post

ইসলামী সংগঠনে যোগ্য সংগঠকের বৈশিষ্ট্য

২৯ জুন ২০১৫
মো: আতিকুর রহমান# যেকোনো সংগঠনের কার্য সম্পাদন বা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যার ভূমিকাকে প্রধান ধরা হয় তিনি হচ্ছেন উক্ত সংগঠনের পরিচালক বা দায়িত্বশীল। বহু জনপ্রিয় আন্দোলন সঠিক নেতৃত্বের অভাবে যেমন ব্যর্থ হয় তেমনিভাবে যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে অনেক ভ্রান্তমতও সাময়িকভাবে বিজয় লাভ করতে পারে। একটি গাড়ির যাত্রীদের গন্তব্যস্থল সঠিক স্থানে হবে, না ভুল স্থানে হবে তা যেমন গাড়ির ড্রাইভারের ওপর নির্ভর করে, ঠিক তেমনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব বা পরিচালকের ওপর নির্ভর করে সংগঠনটির ভবিষ্যৎ। ইসলামী সংগঠনে নেতৃত্বের অবস্থান ইসলামী আদর্শ বা জীবনব্যবস্থা নেতৃত্বকেন্দ্রিক। ইসলামী সংগঠন পরিচালনায় যারা নিয়োজিত থাকেন তারা অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের মতো নয়, তাদের পরিচয় দায়িত্বশীল। আর দায়িত্বশীল হচ্ছেন- ১.    নবী ও রাসূলদের উত্তরসূরি : মানুষের হিদায়েত ও সংস্কার সাধনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যুগে যুগে নবী-রাসূলদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। রাসূল সা: এর পর যেহেতু আর কোন নবী-রাসুল পৃথিবীতে আসবেন না, তাই উম্মতে মুহাম্মদীকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেন, “এখন তোমরাই দুনিয়ার সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়েত ও সংস্কার সাধনের জন্য। তোমরা নেকির হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।” (সূরা আলে ইমরান : ১১০) ২.    আল্লাহর প্রতিনিধি : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে এ পৃথিবীতে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আবার সে সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে একজন খলিফা-প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই। তারা বললো, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্ত করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবিহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি। আল্লাহ বলেন, আমি যা জানি তা তোমরা জানো না।” (সূরা বাকারা : ৩০) একজন রাষ্ট্রপ্রধানের নিযুক্ত কোন প্রতিনিধিকে অন্য রাষ্ট্রে প্রেরণ করলে প্রতিনিধির যেমন শুধুমাত্র তার নিজের রাষ্ট্রপ্রধানের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে হয় কিংবা রাষ্ট্রের পলিসির বাইরে গিয়ে ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে না, ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতিনিধিত্ব করার সময় বান্দাকে সর্বদাই লক্ষ্য রাখতে হবে আল্লাহ কী বলেছেন এবং তিনি কী চান। দুনিয়ার রাষ্ট্রদূতের মর্যাদা যদি এত অধিক হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আমাদের মর্যাদাও লক্ষ কোটি গুণ বেশি। ৩.    শরয়ি মর্যাদার অধিকারী : কর্মীদের নিকট দায়িত্বশীলের মর্যাদা উলিল আমরের পর্যায়ের। আল কুরআনে নেতৃত্বকে প্রধান ভূমিকা পালনকারী রূপে স্থান দিয়েছে। মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে- ‘‘হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং রাসূলের আর সেসব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনে থাকো। এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট।” (সূরা নিসা : ৫৯) এখানে উলিল আমর শব্দের অর্থ হলো- এমন দায়িত্বশীল যার নির্দেশ দেয়ার শরয়ি মর্যাদা রয়েছে। ইসলামী সংগঠনের যোগ্য সংগঠক কারো পক্ষে সংগঠক বনে যাওয়া কঠিন কিছু নয়, কিন্তু যোগ্য সংগঠক হওয়া সত্যিই কঠিন। সংগঠনের কিছু রুটিন ওয়ার্ক সম্পন্ন করা খুবই সহজ, কিন্তু সংগঠনে প্রাণবন্যা সৃষ্টি করা মোটেই সহজ নয়। সংগঠনে স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজ করার গতি সৃষ্টি করা এবং তা অব্যাহত রাখা একজন যোগ্য সংগঠকের পক্ষেই সম্ভব। ইসলামী আন্দোলন বা সংগঠনে একজন যোগ্য সংগঠকের অবস্থান হচ্ছে- যোগ্য সংগঠক হলেন একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। যোগ্য সংগঠকের প্রতি কর্মীবাহিনীর স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধা থাকে। এবং যোগ্য সংগঠককে কড়া নির্দেশ দিয়ে কর্মীদেরকে কাজে নামানোর প্রয়াস চালাতে হয় না। তার ইঙ্গিত বা অনুরোধই কর্মীদেরকে কর্মচঞ্চল করার জন্য যথেষ্ট। একজন যোগ্য সংগঠক বিভিন্নমুখী যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে যোগ্য সংগঠকের স্তরে উন্নীত হন। ইসলামী আন্দোলন বা সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত সকলেই কোনো না কোনো পর্যায়ের দায়িত্বশীল বা পরিচালক। যে অবস্থানে থেকে তাকে প্রতিনিয়ত দ্বীনি আন্দোলনের জিম্মাদারি পালন করে যেতে হয়। সকলের দায়িত্বের সাথে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি জড়িত বলে তিনি সংগঠকের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যান। একজন সংগঠককে যোগ্য সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর অধিকারী হতে হবে- জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন একজন যোগ্য সংগঠকের জ্ঞানের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকবে। এ ক্ষেত্রে যে জীবনব্যবস্থা সে মানবসমাজে কায়েম করতে বদ্ধপরিকর সে জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে সঠিকভাবে অবগত থাকা। আদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠন সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেবার মতো জ্ঞান থাকা। বিরোধী মতবাদগুলোর বক্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকা এবং বিরুদ্ধবাদীদের প্রশ্নের যুক্তিপুর্ণ ও সন্তোষজনক জবাব জানা। আধুনিক চিন্তা ও কর্মের ত্রুটিপূর্ণ অংশকে ত্রুটিহীন অংশ থেকে আলাদা করার মতো সমালোচনার যোগ্যতা। কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যের জ্ঞানে পারদর্শিতা। অ্যাকাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। সমসাময়িক পরিস্থিতি ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর কম বেশি দক্ষতা থাকা। উন্নত ও পরিচ্ছন্ন আমল একজন সংগঠক বা দায়িত্বশীলকে অবশ্যই আদর্শের মূর্তপ্রতীক হতে হবে। তাঁর আমল হতে হবে উন্নত আকর্ষণীয়, জনশক্তিসহ অন্যদের জন্য অনুকরণযোগ্য। তিনি থাকবেন সকলের প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। এ ক্ষেত্রে বাস্তব জীবনে একজন যোগ্য সংগঠককে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে- মৌলিক ইবাদতসমূহ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করা। নিয়তের পরিশুদ্ধতা অর্জন। মোয়ামেলাত সুন্দর করা। ওয়াদা পালন করা। পর্দার বিধান মেনে চলা। ব্যবহারিক জীবন সুন্দর-পরিচ্ছন্ন করা। নৈতিকমান প্রশ্নবিদ্ধ না করা। লোভহীন ও সহজ সরল জীবন যাপন করা। নেফাকিমুক্ত জীবনের অধিকারী হওয়া। ব্যক্তিজীবনে ইসলামের প্রতিচ্ছবি হওয়া। আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা। কোমলতা, বিনয়, নম্রতা ইসলামী সংগঠনের যোগ্য সংগঠক বা দায়িত্বশীলের হৃদয় হবে কোমল, ভাষা হবে মধুর, মেজাজ হবে শীতল। তবে এ প্রীতিপূর্ণ ব্যবহারের অর্থ এই নয় যে, দায়িত্বশীল ব্যক্তি কোন ব্যাপারে কঠোর হবেন না এবং কোন অন্যায় কাজে বাধা দিতে পারবেন না বরং আদর্শ, উদ্দেশ্য ও শৃঙ্খলার খাতিরে দায়িত্বশীলকে কখনও কখনও সহযোগীদের সাথে আদেশের সুরে কথা বলতে হয়, কাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু সে আদেশে থাকবে স্নেহপ্রীতির প্রাণপ্রবাহ। মহান আল্লাহ বলেন, “এবং মুমিনদের মধ্য থেকে যারা তোমার অনুসরণ করে তাদের সাথে বিন¤্র ব্যবহার করো।” (সূরা শূয়ারা : ২১৫) হজরত আয়াজ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, একদিন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ আমার কাছে এসে বলেন, বাপু হে শোন! আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি হলো রাগী, বদমেজাজি ব্যক্তি। খবরদার, আমি তোমাকে সাবধান করছি তুমি যেন তাদের দলভুক্ত না হও। (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল সা:-এর জীবন হচ্ছে আমাদের জন্য কোমলতা ও বিনয় নম্রতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রাসূল সা: অত্যন্ত উদার, সত্যবাদী ও অতিশয় নম্রস্বভাবের লোক ছিলেন। রাসূল সা: এমন কোমল স্বভাবের লোক ছিলেন যে, কারো মনে সামান্যতম কষ্ট হতে পারে এমন কোন কথা কখনও বলতেন না। কারো আচার আচরণে বিরক্ত হলেও তা মুখে প্রকাশ করতেন না। মানুষের ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে দিতেন। শত্রুকে হাতের কাছে পেয়েও প্রতিশোধ নিতেন না বরং ক্ষমা করে দিতেন। কোন সাহায্যপ্রার্থীকে কোন কিছু না দিয়ে বিদায় দিতেন না। মানুষের মঙ্গল করাই ছিল তার জীবনের সাধনা। রাসূল সা: এর সহধর্মিণী হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা., হজরত আলী রা., হজরত আনাস রা., হজরত হিন্দ ইবনে আবু হালা রা. প্রমুখ প্রখ্যাত সাহাবীগণ যাঁরা দীর্ঘকাল প্রিয়নবী সা: এর পবিত্র খেদমতে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তাঁদের সবার সর্বসম্মত বর্ণনা হলো এই যে, তিনি অত্যন্ত ন¤্র স্বভাবের, সুন্দর চরিত্রের, কোমল চিত্রের এবং সৎ প্রকৃতির লোক ছিলেন। তাঁর মুখমন্ডল সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকত। হজরত মালেক বিন হুয়াইরিশ রা: বলেছেন- আমরা কতিপয় তরুণ যুবক নবী করীম সা: এর দরবারে থাকার জন্য পৌঁছলাম। আমরা বিশরাত পর্যন্ত তাঁর দরবারে রইলাম। সত্যিই আল্লাহর রাসূল সা: অত্যন্ত নরম, হৃদয়বান ও দয়ালু ছিলেন। রাসূল সা: এর একান্ত খাদেম ছিলেন হজরত আনাস ইবনে মালেক রা:। তাঁর মা তাঁকে বাল্যকালে এনে আল্লাহর রাসূল সা: এর খিদমতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। রাসূল সা: এর ব্যাপারে হজরত আনাস রা. এর উক্তি- আমি একটানা দশ বছর হুজুরে পাক সা: এর খেদমতে কাটিয়েছি, এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে হুজুর সা: কখনও আমার প্রতি বিরক্তভাব প্রকাশ করেননি। কখনও এমন কথা বলেননি যে, অমুক কাজটা কেন করলে কিংবা অমুক কাজটা কেন করলে না? (বুখারী) রাসূল সা:-এর সহধর্মিণী হজরত আয়েশা রা. কে কতিপয় তরুণ তাবেয়ি অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁকে রাসূল সা: এর জীবনচরিত মূল্যায়ন করতে বললে তিনি মাত্র একটা কথা দ্বারা প্রশ্নকারীদের সকল কৌতূহলের নিবৃত্তি করেছিলেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, তোমরা কি কুরআন শরীফ পাঠ কর না? মহানবী সা: ছিলেন পবিত্র কুরআনেরই বাস্তব নমুনা। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনকে যদি একজন মানুষরূপে কল্পনা করা যায় তবে তিনি হবেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:। মক্কা বিজয়ের সময় এক বুড়ি বোঝা বহন করে মক্কা থেকে পলায়ন করছে দেখে দয়ার সাগর রাসূল সা: বুড়ির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বুড়ি মা তুমি কোথায় যাচ্ছ? জবাবে বুড়ি বললো, বাবা তুমি জান না, মুহাম্মদ বিরাট বাহিনী নিয়ে মক্কা ধ্বংস করার জন্য আসছে। মক্কার লোকেরা পালাচ্ছে, আমিও পালাচ্ছি। এমতাবস্থায় রাসূল সা: বললেন, বুড়ি মা! বোঝা বহন করতে তোমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাই বোঝাটি আমার মাথায় দাও, আমি তোমাকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেই। বুড়িতো খুশিতে হতবাক! বুড়ির বোঝা মহানবী সা: বহন করে বুড়ির পেছনে পেছনে গিয়ে বুড়িকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিলেন। এরপর বুড়ি রাসূল সা: এর পরিচয় পেয়ে অবাক হলেন। বুড়ি বলল, হুজুর! আপনার সম্পর্কে আমাদেরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। আপনার মতো পরোপকারী লোক আল্লাহর জমিনে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। রাসূল সা: কোমল ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বুড়ি মুসলমান হয়ে গেলেন। একবার প্রিয়নবী সা: চাদর বণ্টন করছিলেন। এ সংবাদ শুনে প্রখ্যাত সাহাবী হজরত মাখরামা রা: তদীয় পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে রাসূল সা: এর মহান দরবারে হাজির হলেন। রাসূল সা: তখন চাদর বণ্টনের কাজ শেষ করে বাড়ির ভেতরে চলে গিয়েছিলেন। হজরত মাখরামা রা: পুত্রকে বললেন, হুজুর পাক সা: কে ডাক দাও। তিনি ডাকে সাড়া দেবেন। পুত্র বলল, আমরা সাহায্যপার্থী, বিশ্বনবী সা: কে ডেকে বাড়ির বাইরে আনার মতো লোক কি আমরা? হজরত মাখরামা পুত্রকে বললেন, বৎস তুমি হুজুর পাক সা: এর করুণার কথা জান না, তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও কোমল স্বভাবের লোক, পরাক্রম প্রদর্শনকারী লোক তিনি নন। পিতার কথায় পুত্র সাহস করে ডাক দিলো। ডাক শোনার সঙ্গে সঙ্গেই দয়ার সাগর রাসূল সা: ঘর থেকে বের হয়ে এলেন এবং পিতা-পুত্রকে রেশমের কাজ করা আ’বা দিয়ে বিদায় করলেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা. বলেছেন, দায়িত্বশীলের জন্য চারটি গুণ অপরিহার্য। কোমলতা তবে দুর্বলতা নয় ২. দৃঢ়তা তবে কঠোরতা নয় ৩. স্বল্পব্যয়িতা তবে কৃপণতা নয় ৪. দানশীলতা তবে অপব্যয় নয়। অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সাংগঠনিক কাজে অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের ক্ষেত্রে সংগঠকের অগ্রণী ভূমিকা থাকবে। এসব বিষয় নিয়ে তিনিই বেশি বেশি ভাববেন। তিনিই নতুন নতুন চিন্তা সংগঠনে পেশ করবেন, নতুন নতুন কর্মকৌশল উদ্ভাবন করবেন। মোটকথা চিন্তা ও কাজ উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা হবে অগ্রণী। দ্বীনের দায়িত্বকে প্রাধান্য দেয়া ইকামতে দ্বীনের দায়িত্বকে অন্যসব দায়িত্বের ওপর প্রাধান্য দেয়া। একজন সংগঠকের মূল দায়িত্বই যেহেতু দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা এবং দ্বীনের পথে লোকদেরকে সম্পৃক্ত করার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সেহেতু সংগঠককে অন্যসব দায়িত্বের চেয়ে ইকামতে দ্বীনের দায়িত্বকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, সন্তান, ভাই, স্ত্রী, গোত্র, অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর এগুলো যদি আল্লাহ, রাসূল সা: ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় না হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়েত করেন না।” (সূরা তাওবা : ২৪) পরামর্শভিত্তিক সংগঠন পরিচালনা একজন যোগ্য সংগঠক মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে অধস্তনদের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করবেন। জনশক্তির মুখ বন্ধ করে তাদের হাত-পা বেঁধে তাদেরকে অন্ধকারে রেখে সামষ্টিক ব্যাপারসমূহ পরিচালনা করা বড় ধরনের জুলুম। কেননা পরামর্শ ইসলামী জীবন প্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পরামর্শ ছাড়া সামষ্টিক কাজ পরিচালনা করা শুধু জাহেলি পন্থাই নয়, আল্লাহর নির্ধারিত বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতে এ ব্যাপারে আদেশ করা হয়েছে এবং সূরা আশ-শুরা এ বিষয়টিকে ঈমানদারদের সর্বোত্তম গুণাবলির মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যারা তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলে, নামাজ কায়েম করে এবং নিজেদের সব কাজ পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়, আমি তাদেরকে যা রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। (সূরা আশ-শুরা : ৩৮) উন্নত মানবীয় গুণাবলির অধিকারী একজন যোগ্য সংগঠককে নিম্নোক্ত গুণাবলিগুলোর অধিকারী হওয়া জরুরি। কঠোর পরিশ্রমপ্রিয়তা। কষ্ট সহিষ্ণুতা। খেজুর পাতা প্রচন্ড রোদ্রেও নুয়ে পড়ে না। যোগ্য সংগঠককে খেজুর পাতার ন্যায় হতে হবে। সাহসিকতা। ব্যক্তি ও বস্তু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন। দূরদর্শিতা ও সূক্ষ্মদর্শিতা। বিচক্ষণতা। উদার ও স্থিরচিত্ততা। সময়ানুবর্তিতা। জরুরি পরিস্থিতিতে ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা। সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণে পারদর্শী। অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা। মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার যোগ্যতা। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত ইসলামী সমাজে নেতৃত্বকেই ত্যাগ ও কোরবানির উদাহরণ পেশ করতে হয় সর্বাগ্রে। এ ব্যাপারে রাসূলই সা. হচ্ছেন আমাদের নিকট শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। রাসূল সা: ছিলেন অল্পে তুষ্ট মানুষ। মদীনার রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: এর কাপড় কখনো পাট করে রাখা হতো না। অর্থাৎ তাঁর অতিরিক্ত কাপড় ছিলো না যা পাট করে রাখা যেতো। রাসূল সা:-এর ইন্তিকালের পর আয়েশা রা: বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সা. এ দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, কিন্তু কখনো দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারেননি। ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নিজে না খেয়ে কর্মীকে আগে খাওয়ানো বা নিজের খাবার থেকে কর্মীদের খাওয়ানোতে আরো বেশি অভ্যস্ত হওয়া উচিত। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা সংরক্ষণে আপসহীনতা একজন সংগঠক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও পরিবেশ রক্ষায় সর্বদায় তৎপর থাকবেন। যাছাই বাছাই করে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সর্বস্তরে আনুগত্যের পরিবেশ তৈরি করা এবং আনুগত্যের ব্যাপারে অনমনীয় থাকবেন। আঞ্চলিকতা ও বক্র চিন্তা পরিহার করে সংগঠন পরিচালনা করবেন। সংগঠনের অভ্যন্তরে জান্নাতি পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সক্রিয় থাকবেন। জবাবদিহি কোন সংগঠনের সংগঠক নিরঙ্কুশ স্বাধীন কোন ব্যক্তিত্ব নন। যারা তাকে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করেছে তিনি তাদের প্রশ্নের জবাব দান এবং তাঁর দায়িত্ব পালন ও অর্থ সম্পদ ব্যয়-ব্যবহার সম্পর্কে তাঁদের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য। একজন যোগ্য সংগঠক কুণ্ঠাহীনভাবেই এ জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত থাকেন। প্রেরণাদায়ক বক্তৃতা-ভাষণ যোগ্য সংগঠকের বক্তৃতায় পারদর্শিতা থাকা জরুরি। কেননা কোন কোন ক্ষেত্রে বক্তৃতা জাদুর মতো কাজ করে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাও সংক্ষেপে সুন্দর করে বক্তৃতার মাধ্যমে উপস্থাপন করা সম্ভব। বক্তৃতার ভাষা হতে হবে সহজবোধ্য, পয়েন্টভিত্তিক, যুক্তিভিত্তিক ও তথ্যভিত্তিক। এতে থাকবে বলিষ্ঠতা ও জনশক্তিদের উদ্দীপ্ত করার ক্ষমতা। তবে রাতারাতি কারো পক্ষে সুবক্তা বা বাগ্মিতা অর্জন করা সম্ভব নয়। সাধনা ও অধ্যবসায়ের ফলে ধীরে ধীরে এ গুণ অর্জিত হতে পারে। হার্ডম্যান বার্ড ইংল্যান্ডের একজন পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম প্রথম সংসদে কথা বলতে পারতেন না, এমনকি একটি বাক্যও শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে প্র্যাক্টিস করে তিনি ইংল্যান্ডের সংসদে ২ থেকে ২.৩০ ঘণ্টা বক্তব্য রেখেছেন। আমানতের সংরক্ষণ একজন সংগঠক আমানতদারিতা ও আমানতের সংরক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক ভূমিকা পালন করেন। আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন থাকা এবং আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা একজন যোগ্য সংগঠকের অন্যতম দায়িত্ব। ইসলামী সংগঠনের মূল নীতিমালা সংরক্ষণ: একজন যোগ্য সংগঠক ইসলামী সংগঠনের মৌলিক নীতিমালা সংরক্ষণে সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকেন। সকল পরস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা পোষণ করা। সকল কাজে রাসূল সা:কে স্ট্যান্ডার্ড ধরা। সাহাবীদের দৃষ্টান্ত সামনে আনা। ভোগের নয় ত্যাগের পরিবেশ বজায় রাখা। ইহতিসাবের পরিবেশ সৃষ্টি করা। নিষ্ক্রিয়তার প্রতিকার একজন যোগ্য সংগঠক জনশক্তির নিষ্ক্রিয়তা দূরীকরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। কোন কারণে জনশক্তির মনে খটকা সৃষ্টি হওয়া, কারো আচরণে রুষ্ট হওয়া, কোন প্রপাগন্ডায় প্রভাবিত হওয়া, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ভীত হওয়া, কোন অবাঞ্ছিত ঘটনায় ব্যথিত হওয়া, নিজের জীবনে কোন অপরাধ ঘটে যাওয়া, ব্যক্তিগত জীবনে কোন বড় রকমের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া এই ধরনের কোন কারণে একজন কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় তার সাথে দেখা ও আলাপ করে নিষ্ক্রিয়তার আসল কারণটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করা। আল কুরআন ও আল হাদিসের আলোকে বক্তব্য রেখে তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। বেশি বেশি সাহচর্য দান করা। সর্বপর্যায়ে গতিশীলতা সৃষ্টি সংগঠনে গতিশীলতা আনয়নে একজন যোগ্য সংগঠক নিম্নোক্ত ভূমিকা পালন করে থাকেন। সর্বপর্যায়ে টিম স্পিরিট সৃষ্টি। পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি। শাহাদতের জযবা। অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া। যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া। সর্বপর্যায়ে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ। জনশক্তির মাঝে ইনসাফ কায়েম। প্রেরণাদায়ক আলাপ। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। যোগ্য উত্তরসূরি সৃষ্টি যোগ্য সংগঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি যোগ্য উত্তরসূরি তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। কোন সংগঠকই অমর নন। তাঁর স্থানান্তরিত হওয়া অথবা ইন্তেকালের পর যদি শূন্যস্থান পূর্ণ করার মতো যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া না যায় তা সংগঠনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে। বিশ্বনবী সা: এ ক্ষেত্রে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন। তিনি নেতৃত্ব দেবার মতো যোগ্য বেশ কয়েকজন ব্যক্তি গড়ে তুলেছিলেন যারা তার ইন্তেকালের পর একের পর এক সফলভাবে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। কঠিন পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ ইসলামী আন্দোলনের অনিবার্য বাস্তবতা হিসেবে জুলুম-নিপীড়নকে গ্রহণ করা- একজন যোগ্য সংগঠক ইসলামী আন্দোলনের স্বাভাবিক বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক অবহিত থাকবেন। যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে খোদাদ্রোহী ও বাতিল শক্তি দ্বারা যে জেল, জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন, বর্তমান সময়ের জেল, জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়ন পূর্ববর্তী নির্যাতনেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। পৃথিবীর শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত যেখানেই তাওহিদ বা সত্যিকারের কালেমার দাওয়াত উপস্থাপিত হয়েছে সেখানেই সে আন্দোলনের কর্মীদের বাতিলের রোষানলে পড়তে হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ সা:সহ অসংখ্য নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, মুজাদ্দিদ, মুজতাহিদ, ইমাম, মুজাহিদ, দ্বীনের দায়ীসহ দেশে দেশে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অসংখ্য ইসলামপ্রিয় মানুষ আল্লাহর দ্বীনের জন্য অকাতরে নির্যাতন সহ্য করেছেন। জালিমের পাহাড়সম জুলুম-নিপীড়ন ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার প্রত্যাশায় সত্য ও ন্যায়ের পথে তারা অটল-অবিচল ছিলেন। জীবনের বড় একটি অধ্যায় তাদের পার হয়েছে ভীতিকর অবস্থা, আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি, জীবনের হুমকি, মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচারের সম্মুখীন হওয়ার মধ্য দিয়ে। শুধুমাত্র আদর্শগত বিরোধের কারণেই তাদেরকে জালিমের জুলুম ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। একজন সংগঠক বা দায়িত্বশীলের এ উপলব্ধি থাকতে হবে যে, আল্লাহ তার বান্দাদেরকে জুলুম-নিপীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেন, কে ঈমানের দাবিতে কতটুকু খাঁটি আর কে কপট। যেমন ওহুদ যুদ্ধের কপট বিশ্বাসীরা ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বদরের বিজয়ের পর কারা সুবিধাভোগী মুনাফিক তা ওহুদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। জয়ের পর পরাজয়, সুখের পর দুঃখ, আরাম-আয়েশের পর কষ্ট, সম্মানের পর অসম্মানে পতিত করেই সত্যনিষ্ঠ মানুষদের সঠিক অবস্থান বাস্তবে নির্ণয় করা যায়। কেননা সুবিধাবাদী বা সুবিধাভোগী মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ সবসময় ভালো বা জয়জয়কার অবস্থায় সামনের কাতারে থাকতে চায়। কিন্তু খারাপ সময়, দুঃখ বা বিপদ এলে তারা নিজেদেরকে আগের চেয়ে গুটিয়ে নেয় কিংবা ভেতর থেকে শুধু অপরের দোষচর্চায় লিপ্ত হয় কিংবা গোপনে বিরোধীশক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলে নিজেদেরকে বিপদমুক্ত রাখার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে। ইসলামী আন্দোলনের একজন দায়িত্বশীলের কাছে যেহেতু দুনিয়ার সফলতার চাইতে আখেরাতের সফলতাই চূড়ান্ত সফলতা রূপে বিবেচিত সেহেতু দুনিয়ার সাময়িক সময়ের দুঃখ কষ্ট, বিপদাপদ ও জুলুম নিপীড়নকে সে পরোয়া করার কথা নয়। ইসলামী আন্দোলনের একজন সংগঠক বা দায়িত্বশীলকে মনে রাখতে হবে রাতের আঁধার যত গভীর হয় ভোরের সূর্য ওঠার সময় তত ঘনিয়ে আসে। নদীতে কখনও জোয়ার আসে আবার কখনও ভাটা আসে। সবসময় বাতাস একদিকে প্রবাহিত হয় না বা বাতাসের গতি সবসময় সমান থাকে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সব সময় তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিপদে রেখেই খুশি হন বিষয়টা এমন নয়। তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের আরও বেশি প্রিয়পাত্র বানানোর জন্য পরীক্ষা করেন। এ ক্ষেত্রে কাউকে একটু বেশি পরীক্ষা করেন আর কাউকে একটু কম করেন। এমতাবস্থায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তাঁর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, হে রাসূল! ওদেরকে বলুন, আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া কখনো কোন (ভালো বা মন্দ) কিছুই আমাদের কাছে পৌঁছে না। তিনিই আমাদের মনিব। মুমিনদেরকে আল্লাহরই ওপর ভরসা করা উচিত।” (সূরা তওবাহ : ৫১) বিপদাপদ ও জুলুম নিপীড়নে ঘাবড়ে না গিয়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, যে নিয়ামতই তোমরা পেয়েছ, তা আল্লাহর পথ থেকেই এসেছে। তারপর যখন তোমাদের ওপর কোন কঠিন সময় আসে তখন তোমরা ফরিয়াদ নিয়ে তাঁরই দিকে দৌড়াও।” (সূরা নাহল : ৫৩) একজন যোগ্য সংগঠকের আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি- ১.    ডিক্টেড তথা নির্দেশ দেয়ার মানসিকতা পরিহার করা ২.    সর্বপর্যায়ে চিন্তার ঐক্য গড়ে তোলা ৩.    জনশক্তির ওপর দোষ না চাপানো ৪.    মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করা বা বদ মেজাজ পরিহার করা ৫.    অপরের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। বড় ধরনের ক্ষতি না হলে অন্যের মত গ্রহণ করে উৎসাহ দেয়া। ৬.    অতিরিক্ত গাম্ভীর্যতা পরিহার করা ৭.    সিরিয়াসলি কন্ট্রোল এর মানসিকতা পরিহার করা ৮.    নিজের যোগ্যতার সকল কিছু উজাড় করে দেয়া। ৯.    স্বৈরাচারী মানসিকতা পরিহার করা ১০.    অন্যকে তার যথাযথ মর্যাদা দেয়া ১১.    স্বজনপ্রীতি পরিহার করা ১২.    সমালোচনা হজমের যোগ্যতা ও সমালোচকদের কদর করা ১৩.    জনশক্তির অনুপ্রেরণার উৎসস্থল হওয়া ১৪.    আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে যথাযথ যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দ্বীনি আন্দোলনের জিম্মাদারি সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। লেখক : সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির