post

মানবীয় চরিত্রের প্রকৃতি

আব্দুল আলীম

২৬ জুন ২০১৮
আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে মানুষ একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহর ঘোষণা “আমি মানুষকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা তিন-৪) সকল মানুষের সৃষ্টিকর্তা একজন হলেও মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষকে আলাদা আলাদা প্রকৃতি দিয়ে তৈরি করেছেন। আবার সকল মানুষের মধ্যে Common nature ও আছে। মানুষের চরিত্রের প্রকৃতি তার চলাফেরা, চিন্তাভাবনা, বিশ্বাসের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। মানুষ পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ বসবাস করছে। তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন তাদের একটি সাধারণ প্রকৃতি (Common nature) আছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে তাদের চরিত্র আলাদা হতে পারে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু মানুষ হিসেবে তাদের মনুষ্যত্ব একই ধরনের হওয়ার কথা। মানবীয় প্রকৃতি (Human Nature) সাধারণভাবে বলা যায়, একজন মানুষের চিন্তা চেতনা, চলাফেরা এবং কাজকর্মের মাধ্যমে যে রূপ ফুটে ওঠে তাই মানবীয় প্রকৃতি। উইকিপিডিয়ায় উল্লেখ আছে-“Human Nature refers to the Distinguishing characteristics” including ways of thinking, fetching and acting– which humans tend to have naturally” সুতরাং বুঝা যায় মানবীয় প্রকৃতি হলো- একজন মানুষের সেই সকল বৈশিষ্ট্যগুলি যার মধ্যে চিন্তা, অনুভূতি এবং কাজকর্ম জড়িত। কোন কোন জায়গায় Nature এবং behavior কে এক হিসাবে দেখানো হয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন- “Human behavior is the term used to describe a person’s action and conduct.’’ মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়- “Human behavior is like that, Everything you do and say tells the world about what’s going on inside of you..” অতএব বলা যায়- Human Nature/ behavior হল মানুষকে পরিচিত করানোর জন্য কিছু বৈশিষ্ট্যসমূহ। মানবীয় চরিত্র/প্রকৃতি ২টি উপকরণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ১.সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিশ্বাস/নিয়মকানুন। যাকে আমরা Natural Software বলতে পারি। ২.বিভিন্ন শিক্ষা বা নিয়মনীতির মাধ্যমে গড়ে ওঠে। সেটাকে আমরা বলতে পারি গধশরহম Making Software/Creating। এটা সামাজিকীকরণের মাধ্যমেও গড়ে ওঠে। Natural Software : এটি যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত সেহেতু এটা খুব কমই পরিবর্তন করা যায় (Not Changeable)। যেমন প্রাকৃতিকভাবে কেউ বেশি হাসে, কেউ কম হাসে। অনেকে বেশি কথা বলতে পছন্দ করে, আবার অনেকে চুপ থাকতে পছন্দ করে। এটা যেহেতু সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত তাই এটা পরিবর্তন করা খুব কঠিন। হতে পারে কিছুটা তবে পুরো পরিবর্তন করা অসম্ভব। অনেকে Free mind এ চলাফেরা করে। অনেকে আবার Conservative. অনেক মানুষ আছে যারা সবার সাথে মিশতে পারে। অনেকে আবার একা একা থাকতে পছন্দ করে। কারও মেজাজ খুবই গরম, কারও মেজাজ শান্ত প্রকৃতির। কোন মানুষের কণ্ঠের আওয়াজ সুমধুর, কারও কণ্ঠের আওয়াজ কর্কশ। Making Software: মানুষ তার ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা দ্বারা কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারে। যেমন- কেউ মিথ্যা কথা বলতো নিয়মিত, এটার অপকারিতা জানার পর সে এটা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ বেশি খাইতে পছন্দ করতো, কিন্তু শারীরিক সমস্যা হওয়ার কারণে কম খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আব্বা, আম্মা, প্রতিবেশী, শিক্ষক এবং সমাজের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তা সে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এটা তৈরি করা লাগে। উপরোক্ত এই ২টি বিষয় মানুষের আচরণের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। Common Thinking: যেকোন বিষয় সম্পর্কে মানুষের একটা চিন্তা থাকে। এটা তাকে শিখানো লাগে না। নিজে থেকেই মানুষ এটা চিন্তা করে। যেমন-আপনাকে একজন লোক বিকেল ৫টায় দেখা করতে বলেছে। আপনি ঐ সময় কল দিলে দেখা গেল সে তার ফোন বন্ধ রেখেছে অথবা ফোন রিসিভ করছে না। তাহলে আপনি কী মনে করবেন? সে আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছে অথবা দেখা করতে চাচ্ছে না। কিন্তু হতেও তো পারে যে, তার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেছে, মোবাইল রেখে ওয়াশরুমে গেছে। এ বিকল্প চিন্তা আপনি করছেন না। আপনি চিন্তা করছেন Negative টা। কারণ Medical Science বলে “মানুষের মন খুব সন্দেহপ্রবণ হয়”। আপনি যদি রাত ১টার সময় বিছানায় শুয়ে মোবাইলে কুরআন হাদিসও পড়েন, আপনার পাশের লোকটি মনে করবে আপনি ইউটিউবে খারাপ কিছু দেখছেন। কারণ মানবীয় প্রকৃতির কারণে সে প্রথমত ভালো ধারণা করতে সক্ষম নয়। তবে এটা ঠিক যে, মানুষের আচরণের ওপর নির্ভর করবে তার ওপর মানুষ কিরূপ ধারণা করবে। বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে অথবা বিপদে পড়ে আপনি যদি সিনেমা হলের সামনে দাঁড়ান মানুষ মনে করবে আপনি কোন ‘শো’ দেখে বের হয়েছেন অথবা শোয়ে ঢুকবেন। বোরখা পরা একজন মহিলাকে নিয়ে যদি আপনি রিকশায় যান, তাহলে অধিকাংশ মানুষ মনে করবে- এটা হয় আপনার স্ত্রী অথবা অন্য কোন ঝামেলা!! অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যাবে-এটা আপনার বড় বোন অথবা আম্মা। এগুলোর সমাধান কুরআন ও হাদিসে খুব সুন্দরভাবে দেয়া আছে। সূরা হুজুরাতে-১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা অধিক ধারণা থেকে বেঁচে থাক, নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ।” একটি হাদিসে বর্ণিত-রাসূল (সা) হযরত আয়েশা (রা)-কে নিয়ে একদিন হেঁটে যাচ্ছিলেন-অপরদিক থেকে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর সাথে কথা বলার জন্য আসছিলেন। রাসূল (সা) এর সাথে মহিলা দেখে সাহাবীরা ফিরে যাচ্ছিলেন। রাসূল (সা) তাদেরকে ডাকলেন এবং বললেন, তিনি হচ্ছেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা), তোমাদের কথা বলতে পার। এখান থেকে শিক্ষা হচ্ছে কেউ আপনার ব্যাপারে সন্দেহ করলে নিজ দায়িত্বে তার সাথে কথা বলে সন্দেহ দূর করে দিতে হবে। এসব বিষয়গুলো হয়ে থাকে মানবীয় চরিত্রের প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে। Nature অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষ চায় অন্যেরটা বাদ দিয়ে নিজে ভালো থাকতে। এটা মানবীয় চরিত্রের একটি সহজাত বিষয়। নৈতিক শিক্ষা নেয়ার পর এটা পরিবর্তন হতে পারে। “Man is Mortal” সবাই জানার পরও অধিকাংশ মানুষ সহজে মরতে চায় না। এটা মানুষের Common Nature. একজন মানুষ তার প্রিয় মানুষের সকল কার্যক্রম Positive হিসেবে দেখে। কিন্তু সে যাকে ভালোবাসে না তার প্রত্যেক কাজই তার কাছে বিরক্তিকর লাগে। প্রত্যেক মানুষ চায় তাকে কেউ বকা না দেক, কড়া কথা না বলুক। অথচ সে ব্যক্তিই অন্যকে অবলীলায় কর্কশ ভাষায় কথা বলে। একজন মানুষ সব সময় Courtesy Maintain-এর কথা বলে কিন্তু দেখা যায় তার দ্বারাই এগুলো বেশি লঙ্ঘিত হয়। এগুলো মানুষের Nature দ্বারা প্রভাবিত। একজন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো সে চায় সবাই তার প্রশংসা করুক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অন্য কারও প্রশংসা করতে রাজি হয় না। অনেকে মনে করেন আমি সবচেয়ে জ্ঞানী কিন্তু অন্যকে জ্ঞানী মনে করা খুবই কষ্টদায়ক হয়। কিছু মানুষ আছে যারা অন্যকে অনেক পরামর্শ দেয় কিন্তু নিজেকে সংশোধন করতে চায় না। হযরত আলী (রা) এ প্রসঙ্গে বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ হলো অন্যের সমালোচনা করা এবং সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো নিজেকে সংশোধন করা।” উপরোক্ত সকল কথা বললাম-মানুষের মানবীয় চরিত্র নিয়ে। এগুলো সমাজে বিদ্যমান। তবে এগুলোকে সমাধান করার নামই হলো ব্যক্তিগঠন বা চরিত্রগঠন। কেননা এর দ্বারা সমাজ প্রভাবিত হয়, প্রভাবিত হয় রাষ্ট্র। সুতরাং পরিশেষে বলতে চাই, একজন মানুষের মধ্যে এ বিষয়গুলো অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়। কেননা এটা তার প্রকৃতি। কিন্তু এগুলো অবশ্যই সমাধানযোগ্য। আর এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই ব্যক্তি হবে পরিচ্ছন্ন। সমাজ হবে কলুষমুক্ত এবং রাষ্ট্র হবে শোষণমুক্ত। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আনয়ামের ৪৮ নম্বর আয়াতে বলেন, যারা ঈমান এনেছে ও চরিত্র সংশোধন করেছে তাদের জন্য কোনো ভয়ভীতি থাকবে না এবং তারা চিন্তিত হবে না। লেখক : প্রাবন্ধিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির