাশ করি তার কূলকিনার নেই। শুধমাত্র এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য; মানুষের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় তুলে ধরা। নিজের ফোকাস বৃদ্ধি ও আত্মসম্মানবোধকে সমুন্নত করার তাগিদ। হ্যাঁ, এটা যেমন জীবনের প্রয়োজন; তেমনি আমার পরকালীন মুক্তির প্রয়োজনে কতটুকু ছুটছি? প্রতিদিনই আমার ব্যক্তিগত অর্জনকে মানুষের কাছে তুলে ধরছি খুব সুন্দর করে। অথচ একজন মুমিনের জীবনের মিশন কী, সে ব্যাপারে একবারও নিজেকে প্রশ্ন করেছি? আমার সেই কাক্সিক্ষত কাজটি কিভাবে হবে, সেই কাজটি না হলে আমি কতটুকু বিচলিত হয়ে বিবেকের আদালতে নিজেকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করেছি?

৪. আমরা একটি খারাপ সময় পার করছি। আমাদের পূর্বসূরিদের ওপর আমাদের অধিক জুলুম নির্যাতন করা হয়েছিলো। তাদেরকেও দ্বীনের দাওয়াত থেকে বিরত রাখার কতই না ফন্দি-ফিকির জিকিরই না করেছিলো। ইসলামপ্রিয় আল্লাহর প্রিয় বান্দারা পিছপা হয়নি। বরং এগিয়ে গিয়েছিলো সম্মুখপানে। অব্যাহত রেখেছিলো দ্বীনের দাওয়াত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যিনি মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে, নিজে আমলে সালেহ করে এবং বলে, আমি একজন মুসলমান।” (সূরা হামিম সাজদাহ : ৩৩) রাসূলুল্লাহ সা. নির্দেশ বলেছেন, “একটি আয়াতও আমার নিকট থেকে শুনে থাকলে তা অন্যের নিকট পৌঁছে দাও।” (সহিহুল বুখারি) আল্লাহ যাদেরকে ভালোবাসেন তারাই কেবল হেদায়াত প্রাপ্ত হন। এটি পরম সৌভাগ্যেরও ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, যারা হেদায়াতের আকাক্সক্ষী আল্লাহ তাদেরকে বাছাই করেন। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা শেষ করা যাবে না। এক্ষেত্রে দ্বীনের পথে শুধুমাত্র নিজেই সম্পৃক্ত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অবকাশ নেই। বরং তা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেবার নির্দেশনাও দিয়েছেন মহান প্রভু। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে- হে রাসূল! তোমার রবের তরফ হতে তোমার প্রতি যা কিছু নাজিল করা হয়েছে, তা লোকদের পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। তুমি যদি উহা না কর, তবে উহা পৌঁছিয়ে দেয়ায় ‘হক’ তুমি আদায় করলে না। লোকদের ক্ষতি ও দুষ্কৃতি হতে আল্লাহই তোমাকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে সৎ পথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা আল মায়েদা : ৬৭)

৫. ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত অবস্থায় শাহাদাতবরণকারী ফিলিস্তিনের এক যোদ্ধার নাম এখনও সবার মুখে মুখে। কী সাহসিকতা ছিল তাঁর বুকে! দুই পা হারানো এই সিপাহসালার হুইল চেয়ারে বসে হাতে বানানো গুলতি দিয়ে ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আবারো প্রমাণ করলেন লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন বুকের ভেতরে জমানো হিম্মত। ফাদি আবু সালাহ মুসলিম মিল্লাতের প্রেরণা। একটি বিপ্লব, একটি বিজয়ের জন্য এমন একদল দুঃসাহসী সেনাপতির বড়ই প্রয়োজন। হক-বাতিলের এই দ্বন্দ্ব যেমন চিরদিন থাকবে তেমনি ফাদি আবু সালাহও জন্ম নিবে যুগে যুগে। আজ অথবা কাল আমাদের এই সবুজাভ ভূখণ্ডে কালিমার পতাকা পতপত করে উড়বে। জলোচ্ছ্বাসে খড়-কুটোর মতো ভেসে যাবে সাময়িক ক্ষমতার দম্ভকারীরা।

৬. আমরা সবাই ব্যস্ত মানুষ। প্রতিদিন শতশত কাজের ব্যস্ততার ভিড় আমাদেরকে ভুলিয়ে রাখতে চায় দ্বীনের কাজ। নিষ্ক্রিয়তার মোড়কে আবদ্ধ করে অক্টোপাসের মতো। সময় নেই কিংবা সময় করে উঠতে পারছি না এমন অজুহাত সামনে আসে বারবার। আমাদের প্রাণশক্তিকে একেবারে অকেজো করে ফেলে। এই কাজটি সকল কাজের প্রতিবন্ধক ও অন্তরায়। মাথায় ভর করা এই আজাজিলের কাছে একজন মুমিনের পরাজয় কখনো মানা যায় না। সত্য শপথে নতুন করে বলীয়ান হই। মুুক্তির এ মিছিলে নতুন অভিযাত্রীর শুভাগমন আশান্বিত করে প্রতিদিন। জনপ্রিয় গীতিকার আবু তাহের বেলালের সাথে আমরাও কণ্ঠ মিলাই- পৃৃথিবীর হাজারো কাজের ভিড়ে ইকামাতে দ্বীনের এ কাজ যেন আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয় আর কোন বাসনা নেই তো আমার কবুল কর তুমি হে দয়াময়।

লেখক : কবি ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির