post

উজ্জীবিত ঈমানের বিচ্ছুরিত আলো

মুহাম্মদ আসাদ উল্লাহ আদিল

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ۙ﴿۱﴾ فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا ۙ﴿۲﴾ فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا ۙ﴿۳﴾ فَاَثَرۡنَ بِهٖ نَقۡعًا ۙ﴿۴﴾ فَوَسَطۡنَ بِهٖ جَمۡعًا ۙ﴿۵﴾ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّهٖ لَکَنُوۡدٌ ۚ﴿۶﴾ وَ اِنَّهٗ عَلٰی ذٰلِکَ لَشَهِیۡدٌ ۚ﴿۷﴾ وَ اِنَّهٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ ؕ﴿۸﴾ اَفَلَا یَعۡلَمُ اِذَا بُعۡثِرَ مَا فِی الۡقُبُوۡرِ ۙ﴿۹﴾ وَ حُصِّلَ مَا فِی الصُّدُوۡرِ ﴿ۙ۱۰﴾ اِنَّ رَبَّهُمۡ بِهِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّخَبِیۡرٌ ﴿۱۱﴾

English Translation (1) By the (Steeds) That run, with panting (breath), (2) And strike sparks of fire, (3) And push home the charge in the morning, (4) And raise the dust in clouds the while, (5) And penetrate forthwith into the midst (of the foe), (6) Truly Man is, to his Lord, ungrateful; (7) And to that (fact) he bears witness (By his deeds); (8) And he is violent in his love of wealth. (9) Does he not know, when that which is in the graves is scattered abroad. (10) And that which is (Locked up) in (human) breasts is made manifest. (11) That their Lord had been well-acquainted with them (Even to) that Day. (Surah Al-Adiat)

বাংলা অনুবাদ (১) শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বসমূহের, (২) অতঃপর ক্ষুরাঘাতে অগ্নিবিচ্ছুরক অশ্বসমূহের, (৩) অতঃপর প্রভাতকালে আক্রমণকারী অশ্বসমূহের, (৪) যারা সে সময় ধূলি উৎক্ষেপণ করে, (৫) অতঃপর যারা শত্রুদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। (৬) নিশ্চয়ই মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ। (৭) আর সে নিজেই এ বিষয়ে সাক্ষী। (৮) নিশ্চয়ই সে ধন-সম্পদের মায়ায় অন্ধ। (৯) সে কি জানে না, যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে? (১০) এবং বুকের মধ্যে যা লুকানো ছিল সব প্রকাশিত হবে? (১১) নিশ্চয়ই তাদের প্রতিপালক সেদিন তাদের কি হবে সে বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা আল-আদিয়াত)

নামকরণ ও সূরা পরিচিতি والعاديات, The assulters কঠিন ও ‘হঠাৎ’ আক্রমণকারী সূরার প্রথম শব্দ হতে নামকরণ। এখানে এটি একটি Symbolic Word. এটি মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ১০০তম সূরা, আয়াত ১১টি, শব্দ ৪০টি, বর্ণ ১৬৪টি।

নাজিলের সময়কাল ও স্থান এ সূরাটি মাক্কি বা মাদানি হওয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., জাবের রা., হাসান বসরী, ইকরামা ও আতা বলেন, এটি মাক্কি সূরা। হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. ও কাতাদাহ একে মাদানি সূরা বলেন। অন্যদিকে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে দুই ধরনের মত উদ্ধৃত হয়েছে। তাঁর একটি মত হচ্ছে এটি মাক্কি সূরা এবং অন্য একটি বক্তব্যে তিনি একে মাদানি সূরা বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সূরার বক্তব্য ও বর্ণনাভঙ্গি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে, এটি মাক্কি যুগের প্রথম দিকে নাজিল হয়।

বিষয়বস্তু অত্র সূরায় দুটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। এক. মালিকের প্রতি অনুগত সুদক্ষ সামরিক অশ্বের শপথ করে বলা হয়েছে যে, মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং সে ধন-সম্পদের মায়ায় অন্ধ (১-৮ আয়াত)। দুই. মানুষকে এর মন্দ পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে এবং আখেরাতে জবাবদিহিতার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে (৯-১১ আয়াত)।

শানে নুজুল সূরা আদিয়াত নাজিলের পটভূমি হলো হিজরি অষ্টম সনের একটি যুদ্ধ। মুসলমানদের ওপর অতর্কিতে হামলার অশুভ উদ্দেশ্যে আরবের ইয়াবেস উপত্যকার মুশরিকরা মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকাতে জড়ো হলে মহানবী সা. এ সংবাদ পেয়ে আবু বকরের রা. নেতৃত্বে তাদের প্রতিহত করতে এক সেনাদল পাঠান। কিন্তু তারা ছিল খুবই দুর্র্ধর্ষ। ফলে আবু বকর রা. ফিরে যেতে বাধ্য হন এবং বহু মুসলমানও নিহত হয়। দ্বিতীয় দিন উমর ইবনে খাত্তাব রা. এর নেতৃত্বে পাঠানো সেনাদলও একইভাবে ব্যর্থ হয়। তৃতীয় দিন আমর ইবনে আস রা. বলেন, ‘আমাকে যদি নেতা নিযুক্ত করা হয় তবে আমি কৌশলে তাদেরকে হারাব। তাকেও পাঠানো হলো। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলেন। কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয় আবু বকর ও উমর কেবল আলোচনার মাধ্যমে ওই শত্রুদের বশে আনার চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। যাই হোক অবশেষে মহানবী সা. হযরত আলী রা. কে নেতা নিযুক্ত করলেন এবং তিনি তাঁকে মসজিদে আহযাব অবধি পৌঁছে দিয়ে বিদায় নিলেন। হযরত আলী সেনাদলকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলেন এবং রাত থাকতেই তাদের কাছে পৌঁছে গেলেন এবং আক্রমণ করে তাদের বহু লোককে হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টকে শৃঙ্খলিত করে এলেন। এদিকে হযরত আলীর রা. নেতৃত্বে বিজয়ী মুজাহিদরা মদিনা পৌঁছানোর পূর্বেই সূরা আদিয়াত নাজিল হয়। মহানবী সা. ফজরের নামাজে এই নতুন সূরা পড়লে সাহাবিরা এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি হযরত আলীর নেতৃত্বাধীন সেনাদের বিজয়ের সুসংবাদ শোনান। মহানবী সা. প্রফুল্লচিত্তে মুজাহিদদের অভ্যর্থনা জানাতে বেরিয়ে আসেন। আর যখন তাঁর ওপর হযরত আলীর দৃষ্টি পড়ল সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন। তখন মহানবী সা. বললেন, “হে আলী! যদি আমার উম্মতের বিপথগামিতার আশঙ্কা না থাকত তবে তোমার সম্পর্কে আমি সেই কথা বলতাম যারপর মানুষ তোমার পদধূলিকে রোগমুক্তির জন্য নিয়ে যেত।”

ব্যাখ্যা আল্লাহ পাক সূরার শুরুতে বর্ণিত পরপর পাঁচটি আয়াতে সুপ্রশিক্ষিত, সুদক্ষ ও মালিকের প্রতি অনুগত সামরিক অশ্বের শত্রুপক্ষের উপরে দুঃসাহসিক হামলাকালীন অবস্থা বর্ণনা করেছেন এবং তাদের শপথ করে বলেছেন যে, মানুষ তার প্রতিপালকের প্রতি একান্তই অকৃতজ্ঞ। অথচ অবলা চতুষ্পদ জন্তু হওয়া সত্ত্বেও সামরিক অশ্বগুলো তাদের মনিবের প্রতি কতই না বিশ্বস্ত ও অনুগত যে, তারা মালিকের হুকুমে জীবন বাজি রেখে শত্রুপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে সৃষ্টিসেরা মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহর হুকুমের প্রতি যথাযথ আনুগত্যশীল নয় এবং তাঁর দেওয়া অনুগ্রহ সমূহের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়। (১) وَالْعَادِيَاتِ ضَبْحاً ‘শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বসমূহের’ By the (Steeds) That run, with panting (breath) ।و“ ”এ কসমিয়া ব্যবহার করে পরবর্তী বিষয়টির উপর জোর দেয়া হয়েছে। এটি আল কুরআনের একটি শিল্প। এটি আরবি সাহিত্যের একটি রীতিও বটে। আবার কসম করে আল্লাহ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কসমই যেন কসমের পরবর্তী বক্তব্যের তাফসির। عدَا يَعْدُو عَدْوًا ‘দৌড়ানো’। সেখান থেকে اسم فاعل (কর্তৃকারক) الْعَادِيَاتِ অর্থ الأفراس تعدو ‘ঐসব অশ্ব যারা দৌড়ায়’। হযরত আলী রা. এর অর্থ করেছেন, الابل বা উট। আর হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর অর্থ করেছেন, الخيل বা ঘোড়া। আর ঘোড়ার হ্রেষা ধ্বনিকে الضبح বলা হয়। (ইবনে কাসীর) الْخَيْلُ ضَبْحًا ضَبَحَتِ অর্থ صوتُ أنفاسِهَا إِذَا عَدَتْ ‘ঘোড়ার নিঃশ্বাসের শব্দ যখন সে দৌড়ায়’। ضَبْحًا বাক্যে حال হওয়ার কারণে জবরযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এটা ঐ সময় হয় যখন ঘোড়া ভীষণভাবে দৌড়ায়। আতা ও ইবনু আববাস রা. বলেন, ঘোড়া, কুকুর ও শিয়াল ব্যতীত অন্য পশু এরূপ শব্দ করে না (কুরতুবি)। এখানে অর্থ হলো যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের উপরে ভীষণভাবে অতর্কিত হামলা করার লক্ষ্যে ‘ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বসমূহের শপথ’। যার গতি খুবই ক্ষিপ্র যে খুবই জানবাজ ও নিরলস। (২) فَالْمُوْرِيَاتِ قَدْحًا ‘অতঃপর ক্ষুরাঘাতে অগ্নিবিচ্ছুরক অশ্বসমূহের’ (And strike sparks of fire) وَرَى يَرِى وَرْيًا অর্থ إذا خرجت ناره ‘যখন লোহার ঘর্ষণে আগুন বের হয়’। এখানে إِيْرَاءٌ থেকে الْمُوْرِيَاتُ ‘অগ্নিবিচ্ছুরণকারী অশ্বসমূহ’। قَدْحًا অর্থ الاستخراج ‘বের করা’। যেমন বলা হয়, قَدَحْتُ الْعَيْنَ ‘আমি চক্ষু পরিষ্কার করেছি’। অর্থ إذا اخرجت منها الماء الفاسد ‘যখন চোখ থেকে মন্দ পানি বের করা হয়’। এখানে অর্থ হবে ‘লোহার ঘর্ষণে আগুন বের করা’। এক্ষণে فَالْمُوْرِيَاتِ قَدْحاً এর ব্যাখ্যায় হযরত ইকরিমা, আতা, দাহহাক প্রমুখ বলেন, هى الخيل حين تُورِى النارَ بحوافرها ‘ঐসব ঘোড়া (যখন প্রস্তরময় ভূমিতে লৌহনাল পরিহিত অবস্থায় প্রচ-বেগে দৌড়ায়, তখন) যারা তাদের পায়ের ক্ষুরসমূহ থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বের করে’ (কুরতুবি)। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, এর অর্থ যুদ্ধের ময়দানে ঘোড়া দ্রুতবেগে ছুটে চলা। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ধোঁকা দেওয়া। ইবনে জারির (রহ) এর মতে, প্রথম মতটি প্রণিধানযোগ্য। (৩) فَالْمُغِيْرَاتِ صُبْحاً ‘অতঃপর প্রভাতকালে আক্রমণকারী অশ্বসমূহের’ (যারা সে সময় ধূলি উৎক্ষেপণ করে) (And push home the charge in the morning)أَغَارَ يُغِيْرُ إغارةً، أغارَ على العدوِّ إذا هجم عليه- ‘হামলা করা’। এখানে অর্থ الخيلُ تُغِير على العدو عند الصبح ‘ঐসব ঘোড়া যারা প্রভাতকালে শত্রুদের উপরে হামলা করে’। صُبْحاً বাক্যে حال হওয়ার কারণে যবরযুক্ত হয়েছে। আরবদের মধ্যে সাধারণত প্রভাতকালে শত্রুর উপরে আক্রমণ করার নিয়ম ছিল। যেমন কাফেরদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, فَإِذَا نَزَلَ بِسَاحَتِهِمْ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِيْنَ- ‘অতঃপর যখন তাদের আঙিনায় আযাব নাজিল হবে, তখন যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের সকাল বেলাটা হবে খুবই মন্দ’ (সূরা সাফফাত ৩৭/১৭৭)। ইবনে আব্বাস রা., মুজাহিদ, ও কাতাদাহ রা. বলেন, এ আয়াতের অর্থ ঘোড়া নিয়ে সকাল সকাল আল্লাহর পথে অভিযান চালানো। (৪) فَأَثَرْنَ بِهِ نَقْعاً ‘যারা সে সময় ধূলি উৎক্ষেপণ করে’। (And raise the dust in clouds the while) أثَارَ يُثِيْرُ إثارةً অর্থ ‘উড়ানো’। نَقْعاً অর্থ ‘ধূলি’। بِهِ অর্থ بالعَدْو ‘দৌড়ের সাথে’। অর্থাৎ الخيلُ تثير الغُبارَ بشدة العَدْو فى المكان الذى أغارت به ‘তীব্র বেগে হামলার কারণে আক্রমণস্থলে ঘোড়া ধূলি উৎক্ষেপণ করে’। আক্রমণস্থল বলতে طريق الوادى হতে পারে, যে পথে ধাবিত হয়ে শত্রুদলকে আক্রমণ করা হয়’ (কুরতুবি)। অর্থাৎ দৌড়ের বা যুদ্ধের তীব্রতার কারণে সকালে ঠা-া আবহাওয়াতেও আকাশে ধূলি উৎক্ষিপ্ত হয়। (৫) فَوَسَطْنَ بِهِ جَمْعاً ‘অতঃপর যারা শত্রুদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে’। (And penetrate forthwith into the midst (of the foe) وَسْطٌ অর্থ ‘মধ্যখান’ جَمْعٌ অর্থ ‘দল’। এখানে جموعًا من الأعداء ‘বিপক্ষীয় সেনাদল’। جَمْعًا বাক্যে مفعول به হয়েছে। এক্ষণে فَوَسَطْنَ بِهِ جَمْعًا অর্থ فوسطن بركبانهن العدو ‘আরোহীদের নিয়ে তারা শত্রুদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে’ (কুরতুবি)। শত্রুশিবিরে পৌঁছে তারা তা ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়। ইবনে আব্বাস রা., আতা ও ইকরিমা বলেন, এ আয়াতের অর্থ মুজাহিদদের শত্রুবাহিনীর অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া (ইবনে কাসির)।

উপরোক্ত পাঁচটি আয়াতে আল্লাহ পাক সুদক্ষ ও দুঃসাহসী সামরিক অশ্বের যে বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করেছেন, তা একত্রিত করে বলা যায় : ‘শপথ ঐ অশ্বসমূহের, ভীষণ বেগে দৌড়ানোর সময় যাদের ক্ষুরাঘাতে অগ্নিবিচ্ছুরিত হয় এবং প্রভাতকালে হামলা করে শত্রুবূহ্যের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এ সময় ঘনঘোর যুদ্ধের কারণে সকালের ঠাণ্ডা আবহাওয়াতেও আকাশে ধূলি উৎক্ষিপ্ত হয়’।

ঘোড়ার শপথের রহস্য তৎকালীন আরব ও সমকালীন বিশ্বে ঘোড়ার আলাদা কদর রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নববীতে ঘোড়ার বর্ণনা ও অনন্য বৈশিষ্ট্য বারবার এসেছে। সূরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে- وَ اَعِدُّوۡا لَهُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّ مِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡهِبُوۡنَ بِهٖ عَدُوَّ اللّٰهِ وَ عَدُوَّکُمۡ وَ اٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَهُمۡ ۚ اَللّٰهُ یَعۡلَمُهُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ অর্থাৎ তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ ও তোমাদের শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না। সূরা আলে ইমরানের ১৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে- وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَالۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ অর্থাৎ নারী, সন্তান-সন্ততি, সোনা-রূপার স্তূপ, বাছাইকৃত ঘোড়া, গবাদিপশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব (কেবলমাত্র) পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু। আর আল্লাহ, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল। সূরা আদিয়াতের ১-৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ـ فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا ـ فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا ـ فَاَثَرۡنَ بِهٖ نَقۡعًا ـ فَوَسَطۡنَ بِهٖ جَمۡعًاـ অর্থাৎ শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির, অতঃপর যারা ক্ষুরের আঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত করে, তারপর যারা অভিযান করে প্রভাতকালে, ফলে তারা তা দ্বারা ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে, অতঃপর তা দ্বারা শত্রুদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। সূরা নাহলের ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- وَّ الۡخَیۡلَ وَ الۡبِغَالَ وَ الۡحَمِیۡرَ لِتَرۡکَبُوۡهَا وَ زِیۡنَۃً ؕ وَ یَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ অর্থাৎ তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও। ঘোড়া সম্পর্কে হাদিসে নববীতে বর্ণিত আছে- عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : الخيل معقود بنواصيها الخير الى يوم القيامه: : الخيل لثلاثة : هي لرجل أجر ، لرجل ستر ، وعلى الرجل وزر ، فأما الذي هي له أجر ، فرجل ربطها في سبيل الله ، فأطال لها في مرج أو روضة . فما أصابت في طيلها من المرج والروضة كانت له حسنات ، ولو انها قطعت طيلها فاستنت شرفاً أو شرفين كانت آثارها وأرواثها حسنات له ، ولو أنها مرة بنهر فشربت ولو يرد أن يسقيها كان ذلك له حسنات، ورجل ربطها تغنياً وستراً وتعففاً ، ثم لم ينس حق الله في رقابها وظهورها فهي له ستر ، ورجل ربطها فخراً ورياءاً ونواءاً لأهل الأسلام ، فهي له وزر ـ অর্থাৎ আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা. এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটে কল্যাণ বেঁধে রেখেছেন। ঘোড়া তিন প্রকার: এক প্রকার ঘোড়া, যা দ্বারা মানুষ সওয়াব লাভ করে, আর এক প্রকার ঘোড়া যা (অসচ্ছলতার জন্য) আচ্ছাদন (ঢালস্বরূপ) হয়ে থাকে এবং অন্য প্রকার যা বোঝাস্বরূপ হয়ে থাকে। সওয়াবের ঘোড়া তো ঐ ঘোড়া, যাকে মালিক লালন পালন করে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য এবং প্রয়োজনমতো তাকে জিহাদে ব্যবহার করা হয়। যা কিছু সে খায়, যা কিছু তার পেঠের ভেতরে গায়েব করে, তা সবই তার জন্য সওয়াব লিখা হয়। যদিও নতুন চারণভূমিতে সে তার সামনে উদ্ভাসিত হয় (সুনানে নাসায়ী-৩৫৬৩)। অন্য রেওয়াতে আছে, মালিক তার রশি বাগান ও চারণভূমিতে লম্বা করে দেয়, সেই ঘোড়া সে রশিতে থেকে যতদূর পর্যন্ত চরবে, তার জন্য নেকি লেখা হবে। যদি সে রশি ছিঁড়ে কোন উঁচুস্থানে চরে, তবে তার প্রত্যেক পদক্ষেপের জন্য নেকি লেখা হবে। হারিস রা.-এর রেওয়াতে আছে তার গোবরের জন্যও নেকি লেখা হবে। যদি ঐ ঘোড়া কোন নহরে গিয়ে পানি পান করে, অথচ মালিকের পানি পান করাবার ইচ্ছা না থাকে, তবুও তা মালিকের জন্য নেকিরূপে লেখা হবে। আর যে তা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বেঁধে রাখে অথবা মানুষের কাছে চাওয়া থেকে বাঁচার জন্য এবং তার ঘাড়ে ও পিঠে পালনীয় মহান মহীয়ান আল্লাহর হক এর কথা বিস্মৃত হয় না (জাকাত আদায় করে) তবে তা মালিকের জন্য আচ্ছাদন। আর ঐ ব্যক্তির জন্য পাপ, যে ব্যক্তি তাকে গর্ব করা, লোকদেখানো ও মুসলিমের সাথে শত্রুতার জন্য বাঁধে (পালন করে) (সুনানে নাসায়ী-৩৫৬৪)। মূলত ঘোড়া এক বিস্ময়কর সম্ভ্রান্ত প্রাণী। যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়া এক অনন্য বাহন। জন্মের এক ঘণ্টা পরেই ঘোড়া দৌড়াতে পারে। পৃথিবীতে ৩০০ জাতেরও বেশি ঘোড়া আছে। ঘোড়া দাঁড়িয়ে ও শুয়ে উভয়ভাবে ঘুমাতে পারে। কারণ তার দেহের কাঠামো এমনভাবে তৈরি, সে পা মুড়ে বসতে পারে না, এটি তার প্রয়োজন হয় না এবং এতে তার কোনো কষ্ট বা ক্ষতিও হয় না। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঘোড়ার শরীরে সাধারণত ২০৫টি হাড় থাকে। মানুষ আর ঘোড়ার ছাঁচে গলার নিচের হাড়টি শুধুমাত্র পার্থক্য। ঘোড়ার মধ্যে এটি নেই। ঘোড়াকে পৃথিবীর চতুর্থ পছন্দনীয় পশু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ঘোড়ার দাঁত দেখেই স্ত্রী ও পুরুষ ঘোড়া শনাক্ত করা যায়। পুরুষ ঘোড়ার ৪০টি ও স্ত্রী ঘোড়ার ৩৬টি দাঁত থাকে। অনেকগুলো ঘোড়া একসাথে কখনো শুয়ে থাকে না। অন্তত একটি সজাগ থাকে আর সঙ্গীদের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে। ঘোড়ার দৃষ্টিশক্তি অনেক প্রখর। রাতে মানুষের চেয়ে ভালো দেখে। তবে আলো থেকে অন্ধকারে বা অন্ধকার থেকে আলোতে অ্যাডজাস্ট করতে মানুষের চেয়ে ঘোড়ার বেশি সময় লাগে। ঘোড়া দৈনিক ২৫ গ্যালন পানি পান করে। গরমের সময়ে আরো বেশি পানি পান করে। ঘোড়া একটি সামাজিক প্রাণী, তাই একা থাকলে নিঃসঙ্গ অনুভব করে এবং সঙ্গীর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত হয়। একবার এক ব্যক্তি রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা.! জান্নাতে কি ঘোড়া থাকবে? রাসূল সা. বলেন, আল্লাহ যদি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, তাহলে এতে লাল এয়াকুত পাথরের যে ঘোড়ায় চড়তে চাও, সে তোমাকে নিয়ে জান্নাতের যেখানে যেতে চাও সেখানে উড়ে নিয়ে যাবে।

একটি সামরিক ঘোড়া এবং একজন মুজাহিদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের অপূর্ব সাদৃশ্য প্রথমত : ঘোড়া যেমন ঊর্ধ্বশ্বাসে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে চলে, জানবাজি রেখে গন্তব্য পানে নিরন্তর এগিয়ে যায়, তেমনি একজন দায়ী ইলাল্লাহ ও মুজাহিদ ফি সাবিলিল্লাহ তার অভীষ্ট লক্ষ্য পানে নিরলসভাবে ছুটে চলবে। হাজারো প্রতিবন্ধকতা, মানবিক দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা তার চলার পথে ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে Barrier হিসেবে কাজ করবে না। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ মহান আল্লাহর দাসত্ব ও প্রভুত্বের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণায় আপসহীনভাবে এগিয়ে যাবে। নিষ্ক্রিয়তা, অলসতা ও পার্থিব আরামের জিন্দেগির অস্থিরতা তার জীবন থেকে চিরবিদায় নিবে। দ্বিতীয়ত : ঘোড়াগুলো নিরেট পাথুরে ও কঙ্করময় উপত্যকা অতিক্রম করায় পায়ের ক্ষুরাঘাতে আগুনের ফুলকি নির্গত হয়। পথের কাঠিন্যতা, দুর্গমতা ও নির্মমতা ঘোড়ার গতিবেগ শ্লথ করতে ও থামাতে পারেনি। তেমনি মুমিন ও মুজাহিদের পথ কখনো ফুল বিছানো ও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এ পথ বড়ই বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ। সকল কাঠিন্যতা, কষ্ট, ক্লেশ, নির্মমতা, হুমকি, জুলুম নির্যাতনের ভয় ও অস্থিরতা মাড়িয়ে মহান রবের সান্নিধ্য লাভে জীবন বাজি রেখে সম্মুখ পানে ছুটে চলতে হবে। একটি ঘোড়া যদি মালিকের প্রয়োজনে জীবন বাজি রাখতে পারে, তাহলে মানুষ কেন আসমান ও জমিনের মহান মালিকের জন্য জীবনের ঝুঁকি গ্রহণ করবে না? তৃতীয়ত : অতিভোরে সকল সৃষ্টি যখন অঘোর ঘুমে অচেতন, যুদ্ধের অশ্বরাজি তখন নির্ঘুম ও শত্রুশিবিরে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত। রাসূল সা. শত্রুর ওপর প্রভাতে অভিযান চালালে কোথাও আযান হচ্ছে কিনা খেয়াল করতেন। আযানের ধ্বনি শুনতে পেলে অভিযান চালানো বন্ধ রাখতেন, অন্যথায় আক্রমণ চালাতেন। বর্তমান দুনিয়ার দায়ীদের জন্য এটি একটি বড় Message। সকাল বেলার নির্মল সময়টুকুকে দায়ীদের যথার্থভাবে কাজে লাগাতে হবে। প্রভাতের বারাকাতকে গ্রহণ করতে হবে। জালিম ও খোদাদ্রোহীরা যখন ঘুমিয়ে থাকে মুজাহিদদের কাজ তীব্রতার সাথে চালিয়ে যেতে হবে। বাজামায়াত সালাতুল ফজরকে নিজেদের জন্য আবশ্যক করে নিতে হবে। এ সময়ে অজুহাত পেশ করার কোন অজুহাতও না থাকার কথা। অন্য সময়ের চেয়ে নীরবে, নির্মল পরিবেশে ও Full Concentration নিয়ে ফলপ্রসূভাবে অধিক কাজ আন্জাম দেয়া সম্ভব। চতুর্থত : প্রচ- যুদ্ধে ধাবমান ঘোড়ার কারণে চারিদিকে সৃষ্টি হয় ধূলি ও বালির তুফান। যুদ্ধের সময় চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিও যেন তুলনীয় বালির এ তুফানের সাথে। আজকের যুদ্ধে ব্যবহৃত কামানের গোলা ও মারণাস্ত্রের ধোঁয়াও এর সাথে তুলনীয়। অশ্বরাজির সৃষ্ট বালির ঝড়ের অন্যতম তাৎপর্য হচ্ছে উড্ডয়মান ধূলির তুফান যেমন ময়দানে বিজয়ের পদচিহ্ন রেখে আসে। তেমনি দায়ীদের ছুটে চলা জনপদেও তাদের কাজের প্রভাব যুগের পর যুগ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এখানে ধূলির চিহ্নের সাথে মুজাহিদদের তৎপরতার Positive outcome তুলনীয়। ঘোড়ার সৃষ্ট ধূলিবালির প্রচ- তুফান যেমন পুরো যুদ্ধ ময়দানকে আচ্ছন্ন কর তেমনি দায়ীদের তৎপরতাও সমগ্র দুনিয়াব্যাপী সকল পথ ও মতের উপর দ্বীন বিজয়ী হবে। তাদের দাওয়াত শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো ভূখ- বা জনগোষ্ঠীর জন্য হবে না, সমগ্র পৃথিবী হবে তাদের যুদ্ধক্ষেত্র তথা দাওয়াতের ময়দান, আর সমগ্র মানবতা হবে তাদের Target Manpower। পঞ্চমত : ঘোড়া জীবনবাজি রেখে শত্রুর মাঝখানে বা কেন্দ্রস্থলে আঘাত হেনে বিপর্যস্ত করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা এরকম জানবাজ ঘোড়া ও তার ভয়াল আক্রমণের শপথ করেছেন। এ রকম একটি শপথ ঝিমিয়ে পড়া, অলস, লড়াইবিমুখ ও ভোগবিলাসে মত্ত একটি জাতির জন্য মৃত সঞ্জীবনী ও ঘুরে দাঁড়াবার দ্রোহ। ইসলামের শত্রুদের টন টন ওজনের মারণাস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক বোমার বিপরীতে মুসলমানদের যেমন প্রচ- সামরিক শক্তি অর্জন করতে হবে, তেমনি তাদের প্রতিষ্ঠিত Online, Printing Media এর বিপরীতে আমাদেরকে এ জগতে বুদ্ধিভিত্তিক ও শাক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের IT Technology, Science ও শিক্ষা-দীক্ষার বিপরীতে মুসলিম অধ্যুষিত ও ধনী রাষ্ট্রগুলোকে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অমুসলিমদের গবেষণার বিপরীতে আমাদেরকে আবারো জ্ঞান-গবেষণার রাজ্যে ফিরে এসে প্রচুর পরিমাণ World Class Islamic Modern Scholar তৈরি করতে হবে। ইসলামবিদ্বেষীদের সকল চারণভূমিকে পরিকল্পিতভাবে দখলে নিতে হবে। মুসলমানদের সম্প্রসারণ মানে বিরোধীদের সঙ্কোচন। আর এভাবে দায়ীরা শত্রুবাহিনীর কেন্দ্রস্থলে ঢুকে পড়বে। (৬) إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُوْدٌ ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ’। (Truly Man is, to his Lord, ungrateful) الإِنْسَانَ দ্বারা ‘মানবজাতি’ বুঝানো হয়েছে। যা সমষ্টিবাচক এবং মর্মগত দিক দিয়ে বহুবচন। কিন্তু শব্দগতভাবে একবচন হওয়ায় لِرَبِّهِ (‘তার পালনকর্তার প্রতি’) বলে একবচনের সর্বনাম আনা হয়েছে। এটি উপরে বর্ণিত শপথগুলোর জওয়াব (جواب القسم) হিসাবে এসেছে। অর্থাৎ মনিবের প্রতি অনুগত সুদক্ষ যুদ্ধাশ্বের শপথ করে বলছি, নিশ্চয়ই মানুষ তার মালিকের প্রতি অকৃতজ্ঞ। অতএব অবাধ্য হওয়াটাই যেন মানুষের স্বভাব। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, إِنَّ الْإِنْسَانَ خُلِقَ هَلُوْعاً، إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوْعاً، وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوْعاً ‘মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ভীরুরূপে’। ‘যখন তাকে মন্দ স্পর্শ করে, তখন সে দিশেহারা হয়ে পড়ে।’ ‘আর যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে কৃপণ হয়’ (মা’আরিজ ৭০/১৯-২১)। প্রশ্ন হতে পারে যে, মানুষকে যখন দোষযুক্ত করেই সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন সে দোষ করলে তাকে দোষী বলা হবে কেন? জওয়াব এই যে, এখানে মানবস্বভাবে নিহিত মন্দ উপকরণটার কথাই কেবল বলা হয়েছে। কিন্তু ভালো উপকরণটার কথা বলা হয়নি, যা পরেই বর্ণিত হয়েছে। যেমন, إِلاَّ الْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَلَى صَلاَتِهِمْ دَائِمُوْنَ، وَالَّذِيْنَ فِيْ أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ، لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ، وَالَّذِيْنَ يُصَدِّقُوْنَ بِيَوْمِ الدِّيْنِ، وَالَّذِيْنَ هُمْ مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِم مُّشْفِقُوْنَ– ‘তবে মুসল্লিগণ (মুমিনগণ) ব্যতীত’। ‘যারা নিয়মিতভাবে সালাত আদায় করে’। ‘যাদের ধন-সম্পদে নির্ধারিত হক রয়েছে,’ ‘প্রার্থী ও বঞ্চিতদের জন্য’। ‘যারা বিচার দিবসকে সত্য বলে বিশ্বাস করে’। ‘যারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তির ভয়ে ভীত থাকে’ (মা’আরেজ ৭০/২২-২৭)। এভাবে ২৩ থেকে ৩৪ আয়াত পর্যন্ত মুমিনের ৯টি গুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরে মুমিনদের উত্তম প্রতিদান ও কাফেরদের মন্দ পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে। এতে বুঝানো হয়েছে যে, মানুষের স্বভাবে ভালো ও মন্দ দু’টি দিক রয়েছে। উভয় প্রবণতাকে মানুষের ইচ্ছাধীন করে দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ إِمَّا شَاكِراً وَّإِمَّا كَفُوْراً ‘আমরা তাকে সুপথ প্রদর্শন করেছি। এক্ষণে সে কৃতজ্ঞ হতে পারে কিংবা অকৃতজ্ঞ হতে পারে’ (সূরা দাহর ৭৬/৩)। অতএব মানুষের স্বভাবে জন্মগতভাবে অকৃতজ্ঞতার বীজ লুকানো থাকলেও তাকে অকৃতজ্ঞ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি বা এজন্য তাকে বাধ্য করা হয়নি। সে দোষী তখনই হবে, যখন সে স্বেচ্ছায় দোষ করবে। মূলত এর মধ্যেই রয়েছে মানুষকে দেয়া জ্ঞানের পরীক্ষা। আল্লাহর দেখানো পথে যার সঠিক ব্যবহারের ওপরেই তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ নির্ধারিত হবে। আর তার বিপরীত হলে উভয় জগতে রয়েছে গ্লানিকর পরিণতি নিয়ে একটি ঘোড়ার তার মনিবের প্রতি যে ভালোবাসা, আনুগত্য ও প্রভুভক্তি রয়েছে তার বর্ণনা আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধে ধাবমান ঘোড়া দিয়ে শপথ করে বলেছেন। যে ঘোড়া মনিবের জন্য তারই নির্দেশে আরাম আয়েশ উপেক্ষা করে গোলাগুলোর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুর কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানে। অপরপক্ষে মানুষ আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করে, তার হুকুম পালনে ওজর পেশ করে। এমনকি তাঁরই দেয়া নিয়ামত- চক্ষু, কর্ণ, জিহবা ও Brain দিয়ে তার বিরোধিতা করছে। ইনসানের এ অকৃতজ্ঞতা নিয়ে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে বলেছেন, ইতর প্রাণী ঘোড়া প্রভুর মায়ার কারণে দিচ্ছে ত্যাগ, কুরবানি; নিচ্ছে মরণের ঝুঁকি, আর মানুষ নিয়ামতের সমুদ্রে ডুবে থেকেও নাফরমানির পর নাফরমানি করছে। হযরত ইবনু আব্বাস রা. বলেন, আলোচ্য আয়াতে ‘ইনসান’ (الإنسان) বলতে ‘কাফের’ বুঝানো হয়েছে এবং كَنُوْدٌ অর্থ كَفور ‘অকৃতজ্ঞ’ (কুরতুবি)। কেননা প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি কখনোই আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয় না। দাহহাক (রহ.) বলেন, আয়াতটি মক্কার ধনশালী কাফের নেতা ওয়ালিদ বিন মুগিরাহ সম্পর্কে নাজিল হয়েছে’। তবে বক্তব্য সকল যুগের সকল অকৃতজ্ঞ মানুষের জন্য প্রযোজ্য। كَنَدَ يَكْنِدُ كَنُوْدًا অর্থ كفر النعمة وجحدها ‘নেয়ামতকে প্রত্যাখ্যান করা ও অস্বীকার করা’। كَنُوْدٌ শব্দটি পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। الأرضُ الْكَنُوْدُ অর্থ ঐ মাটি, যাতে কিছুই উৎপন্ন হয় না’ (কুরতুবি)। অনুরূপভাবে কাফের ও অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির নিকট থেকে ভালো (Good & Productive) কিছুই আশা করা যায় না। ইবনু আব্বাস রা. বলেন, কিন্দা ও হাযরামাউতের অধিবাসীদের পরিভাষায় كَنُوْدٌ অর্থ عاصى ‘পাপী’ (Sinner)। রাবিয়া ও মুযার গোত্রের পরিভাষায় كَفُوْرُ ‘অকৃতজ্ঞ’ (Ungrateful)। কেনানাহ গোত্রের পরিভাষায় الْبَخِيْلُ السَّيِّئُ الْمَلَكَةِ ‘কৃপণ ও কুস্বভাবের অধিকারী ব্যক্তি’। অতঃপর বলা হয়েছে যে, ‘কানুদ’ ঐ ব্যক্তিকে বলে هو الذى يكفر اليسير ولا يشكر الكثير ‘যে ব্যক্তি ছোট বিষয়কে অস্বীকার করে এবং বড় বিষয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না’। ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, الذى يرى النعمة ولا يرى المنعم ‘যে ব্যক্তি অনুগ্রহ দেখে, অথচ অনুগ্রহকারীকে দেখে না’। আবুবকর আল-ওয়াসেত্বি বলেন, الذى ينفق نعم الله فى معاصى الله ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতসমূহকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যয় করে’ (কুরতুবি)। হাসান বসরী বলেন, الذى يعد المصائب وينسى نعم ربه ‘যে ব্যক্তি কষ্টগুলোই কেবল গণনা করে, অথচ তার প্রভুর দেওয়া নেয়ামতসমূহকে ভুলে যায়’ (ইবনু কাছীর)। হযরত আবু উমামাহ রা. বলেন, ‘কুনুদ’ অর্থ যে একা একা আহার করে, দাস-দাসীকে প্রহার করে এবং অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। বর্ণিত সব বক্তব্যই একটি কথায় মূলীভূত হয়েছে, আর তা হলো الْجُحُوْدُ وَالْكُفْرَانُ ‘আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে অস্বীকার (Refusal) ও তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞতা’ (Ingratitude)। আর এটাই হল ‘কানুদ’ ব্যক্তির মূল বৈশিষ্ট্য, যা আল্লাহ শপথ করে বর্ণনা করেছেন। আমাদের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। (৭) وَإِنَّهُ عَلَى ذَلِكَ لَشَهِيْدٌ ‘এবং সে নিজেই এ বিষয়ে সাক্ষী’। (And to that (fact) he bears witness (By his deeds) অর্থাৎ মানুষ যে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ, তার কথা ও কর্মই তার জ্বলন্ত সাক্ষী। আর সে নিজেই এ বিষয়ে ভালোভাবে অবহিত। তবে অনেক বিদ্বান وَإِنَّهُ -এর সর্বনামকে আল্লাহর দিকে রুজু বলেছেন। যার অর্থ হবে ‘এবং আল্লাহ তার ব্যাপারে অবশ্যই অবগত’। দু’টি অর্থই প্রযোজ্য। অর্থাৎ বান্দা নিজেও যেমন তার নিজের অকৃতজ্ঞতা সম্পর্কে অবহিত, আল্লাহ তেমনি সম্যক অবগত। যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ أَنْ يَّعْمُرُوْا مَسَاجِدَ الله شَاهِدِيْنَ عَلَى أَنفُسِهِمْ بِالْكُفْرِ- ‘আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করার যোগ্যতা মুশরিকদের নেই, যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরির উপরে সাক্ষী...’ (সূরা তওবা ৯/১১)। অর্থাৎ মানুষ যে আল্লাহর হাজারো অনুগ্রহ লাভের পরেও তার প্রতি অকৃতজ্ঞ ও অবাধ্য, তার কথা ও কর্মই তার বড় সাক্ষী। আল্লাহ বলেন, يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُوْنَ ‘যেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে তাদের জবান, তাদের হাত ও তাদের পা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে’ (সূরা নূর ২৪/২৪)। এ ব্যাপারে বান্দা যেমন সাক্ষী, আল্লাহ তেমনি সাক্ষী। (ইবনে কাসীর)। কাতাদাহ ও সুফিয়ান সাওরি (রহ) বলেন, এ আয়াতের অর্থ আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সে বিষয়ে অবহিত। মুহাম্মদ ইবনে কাব (রহ) মানুষ নিজেই অকৃতজ্ঞতার সাক্ষী অর্থাৎ কথা ও কাজে সেটাই প্রকাশ পায়। (৮) وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيْدٌ ‘নিশ্চয়ই সে ধন-সম্পদের মায়ায় অন্ধ’। (And he is violent in his love of wealth) ইবনু কাসীর বলেন, এর দু’টি অর্থ হতে পারে। এক- সে ধনলিপ্সায় অন্ধ। দুই- ধনলিপ্সার কারণে সে প্রচ- কৃপণ’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)। الْخَيْر অর্থ المال ‘সম্পদ’। যেমন আল্লাহ বলেন, كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِنْ تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِيْنَ بِالْمَعْرُوْفِ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِيْنَ ‘যখন তোমাদের কারো মৃত্যু হাজির হয়, তখন সে যদি মাল-সম্পদ ছেড়ে যায়, তাহলে তার পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য বৈধভাবে অসিয়ত করা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হল (সূরা বাকারাহ ২/১৮০)। কাফের-মুশরিকরা ধন-সম্পদকেই خَيْرٌ বা ভালো এবং যুদ্ধ-বিগ্রহকে سُوْءٌ বা মন্দ বলে অভিহিত করত (কুরতুবি)। যেমন ওহুদ যুদ্ধে সাময়িক বিপর্যয়ের পর মুনাফিকরা যখন মুমিনদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলতে থাকে যে, لَوْ أَطَاعُوْنَا مَا قُتِلُوْا যদি তারা আমাদের সঙ্গে পিছনে ফিরে আসত, তাহলে তারা নিহত হতো না’ (সূরা আলে ইমরান ৩/১৬৮)। এমতাবস্থায় যুদ্ধ শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পর যখন জানা গেল যে, কাফের বাহিনী পুনরায় মদিনার উপর চড়াও হওয়ার জন্য আসছে, তখন যুদ্ধক্লান্ত আহত সাহাবিদের নিয়ে আল্লাহর রাসূল সা. পরদিন সকালেই কাফেরদের মুকাবিলায় বেরিয়ে পড়েন এবং মদিনা থেকে ৮ মাইল দূরে ‘হামরাউল আসাদ’ নামক স্থানে গিয়ে তিনদিন অবস্থান করেন। কাফের বাহিনীর নেতা আবু সুফিয়ান এ খবর জানতে পেরে ভয়ে মক্কায় পালিয়ে যায়। মুসলিম বাহিনী নিরাপদে মদিনায় ফিরে আসে। এ ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, فَانْقَلَبُوْا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوْءٌ ‘অতঃপর মুসলমানেরা ফিরে এলো আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ নিয়ে। কোনরূপ যুদ্ধ তাদের স্পর্শ করেনি’ (সূরা আলে ইমরান ৩/১৭৪)। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ কাফেরদের কথা অনুযায়ী মালকে ‘খায়ের’ বা ভালো বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও ‘মাল’ মন্দ হয় ও হারাম হয়। পক্ষান্তরে ‘জিহাদ’ যা কেবল আল্লাহর জন্য হয়, তা সর্বদা কল্যাণকর হয়। কাফির-মুনাফিক ও বস্তুবাদীদের মূল লক্ষ্য থাকে মাল উপার্জন। পক্ষান্তরে মুমিনদের লক্ষ্য থাকে মাল ব্যয় করে আখেরাত অর্জন। ব¯ুÍবাদীরা মালের প্রতি হয় প্রচ- আসক্ত ও দারুণ কৃপণ। পক্ষান্তরে মুমিনরা মালকে আল্লাহর রাহে ব্যয় করার প্রতি থাকে সর্বদা আগ্রহী ও উদার। আয়াতের শেষে বর্ণিত لَشَدِيْدٌ অর্থ لَقَوِيٌّ فِي حُبِّهِ لِلْمَالِ ‘মালের আসক্তিতে কঠোর’ অথবা لَبَخِيْلٌ ‘প্রচন্ড কৃপণ’ (Great Miser) (কুরতুবি)।

মানবজীবন ও সম্পদ মানব মাত্রই সম্পদের প্রয়োজন। তবে সে প্রয়োজনীয়তা যেন লোভে পরিণত না হয়, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে দেয়। কুরআনের ভাষায়-اَلۡهٰکُمُ التَّکَاثُرُحَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ অর্থাৎ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে, যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও (সূরা তাকাসুর : ১-২)। অন্য সূরায় আছে - وَیۡلٌ لِّکُلِّ هُمَزَۃٍ لُّمَزَۃِ ـ الَّذِیۡ جَمَعَ مَالًا وَّ عَدَّدَهٗ ـ یَحۡسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخۡلَدَهٗ ـ کَلَّا لَیُنۡۢبَذَنَّ فِی الۡحُطَمَۃِ ـ অর্থাৎ দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বারবার গণনা করে। সে ধারণা করে যে, তার সঞ্চিত অর্থ তাকে অমর করে রাখবে। কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (সূরা হুমাযাহ : ১-৪)। সূরা লাহাবে বর্ণিত আছে- ـ مَاۤ اَغۡنٰی عَنۡهُ مَالُهٗ وَ مَا کَسَبَ تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ অর্থাৎ ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও, তার ধন-সম্পদ ও উপার্জন কোনো কাজে আসেনি অর্থাৎ আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোন কাজ দেয়নি (সূরা লাহাব : ১-২)। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ অত্যধিক। কুরআনের ভাষায়- وَ اِنَّهٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ অর্থাৎ মানুষ অবশ্যই ধন সম্পদের আসক্তিতে প্রবল (সূরা আদিয়াত : ৮)। অন্য আয়াতে বর্ণিত আছে: وَ تَاۡکُلُوۡنَ التُّرَاثَ اَکۡلًا لَّمًّا ـ وَّ تُحِبُّوۡنَ الۡمَالَ حُبًّا جَمًّا অর্থাৎ এবং তোমরা উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে ভক্ষণ করে ফেল আর ধনসম্পদকে অতিশয় ভালোবাসো (সূরা ফজর : ১৯-২০)। হাদিসের ভাষায়- عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول لو كان لابن آدم واديان من مال لابتغى ثالثاً، ولا يملأ جوف ابن آدم إلا التراب، ويتوب الله على من تاب ـ অর্থাৎ বনি আদমের যদি দুই উপত্যকা পরিমাণ সম্পদ থাকে, সে তৃতীয় উপত্যকা বাসনা করবে আর বনি আদমের পেট কবরের মাটি ছাড়া পূর্ণ হবে না। আর আল্লাহ তাওবাকারীদের অনুশোচনা কবুল করেন (বুখারি- ৬৫১২)। (৯) أَفَلاَ يَعْلَمُ إِذَا بُعْثِرَ مَا فِيْ الْقُبُوْرِ ‘সে কি জানে না, যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে’। (Does he not know, when that which is in the graves is scattered abroad) অর্থ أفلا يعلم الإنسان ‘মানুষ কি জানে না? أَفَلاَ অর্থ ألاَ এখানে فاء ‘অতিরিক্ত’ আনা হয়েছে প্রশ্নকে জোরদার করার জন্য এবং বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য استفهام) تقريري)। এক্ষণে অর্থ হবে ‘তবে কি মানুষ জানে না? সে কি তার স্বাভাবিক জ্ঞান দিয়ে বুঝতে পারে না? সে যেভাবে ঘুম থেকে জেগে ওঠে, অনুরূপভাবে সে কি তার কবর থেকে জেগে উঠবে না? أَفَلاَ يَعْلَمُ অর্থ أَفَلاَ يَتَيَقَّنُ ‘সে কি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে না’? এখানে একবচন দ্বারা ‘আদম সন্তান’ (ابن آدم) অথবা ‘মানুষ’ (الإنسان) বুঝানো হয়েছে। بَعْثَرَ يُبَعْثِرُ بَعْثَرَةً অর্থ قَلَبَ ‘উলট-পালট করা’। جَعَلَ أَسْفَلَهُ أَعْلاَهُ ‘নিচের অংশ উপরে উঠানো’। এখানে بُعْثِرَ অর্থ نُشِرَ، قُلِبَ উত্থিত হওয়া (Rise)। যেমন আল্লাহ পুনরুত্থান সম্পর্কে উদাহরণ দিয়ে বলেন, وَاللهُ الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ إِلَى بَلَدٍ مَيِّتٍ فَأَحْيَيْنَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا كَذَلِكَ النُّشُوْرُ ‘আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করে তার দ্বারা মেঘমালা সঞ্চালিত করেন। অতঃপর তার মাধ্যমে আমরা মৃত জমিনকে জীবিত করি ওর মৃত্যুর পর। (আর) পুনরুত্থান এভাবেই হবে’ (সূরা ফাত্বির ৩৫/৯)। সেটা কিভাবে হবে? সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন, وَنُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَإِذَا هُمْ مِنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنْسِلُوْنَ ‘যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে উঠে তাদের প্রতিপালকের দিকে ছুটে আসবে’ (সূরা ইয়াসিন ৩৬/৫১)। পূর্বের আয়াতগুলোতে মানুষের অকৃতজ্ঞতা ও প্রচ- ধনলিপ্সার কথা বর্ণনার পর এখানে মানুষকে দুনিয়া ত্যাগ ও আখেরাতে জবাবদিহিতার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে আল্লাহ বলছেন, বনু আদম কি জানে না যে, তাকে কবর থেকে পুনরুত্থিত হতে হবে? এর মাধ্যমে কিয়ামত যে অবশ্যম্ভাবী, সে কথা বুঝানো হয়েছে। (১০) وَحُصِّلَ مَا فِي الصُّدُوْرِ ‘এবং বুকের মধ্যে যা লুকানো ছিল সব প্রকাশিত হবে’। (And that which is (Locked up) in (human) breasts is made manifest) حُصِّلَ অর্থ ইবনু আব্বাস রা. বলেন, اُبْرِزَ ‘প্রকাশিত হবে’ (অঢ়ঢ়বধৎ) (কুরতুবি)। অন্তরে লুক্কায়িত থাকে নিয়্যত, অনুভূতি, ইচ্ছা, ভালোবাসা, রিয়া, হিংসা, স্নেহ, শত্রুতা ও সততাসহ হাজারো অদৃশ্য বিষয় (Abstract matter)। সেগুলোর মধ্যে অনেক বিষয় আছে ইবাদাত আবার অনেক বিষয় পাপ ও গুনাহ। ইবনু আব্বাস রা. ও অন্যান্য মুফাস্সিরিনে কেরাম বলেন, তাদের অন্তরে যেসব বিষয় লুকানো ছিল, সেদিন সব প্রকাশিত হবে’ (ইবনে কাসির)। মানুষের বাহ্যিক দিকটাই দুনিয়াতে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এমনকি মুনাফিকও খাঁটি মুসলিমের মতো আচরণ করে। কিন্তু আখেরাতে মানুষের মনের খবর সব প্রকাশ পেয়ে যাবে। আর তার উপরেই তার কর্মফল নির্ধারিত হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَ تُبْلَى السَّرَائِرُ، فَمَا لَهُ مِنْ قُوَّةٍ وَلاَ نَاصِرٍ ‘যেদিন গোপন বিষয় সমূহ পরীক্ষিত হবে’। ‘সেদিন তার কোন শক্তি থাকবে না এবং সাহায্যকারীও থাকবে না’ (তারিক্ব ৮৬/৯-১০)। যেদিন শুধু প্রকাশ্য আমল নয়, মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা চিন্তা, চেতনা, ধারণা ও অনুমানসহ সকল গোপনীয় বিষয়ও হিসাবের দ-ে বাদ যাবে না। ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে কবরে যা ছিল সব উত্থিত হবে এবং ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে বুকের মধ্যে যা লুকানো ছিল, সব প্রকাশিত হবে, দু’টি আয়াতের মধ্যে সামঞ্জস্য খুবই স্পষ্ট। (১১) إِنَّ رَبَّهُمْ بِهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّخَبِيْرٌ ‘নিশ্চয়ই তাদের প্রতিপালক সেদিন তাদের কি হবে, সে বিষয়ে সম্যক অবগত’। (That their Lord had been well-acquainted with them (Even to) that Day) ইতঃপূর্বে ৯ নম্বর আয়াতে أَفَلاَ يَعْلَمُ ‘(সে কি জানে না?) একবচন ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে رَبَّهُمْ (তাদের প্রতিপালক) বলে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে ৬ নম্বর আয়াতে বর্ণিত إِنَّ الْإِنْسَانَ (‘মানুষ’)-এর প্রতি লক্ষ্য রেখে। কেননা মানুষ’ বলে মানবজাতি বুঝানো হয়েছে, যা সমষ্টির অর্থ দেয়। يَوْمَئِذٍ অর্থ يَوْمُ الْحِسَابِ وَالْجَزَاءِ ‘হিসাব ও প্রতিদান দিবস’।

يَوْمَئِذٍ এর عامل (Subject) হল لَخَبِيْرٌ অর্থাৎ اِنَّهُ خَبِيْرٌ يَوْمَئِذٍ ‘তিনি ঐ দিন সম্পর্কে সম্যক অবগত’। বস্তুত يَوْمَئِذٍ، حِيْنَئِذٍ، بَعْدَإِذٍ প্রভৃতি কালবোধক যৌগিক শব্দগুলি সর্বদা উহ্য عامل -এর معمول হিসাবে আসে এবং সর্বদা জবরযুক্ত (مبنى على الفتح) হয়ে থাকে। خَبِيْرٌ অর্থ عالم بأسرارهم وضمائرهم وأعمالهم ‘তাদের সকল গোপন ও অন্তরের বিষয় সমূহ এবং তাদের কর্মসমূহ সম্পর্কে অবগত’। ইমাম রাযী (রহ) বলেন, হৃদয়ের কর্মসমূহকে খাস করার কারণ হলো এই যে, দৈহিক কর্মসমূহ (أعمال الجوارح) হৃদয়ের কর্মসমূহের (أعمال القلوب) অনুগামী। সেজন্য আল্লাহ অন্তরকে সকল মন্দের উৎস (آثِمٌ قَلْبُهُ -সূরা বাকারাহ ২/২৮৩) এবং সকল ভালোর উৎস (وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ - সূরা আনফাল ৮/২; সূরা হজ্জ ২২/৩৫) বলে গণ্য করেছেন (কাসেমি)। বস্তুত لَخَبِيْرٌ বলার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ বান্দার গোপন ও প্রকাশ্য সকল বিষয় জানেন। সেই সাথে প্রচ্ছন্ন হুমকি (Threat) রয়েছে এ ব্যাপারে যে, তিনি তার যথার্থ প্রতিফল দান করবেন। কারও প্রতি সামান্যতম জুলুম করা হবে না। আল্লাহ সকল দিনেরই খবর রাখেন। কিন্তু এখানে يَوْمَئِذٍ বলে ঐদিনকে খাস করার কারণ হলো এই যে, সেদিন সকলকে বিচার শেষে বদলা দেওয়া হবে। ঐ দিনের জ্ঞান রাখার বিষয়টির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য এখানে ظرف হওয়া সত্ত্বেও يَوْمَئِذٍ -কে আগে আনা হয়েছে। এ ছাড়া বাক্যালংকারের বিষয়টি তো আছেই। শায়েখ তানতাভী জাওহারি বলেন, প্রত্যেক শপথ ও শপথকৃত বস্তুর মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক থাকে। যেমন আল্লাহ সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, দিবস, রাত্রি প্রভৃতির শপথ করেছেন নিজের একত্ববাদ ও পুনরুত্থান দিবসের প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য। এক্ষণে অত্র সূরায় যুদ্ধাশ্বের শপথ করার সাথে ঐ দুইয়ের কি সম্পর্ক? জেনে রাখা আবশ্যক যে, এখানে ‘জিহাদ’ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। আর সাধারণত জিহাদে বিজয়ের সাথে সাথে আসে প্রচুর গনিমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ। যা পেয়ে বিজয়ী দল উল্লসিত হয় ও অনেক সময় সীমালংঘন করে। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, إِنِّى مِمَّا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِى مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَزِينَتِهَا ‘আমি আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় করি তোমাদের উপরে দুনিয়াবি জৌলুস বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে’। (বুখারি হা/১৪৬৫, মুসলিম হা/১০৫২)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ ‘নিশ্চয় দুনিয়াটা হলো লোভনীয় এবং সুজলা-সুফলা বস্তু। আল্লাহ তোমাদেরকে এখানে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন। অতঃপর তিনি দেখছেন তোমরা কেমন কাজ কর’। (মুসলিম হা/২৭৪২, মিশকাত হা/৩০৮৬) আল্লাহর রহমতে মুসলমানেরা যুদ্ধ করেছে, বিজয় লাভ করেছে, দুনিয়ার উপরে শাসন চালিয়েছে। ধনৈশ্বর্যে ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছে’ (তাফসির তানতাভী)। রাসূল সা.-এর মাদানি জীবনে যার সূচনা হয়েছিল এবং খলিফাদের যুগে তারা বিশ্বনেতৃত্ব লাভে ধন্য হয়েছিল। সূরাটি মক্কায় নাজিল হয়। যখন মুসলমানরা ছিল নির্যাতিত ও বিতাড়িত। যুদ্ধাশ্ব বা যুদ্ধের অনুমতি তাদের ছিল না। অথচ সেই সময় আল্লাহ এই সূরা নাজিল করে মুসলমানদেরকে সুন্দর ভবিষ্যতের আশ্বাসবাণী শুনিয়েছেন। সূরার শুরুতে যুদ্ধাশ্বের শপথ করে আল্লাহ বলতে চেয়েছেন যে, সেদিনের যুদ্ধাশ্বের ন্যায় আগামী দিনে যেন মুসলমান রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা লাভে প্রয়াসী হয়। অতঃপর মুসলমান যদি বস্তুগত শক্তি লাভ করে, তাহলে তারা যেন নিরেট বস্তুবাদীদের মত অকৃতজ্ঞ ও ধনলিপ্সু জাতিতে পরিণত না হয়। বরং সর্বাবস্থায় আখেরাতে মুক্তি লাভ ও সেখানে জবাবদিহিতার ব্যাপারে সতর্ক থাকে এবং দুনিয়াকে আখেরাত লাভের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। যুদ্ধাশ্বের শপথের মাধ্যমে আল্লাহ্ মুসলমানদেরকে সামরিক ও বস্তুগত ক্ষমতা অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيْفِ ‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট উত্তম ও অধিকতর প্রিয় দুর্বল মুমিনের চাইতে’। (মুসলিম হা/২৬৬৪, মিশকাত হা/৫২৯৮)

সারকথা সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করার পরও মানুষকে অবশেষে কবরে আশ্রয় নিতে হবে। অতঃপর পরকালে সবকিছুর জবাবদিহি করতে হবে। এ বিষয়ে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে অত্র সূরাতে।

শিক্ষণীয় বিষয় ১. সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত ও পেরেশান থাকা। ২. সকল কাঠিন্য, দুর্গমতা ও ব্যারিকেড মাড়িয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিরন্তর ছুটে চলা। ৩. সকাল বেলাকে সকল গঠনমূলক কাজের উত্তম সময় হিসেবে কাজে লাগানো। ৪. ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে সামরিক ও অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা অর্জন করা। ৫. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালার প্রত্যেকটি নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। নাফরমানি ও অকৃতজ্ঞতার চিহ্ন জীবন থেকে মুছে ফেলা। ৬. আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার মানসিকতা নিয়ে জীবনের প্রতিটি তৎপরতায় সত্যের সাক্ষ্য দেয়া। মহান আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত সূরার আলোকে জীবন গঠন করার তাওফিক দিন। (আমিন)

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ; অধ্যক্ষ- ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল, চট্টগ্রাম

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির