post

ঘটনাবহুল ২০১১

০৬ জানুয়ারি ২০১২
স্বাগত ২০১২, বিদায় ২০১১। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়লো আরেকটি বছর ‘২০১১’। সময়ের কালস্রোতে হারিয়ে যায় সবকিছু, কিন্তু ২০১১ সালের রয়েছে অন্যরকম বিশিষ্টতা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বছরটি ছিল একটি উত্থান-পতনের বছর। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন নাটক, শেয়ারবাজারে কৃত্রিম দরপতনে অর্থনীতির টানাপড়েন এবং বিরোধী দলের ওপর অতিরিক্ত খবরদারির মাধ্যমে আপামর জনসাধারণের চাওয়া-পাওয়াকে উপেক্ষা করা হয়েছে, জাতীয় রাজনীতিতে একজন নির্লজ্জ ‘লৌহ মানবী’র বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তেমনি বিশ্বরাজনীতিতে ঘটেছে নানা ঘটনা। পুরো বছরটাই ছিল ক্ষমতার উত্থান-পতনের বছর। আরব বিশ্বের রাজনীতি ছিল উত্তপ্ত। অনেকটা ইসলামের পুনর্জাগরণের প্রসববেদনা। “অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট” আন্দোলন পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ৯৯ শতাংশ বিশ্ববাসীর অবস্থানের কথাই জানান দিলো। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি কারণে এ বছরটি অনেক বেশি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। মূলত গত বছরের ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোরই সন্নিবেশ করা হয়েছে এখানে। সম্পাদনায়- জুবায়ের হুসাইন। গ্রন্থনায়- মো: ফখরুল ইসলাম এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন জাতীয় ঘটনাপ্রবাহ নতুন আশা নিয়ে দেশের মানুষ ২০১১ সালকে বরণ করলেও বছরটিজুড়ে পেয়েছে হতাশার খবর। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মানুষ ২০১১ সালের সূর্যোদয়ে যে হিসাবের খাতা খুলেছিল, বছরের শেষ সূর্যাস্তের সময় এসে তাদের সেই হিসাব মেলেনি। পুরনো বছরটি বাংলাদেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে পারেনি। সারাটি বছর কেটেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। মানুষকে শুনতে হয়েছে কোনো না কোনো দুঃসংবাদ। হত্যা, সংঘর্ষ, দুর্ঘটনা, বিরোধী মতের প্রতি দমন-পীড়নসহ নানা দুঃসংবাদের মধ্য দিয়ে কেটেছে সারা বছর। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নিষ্পেষিত হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সংবাদ নিয়ে শেষ করতে হয়েছে বছরটিকে। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা বাড়ানো হয়। এর আগে ১২ নভেম্বরও গভীর রাতে তেলের দাম আরেকদফা বাড়ানো হয়েছিল। বছরের আলোচিত ঘটনার মধ্যে ছিল সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী সংযোজনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিল, শেয়ারবাজার লুটপাট, গুপ্তহত্যা, পদ্মাসেতু নির্মাণে দুর্নীতি, ফালানীসহ বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা, ঢাকা দ্বিখণ্ডিত বা ডিসিসি ভাগ, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণ, বাংলাদেশ থেকে মনমোহনের প্রাপ্তি, আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে গণবিস্ফোরণ, পুলিশ হেফাজতে অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদের মৃত্যু, সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে ২৮৮ দিন জেলে নির্যাতন শেষে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, মিরসরাই ট্র্যাজেডি, জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলা, খুনিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ইত্যাদি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানো, পদ্মাসেতু নির্মাণ, রাজধানীর যানজট নিরসন, দুর্নীতি রোধ, বিচাবহির্ভুত হত্যা বন্ধ, বিচাবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত, প্রশাসনকে দলীয়করণ মুক্ত, পুঁজিবাজারের বিকাশ, প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ শত প্রতিক্রুতির টুঁটি চেপে ধরে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন এবং বিদেশীদের এজেন্ডা পূরণে মহাব্যস্ত বর্তমান সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী : বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে গঠিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল। ২০১১ সালের ১০ মে উচ্চ আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়। পরে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এ ব্যবস্থার অপমৃত্যু ঘটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় প্রদানকালে উচ্চ আদালত আগামী দুই মেয়াদের জন্য এ ব্যবস্থা বহাল রাখার সুপারিশ করলেও ক্ষমতাসীন সরকার তা আমলে নেয়নি। দেশের জনমত, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এমনকি সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটি দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে থাকলেও ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর অজ্ঞাত কারণে এটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিষয়ক বিল পাসের মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে। বিতর্কিত এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে একদা এই ব্যবস্থার পক্ষে সোচ্চারভাবে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আওয়ামী লীগই নিজ হাতে হত্যা করল। এদিকে বিরোধী দলের দাবি উপেক্ষা করে সরকারি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করলেও এ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া আগামীতে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এ ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলের সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রধান ইস্যুই হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের চলমান সংলাপে গিয়ে সিপিবি ও এলডিপি এ ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে এসেছে। পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি! : পদ্মাসেতু প্রকল্প নিয়ে খোদ যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল ২০১১ সালের টক অব দ্য কান্ট্র্রি। পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তোলে সেতু প্রকল্পের প্রধান দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সাবেক যোগাযোগ ও বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সেতুর কাজে প্রভাব বিস্তার করেছেন এমন অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে তাদের ঋণসহায়তা স্থগিত করে দেয়। বিশ্বব্যাংকের পথ ধরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাইকাও পদ্মাসেতু নির্মাণে তাদের প্রতিশ্রুত ঋণসহায়তা বন্ধ রাখে। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেতুর দুর্নীতির দায়ে যোগাযোগমন্ত্রীকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদও করে। যোগাযোগমন্ত্রী তো বটেই, সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংককে চিঠিও দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক কানাডিয়ান পুলিশের কাছ থেকে তথ্যপ্রমাণ নিতে সরকারকে পরামর্শ দেয়। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থগিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মাসেতু নির্মাণ একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পদ্মাসেতুর দুর্নীতির অভিযোগের সূত্র ধরে ইতোমধ্যে যোগাযোগমন্ত্রীর দফতরও পরিবর্তন হয়েছে। এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে যোগাযোগব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে সর্বত্র ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। রোজার ঈদের আগমুহূর্তে মহাসড়কে দেখা দেয় মহাবিপর্যয়। ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ওই সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়ে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। সংসদের দশম অধিবেশনের প্রথম দিনে এ নিয়ে মহাজোটের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন মন্ত্রী। সংসদে তার পদত্যাগেরও আওয়াজ ওঠে। কাঁটাতারে ফালানীর লাশ : এ বছরের আলোচিত ঘটনার একটি ছিল ফালানীকে বিএসএফের গুলি করে হত্যা। গত ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপর সীমান্তের ৯৪৭ নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের কাছে ফালানী খাতুন (১৫) নামে এক কিশোরীকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকার পর বিএসএফ নিয়ে যায় এবং ৩০ ঘণ্টা পর বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলন্ত এই লাশের ছবি ভারত ও বাংলাদেশের পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিএসএফের আগ্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বাংলাদেশের সংসদেও এর কঠোর সমালোচনা করেন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা। ঘটনার পর ১৮ জানুয়ারি সরকার এই হত্যার জন্য ভারতের কাছে লিখিত প্রতিবাদ পাঠায়, যার প্রেক্ষিতে ১২ মার্চ নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে পাঁচ দিনব্যাপী বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফের মহাপরিচালক রমন শ্রীবাস্তব বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্পর্শকাতর কিছু স্থানে প্রাণঘাতী নয়- এমন আগ্নেয়াস্ত্র দেয়া হবে। এটি পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত। এতে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেলে দু’দেশের মধ্যে চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্তে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, বিএসএফ কোনো বাংলাদেশীকে হত্যা করতে চায় না। এই নির্মম ও অমানবিক ঘটনার পরও বিএসএফ সদস্যরা নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধ করেনি। ফালানীসহ এ বছর ৩৭ নিরীহ বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করে। চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন : এ বছরের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী দলের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন স্বয়ং মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই একটা মডেল হয়ে থাকবে। একদিকে দুর্নীতি, হত্যা, লুট- অন্যদিকে মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের বুলি ছোড়া হয়েছে। হত্যা, অপহরণ, ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পরিচয়ে অপহরণ, মামলা দিয়ে হয়রানি, শ্যোন অ্যারেস্ট, রিমান্ড নির্যাতনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলেছে, যা এখনও অব্যাহত আছে। মানবাধিকার সংগঠন ‘নাগরিক ফোরাম’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে। একটি তুলনামূলক চিত্র : ২০০৯ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৫১ জন নিহত হয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি দেশকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতিতে সারাদেশে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুধু ২০০৯ সালেই সারাদেশে ৪১১৩ জন নিহত হন। (নাগরিক ফোরাম, ২০১০) এই সময় রাজনৈতিক সংঘাতে আহত হয় ১৫,৫৫৯ জন। (অধিকার, ২০১০)। হত্যা, অপহরণ, ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুপ্তহত্যা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে অপহরণের পর নিখোঁজ, গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার, মামলা দিয়ে হয়রানি, শ্যোন অ্যারেস্ট, রিমান্ড নির্যাতন, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, সংখ্যালঘুদের বাড়ি দখল প্রভৃতি নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম নয় মাসে ৭০ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয় (নয়া দিগন্ত, ২৮ মে, ২০১০) এ বছর ১৫৪ জনকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। তন্মধ্যে জঅই ৪১ জনকে, পুলিশ ৭৫ জনকে এবং জঅই-পুলিশ যৌথভাবে ২৫ জনকে এবং সেনা অভিযানে ৩ জনকে হত্যা করা হয়। (আমার দেশ, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১০) ২০১০ সালের পুরো বছরজুড়ে চলে এ হত্যাযজ্ঞ। জানুয়ারিতে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় ৫ জনকে। ফেব্রুয়ারিতে ১২ জন। তন্মধ্যে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যান ৬ জন। মার্চে ক্রসফায়ারে নিহত হন ৭ জন, এপ্রিলে ৯ জন। এমনিভাবে সারা বছর সর্বমোট ১২৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। গড়ে প্রতি ৩ দিনে ১ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ক্রসফায়ারে ১০১ জন, নির্যাতনে ২২, গুলিতে ২ এবং পিটিয়ে মারা হয় ২ জনকে। ২০১০ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নিহত হন ১১০ জন। মিরসরাই ট্র্যাজেডি : চট্টগ্রামের মিরসরাই ট্র্যাজেডি ছিল এ বছরের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা। ওইদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে স্কুলছাত্রই ছিল ৪১ জন। নিহত সবাই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট দেখে বাসায় ফিরছিল। স্কুল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে শিক্ষার্থীদের বহনকারী ট্রাকটি একটি সেতু পার হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ডোবায় পড়ে যায়। তিন টন ওজনবাহী ট্রাকটিতে (চট্ট মেট্রো-ড ১১-০৩৩৭) শিশু-কিশোর মিলিয়ে ৬০-৬৫ জন ছিল। চালক নয়, সহকারী (হেলপার) ট্রাকটি চালাচ্ছিল। ট্রাকটি পানিতে পড়ার আগেই চালক লাফিয়ে নেমে পালিয়ে যায়। একসঙ্গে এত ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় আবু তোরাব গ্রামে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিহতের বেশির ভাগই ছিল আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ : বাংলাদেশের প্রথম নোবেলবিজয়ী বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণ ছিল সরকারের সমালোচিত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১১ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশবলে ড. ইউনূসকে তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিলেও রায় সরকারের পক্ষেই যায়। বাধ্য হয়ে তাকে গ্রামীণ ব্যাংক ছেড়ে যেতে হয়। ড. ইউনূসকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টিকে অনেকেই রাজনৈতিক বলেও মন্তব্য করেন। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এমন কারণে ড. ইউনূসকে চলে যেতে হয়েছে বলেও সে সময় কথা উঠেছিল। এ দিকে ড. ইউনূসকে পদ থেকে না সরানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ থেকে সরকারের ওপর চাপ ছিল বলেও শোনা যায়। তবে এসব চাপের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছিল। যদিও অপসারণ করার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের ওপর পুলিশি হামলা : গত ৬ জুলাই বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশ নজিরবিহীন বর্বরোচিত হামলা চালায়। ঘটনার দিন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ও বিপ্লব কুমারের নেতৃত্বে পুলিশ বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর নির্মম বর্বরতা চালায়। পুলিশ সদস্যরা একযোগে তাকে রাজপথে ফেলে লাঠিপেটা, বুট জুতা দিয়ে বুক, মুখ ও মাথায় লাথি-ঘুষি মারে। এতে তার মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলেও পুলিশের উন্মত্ততা কমেনি। পুলিশের এসি বিপ্লব কুমার সরকার অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে এডিসি হারুন অর রশিদ পেছন থেকে জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলা চালান। তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেন। এ সময় পুলিশ ফারুকের জামা খুলেও পেটায়। লাঠি দিয়ে তার নাক ও মাথা ফাটিয়ে দেয়। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বুট দিয়ে উপর্যুপরি লাথি মেরেছে। মারের আঘাতে তিনি একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সংসদ অধিবেশন চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের ওপর এ ধরনের হামলা নজিরবিহীন। বিষয়টি নিয়ে সংসদে উল্টো বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের ওপর দোষ চাপানো হয়। দুদকের দুর্নীতির রেকর্ড : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ২০০৯ সালে পদে যোগ দেয়ার সময় বলেছিলেন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন বিচারব্যবস্থার সংস্কার এবং দুদক আইনের সংশোধনী। তবে তিক্ত সত্য হচ্ছে, সেটা হয়নি। বরং হয়েছে সরকারি দলের দুর্নীতিকে আশ্রয় দেয়া। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরের তুলনামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠানটিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। গত ৫ বছরের দুদকের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিদায়ী বছরেই সবচেয়ে বেশি অভিযুক্তকে অভিযোগ থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে ফাইনাল রিপোর্টের মাধ্যমে ৮০টি অভিযোগ থেকে অভিযুক্তকে রেহাই দেয়া হয়। একইভারে ২০০৮ সালে ১৯৭, ২০০৯ সালে ২৬২, ২০১০ সালে ২৮৬ এবং বিদায়ী বছরের মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ২৮৬টি অভিযোগ থেকে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে চার্জশিটও দেয়া হয়েছে তুলনামূলক বেশি। ২০০৭ সালে ১৭০টি, ২০০৮ সালে ৩৯৭, ২০০৯ সালে ৪৭৫, ২০১০ সালে ৫৩৬ এবং ২০১১ সালে ৫৪১টি চার্জশিট দেয়া হয়। দুদক সবচেয়ে বেশি মামলা করেছিল ২০০৮ সালে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ সালে ৭০১টি, ২০০৮ সালে ৯৭৯, ২০০৯ সালে ২৩৪, ২০১০ সালে ২৭৪ এবং ২০১১ সালে ৩৪৭টি মামলা করেছে। খুনিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা : লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও ক্ষমতাসীন দলের বিতর্কিত নেতা আবু তাহেরের ছেলে এএইচএম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা করা ছিল এ বছরের সমালোচিত ঘটনার একটি। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে গত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে তাহেরের তিন ছেলে বিপ্লব, লাবু ও টিপু মিলে জবাই করে। এরপর লাশ টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়। এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ তখন দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার ২০০৩ সালে দেয়া রায়ে বিপ্লবসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত। বিপ্লব দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এরপর তার বাবা আবু তাহের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি বিপ্লবের সাজা মওকুফ করেন এবং ১৪ জুলাই তা কার্যকর হয়। এই খবর দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। নিহত নুরুল ইসলামের বিধবা স্ত্রী রাশেদা ইসলাম এক প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুনিকে মাফ করে দিয়ে রাষ্ট্রপতি তার স্ত্রী আইভী রহমানের (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত) খুনের বিচার চাওয়ার অধিকার হারিয়েছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি) মনে করে, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের রাজনৈতিক বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করার ঘটনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। করিডোরের বাইপাসে তিতাসসহ ১৮ নদী-খাল বন্ধ : ট্রানজিট ট্রানশিপমেন্টের মোড়কে আশুগঞ্জ-আখাউড়া করিডোর রুট স্থায়ী করতে অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে ভারত। গত দুই মাসে তারা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে দুই দফা চিঠি দিয়েছে। চিঠির জবাবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় এখনই স্থায়ীভাবে ট্রানশিপমেন্ট কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ-ভারত স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ট্রানজিট সংক্রান্ত কোর কমিটি বৈঠক করে স্থায়ী ট্রানজিট দেয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের ৩৬টি সুপারিশই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তিতাসসহ ১৮টি নদী-খাল বন্ধ রেখেই কি ভারত করিডোর স্থায়ী করতে চাইছে? সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তিতাস এখন খুন হয়ে যাওয়া একটি নদী। রেলব্রিজ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া সড়কের তিতাস সড়ক ব্রিজের মধ্য দিয়ে সিমেন্টের বস্তা, বাঁশের খুঁটি, ইট-বালু ও মাটি ফেলে নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দেয়া হয়েছে। মাঝে মধ্যে শক্ত করে পুঁতে দেয়া হয়েছে পাকা খুঁটি। ভারতকে ট্রানজিট করিডোর দিতে গিয়ে বাংলাদেশের নতজানু শাসকগোষ্ঠী তিতাসসহ ১৮টি খালকে খুন করেছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সরকার নদী-খালের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে আরেক দেশের মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে বলে আমাদের জানা নাই। অথচ সে কাজটিই করেছে ভারতের প্রতি চরম নতজানু বাংলাদেশের বর্তমান শাসকশ্রেণী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল : স্বাধীনতার ৪০ বছরের পূর্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাজে খুব স্বতঃস্ফূর্ততা দেখার মতো। যুদ্ধাপরাধের বিচারকার্যক্রম অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে বিচারকার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন এলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। দেশী-বিদেশী আইনজীবীগণ এ বিচারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়; বিরোধী দল দলন। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সর্বজন স্বীকৃতি পেয়েছে। তারই মাঝে প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিপ্লবী সাক্ষাৎকার এবং একাত্তরের দালাল নির্মূল কমিটির পুরোধা অধ্যাপক কবির চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাকের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুতে সরকারি ঘরের ভিত প্রায় কেঁপে উঠেছে। আড়িয়াল বিল রক্ষায় রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ : মুনীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর স্থাপনকে কেন্দ্র করে জনতার গণবিস্ফোরণ ছিল এ বছরের অন্যতম ঘটনা। বিক্ষুব্ধ জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মুখে সরকার সেখানে বিমানবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এ বছরের জানুয়ারির দিকে সরকার আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী তারা আড়িয়াল বিল পরিদর্শনসহ ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম হাতে নেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফেটে পড়েন মুনীগঞ্জবাসী। এই প্রতিবাদের জবাবে সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান ওই এলাকা ঘুরে এসে ঘোষণা দেন, রক্ত দিয়ে হলেও বিমানবন্দর স্থাপন করবেন। তিনি মুনীগঞ্জবাসীকে কটাক্ষ করে এও বলেন, আড়িয়াল বিলে সামান্য কিছু মাছ ও পানি ছাড়া কিছুই হয় না। অথচ এই বিল হচ্ছে মুনীগঞ্জের প্রধান ফসলি জমি। মন্ত্রীর এই বক্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ হন এলাকাবাসী। এলাকার নারী-পুরুষ আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের প্রতিবাদ সহিংস রূপ নেয় ৩০ জানুয়ারি। ওইদিন তারা লাঠিসোটা নিয়ে ঢাকা-মাওয়া সড়কে নেমে পড়ে। শুরু করে নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর। সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। সরকারও তাদের পেছনে লেলিয়ে দেয় পুলিশ। শুরু হয় পুলিশ-জনতা যুদ্ধ। জনতার প্রবল প্রতিবাদে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় হাসাড়া পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পুড়িয়ে দেয় পুলিশের একাধিক পিকআপ ভ্যান। ঘটনায় পুলিশের একজন এসআই নিহত হয়। পুলিশ, সাংবাদিক, গ্রামবাসী ও সাধারণ জনগণ মিলিয়ে আহত হয় শত শত। ঘটনায় বিরোধী দল জড়িত অভিযোগ করে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে এলাকাছাড়া হয় মুনীগঞ্জবাসী। পরে অবশ্য গণবিক্ষোভের মুখে সরকার আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, প্রায় বছরখানেক আগে এ সিদ্ধান্ত বাতিল হলেও ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ অনেককে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। ঢাকাকে দুই ভাগ : এ বছর সরকারের আরেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল ঢাকাকে দুই ভাগ করা। সংসদের বাইরে প্রবল বিরোধিতার মুখে গত ২৯ নভেম্বর মাত্র ৪ মিনিটে বিল পাস করে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগ করে ক্ষমতাসীন সরকার। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ এ বিলটি পাসের সময় সংসদের ট্রেজারি বেঞ্চে উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনাও সংসদে ছিলেন না। অধিবেশন শুরুর মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যে তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস করার কারণে ওই বিলে সংশোধনী প্রস্তাব আনা ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, মাইনুদ্দিন আহমেদ বাদল, শাহ জিকরুল আহমেদ ও একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম কোনো আপত্তি জানানোর সুযোগ পাননি। পরদিন সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তারা এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিষয়টির জন্য স্পিকার আবদুল হামিদকে দুঃখ প্রকাশও করতে হয়। এদিকে বিল পাসের পরদিনই রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর গেজেট প্রকাশ করে সরিয়ে দেয়া হয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের। পরিবর্তে দুটি সিটি করপোরেশনের জন্য বসানো হয় দু’জন অনির্বাচিত প্রশাসককে। এর আগে অনেকটা গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে গত ১৭ অক্টোবর ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন-২০১১’ বিল মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এর দুই সপ্তাহ পর ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় দেয়া হয় চূড়ান্ত অনুমোদন। পরে গত ২৩ নভেম্বর সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করার পরবর্তী সপ্তাহেই তা পাস হয়। বিল পাসের পরদিন ৩০ নভেম্বর একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিসিকে ভাগ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারের টাকা থাকলে দুই ভাগের পরিবর্তে ঢাকাকে চার ভাগ করতেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের দু’জন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয় ৩ ডিসেম্বর ২০১১। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: খলিলুর রহমানকে এবং ঢাকা উত্তরে জনশক্তি রফতানি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরীকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। সরকারের তরফ থেকে জনগণের সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও কার্যত রাজনৈতিক অভিসন্ধির কারণকেই দায়ী করেন অভিজ্ঞ মহল। পৌর মেয়র লোকমান হত্যা : নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন (৪২) হত্যাকাণ্ড এ বছরের আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। গত ১ নভেম্বর রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওইদিনই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে চাপ দেয়া হয়; কিন্তু তারা তাতে রাজি হননি। পৌর মেয়র লোকমান গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে বিক্ষুব্ধ জনতা রাত ৯টা থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। এমনকি নরসিংদীতে ৭২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয় ছাত্রলীগ। ঘটনার দু’দিন পর নিহতের পরিবার থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ভাই সালাউদ্দিন ওরফে বাচ্চুসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়, যাদের বেশির ভাগই সরকারি দলের সমর্থক। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের ভাইয়ের নাম আসায় বিব্রত হয়ে পড়ে সরকার। পাশাপাশি কোনো ধরনের সন্দেহভাজন না হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার দাবি পেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মনি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রসীমার দাবি উত্থাপন করেন। জাতিসংঘের কমিশন অব দ্য লিমিটস্ অব দ্যা কন্টিনেন্টাল শেলফের দুই সদস্যের জুরি বোর্ড এ দাবির নিষ্পত্তি করবে। বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের ৪০০ থেকে ৪৬০ নটিক্যাল মাইলের ওপর দাবি পেশ করেছে। এর আগে বাংলাদেশের আপত্তির মুখে সিএলসিএফ সমুদ্রবন্দর নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের দাবি স্থগিত রাখে। ভারত ও মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ মাত্র ১৩০-১৪০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্র এলাকা পাবে। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের দাবির ওপর আলোচনা শেষে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে ৮-১০ বছর। ১৬.০৬.১১ চারদলের রোডমার্চে জনতার ঢল : সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল ও সরকারের নানান অসন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের আহ্বানে পালন করা হয়েছে বিভাগীয় শহরগুলোতে রোডমার্চ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন রোডমার্চে নেতৃত্ব দেন। রাজশাহী, সিলেট, খুলনা অভিমুখে রোমার্চগুলোতে জনসাধারণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছিল দেখার মতো। সারা চারদলের এই কর্মসূচির সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে মূলত সরকারের প্রতি অনাস্থারই কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। এই জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। এরপরেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে বিরোধীদলগুলো। পঞ্চম আদমশুমারির প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ : পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিসংখ্যান বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক রিপোর্ট ১৬ জুলাই প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক রিপোর্টে পাওয়া তথ্যের সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করা জরিপের সঙ্গে বেশ ফারাক লক্ষ্য করা গেছে, যা রিপোর্টটিকে বিতর্কিত করেছে। প্রকাশিত রিপোর্টের প্রধান প্রধান তথ্যগুলো নি¤œরূপ : মোট জনসংখ্যা : ১৪,২৩,১৯,০০০ জন পুরুষ : ৭১,২৫,৫০০ জন মহিলা : ৭১০৬৪০০০ জন পুরুষ ও নারী অনুপাত : ১০০.৩ ঃ ১০০ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : ১.৩৪% জনসংখ্যার ঘনত্ব : ৯৬৪ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে) ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর : ২০১১ সাল ছিল ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দেয়ার বছর। ভারত যা ইচ্ছে চেয়েছে এবং যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। ট্রানজিট, করিডোর, বিদ্রোহ দমনে বাংলাদেশকে সঙ্গী করা, বন্দর ব্যবহারসহ দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে যা চেয়ে আসছিল তার সবই এই বছরটিতে আদায় করে নিয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরে উভয় দেশের মধ্যে কিছু চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্ত সুবিধার উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হ    ৪৬টি পণ্য ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা হ    তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা তবে আলোচ্য সফরে বহুল আকাক্সিক্ষত ও আলোচিত তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও কুটনৈতিক জটিলতার মুখে তা সম্পাদিত হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারত ট্রানজিট চালু : ১৯ অক্টোবর ২০১১ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলন্দর ও আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিটের মালামাল পরিবহন। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকলের আওতায় ভারত এ ট্রানজিট পায়। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট হিসেবে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন শুরু হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি : পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ২ নভেম্বর ২০১১ বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাত দফার এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের পক্ষে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াসেফ ওসমান এবং রাশিয়ার পক্ষে সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান রাষ্ট্রীয় পরমাণু করপোরেশনের প্রধান সের্গেই ভি কিরিয়েস্কা। চুক্তি অনুযায়ী রূপপুরে দু’টি ইউনিটে মোট ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে আনুমানিক ব্যয় হবে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার যা রাশিয়া রাষ্ট্রীয় ঋণ হিসেবে জোগান দেবে। অতিমাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা : বাংলাদেশের ৩,৪৯২ কিলোমিটার লম্বা জাতীয় রাজপথ এবং ৪,২৬৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আঞ্চলিক পথ অনেক ভ্রমণকারীর জন্যে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন কারণে। পরিসংখ্যান বলে যে, দেশে প্রতি বছর ২০,০০০ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৪,০০০ লোক মারা যায়। ২০১১ সালে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রাটা যেন একটু বেশিই ছিল। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা যানবাহন চলাচল ও জনসাধারণকে নির্বিঘেœ আসা-যাওয়াকে শঙ্কার ভেতরে ফেলে দেয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্দেশক তারেক মাসুদ ও আশফাক মুনীর মিশুক সড়ক দুর্ঘটায় নিহত হন ১৩ আগস্ট। মিরসরাইয়ে স্কুল ছাত্রদের নিয়ে বাস দুর্ঘটনাটি তো মর্মান্তিকতার সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-গুপ্তহত্যা ও গণপিটুনি : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনী ইশতেহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় এসে সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি; বরং এ সরকারের মেয়াদে বিপুল উৎসাহে তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। আর সম্প্রতি ক্রসফায়ারের পরিবর্তে বিচারবহির্ভূত হত্যার নতুন সংস্করণ বেরিয়েছে। ক্রসফায়ারে হত্যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণে শুরু হয়েছে গুম ও গুপ্তহত্যা। জানা গেছে, ক্রসফায়ারের ঘটনাটি বহুল আলোচিত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। আগে থেকেই এই গুম ও গুপ্তহত্যা শুরু হলেও বিদায়ী বছরটির শেষদিকে এটা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। কোনো কোনোদিন একাধিক ব্যক্তির নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়। আর নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের যেমন উদ্ধার করা সম্ভব হয় না, তেমনি পাওয়া যায় না তাদের লাশের খবর। আবার অনেকেই মনে করেন, ক্রসফায়ারের আরেক নাম গুপ্তহত্যা। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের; কিন্তু বর্তমান সরকার সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। গুম ও গুপ্তহত্যা ছাড়াও ডাকাত পরিচয়ে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যার খবর ছিল এবার আলোচনায়। সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে শবেবরাতের রাতে ছয় ছাত্রকে ডাকাত বানিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় কেঁদেছে গোটা জাতি। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। তাই নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা পুলিশের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তাদের হত্যাকারী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি ওঠে সর্বত্র। শবেবরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশী এলাকার কেবলার চরে গিয়েছিলেন সাতজন। তাদের মধ্যে ইব্রাহিম খলিল, শহিদুর রহমান পলাশ, কামরুজ্জামান কান্ত, টিপু সুলতান, শামস রহিম শাম্মাম ও মনির হোসেন ছিলেন ছাত্র। তাদের সঙ্গে ছিলেন আল-আমিন নামের আরও এক যুবক। শবেবরাতের রাতে ওই ছয় ছাত্র ঢাকা থেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন বড়দেশী গ্রামে। এছাড়া র‌্যাব কর্তৃক কলেজছাত্র লিমনকে গুলি করে পঙ্গু করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরের ওপর অমানুষিক পুলিশি নির্যাতন, পুলিশ হেফাজতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এম ইউ আহমেদের মৃত্যু ছিল বছরের আলোচিত খবর। যশোরের ছাত্রদল নেতাকে গুম করে হত্যা ছিল অন্যতম আলোচিত ঘটনা। গত বছর হাজারখানেক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারি মাসে অপহরণ হয় ৪৫টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৩টি, মার্চ মাসে ৭৪টি, এপ্রিলে ৮২টি, মে মাসে ৬৫টি, জুন মাসে ৪৮টি, জুলাইয়ে ৮০টি, আগস্ট মাসে ৬৯টি, সেপ্টেম্বরে ৭১টি, অক্টোবরে ৮০টি, নভেম্বরে ৬৯টি ও ডিসেম্বরে এ পর্যন্ত অর্ধশত অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। সরকারের সব রাগ যেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর : বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার পর থেকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর চরম অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে থাকে। তাদের টার্গেট যেন এই দলটিকে নির্মূল করা। ২৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সরকার তার সমগ্র শক্তি নিয়ে দলটিকে নির্মূলে নামে। নিজ দলীয় ক্যাডার ও পুলিশকে দিয়ে বিক্ষোভকে পণ্ড করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে আহত ও গ্রেফতার করে। এখানেই শেষ নয়, উল্টো জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গণগ্রেফতার করে। আটক করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনিম আলমসহ আরও অনেককে। এরই জের ধরে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি গ্রেফতার করা হয় জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি (বর্তমানে নায়েবে আমির) ও মাননীয় সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে। জাতীয় এই সব নেতৃবৃন্দকে ডাণ্ডাবেড়ী পরিয়ে আদালতে হাজির করা ছিল সরকারের অমানবিক আচরণগুলোর মধ্যে অন্যতম। সরকারের এই গ্রেফতার নির্যাতন বছরের শেষ দিনটি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। আন্তর্জাতিক পরিক্রমা বিদায়ী ২০১১ সালটি ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ঘটনাবহুল। এ সময়ের অনেক মর্মন্তুদ ঘটনাই বিশ্ববাসীকে হতবিহ্বল করেছে। আবার অসংখ্য ঘটনায় আলোড়িত হয়েছে সারা বিশ্ব। ‘ম্যান অব দ্য মিলেনিয়াম’ ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু ছিল বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এ বছরই ক্ষমতাচ্যুত এবং পরবর্তী সময়ে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। ২০১১ সালে বিশ্ববাসী দেখেছে আরব বসন্তের জাদুকরী প্রভাব। এ সময় আরব জাহানে সংঘটিত হয়েছে অনেক অকল্পনীয় ঘটনাপ্রবাহ। বিদায়ী বছরে গাদ্দাফির মৃত্যু ছাড়াও ক্ষমতার মসনদ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন তিউনিসিয়ার একনায়ক বেন আলী, মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক এবং ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও অনেক দেশের শাসকদের ক্ষমতার মসনদ কেঁপে উঠেছে। ২০১১ সালে বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন বংশানুক্রমিকভাবে ক্ষমতাসীন এসব শাসক প্রতিবাদ দমনের নামে নিজ দেশের জনগণের ওপর কী বর্বর শাসন চাপিয়ে দিয়েছেন। ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট দখল আন্দোলন, গ্রিসের কৃচ্ছ্রসাধন আইনের প্রতিবাদে লাখো জনতার সহিংস বিক্ষোভ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। এ সময় ইউরোপের ঋণসঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এ বছর জাপানের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানিতে শোকাহত হয়েছে সারা বিশ্ব। শান্তির দেশ নরওয়েতে এক সন্ত্রাসী উন্মত্ততায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭৭ জন নিরীহ মানুষ। তথ্যপ্রযুক্তির দিকপাল স্টিভ জবসের মৃত্যুতে বিশ্ব হারিয়েছে এক মহান আবিষ্কারককে। এসবের পাশাপাশি আরব দুনিয়ার গণজাগরণ নতুন আশার সঞ্চার করেছে মুসলিম বিশ্বে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসানের লক্ষ্যে অবশেষে যাত্রা শুরু করেছে গণতন্ত্রের কণ্টকাকীর্ণ পথে। মুক্তজীবনে ফিরেছেন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চি। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারতের সমাজকর্মী আন্না হাজারের অনশন তাকে ভারতসহ তাবত বিশ্বের দুর্নীতিকবলিত জনতার কণ্ঠস্বরে পরিণত করেছে। দক্ষিণ সুদান নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ২০১১ সালে মুক্তিকামী মানুষের মনে আশা জাগালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী পশ্চিমাদের বৈরিতায় স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণ। অর্থনৈতিক সঙ্কটে পর্যুদস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে ২০১১ সালের শেষ নাগাদ ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু : ‘ম্যান অব দ্য মিলেনিয়াম’ ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু ছিল বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। গত বছরের ১ মে, রোববার রাত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউজ থেকে টেলিভিশনে এক ‘বিশেষ ঘোষণা’ দিলেন। তাঁর সেই ঘোষণায় চমকিত হলো সারা বিশ্ব। ওবামা ঘোষণা করলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মাথাব্যথার কারণ ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পাওয়া গেছে এবং তিনি নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে অভিজাত অ্যাবোটাবাদ এলাকায় এক প্রাচীরঘেরা বাড়িতে আল-কায়েদার নেতাকে পাওয়া যায়। অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে দক্ষ বিশেষায়িত ইউনিট নেভি সিল এ অভিযানে অংশ নেয়। বিন লাদেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ও অপারেশনের কোড নেম ছিল ‘অপারেশন জেরোনিমো’। এরই সাথে শেষ হয় আমেরিকার ভয় লাদেন অধ্যায়। ২০০১ সালের টুইন টাওয়ার সন্ত্রাসী হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছিল। কিন্তু লাদেনের পক্ষ থেকে এর দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়া হয়নি। তারপরও পশ্চিমা বিশ্ব তার নামে এশিয়াব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে কোটি কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে অঘোষিত ক্রুসেড চালিয়ে যাচ্ছে। এটা এখন পাকিস্তানে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামি : জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে ১১ মার্চ নয় মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর প্রতিক্রিয়ায় আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী সুনামি। এ দু’টি মিলে যে দুর্যোগ সৃষ্টি করে, তা ছিল জাপানে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জও ছিল এটি। ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে দেশটিতে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক অঙ্ক দাঁড়ায় কয়েকশ বিলিয়ন ডলার। দুর্যোগ এখানেই শেষ হয়নি। ভূমিকম্প ও সুনামির ধাক্কা সরে যেতেই দেখা গেল, এ ধাক্কায় দেশটির পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনা ফুকুশিমা দাইচিতে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়, অন্যদিকে ফাটল দিয়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ভীতি সৃষ্টি হয়। নরওয়েতে নৃশংসতা : ২২ জুলাই অন্যতম শান্তির দেশ হিসেবে পরিচিত নরওয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করে। এই দিন প্রথমে রাজধানী অসলোতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে আট জন নিহত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন। এরই ঘণ্টা দুয়েক পর রাজধানী থেকে ১৭ মাইল দক্ষিণের ছোট্ট দ্বীপ উটোয়াতে তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের এক গ্রীষ্মকালীন সম্মেলনে হামলা চালায় এক বন্দুকধারী। নরওয়ের বামপন্থী লেবার পার্টি ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। প্রথমে রাজধানীর বোমা বিস্ফোরণ ও বন্দুক হামলার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও পরে দেখা যায়, ঘটনা তা নয়। তরুণদের সম্মেলনে একান্তই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে হামলা চালিয়েছে এন্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক নামের এক যুবক। কিন্তু তিক্ত সত্য হচ্ছে, একসাথে এতগুলো হত্যা করা সত্ত্বেও পশ্চিমাবিশ্ব এটিকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে দেখায়নি, দেখিয়েছে নিছক হামলা হিসেবে। তাহলে জনমনে প্রশ্ন, ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটা কি শুধু মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে? নীল বিপ্লব : মিসরে নতুন সূর্যোদয় : আফ্রিকা তথা আরববিশ্বের দেশ মিসরকে বলা হয় নীলনদের দান। ১৪ জানুয়ারি ২০১১ প্রথম আরব দেশ হিসেবে তিউনিসিয়ায় গণ-অভ্যুথ্যানের পর মিসরেও গণ-আন্দোলন শুরু হয় ২৫ জানুয়ারি। গণ-আন্দোলনের মুখে দেশটির প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিলের কাছে। ১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবর আনোয়ার সা’দাতকে হত্যা করা হলে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা হোসনি মোবারক মিসরের রাষ্ট্রপতি হন। মুসলিম ব্রাদারহুড এবং “উই আর অল খালেদ সৈয়দ”এর সংগঠিত তাহরির স্কয়ারের তীব্র আন্দোলনের মুখে ৩২ বছর ধরে আঁকড়ে থাকা গদি ছাড়তে বাধ্য হন হোসনি সাইদ মোবারক। মিসরে সুপ্রিম কাউন্সিল কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন কামাল আল গানজুরি। বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। আরব বসন্ত ও তিউনিসিয়ার বিপ্লব : তিউনিসিয়ার সিদিবুজিদ শহরের এক দরিদ্র যুবক নিজ দেহে আগুন লাগিয়ে জীবনের নির্মমতা আর অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তার চিৎকার ছড়িয়ে যায় পুরো অঞ্চলে। এ প্রতিবাদ ক্রমে গণ-আন্দোলনের রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। তরুণ প্রজন্ম ২৫ জানুয়ারি ‘বিপ্লব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ বিপ্লবের সূচনা এবং বিশেষত তরুণ সমাজেরই আন্দোলন। বেকারত্ব সমস্যা ও দ্রব্যমূল্য বাড়ার প্রতিবাদে ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিক্ষোভ আরম্ভ হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে এ বিক্ষোভ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সৃষ্ট সহিংসতায় নিহত হয় প্রায় শ খানেক মানুষ। গণবিক্ষোভের মুখে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট জাইন-এল আবেদিন বেন আলী ১৪ জানুয়ারি ২০১১ পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। এবং পরবর্তীতে দেশ থেকে পালিয়ে যান। এরপর ১৭ জানুয়ারি ২০১১ নতুন অন্তর্বর্তী ঐকমত্যের সরকার ঘোষণা করা হয়। নতুন সরকার ২৩ অক্টোবর ২০১১ সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করে। এতে ‘আন-নাহদা পার্টি’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন হামাদি জেবালি। মিয়ানমারে নতুন প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট অধিবেশন : ৪৮ বছর পর মিয়ানমারে ক্ষমতা গ্রহণ করেন উর্দিহীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অব:) থেইন সেইন। নবগঠিত পার্লামেন্ট ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তিনজনের প্যানেল থেকে তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। ১৯৬২ সালে জান্তা সরকারের শাসন শুরুর পর মিয়ানমারে এ প্রথম সামরিক উর্দিহীন কোন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হলেন। মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোতে ৩১ জানুয়ারি ২০১১ জান্তানিয়ন্ত্রিত নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে ২২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত দেশটিতে পার্লামেন্টের কার্যক্রম শুরু হয়। উল্লেখ্য গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকেও মুক্তি দেয় জান্তা সরকার। সিরিয়ায় হত্যাযজ্ঞ ও সরকারবিরোধী আন্দোলন : গণতন্ত্রের দাবিতে আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের ধাক্কায় একে একে তিউনিসিয়া ও মিসরে সরকারের পতন ঘটে। কিন্তু এ ধরনের বিক্ষোভ সিরিয়া ও ইয়েমেনে সমানভাবে কাজ করেনি। সামাজিক বিভাজন, উপজাতীয় কোন্দল ও উপদলীয় ঘাত-প্রতিঘাতের নানা সমীকরণের মধ্য দিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও ইয়েমেনের আলী আবদুল্লাহ সালেহ এখনো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারছেন। তবে ইয়েমেনের সালেহ এরই মধ্যে শর্তসাপেক্ষে আগামী নভেম্বরে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অবশ্য তিনি সরে গেলে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা এখনো অস্পষ্ট। এদিকে আসাদ সরকারও কোনোমতে ক্ষমতায় টিকে আছে। সিরিয়ায় আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকার অনুগত সেনা এবং নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যাপক দমন নিপীড়ন চলছে। ১৫ মার্চ ২০১১ দেশটিতে গণতন্ত্রের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার লোক নিহত হয়। ৩ আগস্ট সিরিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের কঠোর নিন্দা জানায় নিরাপত্তা পরিষদ। স্বাধীনতার পথে ফিলিস্তিন : নিজভূমে পরাধীন এক দেশের নাম ফিলিস্তিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্ব এবং অপ্রতিরোধ্য ইহুদি চক্রের বিরামহীন আক্রমণে ও কূটকৌশলে ক্ষতবিক্ষত এ দেশটি জাতিসংঘের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। দেশটি এ বছর জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদন করে। ২৩ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিন পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদের আবেদন করলে যুক্তরাষ্ট্র তাতে ভেটো দেয়। এ পর্যন্ত ৪৩ বার ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সুদান ও দক্ষিণ সুদান- দুই দেশ : আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ সুদান ভেঙে এখন দুইরাষ্ট্র। বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ দক্ষিণ সুদানের আত্মপ্রকাশ ঘটে ৯ জুলাই ২০১১। দেশটি বিশ্বের ১৯৫তম, জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৩তম এবং আফ্রিকার ৫৪তম স্বাধীন রাষ্ট্র। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে ২০১১ সালে ৯-১৫ জানুয়ারি দক্ষিণ সুদানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পক্ষে ৯৮.৮৩% ভোট পড়লে ৯ জুলাই দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা ঘোষণা করে। শতাব্দীর প্রথম দুর্ভিক্ষ সোমালিয়ায় : ২০ জুলাই ২০১১ জাতিসংঘ সোমালিয়ার দক্ষিণ বাকোল ও শাবেলি অঞ্চলকে দুর্ভিক্ষকবলিত ঘোষণা করে। এটি গত বছর সবচেয়ে করুণ ও মানবিক আবেদন সৃষ্টিকারী ঘটনা। ৩ আগস্ট মোগাদিসুর আফগোই, মধ্য শাবেলি ও নিম্ন শাবেলি অঞ্চলকেও দুর্ভিক্ষপীড়িত হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। একবিংশ শতাব্দীতে এবারই প্রথম কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হলো। আন্তর্জাতিক মহল এই সমস্যাকে ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র বলে অভিহিত করেছে। খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় হিমশিম খেয়ে জাতিসংঘ গত জুলাই মাসে দক্ষিণ সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে। ওই অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০ ভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার মানুষ পার্শ্ববর্তী কেনিয়া সীমান্তের উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয় বলেও বিশ্ব মিডিয়া খবর পরিবেশন করে। বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও পবিত্র বলে পরিচিত সেখানকার দাদাব ক্যাম্পটি খুব তাড়াতাড়ি শরণার্থীতে ভরে ওঠে। লিবিয়ায় গণবিপ্লব : আরববিশ্বে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগে ন্যাটোর নীরব শিকার লিবিয়া। গণবিস্ফোরণ ও সশস্ত্র অভিযানের মুখে ২২ আগস্ট ২০১১ লিবিয়ায় কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। পশ্চিমাদের সহযোগিতায় হাল্কা বিক্ষোভ দিয়ে শুরু হলেও গাদ্দাফির কঠোর দমন-পীড়নের মুখে গণজাগরণ রূপ নেয় গৃহযুদ্ধের। এক পর্যায়ে জাতিসংঘের অনুমোদনক্রমে ১৯ মার্চ ২০১১ বিদ্রোহীদের সমর্থনে গাদ্দাফি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে ন্যাটো। পরবর্তীতে ‘অপারেশন অডিসি ডন’-এর মাধ্যমে গাদ্দাফি যুগের অবসান হয়। ৩১ অক্টোবর ২০১১ আনুষ্ঠানিকভাবে লিবিয়ায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে ন্যাটো। একই সাথে ৩১ মার্চ ২০১১ থেকে জাতিসংঘ কর্তৃক আরোপিত নো ফ্লাই জোন ও সমুদ্রপথ অবরোধ শেষ হয়। ৩১ অক্টোবর ২০১১ আব্দুর রহিম আল কেইব নতুন সরকার গঠন করেন। লিবিয়ার জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (এনটিসি) ৫১ সদস্যের মধ্যে আব্দুর রহিম ২৬ ভোট লাভ করেন। ইসলামী রাজনৈতিক দলের পুনর্জাগরণ : ২০১১ সালের বিশ্ব রাজনীতির একটি ভিন্নতা হচ্ছে, ইসলামী রাজনৈতিক দলের পুনর্জাগরণ। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড, তিউনিসিয়ার আন-নাহদা এবং মরক্কোর উদারপন্থী ইসলামী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (পিজেডি) এর অভূতপূর্ব সাফল্য এবং জনসমর্থন পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামী দলগুলো বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার পিএএস পার্টি, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামী দলগুলো নতুন আশায় স্বপ্ন বাঁধছে। ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার : যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আগ্রাসনের পর থেকেই ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনে বিতর্ক চলছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনমত ছিল সৈন্য প্রত্যাহারের পক্ষে। ২০০৭ সালের মে মাসে পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ মার্কিন নাগরিকের মত ছিল ইরাক যুদ্ধ ছিল ভুল এবং ৫১ শতাংশ ভোটার সৈন্য প্রত্যাহারের পক্ষে ছিলেন। মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া বিল অনুযায়ী ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সৈন্য ইরাক থেকে প্রত্যাহার হওয়ার কথা ছিল। চলতি বছর ১৮ ডিসেম্বর শেষ মার্কিন সেনাদল ইরাক ছেড়ে যায়। প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের বিয়ে : বিশ্ববাসীর বহুল প্রত্যাশিত ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম এবং তার বান্ধবী কেট মিডলটনের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয় ২৯ এপ্রিল। ২০০০ আমন্ত্র্রিত অতিথি এই রাজকীয় বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। লন্ডন পুলিশের মতে, নব দম্পতিকে একনজর দেখার জন্য বিয়ের শোভাযাত্রার দু’পাশে জড়ো হয়েছিল কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ। শুধু তাই নয়, টিভি সেটের সামনে বসে সরাসরি প্রচারিত এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বিশ্বের ২০০ কোটি মানুষ। অর্থনৈতিক পরিক্রমা বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কট : বিশ্ব অর্থনীতিতে নিরন্তর এক পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এক সময় যারা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের চাবিটি সুকৌশলে ঘুরিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তৃত ও গভীর করতেন, তাদের মুষ্টি নিজেদের অলক্ষ্যেই শিথিল হয়ে পড়ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক নেতৃত্ব তাদের হাতছাড়া হওয়ার সময় ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। এই পরিবর্তনে নেতৃত্ব আসছে এশিয়ায়। ২০২০ সাল নাগাদ তা এক অর্থনৈতিক প্যারাডাইম শিফট বা দিকপরিবর্তন পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ বছর ছিল ২০১১ সাল। এ সময়ে দ্বিতীয় দফা সঙ্কটে পড়ে ইউরোপ-আমেরিকা। ২০১২ সালে এ সঙ্কট হতে পারে আরো ঘনীভূত। ২০০৭ সালের পর এই যে অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরু হয় তা ঐতিহ্যবাহী বিশ্ব অর্থনীতির নেতা আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপানের অর্থনৈতিক শক্তিকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়। ঠিক এর উল্টো ঘটে চীন, ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়ার ক্ষেত্রে। ২০১১-১২ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কটও একই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। ২০১১ সালে যে অর্থনৈতিক সঙ্কটে খেই হারানোর অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হয়েছিল, তার মূলে রয়েছে মাত্রা ছাড়ানো ঋণগ্রস্ত হওয়া। এ ঋণ গ্রিসের অর্থনীতিকে ডুবিয়েছে। ইতালি, স্পেন ও পর্তুগালের অবস্থাকে সঙ্কটাপন্ন করেছে। মার্কিন অর্থনীতির সামনে হলুদ বাতি অবিরাম সতর্কঘণ্টা বাজিয়ে চলেছে যেকোনো মুহূর্তে লালবাতি জ্বলে ওঠার ব্যাপারে। জাপানের মতো দেশের অর্থনীতি হয়ে পড়েছে স্থবির। বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনের উত্থান : ১৪ ফেব্রুয়ারি জাপানের অর্থনৈতিক আয়তন প্রকাশের মাধ্যমে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনের আবির্ভাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৫,৪৭,৪০০ কোটি ডলার, চীন সেক্ষেত্রে জাপানকে ছাপিয়ে ৫,৮০,০০০ কোটি ডলার প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ফলে ৪২ বছর পর জাপান বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশের অবস্থান হারালো। অবশ্য মাথাপিছু আয়ের হিসেবে চীনের অবস্থান জাপানের অনেক নিচে। জাপানের মাথাপিছু আয় ৩৮,৪৫৫ ডলার। অন্য দিকে চীনের মাথাপিছু আয় মাত্র ৩,২৬৭ ডলার। মানব-উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১১ প্রকাশিত : ২ নভেম্বর ২০১১ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (টঘউচ) ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে মানব উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১১ (ঐউও-২০১১) প্রকাশ করে। শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু বৃদ্ধি, উন্নত বাসস্থানসহ মানুষের জীবন যাপনের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় জাতিসংঘ এবার ১৮৭টি দেশের ওপর মানব-উন্নয়ন প্রতিবেদন পেশ করে। সূচকে ১ পয়েন্টের মধ্যে ০.৯৪৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে নরওয়ে এবং সর্বনিম্নে রয়েছে গিনি (০.৩৪৪ পয়েন্ট)। বাংলাদেশের অবস্থান দেশগুলোর মধ্যে ১৪৬তম। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ৯৭তম অবস্থান নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মালদ্বীপ এবং সর্বনিম্নে অবস্থান করছে আফগানিস্তান (১৭২)। “ঙপপঁঢ়ু ডধষষ ঝঃৎববঃ” আন্দোলন : দিনে দিনে পুঁজিবাদের লোভ-লালসা, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও সরকারের ব্যয় সঙ্কোচননীতি, মাত্রাতিরিক্ত বেরকরত্ব, সরকারি কর্মকর্তাদের অর্থলিপ্সা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দেশে দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের “ওয়াল স্ট্রিট দখল করো” ও স্পেনের “ক্ষুব্ধ জনতা”র আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা-ইউরোপ হয়ে আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও ল্যাটিন আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার ৮২টি দেশের ৯৫১টি শহরে এ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে দিতে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ‘ফেসবুক’ ও মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ‘টুইটার’। এ আন্দোলনের নেপথ্যে নেই কোনো রাজনৈতিক দল, নেই কোনো নেতা-নেত্রীর নির্দেশনাও। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা : আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাস, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি ও অবকাঠামো, নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশের ভারসাম্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মত সাতটি অগ্রাধিকার খাত ও অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পর ২২ জুন ২০১১ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (ইসিএনইসি) বৈঠকে তা অনুমোদিত হয়। এ পরিকল্পনার মেয়াদকাল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। এটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হয়। জিডিপি নির্ণয়ে নতুন ভিত্তিবছর নির্ধারণ : জিডিপির হিসেবের ক্ষেত্রে নতুন ভিত্তিবছর হিসেবে ২০০৫-০৬কে নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ভিত্তিবছর ধরে আগামী ২০১১-১২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হিসাব করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি ও প্রবৃদ্ধি নির্ণয়ের জন্য ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রান্তিক বা মাসভিত্তিক হিসাবের রেওয়াজ না থাকায় নতুন ভিত্তিবছর চূড়ান্ত করা হলেও এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০১২ সালের মে মাস পর্যন্ত। যে কোনো দেশের জিডিপি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ১৯৯৩ সালের সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট (এসএনএ) অনুযায়ী ১৫টি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত। জিডিপি নির্ণয়ের ১৫টি খাত হচ্ছে কৃষি ও বন, মৎস্যসম্পদ, খনিজ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, লোকপ্রশাসন, সামাজিক সেবা ইত্যাদি। শেয়ারবাজার বিপর্যয়, নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরা : বিদায়ী বছরের পুরো সময়টায়ই শেয়ারবাজারে বিপর্যয় ঘটেছে। শেয়ারবাজার ধসে এবার অতীতের সব রেকর্ডই ভঙ্গ হয়েছে। পুঁজিবাজার বিপর্যয়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও তাদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। অভিযোগ ওঠে, শেয়ারবাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর ভয়াবহ ধসের মধ্য দিয়ে যে পতনের সূচনা হয়েছিল, ২০১১ সালের বছরজুড়ে সেই ধারা অব্যাহত ছিল। প্রতিদিন যেন ধসের রেকর্ড হয়েছে। তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে কমতে স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে আসে। শেয়ারবাজারের কারসাজি তদন্তে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তাদের রিপোর্টে কারসাজির সঙ্গে বেশ কয়েকজন রাঘব-বোয়ালের নাম উল্লেখ করলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। বরং উল্টো মামলা হয় ইব্রাহিম খালেদের বিরুদ্ধে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে শেয়ারবাজারে আরও দরপতন দেখা দেয়। দরপতনে সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশও সরকারের সমালোচনা করে; কিন্তু অর্থমন্ত্রী এতে কর্ণপাত না করে উল্টো বিনিয়োগকারীদের ধমকের সুরে কথা বলেন। তার সঙ্গে সুর মেলান প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। কর্তৃপক্ষের কিছু সিদ্ধান্তও শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করে। এদিকে অব্যাহত দরপতনে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রতিবাদে নেমে পড়েন রাস্তায়। তাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সর্বশেষ পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে বেশ কয়েকটি প্যাকেজ ঘোষণা হলেও দরপতনের চাকা থামানো যায়নি। আলোচিত ব্যক্তিত্ব লৌহমানব গাদ্দাফি : গাদ্দাফি ছিলেন আফ্রিকা ও আরববিশ্বের দীর্ঘ সময়ের শাসক। তার ৪২ বছরের শাসনামলের বিরুদ্ধে গণজাগরণ শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১। বিক্ষোভ দিয়ে শুরু হলেও গাদ্দাফির কঠোর দমন-পীড়নের মুখে গণজাগরণ রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। এক পর্যায়ে ১৯ মার্চ বিদ্রোহীদের সমর্থনে গাদ্দাাফি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে ন্যাটো। অভিযানের নাম দেয়া হয় “অপারেশন অডিসি ডন”। ২০ আগস্ট থেকে ন্যাটো বাহিনীর সামরিক সহায়তা নিয়ে সরকারবিরোধী যোদ্ধারা ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থল সারিম স্ট্রিটের বেননবী মসজিদ থেকে “অপারেশন মারমেইড ডন” শুরু করে। বিদ্রোহীদের আপসহীন হামলায় ২২ আগস্ট অবসান ঘটে লিবিয়ায় গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনামলের। ২৩ আগস্ট বিদ্রোহীরা দখল করে নেয় গাদ্দাফির সেনা ঘাঁটি এবং ত্রিপোলির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত “বাব আল আজিজিয়া”। ১৭ অক্টোবর গাদ্দাফির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ‘বনি ওয়ালিদ’ দখল করে বিদ্রোহী বাহিনী। সবশেষে ২০ অক্টোবর তার জন্মস্থান সিরত শহরে লড়াইয়ে নিহত হন গাদ্দাফি। থাইল্যান্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী : গণতান্ত্রিক চর্চার সংঘাত ও দ্বন্দ্বের রাজনীতির অন্যতম দেশ থাইল্যান্ড। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চিরস্বাধীন এ দেশটিতে ২৬তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩ জুলাই ২০১১। নির্বাচনে পুয়ে থাই পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এর মাধ্যমে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং ইল : উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং ইল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ৬৯ বছর বয়সী কিম জং ইল ২৬ ডিসেম্বর ২০১১, শনিবার এক ট্রেন সফরের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জং ইল বেশকিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। কালো পোশাক পরিহিত উপস্থাপক অশ্রুসজল চোখে টেলিভিশনে জানান, দেশকে নেতৃত্ব দিতে মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপ নেয়ার কারণেই কিম জং ইলের মৃত্যু হয়েছে। জং ইলের তৃতীয় ছেলে জং আন তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। এর আগে ২০০৮ সালে একবার তার স্ট্রোক হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর থেকে সমাজতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়া শাসন করেছেন কিম জং ইল। ১৭ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রীয় শোক পালন করে। কিম জংয়ের মৃত্যুর খবরে উত্তর কোরিয়াজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। কিমের মৃত্যুর খবরে ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজিবাজারের দর ৫ শতাংশ নেমে গেছে। জাপানের মন্ত্রিসভা জরুরি বৈঠকে বসেছে। উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোও এর পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তাদের সামরিক বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কিম জং ইলের মৃত্যু-পরবর্তী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। স্টিভ জবস : পুরো নাম স্টিভন পল জবস। তবে দুনিয়াজুড়ে স্টিভ জবস নামেই তার খ্যাতি। যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। তিনি অ্যাপল ইনকরপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাডাও তিনি কম্পিউটার ও মনোরঞ্জন শিল্পে একজন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। জবস, পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও’র সাবেক সিইও। তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েনের সঙ্গে ১৯৭৬ সালে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা পুরো পৃথিবীর চেহারাই বদলে দিয়েছেন। ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্টিভ জবস অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে ভুগছিলেন, তাই আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ তিনি অ্যাপল কোম্পানির সিইও’র দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। অ্যাপল তাদের নতুন আইফোন বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলটোয় মারা যান। তার বয়স ছিল মাত্র ৫৬। আবদুল মান্নান তালিব আর নেই তিনি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ বেলা আড়াইটায় তিনি রাজধানীর শান্তিবাগে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ছয় ছেলে, তিন মেয়ে, নাতি নাতনি এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আবদুল মান্নান তালিব বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কুরআন-হাদিসে সুবিজ্ঞ এবং সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন। আল কুরআন ও হাদিস অনুবাদের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইসলামী নানা বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি শিশুদের মানস গঠনে ইসলামী ভাবধারার সাহিত্য রচনা করেছেন, পাশাপাশি ইসলামী ভাবধারার সাহিত্য কেমন হবে তার দিক নির্দেশনামূলক বহু গ্রন্থও রচনা করেছেন। বিভিন্ন সাহিত্য ও গবেষণামূলক পত্র-পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করেছেন। পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি সমকালীন বিষয় ও যুগ জিজ্ঞাসামূলক বহু নিবন্ধ ও প্রবন্ধ লিখেছেন। আবদুল মান্নান তালিব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার থানা-মগরাহাটের অর্জুনপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তালেব আলী মোল-া। মাতা মেহেরুন নেছা। আবদুল মান্নান তালিব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এইচএসসি পাস করেন ঢাকা বোর্ড থেকে ১৯৬৬ সালে। এরপর লাহোর জামেয়া আশরাফিয়া থেকে দাওরা-ই-হাদিস পড়েন। নানাবিধ ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তিনি বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দূ, ফারসি ও হিন্দি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। এ সকল ভাষা থেকে গবেষণাধর্মী অনেক বিষয় তিনি অনুবাদ করেছেন। আবদুল মান্নান তালিবের কর্মময় জীবন শুরু হয় মূলত সাংবাদিকতার মাধ্যমে। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিকসহ বহু পত্রিকার তিনি সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৬৭-৭১ ইসলামিক রিসার্চ একাডেমী ঢাকার রিসার্চ স্কলার ছিলেন। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের রিসার্চ স্কলার ছিলেন ১৯৭৫-৮৫ পর্যন্ত। ১৯৮৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলা সাহিত্য পরিষদের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আন্না হাজারে : দাবি আদায়ে অহিংস পন্থা অবলম্বনের মহাত্মা গান্ধীর দেখানো পথে হেঁটে এই বছর বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছেন তারই এক অনুসারী। ভারতের আন্না হাজারে তারই দেখানো পথ হাঁটলেও একটু ভিন্নতা অবলম্বন করে দুনিয়াজুড়ে খবরের উপকরণ হন। পাশাপাশি স্বদেশে সরকারের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। বছরজুড়েই দুর্নীতবিরোধী তার অনশন কর্মসূচি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একে একে ভারতের সব রাজনৈতিক দল ও দেশপ্রেমিক জনতা তার এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। ফলে তার এই অনশন ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। তার এই আন্দোলন দমাতে ভারত সরকার প্রথমে কঠোরতার পথ বেছে নিলেও পরে তার কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। সত্তরোর্ধ্ব গান্ধীবাদী এই নেতা দিল্লির যন্তরমন্তরকে কেন্দ্র করে অনশন আন্দোলন পরিচালনা করলেও ইতোমধ্যে ভারতবর্ষে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়তই তার সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। তার দাবিগুলোর অন্যতম হচ্ছেÑ ভারতে সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী লোকপাল বিল পাস করা। যেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের রাঘব-বোয়ালদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। সরকার তার দাবিকে পাশ কাটিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটি বিল পাস করার কয়েক দফা চেষ্টা করেও তার আন্দোলনের কারণে ব্যর্থ হয়েছে। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন : ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। একুশে পদকে ভূষিত এ রাজনীতিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার খিরাইপাচুড়িয়া গ্রামে জন্ম নেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তারা ছিলেন ৪ ভাই ও ২ বোন। খোন্দকার দেলোয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন। পাশাপাশি তিনি আইন বিষয়েও পড়াশোনা করেন। সাফল্যের সঙ্গে পাস করেন এলএলবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন খোন্দকার দেলোয়ার। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে অংশ  নেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন ও আন্দোলন সংগঠনের কাজে এবং আন্দোলনের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে ব্যাপক তৎপরতার জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। কর্মজীবনে তিনি সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা, মানিকগঞ্জের খোন্দকার নুরুল হোসেন ল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেন খোন্দাকার দেলোয়ার হোসেন কলেজ ও পাচুরিয়া মসজিদ ও মাদ্রাসা। মানিকগঞ্জের ঘিওর-দৌলতপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দেলোয়ার হোসেন। তিনি পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের দু’বার সভাপতি ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সদস্য ছিলেন। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও সপ্তম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ছিলেন। খান্দকার দেলোয়ার ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জাগো দলে যোগদানের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। তিনি দীর্ঘদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার সময় খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেন। পরে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে তাকে পুনরায় মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিএনপি মহাসচিব গত ২২ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হওয়ার পর তাকে মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মার্চ তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিউতে স্থানান্তর করা হয়। রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ৪ মার্চ রাতে তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। সেলিনা হায়াৎ আইভি : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বছরের অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। কে হবেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র? এই জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটান সেলিনা হায়াৎ আইভি। ৩০ অক্টোবর নানা প্রতিকূলতা ছাপিয়ে তিনি জনতার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় নারায়ণগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি ও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শামীম ওসমানের মধ্যে। বিএনপি-সমর্থিত তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনের আগের রাতে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা বন্দরের কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভি ইতিহাস গড়লেন। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ : ২০১১ সালের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বের তালিকার শীর্ষস্থানে থাকা মানুষটির নাম জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। বিশ্বের সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বিশ্বের তাবৎ প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভিত্তিমূলকে নাড়িয়ে দিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। লাখ লাখ মার্কিন গোপন কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস করার মতো সাহস দেখিয়ে তিনি সাংবাদিকতায় একটি বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেছেন। ২০১০ সালে প্রথম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন। তিনি দেখিয়েছেন, গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরিবর্তনের গণজোয়ার ও গণজাগরণ আনা সম্ভব। সারা বিশ্বের কুচক্রী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একাই লড়াই চালিয়েছেন। একদিকে তিনি পেয়েছেন সাধারণ মানুষের ভালোবাসা, অন্যদিকে ঘৃণার পাত্র হয়েছেন রাজনীতিকদের কাছে। অ্যাসাঞ্জের ভয়ে গুটিয়ে থাকা রাজনীতিকরা তার গতিকে রুখতে ঘৃণ্য চক্রান্ত এঁটে তার বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর অভিযোগ আনলেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলো। ডমিনিক স্ট্রস কান : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক প্রধান ডমিনিক স্ট্রস কান (৬২) বছরের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বের তালিকায় রয়েছেন। সাফল্যের চূড়া থেকে একেবারে সমতল ভূমিতে আছড়ে পড়েছেন তিনি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিকে টপকে ইতালির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু নিউ ইয়র্কের একটি হোটেলের এক নারী কর্মচারীর ওপর যৌন হামলা চালানোর অভিযোগে তার সে সম্ভাবনাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিলো। ২০১১ সালের মে মাসে সফিটেল হোটেলের নারী কর্মচারী দিয়াল্লোকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধানের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। এর পরপরই একে একে আরও যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয় কানের বিরুদ্ধে। চলে গেলেন ড. কাজী দীন মুহম্মদ সোনার মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। গত ২৮ অক্টোবর তিনি ৮৪ বছর বয়সে চিরতরে এ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। তিনি ছিলেন খ্যাতিমান পন্ডিত, লেখক, বাংলা ভাষার সাধক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। কাজী দীন মুহম্মদ ১৯২৭ সালের ১ ফেব্র“য়ারি সাবেক ঢাকা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের রূপসী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কাজী আলিমুদ্দিন আহমদ। মা মোসাম্মৎ কাওসার বেগম। তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় (বর্তমানে যা এসএসসি) ঢাকা বোর্ডে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। স্কুল জীবনেও তিনি প্রতিটি পরীক্ষাতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ অনার্স, ১৯৪৯ সালে এমএ ডিগ্রী এবং ১৯৬১ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫১ সালের জুলাই মাসে রংপুর কারমাইকেল কলেজে বাংলার লেকচারার হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি ওই বছরই পহেলা নভেম্বর ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। সুদীর্ঘকাল শিক্ষকতার পর ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ করার পর পুনর্নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ৫ বছর এবং সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে আরো ৩ বছর বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। তিনি ডেপুটেশনে  ১৯৬৪-৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেন্ট্রাল ব্যাংকে উন্নয়ন অফিসার  এবং ১৯৬৭ থেকে ৬৯ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর পরিচালক (বর্তমানে যা মহাপরিচালক) ছিলেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চার বছর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি তাঁর পেশাগত জীবন থেকে অবসর নেন। এর মধ্যে তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেয়ার পর কিছুদিন তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রো-ভিসি এবং পরে ভিসি হিসেবেও দায়িত¦ পালন করেন। বাংলা সাহিত্যের এক বহুদর্শী প্রাজ্ঞপন্ডিত ড. কাজী দীন মুহম্মদ। রাষ্ট্রভাষা বাংলা আন্দোলনের প্রথম দিকের সংগঠক ছিলেন তিনি। তাঁর হাত ধরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে যুক্ত হয়েছে অজস্র গৌরবোজ্জ¦ল মুকুট। এ অঞ্চল থেকে লন্ডনে ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এ ভাষাবিজ্ঞানী ও ভাষা সংগ্রামী পরবর্তীতে বাংলা ভাষা গবেষণা ও উন্নয়নে, বাংলা ভাষায় প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। লেখেন বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস এবং ইসলামের ওপর ৪০টিরও বেশি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, লোকসাহিত্যের ধাঁধা ও প্রবাদ, সমাজ সংস্কৃতি ও সাহিত্য, জীবন সৌন্দর্য, মানবজমিন, সে কালের সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব, মানব মর্যাদা, জীবন সৌন্দর্য, নাস্তিকতা ও আস্তিকতা, বাংলাদেশে ইসলামের আবির্ভাব, সংস্কৃতি ও আদর্শ, ইসলামী সংস্কৃতি,বিধান তো আল্লাহরই, জুমুআর ঘরে, সুফিবাদের গোড়ার কথা, সূফিবাদ ও আমাদের সমাজ ইত্যাদি। মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম : অধ্যাপক গোলাম আযম একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। তিনি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত জিএস ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের কাছে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পাঠ করেন তিনি। মজলুম এই ব্যক্তির পিতার নাম মাওলানা গোলাম কবির। মাতার নাম সাইয়েদা আশরাফুন্নিসা। গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর (বাংলা ১৩২৯ সালের ৫ অগ্রহায়ণ) ঢাকা শহরের লক্ষ্মীবাজারস্থ শাহ সাহেব বাড়িতে (তাঁর মাতুলালয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে জুনিয়র মাদ্রাসা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় গোলাম আযম ত্রয়োদশ স্থান লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে ইসলামিক ইন্টারভিউ কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ঢাকা বোর্ডে দশম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের কাজে জড়িয়ে পড়ায় গোলাম আযম পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং ১৯৪৯ সালে দাঙ্গাজনিত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে তিনি ১৯৫০ সালে এমএ পরীক্ষা দেন এবং দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। গত বছরের শেষ দিকে তিনি আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন। আওয়ামী সরকার কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ এই মজলুম জননেতাকে বলা হচ্ছে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। অথচ এই আওয়ামী সরকারই ১৯৫ জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আবার নতুন করে বিচারের কথা বলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় এবং নির্মূল করতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনকে। ফলে নিজ দলের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী লুকিয়ে থাকলেও ১৯৭১ সালে কোনো পক্ষ গ্রহণ না করা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে কথিত মানবতাবিরোধী আখ্যা দিয়ে প্রহসনের বিচারের আওতায় নিয়ে আসছে। এরই ফলশ্রুতিতে ডিসেম্বরে অধ্যাপক গোলাম আযম বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কয়েকটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এতে শাসক দলের ভীত নড়ে ওঠে। নতুন রেকর্ডের মালিক বিরেন্দর শেবাগ : ৭টি ছক্কা এবং ২৫টি চারের সহায়তায় বীরেন্দর শেবাগ ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করলেন। ১৪৯ বল মোকাবেলা করে তার সংগ্রহ ২১৯ রান। তিনি এখন শচীন টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে গেছেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দ্বিশতক অর্জন করলেন তিনি। এর আগে টেন্ডুলকার দ্বিশতক অর্জন করেছিলেন। ইন্দোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতে তিনি এ রেকর্ড গড়েন। ৪১ বলে প্রথম অর্ধশতকে পৌঁছান শেবাগ। প্রথম পঞ্চাশ তুলে নেন তিনটি চার ও চারটি বিশাল ছক্কায়। পরের অর্ধশতক তুলে নেন কেবল ২৮ বলে। এ সময় আরো সাতটি চার ও একটি বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেয়ার সময় বেশ সাবধানী শেবাগ। ৪৩ বলে আরো পঞ্চাশ যোগ করার সময় হাঁকান ছয়টি চার। আর চতুর্থ অর্ধশতক আদায় করে নেন ২৮ বলে। এ সময় ৭টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান তিনি। অবশ্য শেবাগ ব্যক্তিগত ১৭১ রানে রবি রামপলের বলে ড্যারেন স্যামিকে সহজ ক্যাচ দিলেও তা ধরতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। রায়না এবং গাম্ভীর এর অর্ধশত রানের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটের বিনিময়ে ৪১৮ রানের বিশাল টার্গেট দেয় ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৯.২ বলে ১০ উইকেটের বিনিময়ে ২৬৫ রানেই থেমে যায় তাদের ইনিংস। আর এতেই ১৫৩ রানের বিশাল জয় পায় ভারত। ভারতের পক্ষে জাদেজা এবং শর্মা ৩টি এবং রায়না দু’টি করে উইকেট নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৬ রান করেন রামদিন, সিমনস ৩৬ এবং স্যামুয়েলস ৩৩ রান করেন। আর এ জয় দিয়েই শেবাগ তার এবং বিশ্ব ক্রিকেটের ব্যক্তিগত সবোচ্চ রানের ইনিংস এর ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখলেন। সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীর প্রতীক : মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক এম হামিদুল্লাহ খান বীর প্রতীক ৩০ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সাবেক এই সংসদ সদস্য উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাড়ে ৮টার দিকে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। বীর প্রতীক খেতাবধারী বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের আহত হওয়ার পর ওই সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন হামিদুল্লাহ খান। বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক হামিদুল্লাহ ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন) সালে তিন দফায় পৈতৃক এলাকা মুন্সীগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকার মিরপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার জন্ম মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল গ্রামে ১৯৩৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। মুহাম্মদ দবিরউদ্দিন খান ও জসিমুন্নেছা খানের ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবার চাকরির কারণে তার পড়াশোনা হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন হামিদুল্লাহ খান। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে হামিদুল্লাহ খান একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এ কে খন্দকারের পাশাপাশি তিনিও ছিলেন। আলোচিত প্রযুক্তি সোলার বিমান : সুইজারল্যান্ডের বারট্রান্ড পিকার্ড ও আন্দ্রে  বোরসবার্গের তৈরি সোলার ইমপালস উড়োজাহাজটির ডানার দৈর্ঘ্য   বোয়িংয়ের চেয়ে মাত্র এক মিটার কম। অথচ এর ওজন একটি ছোট গাড়ির সমান। ১১ হাজার ৬০০ সৌর কোষ বসানো প্লেনটি দিনে সরাসরি শক্তি নিতে পারে সূর্য থেকে। রাতে চড়ে বেড়ানোর জন্য এতে আছে চারটি মোটর, যেগুলো দিনের বেলা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। যানটিতে একজনের বসার জায়গা আছে। আরো কয়েকটি মডেল আনার পরিকল্পনা আছে। ইতোমধ্যেই কয়েকবার পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হয়েছে সোলার ইমপালসের। পাইলটবিহীন হেলিকপ্টার : যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের রসদ ও অস্ত্র সরবরাহ করার কাজটি যদি চালকবিহীন কোনো আকাশযান করতে পারে, তাহলে ভালোই হয়। লকহিড মার্টিন ও কামান করপোরেশনের তৈরি হেলিকপ্টারটি ২০১১ সালে আফগানিস্তানে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়েছে। বেস স্টেশনে বসে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ১৫ হাজার ফুট ওপর দিয়েও এটি উড়তে পারে এবং প্রায় নিজের ওজনের সমান ভরের রসদ বহন করতে সক্ষম। ইউরেনিয়াম মার্বেল : ২০১১ সালের সেরা প্রযুক্তিপণ্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে মার্বেল। তবে সাধারণ কোনো মার্বেল নয়। এটি হচ্ছে ‘ইউরেনিয়াম মার্বেল’। এর বৈশিষ্ট্য হলো এ মার্বেলে ইউরেনিয়াম অক্সাইড আছে। এর ফলে রাতের অন্ধকার কিংবা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিতে এ মার্বেলগুলো উজ্জ্বল আলো ছড়ায়। এ মার্বেল তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লুরোসেন্ট বাতি নির্মাতা ‘ব্ল্যাক লাইট ওয়ার্ল্ড’। অল্পমাত্রার ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হলেও এ মার্বেলগুলো নিরাপদ বলেই মত দিয়েছেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞরা। ব্ল্যাক লাইট ওয়ার্ল্ড থ্রি প্যাক ইউরেনিয়াম মার্বেল বিক্রি করছে প্রায় ১০ ডলারে। ইন্টারনেট টেলিভিশন প্রযুক্তি : প্রযুক্তিকে এখন আর সীমাবদ্ধতায়  বেঁধে রাখা যাবে না। এক প্রযুক্তি অন্যটার সাথে মিশে গিয়ে অনেকটা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মতোই তৈরি হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। ইন্টারনেট টেলিভিশন জগতে অনেক আগে থেকেই গুগল টিভি তাদের পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সনি তাদের টিভি প্রযুক্তির জন্য নতুন ধরনের ইন্টারনেট টিভি সফটওয়্যার বানিয়েছে যার মাধ্যমে সহজেই টুইটার, ইউটিউব, হুলু, নেটভিক্সসহ বিভিন্ন লাইফ টিভিরুমেও প্রবেশ করা যাবে। টিভিটি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলবে, চাইলে কাস্টমাইজড ক্রোম ব্রাউজারের মাধ্যমে ওয়েব ব্রাউজারও ব্যবহার করা যাবে। মোবাইল প্রযুক্তি যেভাবে অনেককে ইন্টারনেট সুবিধার সাথে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, একইভাবে এই টিভি প্রযুক্তিও হয়তো সব সময় ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করে ফেলবে আরো গভীরভাবে। আর টিভি চ্যানেলের সীমানা শুধু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের থাকবে না। যদিও আমাদের দেশের মতো কম গতির ইন্টারনেট প্রযুক্তির দিয়ে এটি সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। স্যামসাং গ্যালাক্সি প্লেয়ার : স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজে নতুন করে  যোগ হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড চালিত একটি মিডিয়া প্লেয়ার। এটি আইপডকে চ্যালেঞ্জ করতে তৈরি করা হয়েছে। ওয়াইড টাচস্ক্রিন, অ্যান্ড্রয়েড ২.১ অপারেটিং সিস্টেম, ওয়াইফাই, মাইক্রো এসডি  স্টোরেজ (৩২ গিগা), দুই মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, জিপিএস চিপ অ্যানাবলড এবং আরো অনেক চমৎকার ফিচার। ৩.২ ইঞ্চি স্ক্রিন আইপডের তুলনায় বেশ ছোট মনে হলেও আদতে এটা বোঝাই যায় না। নকিয়া এক্স সেভেন : অনেক মোবাইল ফোন ইউজার অপেক্ষা করে থাকেন বাজারে নকিয়ার নতুন ফোনের আশায়। নকিয়া ২০১১ সালে নিয়ে এসেছে এক্স সেভেন। আট মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, অসাধারণ ভিডিও প্লেব্যাক কোয়ালিটি, বিশাল স্টোরেজ ক্যাপাবিলিটিসম্পন্ন এই ফোনটি চলে সিম্বিয়ন অপারেটিং সিস্টেম ‘এনা’তে। এটি সিম্বিয়নের পরবর্তী উন্নততর ভারসন, যেটি বিশেষ করে এ ফোনটির জন্যই ডেভেলপ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হলো, ৩২ গিগাবাইট মেমোরি ক্ষমতা, জিপিএস, ভিন্ন ধাঁচের সেট ডিজাইন এবং আরো অনেক কিছু। দ্বিতীয় প্রজন্মের মাইক্রোপ্রসেসর বুলডোজার : ২০১১ ছিল মাইক্রোচিপ নির্মাতাদের জন্য উৎসবের বছর। বছরের শুরুতে বিশ্বের অন্যতম চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টেল বাজারে এনেছে দ্বিতীয় প্রজন্মের মাইক্রো প্রসেসর স্যান্ডিব্রিজ। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে এসেছে ডেস্কটপ কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী এএমডির বুলডোজার প্রসেসর। বুলডোজার তৈরি হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার মিলপিটাসে অবস্থিত গ্লোবাল ফাউন্ডারিজে। এটি বিশ্বের একক বৃহত্তর সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। অ্যাডভান্স মাইক্রো ডিভাইস বা এএমডি প্রসেসর সবার কাছে পরিচিত। এএমডি ১৯৮২ সালে প্রথম ইন্টেলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আইবিএম পিসির জন্য এম২৮৬ প্রসেসর তৈরি করে। পর্যায়ক্রমে এএমডি মাইক্রো প্রসেসর ধারায়  যোগ হয়েছে অ্যাথলন, ডুরন, শেম্প্রন, এথলন ৬৪, অপটেরন ও  ফেনম। বর্তমান সময়ের আলোচিত হচ্ছে এএমডির দ্বিতীয় প্রজন্মের মাইক্রো প্রসেসর বুলডোজার ও ববকাট। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ‘বুলডোজার’ বাজারে এসেছে। বুলডোজার মাইক্রো-আর্কিটেক্সচার নিয়ে এএমডির পরিকল্পনা অনেক বড় ও দীর্ঘমেয়াদি। এর মানোন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২ সাল নাগাদ ২০ কোরের চিপ বাজারে আনার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বাষ্পীয় ইঞ্জিন : জার্মানির গবেষকেরা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছেন। এ ইঞ্জিন এতই ছোট যে, তা মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা সম্ভব নয়। ইউনিভার্সিটি অব স্টুটগার্ট এবং ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ইনটেলিজেন্ট সিস্টেমসের গবেষকেরা আলোচিত ২০১১ সালে এই ক্ষুদ্রতম বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করেছেন। ভাসমান একটি কণার ওপর গবেষকেরা লেজার বিম  ফেলে এ ইঞ্জিনটি তৈরি করেছেন। ক্ষুদ্র বাষ্পীয় ইঞ্জিন হলেও এর মধ্যে বড় আকারের ইঞ্জিনের মতো সব কাজই করা সম্ভব।  ক্ষুদ্রতম ইঞ্জিনটি অণুর চেয়ে ১০ হাজার গুণ বড় হওয়ায় এর গতিও পর্যবেক্ষণ করা যায়। বড় আকারের বাষ্পীয় ইঞ্জিনে শক্তি জোগাতে যেখানে কয়লা ব্যবহৃত হতো পানিতে ভাসমান থাকায় পানির অণুর সাথে সংঘর্ষে খুদে এ ইঞ্জিনে শক্তি তৈরি হয়। নারীদের অর্জন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০১১ সাল ছিল নারীদের অর্জনের বছর। নোবেল বিজয় থেকে শুরু করে দেশের নেতৃত্বেও নারীরা তাদের আসন পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। এ বছর থাইল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রধাতৃন্ত্রী নির্বাচিত হন। পুয়ে থাই পার্টির হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন ৪৪ বছর বয়সী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। থাইল্যান্ডে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন তিনি। ব্রাজিলও প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রেসিডেন্ট পেয়েছে এবার। দিলমা ভানা রৌসেফ ২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন নারী। এরা হলেন- ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান, লাইবেরিয়া ও আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ এবং লাইবেরিয়ার মানবাধিকার কর্মী লেমা বোয়ি। নিজেদের অবস্থানে দাঁড়িয়ে পরিবর্তনের জন্য অহিংস সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে এই তিন নারীকে মনোনীত করে নোবেল কমিটি। ওদিকে এ বছরই ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের সমান অধিকার পেয়েছে মেয়েরা। চলতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় কমনওলেথ সম্মেলনে আইনটিতে সই করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিপিএমকে হটিয়ে এবার নির্বাচনে জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। এর মধ্য দিয়ে সিপিএমের ২২ বছরের শাসনের অবসান হয় পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী হন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। খেলাধুলা শ্বিকাপ ক্রিকেটের স্মরণীয় এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলাদেশে : এত চমৎকার এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এর আগে হয়নি। আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি একই সাথে বিস্ময়ের, আনন্দের, আবেগের ছিল। ইতিহাসে দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চমৎকার আলোকসজ্জা, আতোশবাজি; অনুষ্ঠানের পর্বটি আরও মনোমুগ্ধকর ছিল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ঐতিহ্য, আদিবাসী, বন, মানুষ সবই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।  সাথে অসাধারণ এক ডকুমেন্টারি ‘ওয়েলকাম টু দ্যা স্কুল অফ লাইফ : বিউটিফুল বাংলাদেশ’। ঢাকার মাঠে মেসির জাদু : বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি ঢাকায় এসেই ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন এবং বাংলাদেশের দর্শকদের প্র্যাকটিসেই মুগ্ধ করেছেন। ঢাকার মাঠ ছিল মেসি ম্যাজিকের বর্ণচ্ছটায় উদ্ভাসিত। নবনিযুক্ত কোচ সাবেলা ও কর্মকর্তাসহ আর্জেন্টিনার ৩০ সদস্যের দল বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে কলকাতা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় মেসির দল। এরপর তারা সোজা চলে আসেন রাজধানীর অন্যতম পাঁচতারা হোটেল রূপসী বাংলায়। বিমান থেকে নামার পর থেকেই স্বপ্নের তারকা মেসির মুখে যেন মিষ্টি হাসি লেগেই ছিল। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে বাসের পর্দা সরিয়ে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মেসি। বাসের সর্বশেষ সিটের সামনের সিটটিতে বসেছিলেন তিনি। হাত নেড়ে নেড়ে বিমানবন্দর থেকে হোটেলে পৌঁছেন তিনি। আর রাতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেসি যে জাদু দেখালেন, তা ঢাকাবাসী সহজেই ভুলতে পারবে না। তিনি একাই নাইজেরিয়ার ছয়জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সের মধ্যে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন। জাতীয় দলের বিদেশী কোচ-উপাখ্যান : নিকোলা ইলিয়েভস্কির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ১৫ বিদেশী কোচের অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। এর মধ্যে বর্তমান কমিটির প্রায় সাড়ে তিন বছরের মেয়াদে চারজন কোচ বিদায় নিয়েছেন। এ বছরই চলে গেছেন দু’জন। একজন তো নিয়োগ পাওয়ার পরও আসেননি। জার্মানির বেকেল হফট জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম বিদেশী কোচ। ১৯৭৮ সালে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের। বেকেল হফট চলে যাওয়ার পর তারই স্বদেশী গেরহার্ড স্মিথ বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি কোচ হয়েছিলেন ১৯৮২ সালে। দুই ইউরোপীয় কোচের পর বাংলাদেশ নজর দেয় এশিয়ার দিকে। ইরানের কোচ নাসের হেজাজি বাংলাদেশ দলের তৃতীয় বিদেশী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন তিনি। এরপর আবার ইউরোপের দিকে ফিরে তাকায় বাংলাদেশ। সুইজারল্যান্ডের ওল্ডরিখ সোয়াব ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ দলের চতুর্থ বিদেশী কোচের দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যান ইয়াং ক্যাং জাতীয় ফুটবল দলের পঞ্চম বিদেশী কোচ। তিনি কোচ ছিলেন ১৯৯৪ সালে। ক্যাংয়ের পর আসেন জার্মানির অটো ফিস্টার। তিনি ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কোচ ছিলেন। ফিস্টারের অধীনেই বাংলাদেশ প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছিল। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের গ্র্যান্ড রয়েল চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল প্রয়াত মোনেম মুন্নার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। ইরাকের সামির শাকির জাতীয় দলের সপ্তম বিদেশী কোচ। তার কোচিংয়েই বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসে প্রথমবারের মতো ফুটবলে সোনা জিতেছিল। ২০০০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম বিদেশী কোচ হিসেবে ইংল্যান্ডের মার্ক হ্যারিসন দায়িত্ব পালন করেন। নবম বিদেশী কোচ জর্জ কোটান দায়িত্ব পালন করেন ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। কোটানের বিদায়ের পর লাতিন আমেরিকার শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ। আর্জেন্টিনার আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি জাতীয় দলের দশম বিদেশী কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন দুই বছর। তার মেয়াদকাল ছিল ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০৭ সালে একাদশ বিদেশী কোচ হিসেবে সৈয়দ নাঈমউদ্দিন দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ দলের। ভারতের অন্যতম সেরা কোচ হলেও তিনি বাংলাদেশকে কোনো সাফল্য এনে দিতে পারেননি। বরং চার মাসের মেয়াদকালে ভালোই সমালোচিত হয়েছিলেন নাঈমউদ্দিন। এরপরের বিদেশী কোচ ব্রাজিলের এডসন সিলভা ডিডো। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু ডিডোও বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। সার্বিয়ার জোরান জর্জেভিচ ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করলেও এই স্বল্পসময়েই এসএ গেমসে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতান জাতীয় ফুটবল দলকে। তবে পারিশ্রমিক নিয়ে অযৌক্তিক দাবি করায় তাকে বরখাস্ত করে বাফুফে। ক্রোয়েশিয়ার রবার্ট রুবচিচ বাংলাদেশের চতুর্দশ বিদেশী কোচ। তিনি দায়িত্ব নেন ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু গত ২ জুন কাউকে কিছু না জানিয়েই ফিরে যান স্বদেশে। যদিও তার চুক্তির মেয়াদ ছিল এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর মেসিডোনিয়ার জর্জি ইয়োভানোভস্কিকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাফুফে। গত ২০ জুন তার জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়ার কথাও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে যেতে অনিচ্ছুক ইয়োভানোভস্কি আর আসেননি। তারপর মাত্র দুদিনের মধ্যে ইয়োভানোভস্কির স্বদেশী নিকোলা ইলিয়েভস্কিকে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেয় বাফুফে। কিন্তু তিনিও পুরো মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ। এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও ছয় মাসের মধ্যেই ফিরে যেতে হচ্ছে তাকে। ২৪ জুন দায়িত্ব নেয়া ইলিয়েভস্কির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবসান হলো ২১ ডিসেম্বর। শীর্ষ টেস্ট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান : পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারলেও আপন আলোয় উজ্জ্বল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শেষ টেস্টে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার পর এবার আইসিসির টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে এসেছেন তিনি। মিরপুরে শেষ টেস্টে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে হারলেও ওই ম্যাচে ব্যাট-বল হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান ২৪ বছর বয়সী সাকিব। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ম্যাচে শতক (১৪৪) ও পাঁচ উইকেট নেন তিনি (৬/৮২)। এই নৈপুণ্যের সুবাদেই জ্যাক ক্যালিসকে (৩৯৭ রেটিং) সরিয়ে সাকিব (৪০৪ রেটিং) এখন বিশ্বের সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার। আইসিসির সর্বশেষ ব্যাটিং ও বোলিং র‌্যাঙ্কিয়েও অনেকটা এগিয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক। ব্যাটিংয়ে সাত ধাপ এগিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৩১তম স্থানে রয়েছেন তিনি। আর বোলিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছেন সাত নম্বরে। এর আগে গত অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সেরা খেলোয়াড় হন সাকিব। এর মধ্যে দিয়ে ওয়ানডেতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের আসনও পুনরুদ্ধার করেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিলেন সাকিব। এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনের কাছে শীর্ষ স্থান হারালেও সাত মাসের মাথায় শীর্ষে ফেরেন দেশ সেরা অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ে সফরে দলের ব্যর্থতার পর জাতীয় দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে হয় সাকিবকে। সে সময়ই বলেছিলেন, দায়িত্ব না থাকায় এখন নির্ভার হয়ে খেলতে পারবেন তিনি। নিজের সেই ‘স্বাভাবিক খেলা’ খেলে পরাজিত দলে থেকেও বিশ্বসেরা বাংলাদেশের সাকিব। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেল বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল : মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাইপর্বের প্লে অফ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ৯ উইকেটে পরাজিত করে বহুল কাক্সিক্ষত ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট নতুন এক দিগন্তে প্রবেশ করল। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠে এসিসি ট্রফি জয় করে বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটের মর্যাদা লাভ করেছিল। এই মর্যাদা লাভের জন্য ছেলেদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হলেও বাংলাদেশের মেয়েদের সেই মর্যাদা লাভে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হলেও বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে এবারই প্রথম অংশগ্রহণের সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে সালমা খাতুনের নেতৃত্বে ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভের কৃতিত্ব দেখাল এদেশের মেয়েরা। আর ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ম্যাচটিতেও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েদের ওপর অনেকটা দাপটই দেখিয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির