post

যে স্মৃতি বেদনার ও প্রেরণার

মো: আবু তালেব

৩১ মার্চ ২০১৬
সকল প্রকার জুলুম নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে রাসূল (সা)-এর আদর্শকে বুকে ধারণ করে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। একটি আত্মনির্ভরশীল সুখী সমৃদ্ধ ও আদর্শিক জাতি উপহার দেয়াই যার একমাত্র লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঐতিহাসিক এই কাফেলার অগ্রযাত্রাকে রুখে দেয়ার জন্য অত্যাচার, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের পথ প্রশস্ত হতে থাকে। আন্দোলনের বৃক্ষকে সতেজ ও সজীব রাখার জন্য বৃক্ষের গোড়ায় রক্ত সিঞ্চন করে চলেছে কুরআনের বিপ্লবী সৈনিকেরা। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে- “ওরা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফয়সালা হলো তিনি তাঁর নূরকে পূর্ণরূপ বিকশিত করবেনই, কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন।” (সূরা সফ : ৮) আওয়ামী লীগ সরকারের পৈশাচিক নির্যাতনের কথা সাদা কাগজে লিখে হয়তো শেষ করা যাবে না। যাবে না লেখা রিমান্ড ও শাহাদাতের বিভিন্ন অপ্রকাশিত কথাগুলো। কারাগার থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৫ অর্জন করছে ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা। ইসলামী আন্দোলনের উর্বর ভূমি সাতক্ষীরা। ইসলামী ছাত্রশিবির সকল ছাত্র-জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার আদর্শিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাতিলের পাহাড় সমান ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ৩৭ জন ভাইয়ের শাহাদাত এবং অসংখ্য ভাইয়ের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা ‘শহীদি জনপদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ২০০২ সালে আমিনুর রহমান শহীদি কাফেলায় নিজের নাম লিখেছিলেন। উপশাখা, থানা শাখা, কলেজ, শহর শাখায় বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন এবং সর্বশেষ শহর শাখায় সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ২০১৪ সালে ২৭ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে শাহাদাতবরণ করে দুনিয়ার সকল মায়া ছিন্ন করে মহান আল্লাহর কাছে চলে যান। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সকাল সাড়ে ৭টা। সাতক্ষীরা শহরের সদস্য সমাবেশ। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই শহর শাখার কাজ করার জন্য আমার নাম ঘোষণা করা হলো। ভোট প্রয়োগের পর নতুন সভাপতি হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করলো। নিজেকে খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল, নিজেকে সান্ত্বনা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। শহীদি ময়দান হওয়াতে নিজেকে আরো বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। ২ শহীদের কফিন আমার কাঁধে, অনেক ভারী বোঝা কাঁধে নিয়ে মাথা টেবিল থেকে তুলতে পারিনি। হঠাৎ আমিনুর ভাইয়ের মমতাপূর্ণ সান্ত্বনায় নিজেকে নতুন করে পথচলার প্রেরণা পেলাম। শহীদ আবু হানিফ ছোটন ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ৫টা। হঠাৎ সদর দক্ষিণ সভাপতি হাফেজ মনির ভাইয়ের ফোন। ভাই আমার এক কর্মী আবু হানিফ ছোটনকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। সদর থানার ওসি এনামুল হকের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে উনি কিছুই জানেন না বললেন। ডিবির ওসি আব্দুল হান্নানের কাছে জানতে চাইলে উনিও বিষয়টা অস্বীকার করেন। কেন্দ্র, স্থানীয় দায়িত্বশীলদের বিষয়টা অবহিত করি। আমিনুর ভাইকে ডিবি অফিস ও থানায় সাংবাদিক পাঠিয়ে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে বলি। রাত যত গভীর হচ্ছে অজানা আশঙ্কা ভর করছে। রাত্র সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমিনুর ভাই, আমি, স্থানীয় মুরব্বি ও সাংবাদিকসহ সকল প্রকার মাধ্যমে গ্রেফতারের বিষয়টা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। ফজরের আজানের শব্দের সাথে সাথে ভোমরা স্থলবন্দর, রাসেল স্কয়ারের নিকটে গুলির শব্দ হয়। আজানের পরই মনির ভাইয়ের ফোন! অজানা আশঙ্কায় ফোন রিসিভ করলাম। অপর প্রান্ত থেকে কান্নাজড়িতকণ্ঠে জানালো পুলিশের গুলিতে ছোটন ভাই শাহাদাত বরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। আমিনুর ভাইসহ স্থানীয় মুরব্বি ও কেন্দ্রকে জানালাম। আমিনুর ভাইকে ছোটন ভাইয়ের বাড়িতে পাঠালাম। হাসপাতালে নিকটতম আত্মীয়দের পাঠাতে বললাম। দুপুরে শহীদ ছোটন ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছাই। নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছিল। মাকে কী দিয়ে সান্ত্বনা দেবো। ক্রন্দনরত মায়ের প্রশ্নের কী জবাব দেবো। অজানা ভাবনায় নিজেকে আবিষ্কার করি গন্তব্যহীন পথিক হিসেবে। একসময় মায়ের সামনে হাজির হই। একটু আগেই যে মাকে সান্ত¡না দেয়ার বিভিন্ন ভাষা আবিষ্কার করার চেষ্টায় নিজেকে অন্য ভুবনের মানুষ মনে হয়েছিল। মা আমাকে সান্ত¡না দিয়ে বললেন, বাবা আমি তো গর্বিত আমার ছেলে শাহাদাত বরণ করেছে। আল্লাহ আমাকে শহীদের মা হওয়ার সৌভাগ্য দিয়েছেন। আমার এক ছোটন শহীদ হয়েছে তাতে কী হয়েছে, তোমরা অনেক ছোটন তো আমার পাশে অপেক্ষমাণ। আমাকে দেখ! আমি তো কাঁদছি না। তোমরা কেন কাঁদছো? আমার ছোটন যে এত ভালো ও সুন্দর ছেলেদের সাথে মিশত তা যদি আগে জানতে পারতাম তাহলে আল্লাহর কাছে অনেক অগেই তার শাহাদাতের জন্য দোয়া করতাম। যাতে তোমাদের মতো জান্নাতি মানুষের সাথে আরো অনেক আগে দেখা হতো। শহীদ আবু হানিফ ছোটন নবম শ্রেণীর একজন ছাত্র। এত অল্প বয়সে কী অপরাধ করেছিল? সরকার উৎখাতের জন্য কী ষড়যন্ত্রই করেছিল? অথবা সরকারধ্বংসের কী পরিকল্পনার কথা তার জানা ছিল? তাকে গ্রেফতার করে রাতভর অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়। এমন কী তথ্য তার কাছে জানতে চেয়েছিল? হয়তো এমন কোনো তথ্য জানতে চেয়েছিল, যে তথ্যের জন্য হয়ত সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত। সে তথ্য না দেয়াতে তাকে রাতভর সমস্ত শরীরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়েছে এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। বাস্তব সাক্ষী তার ক্ষত-বিক্ষত দেহখানা। এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি, যেখানে একজন মানুষ মারার জন্য একটা বুলেটই যথেষ্ট, সেখানে ঐ ছোট্ট দেহে ৭টি বুলেট মেরে ঝাঁঝরা করে দেয়। মনে করিয়ে দেয়, হযরত খোবায়েব (রা)কে শূলে চড়ানোর আগে বলা হয়েছিল, তোমার এই স্থানে যদি মোহাম্মদকে নিয়ে আসা হয়? মৃত্যুর পথযাত্রী খোবায়েব সেদিন বলেছিলেন, আমার শরীরে একফোঁটা রক্ত থাকতে আমার প্রিয় রাসূল (সা)-এর কোনো ক্ষতি হতে দেবো না এবং সহ্যও করবো না। স্থানীয় সবাই বললো, জানাজা সংক্ষিপ্ত করার জন্য। আমি ও আমিনুর ভাই সিদ্ধান্ত নিলাম। আল্লাহ-তায়ালা যাকে সম্মান দিয়েছেন, আমরা সেই ভাইকে এভাবে বিদায় দিতে পারি না। আমিনুর ভাই ঘোষণা দিলেন, জানাজার আগে সমাবেশ হবে, পরে দাফন করা হবে। সেদিন আমিনুর ভাইয়ের সাহসী ভূমিকায় আমাদের প্রিয় ভাইকে একটু হলেও তৃপ্তি সহকারে বিদায় দিতে পেরেছিলাম। শহীদ আমিনুর রহমান ৩৭ শহীদের পুণ্যভূমি, ইসলামী আন্দোলনের উর্বর ভূমি সাতক্ষীরা জেলা। ৩৭ শহীদের মিছিলে হয়ত একজন নেতার প্রয়োজন ছিল। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দা আমিনুর রহমানকে শহীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাছাই করেছেন। শহীদ আমিনুর, শাহাদাতের চেতনায় উজ্জীবিত একটি নাম, বিস্ময়কর প্রতিভা ও জীবন্ত ইতিহাস। শহীদ আমিনুরের রেখে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের কাছে কষ্টের, বেদনার ও প্রেরণার। আমিনুর ভাই একদিন মাকে একান্তে ডেকে বলেছিলেন: “ওমা, মাগো, তোমার তো অনেক সন্তান। তুমি আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করো না। আমার যদি কোন দিন কিছু হয়ে যায়, তুমি কোনো কষ্ট পাবে না তো? কেননা আমার তো অনেক ভাই আছে তাদেরকে নিয়ে তুমি ভালো থেকো। মা কান্নাজড়িতকণ্ঠে বললেন, আজ থেকে আমি তোকে আল্লাহর পথে দিয়ে দিলাম।” শাহাদাতের তামান্না যদি কোন মুমিনের জীবনে থাকে, তিনি আল্লাহর পথে গাফেল হতে পারেন না। কারো জীবনে তামান্না আছে কি না তা তার কর্মতৎপরতায় পরিলক্ষিত হয়। দুনিয়ার কোনো লোভ-লালসা, ভয়ভীতি তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। আমিনুর রহমান ছিলেন সেই শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত একটি নাম। ১৮ মার্চ ১৯৮৪ সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার রঘুনাথপুর গ্রামে মধ্যবিত্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১২ ভাই বোনের মধ্যে ১১তম। ২১১তম শহীদ। শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী। নবযুগ শিক্ষা সোপান থেকে ২০০২ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। ২০০৪ সালে শ্যামনগর সরকারি মুহসীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে ২০০৯ সালে (বিএ সম্মান) এবং খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১১ সালে এমএ (বাংলা) সমাপ্ত করেন। সাতক্ষীরা ল কলেজে আইনের ছাত্র ছিলেন। আমিনুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। স্বপ্ন ছিল সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সকল স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলো জুলুমবাজ সরকারের হিং¯্র থাবা। দুনিয়ার কোন সফলতা, আখেরাতের তুলনায় যার কাছে ছিল মূল্যহীন। তাইতো দুনিয়ার কোন মোহ বা পুরস্কার তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি আন্দোলনের সাথে সাথে পরিবার ও সমাজের মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য নিজে ছুটে যেতেন। পরিবারের একমাত্র আস্থা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অসুস্থ বোনকে নিজে রক্ত দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রক্তদাতার নাম জানাতে নিষেধ করেন। এভাবে পরিবার ও সমাজের মানুষের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। অসুস্থ মানুষের দেখার জন্য ছুটে যেতেন হাসপাতাল ও বাসাবাড়িতে। এলাকার যেকোনো সমস্যায় আমিনুর রহমান ছুটে যেতেন তাদের পাশে এবং সমাধানের চেষ্টা করতেন। এলাকায় সকল মানুষের আস্থার একটি নাম আমিনুর রহমান। তারা আমিনুর রহমানকে এলাকার জনগণের নেতা হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। আমানতদারি ও তাকওয়ার ব্যাপারে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য রাতের অন্ধকারে কত যে বেশি সেজদা দিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন তা তার শাহাদাতই স্পষ্ট প্রমাণ। নিয়মিত কুরআন হাদিস অধ্যয়ন, নফল রোজা ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করতেন। কুরআন-হাদিসের আলোকে নিজের জীবন পরিচালনায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আমানতের ব্যাপারে স্বচ্ছচিন্তার অধিকারী ছিলেন। আমি কোন একটা বিশেষ কাজে কিছু টাকা দিয়েছিলাম। আমি জানতাম সকল টাকা নির্দিষ্ট কাজে খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু শাহাদাতের পর দুইজন ভাই অর্থ সম্পাদকের কাছে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছিল। তারা বললো, আমিনুর ভাই শাহাদাত বরণ করার আগে এই টাকা আমাদের কাছে রেখেছিলেন। আমিনুর ভাই টাকা রাখার পর অর্থ সম্পাদকের সাথে সমন্বয় করেছিলেন। শাহাদাতের দুই দিন আগে পর্যন্ত নিজ ডায়েরিতে সংগঠনের সকল হিসাব সংরক্ষিত ছিল। ব্যক্তিগত রিপোর্ট লেখা ছিলো ২৪ এপ্রিল ’১৪ পর্যন্ত। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি। তৎকালীন থানা সেক্রেটারি আব্দুল আলিম ভাইয়ের কাছে কর্মী কন্টাক্ট দেন। ৫ দফা কর্মসূচি, কর্মীর শর্ত, কেন শিবির করবে ইত্যাদি প্রশ্ন করার পর মেহমান আমিনুর ভাইকে কর্মী ঘোষণা করেন। সেই থেকে আমিনুর রহমান শহীদি কাফেলার কর্মী। নবযুগ স্কুল সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ২০০১-০৪ সাল পর্যন্ত কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন সেক্রেটারি। সেক্রেটারির দায়িত্বরত অবস্থায় সংগঠনের সাথী শপথ নেন। ২০০৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। ২০০৭ কালিগঞ্জ পূর্ব থানা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কঠোর পরিশ্রমে থানা শাখার কাজকে জেলার দৃষ্টিগোচরে আনতে সক্ষম হন। পাশের থানা, আশাশুনি সংগঠন মজবুতির জন্য হিজরত করিয়ে ২০০৮ সালে আশাশুনি থানা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আশাশুনি থানা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে আশাশুনি থানা শাখাকে সংগঠনের মজবুত ঘাঁটি তৈরি করতে সক্ষম হন। আশাশুনির দায়িত্ব পালনকালে ২০০৮ সালে সংগঠনের সর্Ÿোচ্চ শপথ (সদস্য) নিয়েছিলেন। ২০১০ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্ভীক সাহসিকতার সাথে সরকারি কলেজের কাজকে এগিয়ে নিতে কঠোর পরিশ্রম করেন। ২০১১ সালের জুন, সাতক্ষীরা শহর শাখার ছাত্রকল্যাণ ও ফাউন্ডেশন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ফাউন্ডেশনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দিন-রাত পরিশ্রম করেন। ২০১২ সালে শহরের স্কুল ও প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আমিনুর ভাইয়ের পদচারণায় শহরের স্কুলগুলো মুখরিত ছিল। তার একটাই চিন্তাধারা ছিল শহরের স্কুলে কোমলমতি ছাত্রদের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছানো। ২০১৩-১৪ সাল শহরের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনকালে ২৭ এপ্রিল ’১৪ শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত তিনি একজন সফল সংগঠক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। স্কুল সভাপতি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন সেক্রেটারি, সভাপতি, থানা সভাপতি কলেজ সেক্রেটারি, সভাপতিসহ শহরের বিভিন্ন বিভাগে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠা ও পরিশ্রমপ্রিয়তার কারণে সকল জায়গায় সংগঠনকে গড়তে সক্ষম হয়েছেন। সে কারণে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা বারবার ভিন্ন ভিন্ন শাখা মজবুতি অর্জনের জন্য আমিনুরকে বেছে নিয়েছেন। সর্বশেষ শহর স্কুল সম্পাদক থেকে শহর সেক্রেটারি হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। যিনি সর্বদা বৈষয়িক কাজের চেয়ে সাংগঠনিক কাজকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। আল্লাহর হুকুম পালনে সদা তৎপর.. “তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকতে হবে, যারা নেকি ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে।” (সূরা আল ইমরান : ১০৪) সাতক্ষীরা শহর শাখায় নির্ভীক, সাহসী একটি নাম আমিনুর রহমান। সরকারি কলেজে দায়িত্ব পালনকালে প্রতিটি মুহূর্ত পেরেশানির মধ্যে কাটাতেন দায়িত্বশীলরা। কিন্তু আমিনুর রহমানের পদচারণায় মনে হতো কোনো ভয় তাকে তাড়া করতে পারেনি। অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপের জন্য কঠিন সময়েও সরকারি কলেজের অবস্থান ভালো ছিল। ২০১৩ সালে সাতক্ষীরার আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আমিনুর রহমান সদা তৎপর ছিলেন। ২০১৩ সালে নব মনোনীত সভাপতি মো: রোকনুজ্জামান ভাইয়ের পা ভেঙে যাওয়া, ২০১৩ সালের কেন্দ্রীয় সভাপতি গ্রেফতার, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়, শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে সাতক্ষীরায় আন্দোলনের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমিনুর রহমান। সারা বাংলাদেশ থেকে সাতক্ষীরা বিচ্ছিন্ন আন্দোলনের অগ্রসৈনিকের দায়িত্ব পালন করেন আমিনুর রহমান। শহরের যে স্পটে মিছিল ও পিকেটিংয়ে সমস্যা ও ঝুঁকিপূর্ণ মনে হতো, নিজে সেই এলাকা বেছে নিয়ে আমাকে ঝুঁকিমুক্ত স্থানে পাঠাতেন। একাধারে তিনি ছিলেন একজন ভালো আলোচক। নিয়মিত মিটিংয়ে তার আলোচনায় কর্মী ও সাথীরা খুঁজে পেত কাজের প্রেরণা ও মানোন্নয়নের আকাক্সক্ষা। অবরোধে দীর্ঘ সময় অবস্থানে জনশক্তির প্রেরণা ছিল আমিনুর ভাইয়ের আলোচনা। সাহসী নেতৃত্ব ও আলোচনার মাধ্যমে ১৮ দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সকল স্তরের মানুষের কাছে একজন সফল নেতা হিসেবে অল্প দিনে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হন। গ্রেফতার, মিছিলে গুলি ও প্রশাসনের ঘোষণা সভাপতি, সেক্রেটারিকে যেখানে পাবে গুলি করে মারবে। কোন কিছুই যেন তাকে দমাতে পারেনি। যেন হার না-মানা এক নাম। এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও কেন্দ্রের সকল কর্মসূচি সফল করার ব্যাপারে আপসহীন। ১৮ জানুয়ারি ২০১৪ যৌথ বাহিনীর গুলিতে শাহাদাতবরণ করেন শহর শাখার কর্মী আবু হানিফ ছোটন। আমিনুর ভাই অশ্রুসিক্ত নয়নে শহীদ ছোটন ভাইয়ের কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করেন। আমিনুর ভাই স্পষ্ট ঘোষণা করেন, এক আবু হানিফ ছোটন নয়, প্রয়োজন হলে অনেকে শহীদ হতে প্রস্তুত, শহীদ করে আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে রোধ করা যাবে না। কে জানতো দীপ্তকণ্ঠে স্মৃতিচারণকারী ব্যক্তিটি তিন মাস পর শাহাদাত বরণ করে নিজেই স্মৃতিচারণের পাত্র হবেন। সেদিন আমিনুর ভাইয়ের সাহসী ভূমিকায় আমরা আমাদের প্রিয় ভাইকে সকল ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে সন্তোষজনকভাবে বিদায় দিতে পেরেছিলাম। কবি গোলাম মোস্তফার ভাষায়Ñ “কেউ বা হবে সেনানায়ক গড়তে নতুন সৈন্যদল সত্য ন্যায়ের অস্ত্র ধরি, নাই বা থাকুক অন্যবল।” ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে শহীদ পরিবারে শীতের কাপড় দেয়ার চিন্তা করলাম। সবাই পরামর্শ দিলো গর্বিত মায়েদের জন্য ভালো চাদর কেনার। তখন পর্যন্ত শহরে শহীদসংখ্যা তিনজন। কিন্তু আমি ৪টা চাদর কিনতে বললাম। চিন্তা করছিলাম আমার প্রিয় সেক্রেটারি আমিনুর ভাইয়ের মাকে একটা চাদর দেবো। আমিনুর ভাই অনেকবার প্রশ্ন করলেন, ভাই শহীদ তো তিনজন কিন্তু চাদর ৪টা কেন? আমি কোন প্রশ্নের উত্তর সেদিন দেইনি। একদিন আমিনুর ভাই বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি চাইলেন। আমি উনাকে না জানিয়ে ব্যাগের ভেতর চাদরটা দিয়ে দিলাম। বাসায় গিয়ে আমিনুর ভাই ফোন দিলেন ভাই আমার ব্যাগে চাদর? আমি বললাম চাদরটা মাকে দেন এবং ফোনটা দেন। ভাই আমাকে বললেন, এ চাদর তো শহীদ পরিবারের জন্য ক্রয় করা কিন্তু আমার মাকে কেন দিলেন? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার কাছে ছিল না। আমি হেসে ফোনটা মাকে দিতে বরলাম। মাকে বললাম, মা আপনার জন্য একটা চাদর পাঠালাম। মা বললেন, এসব কী দরকার ছিল। আমি যদি ঘুণাক্ষরে বুঝতে পারতাম এ চাদর আবৃত মায়েরাই হবেন শহীদের গর্বিত মা! তাহলে আমি চাদরটা আমিনুর ভাইয়ের মাকে দিতাম না। আজ সেই ৪টা চাদর ক্রয়ের প্রশ্নের উত্তরটা খুঁজে পেলাম। কিন্তু যিনি বারবার প্রশ্ন করছিলেন তার সেই প্রশ্নের উত্তরটা আর জানানো হলো না। ২৭ এপ্রিল ২০১৪। কেন্দ্রের নিয়মিত সফর। রাত্রে দেলোওয়ার ভাই জানালেন আগামীকাল খুলনা মহানগর সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী ভাই আপনাদের শাখায় সফর করবেন। ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। আমি ও আমিনুর ভাই একত্রে সে কন্টাক্ট এবং সাথী পাঠচক্রের স্থান ও সময় ঠিক করি। ফারাজী ভাই সকাল ১০টায় পৌঁছান। সফরসঙ্গী ছিল আক্তার হোসেন। ২ স্থানে কন্টাক্টের ব্যবস্থা করা হয়। ১২টা পর্যন্ত সিটি কলেজ মেসে কন্টাক্ট হয়। এরপর ফারাজী ভাইকে নিয়ে আমিনুর ভাইয়ের ওখানে পৌঁছে দিয়ে আসি। নিরাপত্তার বিষয়গুলো ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞাস করি এবং ভালোভাবে মেহমানদারি করার কথা বলি। কন্টাক্ট শেষ হলে আমাকে ফোন দিতে বলি। প্রায় তিনটায় কন্টাক্ট শেষ হয়। আমি ভাইকে নিয়ে কামালনগর মেসে যাই এবং আমিনুর ভাইকে খাবার নিয়ে আসতে বলি। বাসায় পৌঁছে জোহরের নামাজ আদায় করলাম। ভাই পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চান। খাওয়া শেষ হলে পেছনে এক বাসায় বিশ্রাম নেবো। ৪টায় পাঠচক্র। প্রশ্ন করলো কত দূর? ৩ কিলোমিটার। রাত্রে এক বাসায় থাকবো। এর মধ্যে আমিনুর ভাই খাবার নিয়ে চলে এলেন। খাওয়া শুরু করলাম। আমিনুর ভাই মেহমানদারি করছেন। ফারাজী ভাই আমিনুর ভাইকে আমাদের সাথে বসার জন্য পীড়াপীড়ি করলেন। ইতঃপূর্বে আমিনুর ভাই কোনো মেহমানের সাথে বসে খেতেন না। মেহমানকে নিজে হাতে খাইয়ে পরে নিজে খেতেন। কিন্তু আজ ঘটলো ব্যতিক্রম। সবাইকে খাবার উঠিয়ে দিয়ে পরে নিজে নিচ্ছেন। ফারাজী ভাই আমিনুর ভাইয়ের থালায় একটা চিংড়ি, কলিজা এবং আমি একটা চিংড়ি মাছ তুলে দেই। কে জানতো এটাই হবে আমিনুর ভাইয়ের শেষ খাওয়া। খাওয়ার পরে ভাইকে পেছনের বাসায় বিশ্রামের জন্য নিয়ে যেতে চাই, ভাই বললো এখানে তো ভালো আছি, আর ৪টায় পাঠচক্র সময়ও তো কম, এখানেই থাকি। বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিট। হঠাৎ গেটে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিলো, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে বললাম খুলেন না। এর মধ্যে বাইরে তাকিয়ে দেখি ৪-৫ জন রাইফেল হাতে পাঁচিল টপকে ভেতরে প্রবেশ করলো। সাথে সাথে ২৫-৩০ জন ডিবি পুলিশ অস্ত্র তাক করে ঘিরে ফেললো। মুহূর্তের মধ্যে শতাধিক পুলিশ বাড়ির ভেতরে বাইরে অবস্থান নিলো। আমি গেটের কাছে দাঁড়ালাম ডিবি ওসি আব্দুল হান্নান আমাকে বললেন, তালেব তুমি এখানে থাক? আমি বললাম জি। ঘরে প্রবেশ করতে করতে জিজ্ঞাস করলেন খুলনা থেকে ২ জন আসছে তারা কই? সবাইকে এক রুমের মধ্যে নিয়ে গেল। আমি ও আমিনুর ভাই ২ জন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমার ও আমিনুর ভাইয়ের গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি ছিলো। উনি আলনা থেকে আমার একটা টি-শার্ট পরলেন। আমি আমিনুর ভাইকে আলনা থেকে একটা টি-শার্ট দিতে বললাম। এটাই আমি ও আমিনুর ভাইয়ের মাঝে শেষ কথা। আবার সকলের উদ্দেশে জানতে চাইলো খুলনা থেকে ২ জন আসছে তারা কোথায়? এর মধ্যে ফারাজী ভাই বললেন আমি এবং আক্তার। পরিচয় জানতে চাইল, ফারাজী ভাই আজিজুর রহমান বললেন, সাবেক সদস্য খুলনা। ভাইকে তিনটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন আমি কিন্তু তোমার পরিচয় জানি। সত্য না বললে আমরা  বের করতে পারি। সকলের হাতে হ্যান্ডকাফ পরায় এবং পরিচয় শোনে ও লেখে, আমি ছাড়া। কেননা আমাকে তারা পূর্ব থেকে চিনত। আলমারির চাবি, গাড়ির চাবি কোথায় আমার কাছে জানতে চায়। এক এক করে সকলের নাম, ঠিকানা ও দায়িত্ব জানতে চায়। আমিনুর ভাই নাম, ঠিকানা ও শহর সেক্রেটারি পরিচয় দেয়ার সাথে সাথে পিস্তল দিয়ে বুকে ধাক্কা দেয় এবং বলে তুই কি পিস্তল ব্যবহার করিস? তোর কাছে পিস্তল থাকে, কই? হঠাৎ বাইরে গুলির শব্দ। তারা বলল ঐ তোদের লোকজন গুলি করছে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দ, আমার বুঝতে বাকি রইল না বড় কোন ঘটনা অপেক্ষমাণ। প্রথমে আমাকে চোখ বেঁধে বাইরে নিয়ে গেল। আমিনুর ভাই বললেন, ভাইকে বাইরে নিয়ে গেছে মেরে ফেলতে পারে। প্রচন্ড গুলির শব্দের মাঝে হঠাৎ চিৎকার শুনলাম, অনুমান করলাম কাউকে গুলি করছে। এক এক করে সকলের পায়ে গুলি করলো সকলের আর্তচিৎকারে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। সর্বশেষ আমার পায়ে গুলি করলো, ২য় গুলির পরে নিজেকে দাঁড় করে রাখতে পারলাম না, পড়ে গেলাম। মনে হলো এটা যুদ্ধক্ষেত্র। মাত্র ১০ মিনিটে প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি করেছে। আমার চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে হাতে পিস্তল দিয়ে ছবি তুলল। আমি ঘরের ভেতর ও বাইরের পরিবেশটা দেখার চেষ্টা করলাম। বাইরে তাকাতেই চোখ দাঁড়িয়ে গেল। আমিনুর ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে। আমিনুর ভাইকে ৪ জন হাত-পা ধরে বাইরে নিচ্ছে। আমি বুঝে ফেললাম আমিনুর ভাই শাহাদাত বরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় ভাইকে দেখে নিলাম মনে হলো পৃথিবীর সব থেকে ভারী বোঝা আমার কাঁধে। নিজের কাছে নিজেকে ব্যর্থ দায়িত্বশীল বলে মনে হলো। আমার চোখের সামনে আমার সেক্রেটারি শাহাদাত বরণ করেছেন। এক এক করে সাতজন (আজিজুল ইসলাম ফারাজী, আমি, ইমরান হোসেন, আব্দুল গফুর, আক্তারুজ্জামান, নূর মোহাম্মাদ এবং আব্দুস সবুর) পুলিশের কাঁধে ভর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠলাম। ফারাজী ভাই অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার পরে বললেন, আপনি আছেন? আমি ভাবলাম আপনি নেই। আমি বললাম, আমিনুর ভাই নেই। আমিনুর ভাইকে যখন আমাদের সাথে অ্যাম্বুলেন্সে নিলো না তখন শাহাদাতের বিষয়টা প্রায় নিশ্চিত হলাম। যে ভাইটি আমাকে না বলে খাবার খেতেন না। সেই ভাইটি আমাকে না বলে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। হাসপাতালে নেয়া হলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার করা হলো, ছাত্রশিবিরের সাথে বন্দুকযুদ্ধে শিবিরের শহর সেক্রেটারি আমিনুর রহমান নিহত হয়েছে এবং বাকি সাতজন গুলিবিদ্ধ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির