post

পাঠ্যবই বিতর্ক : মূল্যবোধবিদ্বেষ ও মতলববাজদের মুখোশ

অনার্য ঠাকুর

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
সরকারের পক্ষ থেকে আগে থেকেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জাতিকে জানানো হয়, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বই-উৎসব উদযাপন করা হবে। কথা ছিল ইংরেজি নববর্ষ তথা প্রচলিত শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে একযোগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই শিক্ষর্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। ওই দিন অবশ্য অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ সম্পন্ন হলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষ করে প্রাথমিকের বহু শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছেনি। সরকার বিনামূল্যের বিপুল সংখ্যক বই যথাসময়ে বিতরণের উদ্যোগ-আয়োজন নিলেও তা কেন ব্যাহত হলো তা নিয়ে আলোচনা হতে পারতো, ভবিষ্যৎ সমস্যার সমাধানকল্পে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ অবশ্য এখনও অনেক স্কুল বই না পাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গত ১০ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়ন রয়েছে প্রাথমিকে। তাদের শর্তের কারণে আন্তর্জাতিক টেন্ডারসহ নানা বিষয়ে প্রাথমিকের বই ছাপানোর ক্ষেত্রে সময় কম পেয়েছে এনসিটিবি।’ বিতরণে নৈরাজ্য ছাড়াও পাঠ্যবইগুলোতে অমার্জনীয় অনেক ভুল ও অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এ নিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা হচ্ছে সকল মহলেই। অবশ্য একশ্রেণির ‘সচেতন’ নাগরিক শিক্ষা বিভাগের সমালোচনার সাথে সাথে মূল্যবোধসম্পন্ন শব্দের বিরোধিতায় লিপ্ত হন। এক রকম কোমরে গামছা বেঁধে বিরোধিতা বলা যায়। ওই সব বোদ্ধাদের কেউ কেউ নিজেদের ‘প্রগতিশীল’ দাবি করলেও তাদের পরিচয় সমাজে ‘ধোঁয়াশা’। কারণ তাদের ‘সুবিধাবাদী’ আচরণ আর মনোবৃত্তি যতই দিন যাচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে। একদিকে চার কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর একাংশ যথাসময়ে নিজেদের পাঠ্যপুস্তক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলো, অন্যদিকে এ সকল শিক্ষার্থীকে ভুল শেখানোর আত্মঘাতী আয়োজনের ষোলকলা পূর্ণ করা হলো- এ নিয়ে শিক্ষাবিদ, গবেষক, অভিভাবক-শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার তাবৎ তীর কেবল নিক্ষিপ্ত হতে থাকলো, প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বর্ণ পরিচয়ে ‘ও’ চেনাতে লেখা ‘ওড়না চাই’র ওপর। মতলববাজদের ‘ওড়না’ অ্যালার্জি ‘ওড়না’ শব্দটা নাকি সাম্প্রদায়িক। অথচ এইসব সমালোচকরা একই বইয়ে ব্যবহৃত শব্দ ‘ঋষি’ ও ‘জল’ নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটা মৌনতা অবলম্বন করছেন। এদেশের প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও ‘ঋষি’ ও ‘জল’ এর প্রয়োগ কি প্রমিত নীতি হলো? হিন্দুয়ানি শব্দ দুটিকে যখন পাঠ্যবইয়ে ব্যবহার করা করা হয়, তখন ওই সব বোদ্ধা আলোচ্য শব্দ দু’টির গায়ে যেন ‘অসাম্প্রদায়িক’ জ্যাকেট পরিয়ে দেন। আর বহুল প্রচলিত, ব্যবহৃত ও পঠিত, এমনকি ব্যবহার্য ‘ওড়না’ নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া মনোগত বৈকল্যের বহিঃপ্রকাশ কিনা জানি না! উদ্ভূত প্রেক্ষিতে মনে হয়, সমাজবোদ্ধাদের একাংশ যে সব সময় প্রান্তিক চিন্তা লালন-পালন করে, তার সর্বশেষ প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটি। মূল্যবোধবিদ্বেষীরা তো ভিন গ্রহে বসবাস করেন না যে, তাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝাতে হবে ‘ওড়না’ এদেশের বাড়ন্ত মেয়েদের একটি অপরিহার্য পোশাক, যে ধর্মাবলম্বীই হোক না কেন। শহর থেকে গ্রাম, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষালয়গুলোতে মেয়েদের ওড়নার ব্যবহার বাধ্যতামূলক, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, মূল্যবোধের জায়গা থেকে। পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে টাইট জিন্স আর টি-শার্ট পরোয়া কিছু মেয়ের পোশাক সংস্কৃতিকে মাথায় নিয়ে চলমান পাঠ্যবই বিতর্কের ‘ওড়না’ পর্বে যারা যোগ দিয়েছেন তারা মতলববাজ হিসেবেই পরিচিত হচ্ছেন। ভুলের যে নেইকো শেষ চলতি ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে এত ভুল যে গবেষকদের খোরাকে পরিণত হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’য়ে আমাদের চিরচেনা কবি কুসুমকুমারী দাশের লেখা ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। খোদ শিক্ষামন্ত্রী খেদ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে এই কবিতা না জানেন তার পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুতের সঙ্গে থাকার কোনও যোগ্যতাই নেই।’ ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি শোধরাবার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলা একাডেমি ও এনসিটিবি। তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় ‘আমাদের জাতির পিতা’ শীর্ষক লেখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের নাম লেখা হয়েছে ‘সায়েরা বেগম’। এটা হবে ‘সায়েরা খাতুন’। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের শেষ লেখাটি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। ১৬ লাইনের লেখায় কবে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, কবে দেশ স্বাধীন হয়েছে, কার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, এর উল্লেখ নেই। লেখাটি পড়ে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। পঞ্চম শ্রেণিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মতারিখ লেখা হয়েছে ২৫ মে, এটা হবে ২৪ মে। সেখানে আগস্ট বানানে ‘ষ্ট’ দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই বইয়ে জসীমউদ্দীনের নামের মাঝখানে ফাঁকা দেয়া হয়েছে, যা ভুল। সুকুমার রায়ের পরিচিতিতে জন্মসাল থাকলেও তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন, তার উল্লেখ নেই। বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির নির্মাণের সাল উল্লেখ আছে ১৯৫২, এটা হবে ১৭৫২। শুধু কি তাই! পঞ্চম শ্রেণিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতায় অন্তত পাঁচটি ভুল রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’-এর ১১ পৃষ্ঠার অজ, অলি, আম ও আতা- এ চারটি ছবির একটিও যথার্থ হয়নি। একই শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে অসংলগ্ন ছবি রয়েছে বেশ কয়েকটি। তৃতীয় পৃষ্ঠায় একটি শ্রেণিকক্ষের ছবি দেয়া আছে। প্রতিটি শিশুর সামনে ব্যাগভর্তি বইয়ের স্তূপ। প্রথম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর সামনে এত বই থাকার কথা নয়। ‘এ’ দিয়ে একতারা এবং ‘ঢ’ দিয়ে ঢাক দেখাতে চাইলেও সেগুলো তা নয়। ২০ পৃষ্ঠায় একটি বককে আমগাছে বসানো হয়েছে। কিন্তু সাধারণত বক থাকে খাল-বিল বা জলাশয়ে। এই চিত্রই অধিক পরিচিত। এমনভাবে বইয়ের বিভিন্ন পাতা ভৌতিক ও অবাস্তব ছবিতে ভরপুর। প্রাথমিকের ইংরেজি বইয়ের পেছনে ‘...বাই দ্য গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ’ লেখা। এটা ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ হওয়ার কথা। তৃতীয় শ্রেণির ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় সালাত সম্পর্কে বর্ণনায় সাত লাইনে ১০ বার আছে এই (সালাত) শব্দটি। কিন্তু একবারও বলা হয়নি যে ওই শব্দটির মানে ‘নামাজ’। বিখ্যাত লেখকদের মূল লেখার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মিল নেই। ছবির মানও বছরকে বছর খারাপ হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন পাঠ্যবইয়ে ভুল ও মুদ্রণত্রুটির ব্যাপারে গত ১০ জানুয়ারি সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সারাদেশে সময়মতো পাঠ্যবই মুদ্রণ করে সরবরাহ করা অনেক বড় সাফল্য। এর মধ্যে কিছু ভুলত্রুটি হতেই পারে। শিক্ষকরা এগুলো সংশোধন করে ব্যবস্থা নেবেন। তবে পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের ত্রুটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মন্ত্রী এসময় গণমাধ্যমে আলোচিত তিনটি ভুলের কথা স্বীকার করে জানান, তৃতীয় শ্রেণির ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতা, একই শ্রেণির ধর্ম বইয়ের পেছনে ইংরেজিতে আঘাত অর্থে ‘ঐঁৎঃ’ কে ‘ঐবধৎঃ’ লেখা বড় ভুল। আর প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’য়ের প্রচ্ছদে ছাগলের আম খাওয়ার ছবিকে ভুল হিসেবে স্বীকার করলেও এটি ‘অতটা অস্বাভাবিক নয়’ মন্তব্য করে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর এটি বাদ দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন নাহিদ। এ সময় আরও কিছু ভুল থেকে যাওয়ার কথাও অকপটে স্বীকার করে নেন তিনি। তবে ‘ওড়না চাই’ প্রশ্নে প্রগতিশীলতার ছদ্মাবরণে ইসলামবিদ্বেষী বোদ্ধাসমাজের সাথে সুর মেলাননি তিনি। নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি আলোচিত পাঠ্যবইয়ের ভুল নির্ণয় ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে ১২ জানুয়ারি সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সাত কর্মদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে গত ১৯ জানুয়ারি তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান বলেন, ‘ভুল ও বিকৃতির জন্য পাঠ্যবইয়ের কাজে কার কী দায়িত্ব ছিল এবং কার কী ভুল ছিল তা যাচাই করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে আরও সাত দিন সময় চাওয়া হবে। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেই এই সময় চাওয়া হবে। রুহী রহমান আরও বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে ভুল-ত্রুটির জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে হবে। ভবিষ্যতে নির্ভুল পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সুপারিশও দিতে হবে। তা পূর্ণাঙ্গভাবে হওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই সময় চাওয়া হবে।’ এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর দুই কর্মকর্তা প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বোর্ডের আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদীনকে। একই দিনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে গত ১২ জানুয়ারি কমিটি পুনর্গঠন করে চার সদস্যের কমিটিতে যুক্ত করা হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. তরুণ কান্তি শিকদারকে। কমিটিকে পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। ১৩ সঙ্কলক-সম্পাদকের যৌথ বিবৃতি চলতি বছরের প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ের পরিবর্তন সঙ্কলক-সম্পাদকদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই সব বইয়ের ১৩ জন সঙ্কলক-সম্পাদক। গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ভুল ও পাঠ-পরিবর্তন নিয়ে যে আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সঙ্কলক-সম্পাদকদের সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। এ সম্পর্কে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবার অবগতির জন্য আমরা জানাচ্ছি যে পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তন সঙ্কলক-সম্পাদকদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে হয়েছে। পরিবর্তন/সংযোজন বিষয়ে সঙ্কলক-সম্পাদকদের কিছুই জানানো হয়নি। বিবৃতিদাতা ১৩ জন সঙ্কলক-সম্পাদক হলেন হায়াৎ মামুদ, নিরঞ্জন অধিকারী, মাহবুবুল হক, মাসুদুজ্জামান, বিশ্বজিৎ ঘোষ, সৈয়দ আজিজুল হক, সোয়াইব জিবরান, শফিউল আলম, দানীউল হক, শ্যামলী আকবর, নূরজাহান বেগম, রফিকউল্লাহ খান ও সৌমিত্র শেখর। এ সঙ্কলক-সম্পাদকেরা পৃথকভাবে প্রথম থেকে তৃতীয়, চতুর্থ থেকে পঞ্চম, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম এবং নবম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের পরিবর্তন নিয়েও বিবৃতি দিয়ে একই কথা বলেছেন। চক্রান্ত নয় তো? পূর্বোক্ত ১৩ জন সঙ্কলক-সম্পাদকের বিবৃতির প্রেক্ষিতে একটি প্রশ্ন স্পষ্টভাবে উঠেছে, তাহলে কে বা কারা এর পরিমার্জন ও সম্পাদনার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলো? তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এর জবাবের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তারপরও মূল্যবোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, এটা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার কোনো সুগভীর চক্রান্তের অংশ নয় তো! এ শঙ্কা তখনই দানা বেঁধেছে যখন প্রতিক্রিয়াশীল গবেষকরা দাবি করছেন, পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বই থেকে যে ১৭টি গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ বাদ দেয়া হয়েছিল হেফাজতে ইসলামীর নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী, আবার তাদের পরামর্শ ক্রমেই নাকি  ২০১৭ সালের বইয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সেগুলোই! একইভাবে যে ১২টি গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ-নিবন্ধকে নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় তার সব ক’টিই বাদ দেয়া হয়েছে। ওই গবেষকরা কি আগেকার বইগুলো নিয়ে আদৌ এমন কোন পর্যালোচনা করেছেন, সেসব পড়া কতটা নৈতিকতাবোধ শিক্ষা দিতে সক্ষম, কতটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় চেতনাকে সমুন্নত করে বা রাখে! এমন পর্যালোচনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির মতো বিজাতীয় পঠন-লেখনের প্রতি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধাবিত চক্রান্ত চলছে বলে মনে হচ্ছে! প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পাঠ্যবইয়ের সব ভুলত্রুটি ঠিক করে সংশোধনী দেয়া হবে। এ জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। বইয়ের মান কতটা খারাপ হয়েছে, কেন খারাপ হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি ভালো করার সব চেষ্টা করা হবে। আগামী বছর আর ভুলত্রুটি থাকবে না। আমরাও গণশিক্ষামন্ত্রীর কথায় আশাবাদী যে, বর্তমান বিচ্যুতি দূর হবে এবং আগামী বছর যৌনবাদীদের ‘খুশি’ করার মতো কোনো পাঠ্যবই ছাপা হবে না। একই সাথে মনে করি এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির