post

হতে পারেন কন্টেন্ট রাইটার

আযাদ আলাউদ্দীন

০১ জানুয়ারি ২০২২

আহমেদ বায়েজীদ, দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করতেন দৈনিক নয়া দিগন্তের ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কে। করোনার প্রভাবে সেখানে বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে যাওয়ায় চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামে। বর্তমানে তিনি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কামারখালী বাজার এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। একই সাথে কাজ করছেন একজন প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে। বিডি ভিউজ গ্রুপের তিনটি ইউটিউভ চ্যানেলে কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন তিনি। এসব চ্যানেলের প্রতিটি স্ক্রিপ্টের জন্য তিনি পাচ্ছেন এক হাজার টাকা করে। প্রতি মাসে তিনি ২৫ থেকে ৩০টি স্ক্রিপ্ট বাবদ আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় থেকেও তিনি কাজ করছেন একজন সফল কন্টেন্ট রাইটার কিংবা ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসেবে। আপনিও হতে পারেন তার মতো একজন কন্টেন্ট রাইটার। এটি পেশা হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কন্টেন্ট রাইটার হতে করণীয়

কন্টেন্ট রাইটারগণ সাধারণত অ্যাসাইনমেন্ট-ভিত্তিক কাজ করেন। এই কাজটি অনেকটা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার মতো। তবে সাংবাদিকতা রিলেটেড বিষয় ছাড়াও নানা বিষয়ে কন্টেন্ট লেখা হতে পারে। যেমন মনে করুন- আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, সেই ওয়েবসাইটের নিশ অথবা বিষয় সিলেক্ট হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মালিক বা কর্তৃপক্ষ চিন্তা করলেন- প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে তিনি তার ওয়েবসাইটের আর্টিকেল অথবা কন্টেন্ট লেখাবেন। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটারের সাথে যোগাযোগ করে তার কন্টেন্টের বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করবেন। কন্টেন্ট রাইটার সেই নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখতে রাজি হলে- সময় ও পেমেন্ট নিয়ে কথা বলবেন। সবকিছু চূড়ান্ত হলে কন্টেন্ট রাইটার তার স্ক্রিপ্ট লিখে জমা দেবেন। জমা দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট অথরিটি তা পড়ার পর কোনো তথ্য বাদ পড়লে আবার তাকে দিয়ে রিভিউ কিংবা কারেকশন করাবেন, এক পর্যায়ে সবকিছু ওকে হলে লেখাটি প্রকাশ হবে অথবা প্রচার হবে। এভাবেই ধাপে ধাপে হয়ে উঠা যায় একজন সফল কন্টেন্ট রাইটার।

মার্কেট প্লেসে রয়েছে কন্টেন্ট রাইটারের চাহিদা

ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট লেখার জন্য বিভিন্ন দেশের বায়ারগণ কন্টেন্ট রাইটারদের হায়ার করেন। এক্ষেত্রে অধিকাংশ কন্টেন্ট লিখতে হয় ইংরেজিতে। ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ হলে আপনি সহজেই কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। তা ছাড়া বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেও আপনি একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকমসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে কন্টেন্ট রাইটারদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিনেও লেখার সুযোগ

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনেও আপনি একজন কন্ট্রিবিউটর হিসেবে বিষয়ভিত্তিক লেখা জমা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদক অথবা ফিচার সম্পাদকের সাথে কথা বলে অ্যাসাইনমেন্ট বুঝে নিয়ে সেই বিষয়ের ওপর ব্যাপক অধ্যয়ন ও তথ্য সংগ্রহ করে নিজের মতো করে মৌলিক স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে। যেমন- মনে করুন আপনাকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলো ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ে একটি ইনডেপথ্ প্রতিবেদন তৈরি করুন।’ এই অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়ার পর আপনি প্রথমেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন। সেখানকার প্রতিটি লিংকে দেয়া তথ্যগুলো ভালোভাবে অনুসন্ধান করুন, গুগলে সার্চ দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যতগুলো আলোচিত প্রতিবেদন হয়েছে সেগুলো পড়–ন, উইকিপিডিয়ায় সার্চ দিয়ে অনুসন্ধান করুন। এভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যাপক অধ্যয়ন ও তথ্য সংগ্রহের পর আপনার মতো করে আপনি কন্টেন্ট বা স্ক্রিপ্ট লিখুন। মনে রাখবেন- আপনার লেখা যেন কারো সাথে হুবহু মিলে না যায়, আপনার লেখাটি হবে একান্তভাবে আপনার মতোই। কোন লেখা হুবহু কপি করলে আপনি লেখালেখির জগতে বিশ্বস্ততা হারাবেন। অন্য লেখককের লেখার সহযোগিতা নিতে পারেন কিন্তু কপি করে তা নিজের নামে চালিয়ে দেয়া অন্যায় এবং রীতিমতো অপরাধ। এজন্য কপিরাইট আইনটি সম্পর্কে অবহিত হয়ে নিন। সবসময় নিজের যোগ্যতাকে বিকশিত করতে মৌলিক কন্টেন্ট লিখতে সচেষ্ট থাকুন।

লিখতে হলে পড়তে হবে

শুধু কন্টেন্ট রাইটিং নয়, যে কোন লেখার জন্য প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো পড়া। যিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যতবেশি পড়াশোনা করবেন, তার লেখার মান হবে তত বেশি উন্নত। সাইমুম সিরিজের লেখক ও প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী আবুল আসাদ বলেছেন- ‘এক পৃষ্ঠা লিখতে হলে, হাজার পৃষ্ঠা পড়তে হবে’। সত্যিই যেন তাই। ভালো লেখার জন্য বেশি বেশি পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

জানতে হবে সমসাময়িক বিষয়

আপনি যদি একজন প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার হতে চান, তাহলে আপনাকে সমসাময়িক বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে শুরু করে হালনাগাদ তথ্য আপনার জানা থাকতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, এপি, এএফপি, রয়টার্স, আনাদোলুসহ বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমগুলোর ভিজ্যুয়াল খবর, ওয়েবসাইটসহ হালনাগাদ সকল তথ্যের বিষয়ে সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনে লেখার সাথে রেফারেন্স হিসেবে এসব গণমাধ্যমের তথ্য উল্লেখ করতে পারেন। তাহলে- আপনার স্ক্রিপ্ট আরো শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগান

একটা সময় ছিলো যখন- কোন লেখা তৈরির জন্য দিনের পর দিন বিভিন্ন বই পড়ে এবং নোট করে রেফারেন্স সংগ্রহ করা লাগতো। এখন আর তেমন কষ্ট করতে হয় না। আপনার হাতের অ্যানড্রয়েড সেটে গুগল সার্চ করেই পেয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সব তথ্য। এজন্য সহায়তা নিতে পারেন উইকিপিডিয়া, বাংলা পিডিয়াসহ বিভিন্ন রকম বই, অভিধান ও ভার্চুয়াল আর্কাইভের। কোন শব্দের বানান নিয়ে সংশয় থাকলে, সার্চ করে জেনে নিতে পারেন সঠিক বানান, কোন শব্দ কিংবা বাক্যের অর্থ জানা না থাকলে নিতে পারেন গুগল ট্রান্সলেটরের সহায়তা। এমনিভাবে প্রতিটি বিষয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা আমাদের লেখালেখির জগৎকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারি। লেখক : সাংবাদিক, দৈনিক নয়া দিগন্ত

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির