post

হতাশা

ড. সালমা রহমান

০৩ ডিসেম্বর ২০২০

হতাশা একটি জটিল মনোস্তাত্ত্বিক বিষয়। এটি নিয়ে চিন্তা করার অনেকগুলি উপায় রয়েছে: হতাশাকে গ্রহণ করা পরিপক্বতার লক্ষণ হতে পারে- যখন আমরা একটি অসম্পূর্ণ বিশ্বকে মেনে নিই। হতাশার রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে যখন কিছু মানুষের প্রয়োজন অন্যের চেয়ে বেশি হয়।

পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ভারসাম্যের অভাবে অনেক মানুষ তাদের চাহিদা মত টাকা আয় করতে পারে না ফলে হতাশায় ডুবে থাকে। ‘আয় যতোটুকু, ততোটুকু ব্যয় করব’- এভাবে না ভেবে, আমরা চাই ‘যতোটা ব্যয় করব, আয় ততোটা হতেই হবে’। আমরা দেখি কেউ খুব ভালভাবে তাদের চাহিদা পূরণ করছে কিন্তু আমরা পারি না তখনও হতাশা আসে। মানুষ নিজে যখন ভাল থাকতে চায় অতপর: দেখে তার চারপাশ অনেক খারাপ কাজ হচ্ছেই; কেউ ঠিক করার নেই তখনও সে হতাশ হয়। কেউ যখন কোন কিছু পাবার জন্য খুব চেষ্টা করেও পায় না বিভিন্ন উপায় কৌশল অবলম্বন ব্যর্থ হয় তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে। ট্রেস থেকেই হতাশা আসে। ট্রেস জৈবিক এবং আচরণগত বিষয়, যখন ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তখন হতাশা আসে। অনেক সময় কোন কারণে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সমাজ সাহায্য না করলেও হতাশা আসে। লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসা, কারো জন্য কিছু করা ভালোবাসা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ট্রেস এবং হতাশা আসে।

হতাশা এবং স্বাস্থ্য

সামাজিক অধিকার এর বিষয়ের স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলি ভালোভাবে বিবেচনা করা হয় না। অর্থের সন্ধানে বিশ্রাম ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের অভাব হতাশা আনে। স্ট্রেসের স্তর হ্রাস করতে হবে, দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ছেড়ে দেহের প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া দমন করে। দেহ থেকে সঙ্কেত পুনরুৎপাদন এবং প্রাপ্ত করতে কর্টিসল টি কোষগুলির সাথে হস্তক্ষেপ করে। কর্টিসল অ্যান্টিবডি সিক্রেটরি আইজিএও হ্রাস করে, যা অন্ত্র এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ট্র্যাক্টকে লাইন করে, যা আমাদের প্যাথোজেনগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন।

নিয়মিত যোগব্যায়াম, ধ্যান বা গভীর শ্বাস নিতে অনুশীলন করুন।’ স্ট্রেস দেহের লিম্ফোসাইটস হ্রাস করে, শ্বেত রক্তকণিকা যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। আপনার লিম্ফোসাইটের মাত্রা যত কম হবে আপনি সাধারণ সর্দি-এর মতো ভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়বেন, ডল্যান্সি ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক নাদিয়া হাসান ব্যাখ্যা করেন, দেহের ক্রিয়াকলাপে হতাশার অর্থ হলো পুষ্টি এবং অক্সিজেন আপনার কোষে পৌঁছায় না। যখন খাবার এবং ঘুমের অভাব হয়, আপনার আবেগময় এবং মানসিক অবস্থাও প্রভাবিত হয়। হতাশা থাকলে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করে না ফলে কোষ ঠিকভাবে অক্সিজেন পায় না এবং অপুষ্টি হয়। যখন শরীরে ক্ষতিকর দ্রব্য প্রবেশ করে তখন সেটি রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন কোষে ঢুকে পড়ে এবং বিভিন্ন অসুস্থতা সৃষ্টি করে। বেশি হতাশা থাকলে টাক্সিক দ্রব্য উৎপন্ন হয়। হজমে গোলমাল হলে শরীর ঠিকভাবে পুষ্টি পায় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। খাবারে অরুচি হয়, শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দেখা যায়। কাজেই হতাশা আবেগতাড়িত মানসিক অবস্থা হলেও মানুষের শরীরকে আঘাত করে। হতাশা, রাগ, দুঃখ, উদ্বিগ্নতা এই সকল মনোস্তাত্ত্বিক বিষয়ের কারণে ট্রেস হয় এবং এর ফলে যে জৈবিক পরিবর্তন হয় তাতে অফৎবহধষরহব ট্রেস হরমোন নিষ্কৃত হয়। যেসব মানুষ সব সময় ট্রেসে থাকে তারা হতাশায় ভুগে ডিপ্রেশনে চলে যায় অথবা রাগি বদমেজাজি হয়ে পড়ে। সে যদি তার সমস্যাকে ঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে সে বেশি ধূমপান করে, অনেক বেশি খায় কেউ বেশি পান করে, জুয়া খেলে, কার্ড খেলে, কেউ মারামারি, খুন করে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত তার হার্টের সমস্যা হয়ে যায়। যার হার্টের অসুখ আছে সে দ্রুত আরো খারাপ অবস্থার দিকে যায়, হার্ট অ্যাটাক হয় এবং মৃত্যু হয়। ওনড় ইবহহবঃঃ বলেছেন, হতাশা মানুষকে শান্ত এবং ভারাক্রান্ত করে তোলে। অনেক সময় হতাশা থেকে ভাল কিছু করা সম্ভব। যে কারণে কেউ হতাশ হয় সেই কারণের উপর সে বেশি মনোযোগী হবে তার চিন্তা চেতনা অন্য দিকে রূপ দেবে।

হতাশা থেকে উত্তরণের উপায়

প্রেরণার উৎস হিসাবে হতাশাকে কাজে লাগাতে হবে। নিজের ক্ষমতাকে ভালো দিকে কাজে লাগাতে হবে। হতাশ হয়ে পড়লে তার বিপরীতে কিছু করতে হবে। হ সাহায্য পাবার জন্য কারো কাছে যেতে হবে বা কোন উপায় নির্ধারণ করতে হবে। হ জীবনে হতাশা আসতেই পারে একে সহজ করে নিতে হবে। যখন আমরা অন্যের প্রয়োজনকে নিজের চেয়ে এগিয়ে রাখি তখন হতাশা কম হয়।

হ সব ছেলে মাদকাসক্ত হয় না, সব মেয়ে হারাম সম্পর্কে জড়ায় না অথচ অনেক তাকওয়াবান যুবক হতাশায় ভোগেন, প্রচুর পরহেজগার মেয়েও জীবন নিয়ে উদ্দেশ্যহীনতায় ভোগেন। খুব দায়িত্ববান ছেলেকেও আপনি হতাশায় ভুগতে দেখবেন। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, “এবং যখন তাকে পরীক্ষা করেন রিজিক সঙ্কুচিত করে, তখন সে বলে আমার রব আমাকে হীন করেছেন।” (সূরা আল ফজর: ১৬) “মানুষ তো এরূপ যে, তোমার রব পরীক্ষাকল্পে তাকে সম্মান ও অনুগ্রহ দান করলে সে বলে, আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন।” (সূরা ফজর : ১৫) জীবনের এই দুটো স্টেজই কিন্তু পরীক্ষা। কাউকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, কাউকে অভাব দিয়ে, কাউকে সুখ দিয়ে, কাউকে দুঃখ দিয়ে, কিন্তু প্রতিটা মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে পরীক্ষিত হচ্ছে। আপনি কি শোনেননি আল্লাহ্ কাউকে ভারাক্রান্ত করেন না? (সূরা বাকারা)

তাহলে আজকের যুবসমাজ এতোটা হতাশ কেন?

শয়তান চায় এটা যে আপনার মন খারাপ থাক, আপনি হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশার সময়টা এমন যে আমরা নিয়মিত আমলগুলো করতে পারি না, এতোটাই ভারাক্রান্ত মনে করি নিজেকে যে বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হয়। ঠিক এই মুহূর্তের জন্য শয়তান অপেক্ষায় থাকে।

‘আমার ভাগ্য বরাবরই খারাপ, আমার ভাগ্যে কিছু নেই’- হতাশায় আমরা- এই টাইপের কথা ইসলামী আকিদার খেলাপ। শয়তান চায় মুমিন ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুবরণ করুন আর হতাশা এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। ‘আল্লাহর স্মরণেই হৃদয়সমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সূরা রাদ : ২৮) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের মধ্যে হতাশা দেখা যাচ্ছে। যার জন্য মূলত আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন (রাত জাগা, পর্ন, মাদকাসক্তি, ইন্টারনেট আসক্তি, রেজাল্ট খারাপ), উচ্ছৃঙ্খলা হারাম সম্পর্ক, নিত্যনতুন প্রোগ্রাম। আমরা বর্তমান প্রজন্ম শিক্ষিত প্রজন্ম হওয়ায় চলতি পথে আমাদের বন্ধু-বান্ধবও থাকে অনেক বেশি। প্রাণের বান্ধবী হয়তো পাস করার পর আর ফোন ধরছে না। রুমমেট, রাত জেগে ম্যাথ বুঝানো বন্ধু এখন রাস্তায় অচেনা মানুষের মতো মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়- এমন হয়। এ বিষয়গুলো সত্যিই কষ্ট দেয়, কিন্তু ভালোবাসা হলো আল্লাহর জন্য। কাজেই কেউ এড়িয়ে চললে খুব বেশি কষ্ট না পাওয়াই উত্তম। অনেক সময় তো আমরা কষ্ট, হতাশার চোটে তাদের নামে গিবতই শুরু করি! আস্তাগফিরুল্লাহ। ‘ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, কি হবে এতো পড়ে’, ‘মেয়ে এতো কালো, বিয়ে হবে কিভাবে’- এমন অনেক নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ আছে। এদের সঙ্গ আপনাকে হতাশ করে ছাড়বে। যে আপনাকে উৎসাহিত করে, আপনার উপর যার আস্থা আছে, যে আপনাকে আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপর ভরসা রাখতে শিখায়- তাকে সঙ্গী করুন। সবচেয়ে সফল মানুষটাকেও সংসারের বিশৃঙ্খলা হতাশ করে দেয়। আজকের যুবসমাজ বিয়ের আগে থেকেই সঙ্গীর ব্যাপারে প্রচুর প্রত্যাশা রাখতে শুরু করে, যা পরবর্তীতে হতাশা তৈরি করে। নিজেকে সংশোধনে মানসিকতা হতাশা থেকে মুক্ত রাখে। একগুঁয়ে মানুষ পথ দেখতে পায় না। হতাশা ধৈর্যের অভাবের সমানুপাতিক- বলা যায়। ধৈর্যের অভাব জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, হতাশা তার একটা অংশ মাত্র। সাথে যদি না-শুকরিয়া মানসিকতা থাকে, তাহলে জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। কৈশোর থেকে হঠাৎ দায়িত্বপ্রাপ্ত যুবসমাজের ধৈর্য ধরা তাই আরো বেশি প্রয়োজন। “তুমি যদি আল্লাহর নিয়ামত সমূহ গণনা কর, তুমি কখনোই তা গুনে শেষ করতে সক্ষম হবে না।’ (সূরা হিজর : ৩৪)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। জেনে রেখো গুনাহের কারণে মানুষ এমন রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়, যা তার জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছিল।’ (মুসনাদে আহমদ) “আমি কুরআনকে করেছি মুমিনের জন্য শিফা ও রহমত।” (সূরা আল ইসরাহ : ৮২) “আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাকে স্মরণ করব! ” (সূরা আল বাকারাহ : ১৫২) ইতিবাচকতা এবং হতাশা একদম বিপরীত অবস্থা। মুমিন অতি বড় ক্রাইসিস মোমেন্টেও নতুন কিছু করার সুযোগ দেখতে পায়। জব হতে দেরি হচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে না, এ সময়টাকে কাজে লাগান। নতুন কোর্স করুন, পিতা-মাতার খিদমত করুন, নিজের দক্ষতা বাড়াতে মনোনিবেশ করুন, হিফজ শুরু করুন, কাজা রোজাগুলো রাখুন, দাওয়াতি কাজ করুন। পরিশ্রম করে সঞ্চয় করুন।

তিনি সৃষ্টি করেছেন জীবন ও মরণ যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী এবং ক্ষমাশীল। (সূরা মুলক : ২) হজরত মূসা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক, আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে এলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও।” (সূরা ত্বহা : ৮৪) রাগ দমন করতে হবে-রাগের সাথে যুদ্ধ করতে হবে, কারণ কেউ একা নয়। পৃথিবীতে অগণিত মানুষ এই সমস্যায় আছে। সকল নেতিবাচক অনুভূতিকে জয় করতে হবে। যদি আমরা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে হতাশাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব? অনেক সময় আমরা প্রিয়জনের মৃত্যুতে আল্লাহপাকের সাথে রাগ করি (নাউযুবিল্লাহ)। এটি আল্লাহ পাকের সাথে বান্দার দুর্বল সম্পর্কের কারণেই হয়। অনেক সময় আমরা আল্লাহপাকের কাছে কিছু চাইতে থাকি কিংবা দোয়া করতে থাকি কিন্তু সেটা হয় না ফলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি ডিপ্রেশনে চলে যাই। অথবা আমাদের আল্লাহপাকের প্রতি বিশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। দোয়া করতে হবে যা চাই, যখন কোন সমস্যা হয় তখন সব সময় আল্লাহপাকের কাছে দোয়া চাইতে হবে। কখনও বন্ধ করা যাবে না। আল্লাহপাকের কাছে সব বলতে হবে। “সে বলল আমি তো আমার যন্ত্রণা আমার দুশ্চিন্তা সব আল্লাহ তায়ালার কাছেই নিবেদন করছি।” (সূরা ইউসুফ : ৮৬) আজ আমরা আজান হলে বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে মসজিদের দিকে উঠে যাই না পর্যন্ত, বান্ধবীর সাথে শপিংয়ে চলে যাই; নামাজের ওয়াক্তের খেয়াল থাকে না, তথাপিও আমরা প্রত্যাশা করি আমরা সফল হবো? মনে হতাশা থাকবে না? এটা কি হতে পারে? কোন হতাশায় আত্মহত্যা নয়। যদি অতি বড় ভুলও করে ফেলেন, বেঁচে থাকলে সংশোধন করতে পারবেন। কতো বড় কষ্ট আপনার? আইয়ুব আলাইহিস সালাম ছিলেন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগত বান্দা। বছরের পর বছর অসংখ্য রোগ-ব্যাধি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন তথাপিও নিজের কষ্ট আল্লাহকে জানাতে লজ্জা বোধ করতেন। “হে আমার রব! আমাকে দুঃখ-ক্লেশ (ব্যাধি) স্পর্শ করেছে, তুমি তো (দয়ালুদের মধ্য) শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা আম্বিয়া : ৮৩) যখন কাউকে হতাশ দেখব, দেখব কেউ কোন ভুল করে ফেলেছে, তখন তাকে বুঝাতে গিয়ে আমরা যেন এমনভাবে তার দোষ তুলে না ধরি যাতে তার বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়ে, সারাক্ষণ মনে হয় ‘আমি এতো খারাপ! আমি সবার চেয়ে খারাপ! কি হবে আমার এই জীবন দিয়ে- আমাদের আর একটু সহানুভূতিশীল হতে হবে। তবু যদি কখনো হতাশ লাগে, স্মরণ করুন না সে দিনের কথা, যে দয়াময় পরওয়ারদিগার বলবেন, “হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার রবের নিকট ফিরে আসো সন্তুষ্ট এবং সন্তোষভাজন হয়ে, আমার দাসদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।” (সূরা আল ফজর : ২৭-৩০) হ্যাঁ হতাশা এর সকল উত্তর কেউ দিতে পারে না। একেক মানুষের জীবনের একেক অবস্থা, কেউ কারো অবস্থা ঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবে না, পারবে না তার সঠিক সমাধান করতে। শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং তার ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধিই হতাশা থেকে বের হবার একমাত্র পথ। নবী করিম সা. ছাড়া এমন কোন লোক নাই যে অন্যের ওপর হতাশা প্রকাশ করেননি। নবী করিম সা. এশরাদ করেছেন-আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল মানুষের পরীক্ষা নেবেন তার ঈমানের ভিত্তিতে। যার ঈমান যত মজবুত তাকে তত বেশি কঠিন পরীক্ষা নেয়া হবে। যাতে দুনিয়াতেই তার সব পাপমুক্ত হয়ে সে যেতে পারে। আল্লাহপাক যাকে যত বেশি পরীক্ষা করবেন সে তত বেশি আল্লাহ পাকের ভালোবাসা পাবে।

হতাশাকে পজিটিভ দিকে নিয়ে যেতে হবে। কোন বিষয়ে নিরাশ হওয়া যাবে না। হতাশা শয়তানের কাজ, শয়তানই শুধু আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ। সুতরাং আমাদের আল্লাহপাকের সাহায্য কামনা করতে হবে। আজ আমরা সাহাবিওয়ালা জীবন চাই না, ছেলেরা সালাহউদ্দিন আইয়ুবী হতে চায় না, প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জীবনকে দেখছি।

“যার জীবনের লক্ষ্য হবে আখিরাত, আল্লাহ্ তার অন্তরে সচ্ছলতা দান করবেন, তার কর্মকাণ্ড গুছিয়ে দেবেন, দুনিয়া (নিয়ামত) অনুগত এবং বাধ্য হয়ে তার কাছে আসবে। আর যার লক্ষ্য হবে দুনিয়া, আল্লাহ্ তার দুই চোখের মাঝে দারিদ্র্য রেখে দিবেন, তার কর্মকাণ্ড বিক্ষিপ্ত করে দেবেন (ফলে সে অস্থিরভাবে কাতরাবে) এবং দুনিয়া থেকে সে ততোটুকুই অর্জন করতে পারবে, যা তার জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল।” (তিরমিজি-২৪৬৫) নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জীবনের পরবর্তী সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। নিশ্চয় আল্লাহপাক দোয়া কবুলকারী। আল্লাহপাকের ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আর ঈমানের মজবুতি দিয়ে হতাশা মোকাবেলা করতে হবে। হতাশা থেকে বের হতে চাইলে আল্লাহপাকের কাছে ধরনা দিতে হবে। ধৈর্যের সাথে এবং নামাজের মাধ্যমে। আল্লাহপাক আল-কুরআনে বলেছেন, “তোমরা ধৈর্য এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা কর।” জীবন কোন প্রতিযোগিতা নয়, এটা একটা জার্নি। লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির