post

রোডমার্চে জনতার ঢল দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায় জনতা

১৫ নভেম্বর ২০১১
হারুন ইবনে শাহাদাত নির্বাচিত সরকার মানেই গণতান্ত্রিক নয়- এ কথার সত্যতা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে কী নামে ডাকা হবে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সে সংক্রান্ত কোনো অধ্যায় এখনো সংযুক্ত হয়নি। এ দায়িত্ব বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদেরকেই নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশে এখন চলছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ডিজিটাল শাসন। এ শাসনব্যবস্থায় জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না, জনগণকে শাসন করার জন্য এমন এক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট Abraham Lincoln এর গণতন্ত্রের সংজ্ঞা Democracy is the government of the people, by the people, for the people.' বদলে হয়ে যায়, Democracy is the government off the people, buy the people,far the people.  গণতন্ত্রের এ ডিজিটাল এ সংজ্ঞায় মহাজোটের শাসনে চলছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক দলন পীড়নের বিশেষ বিশেষ অনুষঙ্গ যোগ হচ্ছে প্রতিদিন। লক্ষ্য ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। ক্ষমতার নরম কেদারায় বসলে দুর্নীতিবাদ রাজনীতিবিদরা অতি প্রাচীনকাল হতেই এ রোগে আক্রান্ত হন। কারণ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ রক্ষার আর কোন উপায় তাদের থাকে না। তবে ইতিহাসের শিক্ষা হলো ক্ষমতা কারো জন্যই চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। পরিণতিতে ইতিহাস বার বার ফিরে আসে তার নিমর্মমতা নিয়ে। অল মাইনাস ওয়ান প্লাসের রাজনীতি ১/১১ পর শুরু হয়েছিল টু মাইনাসের রাজনীতি। টু মাইনাসের সেই কারিগরেরা নিজেরাই মাইনাস হয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এখন চলছে অল মাইনাস ওয়ান প্লাসের রাজনীতি। সরল অঙ্কের নিয়ম হলো, একটি একটি অংশ শেষ করা। এক একটি পর্ব শেষ হলে বিশাল সরল অঙ্ক ছোট হতে হতে যখন শেষ হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল আসে এক অথবা শূন্য। এবারের কারিগরেরা হয় তো অঙ্কের ফল এক পাওয়ার লক্ষ্যে শুরু করেছেন। অর্থাৎ দেশ শাসন করবে একটি রাজনৈতিক দল, রাজনীতিও করবে একটি দল। আর কোন দলের অস্তিত্ব স্বীকার করতে রাজি নয় বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারা খুব ভাল করেই জানে এক সাথে সবাইকে শেষ করা যায় না। তাই একটি একটি করে শেষ করতে চাচ্ছে। ঠিক সরল অঙ্কের মতো। তাদের প্রথম টার্গেট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আর এ লক্ষ্যেই তারা তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু করেছে, এ দলের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার। অঙ্কটিকে একটু এগিয়ে রাখার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় সংসদের সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি নেতা আবদুল আলীমের বিরুদ্ধেও চলছে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করতে ফ্যাসিবাদী সংগঠন নির্মূল কমিটির মতো এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে মহাজোট সরকার। জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এ রাজনৈতিক দলের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল মিটিংয়ে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। গ্রেফতার করার পর তাদের সাথে অমানবিক ব্যবহার করছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এমন আচরণকে সুস্পষ্ট মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করলেও সরকার থামছে না, অদম্য উৎসাহে সামনে এগিয়ে চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দলীয় সন্ত্রাসী ও কিছুসংখ্যক অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যকে আরো উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বরাবরই চ্যাম্পিয়ন। অথচ পুলিশের সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের পর সেই দলের অফিসে গিয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রচার সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের গ্রেফতার, পুলিশ কর্তৃক অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় হতবাক হয়েছেন, এদেশের গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তা করেন এমন প্রতিটিই বিবেকবান মানুষ। গত ২০ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই-এর সংবাদপত্র পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান আজকের সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গণতান্ত্রিক চেতনা হৃদয়ে লালনকারী সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধি রয়েছে। তাদের রাজপথে মিছিল করতে দেবেন না এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র। রাজপথে দলীয় কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও নতুন নয়, জামায়াতের সাথে এমন ঘটনা ঘটানোর পর তাদের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে নেতাদের গ্রেফতার করে সরকার গণতান্ত্রিক চেতনায় আঘাত করেছে। তিনি এবং অনুষ্ঠানের উপস্থাপক এক সময়ের ছাত্রলীগের তুখোড় নেতা দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক মতিউর রহমান জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ১৯ দিনের রিমান্ডে দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, অনেক দিন আমরা কোনো রাজবন্দীর মুখ দেখি না। পীর হাবিবুর রহমান ওপরে উল্লিখিত টকশোতে বলেছেন, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের চেয়েও বেশি এগ্রেসিভ কথা বলেন। তার বক্তব্যে পুলিশ উৎসাহিত হয়। তিনি তাকে আরো সহনশীল ও গণতন্ত্রমনা হওয়ার অনুরোধ করেছেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের সময় রাজপথে পুলিশ দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে এ সরকার। রাজনীতি বিশ্লেষকগণ মনে করেন জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে এমন আচরণ করে তারা দেশবাসীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চান। এর মাধ্যমে তারা দেশবাসীকে এই বলে সতর্ক করতে চাচ্ছেন যে, তাদের অন্যায়ের সমালোচনা করলে কারো রক্ষা নেই। অতএব তোমরা চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকো। এভাবে তারা একে একে প্রতিবাদী সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে নির্মূল করে অল মাইনাস করে ওয়ান প্লাসের রাজত্ব কায়েমের দিবাস্বপ্ন দেখছে। আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস নেই কেড়ে নেয়া হয়েছে ভোটের অধিকার গত ৩০ জুন সোয়া দুই ঘণ্টা কসরত করে জাতীয় সংসদে আমূল পাল্টে ফেলা হয়েছে সংবিধানের খোলনলচে। এই পাল্টানোর খেলা সাঙ্গ হয়েছে সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করার মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা সমস্বরে বলে চলেছেন, সংবিধান সংশোধন করে তারা দেশের জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছেন। অথচ জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্যই সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন সন্তোষজনক হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছে দেশে-বিদেশে। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি)-এর নির্বাচন চিহ্নিত হয়েছে কলঙ্কিত হিসেবে। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে ‘জয়লাভ’ করেছে। পক্ষান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই সদ্যবিদায়ী ক্ষমতাসীন দল জিততে পারেনি। এর থেকেই স্পষ্ট হয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা তুলনামূলকভাবে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের ৯০ শতাংশ মুসলমান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা জাতির অংশগ্রহণের কথা মাথায় রেখেও বলা যায়, মুসলমান মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। এই মুসলমান মুক্তিযোদ্ধারা মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সেদিন অস্ত্র হাতে শত্রু নিধন করেছিল এবং এই অবিচল বিশ্বাস হৃদয়ে ধারণ করেই রণাঙ্গনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। সংবিধানের এ সংশোধনীকে যদি ‘জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা’ বলা হয়, তবে জনগণের আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করা বলতে কী বোঝাবে? সংবিধান সংশোধন করলে সেই সংশোধনীর ওপর গণভোট হবে এটাই ছিল আমাদের সংবিধানের বিধান। কিন্তু জনগণের প্রতি আস্থা না থাকায় আওয়ামী লীগের মহাজোট গণভোট দেয়ার সাহস করেনি। ব্যর্থতার পাল্লা বাড়ছে ফুঁসে উঠছে জনতা সরকার নির্বাচনের আগে জনগণকে দেয়া কোন ওয়াদাই পূরণ করতে পারেনি। যতই দিন যাচ্ছে তাদের ব্যর্থতার পাল্লা বাড়ছে। প্রতিনিয়তই হত্যা-খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, গুম, ছিনতাই বেড়েই চলছে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধিসহ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এ সরকারের ৩২ মাসের শাসন আমলে সংঘটিত খুনের সংখ্যা ৮ হাজার ৯৮৮ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জন মানুষ খুন হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশে এসিড সন্ত্রাস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সরকারের আমলে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩২০ জন। মহাজোট সরকারের ৩২ মাসের শাসন আমলে সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আওয়ামী সরকারের আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের সংখ্যা ১৩২৬ জন। মহিলা ধর্ষিত হয়েছে প্রায় দেড় হাজারের মত। পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে প্রায় ৪০০ জন। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়ির আইনজীবী এম ইউ আহমদকে রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে। পুলিশি নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিনি। ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে সাড়ে ৩ শ’ জনের মতো। সরকার নিজ দলের নেতা-কর্মীদের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। চাঞ্চল্যকর দুটি হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামির দণ্ডাদেশ মওকুফ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। খুন করলেও সরকারি দলের সদস্য হলে সব মাফ হয়ে যাবে, এমন মেসেজই দেয়া হয়েছে খুনিদের ক্ষমা করে। সরকারের আড়াই বছরে গণপিটুনিতে কলেজ ছাত্রসহ ৩৭৭ জন নিহত হয়েছে। শিশু ও রাজনৈতিক নেতাসহ ৫ হাজার ১৪০ জনকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ৪ শ’। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নেয়ার পর নিখোঁজ হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। সরকারের আমলে আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে পুলিশি নির্যাতনের মাত্রা চরমরূপ লাভ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা যায় নিত্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন ১শ’ শতাংশ থেকে ২শ’ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে এক লাফে পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি এই বর্ধিত মূল্য কার্যকর করা হয়েছে। চলতি বছরের সাড়ে ৮ মাসের মধ্যে ফার্নেস অয়েলের দাম ৪ দফায় প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে ২৬ টাকা থেকে ৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির একদিন পরই সিএনজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে, বলা হচ্ছে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার রিভার্জ কমছে প্রতিদিন। সরকারকে ঋণ দিতে দিতে শূন্য হচ্ছে ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ১৯ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন অগ্রণী ব্যাংক অন্যান্য তফসিলি ব্যাংক বা কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিয়েছে ১ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এজন্য সুদ গুনতে হয়েছে ১৫ শতাংশ। একই দিন সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ৮৩৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ২৯০ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংক নিয়েছে ৫০ কোটি টাকা। একদিনে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক ধার করেছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এদিন বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধার ছিল উত্তরা ব্যাংকের। তারা নিয়েছে ৪১৫ কোটি টাকা। এজন্য দিতে হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ সুদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি খাতের ২১টি ব্যাংক রোজই ধারদেনায় নিত্যদিনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দু-একটি আবার কলমানি বাজার থেকে কম সুদে ধার নিয়ে বেশি সুদে দিচ্ছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানিগুলোও এখন বড় ধরনের আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে আছে। লিজিং কোম্পানিগুলো গড়ে দৈনিক সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি টাকা ধারদেনা করছে। কলমানি বাজারে অর্থের বড় জোগানদাতা এখন বিদেশী ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশী ব্যাংকগুলো দৈনিক প্রায় ১৫ শ’ কোটি টাকা ধার দিচ্ছে স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। দাতা ব্যাংক হিসেবে শীর্ষে আছে সিটি ব্যাংক এনএ। এই ব্যাংকটি দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা দিচ্ছে কলমানি মার্কেটে। স্থানীয় বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংকও বড় অর্থ জোগানদাতা। তারা গড়ে দৈনিক প্রায় ২শ’ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) মালিকানার ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইএমএফের একটি মিশন সরকারকে একটি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, রাষ্ট্রীয় চার বাণিজ্যিক ব্যাংক নগদ অর্থের চাপের মধ্যে রয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোকে ঋণ দিতে গিয়েই এই চাপ তৈরি হয়েছে। দলীয়করণের ফলে প্রশাসনে বিরাজ করছে স্থবিরতা। প্রশাসনের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বলতে কিছু নেই। এ সরকারের আমলে ৫৪১ জন দক্ষ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। ওএসডি অবস্থায় এলপিআর-এ গিয়েছে প্রায় ২শ’ জন কর্মকর্তা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে পথে বসানো হচ্ছে। সরকার দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় বেশি ব্যস্ত। ভারতকে ট্রানজিট প্রদান, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার এবং ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার ভারতের সকল স্বার্থ বাস্তবায়ন করেছে। দেশের জন্য কিছুই করতে পারেনি। প্রতিনিয়তই সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে বাংলাদেশের জনগণ প্রাণ হারাচ্ছে, তার কোনো প্রতিকার এ সরকার করতে পারেনি। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ সমস্যার সমাধান, দহগ্রাম আঙ্গরপোতার ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বাণিজ্যে চরম ভারসাম্যহীনতার সমস্যার সমাধানসহ এ সরকার কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। জাগরণের আহবান রোডমার্চ জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পেরে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব¡ রক্ষার তাগিদে ইতোমধ্যেই আন্দোলনের ডাক দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মাঠে নেমেছে চারদলীয় জোট। গত ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টন বিএনপি অফিসের সামনে আয়োজিত চার দলের সমাবেশ মুহূর্তে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দেশের মানুষ মহাজোটের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায় মানুষ। এই বিপুল উপস্থিতি সেই বার্তাই ঘোষণা করেছে। দুঃশাসনে পিষ্ট আধমরা মানুষ জাগতে চায়। তারা আর মার খেতে রাজি নয়। জীবন বাজি রেখে লড়তে চায়। চারদলীয় জোটনেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া জনতার এ দাবি বাস্তবায়ন করতে ২৭ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ এবং ময়মনসিংহ, রংপুরসহ কয়েকটি শহরে মহাসমাবেশ আহবান করেন। ১০ থেকে ১১ অক্টোবরের ঢাকা-সিলেট রোডমার্চে রূপগঞ্জের তারাবো, নরসিংদীর ইটাখোলা, মাধবদী ও পলাশ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুট্টাপাড়া, হবিগঞ্জের মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শেরপুরের এবং ১৯-২০ অক্টোবরের ঢাকা রাজশাহী রোডমার্চে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাখো জনতার সমাবেশে ভাষণ দেন বেগম খালেদা জিয়াসহ চারদলীয় জোট নেতৃবৃন্দ। প্রতিটি সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ কর্মসূচির ফলে জনতার সাগরে জাগরণের জোয়ার এসেছে। সরকারের বাধাবিপত্তি ঠেকাতে পারেনি জনতার জোয়ার। জনতার এ জাগরণ দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা আবোলতাবোল বলা শুরু করেছেন। তারা এ গণ-আন্দোলনকে যুদ্ধ আখ্যা দিতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের বুঝতে হবে জনতার চ্যালেঞ্জ যুদ্ধ করে নয়, তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে মোকাবেলা করতে হয়। তা না হলে পরাজয়ের গ্লানি নেমে আসে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানো মানে পরাজয় নয়। এর মানে এমন কিছু যা কোন গণতান্ত্রিক শক্তির কাম্য হতে পারে না। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের দুর্নীতি, নিপীড়ন আর ব্যর্থতার চিত্র তুলে বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ, আওয়ামী লীগ মানেই লুটপাট, আওয়ামী লীগ মানেই দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস, বেইমানি। এখন যারা যুবক তারা ’৭২-৭৫ সালের আওয়ামী লীগ শাসন দেখেনি। তখন দুর্ভিক্ষে মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। তাদের নেতাই বলেছিলেন দেশ স্বাধীন হলে সবাই পায় স্বর্ণের খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। তখন তাদের নেতারা কম্বল চুরি করেছিলো। এই চোর-লুটেরাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। তিনি তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজামান, আবদুল কাদের মোল্লা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও প্রবীণ নেতা আবদুল আলীমের মুক্তি দাবি করেন। ভারতের সাথে করা সকল দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এবং সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে। প্রতিটি রোডমার্চেই জনতার ঢল নেমেছে। খালেদা জিয়ার আহবানে দেশ রক্ষার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা দীপ্ত শপথ নিয়েছে কোটি জনতা। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচন মেনে নেবে না। আধিপত্যবাদী শক্তির নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করবেই। [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির