post

আহত মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের অনুভূতি

০৪ অক্টোবর ২০১৪

Chhatrasangbad২৮ অক্টোবর ২০০৬ । পল্টন হত্যাকাণ্ড দিবস ও জাতীয় কালো দিবস। দিনটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক রক্তঝরা বর্বরতার ইতিহাসের দিন।  প্রকাশ্যে দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার পর লাশের ওপর পৈশাচিক নৃত্য ! জাতি হতবাক! বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত ! এ কোন বর্বরতা? হ্যাঁ এটাই আওয়ামী গণন্ত্রের (?) স্টাইল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী ১৪ দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশ থেকে ১৪ দলীয় নেতাকর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য নির্দেশ দেন এবং নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা, দেশীয় অস্ত্রসহ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। বিকেল ৩টায় জনসভা। আমীরে জামায়াতসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করবেন। সকাল ৬টা থেকে স্টেজের কাজ চলছে। সকাল ৭টা স্বেচ্ছাসেবকরা আসছেন। আমি যথারীতি ফজরের নামাজের পর উত্তর গেটে হাজির হই। শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের  সদস্য ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি জননেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল ভাই স্টেজের কাজ পরিদর্শন করছেন। এক পর্যায়ে  স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বুলবুল ভাইয়ের সাথে পল্টন মোড়ে গেলাম। তখন সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টা বাজে। আমরা কেবলমাত্র পল্টন মোড়ে দাঁড়ালাম আর কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আওয়ামী বাকশালী সন্ত্রাসীরা প্রথমেই আমার ও বুলবুল ভাইয়ের সামনে লগি-বৈঠা নিয়ে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করে এবং একজনকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি কিন্তু তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায়। মুহূর্তেই প্রেস ক্লাব বিজয়নগর থেকে আওয়ামী নেতা সাহারা খাতুন, মায়া, নাসিমসহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের নেতৃত্বে পল্টন মোড়ের দিকে মিছিল নিয়ে আসে অস্ত্র উঁচিয়ে। আর আমরা খালি হাতে। এক টানা হামলা আমাদের ওপর, এ যেন বর্বরতার আদিম যুগের খণ্ডচিত্র। আমাদের সামনে কর্মীদের প্রচণ্ড মারধর করছে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে আহত করছে। অথচ পুলিশের নীরবতায় সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া। যা টিভি চ্যানেলের লাইভ কাভারেজের কারণে জাতিসহ সারা বিশ্ব সরাসরি দেখলো। এক দিকে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট, অন্য দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর শুধু ঢাকা মহানগরী শাখা। তাও ঈদের পর হওয়ায় সবাই ময়দানে ছিল না। কিন্তু হাজার হাজার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর সামনে আমরা তিন-চার শ’ কর্মী মাথানত করিনি। তারা আমাদের সামনে আশপাশে লগি-বৈঠা দিয়ে পিঠিয়ে গুলি করে শুধু ঢাকাতেই ঢাকা মহানগরী পূর্বের সবুজবাগ থানার ২৭ নং ওয়ার্ড বায়তুলমাল সম্পাদক ও সাথী হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন, একই ওয়ার্ড সেক্রেটারি সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুম, ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সদস্য মুজাহিদসহ ৬ জনকে শহীদ এবং শত শত ভাইকে পঙ্গু ও আহত করে দিল। এই হত্যাকাণ্ডে শুধু বাংলাদেশ নয় জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিন্দা এবং বিশ্বগণমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় হয়। আমি সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ময়দানে ছিলাম। পরে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। পরবর্তীতে শুনেছি এত কিছুর পরও বিকেল ৩টায় যথাসময়ে জামায়াতের জনসভা শুরু হয় এবং আমীরে জামায়াত সাবেক শিল্পমন্ত্রী বর্তমানে কারাবন্দী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী যখন বক্তৃতা করেন তখনও গুলি ও বোমা হামলা চলতে থাকে। আমীরে জামায়াত ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে বক্তৃতা করেন। আওয়ামী নেতাদের মুক্তাঙ্গন থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলার নির্দেশ সত্ত্বেও আমীরে জামায়াত বক্তৃতায় কোন পাল্টা হামলা তো দূরের কথা উসকানিমূলক কোন শব্দও উচ্চারণ করেননি যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। আর এই নেতাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে, তাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যার আয়োজন করছে বর্তমান অবৈধ সরকার। ২৮ অক্টোবরের কথা মনে হলেই বদরের প্রান্তরে রাসূল (সা)-এর রক্ত দেয়ার ইতিহাসের কথাই মনে পড়ে। বদরের প্রান্তরে রাসূল (সা) ৩১৩ জন সাহাবী (রা)-কে  নিয়ে ১০০০ কাফেরের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করে আল্লাহর পক্ষ হতে যে সরাসরি সাহায্য পেয়েছিলেন ঠিক তদ্রƒপ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সেই দিন ২-৩ শত জন দ্বীনের মুজাহিদ ভাই ২০-৩০ হাজার (দেশী-বিদেশী অস্ত্রে সজ্জিত) আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় আমরাও আল্লাহর সাহায্য সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের হাতে কোন দেশী-বিদেশী অস্ত্র তো দূরে থাক সামান্য লাঠিও ছিল না। শুধু বুকে ছিল তেজোদ্বীপ্ত ঈমান আর মুখে ছিল নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার শ্লোগান। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবারের বজ্রকঠিন শ্লোগানে ঐ দিন দেখলাম ইসলামের দুশমনেরা, বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও কিভাবে কাপুরুষের মতো পালালো। ঐ দিনেই বুঝলাম কুরআনের বক্তব্যের আলোকে ইসলামবিরোধী ও মিথ্যাবাদীরা বাস্তব ময়দানে কতই না দুর্বল। তারই প্রমাণ দেখেছি ২৮ অক্টোবর। লগি-বৈঠা ও দেশী-বিদেশী অস্ত্র দিয়ে সত্যিকারের মুুমিনদেরকে মোকাবেলা করা যায় না। তারা সকল অস্ত্রের মুখেও ময়দান থেকে পালায় না। আল্লাহর দ্বীনের পথে সত্যের পতাকাবাহী মুমিনরা বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে আরো বলিষ্ঠ ঈমানী চেতনা নিয়ে দৃঢ় কদমে শুধু সম্মুখপানে এগিয়ে যায়। ঢাকা মহানগরীর ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ভাইয়েরা ঐ দিন বাতিলের সামনে মাথা নত না করে আহত হয়ে জীবন দিয়ে তাই প্রমাণ করলো। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, মতিঝিল থানা সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা মহানগরী পূর্ব

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির