post

জৈব সন্ত্রাস

১২ জুন ২০১৩

গোলাপ মুনীর

একুশ শতকে বেশির ভাগ দম্পতি সন্তান ধারণে সক্ষম হবে না। যারা সন্তান ধারণে কোনো মতে সক্ষম হবেন, তারা জন্ম দেবেন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু। রুশ বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা চালিয়েছেন এ কথা প্রমাণ করতে যে, জিএম ফুড তথা জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফুডের মূল ‘অ্যাকশন প্রিন্সিপাল’ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্য এক ইধহ ভড়ৎ ঢ়ৎড়পৎবধঃরড়হ’ বা ‘জন্মদানে নিষেধাজ্ঞা’। আজকের দিনের ক্রোড়পতি সমাজ দাতব্য কাজের ছদ্মাবরণে নিক্ষেপ করছে ‘জিএম বোমা’ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি রোধের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনাকারী ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিলগেটসও তাদের দলে পড়েন। এদিকে শুধু মস্কোতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ট্রান্সজেনিক পণ্য কেনা নিষিদ্ধ। ২০ শতাংশ স্থানীয় পণ্য ও আমদানি পণ্যের ৩০ শতাংশই সেখানে জিএম ফুড। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে নিকারাগুয়া, মেক্সিকো ও ফিলিপাইনে দেখা দেয় এক ভয়াবহ মহামারী। এর উৎস কী, তা খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীদের একটু সময় লাগে। দেখা গেছে, সম্পূর্ণ সুস্থ ও যুবতী মেয়েদের গর্ভপাত ঘটছে প্রথম তিন মাস কিংবা দ্বিতীয় তিন মাস গর্ভসময়ে। পরবর্তী সময়ে গর্ভধারণের চেষ্টার সময়ে একই ঘটনা ঘটছে। এক সময় দেখা গেল এরা সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতাই হারিয়ে বসেছে। চিকিৎসকরা তা দেখে হতভম্ব। সর্বক্ষেত্রে একমাত্র সাধারণ চিকিৎসা ছিল মহিলাদের গণহারে টিটেনাস ভ্যাকসিন দেয়া। রকফেলার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো এই টিটেনাস ভ্যাকসিন প্রয়োগের কর্মসূচি। অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন। তা সত্ত্বেও মস্কোভিত্তিক রোমান ক্যাথলিক সংগঠন ঈড়সরঃব ঢ়ৎড় ঠরফধ ভ্যাকসিনের সাথের ক্যাপসুল পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে ফল যা পাওয়া গেল তা ভয়ানক। এই দ্রবণে ছিল এইচসিজির তথা ‘ঐঁসধহ পযড়ৎরড়হরপ মড়হধফড়ঃৎড়ঢ়রহ, বা গর্ভরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় একটি প্রাকৃতিক হরমোন। কিন্তু কী করে এই হরমোন ভ্যাকসিনের অংশ হলো, কী করে? আরো বিশ্লেষণে গিয়ে বিজ্ঞানীরা আরো মর্মাহত হলেন। এইচসিজির সাথে টিটেনাস অ্যাজেন্ট মিলে এইচসিজির জন্য অ্যান্টিবডি গঠনকে জোরদার করে তোলে। এর ফলে মহিলারা সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অন্য কথায়, এই ভ্যাকসিন ছিল গোপন ধরনের এক গর্ভপাত। যখন ক্রোড়পতি ড্যাভিড রকফেলার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উদঘাটিত হলো, জিএম ফুড তার পরও অব্যাহত রইলো। দুই বছর আগে ঠিক একই ব্যাপারটি ঘটলো জিম্বাবুয়ে ও গিনিতে, যেমনটি ঘটেছিল নিকারাগুয়া ও ফিলিপাইনে। এবার যেসব মহিলা এ ধরনের দুর্যোগের শিকার হচ্ছেন, তাদের কাছে প্রিয় ছিল টিনজাত শস্য। প্রত্যাশিত হলেও টিনজাত শস্য পরীক্ষা করে জীবনের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টিকর কোনো উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবং খাবার সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা প্রিজারভেটিভও ছিল নিয়মকানুন মতোই। জৈব সন্ত্রাস বা ইরড় ঞবৎৎড়ৎরংস এবং ট্রান্সজেনিক বস্তুর মানুষের ওপর ধ্বংসকর প্রভাব নিয়ে প্রথম সংশয়ের প্রশ্ন তোলেন সাউথ আফ্রিকান ইউনিভার্সিটির টক্সিকোলজিন্ট তথা বিষ বিজ্ঞানীরা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মহিলাদের সন্তান ধারণক্ষমতা হারানোর মহামারী শূন্য থেকে আসেনি। বিল গেটস বিশ্বের প্রথম সারির সফটওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা। কয়েকবার বিশ্বসেরা ধনীর খেতাবধারী, স্বাভাবিকভাবে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের একজন। একজন দাতা হিসেবে আজ তার সুনাম। তিনি বিশ্ব সমস্যা সমাধানের কাজের সাথে জড়িত। তিনি আফ্রিকার খাদ্য ও অভাব দূর করার সংগ্রামে নিয়োজিত। এ সংগ্রামে তিনি কোটি কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেন। সম্প্রতি তিনি খোলাখুলি বলেছেন, তার দাতব্য কাজের লক্ষ্য বিশ্ব জনসংখ্যা কমিয়ে আনা। প্রথমে তা কমানো হবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। ডক্টর অব সোসিওলজি ইরিনা অ্যালিভেকেভা বলেন, ‘এটি একটি ওপেন সিক্রেট যে, বিশ্বের বড় বড় ধনী, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ধনবানরা প্রাকৃতিক সম্পদের ঘটতি নিয়ে উদ্বগ্ন। জাতিসঙ্ঘের নিজস্ব দলিলে বিশ্ব জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করেছে বিভিন্ন গ্রুপে। মূল গ্রুপ (গোল্ডেন বিলিয়ন) মিডল গ্রুপে রয়েছে অপর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। অক্সিলিয়ারি গ্রুপে পড়েছে রাশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশের জনগোষ্ঠী। সর্বশেষ গ্রুপের মধ্যে পড়ে ৫০০ কোটি মানুষ, এরা আগাছার মতোই; এদের থেকে পৃথিবী মুক্ত হওয়া উচিত বলেই এরা মনে করে।’ বিলগেটস ও রকফেলারের ভয়ঙ্কর কর্মসূচির একটি কৌশল বর্তমানে মার্কিন সরকারের সমর্থনপুষ্ট। এ কৌশলটি উদঘাটন করেন গরঃপয ঐবরহ, তিনি জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি ঊঢ়রপুঃব-এর প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, অ্যান্টিবডিগুলো নেয়া হয়েছিল যেসব নারীর কাছ থেকে, যারা সন্তান প্রজনন অক্ষমতার সংক্রমণের শিকার। জিনগুলোকে আলাদা করা হয়েছিল। এবং জিন প্রকৌশল পদ্ধতিতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো পাঠানো শস্য বীজের জেনোমে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর অর্থ দাঁড়ায়, আফ্রিকানরা তাদের জমিতে সেই বীজ বপন করছিল জিএম কর্ণÑমার্ডার বীজ, যার ভেতরে গোপনে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে জন্মনিরোধী উপাদান। মিচ হেইনের ব্যাখ্যা হচ্ছে, এ শস্য যারা খাবে, তাদের কী হবে। সাধারণত অ্যান্টিবডিগুলোকে বীর্যের উপরিভাগে টেনে নেয়। এগুলো এর সাথে মিলে বীর্যকে এতটাই ভারী করে তোলে যে, তা আর সামনে যেতে পারে না। রাশিয়ায় জিএম পণ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ। তবে পাঁচ ধরনের ট্রান্সজেনিক ফসল খাওয়ার অনুমোদন আছে। জিএম ফুডের মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সেখানকার সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তারপরও মস্কো ইনস্টিটিউট অব বায়োলজি এবং ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনেটিক সেফটি যৌথভাবে একটি স্বাধীন পরীক্ষা চালায়। এরা এক বছর ধরে ইঁদুরসদৃশ প্রাণীকে খেতে দেয় ট্রান্সজেনিক সয়াবিন। একই ধরনের সয়াবিন রাশিয়ায় পশুকে খেতে দেয়। এটি আসে হল্যান্ড থেকে জিএম ফ্রি হিসেবে। এই সয়াবিন মানুষকেও খেতে দেয়া হয়। এখন এটি স্পষ্ট, এফ ফল দাঁড়াতে পারে যা প্রজনন বিলম্বিত করতে পারে। কমে যেতে পারে ভয়াবহভাবে প্রজনন ক্ষমতা। তৃতীয় প্রজন্মের প্রাণী সৃষ্টিতে নেমে আসতে পারে অক্ষমতা। ‘জিএম পণ্যের কারণে তৃতীয় প্রজন্মের প্রাণীতে প্রজনন ক্ষমতা না থাকার অর্থ, প্রকৃতি তাদের বিলুপ্তি এবং তাদরেকে আর প্রজনন করতে না দেয়া’Ñ বললেন আলেক্সান্ডার বারানভ। তিনি ইনস্টিটিউট অব বায়োলজির একজন সহযোগী। তার মতে, জিএম ফুড প্রজাতিকে ঠেলে দেবে এক ধরনের বিলুপ্তির দিকে। গবেষণার আরেকটি মজার দিক হলো, এসব পশুর মুখ গহ্বরে দেখা দেয় পাইলোমিস। অর্থাৎ মুখ গহ্বরেও জন্মায় লোম বা চুল। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন যে, মিউটেশনের কারণ জিএম ফুড। তবু বিশ্ববাসী অনেক আগেই লক্ষ করেছে যে, বিষাক্ত প্রোটিন ও মিউটেন্টের মিশ্রণ সৃষ্টি হতে পারে ট্রান্সজেনিক পণ্যে। কৃত্রিমভাবে ঢুকিয়ে দেয়া প্লান্ট জিন কী করে একটি ক্রোমোজমে কাজ করবে, সে ব্যাপারে কোনো বিজ্ঞানীই একমত হবেন না। সম্ভবত জিন প্রজন্ম যাতে মহিলারা এমন শিশু জন্ম দেবে যাদের মুখের ভেতরেও চুল থাকবে। অনেকটা কিছু ফুড প্রাণীর মতো। কিংবা তখনকার মহিলারা সন্তান ধারণে মোটেও সক্ষম হবে না। হতে পারে এ কারণেই ট্রান্সজেনিক পণ্যের রুশ ও বিদেশী উৎপাদকরা তাদের পণ্যকে জিএম পণ্য হিসেবে পরিচিত করতে ভয় পায়। এবং এর বদলে আইন লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা দেয়াকেই অগ্রাধিকার দেয় এরা। জিএম পণ্যের স্বীকৃতি দেয়ার অন্য কোনো পদ্ধতি নেই। রাশিয়ায় সন্তান ধারণে অক্ষম নারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে যেখানে ৫০ লাখ পরিবার সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম। এটি এমন যে বিল গেটসের যবষষরংয সধপযরহব তথা নরকতুল্য যন্ত্র রাশিয়ায়ও পৌঁছে গেছে। যখন মানুষ নিয়ে পরীক্ষা চালাতে বিজ্ঞানীরা ভীত, তখন প্রতিটি মানুষ আজ মুদি দোকানে যাচ্ছে, তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিণত হচ্ছে এক-একটি গিনিপিগে। রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের পরামর্শ হচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত নিরাপদ প্রমাণিত না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত জিএম ফুডের ওপর স্থগিতাদেশ কার্যকর করা হোক। বিজ্ঞানীদের এ উদ্যোগ সরকারগুলোর কাছে ফলহীন। এদিকে বিলগেটস ও মেলিন্ডা গেটস তহবিল প্রস্তুতি নিচ্ছে আরেক জিএম বোমা সৃষ্টির জন্য। এর নাম ‘ট্রান্সজেনিক গোল্ডেন রাইস’ এটিও করা হচ্ছে দাতব্য কাজের আড়ালে। অভিযোগ উঠেছে এই চাল শরীরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ ও লোহা জমা করে।’ সম্প্রতি বিল গেটস লং বিচে এক ভাষণে উল্লেখ করেন, তিনি এমন একটি ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধকের খোঁজে আছেন যা বিশ্ব জনসংখ্যায় প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনতে পারে। ভারত এসবের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মানবিক সাহায্য হিসেবে বছরে ১০ কোটি ডলারের পণ্য আনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। চীন তার দেশের বাজারে জিএম ফুড বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে কিন্তু রফতানি এখনো চলছে। স্লোভেনিয়া, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ ও গ্রেট ব্রিটেনে জিএফ পণ্য ব্যবহার হয় না। গ্রেট ব্রিটেনে জিএম ফুড, এমনকি রেস্তরাঁয় খাবারেও  লেবেল লাগাতে হবে। ইতালি ট্রান্সজেনিক বীজ কেনে না। অন্য দেশগুলোও এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির